মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

“A good editor is like tinsel to a Christmas Tree...they add the perfect amount of sparkle without being gaudy.” 
― Bobbi Romans


হাজারটি লেখার মধ্যে থেকে সেরা লেখাগুলিকে নির্বাচন করাই সম্পাদকের কাজ । আর এ কাজটি সত্যিই বড়ই দুরূহ ও কঠিন ।

ছোটবেলা থেকেই মনের কোণে একটি সুপ্ত স্বপ্ন প্রায়শই উঁকি মেরে যেতো । বাবা সে সময়ে 'আগামী' নামে ছোটদের একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতেন । বাবা কে দেখতাম রাত জেগে এডিটিং করতে । আরও পরে আমাদেরই প্রকাশনা সংস্থায় বাবার তত্বাবধানে 'এডিটিং' এবং 'প্রুফ রিডিং ' শেখা আমার ... ২৬ শে মার্চ ২০১৫ ... 'রোদ্দুর ' সৃষ্টির জন্ম লগ্ন থেকেই লেখা নির্বাচনের দায়িত্বে থেকে বুঝেছি প্রচুর লেখার মধ্যে থেকে Cream of the Lot গুলি কে বাছা সত্যিই খুব কঠিন । প্রত্যেক লেখাই সেই কবি বা লেখকের নিজস্ব মননজাত ভাবনা এবং তা একান্তই আপন , তবুও পাঠকের কাছে লেখক বা কবির কিছু দায়বদ্ধতা থাকে বৈকি ! 

অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন ব্লগ স্পটের নাম 'মুঠো ভরা রোদ্দুর ' কেন ? 

 মুঠোয় করে 'রোদ্দুর ' এর কিছু সেরা লেখা নিয়েই তৈরি এই ব্লগ স্পট , আর তাই ... 'মুঠো ভরা রোদ্দুর '

আগামী সংখ্যায় আশ্বিনের শারদপ্রাতে আলোর রোশনাই, প্রতিমার সাজসজ্জা এবং মণ্ডপের অলংকরণ সহ  নিয়ে আসা যাবে আরও কিছু সেরা লেখা । ততদিন পর্যন্ত ... সৃজনে থাকুন এবং সর্বোপরি ভাল থাকুন । 

শুভেচ্ছান্তে 
পিয়ালী বসু 






শব্দসিন্দুকে -- পিয়ালী বসু ঘোষ

মেদহীন শব্দগুচ্ছের অগ্নিপাথর ছুঁয়ে 
শুদ্ধ হও তুমি 
একমুঠো সঞ্জীবনী নিয়ে টুকরো চাঁদ উঠুক
সমুদ্র বালির রঙে তোমার ঠোঁটে 

শিরায় শিরায় ফেনিল স্রোতে 
শোনিতের বুদবুদ ধ্বনি শোননি বুঝি! 

মায়াবী বাঁশির সুরে শব্দহীন চরাচর 
মৃত্যুর ঘ্রাণ মাখে নাকি জীবন ডাকে 
ভেবেছ কখনো? 

নিঃশব্দ মহাশূন্যতা কানাকড়ি দামে কিনে 
বরং আটপৌরে হও 
শব্দ কে মুক্তি দাও সিন্দুকে

আমার প্রিয় কবি -- লাভলী বসু

"শোকের সাথে আড়ি সত্যি দিতে পারি 
ডুয়ার্স যখন সাকিন আমার , আমার বাসাবাড়ি l "


এই অকপট স্বীকারক্তি ডুয়ার্সের কবি --অমিত কুমার দের ---আমার অন্যতম প্রিয় কবি l আজকের আধুনিক নগরকেন্দ্রিক সভ্যতায় যেখানে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ , পাখি , নদী ,পাহাড় , চা -বাগান ,কবিতায় সেখানে সহজ হবার মন্ত্র শেখায় পাহাড়ীনদী ও ঝর্নার জল ,জংলি ফুলের গন্ধে ফুসফুসে ঢুকে পড়ে , পাহাড় পাঠ করে মেঘেদের চিঠি , পাখিরা পালক উপহার দিয়ে কাছে রাখার আকুতি জানায় পাঠকের কাছে আর সেই অবসরে ছন্দের মায়াবী নকশীকাঁথায় কবি ছুঁয়ে যান পাঠকের মনন --
"নিবি আমায় ? নে না ---
দেখবি তখন আমি যে তোর আর জনমের চেনা l "


ভার্চুয়াল জগতে এসে আমি আরও একজন প্রিয় কবিকে পেলাম তিনি --পিয়ালী বসু l তাঁর লেখনীর অসামান্য দক্ষতা প্রতিনিয়ত আমায় নারী হিসেবে নিজেকে নতুন করে চেনায় ---


"শোষন ও শয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতায় 
উন্মুক্ত হয় অন্য এক নারীজন্মের ইতিকথা l "


তাঁর অসাধারন সাহসী ও আধুনিক লেখনীতে খুঁজে পাই জীবন দর্শন -----
"মৈথুনের সংলাপে আলোড়িত 
'সুইসাইড নোট ' লেখা শুধু 
its not about the love you had 
but 
about the lovers you had."
------------ নতুন করে অন্যভাবে ভাবতে শেখায় জীবনকে l 

এক "ছোটি সি মুলাকাত" -- জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী

" মেলেছো চুল ,খুলেছো ডানা
জানি আঙ্গুল ছোঁয়ানো মানা
তবু আজি আমি রাজি
চাপা ঠোঁটে কথা ফোটে
শোনো.....
আমাকে রাখো বুকের পশমে
তোমার নরমে"

জানি কথা হবে বাতাসের ফোনে
তোমার আমার গোপনে গোপনে

"লগজা গলে
কে ফির ইয়ে
হসিন রাত হো না হো
শায়দ ফির ইস জনম মে
মুলাকাত হো না হো "

আজ আবার রাত চাঁদসোহাগী হোক
আজ আবার এই মন বিবাগী হোক
চুপিচুপি আজ একটু গল্প হোক
তারায় তারায়

হাইওয়ে আর ফেলে আসা সুর
পাশাপাশি থেকো যাব যতদূর
এঁকে দেবো দেখো জলছবি মধুর
চাইলে ইশারায়

"হমকো মিলি হ্যায় আজ ইয়ে
ঘড়িয়া নসিব সে
জি ভরকে দেখ লিজিয়ে
হমকো করিব সে"

ফিরে যেও নয় এ গানের শেষে
নাম লিখে যেও উষ্ণ নিশ্বাসে
আমি রেখে দেবো আলতো বিশ্বাসে
এ হাত হাতে

মুখচোরা যত অভিমান এসে
বলে যাবে কথা বুকপকেট ঘেঁষে
ঠোঁট খুঁজে পাবে বোতামের শেষে
প্রেম অস্কারাতে

" আঁখো সে ফির ইয়ে প্যয়ার কি
বরসাত হো না হো
শায়দ ফির ইস জনম মে
মুলাকাত হো না হো "

জানি ছুঁয়ে যাবে চিবুকের তিল
আধো ভেজা চোখের পরিচিত কোণ

দেহাতীত -- অনিরুদ্ধ দাস

তোর ওই নাতিশীতোষ্ণ স্তনাংশুকে
শ্রাবণ নেই
অবধূত অনুসন্ধিৎসা থাকে।
#
ডিম্পল রাইকিশোরী সুস্মিতা হয়ে
বনসাই আঁচলে বাঁধতে যায়,
তখন অবশ্যম্ভাবীভাবে --
অরিন্দম হয়ে ওঠে,
যেন অপচিকীর্ষা সূর্ষগ্রহণ ;
#
বরং আমি ---
ডুবুরী- অনুসন্ধিৎসা নিয়ে
কয়েক কৃষ্ণচূড়ার জন্ম নিতে পারি,
তোর মিথোজীবি সিঙ্গারের
অন্যতম অনন্য একক হয়ে ;
#
মাহি! বার্থটব নয়,
আমার চাই --- 
শুধু তোর সল্লার ( দিঘি) বুক..

মেয়ের মত মেয়ে --- বিউটি সাহা

মেয়ে তুমি যাচ্ছো নাকি
তটিনীতে খেয়া বেয়ে ?
গ্রাম ছাড়িয়ে মাঠ পেরিয়ে
দিবা নিশি ভাঁটার টানে !
:
আকাশ এখন রক্তিম লাল
রবিও যে যায় অস্তমিত
বারিদ ঐ ঘনায় দেখো
তড়িৎ খেলে সমুখ পানে।
:
ছোট্টো তোমার দেহখানি
কলহও অনেক তোমায় নিয়ে
লহরী এখন আকাশ সমান
তবু ভয় নেইতো তোমার প্রাণে।
:
তোমায় এখন মেয়ের মত
মেয়ে বলে সবাই জানে ।

এভাবেই ভালো থাকি -- কুন্তলা চক্রবর্তী

প্রতিদিন নতুনভাবে বিরোধ ঘটতে থাকে
আপোষের সাথে আত্মসম্মানের
------
ভোরে, অভিষেক হয়, 
সারা দেহে প্রভাত রবির লোহিত কিরণ মেখে
------
আনন্দ লহরী ওঠে 
সমগ্র সৃষ্টির রন্ধ্রে রন্ধ্রে, কোষে কোষে
------
প্রাত্যহিকতার নাও বাওয়া শুরু হয়
শারদীয়া জীমূতের মতো
--------
দিবা যতো প্রৌঢ় হয়,
পায়ে পায়ে আসে ক্লান্তি কুলকুল তটিনীর মতো
---------
নিস্তব্ধ রাত,
আত্মসম্মান ক্ষণপ্রভা হয়ে গর্জায়
------
তারপর,
এক আঁজলা আপোষের বৃষ্টিপাত

উন্মোচন -- জয়তী ভট্টাচার্য অধিকারী

# নদী আর ঢেউ
কোন কম্পাস ছাড়াই দিশা খুঁজে নেয় যে স্রোতস্বিনী
আমাদের সান্ধ্য মজলিশের একক সাক্ষী
তার তরঙ্গ গুনতে গুনতে বয়স বেড়েছে সম্পর্কের
একান্তে কাটানো সেই সন্ধ্যেগুলো
আলোর চেয়েও দ্রুতগামী

# দ্বন্দ্ব ও শরীর
অনেকবার ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলি যে দেহ
উন্মুক্ত আকাশের নীচে উন্মোচিত হতে
তার কোন বিরোধ ছিল না
ছিল চোখের পাতায় অনাস্বাদিত তিরতিরানি
লজ্জাবতী লতার মত

# দিন আর মেঘ
স্বাধীনতা দিবসেও এভাবেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছিল
জীমৃত, আদর আর মলমলের চাদর
জড়িয়ে রেখেছিল প্রথম ভালবাসাবাসিটুকু
চার দেওয়ালের অন্ধকারে মিশে গিয়েছিল
ফ্রেঞ্চ পারফিউম আর স্নানের গন্ধ

# লাল নৌকা
নোয়ার নাও’তে ভাসতে ভাসতেই পৌঁছে যাওয়া যায়
জীবনের প্রান্তিক স্টেশনে
শিরা-উপশিরায় ছুঁয়ে যাওয়া আগুন নেভার আগেই
রক্তবর্ণ সিঁদুরে-দিগন্তরেখায় মিশে যায়
চিতা-ধোওয়া ছাই 

# সূর্য না বিদ্যুৎ
ঘুম ঘুম চোখের পাতা স্বপ্নভারে অলস
মার্তন্ডর প্রথম আলোয় মিশে যায় পবিত্র প্রণব
রাতজাগা চাদরের ভাঁজে অযথা সন্দেহে 
মন ছুটে চলে তড়িৎগতিতে
“আভি না যাও ছোড়কে...”

সুখ -- সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

সুখের দিনে, চতুর্দিকেই উদার থাকে দরজা
তখন দেখো মনের কোনে কৃপণ সবজিলতা
বলতে পারি, তখন সবই দুঃখটুকু বাদ
বৃষ্টি জ্বলে ওঠা আকাশ খোঁজে মেঘের ফাঁদ

কত মানুষ মেঘের ফানুস, কোথায় রাখি সুখ?
বলব কেন? কোথায় রাখি পরন্ত পরাঙ্মুখ
একটাই তো শর্ত আছে শুধুই আমার কাছে
পদ্মপাতায় সুখের বাস আলগা হয়ে গেছে

টইটুম্বুর হয়ে যখন আসতে আসতে ভাসে
ভাসতে ভাসতে নাচে, কেবল আমার ভিতর হাসে

মনকে বোঝাই আমি নদী, এই কি তোর গতি?
এতই কী তোর লজ্জা, নাকি এইটুকুই প্রকৃতি

লেখা-ছবি-আনন্দ -- পিয়ালী পাল

প্রিয় তুতান , 

ফেসবুকে তোর পোস্ট করা ডুয়ার্সের ছবিগুলো বেশ লাগলো। বিশেষ করে ওই ছবিটা যেখানে ধানক্ষেত আর চা বাগান পাশাপাশি, অদূরে পাহাড়। তোর এই সরল সুন্দর মন যেন এমন’ই থাকে ভাই, এটাই যে আসল আনন্দ। জানিস ভাই আমার কিসে সবথেকে আনন্দ হয়? কিছু লিখলে। মন থেকে সরাসরি টাইপ করি যখন, খুব শান্তি পাই। কবি জীবনানন্দ-এর কিছু কথা বারবার মনে পরে .......
“ আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাছ তুচ্ছ হয়, পণ্ড মনে হয়,
সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!”
নিঃস্বার্থ লেখার আনন্দই আমার কাছে সবচেয়ে দামি। অন্তত লেখার সময়টুকু তো আমি স্বাধীন। কেউ বলবে না “এটা করতে নেই ওটা করতে নেই”। লেখার আনন্দে লিখে যাই। সহিত্য-টাহিত্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লিখি না। মন খুলে কথাগুলো বলতে পাড়ি, এই শ্রেয়। যাইহোক, ভালো থাকিস ভাই, অনেক ছবি তুলিস। 


ইতি
তোর পিয়া দি

খাম বন্দী বিষণ্ণতা -- কাকলী মুখার্জ্জী

বুনো হাঁসেের জলতরঙ্গে মৌনমুখর অস্তরাগ
সান্ধ্যমজলিশে নিয়নের বোবাচাউনি, ঢিমে তালে সুর বেহাগ।

শহরে হঠাৎ আলো চলাচল,জোনাকি নািক স্মৃতি দাগে
কাঁপছিল মন নিরালা রকম, ডাকনাম নামল পরাগে
কে হারায়.....ইশারায়।

রাত পাহারায় বানভাসি নদী,গভীর বুকে আখর কাটি
দীঘল চোখের আয়োজনে,উষ্ণ বুকে
উজান -ভাঁটি।
কাটা-ঘুড়ি বিষণ্ণতা, হাতড়ে ফেরা চেনা ঘামে,
ডাক-হর-করা মনের লিখন,বন্দী থাকে
আকাশ খামে।

আ্ঁধার বেলার যাপিত প্রহর,জোনাক
আলোয় সৃষ্টি ভাঙে,
নকশিকাঁথার বেদন গাঁথা, অশ্রুনদী দুই নয়ানে

ন্যাকড়া-পুতুল -- প্রণব বসুরায়

চিতার ওপর যজ্ঞে বসি, কাঠের টুকরো হাতের কাছে
শৃগাল তখন একটু দূরে, মাংস ও মদ যত্নে আছে
ধূম্র ওড়ায় কোন গুহাটা, বিন-কারণে, অবাক দেখি
চিতার ওপর বসলো নদী, এমন কার্যে বিরাট ফাঁকি...
*
তাই তো দেখি সূর্য ওঠে, প্রপাত নামায় পাহাড়-চূড়ো
হ'য়েই আছি ন্যাকড়া-পুতুল, লাস্যে চিবোই মাছের মুড়ো..

অস্তগামী রবি -- স্বাতী বসু পাল


কাঁদছে শিশু ভক্ত সরে, সোনার তরী ওই
রইলো " খেয়া " ঘাটে ঘাটে রবি ঠাকুর কই
শেষ শ্রাবণ ২২ তারিখ শোকের মিছিল চলে
আগে পিছে লক্ষ মানুষ ভাসছে নয়ন জলে

চলছে কবি সবার কাঁধে তিল ধরেনা পথে
বঙ্গ বাসী কাঙাল হোল চলছে রবি রথে
যাহার নামে সরস্বতী র শঙ্কা জাগে মনে
তাহার চলা যায়না বলা এমন বরিষণে

হায় অভাগা ভারতবাসী ডুবল শ্রাবন বানে
আবার কবে উঠবে রবি ভবিতব্যই জানে
শ্রাবণ যখন রোদন ছড়ায় মর্মে আঘাত হানি
মৃত্যুহীন প্রানে কবি বাজায় বীণা খানি

মর্ম মূলে আজ ও শুনি সুরের গুঞ্জরন
এমন রবির দিপ্তি কভু হয় কি বিসর্জন
আমরা জানি শ্রাবণ ধারা অঘোর ধারায় ঝরে
রবির করে কলাপ তুলে ময়ুর নৃত্য করে

তিনি ছিলেন এবং আছেন সবখানে: আমার 'মা' -- জাকিয়া জেসমিন যূথী

সব যুগেই কোন একটি বিশেষ ব্যক্তি কারো না কারো প্রতি প্রভাব ফেলে। অন্তত বেশিরভাগ মানুষ কোন ব্যক্তিকে অনুসরণ করে। সেটি প্রত্যক্ষভাবে না হলেও অনেক সময় আনমনেই ঘটে যায়।
.
আমার জীবনেও তেমন একজন ব্যক্তি আমার মা। তিনি যেমন বড় ফামিলির বড় সন্তান ছিলেন, তেমনি বৈবাহিক সূত্রেও যৌথ পারিবারিক আবহেই জীবনযাপন করেছেন। আমিও সেই ছোটবেলায় কৈশোর পর্যন্ত নানাবাড়িতে বেড়ে উঠেছি। সেই সূত্রে একটি বিশাল পারিবড়িক আবহেই আমারও জীবনের কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। এভাবে যৌ আবহে বিভিন্ন রকম মানুষের বিভিন্ন রকম মানসিকতায় টিকে থাকার একটা বোধ গেঁথে গিয়েছে খুব ছোটবেলাতেই। 
.
আম্মু খুব ভালো রাধুনী। খেতে ও খাওয়াতে খুব পছন্দ করেন। আমার মধ্যেও সেই বোধ রয়েছে। এসব বিষয়গুলো অবচেতন মনে পবিকল ভাবমূর্তি পেয়েছে নাকি তাকে দেখে আমার তাঁর মত হবার ইচ্ছে জেগেছে তা সেভাবে স্পষ্ট হয়না। কিন্তু এখন বর্তমানে এসে ভাবলে মনে হয়, এটাই আমার আদর্শ হয়ে গেছে। 
.
মা গরীব দু:খী দু:স্থের সেবা করেন। সেটিও আমার মধ্যে আসে। অসহায়ের কষ্ট দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে কষ্ট হয়। নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে হলেও অন্যের জন্য নিবেদিত হতে ইচ্ছে করে। আজ তাই আমি নিজেই অনেক মানবিকতার সাথে জড়িয়ে যাই, জড়িয়ে আছি।এবং এই আদর্শ মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া।
.
মানুষের জন্ম বড় বিষয় নয়। মানুষকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসতেও মায়ের কাছেই শেখা। এখনো এত বড় হয়েও উচ্চ কণ্ঠের কথা তিনি বরদাস্ত করেন না। 
.
আমার বেড়ে ওঠার পরিমন্ডল থেকে এতটা এগিয়ে শিক্ষা দীক্ষা সৃজনশীলতায় পারদর্শী এই বর্তমান আমির পেছনে সর্বদা যার অদৃশ্য অথবা দৃশ্যমান সেবা ছিলো তিনি আমার মা। তিনি আছেনামার সমস্ত সাফল্য গাঁথার পেছনে। 
ভালবাসি আমার এই আদর্শকে, আমার এই অনুপ্রেরণাদাত্রীকে। 

রাতের শহর -- দেবাঞ্জনা পাল

শহরের কাঁধ বেয়ে উঠে আসা রাতগুলো
বাড়িয়ে তোলে এক অচেনা রহস্যের চিৎকার
কানাঘুষোয় বেড়ে ওঠা ফ্ল্যাটগুলোয়
তুলে ধরে স্লিপিং পিল্সের অধিকার
:
নাইট বাল্বে ফিলামেন্টে জ্বলে ওঠে
সব আগামীর চিন্তারা
আর স্মৃতির বন্ধ ঘরে উড়ে বেড়ায় জোনাকিরা
ভিড় ঠেলে উড়ে আসা অতীত জোনাক
ছড়ায় অন্ধ আলোক দিশা
:
আর অব্যক্ত কলম তখনই ব্যক্ত করে
ব্যাথিত মনের হাজারো না জানা কথা
নাড়িয়ে দেয় দিনে চলতে থাকা
বাসে ট্রামে মানুষের ভিড়ে
নিজের একাকীত্বের কথা।

স্বাধীনতায় --- মৌসুমী মন্ডল

জীবনের অনির্বাণ আলোকচিত্র নয়,
ব -দ্বীপের আহত মধ্যমায় খুঁজে পেলাম কিছু দগদগে রক্তাক্ত শহরের ফুটেজ।
অরুণলেখার বাগানে ফুটেছে ভুল রুদ্র ফুলেরা। পায়ের নীচে স্বদেশের মাটি কাঁদছে কাঁদছে। ঝলসে উঠছে ধারালো বেয়োনেট,
মায়ের গর্ভকোষে।
চলছে মৃত্যুর অভ্যাস, যাপিত দিনলিপিতে। প্রতিটি দিন, রাত্রির কাছে নিহত হওয়ার আগে নৈশগাছে নির্জনতার মরশুমী শুভ্র ফুল ফোটায়। ঠিক যেন শবদেহ ঢেকে দেয়ার শাদা চাদরেরা। স্বাধীনতার ঘোর কেটে যায়, সৌরউরসে চেপে বসে প্রিজমের তৃষ্ণা।
তবুও পতাকায় লেগে থাকে পরিযায়ী পাখির ডানার নির্মল রঙ।
জোয়ারের ঢেউ ভেঙে ভেঙে নিরন্তর বানিয়ে যাচ্ছি অভ্রভেদী ঝিনুকমালা।
নদী তুমি কার, কার বলো?
এপারের হিঁদুদের নাকি ওপারের মুসলমানের। মানচিত্র ভেদ করে নদী কাঁদে, শুধু কাঁদে।
এইসব কথাদের চেনে গঙ্গা, যমুনা, ভল্গা, টাইগ্রিসের স্রোতধারা।
ইতিহাসও জানে আসলে কারোরই
পায়ের তলায় স্হির মাটি নেই।
চেনা শহরের গলিতে একমুঠো বকুল ফুল তুলতে গিয়ে কুড়িয়ে পেলাম
তাজা প্রাণের রক্ত ঘ্রাণ।
একটি বৃষ্টিদিন ছুঁয়ে দেখতে গিয়ে
আমি হারিয়েছি অযুত সংখ্যার বসন্তকাল।

শব্দহীন শৌখিনতা -- রিক্তা চক্রবর্তী

চুপ করো 
- অসুখ মাখা চিঠি
নেমে যাওয়ার যন্ত্রণা
- আদরে ঘিরে রাখো আয়নার মর্মরে 
'
লেখো আয়ু লেখো বাস্তব
'
যে আঁধার আলোর অধিক 
- যে বালিতে ঝড়ের উত্থান 
সেই সব দৃশ্যপট সহ তোমার চোখের নীচে 
- উপমাশৃঙ্খলে আমার চরাচর জেগে ওঠে 
'
অন্তর্বর্তী সংকেতে এখন ঘূর্ণি'র প্রকোপ 
- নান্দনিক যন্ত্রণা এখন আয়ু রেখা ধরে 
'
লেখো আয়ু লেখো বিতর্ক 
- চুপ করো শব্দহীন হও 

অহং সিরিজ ( অহং - ১,২,৩,৪ ) -- সুকান্ত চক্রবর্তী

অহং -১


আমার আমিত্বটুকু নিয়ে নাও ,
এবার যা বাকি রইলো ,
তা দিয়ে সমস্ত ব্যাপ্তিকে
এককভাবে ভাবা যাবে ।

----------------------------------
অহং-২

আমি যখন নেশায় থাকি,
আমি উড়তে ভালোবাসি ।
কারন জানি, নেশা আর আকাশ
দুটোই অন্তহীন ; বন্ধনহীন ।
------------------------------------
অহং-৩

মন আমার একদিন ছেড়ে ছিঁড়ে
চলে যাবে সব । অন্তিম নেশার
ঘোরে যখন বায়বীয় আমার দেহ,
সেদিন সমস্ত হবে সমর্পণ । তখ্‌ন
দেখো , পেছনে রয়ে যাবে
পথে চলা অসংখ্য পায়ের ছাপ
----------------------------------
অহং-৪


রাত্রি গভীর হলে , একাকীত্ব নামে
চৌমাথায় ; হলুদ ল্যাম্পপোস্ট ঘিরে
কবিতাদের আস্পর্ধা বারে । চূড়ান্ত
নেশায় কাটে পরাধীনতার ঘোর ।
রাত্রি গভীর হলে , মনে পড়ে
শকুন্তলা , মায়াবী হরিণ , অহল্যা ।
মনে পড়ে অবিরাম বয়ে চলা
গোমতীর অগভীর শান্ত স্রোত 

আদিম ---- অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি

আজও কিছু লেখা শব্দহীন হয়-,শুধু তোমার আমার জন্য নয়...

কিছু মৌনতা তবু আজও বাঙ্ময়,
কিছু ফেলে আসা ছোঁয়া, চোখ-
আজও তবু কিছু চোরাবালি ডাক,
কিছু বিপ্লব আজি হোক...

লেখা থাক কিছু আদরে, সোহাগে-
শুধু চুপকথা বয়ে যাক।
কিছু পর্দারা আজ ঢেকে দিক ঘর
কিছু মৌনতা ধরা থাক...

লিখে যাক আয়ু স্তব্ধ মিছিলে,
লিখে যাক আয়ু অভিমান-
বন্দী থাকুক অক্ষর জুড়ে
অমরত্ত্বের অভিযান...

লেখ আয়ু, শব্দহীনতায় লিখে রাখো,ইতিহাস যা বলার নয়...
আজও, কিছু লেখা শব্দহীন হয়, শুধু তোমার আমার জন্য নয়...

বধির আঁধারে লেখা থাক -- দেবদত্ত মুখোপাধ্যায়

সময়ের স্রোতে নীল স্বপ্ন ভেসে যায়...
স্বপ্ন লিখি পাখির ধূসর ডানায় অনন্ত উড়ানে
ভেসে চলি বাঁচার আশ্বাসে নির্লিপ্ত একা
দীর্ঘতর স্মৃতির প্রবাহে ভেসে ওঠে কষ্টের দাগ
গাঢ় নির্নিমেষ চাঁদ..রাত্রিঘাতে কেঁপে ওঠে চন্দ্রব্যাথা
নিরাবয়ব আকাশ,তবু স্পর্শকাতর জ্যোৎস্নার ধারাপাতে লাস্যময়ী রাত্রির শৃঙ্গার....
পরিশেষে হৃদয় নির্বেদ
...বধির আঁধারে লেখা থাকে নির্লিপ্ত স্তব
স্তব্ধ সময়......নেমে আসে ঘুমের গভীরে--...
রেখে যায় শুধু ঝরাপাতার মৃত্যুকথা

স্তব্ধতা বিষয়ক -- সুপ্রতীম সিংহ রায়

তাহলে দুজনের দেখা হল-



ফিরে আসতে আসতে এই কথা মনে ভেবে
দূরে সরে এলাম আমরা


দু-দশ বছরের পুরানো ভাষা-সুর..
কাছেপিঠে..হাওয়ায় ভেসে উঠছে।

"আমাদের ব্যর্থতাই উপজীব্য"
শেষবার কথা বলে.... এইটুকু লিখে গেছিলে বোধহয়


ষোলোর বসন্ত কাটিয়ে আজ স্মৃতির দ্বারস্থ হতে
স্তব্ধতা... শুধু স্তব্ধতার কথা মনে পড়ছে ফের

বি টি রোডের কাছে -- মানস চক্রবর্তী

নিড্ল্ টা যতটা গভীরে
আরও বেশি শুশ্রুষা

ভালো হয়ে যাবে বলে ঝুঁকে
একান্তে উবে যাচ্ছে স্পিরিট
78/A কোথাও যায়না
ওটা কোন ঠিকানা র কে
কেন অস্পষ্ট হচ্ছে জলের তলা
চশমা গুনতে পারলনা কালভার্টের নিচু
বেঙ্গল কেমিক্যাল টপকে
শুধু হাওড়া হাওড়া

রোহিণীর দুঃস্বপ্নের রাত -- সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

গাছের পাতা নড়ছে না। পৃথিবী যেন বাতাসহীন হয়ে পড়েছে আজ রাতে। এই মুহূর্তে রোহিণীর কবুতরীর বুকের ভেতরও এতটুকু বাতাস যেন নেই। নরম ঘাসের নিচে চাপা পড়ে থাকা কাঁকরগুলো পিঠে বিঁধছে খচ্‌ খচ্‌ করে । মুখ বুজে সয়ে যেতে হচ্ছে কাঁকরের খোঁচা। মুখের সামনে সমানেই দুলে চলেছে জন্তুটার ঘার্মাক্ত মুখখানা। রোহিণীর গোটা শরীর কেঁপে যাচ্ছে সেই দুলুনিতে। ওর অসহায়তার সুযোগ নিয়ে ঘাসের নিচে চাপা পড়ে থাকা কাঁকরগুলো......
জন্তুটার ঘার্মাক্ত মুখখানা ওর মুখের সামনে থেকে সরে গেল একসময়। রোহিণীর শরীরের কম্পন স্তব্ধ হয়ে গেল। অমনি গাছের পাতারা নড়েচড়ে বসলো। রোহিণী শোয়া ছেড়ে ঠেস দিয়ে বসলো গাছের গুড়িতে। পিঠ, বুক, ঠোঁটে - শরীরের সর্বত্র যন্ত্রণায় ফেঁটে পড়ছে। শরীরের নিচটায় অসহনীয় যন্ত্রণা জট পাকিয়ে রয়েছে। এই জট খুলতে সময় নেবে। ততক্ষণে অবশ্য পূব আকাশে ছড়িয়ে পড়বে নবারুণের লাল আভা। রোহিণী একঝলক দেখলো ঘাসগুলোকে। দলিত মথিত ঘাসগুলোর মাথায় কে যেন গোলা লাল রঙ ছড়িয়ে দিয়েছে। চোখ সরিয়ে নিয়ে তাকালো আকাশের দিকে। পূবাকাশের আলোআঁধারি লজ্জায় রেঙে উঠছে ধীরে ধীরে।
কি করবে ভাবছে তখনই বহুদূর থেকে ভেসে যেন এলো মায়ের গলা, উঠে পড় রোহিণী। সকাল হয়েছে। ওরা এসে পড়ার আগে নিজেকে গুছিয়ে নে। নইলে তোকে এই অবস্থায় দেখলে লজ্জায় মাথা কাটা যে যাবে আমার।
রোহিণী তাড়াতাড়ি নেমে এল বিছানা থেকে। গতরাত্রে মোটেও গরম ছিলো না। অথচ রোহিণী কেমন ঘামে জ্যাবজ্যাবে হয়ে গিয়েছে! নিশ্চয়ই ভয় পেয়েছে খুব। মা জানেন না বিয়েতে ওর ভীষণ ভয়। সেই ভয়েই তো গতরাত্রে অমন বীভৎস স্বপ্নটা ওকে......... 

সালতামামী -- স্বাতী গুপ্ত

বিবর্ণ তেলচিটে পাতা
উদভ্রান্ত সময়
দিশাহীন ভুলে ঢাকা
:
শ্যামলা মেয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারে
মায়ের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ 
ফুটেছিলো বছর বিশেক ধরে
:
মোহন বাঁশি বাজেনি কোনও 
তমাল তরুমূলে
অপেক্ষারা বুকের মাঝে 
আজও ওঠে দুলে
:
তবুও বসন্ত আসে শরীর জুড়ে
মধুলোভী হাত ভীড়ে যেত ছুঁয়ে 
অনুভূতি মুহুর্তে মুছে দিয়ে
:
শুরু হলো বিস্ফোরণ স্পর্ধার
প্রতিবাদে খোলা তলোয়ার
:
সময়ের হাত ধরে মাটির কাছাকাছি 
প্রাণের স্পর্শ হৃদয় জুড়ে
মাটির গন্ধে বিশ্বাসী 
:
প্রিয় মুখ গুলো সময়ের সাথে
একে একে বৃক্ষ হয়ে গেছে
খুলে দেখি হিসেবের খাতা
গহন অরণ্যের নীরবতা.........

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...