মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

" আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ॥
তবু প্রাণ নিত্যধারা,      হাসে সূর্য চন্দ্র তারা,
বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে ॥
তরঙ্গ মিলায়ে যায় তরঙ্গ উঠে,
কুসুম ঝরিয়া পড়ে কুসুম ফুটে।
নাহি ক্ষয়, নাহি শেষ,   নাহি নাহি দৈন্যলেশ–
সেই পূর্ণতার পায়ে মন স্থান মাগে " 

দেখতে দেখতে আমরা পেরিয়ে এলাম নতুন বছরের দ্বিতীয় মাসটিও। দেনা পাওনার হিসেব নিকেশ নিয়ে বসলে , প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি দুয়ের বোঝাই নিক্তি মেপে ওজন করা যাবে , ... অথচ বৃহত্তর জীবনবোধের প্রেক্ষাপটে যদি আসা আর যাওয়ার এই ছবিটি তুলে ধরা যায় , সেক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের কথাই প্রথম মনে পড়ে ।

এ মাসেই আমরা পেরিয়ে এলাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটিও ,  ১৯৫২ সালের এই দিন , বাংলাকে ভাষাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে আজও চিহ্নিত। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। ... ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া , হাজার বীর শহিদদের স্মরণ করে একবার ফিরে দেখা যাক বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাসটিকে ... কারণ গদ্যই আমাদের ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম হিসেবে গণ্য । ১৫৫৫ সালে অহোমরাজকে রাজা নরনারায়ণ মল্লদেবের লেখা চিঠিটিই কিন্তু বাংলা গদ্য সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন হিসেবে আজও চিহ্নিত ।

তথাপি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ১৮৫২ সালে সালটিই বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে , ...ঐ বছরই প্রকাশিত হয়   হানা ক্যাথরিন মুলেনস  রচিত 'ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত'  , যা বাংলা ভাষার প্রথম উপন্যাস হিসেবে চিহ্নিত । পরপরই প্রকাশিত হয় , বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় উপন্যাস 'আলালের ঘরের দুলাল , লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র । 

আর এখন সময়ের বহমানতায় আমরা শূন্য দশকের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করছি । সময়ের ব্যবধানে - শতকের ব্যবধানে ভাষার বিবর্তন সত্যিই চোখে পড়ার মতো । 

বাংলা ভাষার প্রতি যথাযথ সম্মান জানিয়ে প্রকাশিত হল , মুঠো ভরা রোদ্দুর 'র ফেব্রুয়ারী সংখ্যা । মাতৃভাষাকে সযত্নে পরিচর্যার পাশাপাশি একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন , অনন্য স্বাদে সেজে ওঠা এই বিশেষ সংখ্যাটিতে , আশা রাখছি নিরাশ হবেন না ।
ভাল থাকুন নিরন্তর , লেখায় থাকুন ।

শুভেচ্ছান্তে ,
পিয়ালী বসু





SMOULDERING SOUL ------ Siddhartha Mukherjee

AH! GOT HURT....
THE WAY YOU USED THEE....
THY ASK, THOUGH FULFILLED BY ME....
THE SEARCH OF YOUR ORGASM PLEASURE, CONTINUED....
IN THE QUEST OF RELINQUISHED ETERNITY...
YOU FLEE....
WHY ON EARTH YOU MEASURED, THE FATHOM DEPTH OF THEE MIND???
THE DARKEST PART, WAS APART ALL.....
CLAIMING THE DEATH OF SOULS' HEART.....
SILENTLY.... SMOULDERING

সাউন্ড হোল্, প্রযত্নে, স্প্যানিশ গীটার ----- দূর্বা মুখার্জ্জী

হাত বাড়িয়েছিলাম জানো?
যতবার সেই স্বপ্ন দেখেছি-
হাত বাড়াতে ভুল হয়নি -
শ্রীকান্তকে ছুঁতে পারিনি কোনদিন।
স্পষ্ট দেখতাম ওর জুলফি বেয়ে ঝরছে ঘাম।
ওর স্প্যানিশ গীটারের প্রতিটা তার।
ওর ক্ষয়ে যাওয়া নখ -
আর উষ্কোখুষ্কো চুল।
দেখতে দেখতে গীটারের সাউন্ড হোল্
গিলে নিত সব - সেই শাব্দিক গর্তে
হারিয়ে যেত সুর, গান আর গোটা শ্রীকান্ত।
আমার হাতে ভরা থাকত ছাই -
প্রতি রাতে তাতে অশ্রু ঘাম রক্ত মিশিয়ে
একটি দুটি বর্ণমালার জন্ম দিতাম।
একদিন পুরো ঠিকানা লেখা হল ঘাম পোড়া ছাইয়ে।
দরজা খুলে দেখি শ্রীকান্ত মন দিয়ে বাজাচ্ছে।
সময় থমকে আছে ওর ঘরে।
দেওয়াল জুড়ে কিছু চেনা অচেনা ছায়া নাচছে।
হাসছে, কাঁদছে, ভালোবাসছে।
ডাকলাম, - 'শ্রী---'
সাড়া নেই। শুধু স্প্যানিশের ঝংকার।
মারা যায়নি শ্রী। কিন্তু আর জন্মাবে না সে কোনদিন।
বাস্তুরীতি থেমে গেছে তাই আমারও ফেরা হল না কখনও।
আজ থেকে ঠিকানা আমার-
সাউন্ড হোল্, প্রযত্নে, স্প্যানিশ গীটার 

সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

খোলা চিঠি ---- সুদীপ্তা নাথ

তোমায় ক্ষমা করেছি বাবা।কারণ না করার আর কোনো কারণ নেই! যে মানুষটা সারা দেহে রোগ,ব্যাধি আর কোষে কোষে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে চলে গেছে হঠাৎ,তাকে আর যাই হোক অন্তত ঘৃণা করার আর কিছু থাকেনা।
আমার জীবনের ২৭টা বছর আমি যুদ্ধের প্রস্তুতি তে কাটিয়েছি।ভেবেছি ফের যখন মোলাকাত হবে তখন যেন যোগ্য জবাব একে একে ফিরিয়ে দিতে পারি।তাই মনে মনে যুদ্ধক্ষেত্র রচনা করে একে একে ঢাল,তরবারি সাজিয়েছি আর আগুনে ঘৃতাহুতির মতো আরো আরো ঘৃণা জমিয়েছিলাম।বুকের ভেতর অনেক আগুন পুষে এভাবেই চলছিলো বেশ তারপর হঠাৎ একদিন কর্মস্থল থেকে ফিরে শুনলাম - "তুমি আর নেই।বাথরুমে স্ট্রোক হয়ে নাকি পড়ে গিয়েছিলে।তারপর আর ওঠোনি।"
না আমি কাঁদিনি।কারণ বাবার জন্যও যে কান্না আসে তা তো কখনো জানতামই না।তবে সেদিন অদ্ভুত কিছু একটা হয়েছিলো ভিতরে।অজানা একটা রাগ হয়েছিলো খুব! কেন এমন হবে! আমার এতোকালের সাজানো যুদ্ধক্ষেত্র, আর এতো দিনকার যুদ্ধের প্রস্তুতি! তার কি হবে!? কেন এভাবে ঘেটে দেওয়া হল আমার সাজানো পরিকল্পনা!? এভাবে হঠাৎ জীবন থেকে quit করে যুদ্ধ বানচালের মানে কি!? এটা তো জিতে যাওয়া এক প্রকার! এ যুদ্ধ টা তো আমার জেতার কথা ছিলো। কিন্তু সে সুযোগও তুমি কেড়ে নিলে এইভাবে !?
তুমি চলে গেছো আজ এক বছর হল।ঘটনার আকস্মিকতায় সময়ের প্রলেপ পড়েছে যত বুঝেছি- আসলে কিছু যুদ্ধের মীমাংসা হয় না।ক্ষমাই তার একমাত্র যোগ্য জবাব।আমি তোমায় ভালোবাসতে পারিনি হয়তো কিন্তু তোমার প্রতি আমার আর কোনো ক্ষোভ নেই।দীর্ঘ না পাওয়ার ফর্দ দিয়ে তোমায় দায়ী করি না আর।কারণ সেগুলোই তো আমার এগিয়ে চলার আগুন হয়েছিলো।তোমার সাথে যুদ্ধ জিতবো বলে মরিয়া হয়ে জীবনসমুদ্রে সাঁতরাতে সাঁতরাতে বুঝতেই পারিনি কখন জীবনের আরো অনেকগুলো যুদ্ধে আসলে আমি জিতে যাচ্ছিলাম।
ভাগ্যিস তুমি এতোটা কষ্ট দিয়েছিলে। ভাগ্যিস তুমি একটুও ভালোবাসোনি।তাই তো এতোটা রাস্তা একাই পেরোতে পারলাম। তাই তো আসলেই জিতে গেছি।
আজ তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো বাবা।

ইতি,
তোমার মেয়ে

বিদগ্ধ দহন ---- দীপঙ্কর বেরা

দুরত্ব শয্যায় কাছের মানুষ
একা নীলঘুর্ণি-র আলোছায়া
ডিঙানো রাজত্বে মেঘ-পাহাড় 
আমি আমি চিৎকারের মায়া

জলছবি আঁকা দমকা হাওয়া
দহন রাতের বিদগ্ধ আকার
কাল পেরিয়ে কালের কথায়
যুগ মানুষের হাহাকার।

পার্বণ স্রোত নিজস্ব সংলাপে
তথ্যের সূত্রে আনত জিজ্ঞাসা
লিখে রাখা সেই একক
সুচিত্র বরণ দূরন্ত আশা

মুঠোবন্দী কিছু মধুক্ষন ----- শমিতা চক্রবর্তী

বহতা নদীর বুক থেকে কিছু মুহূর্ত 
মুঠি ভরে নিলাম তুলে 

বাসন্তী রঙা শাড়ির আঁচলে বাঁধা 
সদ্য যৌবনার কিছু খুশী রঙ --
বুকের মধ্যে হাজার প্রজাপতির 
পাখনা মেলা সেই শুভক্ষণ ---
যেখানে প্রথম দৃষ্টি বিনিময়েই 
ঘোর লেগেছিল মনে 

গম -রঙা রোদ্দুর গায়ে জড়িয়ে 
সুখী আলপথ ধরে চলতে চলতে 
যখন দুটি ' ভালবাসার ঢেউ ' এসে 
আছড়ে পড়েছিল দুটি ওষ্ঠ জুড়ে ---
কিছু কম্পন কিছু শিহরণ লাগা 
সেই মধুক্ষন ------
রেখেছি আজও মুঠো ভরে !

বাঙময় মুহূর্ত ----- মুনমুন মুখার্জী

।।১।।
অপারেশন থিয়েটারের চতুর্দিকে শ্বেতশুভ্র রঙ কিছুটা বিমর্ষ করে তোলে রেণুকাকে। মেরুদণ্ডে অবিমিশ্র অনুভূতির হিম প্রবাহ। ন’মাসের পরিচিত গাইনোকোলজিস্ট মাস্ক পরার আগে স্মিত হাসিতে আশ্বাস দেয়, “ভয় কি? মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিট। চোখ খুলতেই মাতৃ্ত্বের সেই নৈসর্গিক মুহূর্তের আস্বাদ তোমার অপেক্ষায়।” 
জ্ঞান ফিরতেই ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে অন্ধকার। আধো জাগরণে আপাদমস্তক সাদা তোয়ালে জড়ানো একটি জ্যান্ত পুতুল হাতে দিয়ে পাশের নার্সটি বলে, “মেয়ে হয়েছে, মিষ্টি খাওয়াতে হবে কিন্তু!”
মেয়ে কোলে রেণুকার দুচোখে তখন অঝোর বর্ষাধারা।


।।২।।
চার বছরের ব্যবধানে আবার সেই অপারেশন থিয়েটার। মেরুদন্ডে আবার সেই হিম প্রবাহ। সেই স্মিতহাস্য গাইনোকোলজিস্ট। সব একইরকম। শুধু প্রযুক্তি পাল্টে গেছে। বুকের ওপর থেকে গাঢ় রঙের একটি পর্দা উলম্ব ভাবে রেণুকার শরীরকে এবার দু’ভাগে ভাগ করেছে। শরীরের নীচের অংশ অবশ, পাথরের মত ভারী। হঠাৎ অনেক দূর থেকে ভেসে আসা শিশুর কান্না ওর মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষকে সজাগ করে তোলে। কান্নার আওয়াজ যতই স্পষ্টতর হতে থাকে, অশ্রুজলে রেণুকার দৃষ্টি ততটাই ঝাপসা হয়ে আসে। 
-“ছেলে হয়েছে তোমার!” দায়িত্বরত পেডিয়াট্রিকের দু'হাতে আবার এক দেবশিশু; এখনও তার শরীরে লেগে আছে রেণুকারই রূধীর।


।।৩।। 
বত্রিশ বছর পর আবার অপারেশন থিয়েটার। রোহিনী নয়, এবার ওর পুত্রবধূ অরণ্যা। আবাহনের আনন্দ নয়, এবার পরিবেশে বিসর্জনের গাম্ভীর্য। ছেলে এখন অন্য দায়িত্ব নিতে অপারগ। পেশাগত উন্নতি তার আপাতঃ মূল লক্ষ্য। 
মাত্র ন’সপ্তাহ্! ডাক্তার বলেছিল, টার্মিনেশন যত দ্রুত হবে ততই নিরাপদ। অরণ্যার সম্মতিতেই সব হয়েছে। তবুও ও সব কিছুতেই ভগ্নোৎসাহ। পুত্রবধূর নির্জীব দু’হাত নিজের হাতে নিয়ে নিশ্চুপ রোহিনী।
নশ্বর পৃথিবীর অবিনশ্বর কিছু মূহুর্তে মাতৃ্ত্বের অনুভূতি আর স্পর্শের বাঙময়তার কাছে শব্দ প্রয়োজনীয়তা হারায়।

জীবন মুহূর্তের মালা গাঁথা ---- শঙ্খসাথি পাল

মেয়েটার জন্মাতে এক নিমেষে দায়িত্ববান বাবা হয়ে উঠেছিল যুবকটি 
সেই পথ চলার এক বাঁকে মেয়েকে সম্প্রদান করে দিতে হলো অন্যের হাতে 
মেয়েটা যাওয়ার সময় কনকাঞ্জলি দিয়ে বলে গেল - সব ঋণ শোধ করে গেলাম 
আত্মজা পর হয়ে গেল মুহূর্তে... 
:
বেকার ছেলেটি অসহায়ভাবে প্রেসক্রিপসেন নিয়ে ঘুরেছিল সাহায্যের জন্য 
মা-এর অপারেশনটা করাতেই হবে আগামী কালই 
প্রেমিকার বাবা চেকে পেমেন্ট করেছিল টাকাটা কিছু শর্তাবলী প্রযোজ্যে 
প্রেম পণ্য হয়ে গেল মুহূর্তে... 
:
কেমিস্ট্রি অনার্স, প্রেসিডেন্সি কলেজ - উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি 
রাতে টিউটোরিয়াল থেকে ফেরার পথে দেখে ফেলেছিল - যা দেখা উচিত ছিল না 
সামান্য সময়ও দেয় নি ওরা - একটা বুলেট বুকের বাঁ-দিকে নির্ভুল নিশানা 
জীবন্ত মানুষ লাশ হয়ে গেল মুহূর্তে... 
:
জীবনের শুটিং - এ কোনো রিটেক হয় না, হয় না এডিটিং 
তবুও জীবনের ক্যামেরা চলছে, চলবে, চলেই যাবে 
সুখ দুঃখ বাক্সবন্দী হবে হিমঘরে, হিসাব থাকবে কিংবা থাকবে না 
মুখোশের গল্প বদলাবে প্রতি মুহুর্তে...

নতুন জীবন ---- চন্দ্রিমা গুপ্ত

ওপারে যেতে হবে নৌকো টলমল 
অসময়ের ঝড়ে তোলপার নদী ....
আরো যাত্রীর মাঝে ওরা দুজন ,বাড়ি ছেড়ে বেশ দূরে 
প্রেমের কলি ফুটেছে সবে 
দুরন্ত অস্থিরতায় মন ছুটে চলে স্বপ্ন ঘিরে 
বাস্তবের বেড়াজাল ভাঙ্গার আনন্দে উচ্ছল 

মাঝনদীতে জলোচ্ছাস !
বিপদের হাতছানি,ভীত-সন্ত্রস্ত যাত্রী
:মৃত্যুর সামনে দুজনের শপথ বাঁচবে একসাথে
 ,মৃত্যু যদি ডেকে নেয় একসাথে দেবে প্রান
 দুজনের দুটো হাত একসাথে শক্ত মুঠোয়
আকস্মিক মাঝির উল্লাস ওই তো পার দেখা যায়
 --মুহূর্ত জীবন্ত হয় ওদের দু চোখের তারায়,স্বপ্নেরা উঁকি দেয় :

দ্বিধান্বিত মুহুর্ত --- জাকিয়া জেসমিন যূথী

বড় বেশি দ্বিধান্বিত মুহুর্তে হৃদয় চাপা অতৃপ্ত ফাগুন
ধিকি ধিকি জ্বলছে ছাই ফেলা ধূপের আগুন
নিঃশ্বাসে দম ধরা হাঁসফাঁস বেঁচে থাকা করছে অস্থির 
ঘুমহীন বা ঘুমে বাঁধা চোখে মনে দিচ্ছে না কোন সুস্থির
.
নতুন এক অচেনা আকর্ষণে আমি ভেসে চলেছি 
অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সব ভাবনা ভুলে 
মুহুর্তের টানে এক পা দু পা করে এগিয়ে এগিয়ে
সফল স্বপ্নের ক্রমশ বাস্তবায়নের বীজ বুনছি
.
মুহুর্তগুলো সব এই রঙ্গিন, মুহুর্তগুলো সব এই ফিকে
ভাবনার আকাশে মেঘের ঘনঘটা, কখনো রংধনুর মিষ্টি আভা
পরশ বুলিয়ে সুগন্ধ ছড়িয়ে যায় বাগানের এ কোণ হতে ও কোণ
চাপা এ থম ধরা মুহুর্তগুলো পেরুবে কি জানি কখন 
.
বড় ভালোবাসি সেই ধুরন্ধর হৃদয় হরণকারীর দুনয়ন ! 

নীল দিগন্তে ঐ ফুলের আগুন লাগলো ----- লীনা রায়চৌধুরী

আকাশ, 

আরো এক বসন্তের ছোঁয়া না ছোঁয়া!অনেকগুলো স্মৃতি -মেদুর দিন,ভালোলাগা -মন কেমন করা -অভিমান, আবার আষ্ঠে-পৃষ্ঠে রূপকথা হয়ে যাওয়া! 
মনে পড়ে আমরা যখন দুর্গাপুরের এ জোন থেকে বি জোন,হর্ষবর্ধন থেকে চণ্ডীদাস হেঁটে বেড়াতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা --মনে হত এযে অনুপম ঋতুর রঙ্গভূমি! তখন দুর্গাপুর অসংখ্য গাছে ঘেরা ছিল ।শীতের বাহু ছিন্ন করে বসন্তের ছোঁয়ায় যখন রিক্ত গাছগুলো কচি পাতায় ভরে উঠত।চারদিকে আম্রকুঞ্জ, জামের বাগানে, আরো কত নাম না জানা গাছ মুকুলে ভরে যেত।আমি তোমাকে মুকলের গন্ধ চেনাতাম।সমস্ত মুকলের গন্ধ -বিধুর রোমাঞ্চে -আবেশে আমরা ভরে যেতাম ।
আমরা ইচ্ছা করে ঝরা পাতার উপর উপর হেঁটে যেতাম ।অরণ্যের পত্র মর্মরে জাগত প্রলাপ মুখর রোমাঞ্চ।কখনও কখনো তুমি অভিভাবক সুলভ নিষেধের বেড়াজাল দিয়ে বলতে, "শীত চলে গেছে, শুকনো পাতার নীচে সাপ থাকতে পারে!"আমি চপল বালিকার মত তোমার নিষেধ মানতাম না।এখনো শুকনো পাতার উপর হাঁটতে ভালবাসি।বসন্ত!!!
চারদিকে শিমুল -পলাশে আগুন ঝরা লাল হয়ে উঠত।অশোক -শিমুল -কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উচ্ছাসে আমরা ভেসে যেতাম।কদম গাছ ছিল আমাদের কোয়ার্টারের সামনে,আমি ওর নাম দিয়েছিলাম ঋতুরাজ -তোমার মনে আছে?
'তানসেনের 'রাস্তার পাশে নারকেল পাতায় ঘেরা একটা চায়ের দোকান ছিল ।তার দুপাশে ছিল সজনে গাছ।ফুলে ভরা দুটো গাছই দোকানের উপর ঝুঁকে পড়ত ।অদ্ভুত ছিল সারা বছরই গাছগুলো ফুলে ফলে ভরে থাকত।আর ছিল দোকানের সামনে একটা মাধবীলতা গাছ।কি ফুল!কি ফুল!ফুলের ভারে ,গন্ধের বন্যায় উথাল পাথাল ।দোকানের সামনে একটা অব্যবহৃত সিমেন্টের লাইট পোস্ট ।অলিখিত বসার স্থান ।আমরা চা খেতাম আমাদের রূপকথাদের সঙ্গে নিয়ে ।
দুর্গাপুরে খুব সুন্দর বসন্তোৎসব হত।নির্দিষ্ট দিনে লাল-হলুদ পোশাক পরে ছেলে মেয়েরা যেত নৃত্য করতে করতে-"নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল।/বসন্তে সৌরভের শিখা জাগল।" কি অসাধারণ মুর্চ্ছনা ঐ গানে! আমার কানে এখনও বাজে।
তুমি নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি পলাশ আমার ভালবাসা-আমার প্রিয়।সেই ছোট্ট পলাশ গাছটা এখনও আমার কাছে আছে ।পত্রে,শাখায় যৌবনোদ্দীপ্ত বসন্তের বিজয় পতাকা নিয়ে সাড়ম্বরে ।
আজ কেমন যেন স্মৃতি বিলাসে পেয়ে বসছে মন।সময়ের বিবর্তনে পাল্টে যাওয়া মন ..... । আজ ও ছোট স্মৃতি গুলোর অপূর্ব প্রকাশ -কে আঁকড়ে আগে ।


ধরিত্রী --

সময় ---- সুব্রত ব্যানার্জী

সময়ের বোহেমিয়ানা খোলস ছাড়ে
পড়ে থাকে নগ্ন অতীতের পায়ের ছাপ
ক্লান্ত রিক্ততা মুক্তি পায়
সূর্যাস্তের ঘোলাটে ছায়ায়

বর্তমানের সাঁকোটা দুলছে
অদৃশ্য টান পেছনে ফিরে তাকাবার
কাঁচের জানলায় মিথ্যে অবয়ব
ফাঁদ পাতে মায়াজালের

ভবিষ্যতের স্বপ্নসন্ধানী ঊষর দৃষ্টি
তাড়িয়ে ফেরে মনখারাপ
উনিশ কুড়ির গন্ধ মেখে চোখে
সময় বদলায় কালের স্রোতে

ভণিতাহীন দর্শন অথবা কবিতা ---- নয়নিকা সেন

এই যে অবয়ব মেখে থাকাটা 
এটা আসলে জুত করে বিশেষ্যর আগে বিশেষণ
অথচ ছুঁতে চাইলেই সব ধুলো 
-
সব চিন্তা পরমং হবার আগেই একটু থিতিয়ে যাওয়া
এই তো আসলে জীবনের সারমর্ম 
-
জলের সাথে শব্দ মিশিয়ে দেওয়া পরমাহ্ন 
অথবা শত প্রতিকুল পরিস্থিতেও আদরে আবদারে বেঁচে থাকাটা 
এই তো আসলে জীবন 
-
পুরনো ফিলোসফি একটু ঘাঁটলে দেখতে পাওয়া যাবে 
অনন্ত অসীম বিস্তারের মাঝেও আসলে বাস করে এক পরম শূন্যতা
আছোঁয়া জলরাশির মাঝেও ... থেকে যায় যাপিত জীবনের শেষ চটিজোড়া 
-
বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও না ছাড়ার সেই অনুষঙ্গ মিথ্যা প্রমাণিত হয় 
জীবনের লাটাই ছাড়ার ক্যানভাসে 
-
প্রবেশ আর প্রস্থানের চিরাচরিত ধারণার মধ্যে বেঁচে থাকে 
জীবনের তেরো পার্বণী

নির্জন দ্বীপের বাসিন্দা ----- সুজাতা বন্দোপাধ্যায়

ভোরের আলো ফোটার অনেক আগে নীলিমা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন ।শহরটাকে দূরে ফেলে বহু কষ্টে, মন্থর গতিতে, হাটতে থাকেন গঙ্গার তীরের দিকে ।যখন পৌঁছে যান তখনও চাপ চাপ আঁধার ঘনিয়ে আছে আশেপাশে ।সামান্য দূরে শ্মশান থেকে ছিটকে আসা নিয়নের আলোয় চকচক করছে দিগন্ত রেখায় ছড়িয়ে পড়া সীমাহীন জলরাশি।

বাড়িতে পুত্র, পুত্রবধূ আর নাতনিকে নিয়ে নামমাত্র একসাথে বাস ছিল তার ।নুয়ে পড়া শরীরটাকে নিয়ে দিব্যি দিন কাটিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি ।সন্তান, পুত্রবধূ, নাতনির কথা বার্তা , তাদের পায়ের শব্দ, হাসি, ব্যস্ততা, রাগ, অনুকম্পা, ঘৃণা সবকিছুর সাথেই সহবাস করতে শিখে নিয়েছিল মন ।মানুষের মাঝে থেকেও নীলিমা বাস করতেন নো ম্যানস্ ল্যান্ডে।কিন্তু কদিন ধরে তিনি ছিলেন একজন আলোচনার বিষয়বস্তু ।ফোন , বুকিং দরাদরি শেষে একটা নিস্তব্ধতা ।

রোজকার মতো সেদিন নাতনি গলা জড়িয়ে না ধরে যখন চুপ চাপ বসলো তার ঘরে তখনই বুঝলেন যাবার সময় তার ঘনিয়ে এলো ।তবু নীরবে চোখ নাচিয়ে কৌতুকের ভঙ্গিতে জানতে চান, কি হলো? 
-তুমি কাল বৃদ্ধাশ্রমে যাচ্ছো আম্মা ।আমি মানা করতেই মা আমাকে মেরেছে দেখো, এই দেখো ।গাল দুটোর দিকে তাকিয়ে দেখেন সেখানে আঙুলের দাগ ।
নীলিমা মাথা নামিয়ে চোখের জল লুকোন।
-আমি বড়ো হয়ে তোমার আশ্রমে যাব দেখো আম্মা, ঠিক যাব ।
বলো হরি, হরি বোল ধ্বনিতে চমক ভাঙলো নীলিমার।হতাশাগ্রস্ত, অবসাদে ভরা জীবনের শেষ ঠিকানা বাছলেন মা গঙ্গার সুশীতল বক্ষ ।
পা থেকে খুলে রাখলেন ছেলের দেওয়া শেষ উপহার খানি ।

নবোদয়ের কক্ষপথে ---- ব্রততী সান্যাল

মাপজোকে ভুল হয় কখনো, বা প্রায়শই.. 
আশঙ্কার উপান্তে ধাক্কা খেয়ে 
ডুবোজাহাজের আঙ্গিকে ভেঙে টুকরো হয়, 
স্বাভাবিক ছন্দময় গতিপথ.. 
:
নৈরাশ্যের জঙ্গলে ভুলগুলি ছাপ রেখে যায়.. 
স্তব্ধ আমি উপকূল ছুঁয়ে বসি, 
চূর্ণ বিশ্বাসে বিধ্বসী ঢেউয়ের আনাগোনা দেখি.. 
সশব্দ বিষাদে সমাপ্তির আপেক্ষিকতা গুনি, 
:
ফেনিল ঘূর্ণায়মান স্রোতে দেখি নৌকা ভেসে যায়, 
দোদুল্যমান অথচ অবিচল— অপার্থিব নিপুণতায় লক্ষ্যস্থির.. 
পরিশেষে মনে হয়, যাত্রাপথ এখনো কিছু বাকি, 
বাস্তবের দৃশ্যপট জুড়েও ঈশ্বর হাসেন নিরাকারে, অলক্ষ্যে—
:
ব্যর্থতা ভেঙে তাই আপাত শূন্য ক্যানভাসে
মেলতে চাই তাঁর ভাবনাচিত্র, আবার—
নবার্জিত সাহস ছুঁয়ে, 
গেয়ে উঠতে চাই সযত্ন ভক্তির হিল্লোলে—


"Abide with me, fast falls the eventide
The darkness deepens, Lord with me abide
When other helpers fail and comforts flee
Help of the helpless, o abide with me."

ফুলস্টপ ---- বাসব মণ্ডল

আর সেমিকোলোন নয়
কমা ও নিষ্প্রোয়জন
শব্দের রেলগাড়িতে চেপে
আবেগ এখন সিগন্যাল মুখী
এখন শুধু নিষ্চুপ
গোধূলী
:
দূরত্বে দেখি
বেগুনি বিবস্ত্র খিদে

মরীচিকা ---- সৌভিক সেন

সে তবুও ঘরে ফেরেনি…চলে গেছে
কারনবিহীন মরখারাপ নিয়ে
টিভি চেয়ে কেটে যাবে বাকিটা সময়
রাত হবে…মা খেতে ডাকবে…

পাশবালিশে কথারা ফিরে আসবে
আমি কান পেতে শুনে নেব বাকি
জানলা খুলে হঠাৎ দেখব…
আমিই সত্য…সে আদতে ফাঁকি

ছিন্নমূল বাঙালির প্রিয় সাংস্কৃতিক ঋত্বিক ---- সিলভিয়া ঘোষ

তখন সাদা কালো টিভির জামানা।ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি,তখন কলকাতা দূরদর্শনের থেকে সম্প্রচারিত হতো Retrospective।সেই সময় বাবা কে দেখেছিলাম টানা ছয়দিন রাত জেগে ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা দেখতে এবং নাগরিক আর মেঘে ঢাকা তারা দেখে চোখের জল লুকাতে।সেই সময় জিজ্ঞাসা করেছিলাম বাবা কে তুমিও কাঁদছো ? বাবা বলেছিলেন --'যে শিল্প বা সংস্কৃতি মানুষের বাস্তব সমস্যা কে সকলের সামনে এনে দাঁড় করায় আর যেখানে প্রতিটি মানুষ ঐ শিল্পের মধ্যে দিয়ে নিজের জীবনের মিল খুঁজে পায় সেখানেই নাট্যকার বা চিত্র পরিচালকের সার্থকতা ।ঋত্বিক সেই কাজটা করে দিয়েছিলেন।সেক্ষেত্রে তিনি সার্থক একজন শিল্পী ।কথাটা সেই সময় ওতোটা বুঝি নি।আজ বুঝি ।
আমার দেখা ঋত্বিকের 'কোমল-গান্ধার ' ও 'মেঘে ঢাকা তারা' সবচেয়ে প্রিয়।আসলে ঋত্বিক নিজে কোনদিন দেশভাগটা মেনে নিতে পারেন নি।তাই তার ছবির মূল বিষয় ছিল উদ্বাস্তু কলোনি।যেখানে নীতার মতোন সর্বংসহা মেয়েরা পরিবারের সুখ শান্তির জন্য নিজের ভালোবাসা কেও বোনের হাতে তুলে দিতে কুন্ঠাবোধ করেনা।একা তার প্রচেষ্টায় যখন সংসারের সকলে সুখের মুখ দেখলো তখন একটু একটু করে ক্ষয়ে যাওয়া নীতা সংসারে ব্রাত্য হয়ে পড়ে।অবশেষে যখন গায়ক দাদা তাকে সুস্থ করতে পাহাড়ে নিয়ে যায় তখন মৃত্যু আসার আগে দাদা কে একটা কথাই বলে যা পাহাড়ের গায়ে প্রতিহত হতে থাকে--'আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম দাদা'।এই কথাটা একটা সিম্বল।এই এতো কষ্ট এতো অভাবের তাড়নার সাথে লড়াই শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য অথচ পারছি না কেউ।

আমার প্রিয় সিনেমা ---কোমল গান্ধার ।এই ছবিতে পরিচালক গণনাট্যের মাধ্যমে ছিন্নমূল মানুষের অভাব অভিযোগ ,ফেলে আসা পদ্মার পাড় এমন কি মুর্শিদাবাদের কাছে ছিন্ন হয়ে থাকা রেলপথ টাও যেন সাক্ষী হয়ে থাকছে দুটি ছিন্নমূল মানুষের জীবন সূত্র বেঁধে দেবার জন্য ।

তাঁর মতে ---নাটক , থিয়েটার যতদিন মানুষের কাছের ছিল ততদিন তিনি সেটির মাধ্যমে সমস্ত সমস্যার প্রতিবাদ করেছেন,এখন যখন চলচিত্র মানুষের অনেক কাছে এসে গেছে তখন সেটির মাধ্যমেই সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরবেন।আগামী তে এর থেকেও যদি কিছু শক্তিশালী জনমাধ্যম গড়ে ওঠে তখন সিনেমাকেও লাথি মেরে ঐ মাধ্যমে ই কাজ করবেন।
তাঁর তৈরি সিনেমা হল----বাড়ি থেকে পালিয়ে ,অযান্ত্রিক, নাগরিক ,সুবর্ণরেখা ,যুক্তি তক্কো গপ্প,তিতাস একটি নদীর নাম ইত্যাদি ।সময়ে থেকে অনেক আগের দৃষ্টি ভঙ্গি ছিল তাঁর ,তাই মৃত্যুর এতো বছর বাদেও তাঁর ছবিগুলো থেকেই ফিল্ম উৎসাহী স্টুডেন্টসরা অনেক কিছু শিখে চলেছে।

শ্রী জগন্নাথ বসুর কথায় ---'ঋত্বিক ছিলেন আপাদমস্তক অগোছালোর মধ্যে সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি'।

আজ তার প্রয়াণ দিবসে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই

আহা আজি এ বসন্তে ---- দূর্বা মিত্র

দেখো বাপু ---প্রচন্ড গরম, ভিজে যাওয়া গরম, হাওয়া দেয়া গরম, চাদর নেয়া গরম ----আর এই চাদর ছাড়া গরম ----ব্যস কলকাতায় এই হচ্ছে ঋতু বর্ণনা |

তা ওই চাদর ছাড়া গরমটা হলো গিয়ে বসন্ত | বেশ | চিরটাকাল ওই বসন্তেই যাবতীয় পরীক্ষার প্রস্তুতিপর্ব | বেশ একটা মাখোমাখো প্রেম প্রেম ভাব নেবার সুযোগই এলোনা | প্রেম বোঝার আগেই সেই বর ভদ্রলোক প্রায় পনিটেল পাকড়ে বিয়ে বস্তুটাতে "হ্যাঁ" করিয়ে নিলেন | মিটে গেলো সমস্যা !

না-- মিটলো না ! সাল টা ১৯৯২ -- চাদর নেয়া গরম -- মানে শীতকাল --- ভদ্রলোকটির চাকরিস্থল বোম্বে | ৬ই ডিসেম্বর এর দাঙ্গার পরে তিনি নিখোঁজ হয়ে গেলেন | বড়ো বিমানসংস্থা ----বহু চেষ্টা করেও খবর জোগাড় হচ্ছিলো না | হবু শাশুড়িমা কেঁদে কেটে আমাকেই দায়িত্ব দিলেন --- ছোট ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে | 

সৌভাগ্যক্রমে একখানি বনধু ছিল --- RAW সংস্থার কর্মী --- সে খবর জোগাড় করলো --- বেঁচে আছে -- তবে সেফ হাউস এ |

আমার বাবা আর ওর মা আর কোনো ঝুঁকি নিলেন না | ৫ই ফেব্রুয়ারী রেজিস্ট্রি, ৭ই বিয়ে | 

যাক --- বসন্ত এলো তবে আমার জীবনে !! বেশ বেশ |

কোথায় বা কি --- ভূতের ফাঁকি --- মিলিয়ে গেলো চট করে !

দিন ২০ বাদে বোম্বে গেলাম --- এক বস্তা খুশি ঘাড়ে করে |

এক মাস ও গেলোনা ---- হোলির পরেই শুরু কুখ্যাত বোম্বে বম্বিং ১৯৯৩ |

৩ দিনের জন্যে নিপাত্তা --- বিমানবন্দরে সুরক্ষা বলয়ে আটক !

এক মাসের মাথায় কলকাতায় রেখে গেলো | পরের বসন্তে যাবো --- শুরু হলো প্লেগ !

তারপরের বসন্তে -- ১৯৯৫ তে গেলাম | 

মধু বসন্তে মধু যামিনী --- প্রেম, বিয়ে --- পার করেও দু বছর পরে হস্তগত হলো | সেই থেকেই বসন্ত নামেই আমার পেটের ওপর দিকে কেমন গুড়গুড় আওয়াজ হতে থাকে | 

কবে যাবে এ বসন্ত ! 

বসন্ত এলো রে ---- সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

সোনা রঙের রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে ছিল সেই মেয়ে
তার পিঠ ছাপিয়ে মেঘ, তার বৃষ্টি দুচোখ বেয়ে

একটু দেখি আয় না তোকে, একটু দেখি তোরে
কি দিয়ে আজ বশ মানালি, কোন সোহাগের জোরে
তোর স্বপ্নমাখা হৃদমাঝারে কে ঐ মালিকা
মিস্টি আবেগে বলিস শুধুই সে এক বালিকা 

প্রেমবরিষার স্রোতে কেবা কাঁদে- কেবা হাসে
বলব না যাঃ, কে কারে বা কখন ভালোবাসে?
থাক না কেন আলো করে মঞ্জিলেতে সবার
একটু না হয় মৃদু হেসে, ছুঁড়িস প্রেমের জোয়ার।

সময় দিয়ে বক্ষে নিয়ে চুমি সেই ঝঙ্কার
আপন সুরে দিস তা ভরে সকল ছিদ্র তার
তোর রূপের কাছে খাটে না তো একটু গর্ব করা
তোর পায়েতেই তাইতো আমি দিই কেবল ধরা

রক্তিম বসন্ত ---- রীনা রায়

গুনগুন করে গাইছে তৃষা- 'বসন্ত এসে গেছে ', 
রক্তিমের ফটোর দিকে অভিমানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে- “ধুর, তুমি না এলে বসন্ত কি করে আসবে! এত করে বললাম তবু এলেনা!” 
বাইরে একটানা কোকিল ডেকে চলেছে । 
তৃষার সাথে রক্তিমের পরিচয় এই শান্তিনিকেতনেই,এক ডিবেট কম্পিটিশনে, তারপর বন্ধুত্ব ভাললাগা এবং ভালবাসা ।
এক বছরের সিনিয়র রক্তিমের এখানেই মাস্টার্স, পি এইচ. ডি সব। তৃষাও রক্তিমের টানে বিশ্বভারতীতেই এম.এ করেছে।

তখন চুটিয়ে দুজনে প্রেম করেছে, সাইকেলে অথবা লালমাটির রাস্তায় হাতে হাত ধরে হেঁটে চলা–--- কখনও চুপচাপ, কখনও নিরন্তর কথার খই ফুটিয়ে। 
কোলকাতায় রক্তিমের চাকরির পর ওদের ধুমধাম করে বিয়েও হয়ে গেল ।
কিছুদিন পর তৃষা বিশ্বভারতী থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেলো । 
তৃষাকে একাই আসতে হল শান্তিনিকেতনে।কারণ, রক্তিমের ছুটি নেই।থাকা খাওয়ার সুবন্দোবস্ত আগেই করা ছিল। 
--------
চাকরীর প্রথম দিন, স্কুল সেরে বাড়ি ফিরল তখন বিকেল চারটে । তালা খুলে ঘরে ঢুকেই প্রচন্ড চমকে গেল। ভুতুড়ে ব্যাপার নাকি !
ঘর ফুল দিয়ে সাজানো, টেবিলে একটুকরো রঙীন কাগজে ওর প্রিয় কবিতার লাইন লেখা।
এমনসময়, "সারপ্রাইইইজ!"
রক্তিম দু-কাপ চা নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে! 
"তুমি! ", লাগামছাড়া খুশিতে তৃষা ছুটে গিয়ে রক্তিমকে জড়িয়ে ধরলো। "পাগলি বউ আমার, চা টা তো রাখতে দাও--- " 
তৃষা হেসে বললো, “ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে...” 
"মানে? " 
দু চোখে খুশির ঝলক তুলে বলল - 'বসন্ত এসে গেছে ---'
বাইরে কোকিলটা ডেকে চলেছে কুহুরবে। 
প্রকৃতিতে শুধু নয়, তৃষার মনেও তখন বসন্ত।

বসন্ত জাগ্রত দ্বারে ----- শুভা গাঙ্গুলী

নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে এল মৈনাক, রাত সাড়ে এগারোটা,ফোন এসেছিলো মৈত্রেয়ীর, পাঁচ বছর পরে, বাইরে ফাল্গুনের মনমাতানো বসন্তবাতাস,
অনেক দূর যেতে হবে, যার সাথে ঘর বাঁধার অদম্য উতসাহে,ঘর ছেড়েছিলো মৈত্রেয়ী,সেই চলে গেছে ওকে রাস্তায় বার করে দিয়ে,
নিজের সন্তানের কথাও সেদিন ভাবেনি,রত্মা ওদের মেয়ে হোস্টেলে, চারিদিক মধুময়,"ফাগুন লেগেছে বনে বনে,"........

বসন্তরাতের মাধুর্যে মুগ্ধ প্রফেসর মৈনাক চলেছেন তাঁর বিশ্বাসঘাতক বিপন্ন বিবাহ বিচ্ছিন্না পত্নীর বিপদে সাহায্য করতে, কিন্তু কেন?
:
প্রফেসর মৈনাক কখনও এই বিশ্বাসঘাতক স্ত্রী এর কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন,মৈত্রেয়ী তার রোজগারের সমস্ত টাকা
মৈনাকের মায়ের চিকিৎসায় খরচায় খরচ করেছিল,কোন এক বসন্তের মনমাতানো চৈতী হাওয়ায় তাঁরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন,
:
"মাথার উপরে তরুবিথীকার
কোকিল কুহরী ওঠে বারবার,
এতদিন পরে আজি কি তাঁহার এল অভিসার রাত্রি "
:
আজ মৈত্রেয়ী তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়,এডস রোগাক্রান্ত।
:
"নিদারুণ রোগে মারীগুটিকায় ভরে গেছে তার অঙ্গ,"

তাই তো এসেছেন আজ
"আজি রজনীতে হয়েছে সময়," অনুতপ্ত রোগাক্লান্ত
মৈত্রেয়ী কে ফিরিয়ে আনার।

বসন্ত শুধু প্রেমের ঋতু নয় ----- জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী

মিতুল সেরে উঠেছে এই ক'দিনে....

গত পৌষেমেলায় পুতুলনাচ দেখে ফেরা রাত......
তারপর সে পেরিয়ে এসেছে একটি পূর্ণ ছায়াপথ
এখন তার টেবিলে অজান্তে ব্লেড রেখে গেলে'ও
চাদরে রক্তের দাগ দেখতে পায়না কেউ
.
.
কব্জির জোর খানিকটা ফিরে পেতেই
দেওয়াল জুড়ে ক্যালেন্ডার এঁকে ফেলেছে মিতুল
বন্ধ ঘরের ভেতর থেকে স্টিরিওটাইপ বসন্তকে দেখে নির্লিপ্ত চোখে
.
.
ওর পলাশবনে যাওয়া বারণ......
আগুন নিয়ে খেলা বারণ....
দোলের দিনে আবীর ছোঁয়া বারণ....
.
.
তাই বসন্ত ফিরে গেলে'ও মিতুল জানতে পারবে না....
শুধু তার পেটের টাটকা প্রাণটি
ক্যালেন্ডার দেখে একটু একটু করে শিখে নেবে ঋতুপরিবর্তন

রোদন ভরা এ বসন্ত ---- শ্রীলেখা মুখার্জ্জী

বসন্তের উদাসী হাওয়ায় গা ভাসায়
সাঁঝবাতিরা
মাপা পরিধির টুকরো মাটি আঁকড়ে
আগুন জ্বালায় শিমুল পলাশ
শহুরে ব্যস্ততা থমকে দাঁড়ায়
মুহূর্তের হাত ধরে--
'
ফাগুনের রঙমিলান্তি দেশ 
সীমানায় বিশ্বাসঘাতক কাঁটা-তার 
মনের গলুই বোঝাই নুনের পরত
খোয়া গেছে প্রবেশের ছাড়পত্র--
'
বহুদিনের অভ্যস্ত ভালোবাসা পরিযায়ী 
নতুন ঠিকানায়..
কোকিলের বিষণ্ণ তান
নিঃসঙ্গতার আলিঙ্গন---
'
এক-আকাশ শূণ্যতার প্রেক্ষাপটে
লালচে আভা....
পলাশের নয়
ভালোবাসার চিতার আগুন

বসন্তের নির্মল সমীরে ---- সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

আহা আজি এ বসন্তে নিবিড় প্রেমিক তার 
স্বপ্নের প্রেমিকার খোঁজে মাথা কুটে মরে দোরে দোরে 
শতসহস্র যুগ ধরে অনেক রক্ত ঝরিয়ে , যার 
ক্ষত রয়ে গেছে প্রেমিকের মনের গভীরে 


জীবনের শেষে এসে ব্যর্থ প্রেমিকটি আজও
এমন বসন্তের দিনে খুঁজে মরে তার সেই 
প্রাণপ্রিয়কে যে তাকে কথা দিয়ে রাখেনি কথা, 
মাথা কোটে দোরে দোরে - বাজো রুদ্রবীণা, বাজো 


কোনো এক মানবীকে ভালবেসে আজ সে ভিখারি
অনেক বসন্ত পার করে অবশেষে হতাশার গভীরে 
ডুবে যেতে যেতেও আজ সে থমকে গিয়েছে দাঁড়িয়ে
সিক্ত হতে আজি এ বসন্তের নির্মল সমীরে 

রূপান্তর --- এস ঘোষ সুমনা

আমার মগজটা চিবিয়ে খাস,
চোখদুটো উপড়ে নিস,
মনটাকে কুচিকুচি করে
রাস্তায় ছড়িয়ে দিস...
তারপর আমিত্বহীন 'আমি'টাকে
ছুঁড়ে ফেলিস ভাগাড়ে,
শকুনেরও খাদ্য হবে।
* * *
জানিস!
ভাগাড়ে অসংখ্য ধুতরা আর
আকন্দ জন্মাল কিছুদিন পরে,
এক কুমারী মেয়ে শিবরাত্রিতে
ভক্তিভরে অঞ্জলি দিল তা দিয়ে...
একটা প্রদীপও জ্বালাল,
মন্দিরে সারারাত জ্বলল
নিষ্পাপ মেয়ের আকাঙ্ক্ষার ঘৃতবাতি

ভৈরবী সংরাগ ---- বিলকিস বি পলি

ধুলিমাখা পথে একপা দুপা করে
তুমি চলে গিয়েছিলে
ভৈরবী সুরে স্নিগ্ধ বাতাসে
ভেসে এসেছিলো তোমার বিড়বিড় করে
বলে যাওয়া শেষ কথাগুলো

সকালের এক চিলতে রোদ
তার সোনালি আলোয় মাখিয়ে
প্রতিশ্রুতি করালো আমায়
তোমায় পিছু না ডাকার

শেষ বেলায় তোমার অমোঘ বাণী
শঙ্খ সুর হয়ে কানে ভাজে মৃদু লয়ে
ক্লান্তিকর কিন্তু মনোহর সংরাগে
আবছায়া হৃদয় কপাট প্রতিক্ষারত
তীব্র আঘাতে খুলে যাবার

প্রতিক্ষায় থাকে ভাসিয়ে নেয়ার
টইটুম্বুর প্লাবনে দূরে বহুদূরে
যেখানে ব্যাকুলতার লেপ-চাদরে
তোমার আমার চেনা সংরাগ
জড়িয়ে থাকবে বারোমাস

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...