সোমবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৬

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

 " তুমি বর্ষ,তবে সবার মত নয়
কিছুটা বিষেশন আর কলংক মুক্ত,
কিছুটা আগ্রহ সদাই তোমার তরে
তুমি বরন্য আনন্দ যুক্ত

তুমিও বর্ষ,তবে গ্লানি নেই,শোক গাথা বুক নেই
নেই ক্লান্তিমাখা দীর্ঘশ্বাস,
আছে আনন্দ, আনন্দ প্লাবন আছে,
 সুখ নাহয় নিশ্চিত, আছে আশ্বাস "

ঝরে পড়া  আদুরে পালকের ওমে নিজেকে আবৃত করে একটি বছর শেষে  , আমরা স্বাগত জানালাম ২০১৬ সাল কে । পশমী আদর , আর কুয়াশার গায়ে লেগে থাকা মিঠে রোদ মেখে 'রোদ্দুর ' পা রাখলো ন - মাসে । এই ন-মাসে  যারা তাঁদের সঞ্জীবনী লেখনীর মাধ্যমে ঋদ্ধ করেছেন রোদ্দুরের  আঙিনা , তাঁদের প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ । 
নতুন বছর ভাল কাটুক সবার ।  ব্যক্তিগত মরীচিকাকে উপেক্ষা করে শব্দের পর শব্দ জুড়ে রচিত হোক আরও এক মহাকাব্য , Because , the magic of love reflects through Litreture . 

শুভেচ্ছান্তে ,
পিয়ালী বসু 

একটি প্রাসঙ্গিক কবিতা ~ সুকান্ত চক্রবর্তী

এই শহরের চেনা চেনা মাঠ-রাস্তায়
 আমি ঘুরেছি কত সহস্রবার ;
জানিনা,শুধু মনে হয়

 কতো নশ্বর শরীর পেরিয়ে এজন্মে আবার
সেই ছায়ানটের তলে; কতবার ধর্ষিত

 আর কতবার ধর্ষক হয়েছিলাম
 তার হিসেব কষি বারবার

বদ্ধতা ~ অরিজিৎ বাগচী

অন্ধকার সরণির এক ঘোলাটে আবহাওয়া, 
অজান্তেই অনবরত গ্রাস করছে আমায় ।। 

:
আস্ফালনের দুটো হাত বার বার বৃথাই ফিরে আসলে ,
চেপে ধরে এক মিশ কালো একাকীত্বের দায় ভার ।।

:
সম্পর্কের শালীনতা সীমা ছাড়ালে,
ঠাই নেয় চিলেকোঠার ছাদের কোনে।। 

:
বোবা স্মৃতির সাথে কথা বলে যাওয়া ফ্যালফ্যালে চোখ,
দেখে দূরে চলে যাওয় চেনা ঠোঁটের হাসি ।

Christmas ~ Durba Mitra

Santa Claus
Is coming along....
Bringing me dread!
"Friends"
In my fruit juice..
Some potion they had mixed.
Park Street
Where I was found..
Body is now healed.
Raped
By my friends..
Spirit is forever dead!

দুটো আঁচড় ~ সুপ্রতীম সিংহ রায়


(১) 
একদিন ঠিকই রাস্তা পেরোব তোর হাত ধরে
ফুচকার টক-ঝালে রাঙাব দুগাল লাল,
একদিন ঠিকই পথ হারাব দুজনে খুব ভিড়ে
জানিস? তোকে বড্ড ভালো লাগে আজকাল!
(২)

এবার গুছিয়ে নিয়েছি ছোট ঘর
আমার ঈশ্বর বিশ্বাস ভাঙে না,
দেখি দ্বারে বসে আছে ভালবাসা
পুরানো ক্ষতদাগ কেবলই আবর্জনা।

ফিরে তাকাও ~ অনুপম দাশ শর্মা

বুকের পাশে নদী থাকে 
ভাসছে নৌকা, গভীর নীল
ডাক দিয়েছে হরকরারা লক্ষ্য রাখে
শঙ্খচিল,
দেরাজ খুলে দেখছ যখন
হলদে পাতায় স্মৃতির ঋণ
এটাও ভেবো সব আহ্লাদ
রূপান্তর ও সুপ্রাচীন!
তোমার কাছে সেদিন রাতে কাঁধ
পেয়েছে দাঁতের দাগ,
শূন্য খামে নিদ্রা নামে
স্পর্শমুখর কোথায় রাত??

লজ্জা করে না তোদের ~ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

ছাদে উঠে বিস্কুট খুঁটে খুঁটে ফেলছি পাখিদের খাওয়াবো বলে। গোটা চারক বুলবুলি, দুটো শালিখ, গোটা ছয়েক ছাতার এবং একটা কাক হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছে জলের ট্যাংকের ওপর। আমি সরে গেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে খাবারের ওপর। এটা ডিসেম্বর মাস। চারপাশে হালকা কুয়াশার পরদা ঝুলছে।
হঠাৎ দেখি বিস্কুটের ছোট্ট একটা টুকরো নিজে থেকেই হেঁটে চলেছে গুটিগুটি পায়ে। দেখে অবাক হলাম। বিস্কুটের টুকরোটা কি কুয়াশায় স্নাত হয়ে সদ্য প্রাণ পেলো! তারপরই নজরে এলো আসল ঘটনাটা। বিস্কুটের টুকরোটা দু’হাতে তুলে নিয়ে ছোট্ট একট কালো পিঁপড়ে গুটিগুটি পায়ে এগোচ্ছে নিজের গর্তের দিকে। এই শীতে পিঁপড়ে এলো কোত্থেকে! ওদের তো এখন নিজেদের গর্তে সেঁধিয়ে থাকার কথা! দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডার যে সেই কথাই বলছে!
পিঁপড়েটা আমার মনের কথাটা পড়তে পেরে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে বিস্কুটের টুকরোটা নামিয়ে রেখে কোমরে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়ুটেদের গলায় বলতে শুরু করলো, নিকুচি করেছে তোদের ঐ ক্যালেন্ডারের। ঐ দেখেই তো সেঁধিয়েছিলাম গর্তে। ভেবেছিলাম গর্তে সেঁধিয়ে থেকে রক্ষা পাই আগত শীতের হাত থেকে। তারপর নাহয় খাবারের সন্ধানে আবার বেরোনো যাবে। আমাদের বাপ-ঠাকুর্দা তো তেমনটাই করে গেছেন আজীবন। ছি-ছি-ছি, লজ্জা করে না তোদের? মানুষ হয়েও নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই ডেকে এনেছিস? সেইসাথে ভুগতে হচ্ছে আমাদের মতো ইতর প্রাণীদেরও। কোথায় শীতকালে একটু হাত-পা ছড়িয়ে বিশ্রাম করবো তা না তোদের জ্বালায়.........
আর শুনতে চাইলাম না। পালিয়ে এলাম নিচে। ঘরে এসে ঢুকতেই দেয়ালে ঝুলে থাকা টিকটিকিটা বলে উঠলো, ছি-ছি-ছি, লজ্জা করে না তোদের?
ঘর ছেড়ে বাগানে গিয়ে দাঁড়াতেই কোত্থেকে একটা কেঁচো বেরিয়ে এলো, ছি-ছি-ছি.........
বাগানের এককোণে মস্ত গর্তের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দাঁড়াশ সাপটা। ওটা ওখানেই থাকে বলে জেনে এসেছি চিরকাল। সাপটা সামনে এসে বললো, গরমে আর তিষ্ঠোতে পারছি না গর্তের ভেতর। ছি-ছি-ছি, লজ্জা করে না......
অবাক কাণ্ড! তারপরই চারপাশ জুড়ে সেই একটাই কথা, লজ্জা করে না তোদের? মানুষ হয়েও নিজেদের......

আড্ডার কোলাজ ~ সুমনা পাল ভট্টাচার্য

আহা আড্ডা ! শব্দটা উচ্চারণের সাথে সাথেই এতো টুকরো টুকরো ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে বলার নয়.. উত্তর কলকাতার সিমলা পাড়ায় ছোট থেকে বড় হওয়া..
সকালে স্বামীদের অফিসে পাঠিয়ে 'দুগ্গা দুগ্গা' বলে সদর দরজায় দাঁড়িয়ে বাড়ির গিন্নীদের আড্ডা, তারপর রোদে পিঠ ঠেকিয়ে হাতে উলের গোলা আর কাঁটার সোজা-উল্টো বুননের সঙ্গে সঙ্গে এ ছাদ থেকে ও ছাদে আড্ডা, কখনো বা আচারের শিশি রোদে পাহারা দিতে দিতে টক-ঝাল-মিষ্টি আড্ডা, কখনো সন্ধ্যে প্রদীপ দেখিয়ে স্বামীদের চা জলখাবার দিয়ে আর ছেলে-মেয়েকে গৃহশিক্ষকের জিম্মায় দিয়ে পাশের বাড়িতে দূরদর্শনে চিত্রহার দেখতে দেখতে চা এর কাপ বা পানের বাটা কোলে নিয়ে রসালো আড্ডা, কখনো পাড়ার ঠাকুর দালানে দাদু বা বাবাদের তাসের আড্ডা, কখনো পাড়ার ক্লাবঘরে নতুন সাহিত্য বা রাজনীতির ঘোর-প্যাঁচ নিয়ে তর্ক-আড্ডা, কখনো বা পাড়ার রকে বসে দাদাদের আড্ডা আর পাশের ক্যাসেটের দোকানে জোরে বেজে যাওয়া " আই অ্যাম এ ডিস্কো ড্যান্সার "..
‪#‎পাড়ার‬ মোড়েই রাম কাকুর তেলেভাজার দোকান- লোকটা দুই মেয়ে ও তিন ছেলেকে ওই দোকানের রোজগারেই খাইয়ে পড়িয়ে বাড়িয়ে তুললেন - তার পেছনে কারণও ওই আড্ডা - এই শীতের দিনে গরম গরম ফুলকপির সিঙ্গারা, সাথে মাটির ভাঁড়ের গরম ধোঁয়া ওঠা চা, বা নেহাত্ই ছোলা বাদামের সাথে এক বাটি মুড়ি মাখা আর সবার হাত তাতে-সঙ্গে গরম গরম বেগুনি বা পেয়াঁজি - সন্ধ্যের ওই তেলতেলে আড্ডা যে কত মানুষের মনের দুয়ারে কত বন্ধুত্বের প্রদীপ জ্বালিয়েছে তা গুনে শেষ করা যায় না..
‪#‎হঠাৎ‬ লোড-শেডিং, পাড়াময় ঘুটঘুটে অন্ধকার - দরজার বাইরে একখানা হ্যারিকেন আর ঘরময় একান্নবর্তী পরিবারের বারোজন সদস্য..বাবা-মা, জ্যাঠা-জ্যেঠিমা, কাকা-কাকিমা, ভাই -বোন আর কাকার সদ্য দেখা ভূতুড়ে ইংরেজি সিনেমার দৃশ্যবয়ান - টানটান উত্তেজনা - আর কে আগে অন্ধকার বারান্দা পেরিয়ে বাথরুম অবধি যেতে পারবে তা নিয়ে অপেক্ষা....পরিবার বেঁধে রাখার টানটান আড্ডা -
‪#‎বা‬ ওবাড়ির মলিদির হঠাৎ আমাদের বাড়িতে দাদার থেকে নোটস্ নিতে আসা, তারপর খাতার ভাঁজ থেকে একটা ছোট্ট চিরকুট পালকের মত নিমেষে মলিদির খাতার ভাঁজে লুকিয়ে যাওয়া, চারচোখ চকচকে হয়ে ওঠা, এ ও আড্ডা -
‪#‎আর‬ কফি-হাউস! আহা ! সে তো আড্ডার স্বর্গরাজ্য - কফির ধোঁয়ায়, সাহিত্যের তাবড় উত্তেজনায় আর কালচারের ঝাল -ঝোল-অম্বল, সব মিলিয়ে জমজমাট আড্ডা -
‪#‎তবে‬ একটা কথা উল্লেখ্য যে আড্ডা শুধুই গল্প বা পরনিন্দা পরচর্চা নয় হে- ও বাড়ির বৌদি কতরকমের খোঁপা বাঁধতে জানে তার নমুনা দেখানোর জায়গাও ছিল এই আড্ডা, বা বড়ি ঠিক কি ভাবে দিলে মুচমুচে হয় অথচ মুখে মিলিয়ে যায় নরম হয়ে তার ফর্মুলাও মিলত এই আড্ডায়, বা ওই কাঁচা-মিঠে আমের আচারে ঠিক কতটা টক হলে কর্তা খুশি হয়ে ভারী মল জোড়া গড়িয়ে দেবে সে ও শেখা যেত এই আড্ডায় -
‪#‎ঠাকুমা‬ গল্প করত ও পাড়ার মঞ্জু দিদা আর ঠাকুমা দুই সই ছিল আড্ডার প্রাণ, একান্নবর্তী পরিবারের রান্না সেরে, বিকেলের উনুন সাজিয়ে,বাড়ির সকলকে খাইয়ে- গৃহিণী পাট পাট শাড়িটি অঙ্গে জড়িয়ে গালে পান ঠুসে চলতেন উত্তম-সুচিত্রার নতুন সিনেমার ঘোরে গা ভাসাতে ম্যাটিনি শো এ--বাজারে উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা বেরোলেই গরমাগরম গিলে ফেলতে হবেই এই সুগৃহিণী সখীবৃন্দকে..অথচ একটি মানুষও সংসারে অভুক্ত নেই, কোথাও কোন কাজে ত্রুটি নেই এতটুকু, স্বামীর ভেতর মনে মনে প্রাণ-সখা উত্তমকুমারকে খোঁজারও বিরাম নেই, এ ও আড্ডা -
‪#‎কদিন‬ আগে আমার মাসির মেয়ে বলল,"দিদিভাই পিসি-দাদুর শ্রাদ্ধকাজে যাচ্ছ তো ? এই ফাঁকে সবার দেখা হবে -একটু আড্ডা দেওয়া যাবে তোমার সাথে, কতদিন ভালভাবে কথা হয় না বল তো !!"--এ ও আড্ডা, ব্যস্ততম যুগে একটু সুযোগ, সে হোক না বিয়েবাড়ি বা শ্রাদ্ধবাড়ি, দেখা তো হল, আর দেখা হওয়া মানেই সামনের বর্ম সরিয়ে শুধু নরম আড্ডা..
‪#‎একসময়‬ গঙ্গাজল হাতে নিয়ে সই পাতাতো বাড়ির মেয়ে-বৌরা - বকুল সই, গোলাপ সই - আড্ডা? না সে তো শুধুই আড্ডা নয় - মনের যত সুখ - দুঃখের গোপন গয়না - জমা থাকত সই এর মনের সিন্দুকে -
‪#‎আজ‬ ও আড্ডা বেঁচে আছে হোয়াটসঅ্যাপ এর গ্রুপে গ্রুপে - এই সেদিনই দেখলাম হঠাত্ আরও দুটি নতুন গ্রুপে অ্যাড হয়ে গেছি আমি- কখনো কলিগদের গ্রুপ, কখনো স্কুল কলেজের বন্ধুদের গ্রুপ, কখনো গানের বন্ধুদের গ্রুপ, কখনো ছেলের বন্ধুদের মাদের গ্রুপ - বিভিন্ন গ্রুপে আমি যাযাবর আর তাগিদ শুধুই আড্ডার -
#তবে আড্ডার রকমফের আছে বই কি !! কোথাও আড্ডা স্কুল জীবনের নস্টালজিয়া নিয়ে, কোথাও কলেজের দুষ্টু-মিষ্টি প্রেমের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হাসির আড্ডা, কোথাও ম্যানেজমেন্টের মুন্ডু-পাত, কোথাও সুরের আদান-প্রদান, কোথাও আবার ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ..
‪#‎আমাদের‬ মা'দের দেখতাম আমাদের স্কুলে ঢুকিয়ে মাঝে মাঝেই কোথাও কারোর বাড়িতে জমায়েত হতে..কারণ সেই আড্ডা - বা আমাদের স্কুল থেকে আনতে এসে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাশ-ওয়ার্ক, হোম-ওয়ার্ক মেলানোর অছিলায় জমাটি আড্ডার সুরে গা ভাসাতে -
‪#‎আজও‬ আড্ডা চলে তবে লোড-শেডিং এর আঁধার কুয়াশা আর নেই, জ্বলে ওঠে ইনভার্টারের আলো -
#আজও গোপন প্রেম দানা বাঁধে তবে খাতার ভাঁজের চিরকুটে নয়, এস-এম-এস এর গোনা গুনতি শব্দের আওতায় -
#আজও বৌ-মেয়েরা সই পাতায়, তবে নিজের প্রাণ-ভোমরা বান্ধবীর মনের সিন্দুকে রাখার ছল করে মাত্র, রাখার ভরসা পায় না -
#আজও তেলেভাজার দোকানে সিঙ্গারা বেগুনি বিক্রী হয় - তবে পাশের মিও -আমোরে বা ক্যাথলিনের আলোয় তা ম্লান হয়ে যায় -
#আজও বাড়ির গিন্নীরা টেলিভিশন দেখে - তবে যে যার ঘরে, এমনকি একই বাড়িতে সব বেডরুমে আলাদা আলাদা ঘরে একক একক ভাবে, না হলে হট্টগোলে রসভঙ্গ হবে যে -
#আজও আমরা সিনেমা যাই - তবে অন-লাইনে টিকিট বুক করে, ঝাঁ চকচকে মলে - আর ঠান্ডা হল থেকে বেড়িয়েই নিজেদের যান্ত্রিকতার উত্তাপে নিমেষে ভুলে যাই রূপালী পর্দার শীতল মোহময়তা -
#আজও কফির কাপে ধোঁয়া তুলে ওঠে আড্ডার তুফান তবে সেটা কফি হাউস না কাপে-কফি-ডে তা তর্ক সাপেক্ষ -
‪#‎এতো‬ তফাত, এতো পরিবর্তন, তবু আড্ডা আছে - আছে বাঙালী - আর আছে বাঙালীর আড্ডা-কালচার...তাই -
বল বল বল সবে
আড্ডা থাকুক বেঁচে
বাঙালী হয়ে এসেছ এ ভবে
বন্ধু হও যেচে যেচে..
‪#‎জিন্দাবাদ‬ বাঙালী ও বাঙালীর আড্ডা কালচার...

বিকালের আলো ছুঁয়ে যায় ~ শৌনক দত্ত

মগ্নতা ফেলে রেখে
ফিরে গেছে রোদ্দুর যাপন।
একটি শব্দ পৌঁছে দিতে
নৈঃশব্দের নীরবতায় দাঁড়িয়ে
দেখছি মাছরাঙা আলোয়
ফুরিয়ে যাওয়া নদীর শরীর
তোমাকে তেলরঙের সংসার
দেবে বলে যে হ্যামিলনের বাঁশির
পিছনে ছুটে গেলো
তার মায়া পুষে রেখেছে গোলাপী বিকাল
হারানোর ভয় চুরি করে
কচুপানা ফুল থেকে কে যেন
ডেকে ওঠে পিতৃপুরুষের নামতায়
আমি হারিয়ে যাই
আমরা হারিয়ে যাই
জেগে থাকে রাজপথ
বিকারহীন ইতিহাস
মুগ্ধতার ঘোড়াগুলি
একা,বড় একাকী...

শনিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৬

ফোকাস ~ সিক্তা দাস

দশম শ্রেণীর মেয়েটি মুড়ি খেয়েই পড়তে যাবে। 
সদ্য বর্ষা গেছে। পুরোনো শরিকি বাড়ির উঠোনের আনাচে কানাচে এখনো শ্যাওলার পুরু পরত। উঠোনের মাঝখানে এক-পা চওড়া সরু চলার রাস্তা। ফাঁক-ফোকর খুঁজে ফিনকি দিয়ে রোদের ঝলক গা এলাচ্ছে শ্যাওলায়। ভিজে শ্যাওলা একটু বেশী ঘন সবুজ মনে হচ্ছে।...বর্ষার মেদুর ভাবটুকু নেই।অথচ দুটো সৌন্দর্যই মন টানে। পাঁচিল ঘেষে পুরোনো দড়িতে সদ্য ধোঁয়া একটা রংচটা শাড়ি , একটা সালোয়ার কামিজ ও আরো দুএকটি মলিন জামা কাপড় মেলা রয়েছে। আগামীকালের পরিধান। আগামীকাল আসবে। টপ টপ করে জল পড়ছে...শ্যাওলার ওপর। রোদে- জলে রামধনু তৈরী হলো কি?? শ্যাওলায় রামধনু!! জীবন এভাবেই কথা বলে। ভাতের গন্ধে ঘরদোর ম' ম' করছে। সাথে মিশেছে স্টোভের আঁচের গুমগুমে গন্ধ। দশম শ্রেণীর মেয়েটি একবাটি মুড়ি নিয়ে বসেছে, খেয়ে পড়তে যাবে। মুখেচোখে ষোলো বছরের দীপ্তি। আটপৌরে সালোয়ার কামিজে শেষ কৈশোরের গন্ধ। মেয়েটি 'সুন্দর' খুঁজতে জানে। ছোটো ছোটো চোখে শ্যাওলায় ভালোলাগার দৃষ্টি রেখেছে। ছোট্ট রামধনু দেখছে । মুড়ি শেষ করেই পড়তে যাবে, ঝোপের পাশ দিয়ে দিদিমনির বাড়ি যাওয়ার পথ। ফিরতে ফিরতে নির্জন দুপুর......নির্জন...
.
মেয়েটির কাচা সালোয়ার দড়িতে ঝুলছে । আগামীকাল পরবে......ভাত ফুটছে, মা অপেক্ষা করবে। 
মেয়ে বাড়ি ফিরলে একসাথে খাবে। আগামীকালও শ্যাওলায় রামধনু রঙ ছড়াবে...মেয়েটি দেখবে..
সমস্ত চোখেমুখে শরীরে যৌবন-উন্মুখ কৈশোরের ঘ্রাণ ছিটকে পড়বে। মেয়েটি মাধ্যমিক দেবে এবার। কাকদ্বীপ স্কুল থেকে পাশ করে , বড় স্কুলে যাবে পড়তে... 
.
যেন সত্যি হয় সবকিছু....সত্যি করে যেন মেয়েটির সবটুকু পাওয়া সত্যি হয়...

বেঁচে আছি বিশ্বাসে-অবিশ্বাসে ~ চঞ্চল নায়েক

তোমার জন্য আদিম ভালবাসার ভান্ডার !
বুঝতে চাওনি কোনদিন...
:
তোমার জন্য হৃদয় কেঁদেই চলেছে অবিরত !
তুমি শুনতে পাওনি...
:
তোমার বুকেই আঁকা আছে আমার সুখের ক্যানভাস!
তুমি খুলেও দেখোনি...
:
তোমার চোখে জগৎ দেখি আগের মতোই !
তুমি অনুভব করোনি তা...
:
তোমার ঠোঁটে আমার যত আদর আছে লুকিয়ে !
একবারও জিভ বুলিয়ে দেখোনি...
:
তোমার এতো পাশে থাকি, তবুও বলো দূর !
তুমি কাছে আসতে শেখোনি...
:
তোমার প্রেরণাগুলো আমার চলার সাথী !
তুমি বিশ্বাস করোনা...
:
আমার সাথে বিচ্ছেদের সলতে পাকিয়েছো !
সেটা আমি বিশ্বাস করিনা...
:
আমি কোন অনুসন্ধান চাইনা...
তোমার সব না সত্ত্বেও আমি তোমার স্বপ্নে বাঁচি !

অযাচিত ~ অরিজিৎ বাগচী

প্রেমের খড়কুটো সময়ের অভীপ্সায় ভাঙলে ,
গ্লো-সাইন বোডে কোনো নাটক দেখবেনা শহর ।। 
দলাপাকানো কিছু শব্দ গলায় থেকে গেলেও ,
আলগা করে দেবো সব অযাচিত সম্পর্কের রাশ

ফটো ফ্রেম ~ পিয়ালী মজুমদার

কতটুকু আর চিনেছি নিজেকে!
যাওয়া, আসা আর বিন্দুবৎ
ছায়ার ভিতর বাড়তে থাকা
আত্ম-অনুসন্ধান;
এইমাত্র লিখে রাখে পথচারী দাবি-দাওয়া সব.…
এখানেই থামি যদি?
জানি, এ জীবন আসলেই
ধুলোর অবধি!
পিছুটানে রাত ঘন হলে,
গাঢ় চোখ ঢেকে রাখে ভোরের আজান..…
আত্মপ্রতিকৃতি?
কতটুকু আর চেনা যায়!
বিকেল ফুরিয়ে এলে;
অলিখিত ঠোঁট আর মুখের আদল ভেঙে
জেগে থাকে শুধু
নদীমাতৃক আমার সন্তান ।

অবৈধ পৃথিবী ~ শেখর দাস

তোমার ঠিকানায় গিয়ে 
নিঃশব্দে তিনবার বললাম 
চিচিংফাঁক.................. !
অলজ্জার পাহাড় দু-টুকরো হবার আগে
কলিংবেলের দূরত্বে নিজেকে আবার সাজালাম
খাজানার লোভে |
খোলা চুলের কার্পেটে
রক্তকরবী ছেঁড়া ঐশ্বর্যের বিছানা পেলাম |
এ কি ? চল্লিশচোর
মুখ লজ্জার ভয়ে
দু-হাত তুলে চেঁচিয়ে বললাম
আমি আলীবাবা নই |

পলাশ ~ রঘুনাথ মণ্ডল

দুঃখের দিনে পলাশের মতো সাথী কেউ হয় না 
বাবার মুখাগ্নী পলাশের ডাল দিয়ে 
পিণ্ড দান পলাশ পাতায় 
কীর্তনের প্রসাদ সেই পলাশ পাতায়
কেউ নেই পাশে দাঁড়িয়ে দুঃখের কথা শুনবে
তখন পলাশ পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখে
আমার চোখের জল আর পলাশের কাদঁতে কাঁদতে পাতা ঝরা 

বিকেলবেলা ~ শৌনক সরকার

ব্যস্ত বিকেলবেলাগুলোতে হরিদাস ছুটে যেত শিয়ালদা স্টেশনে | একটার পর একটা ট্রেন চলে যেত আর দেখতে দেখতে সময় কেটে যেত ওর | ট্রেনের চলে যাওয়াটা ওকে ভাবাতো, বাউন্ডুলে হরিদাসের মন তখন আরো দূরে কোথাও
যেতে চাইত | এই মূহুর্তগুলোতে ও শুনতে পেত সত্যজিত বাবুর পথের পাঁচালী সিনেমার সেই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক | মাঝে মাঝে এই ক্ষণিকের সুখ ওকে আনন্দ দিত | মাঝে মাঝে একটা বউকে দেখতে পেত ও আর ওর পরণে শাড়ীটা দেখে ওর একটা গান মনে পরতো , যেন বউটা গাইছে " ছাতা ধরো হে দেওরা এসান সুন্দর শাড়ী আমার ভিঁজ গেলাই না " |
বিকেলটা শেষ হয়ে আসে আর বাউন্ডুলে
হরিদাস ফিরে যায় তার বাউন্ডুলের আখড়ায়

আর্তনাদ ~ সুমনা পাল ভট্টাচার্য

আজকাল সকালটা দেরী করে হয় আমার 
তারপর খুলেও খুলতে চায় না চোখ -
গন্ধ পাই তোমার পারফিউম লাগানো জামার ;
তবুও শুয়েই থাকি,আসলে আমার যে রোগ -


তারপর অভ্যেসের বশেই হাত চলে যায় 
লাল, নীল, হলুদ..কতো রঙীন বড়ি,
গুমরে গুমরে বড্ড কান্না পায় -
আমার যে কাজ নেই, কি আর করি !


সময় ছুটছে..তোমার অফিসের তাড়া 
টুবাইটা কি টিফিন নিল কে জানে !
ডাকলেও এখন পাব না তো সাড়া 
আমি যে মা, মন কি মানে !!


বেরোবার আগে আসবে একবার 
মিষ্টি হেসে বলবে ঠিক 'টাটা '
আজকাল চৌকাঠ পেরোয় না আমার

ভদ্রতা সারে শুধু বাপ আর ব্যাটা -

আমি হেসে হাত নাড়ি 
ঝাপসা,ঘোলাটে চোখ -
তারপর আমি আর ফাঁকা বাড়ি 
আসবাবপত্র আর কাজের লোক..


এরপর সারাদিন যন্ত্রণা বই
বিষ জ্বালা বয়ে যায় শরীরে মনে 
কত কথা বুকে চেপে চুপ করে রই 
স্মৃতিগুলো উঁকি মারে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে


ছোটো থেকে খুব বেশি হয় নি অসুখ 
সেবারে ওই অপারেশনটাই যা হল,
হাসি-খুশি সংসার, ছিল না তো দুখ 
এই তো টুবাই সেদিন আট এ পড়ল -


তারপর হঠাত্ই নানা উত্পাত 
শরীরের ভেতরে সব তালগোল পাকে 
অস্থির, নিস্তেজ ঘুম জাগা রাত 
নানা টেস্ট, রিপোর্ট -মরণ যে ডাকে


কি করে যে এই বিষ এলো শরীরে 
আজও ঠিক জানিনা, কি যে কারণ 
ডাক্তার বললেন," সরি " ধীরে ধীরে 
'এইড্স' নামটা জোরে বলাও বারণ -


অসংযত জীবন-যাপন বা বহু সহবাস?
এসব কিছুই না, শুধু অপারেশন 
সবাই বলে, 'আহা ভাগ্যের পরিহাস'
কারণটা অজানা, রক্ত বা ইঞ্জেকশন


রাতে 'ও' দূরত্ব মেপে একই খাটে শোয় 
না, না, তেমন ভাবে করে না অবহেলা -
খুউব ইচ্ছে করে একবার যদি ছোঁয়,
ভেসে যাব নিয়ে এই কান্নার ভেলা..


অনেক রাত অবধি আসে না ঘুম 
বুঝতে পারি 'ও' ফোনে কথা বলে 
ফিসফিসে আদরে ভরে যায় বেডরুম 
আমি অচ্ছুত, পাশে পরকীয়া চলে-


বুকের ভেতর সব ছারখার হয় 
রাগ করি না আমি,একটু অভিমান 
সামনে টুবাইটার বয়েস হবে নয় 
বাঁচাতে পারনা ঠাকুর আমার এই প্রাণ?


কখনো তো কারোর চোখে আনিনি আমি জল ;
অনিষ্ট ভাবিনি, মনে দিইনি ব্যথা 
তবে যে লোকে বলে -' সব কর্মফল '!
আসলে, এ সবই শুধু কথার কথা -


এখন দিনগোনা, জানিনা ক'বছর, ক'মাস!
কিম্বা তারও কম কেউ কি জানে ?
মরতে হবে বলে বাঁচার যে কি আশ,
আমার আর্তনাদ ফেরে আমারই কানে -


ভাঙন সিরিজ ~ শান্তনু বেজ

১. আয়না
~~~~~~
সামনেই সমালোচক
ভিতরে কবিতা
ও মাঝ বরাবর অবয়বের খোঁজ ।।

২. অবয়ব
~~~~~
শরীরে মোম ছিলো
উত্তাপে ঘর্মাক্ত
তাই ফোসকায় নগ্নদৃশ্য।।

৩. নগ্নদৃশ্য
~~~~~~
দুই সরলরেখার মুর্খতা
জ্যামিতিটা রেটিনা ও স্নায়ুর সংলাপ
ব্যর্থতার শেষে সার্বজনীন খোঁজা।।

৪. সার্বজনীন
~~~~~~~
আনন্দের পাশাপাশি
আইলান কুর্দিরা বহিরাগত হয়
তাই উৎসবের সাথেই সহবাস।।

৫. সহবাস
~~~~~~
গ্লাসের শেষ জলবিন্দু টুকু চাই
অবশেষে রুমালে ঠোঁট মোছা
পরে কিছু সেকেন্ড ঈড়া পিঙ্গলার মৌনব্রত।।

৬. মৌনব্রত
~~~~~~~
শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দে অরুচি
আড়চোখে পারিপার্শ্বিক নড়াচড়া
মিনিট শেষেই পায়ের খসখস শব্দ।।

৭. খসখস
~~~~~~
আমি অতুচ্চ বর্তমান
তুমি সংশয়াতীত মোটেও নও
বাকিটা সব ভবিষ্যতে জাতিস্মর যুক্তি ।।

৮. জাতিস্মর
~~~~~~~~
সাহারার বুকে হঠাৎ প্রাপ্য হৃতযোজক
পাপগুলো ছেঁকে পূন্যেতে স্থানান্তর
বিশ্বাসী হয় আমার বায়বীয় অস্তিত্ব ।।

৯. অস্তিত্ব
~~~~~~
চরম আপেক্ষিক ও সর্বাধিক অনুপস্থিত
ভাত জুটলেই অস্তিত্ব বহু বচন
ব্রণের দাগ থেকে গেল সব চুরমার।।

১০. চুরমার
~~~~~~~
ঠিকানার আগেই চিঠিতে ধূলোদাগ
একটা সন্ধ্যা আসে পাখি উড়ে গিয়ে
শেষে বহু ঠিকানায় শপথভঙ্গের সেই আয়না।।

এসো সমারোহে ~ প্রণব বসু রায়

আমাদের সব কথা গোপনেই রাখি
স্থল, জল, অন্তরীক্ষে ছড়িয়ে দিয়েছি,
আমাদের গাল ও কপাল ছুঁয়ে যায়
ভাবনানগর থেকে সখেরবাজারে--
দুলুনি কেদারা থেকে কিচেন সমীপে
:
আমি চাই উলঙ্গ উত্তাপ
তুমি সমারোহ করে এসো

আগমনী ~ সুপ্রভাত লাহিড়ী

পড়ন্ত রোদ্দুর তার আলোর সেতারে
তুলেছিল চারিদিকে তোমার আহ্ববান,
উচ্ছাসের দ্বার খুলি নদী দিল করতালি,
মনের বন্দরে.
.

নববর্ষ ~ মিঠুন চক্রবর্তী

গোটা চারেক সদ্যোজাত কুকুরছানা
খড় গাদায় রাত ভাঙ্গছে।
:
শীত গায়ে রস নিংড়াচ্ছে 'দাম্পত্য'
ডিসেম্বরের শেষ রাতে।
:
শীত কাঁপিয়ে গোরা মাতালের গান
কুয়াশায় গোপন ভিজছে।
:
ইঁটখসা দেওয়াল বেয়ে সংখ্যারা
নেশার পেয়ালায় নামছে।
:
চল্ রুকমণি আজ একটু বেশি হোক
সেই নতুন বছর আসছে ।

শুক্রবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৬

ব্যাধিঘোর ~ আমি পিয়ালী

সামনে ধূ ধূ অনন্ত জলরাশি. . . . . . . . . . .
এখানে আমি আর আমার একলা রবীন্দ্রনাথ অনন্ত অপেক্ষায় বসে আছি পরম নিশ্চিন্তে!
কেউ আসবেনা এই পরবাসে !
তবু চমকে উঠে দেখি তুমি দাঁড়িয়ে আছো পাশে!
বহুদিন উষ্ণতা হারিয়ে বসে আছি ভেবে হাত বাড়ালে তুমি, আমার মনেও তখন জ্বলন্ত অগ্নিকুম্ভ - লীন হতে চাইছে তোমার অসীমে !
প্রবল চাপা উৎসাহে হাত বাড়িয়েই স্থির হয়ে যাই
এত ফ্যাকাশে কেন তুমি !
হঠাৎই মনে হলো কি করে এলে আমার নির্জনপ্রবাসে- তোমার কেন কারোরই তো আসার কথা নয়, তবে কি ! !
আমার পা দুটো কেঁপে উঠতেই তুমি সামলে নিলে বরাবরের মতো,বললে - " একা থাকি কি করে তোমাকে ফেলে!যাপনের শঙ্কা হারিয়ে একলা পথে তাই তোমার কাছে পাড়ি দিলাম!"
তখনো জয়বাবুর মতো " ব্যাধিঘোর" কাটেনি আমার ! বাক্স্তব্ধ আমি শুনছি তুমি বলে চলেছ -
" হাত ছেড়োনাএবার আর ,স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে যাক্
শীতের রোদে পিঠ দিয়ে
স্বল্পবসনা দুপুর এখন তোমার হাতের ছায়ায় মাখামাখি হতে চায়
বসন্ত আসার অপেক্ষায় আছ জানি - তাই বলে
ভুলে যাবে আমাদের অনন্ত আকাশবিলাস?

চিঠি ~ প্রণব বসুরায়



তিন পয়সার পালা শেষ হলে হাতে নিই
টিনের তলোয়ার
বাকি ইতিহাস বিলিয়ে দিই ব্রাত্যজনের মাঝে...
তাই ব'লে আমাকে 'দানী' ভেবো না--
বিবেচনা করো, সব সম্পদ কোথায় লুকোই!


:


ফিল্মের ছেঁড়া টুকরো, শোলার ফুল
শীত বৃষ্টির জলে ও কাদায়...
সোনালী ফ্রেমে একত্রে গেঁথে দিলে
তারপর আসবে চিঠি-- এটা নিশ্চিত


:


যদিও
লাল ডাকবাক্স রাখি নি কোথাও
সই করে সেই চিঠি তুমি নিয়ে নিও
রেখে দিও আঁচলে তোমার...

এও সুখ ~ অনুপম দাশ শর্মা

সুন্দর নতুন করে সুন্দর হয় না,
হয় গভীরতরো আনন্দের
উৎসমুখ,
প্রতিটি শব্দের থাকে নিজস্ব গন্ধ
আহ্লাদের টোল পড়া গালে
অনিবার্য সুখ !

প্রচুর দূরত্ব হয়ে আছো ~ শৌনক দত্ত

( প্রয়াত লেখক , কবি , প্রকাশক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রসূন বসুর প্রতি  শ্রদ্ধা ) 
------------------------------------------------------------------------------------------------

বড়দিনের এই রাতে দাঁড়িয়ে আছে দুজন অচেনা মানুষ।একজন সাদা শুভ্র ধূতি পাঞ্জাবীতে অন্যজন পেরেক বিদ্ধ কাঁটার মুকুটে।
পৃথিবী কি আয়তনে বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন অথবা ক্রমান্বয়ে সীমিত।বিশ্বাসের আঁতুড় ঘরে একজন জন্মেছেন কুমারী মেরির গর্ভে অন্যজন একটি দুরত্বে ক্ষুধার দেশে ব্যর্থ চোখে শীতের সকাল বদলের আসন্ন নবান্নের পয়মন্ত দুপুরে।একজন যীশু অন্যজন প্রসূন বসু!পরস্পর বিরোধী দুজন মানুষ অথচ এক কন্ঠস্বর একই পোট্রেট।দুজনের বুকেই জোছনার জলে বদলে দেবার পেন্ডুলামে সেবা দিনরাত!
যীশু গল্প কুয়াশা।প্রসূন বসু জীবন্ত অথচ গল্পহীন নিরহংকার বিস্ময়।নীল নীল জলে নিমগ্ন স্নানে যেসব নির্ভেজাল মানুষেরা আসে তাদের অন্যতম একজন প্রসূন বসু অথচ রৌদ্রময় রুপোলি সমুদ্রের শেষদিনে কে জানতো জন্মে যে চাঁদের দ্বিতীয় নাম নিয়ে জন্মগ্রহন করে সোনার হরিন আর নিজের সুখ,অর্থ বিলিয়েছেন তার জন্য বেদনার ভায়োলিন বাজিয়ে কেউ আসবেনা সাদা রাজহাঁস আর কৃতজ্ঞতার সিম্প্যাথী নিয়ে শিয়রে!
আজ প্রসূন বসুর জন্মদিন।এইদিনে এসব লেখার হয়ত মানে হয়না কিন্তু সান্তাক্লজের উজার করে দেয়া ঝুলি যখন ইদুঁরে কাটে।কন্যা,পুত্র সংসার নিয়ে যখন অর্থকষ্ট বুকে চেপে বিছানায় শুয়েও যে স্বপ্ন দেখার সাহস জোগায় তখন বহুকাল আগের যীশু যেন সাদা ধূতি পাঞ্জাবীতে মিশে এক হয়ে যান যেন বিশ্বস্ততার উঠোনে সুস্থতায় বলে উঠেন ওদের তুমি ক্ষমা করো।কিন্তু কাকে ক্ষমা করবে নিরুপায় শব্দ?
জলের ক্ষতচিহ্ন স্বপ্নের সুদূরে দাঁড়িয়ে আজ যারা প্রসূন বসুর উদারতা,উজার বন্ধুত্বতা,রাজনৈতিক মেধা নিয়ে ভ্রমণপথে তারা আজ হয়ত জন্মদিন তো দূর মানুষটিকেই ভুলে গেছেন শূন্য সাঁকোর নির্জন টানে!
কেমন আছে প্রসূন বসুর ছায়ারা(তার সন্তানরা)ব্যর্থ বিষাদে সাধে বিশ্বাসে বিধ্বংশ নিহারিকা বুকে শোভন সংসারে।
প্রসূনদা উচিত ছিলো তোমার বাস এক্কেবারে আমার পাশেই হওয়া।বকুল জানালা খুললেই তোমাকে দেখা যেতো দেয়ালের শার্টে শ্লোগান নয় আজ দুজনে বসে লিখতাম শুভ জন্মদিন আর তুমি কয়লার দাগ মুছে মুচকি হেসে বলতে দূর পাগল জন্মদিন আবার কি জন্ম তো রোদেলা খোলস বিলিয়ে যেতে হয় আর ভাসমান মেঘের মতন আকাশে মাটিতে লিখে যেতে হয় অবিরাম অন্বেষা আর পরের জন্য নিজেকে!
ব্যক্তিগত দেরাজ খুলে পরিচিত তোমার দেয়া একশ টাকার নোট আর আয়নাটি বার করি।আকাশে ওটা কি জোছনা নাকি সূর্যের মৃত রোদ্দুর আমি কিছুতেই পাঠাতে পারছিনা তোমার প্রিয় ফুল কিছুতেই বলে পৌঁচ্ছাতে পারছিনা শুভ জন্মদিন তাই গীর্জায় এসে দাঁড়িয়েছি তুমি এত দূরত্ব হয়ে আছো কিছুতেই তোমায় ছুঁতে পারছিনা সহসা ঝাপসা চোখ আর আলোক ধারায় মনে হলো ক্রশে যীশু আর তুমি একাকার!
এ কি দেখার ভুল নাকি উদাসিন ডানায় দ্বিধাগ্রস্ত অধিবাসে তুমি বলে গেলে আবার প্রসস্থ প্রতীজ্ঞা জ্বালো আলোকিত হোক বোধি,উদাসি পথের ভাসমান ধুলো ঝরা ভালোবাসা--

বাঁধন ~ পিয়ালী পাল

বাঁধনমানা আলো 
তোমার ললাট জুড়ে—
মা গো,
বাঁধন তোমার কোলে।

বড়দিন ~ অরিজিৎ বাগচী

প্রতি বছরের শেষে
পাতা ঝরা শীতে
আসে এই বড় দিন ।।

মাতা মেরির কোলে
ঈশ্বর শিশু দোলে
যিশু জ্বরে শহর রঙ্গিন ।।

কিন্তু রোজ সকালে
ওই চায়ের দোকানে
যিশু কেন খাটে রাত-দিন ?

অথবা কোনো সিগন্যালে,
যিশুরা গাড়ির নাগালে,
নগ্নদৌড় কেন খিদের সন্ধানে ?

হয়তো কোনো ডাস্টবিনে
ফুটপাথে কিম্বা উঠোনে
আজও যিশুরা মৃত্যুর সম্মুখীন ।।

তাও শহর মাতে
কেন্ডেল হাতে মাঝরাতে
যিশু কে বরণ উৎসবে ।।

প্রেম বোধ ~ অনিরুদ্ধ দাস

একটা তাড়না, একটা বোধ
নিয়ে পালিয়ে বেড়াই,
ঘুমঘুম প্রেম নেই
কিন্ত অস্পষ্ট মুখটা আছে
তাঁর নেশায় পালিয়ে বেড়ায়;



তপস্বীর মত---এক সাধনায় মগ্ন
সাধক হয়ে বসে আছি,
মনে--- গুলাম আলির গজল
আমার জিনের পরতে পরতে
নামে---অমর প্রেমের এই সাধনায়
বাউল সুরের ঘুরঘুর
জন্ম জন্মান্তর ধরে

কেন জানি না!
তোকে ঘিরে কোনো
যৌনতার লেশ মাত্র নেই---
আছে, শুধু নৈবদ্যের ধুপের নেশানেশা

তোর কাছে কোনো দায়ও নেই
কোনো দায়িত্বও নেই
আছে ---শুধু নিজের কাছে...

হয়তো তাই
তোর জ্বর, জ্বরে---
সারা দিনরাত্রি ---ঘুমঘুম

একটা যুদ্ধ ---
আমি--- আর মন-আমি
নি:শ্চিত পরাজয়ের আশায়
তেপান্তরের রচনা
কল্পিক সম্পকে`র দোলাচল
নিয়ে ---এই যাপন
এই জীবন...

ফিরে গেছে ~ সুপ্রতীম সিংহ রায়

একে একে আজ ফিরে গেছে ওরা
বহুকাল আগে যারা এসেছিল দলবেঁধে
দশদিক হতে হাতে-হাতে ভিক্ষার থালা
তারা আজ একে একে ফিরে গেছে 


আমি শুধু শেষবেলা ওদের মুখ দেখেছি
সমস্ত বিরহ কিংবা হতাশায় নীল
চোখের কোণে জমাট পিচুটি দাগ
ওরা নাকি কবিকে ভালবেসেছিল কবিতা ভুলে
প্রতি স্তবকে স্তবকে খুঁজেছিল তারা নিজেকে
আবার কখনও নিষিদ্ধ সন্ধ্যায়
কুমারী স্তনে প্রলেপ দিত ওরা
কবিকে পাওয়ার অকূল কামনায়


সেসব আগুন আজ নিভে গেছে
স্মৃতি বলতে কেবল রেখে কিছু রক্তছাপ
এপাশে ওপাশে পড়ে থাকা ভাঙা করোটি
আর ততাধিক ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়
ধ্বংসস্তুপ পাওয়া যায় আমৃত্যু যুদ্ধশেষে


যদিও কবি স্বভাব নির্লিপ্ত তখনও
যেমনভাবে স্থবির অবৈধ আজন্মকাল
তবু রোদ মরা ব্যর্থ শেষবেলায়
শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিল তারা-
"ভালো থেকো কবি,
পারলে মনে রেখো
না  হলে স্থান দিও কবিতায় 


শেষমেশ ওরা সব চলে গেছে
যারা সেদিন দেখেছিল দলবেঁধে
স্বপ্নের মুখাগ্নি করে দশ দিকে
শুধু ওরা ভুলেছিল শ্যাওলামাখা সত্য-
"মৃতের শরীরে কেবল মূককীট বাসা বাঁধে
স্তব্ধ হৃদয়ে কখনও প্রেম ভ্রুণ না " 



অনুভব (১৭) ~ সিক্তা দাস

রাত্রিকালীন নির্জনতায়, সাগরের উত্তাল ঢেউ নৈঃশব্দকে আলিঙ্গন ক'রে, বিপরীত পারের
কথা বয়ে নিয়ে আসে। প্রতিঘাতে, সুতীব্র অন্ধকার ছিঁড়ে তীব্র আর্তনাদের মতো, কখনো সে কথা কান্না হয়ে ফিরে আসে। বিন্দু বিন্দু মুক্তো জমে সাগরের বুকে।
প্রহর জানে সে ইতিকথা... তবুও, প্রতিকণা নৈঃশব্দকে প্রহর শুষে নিতে চায় আকন্ঠ......কিন্তু ব্যর্থ প্রয়াসে কালের নিয়মে প্রহর মিশে যায় কোলাহলে...শুধু সাক্ষী হয়ে থাকে ইতিকথার। নৈঃশব্দের সঙ্গে মিলন অধরা থেকে যায়।

লজ্জা ~ মানস চক্রবর্তী

আমার বড্ড লজ্জা করে
আমি মুখ লুকোবার জায়গা খুঁজি
চোস্তা- পাঞ্জাবি পড়ে
জ্যাকেট মাফলারে
কবিতা পাঠের আসরে
কবিতা পড়তে যেতে
ঘেন্না করে নিজেকে
অনাহারে মৃত শ্রমিকের কথা বলতে
মানুষের কথা বলতে
মেকি মনে হয় সব
আমার যাওয়ার কথা ছিল মিছিলে । 

যুগল কবিতা ~ রঘুনাথ মণ্ডল

স্বপ্ন (১)

আমাকে ছুড়ে ফেলো নদীতে
বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে কাঁপতে কাঁপতে তীরে আসবো 
 নারীর কোলে কাঁখে দোল খেতে পৌছে যাবো শোবার ঘরে
যার একটাই ঘর.....
কোলে শিশু নেই অনেক বছর

স্বপ্ন ( ২ ) 

সকাল হলেই মা পাশে থাকে না
অনেক ভোরে
ট্রেন ধরে
কাজে যায় ..
ইট বালি মাথায় দিয়ে
বাবুদের ঘর বানায়
আমি একলা ঘরে স্বপ্ন বুনি
বড় হয়ে বাবু হবো
কোন মা কাজে এলে
ছেলের কাছে পাঠিয়ে দেবো 

বিষাদ নন্দিনী ~ সমিতা রায় চক্রবর্তী

দেওয়ালে ধরেছে ফাটল ,
চুয়ে পড়ছে তরল থেকে 
তরলতর  বিশ্বাস আস্থা !

মেরামতি র অগাধ চেষ্টা বৃথা
মন্দ লাগে সকল প্রলেপ
মন্দ সবই কথা -

স্মৃতিচারণা য় কেটে যায় দিন ,
কেটে যায় রাত ,
ভঙ্গুর প্রেম ; বিষাদ জাগায় -
মিথ্যে অঙ্গীকারের হাত !

সব যেন ঠিকই আছে
জ্যোত্স্না মেখে চরাচর হাসে -
ঝিল্লি র গান মিলন তিয়াসে ;
নিশি পাখির প্রেমাতূর ডাক !
শুধু বিষাদ নন্দিনীর চোখে জল ; 
ঘন বিষাদে কেন সে ভাসে ?

কাকজ্যোত্স্নায় ঘুম ভাঙ্গা চোখে
হাতড়ে খোঁজে ভালবাসা মাখা দিন -
রাত জাগা চোখ অতল ক্লান্তি মেখে
ফিরে পায় এক সীমাহীন মুহূর্ত ---
বিমর্ষ বেরঙিন !

হেমন্ত রাতের দীপালি কা
জ্বালায় নি আজ মনের আলো ,
দূর গগনের আকাশ দীপে --
ঘ না ন্ধকার গহীন কালো !

ভৈরবী সুর , প্রভাত পাখির গান
প্লাবিত করে না মনের দুকূল -
ম্রিয়মান বসন্ত ; ঝড়ে পড়ে শুকনো
পলাশ ; অকালমরণে আম্র মুকুল !

বিষাদ প্রতিমা তোলো মুখ
মোছ অশ্রুজল ,
দেখ হিয়ার মাঝে অপেক্ষমাণ
শব্দের ভ্রূণ ;
কাব্য রূপে চায় ভূমিষ্ঠ হতে -
করো সৃষ্টি ; উল্লাসে মাতো
প্রাণভরে নাও নিজ সৃষ্টির
সুগভীর পরিমল !

অব্যক্ত সঙ্গী ~ শুভম মুখোপাধ্যায়

ভালো করে দেখে বলো, ভাবো সব ঠিক হয়ে যাবে
জলের সরের ‘পর আকাশ ভেঙেছে সাদা ছুরি
আজ আর স্তর নেই কেবল বিন্দুগুলো আছে
ভালো করে চেয়ে দেখো, আজকে চিনতে পারো কিনা।

সবটা যায় কি বোঝা? আধো শীত, হাওয়া দেয়না?
এখনও তোমার কেন জলছবি কেঁপে ওঠে, ভাবো-
সহজ সাজিয়ে নিতে এখন কতটা চাল বাকি
যতটা থমকে আছো, ততটা জবাব মিলবে না।

সমস্ত চেয়ে দেখো, মাঝখানে সেতু জলছবি
যতটা আকাশ পেলে, গলে গেছে শিকরের ডগা
আধো শীত, কুয়াশায়, তুমি আজও ভয়ে কেঁপে আছো
এখন উত্তর নেই, এবার ফিরেও যেতে পারো।

ততটা নিজের হয় যতটা জলাঞ্জলি দেওয়া
ভাবো আজ কত সুদ দিতে পারে চুপ স্বাধীনতা।

ভিনদেশী প্রেম~ জয়দীপ বসু

ছোঁয়া ছোঁয়া ভালবাসা 
বেগুনী ক্যানভাস 


কুয়াশায় মেঘময়
অ্যান্টনি নিকোলাস


যবে চাঁদ মেঘ মাখে
জোসনায় আদুরে 


এদেশের মেম ,অভিমানে
চলে দূরে ---- বহুদূরে

তোমায় লেখা শেষ চিঠি ~ রিক্তা চক্রবর্তী

রাহুল ,
এ চিঠি যখন পৌঁছবে তোমার কাছে
তখন আমি ধূসর রূপকথা মোড়া 
উদ্ভ্রান্ত পৃথিবীর শেষ বেডে শুয়ে
ভীষণ প্রিয় শীতে এখন রক্তের গন্ধ
ক্যানভাস জুড়ে এখন পথ শিশুদের কান্না

আচ্ছা রাহুল ,
অতীত কি কখনও বর্তমান হয়না ?
তোমাকে ছেড়ে থাকি এখন
প্রতিটি দিন আর রাত
না বলা কথাগুলো কবেই যে
নামহীন ছোটগল্প হয়ে গেছে !
এখন লাটাই গোটানোর পালা


তুমি চেয়েছিলে আয়ু বাড়ুক
আর আমি
জন্মসূত্রে মৃত্যুসূত্রে আবার না ফেরার
প্রতিশ্রুতি নিজের কাছে নিজেই বহন করি
রাহুল ,
আমি তোমাকে নয় , ভালবেসেছি জীবন কে ।

সারাকাল বৃষ্টি ~ সুনীতি দেবনাথ

পরিত্যক্ত বিকেলে এক ঝাঁক বৃষ্টি
হুড়মুড় করে ঝাঁপিয়ে পড়লো এসে।
সাত তাড়াতাড়ি গোধূলি রঙবাহার
পাহাড়ি আলখাল্লায় লুকিয়ে পড়লো,
পাহাড় জবুথবু যেন জানে না কিছু।

এবার বৃষ্টি কেবল বৃষ্টি ঝমাঝম —
বঙ্গোপসাগরী অকাল বায়ুর ডানা
বৃষ্টি ঝরায় মত্ত উল্লাসে অবিরাম।

একাকী নির্জনে এক দুঃখী কণ্ঠস্বর
কান্না ঝরায় মাতাল বৃষ্টির সঙ্গমে,
চুল্লির জ্বলন্ত কার্বন কখন শেষ
ভিজে যায় ঐতিহাসিক আলমারিটা,
জবজবে স্মৃতিরা সব হারিয়ে যায়
গরান সেগুন শালের ঘন ছায়ায় —

আজ বৃষ্টি শুধু ঐকান্তিকেই কাঁদায়।
কলরব মুখর জনপদ নিঃস্তব্ধ
আজ শুধু হঠাৎ বৃষ্টির আন্দোলন,
রক্তের রক্তিম আবহে নিয়েই যায়।

বহু সাম্প্রদায়িক জন জনপদে ছিল
মিলেমিশে সুগন্ধিত মশলার মত।
বিভ্রান্ত চোখ দেখে আজ রক্তিম ধারা
এ বৃষ্টি তো বৃষ্টি নয় শোণিত বর্ষণ।
আর একা এক ঘরে একা এক লোক
দাঙ্গায় নিহত স্বজন নিয়ে একেলা
বাকি দিনগুলি গুনে গুনে হয়রান। 

একদিন এই ঘর বসত ভরন্ত
গমগমে ছিল, সুখ দুঃখ হাসি কান্না
নানা কিছু গায়ে গা মিশিয়ে থেকেছিলো,
বিবাদ রহস্য প্রেম এতো সব ছিলো —
আজ আর কোন কিছু নেই শূন্য সব,
সময়ের কঠোর ডানায় চেপে আসে
আগুন বৃষ্টির স্রোতের মতন আসে
হালকা ডানায় সব কিছু উড়ে গেলো
ফেরেনি তো আর কোনদিন কোনকালে।

নিঃশব্দতায় আছে নিঃসঙ্গ প্রাণ এক
শব্দহীনতায় পরিপূর্ণ বাড়ি এক
তার মাঝখানে পুরোনো একটি প্রাণ।
শব্দহীনতাও যে মুখর হতে পারে
জানা ছিলো না তো, সেই শুধু জানে
বিশ্রস্ত বেহালার বিশ্রম্ভালাপে শোক।

আজ ঘরের ভেতরে আর এক ঘর
এই বৃষ্টির দাপটে ঠাণ্ডা হয়ে গেলো,
বৃষ্টির ঝাপটা আনে স্মৃতির দঙ্গল
রুদ্ধ দরজায় কড়া নেড়ে ক্লান্ত ওরা
প্রাঙ্গণে নেমে শুয়ে পড়ে ঝুম বর্ষণে
মৃত সৈনিকের মত সারিবদ্ধ হয়ে।

শুধু সারাকাল বৃষ্টিধারা ঝুম ঝুম
বহুকাল জমে থাকা বহু মানুষের
অশ্রু ধারার মতন ঝরে ঝরে কাঁদে।
তাই ভেতর ঘরে একা মানুষেরই
একাকী বিষণ্ণ উৎসবে শেষ কান্নায়
শেষ মোমবাতিটিও পুড়ে নিভে যায়।

গল্প বলি শোন~ আমি পিয়ালী


কোন এক মৃত আলোর বিকেলে পৌষের ঘ্রাণে উতল হাওয়ার দল উড়ো চিঠি পাঠিয়েছে ইউক্যলিপটাসের বাড়ী . .
ইউক্যলিপের না ঝরে পড়া পাতাগুলো ওদের আসার খবর শুনে কলস্বরে বলে উঠে :
এই তোরা গল্প শুনবি ? শুনবি তো বল্
আমি আমার কুলপিতে রোদ জমিয়ে রেখেছি অনেক, সোনা-রোদ !
এলোচুলে শাকচুন্নিটা রোজ এসে দাঁড়ায় ওটা চুরি করে পালাবে বলে ! কিন্তু আমি তোদের জন্য সেই সুখীরোদ আগলে বসে আছি কতকাল ! সে খেয়াল আছে তোদের ?
ওরে রে রে রে রে . রে . রে . . . . . .
আরে ! এসেছিস ! আয় আয়,
কিন্তু দ্যাখনা তোরা দেরী করছিস দেখে রোদ গুলো সব বেচে  দিলাম এইমাত্র শূন্য মেঘেদের কাছে . . .
মন খারাপ করিস না ! ! ! !
তার চেয়ে তোদের নদীর গল্প বলি চল্
ছলাত্ ছল ছলাত্ ছল . . . . . . . .
সে এক কিশোরী নদী ঘুঙুর পায়ে লবণের মরুভূমি বুকে ছুটে চলেছে কবে থেকে, তাকে জিগ্যেস করি - কিগো কন্যে বয়েস কত তোমার ?
" আলসে নদী বিবাগ মানে
ঠিক যেনো ওই উদাস মেয়ে
দুঃখগুলি পত্রাবলি
উড়ছে রাঙা আকাশ ছেয়ে . . "
দেখি লবণ বিন্দু গুলো ভরা আছে তার ক্ষীণ স্তব্ধতাতে !
সেকি ! নদীর গল্প ভালো লাগেনি ?
তবে চল্ রাজ্পুত্তুরের গল্প বলি - রাজকন্যা যার রুপমতী
হা হা হা ! এবার খুশী ?
" কিন্তু রাজা রানীর গল্পে বড়ই একলা হবার ধ্বস
প্রজাপালক রাজার মন অল্প কথায় বশ
তবুও দেখি নিকষ আঁধার ওদের অলংকারে
কথায় কথায় লড়াই করে ওরা আড়ে ঢাড়ে "
হাওয়ারা এখন বেজায় খুশি," বলে- তারপরে, তারপরে ?
আমি তখন গল্প হারাই অথৈ বালির চড়ে"
ততক্ষণে . . .
" মুখ ব্যাজারে হাওয়ারা সব ফিরতি ঘরের পথে
সময় দেখি হাত রেখেছে ইউক্যলিপের হাতে "
বলছে সময় -
"থামছ কেন? বহন করো ক্ষত
আমি তোমায় পাঠিয়ে যাব ইশারা অবিরত
আমিই শুধু থাকব সাথে আর যাকিছু বাসি
ইউক্যালিপটা বোকা সত্যি , আড়াল করে হাসি"

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...