শনিবার, ৫ মার্চ, ২০১৬

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

" ফুল ফুটুক আর  নাই ফুটুক আজ বসন্ত

শীত শেষ । 
ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। দিনান্তের সমস্ত কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন  প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। তাই কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত ।"  মৃদুমন্দ আদুরে  বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে, সত্যি সত্যি সে ঋতুর রাজা। লাল আর হলুদের বাসন্তী রঙে প্রকৃতির সাথে নিজেদের সাজিয়ে আজ বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসমান চির-প্রেমিক বাঙ্গালী । বসন্তের শিমুল রঙা রঙে নিজেকে সাজিয়েই সমাগত ৮ই মার্চ -- আন্তর্জাতিক নারী দিবস । বিশ্ব জুড়ে সেদিন পালন করা হবে নারী দিবস , স্বীকার করা হবে নারী- পুরুষের সমানাধিকারের কথা , কিন্তু আদপে কি সত্যিই তাই ? ২০১৪ র পরিসংখ্যান জানাচ্ছে , কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী গোষ্ঠীর শতাংশ মাত্র ৪০ % , -- ১৯৫৭ সালের ৮ই মার্চ নিউইয়র্কের সেলাই কারখানার মহিলা শ্রমিক রা রাস্তায় নামেন , সমানাধিকারের দাবীতে । সেই দিনটি থেকে নারীর জেহাদ শুরু , যা আজও চলমান , Bacause , Women are the real architects of our society .
                    


শুভেচ্ছান্তে , 
পিয়ালী বসু 


অনন্যা ~ পারমিতা মুখার্জী

সেই থেকে ঘড়ি দেখছে স্বাগতা। দূর্গা এখন এল না! না! আজ না ঝোলায় মেয়েটা সেই থেকে ঘর বার , করছে ওর অপেক্ষায় স্বাগতা। এদিকে ঠাকুরমশাই ও আর দেরীকরতে চাইছেন না। এখুনি নাকি পুজো শুরু করতে হবে, নাহলে নাকি পূজোর শুভ সময় পেরিয়ে যাবে! 

ভীষণ ব্যাস্ত লাগছে স্বাগতা র।জানে দূর্গা ডোবাবার মেয়ে নয়! সে এক কথার মানুষ। বলেছে যখন তখন ঠিক সময় ই আসবে। তবুও-- কম দিন ত হোলো না সে দূর্গা কে দেখেছে! সেই যবে থেকে এই শহরে এসেছে তবে থকে দূর্গা ই ওর হাউসমেইড। বাড়ির সব কাজ নিজে হাতে সামলেছে , স্বাগতা ত সারাদিন কাটায় কলেজে। দূর্গা সত্যি কাজেও দশভূজা। অসামান্যা। বাপরে! মাঝে মাঝে ভাবে স্বাগতা, সে দূর্গার জায়গায় থাকলে পারত ই না সব একা করতে! 

ওই যে বলে না আমাদের দেশে মেয়েদের আগে রুপ দেখে তারপর গুন। দূর্গার ক্ষেত্রেও কথাটা খানিকটা সত্যি। প্রথমে যখন দূর্গা এসে দাঁড়ালো স্বাগতা র সামনে, স্বাগতা অবাক হয়ে দেখেছিল, আমাদের দেশে গরীব, অভাবী লকেদের কি ভাবে হেনস্তা হতে হয় , শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে। 
না! গায়ের রঙ বা চেহারা দূর্গার কেমন ছিল, জানা বা দেখে যাবে না পুরোটা আর কখনো। কারণ একদিক,ডান দিকের গলা থেকে , হাত , কোমর হয়ে নীচে নেমে, হাটু অবধি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।শুধু ফোসকা খসে যাবার পর যে চেহারাটা দাড়িয়েছে,সেটাই এখন দূর্গার রুপ!। বর শ্বশুর, শাশুড়ি, মিলে গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো, মেয়ে জন্ম দিয়েছিল বলে। সে নাকি অপয়া, বংশ চালাবার জন্য ছেলে ও জন্ম দিতে পারে না! এর পর তার গরীব অশিক্ষিত মা বাবা , বর খেদান মেয়ে আর ঘরে তোলেনি! সেই থেকে চলছে এই সংগ্রাম। রাত দিন এক করে-- কি ই না করে দূর্গা-- লোকের বাড়িতে ঝি র কাজ, ভোরে উ্টেবাড়ি বাড়ি দুধ বিলি, রবিবার হলে বড় বাবুদের ্গাড়ি ধোয়া,একাটা ছেলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব করে সে, নিজের ছট্টো মেয়েকে বড় করার তাগিদে। আবার অবসরে মালকিন্দের সাড়ীতে ফলস বসিয়েছে, ব্লাউস বানিয়েছে, -- এসব ও করেছে। শুধু নিজেকে বিক্রি হতে দেয়নি। জোয়ান মেয়ের উপর লোকের কুনজর ত কম ছিল না! একা মেয়েমানুষ মানেই লোকের ফুর্তি করার আকাঙ্কখা বেড়ে যায়। সে দা্রোয়ান ই হোক বা ওর দুধ ডিপোর মালিক! তবুও দূর্গা নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। সেই ইস্তক লড়াই চালিয়েছে প্রতিমুহুর্ত সমাজের সাথে, সব প্রতিকুলতা র সাথে।। একাটু একাটু করেমেয়েকে বড় করেছে। সাথে স্বাগতা অ ছিল যদিও। 
কেন জানিনা প্রথম দিন ই দূর্গা কে ভাল লেগেছিল ওর। বাকি এই ক্লাস, মানে লোকের বাড়িতে কাজ করা গোষ্টী র মেয়েরা একটু ন্যাকা হয়, প্রচন্ড ছল চাতুরী জানে, -ও ছেলে দেখলে গলে যায়। দূর্গা সেরকম না, নাহলে এতদিন কোথায় ভেসে যতট খড় কুটো র মত।
স্বাগতা নিজে একজন লেকচারার। কলেজে ভূগল পড়ায়। আর বাকি সময় দূর্গার মেয়ের ভবিষ্যত গড়ার কাজ করে। তাকে গাইড করা, স্কুলের পর হোমওয়ার্ক করানো, ইত্যাদি। সে পরিশ্রম অ আজ সার্থক দূর্গা র , মেয়েকে বড় করার, এখন সে কলেজে পড়ে। মাঝে মাঝে দূর্গা কে দখে স্বাগতা ভাবে, সে নয়, উলটে যেন দূর্গা ই ওর প্রেরণা হয়ে দাড়িয়েছে। এত বিরুদ্ধ ভাগ্য কে জয় করার মুরোদ চাই! ওই যে কবি গুরু বলেছেন না-- "নারীরে আপন ভাগ্য জয় করিবার/ কেহ নাহি দিবে অধিকার?"-- এ ক্ষেত্রে দূর্গা যেন ছিনিয়ে নিয়েছে নিজের হক, যা একান্ত ই তার। 

আজ সত্যি তার জন্য খুসি স্বাগতা। দীর্ঘ বিশ বছরএর পরিশ্রম ,সাথে স্বাগতার সাহায্য নিয়ে আজ দূর্গা তাদের বাড়ির কাছেই একটা ছোট সেলাই স্কুল খুলছে। তাইর ই ভূনি পূজোর আয়োজনে কাল থেকে ব্যস্ত স্বাগতা, সব নিয়ম মেনেই হবএ পূজো। আপাতত শুধু সেলাই শেখাবে দূর্গার স্কুলে, পরে ভাববে বড় কিছু। ততোদিনে মেয়েও দাড়িয়ে যাবে দূর্গা র। স্বাগতা জানে দূর্গা এর থেকে বড় , অনেক বড় কিছু করবে একদিন। সে আনন্যা, সে সত্যি দূর্গা।।

নারী ~ অরিজিৎ বাগচী

নারী কবে তুই ছলনা ভুলে প্রেমিকা হবি? কিম্বা দেবদাসী ? 
অপেক্ষায় রইলাম ।।
নারী তোর চলে যাওয়া টা প্রত্যাশিত হলেও, ভেবেছিলাম ফিরবি মস্তিষ্কের সেই সান্দ্র লালচে যন্ত্রণার টানে, 
কিন্তু হতবাক হলাম অপ্রত্যাশিত ভাবে তোর পিটুইটারি কে কাঠগড়ায় বন্দিদের ভিড়ে দেখে ।।

নারী আমি সহস্র ধিক্কার জানাই তোকে ভালবাসার আমার র্স্পধা কে ।। 
নারী তোর যাওয়ার পথে চুরি গেছে র্স্পধা আমার, এখন বিনয় গজিয়ে উঠছে আমার শরীরের কারশেডে ।।

নারী তোর যোনিদ্বারে এ গোটা সভ্যতা মুক্তি পেলেও আমার ভালোবাসার টুকিটাকি তবুও বঞ্চিত তোর সেই আর্দ্রতার জ্বলনে ,
যদিও অধিকার এখন টাকার মোরোকে জরানো , তোর লাজবস্ত নিলাম শুধু মুদ্রার ঝংকারে,
নারী আগে তো বলিসনি ?

নারী তোর নাটুকে সতীত্বের আড়ালে নিজেকে বেচার মানসিকতা ভুলে যাস্ পারেলে ।। নারী তুই মিথ্যাবাদী, তুই নেমেসিস সেজেছিস হাজার বার আমি ডাকলে 

এই নারী তুই মায়ের ভালবাসাও হত্যা করেছিস একান্তই।। 
নারী তুই পারলে মারা যাস্, কিম্বা ফিরে আয় মায়ের চেনা গন্ধে।।

নারী কে ? ~ সঞ্জয় সোম

তুমিও কি নারী মা'গো সবাই যা বলে 
তোমার একটা গর্ভ আছে,স্নেহ আছে
দুঃখ ভাসে জলে । 

গত রাতে তোমার গলায় পড়েছিল থাবা
মৃত্যু মুখেও নীরব তুমি,জানুক সবাই 
দিয়েছিল কে বা ? 

শ্বাসকষ্ট ভীষণ কাঁসি হাসপাতালে শুয়ে
মৃত্যু মুখে গুনছ প্রহর,বুক হাহাকার 
লজ্জা চোখে নিয়ে । 

ভোর সকালে নারী দিবস বার্তা প্রতি পলে
একলা ঘরে পুত্রবধু,গলা চাপা,নীরব সমাজ
তুমি মা'গো নারী কবে হলে ! 

মৃত্যু তোমার,কী আসে যায় কারো 
নারী বুঝি কম বয়সী,সুঠাম দেহী 
মরতে তুমি পারো । 

জামার পকেটে কিছু পোলাও এবং ভাঁজের ভেতর চোরকাঁটা ~ লুতফুল হোসেন

শাড়ীকে আমি বলি খুব উত্তেজক পোষাক । আপনি একমত হবেন কি হবেন না তা একান্ত আপনার ইচ্ছা অনিচ্ছার সাধীনতা । তার, আপনার, উনার, সবার এতে সহমত কিংবা দ্বিমত যা ই হোক । আমার দৃষ্টিতে শ্যালোয়ার-কামিজ শাড়ীর চেয়ে অনেক শালীন পোষাক । পুরোটা শরীর অনেক ভালো মতোন ঢেকে থাকে এতে শাড়ীর চেয়ে । আপনি হয়তো এবার আনতে পারেন ওড়নার প্রসংগ । ওটা থাকলো কি থাকলো না । থাকলে কোথায় কি ঢং-এ থাকলো ।
ধরুন শার্ট-প্যান্ট এর কথাই । পুরোটা শরীর ঢাকে না এতে ভালো ? শাড়ীর চেয়ে ঢের ভালো ঢেকে থাকে বলেইতো মনে হয় । তাই না ! শাড়ীতে যদি শরীরের বিশ থেকে পঁয়ত্রিশ শতাংশ অংশ কেবল সাদামাটা নয় সংবেদনশীল দৃষ্টিগোচরতায় উদার থাকে । শার্টে কিন্তু সে তুলনায় পাঁচ ভাগও উন্মুক্ততায় উদার থাকে না ।
এবার হয়তো বলবেন মুম্বাই ফিল্মী কায়দায় যা সব কাট আর কেতা শ্যালোয়ার-কামিজে দেখা যায় আজকাল ! তাছাড়া শার্টের কোথায় কয়টা প্লিট-স্লিট, প্যান্ট কি পরিমান আঁটোসাটো ! শালীনতাকে আপনি কিছুতেই তর্কের ছুরির নীচ থেকে সরতে দেবেন না । তর্ক করলে সেটা নির্ঘাত চলতেই থাকবে । আসল কথাটা তাহলে কি ? যে কথায় এসে থামতে পারে এই তর্ক-বিতর্ক !
আমি যে শাড়ী নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলাম । উত্তেজক বললাম । শরীরটাকে যথাযথ আগলে আড়াল করতে না পারার জন্য । সেটা যদি ফিল্মী কিংবা অধুনা মডেলিং-এর নানা বিতর্কিত ঢংগী কায়দায় পরিধান করা হয় ! তাহলে তো আরো সেরেছে ! সমাজের সব রক্ষাকর্তারা মাঠে ঘাটে কথার ঝালে আগুন ঝরাবে নিশ্চয় ।
অথচ সবচেয়ে জ্বলজ্বলে সত্যি হলো এই যে, আমার মা-খালা, নানী-দাদী সবাইকে আমি এই শাড়ীই পরতে দেখেছি । সেটা কি আদৌ আমার চোখে উত্তেজক অশালীন লেগেছিলো কোনো দিন ! লাগেনি নিশ্চয় । আমারও যেমন, তেমনি আপনারও । ঠিক কিনা !
যে দেশে থামি, যে দেশে কাঁচুলি, যে দেশে ঘাগড়া, যেখানে স্কার্ট-টপস, প্যান্ট-গেঞ্জী কিংবা যে যুগে বাকল, পাতা, উদাম শরীর সে রকম কোনো দেশে কী কোনো কালেই মা-খালা, নানী-দাদী, বোন-ভাবী কাউকে দেখে একটুও খারাপ কিছু মনে হয়নি কারো । এটা অনেকটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় ।
তাহলে ! রীতি ভাংগাটাই সমস্যার শিকড় ! সূতিকাগার ! এই সবের সম্পূর্ণ অসুরটুকু আসলে আর কিছুতে নয়, কেবলি মানুষের মনে । দৃষ্টিভংগীতে । কু-চিন্তা এবং কু-দৃষ্টিতে ।
আজকাল কিছু ছেলে-পুলে যেভাবে পশ্চাতদেশের ভাঁজ দেখিয়ে সুপারম্যানের ফ্যাশন মশকরায় মেতে আছে ! তারা কি আদৌ জানে তাদের ওই ফ্যাশনের শিকড় সূত্র কোথায় প্রোথিত ! জানলে আর বুঝলে নির্ঘাত তারা যারপরনাই লজ্জা পেতো । তেমনি মিনি-শর্ট ফ্যাশনে বিশ্বাসী এদেশের মেয়েরা কেউ থেকে থাকলে ওরাও পেতো লজ্জা ।
নিজ ঐতিহ্য আর কৃষ্টিকে চেনাবার মতোন শিক্ষা এবং প্রতিপালন যদি পেতো আমাদের সন্তানেরা তাহলে তাদের পরিধানের ভিমরতি তেমন করে পেয়ে বসার কোনো সুযোগই হতো না । এর পাশাপাশি কে কেমন পোষাক পরলো তা নিয়ে কদাকার ভাবনা ও অভিরুচিও তাদের কোনো কালে হতো না । নিজেকে চেনাবার আর ভালোবাসবার মন্ত্রটাই আমাদের সন্তানকে শেখাতে ব্যর্থ আমরা ।
পোষাকের তো কোনো ধরা বাঁধা প্রেসকিপশন থাকতে পারে না । ফুটবল আর ক্রিকেটের যেমন এক পোষাকে চলবে না । সাইকেল-গাড়ী-প্লেন-জাহাজ চালানো, কল কারখানায় মেশিন চালানো, দোকানে বাজারে কেনা-কাটা করা, নামাজ পড়া, পুজো-আর্চা করা, স্কুলে-কলেজ যাওয়া, অফিস আদালতে কাজ করা ; এমন সব ক্ষেত্রে একই রকম পোষাকের প্রয়োজন আছে এমন কোনো দাবী উত্থাপনের কোনো যুক্তি নাই । বরং বাস্তবতার নিরিখে এমন ভিন্ন প্রেক্ষিত ভিন্ন পোষাকের প্রয়োজনটুকুই দাবী করে ।
আমরা খাই নিজের জিভের তৃপ্তির জন্য । কখনোই অন্যের তৃপ্তির জন্য নয় । আবার পরিধান করি অন্যের মুগ্ধতা অর্জনের জন্য । এটা সার্বজনীন সত্য । সেই অন্যটি কে । প্রথমে আমার প্রিয়জন । যাদের ভালো লাগা আমাদের আপ্লুত করে বেশী । তারপর আমাকে যারা যারা দেখবে, জানবে । অর্থাৎ আমাদের প্রতিবেশ, আমাদের সমাজ । চীন দেশে গিয়ে হিব্রু আর নিকারাগুয়ায় যদি আমি চীনা ভাষায় কথা বলতে চাই । বিপত্তি অনিবার্য । আর তাতে দোষটি ভাষার নয় । যে ভুল করলো তার । তেমনি ভাবে ভুল পরিধানে দোষটি পোষাকের নয় । যে ভুল পোষাক নির্বাচন করলো তার । এখন তার জন্য কি তার ওই কাপড়টুকুন খুলে নিতে হবে ! অমন করতে চাইলে কিংবা করবার কথা কেউ ভাবলে বৈকল্যটি সেই করনেওয়ালা আর ভাবনেওয়ালার । তবে সবচেয়ে বড় সত্য হলো এই দ্বিতীয় দলের এরাও সবাই এই সমাজেরই কেউ ।
তাই আমাদের ঘৃণা আর প্রতিরোধটাকে হতে হবে অপরাধের বিরুদ্ধে । অপরাধীর বিরুদ্ধে নয় । নৈতিক বৈকল্যের বিপরীতে সমাজের গতিকে সঞ্চালিত করতে হলে আমাদের সবাইকেই ভব্যতা সভ্যতাকে আপন কৃষ্টি সৌকর্যে সাজিয়ে, তাকে প্রদীপের আলোর কাছে পৌছে দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা ও জ্ঞানের হাপড়ে গড়ে পিটে নিতে হবে ইস্পাতের মতোন ।
কারণ সবচেয়ে বড় সত্য এই, যে পোষাকের দোহাই দিয়ে অশালীন বলে অঙ্গুলি নির্দেশ করবে ! কিংবা সেই ইচ্ছার গলায় শিকল – হাতে হাতকড়া পরানোর উছিলায় আমার সন্তানকে অপমানিত করবার মতোন কদর্য মানসিকতার পরিচয় দিবে । এই অদ্ভুতুরে মানুষগুলো কারা ! এরা সবাই কিন্তু আমাদেরই ভাই কিংবা সন্তান । তাই দোষটা যতোটা তাদের, ততোটাই আমাদের । আমরা যারা ওদের বড় করে তুলছি, সেই আমাদের । প্রত্যেকের ।
মনীষীর কথা ধরে বলবো কি ! আরে ভাই পোষাকেই তো পরিচয় ! আর সেই সাথে জামার পকেটেই ভরবো বুঝি উপহারের পোলাও-বিরিয়ানী । যুগটা এখন আর সেখানে থেমে নেই । এখন বৈশ্বিক সংযোগ ও সম্পৃক্ততায় মেধা-চিন্তা-চেতনার প্রভেদ রাষ্ট্রের সীমানা ডিংগিয়ে বিলীন হবার পথ ধরে হাঁটছে । ভৌগলিক সীমারেখায় তা আর আঁটকে নেই।
যে চোরকাঁটা আমাকে অনবধানে হুল ফুটিয়ে দিয়ে যাবে তাকে বুঝি আমি জামা-কাপড়ের ভাঁজে নির্বিবাদ বহাল তবিয়তে থাকতে দিবো । এমন সব ভাবনা নিঃসন্দেহে চিন্তা-চেতনার বৈকল্যের ছবি ছাড়া অন্য কিছু আঁকে না ।
নিজ সন্তানকে দিয়েই তাই শুরু হতে হবে এর প্রতিকার । এছাড়া অন্য কোনো নির্মূল ঔষধি এর নাই । আমাদের প্রতিদিনের চর্চায় ও চলনে যতদিন না প্রতিটি ঘরে হবে এ দীক্ষার ক্লাস, প্রতিটি পাড়ায়, মহল্লায়, প্রতিটি শহরে . . . ততোদিন নিগৃহীত হবে আমারই সন্তান । আর যে করবে সেই লজ্জার কাজটি তাকে ওটা লজ্জা বলে না চেনাবার দায় । সেটাও আমাদেরই ।
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এগুলোতো কোনো অলৌকিক রিমোট কন্ট্রোলে চলে না । চলে আমাদের ইচ্ছা, চর্চা, সচেতনতা, কী বিকারহীনতার সমন্বয়ে । আমাদের প্রতি দিনের গানে, নাচে, কথায়, আচরণে, ঘরে, বাইরে, রাষ্ট্রযন্ত্রে আমরাই ত চালকের ভূমিকায়।
যারা নিজ ভাষা ও ভূমির স্বাধীনতার জন্য গোটা পৃথিবীতে একটি অনন্য জাতির পরিচয়ে স্বীকৃত। সেই মুকুটে আমরা চাইলেই পরাতে পারি আরো একটি সোনার পালক । আমার মেয়েটি গ্রীবা উঁচু করে পরে থাকবে আপন কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের নকশা মাখা সাহসী নোলক ।

বুকপোষ্ট (৩) ~ শুভাশিস সিংহ

প্রতিবিম্ব উল্টো জীবনের পুরাণ. আয়নার সামনে এর আগে শিখা নিজেকে অনেকবার দেখেছে, কিন্তু আজকের শিখার মত জ্বলে ওঠেনি.
অরূপের সঙ্গে প্রথম এ বাড়িতে আসা. চন্দন, লাল চেলি, রাঙা পা.....
হম রাঙা পা
আজ বৃহস্পতিবার, নিয়ম করে সে আলতা পড়েছে.
তারপর টুকুন-বুকুন এর জন্ম শিখার পাঁচমিশালি সংসারে. না, ঠিক সংসার নয়, মধ্যবিত্তের সাত হাজারি মাস. যেখানে সাতটা , মাসের প্রথম সপ্তাহ গিলে নেয়. আর শূন্যরা বাকী দিনগুলোর শূন্যতায় ছন্দ খুঁজে পায়.
মেরামতির জীবনে শিখার চাকরি একটা মেরুদণ্ড হয়. না পাওয়ার যন্ত্রণারা করপুরের মত উবে যায়. কিন্তু কিছু অহেতুক সন্দেহ অরূপের চোখ ছুঁয়ে শিখার কানে পৌঁছায়. দিন-মাসের গোনাগুনতি বছরে সেই ছোঁয়ার গভীরতা বাড়তে থাকে. শিখার চোখে ভিড় জমায় কিছু শব্দের কোলাজ-
"নারীরে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেন নাহি দিবে অধিকার?"
নিজের প্রতি খুব রাগ হয় ওর. চল্লিশ ছুঁই ছুঁই সিক্ত শরীরে বসন্ত এসে থেমে গেছে. ইচ্ছা করলেই অনায়াসে অরূপের এই ফার্নিচারের দুনিয়া ছেড়ে দিতে পারত. কিন্তু হয়নি মাথা ভর্তি মিডিলক্লাস জটের কারনে.
দুচোখ দিয়ে নেমে আসে বিগত ইতিহাস. দেশলাইয়ের এক চিলতে শিখায় শেষবারের মতো শিখা তাঁর গা-পিওি জ্বালানো শরীরটাকে পরখ করে.

মা ~ অজয় বৈদ্য অন্তর

নারী যে আমার মা
মায়ের মতো এ ভুবনে আপন কেহ না।
সারা বেলা অন্যের ঘরে
রুগ্ন দেহে করিত কাজ।
ছেলের লেখাপড়ার জন্য
ছেড়ে সকল লাজ।
নিজে খায়নিকো আমায় খাওয়াতো
বলতো একদিন বড় হবি।
দেশের কথা মায়ের ব্যাথা
জনে জনে বুঝিয়ে কবি

:
.
হঠাৎ কাক ডাকা ভোরে
দেখি মা নেই আমার পাশে।
যমদ্রুত নাকি নিয়ে গেছে
আমায় রেখে পরবাসে।
মার মতো আর কেউ বাসেনা
হলাম যখন একা।
এখনও আমি কতো ভাবি
স্বপ্নে পাবো মার দেখা।

:
.
আমার মাই শ্রেষ্ট নারী
তার মতো কেউ নাই।
দেশমাতার সকল নারীর মধ্যে
আমার মায়ের ছবি পাই।
শত ব্যাথা রাখিত চাপায়ে
আমার মুখপান চেয়ে।
মা নেই তাই অশ্রু ঝড়ে
যে অশ্রুতে তরী যায় বেয়ে

:
ভাসছে আমার চোখের পাতায় পাতায়
আমার মায়ের ছেড়া শাড়ির ছবি।
আমি লিখছি এক মায়ের কথা
হয়ে ভাগ্যবিড়ম্বনার কবি।

বিষকন্যা ~ সৌমলেন্দু ঘোষ

সব শেষের পরে- 
:
সময়- ৩রা এপ্রিল, ২১৫৭ 
- আহহ! 
হঠাৎই একটা পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল ত্রিকা, তাড়াতাড়ি উঠেই আবার দৌড় দিল সে। অনেক, সত্যিই অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে তাকে, খুঁজে নিতে হবে এক নিশ্চিন্ত আশ্রয়; পৃথিবীর শেষ নারী সে, তার গর্ভেই রয়েছে রিকো-র সন্তান, তাকে বাঁচাতেই হবে... 
***সব শুরুর আগে- 
সময়- ২২শে মে, ২১৫৩
- কনগ্র্যাচুলেশন! মিস্টার পার্ক... 
- হুমম! এটা কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি এখনও টেষ্ট করা হয়নি। 
- তাতে কি হয়েছে? আপনার কাজের উপর আমাদের ভরসা আছে, নইলে এমনি এমনি ভেনম ইন্সটিটিউশন ২০০ মিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করে না.. 
- বাই দ্য ওয়ে, আপনি কি একবার অ্যান্ড্রয়েড টাকে দেখবেন? 
- ওহ! ওকে, লেটস মুভ। 
- রিকো, মাই সন, ল্যাবের চাবি-টা নিয়ে এসো।

 
***ইতিমধ্যে- 

:
সময়- ১৯শে জানুয়ারী, ২১৫৫ 
- যাই বল রিকো, ট্রেসি কিন্তু খুব কাজের, আমি ভাবতেই পারছি না... 
(ত্রিকা-র কথায় মনটা একমুহুর্তে হালকা হয়ে যায় রিকোর, ট্রেসি হল পার্ক স্যারের ল্যাবে তৈরি প্রথম মেয়ে অ্যানড্রয়েড; পার্ক স্যার তাই ওকে বিশ্বাস করে ওর বাড়িতে ট্রেসিকে পাঠিয়েছেন কিছু হিউম্যান কালচার শেখার জন্য...) 
- হুমম। আগামী দিনে তো অ্যানড্রয়েডেই পৃথিবী ভরে যাবে... 
- যাহ! তা হয় নাকি? মানুষের কি হবে তাহলে...? 
- গড নোজ...

 
***সব শেষের আগে- 

:
সময়- ২৮শে মার্চ, ২১৫৭ 
(টিভির ষ্ক্রীনে খবরটা শুনেই পাথর হয়ে গেল ত্রিকা, ভেনম ইন্সটিটিউশন এখন পুরোপরি অ্যান্ড্রয়েড দের দখলে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুধুই মৃত্যুর বার্তা, একটা মানুষকেও বাঁচতে দেবে না অ্যান্ড্রয়েড-দানবেরা। রিকোর মৃত্যুসংবাদ কালই পেয়েছে সে, ল্যাবে হানা করেছিল অ্যান্ড্রয়েডরা; এমন সময় পায়ের শব্দে চমকে পিছন ফিরে দেখল ট্রেসি এসে দাড়িঁয়েছে...) 
- ম্যাম, আপনি পালান এখান থেকে, তাহলে অন্তত বেঁচে যাবেন, আর আপনার বেবি-কেও বাঁচাতে পারবেন, সেই হবে হয়ত আগামী পৃথিবীর একমাত্র মানুষ... 
- কৃতজ্ঞতায় চোখ উপচে জল এল ত্রিকার, অ্যানড্রয়েড হলেও নারী সে, তাই... 
কথা না বলে ছুটতে শুরু করে ত্রিকা, এক অন্ধকার ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে...

প্রতিমা ~ শৌণক বক্সী

শূন্য অংকটি দেখতে নিপুন গোল
আমি তাকে নিজের মতন সাজাই
টিকলি কাজল দুল টিপ নোলক
রুপ দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাই।
বয়ঃসন্ধির ভাজ পরার আগেই
জলভরা ঘটে হাতে হাত রেখে তুলে আনি
ছেলেবেলার বিবাহ সখ, প্রজাপতি মন
ঘরে আলোর রোশনাই , সানাই এর মধুর রেশে
আনন্দ মুখর সব আয়জনের রহস্য উন্মোচন
বাগানে ফুল গাছ লাগানো , জল দেওয়া
এত যত্ন কেবল ফুল ফোটানোর আশায়।
এরপর সে না আসলে ব্যর্থ সব আয়োজন
শূন্যের প্রকৃতি কেমন হলে প্রতিমার রুপ দেওয়া যায় ?

তিস্তাপাড়ের কথকতা ~ জয়তী ভট্টাচার্য অধিকারী

ছোট থেকেই তিস্তা দেখে এসেছে ভাল জিনিসগুলো সব দাদার জন্যে বরাদ্দ। এমনকি পুজোর সময় দাদার পছন্দমত জামাকাপড় কেনা হলেও কোনদিন তিস্তার ভাগ্যে সে সুযোগ আসেনি। কারণটাও বড়ই অদ্ভুত! মেয়েদের নাকি পছন্দ-অপছন্দ থাকতে নেই! জ্ঞান হওয়া ইস্তক এসবই শুনে শুনে বড় হয়ে উঠেছে সে। এমনকি পড়াশোনায় অসম্ভব ভালো হওয়া সত্ত্বেও গ্রাজুয়েশনের পর বাবা আর পড়তেও দিল না। তিস্তা ছোট থেকেই খুব সুন্দর আবৃত্তি করত। ছোট্ট তিস্তা নেচে নেচে সারা বাড়ী ঘুরত “ফুলকো লুচি, ফুলকো লুচি, পেটটি ফুলে ঢাক...”। কিন্তু ওই পর্যন্তই। বড় হয়ে ওঠার পর বাড়ী থেকে সেটাও মেনে নিল না। মেয়েদের আবার অত রঙঢং কিসের! প্রতিদিন নিজের মনের মধ্যেই গুমড়ে থাকতে থাকতে তিস্তা নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করল। তার বিয়ের সম্বন্ধগুলো আসত আর ভেঙে যেত। কানাঘুষো চলত...মেয়ে তো পাগলী! একে একে বাবা-মা মারা যাবার পর তিস্তাকে ওর দাদা বাড়ী থেকে চলে যেতে বলেছিল। কিন্তু তিস্তার তো আর কোথাও যাবার জায়গাও ছিল না। স্বাবলম্বী হতেও তো পারেনি সে বাড়ীর অনুশাসনে। তাই শেষ পর্যন্ত ওর স্থান হয়েছে আজন্ম হিংসুটে দাদার ফ্ল্যাটের স্টোররুমে। রোজ সকালে প্রায় অন্ধকার ঘরে একটা তোবড়ানো থালায় দুটো রুটি আর একটু সব্জী দিয়েই কর্তব্য সারে তার বৌদি। পেটের জ্বালায় সেটাই খেতে খেতে তিস্তা আজও বন্ধ দরজার পেছনে বিড়বিড় করে আওড়ায়...
”নারীরে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেন নাহি দিবে অধিকার...”।

নারী সর্বশক্তি ~ বর্ণা অধিকারী

নারী শক্তি নারী মুক্তি 
নারী জীবনের জয়গান
নারী লক্ষ্মী নারী দুর্গা
নারী ই সমাজের মান
নারীর গর্ভ থেকেই জন্ম হয় নব জন্মের পৃথিবী,নারী র গর্ভ থেকেই সৃষ্টি-রবীন্দ্রনাথ,নজরুল.নারীই উল্লাসিত জলরাশি,নারীর উপলব্ধি থেকে জন্ম ন্যায় আবেগ.নৃশংস ঔসূর কেও ধংস হতে হয় নারী শক্তির কাছে,নারীর বুকেই জন্ম রুদ্ধ চেতনার,জরাগ্রস্ত পৃথিবীর কালিমা মুছে যায় স্নিগ্ধ নারীর বুকে.কপালের আগুন রঙ্গা গোল টিপে সমস্ত পৃথিবীর পাপ পুড়ে যায়.নারীর এলো চুল ঢেকে ফেলে পরিবারের আসন্ন বিপদ.নারীর নীলাভ আঁচলের ছায়াই বেঁচে থাকে সংসার.নারীর স্তন পানে বাঁচে আগামি পৃথিবীর নাভিমূল.নারী শক্তি হলো সর্ব শক্তির আন্দোলিত প্রান্তর.নারীর জন্ম না হলে থেমে যাবে আগামি পৃথিবীর ধুকপুকুনি.
নারী হলো কবিতা
নারী হলো ব্রততী
গোটা জগত এর ওক্সিজেন হলো নারী রুপি দুর্গা রা.
নারী না থাকলে এই পৃথিবীতে সৃষ্টি ই হতো না নতুন পৃথিবীর.

নারী ~ সুপ্রতীম সিংহ রায়

কখনো খুবলে খাচ্ছো সবাই
চরিত্র গুণে হাত ভাগশরীরে,
মায়া কাঞ্চন তবু আমারই স্নেহে
বিষ দংশন ক্ষত ফের জ্বালালে
:
নারীর মুখ লুকায় সব মাতৃছায়া
বলো "প্রেয়সী তুমি ভালোবাসো?"
তবু শরীর সাক্ষী রোজ নিশীথে
সুযোগ বুঝেই ফের কাছে আসো
:
তকমা লাগায় তোমার সমাজ
"ধর্ষিতা, তুই নষ্ট মেয়েছেলে..!"
পারলে একবার ছুঁয়ে দেখো তবে
চাপ রক্তছাপ সব দুর্গার আঁচলে
:
পুরুষ দম্ভে একপেশে রীতি-নীতি
প্রশ্ন ওঠে কি কখনও কোনওবার?
"নারীরে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেন নাহি দিবে অধিকার?"
:
তবুও নারী আজও ক্ষমাশীল
যেমন সর্বংসহা মহা ধরিত্রী,
লাঞ্ছিত মা আজও সুশীল সমাজে
রাঙতা মাখে,সাজে সতী-সাবিত্রী
:
যে সমাজে নিয়মিত পূজি দেবী
সেখানে কন্যাভ্রুণ রক্ষা বড় দায়,
মাতৃ আরধনা করি তবু রীতিমতো
কেবলই পুত্রসন্তানের কামনায়!

পুতুল ~ অরুণজীব রায়

ভালোবাসা !! 
সে এক অসুখ
সারাদিনের ঘামঝরা শরীরে
ক্লান্ত যে মেয়েটি ঘরে ফেরে---
পায় কি সে সেবা
পুরুষের মতো করে?
সেবা!
সে তো নারীরই অধিকার।
মা বলেছিলেন ত্রিশার বিয়ের আগে---
"মেয়েটা পরের ঘরে চলে যাবে,
একটু হাসি খেলা করুকই না।"
মা তো বুঝেইছিলেন পরের ঘরের যন্ত্রণা।
সমাজ তোকে শিখিয়েছে পুতুল খেলা, আর
পুতুল হয়ে খেলা।
পিটুইটারিকে ভোঁতা করার
কীটনাশক ছড়িয়েছে ---
জন্ম থেকে প্রতিক্ষণে
অাজও ছড়ায়।

নারী-দিবসে ~ কস্তূরী কর

আমি একজন মেয়ে -
ফাগুনের শেষ বেলার মেয়েলি দিনে
আমার বিয়ে হলো  
খুব আশ্চর্য সকলে বললো ,
নারী দিবসে সাধ করে পায়ে বেড়ি দিল
আমিত্ব নিশ্চিহ্ন হলো 
আমি শৃঙ্খলিত
হারাইনি আমার অস্তিত্ব,
সকলের হয়ে ও নিশ্চিত
আমার সান্নিধ্য পেল আমি !
কবিতারা সাক্ষী
আর বেদরদী দুনিয়া বড়ো বিস্মিত 

নষ্টকথা ~ শীর্ষা মণ্ডল

নষ্ট মেয়ে হতেই পারে তারা
সবাই যাদের নষ্টা বলে ডাকে

আমার চোখে আকুল দিশাহারা
যুদ্ধ করে নষ্ট হবার ফাঁকে

তোমরা সবাই নদীর বুকে থাকো
হাজার স্রোতে নিত্য যে দাও পাড়ি;

নষ্ট যারা চরের উড়ানপাখি
পাথরজীবন বইছে তারা ভারী

গোলাপ গোলাপ নিত্য রঙের তুলি
আঁকছো জীবন আঁকছো দুহাত ভরে

নষ্ট মেয়ের নষ্ট জীবনকথা
বালিশচাপা, কবেই গেছে মরে-

নিত্য প্রেমের মলম মেখে থাকো
রোদের কোলে হারিয়ে যাবার সুরে
:
নষ্ট যারা তোমার আশেপাশে
থেকেও থাকে অসীম বহুদূরে
:
খাঁচার পাখি কাচের ঘরে সাজে
বন্ধ চোখে মুঠোর মুঠো আলো-
:
পথের পাশে উদাস কাঁটালতা
তীক্ষ্ন বাণে কাটায় জীবন ভালো
:
তবুও কোন নষ্ট দুর্দিনেতে
কাচমানুষে ফিরিয়ে নিলে হাত
:
অকালপ্রেমের বৃষ্টি হয়ে ঝরে
নষ্ট মেয়ের ব্যর্থ জীবনপাত
:
তাই তোমরা সবাই দুহাত চোখে ঢাকো
সুখের দ্বারে আগল টানো ভারী
:
উল্কামাখা স্বপ্ন ছেড়ে এবার
আমিও হব নষ্ট কোনো নারী

শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০১৬

নারী ~ সুশান্ত হালদার

তুমি দেবী সুকুমারী কামিনী মাতৃরুপিনী
তোমায় বিনে হতো কি সৃষ্টি ধরিত্রী?
তুমি করেছো ফুলে ফলে ধরণী সুশোভিত
তোমার জন্য আজও ফুটে উঠে লাল পলাশটি
:
তুমি নদী - পিপাসার্তকে করেছো পরিতৃপ্ত
অবারিত সবুজের মাঝে তোমায় দেখেছি আমি
বাংলার বুকে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী তটিনী
:
তুমি জয় করেছো স্বর্গ মর্ত পাতাল
তাই কি দেবতারাও তোমার জন্য হয়েছে মাতাল?
তোমার জন্য করেছে যজ্ঞ নষ্ট নীলকণ্ঠ
উলঙ্গ নৃত্যে কেঁপে উঠেছিল সারাবিশ্ব
ঈশ্বরও নাকি বুঝতে পারেনি তোমায় নারী!
কালিদাসও কি ভুল করে ধরেছিল ভূজাঙ্গ
তাই কি সে হয়েছিল আগুনে ছাপিয়ে পড়া পতঙ্গ?
:
তোমার জন্য আজও যুদ্ধ হয় নারী
পথে প্রান্তরে ঘরে ঘরে অথবা নির্জন কোন স্হানে।
তোমাকে করেছে বেচা কেনা যুগে যুগে
এখনও দাস প্রথা টিকে আছে ঘরে ঘরে!
নারী শুধু করবে সেবা- রাতে হবে সঙ্গিনী।
রাবণও কেনো ক্ষেপে গেল সীতাকে পাবার জন্য
সে কি শত্রুতা না কি পুরুষের বন্যতা?
:
পুরুষ তোমাকে বানিয়েছে উর্বর ভূমি
প্রতিনিয়ত পুরুষের লাঙলে চাষিত হচ্ছো তুমি
তুমি নাকি বীজ বপনের উর্বর জমি?
জ্বলজ্বলে চোখে চেয়ে থাকে বক্ষের দিকে
কামুক চোখ দুটি আটকে যায় নিতম্বে
:
এক থাল মাংসের আশায় ঘুরতে দেখেছি চিতাকে
মনে মনেও ধর্ষণ করে যখন থাকে নিরালায় একাকী।
মাংস তো পাওয়া যায় বাজারে কসাইয়ের দোকানে
চিতা কি পেরেছে নারীর হৃদয় মন জয় করতে?
দু:শাসন কি পেরেছিল দ্রৌপদ কন্যাকে উলঙ্গ করতে?
তাইতো প্রাণ দিতে হলো সবাইকে কুরুক্ষেত্রে
:
তোমাকে অপমান করেছে যারা
টিকে কি আছে তারা?
:
হে নারী তুমি নাকি পুরুষের সৃষ্টি
তাইতো তুমি আমার পিঞ্জর ভাঙা বুলবুলি।
যত নিয়েছো তার চেয়ে ঢের বেশী তুমি দিয়েছো
প্রেম প্রীতি আদর স্নেহ ভালোবাসায় পূর্ণ করেছো পৃথিবী
তাইতো তুমি মহিয়সী শ্বাশ্বত কন্যা জায়া জননী

নারী তোমায় ~ জয় চক্রবর্তী

একদিন অভিযাত্রী হবো ---
সাজিয়ে রেখো পরাগ রেণু স্তনের বোঁটায়
পায়ে পায়ে নামবো যোনি বেয়ে সৃষ্টির খোঁজে
একদিন চিনবো তোমায় ---
ঝাঁপ দেবো কাকচক্ষু অতল সলীলে
প্রতিটি ঝিনুক খুলে দেখবো মুক্তোর রঙ
একদিন শুনবো তোমায় ---
ফেলা বা না ফেলা সব দীর্ঘশ্বাস
তালা দেওয়া সিন্দুকে অব্যক্ত যত কথা
একদিন প্রণাম করতে দিও ---
যেদিন জানবো সৃজনের উৎস তূমি
আমি বা আমরা পৃথিবী জুড়ে সবাই সন্তান

ডুয়ালিটি ~ সৌমলেন্দু ঘোষ

শুরু থেকে শেষ-- 
:
- বুঝলে আজ টাকাটা ফিক্সড করেই দিলাম, টুপুর বড় হচ্ছে, বিয়ের জন্য এখন থেকেই... 
- যা বলেছো, কিন্তু টুবান এর জন্য কিছু.. 
- আরে রাখো তো, টুবান তো চাকরি পেয়েই যাবে, তখন দেখবে টাকা কোথা থেকে আসে...!!! 


- বাপি, আমি ভাবছি এইচ-এস করে ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে যাব... 
- প্লেন অনার্স লাইনে পড়বি, তোর দাদার পড়া, হোষ্টেল এসবে কত খরচ বল দিকিনি...?? 


- মা, তাড়াতাড়ি খেতে দাও, ক্লাস আছে.. 
- দাঁড়া, তোর দাদার ভাত-টা আগে দিয়ে দি, অফিসে মিটিং আছে তাড়াতাড়ি বেরোবে.. 


- মা, বলছি যে সামনের মাস থেকে ঝুমুরকে নিয়ে আলাদা থাকব, অফিস কোয়ার্টার পেয়েছি... 
- কিন্তু, তোর বাবার পেনশনের সামান্য ওই কটা টাকায় চলবে কি করে...?? 
- মেলা বোকো না, নেক্সট ইয়ারে আমার স্টেটস যাওয়ার প্ল্যান আছে, প্রচুর টাকা লাগবে... 

***শেষ থেকে শুরু-- 

:
- মা, ছেড়ে দাও; আমার স্কুলের চাকরিতেই আমাদের চলে যাবে.. 
- কিন্তু, টুপুর তুই আর কতদিন, একদিন তো তোর বিয়ে হবে... 
- আহ!! কতবার বলেছি না তোমাদের ছেড়ে যাব না.. 


- হ্যালো, টুবান; ওরে কোথায় তুই? বাবা যে হাসপাতালে... 
- ওকে, ২/৩ দিন খুব চাপে আছি, টুপুরকে বল না ম্যানেজ করে নিতে.. 


"নারীরে আপন ভাগ্য জয় করিবার, 
কেন নাহি দিবে অধিকার?" 
স্কুল-লাইফের আবৃত্তি করা সেই কবিতাটা আজ বারবার মনে পড়ছিল টুপুরের, তার জীবনটাও যেন এক হার না মানা ডায়েরীর পাতা, যেখানে আছে শুধু অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার কাহিনী। 

মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০১৬

রমণী ~ পারমিতা চক্রবর্ত্তী

হে বীর ,
সমানাধিকারের দাবি তোলো ,
বৃহৎ জগতে তব শক্তিশালী 
আছে কি কেহ ?
#
যদি নিজেরে চিনিতে চাও 
হৃদয়েরে প্রশস্ত কর l 
বিধাতার সৃষ্টিরে 
নিয়ে কর অহংষ্কার ৷ 
মহীরূহ সম ছায়াপ্রদায়ী যে –
বক্ষে লয়েছে অগ্ন্যুতপাতের ঢেউ 
দুধর্ষ অশ্বরে সে বাঁধিছে
আপন ডোরে ,
দুর্গমতা কভু নাহি জানি I
#
নারীরে ভাব কামবাসনার সঙ্গিনী
আপন গৃহে করিতে চাহ বন্দিনী I
#
হে বিধাতা রেখো না মোরে জ্ঞানহীন ,বাক্যহীন 
যে রুদ্রবীণা মোর কণ্ঠে বাজে ,
তাহারে লাহিয়া চলিব সিন্ধুতীরে I
#
জীবনের সর্বোত্তম বাণী যেন ঝরে 
জীবনের অন্তিম দিনে l
মস্তকের গুণ্ঠন বিসর্জিত করে ,
চলেছি জ্ঞানসাগরে 
রক্তিম বিহঙ্গ হয়ে,
চিত্তমাঝে যেন বিরাজ থাকি চিরতরে I 

উদ্দেশ্যমুখী ~ রিক্তা চক্রবর্তী



ভালোবাসো" ? 
মেরুদণ্ড জোড়া এখন অনন্ত অসুখ
#
চিরাচরিত প্রেমিকের চোখে 
আমি এক অর্বাচীন প্রেমিকা
অন্যের নিঃশ্বাসে বাঁচা , অন্যের সহায়তায় 
#
নিকো পার্ক , সাইন্স সিটি 
সাউথ সিটি মল 
অথবা হাওড়া- ব্যানডেল লোকাল 
আমার পরিচয় 'রাহুলের প্রেমিকা' হিসেবে 
#
"পরজীবী" !!! 
যেদিন তোমার মুখে প্রথম শুনেছিলাম শব্দখানি 
সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম , জবনিকা পতন 
নাটক এখন শেষ অঙ্কে
" নিজেকে 'কবি' ভাবো তাই না ?
আজ তবে বিলুপ্ত সম্পর্কের সিঁড়ি তে বসে 
বাছাই করা রাতপরীদের কবিতা লেখো কেন" ? 
#
উত্তর ভাসে অবারিত হাওয়ায়

হার মানবে না ~ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

বাসটা ধরতেই হবে সুবর্ণাকে। নইলে দেরী হয়ে যাবে অফিসে পৌঁছোতে। আজই যোগ দেবে অনেক চেষ্টায় পাওয়া চাকরীটায়। প্রচুর কষ্ট সয়েছে এতকাল। কত জায়গাতেই না হন্যে হয়ে ঘুরেছে সামান্য একটা চাকরীর জন্য। অনেকেই অজুহাত দেখিয়েছে, আপনি মেয়ে মানুষ, পারবেন না। অথচ খুব দরকার ছিলো একটা চাকরীর। ঘরে অসুস্থ বাবা, অসহায় মা। 

সামর্থ না থাকলেও পড়াশোনাটা ছাড়েনি। পড়াশোনার ফাঁকেই ঠোঙা বানিয়েছে। এর তার ছেড়াফাটা কাপড় সেলাই করেছে। যেবার বাবার হাত ভাঙলো এই সুবর্ণাই সেবার বাবার ভ্যানরিক্সাটা চালিয়েছে স্কুলের পর। তবুও পড়াশোনায় দাড়ি টেনে দেয়নি। সংগ্রাম করে গিয়েছে নিজের সাধ্যমতো। অবশেষে সাফল্য লাভ। গ্র্যাজুয়েট হবার পর বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এই চাকরিটাও জোগাড় করেছে স্বচেষ্টায়।
সুবর্ণা আজও হাল ছাড়লো না। ভিড়ে ভারাক্রান্ত বাসের হ্যাণ্ডেল ধরতে যেতেই লোকটার কনুইয়ের গুঁতোয় হ্যাণ্ডেলটা হাতছাড়া হলো। বাসটা যেকোনো মুহূর্তে ছেড়ে দেবে। সুবর্ণা মরিয়া চেষ্টা চালাতে চালাতেই ভেবে দেখলো, পরের বাসটার জন্য অপেক্ষা করতে গেলে অফিসে পৌঁছোতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। 
অগত্যা মরিয়া হয়ে উঠলো। “নারীরে আপন ভাগ্য জয় করিবার / কেন নাহি দিবে অধিকার?” - রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইনদুটো মনে মনে আউড়েই পা গুঁজে দিলো বাসের পাদানিতে। তারপর কষে চেপে ধরলো সেই লোকটার কলার যার কনুইয়ের গুঁতোয় হাতছাড়া হয়েছে বাসের হ্যাণ্ডেল। আজ লোকটার জামার কলার ধরেই ঝুলে যাবে। এতদিন হার মানেনি যখন আজও মানবে না। অধিকার ছিনিয়ে নেবেই। 

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...