ছোট থেকেই তিস্তা দেখে এসেছে ভাল জিনিসগুলো সব দাদার জন্যে বরাদ্দ। এমনকি পুজোর সময় দাদার পছন্দমত জামাকাপড় কেনা হলেও কোনদিন তিস্তার ভাগ্যে সে সুযোগ আসেনি। কারণটাও বড়ই অদ্ভুত! মেয়েদের নাকি পছন্দ-অপছন্দ থাকতে নেই! জ্ঞান হওয়া ইস্তক এসবই শুনে শুনে বড় হয়ে উঠেছে সে। এমনকি পড়াশোনায় অসম্ভব ভালো হওয়া সত্ত্বেও গ্রাজুয়েশনের পর বাবা আর পড়তেও দিল না। তিস্তা ছোট থেকেই খুব সুন্দর আবৃত্তি করত। ছোট্ট তিস্তা নেচে নেচে সারা বাড়ী ঘুরত “ফুলকো লুচি, ফুলকো লুচি, পেটটি ফুলে ঢাক...”। কিন্তু ওই পর্যন্তই। বড় হয়ে ওঠার পর বাড়ী থেকে সেটাও মেনে নিল না। মেয়েদের আবার অত রঙঢং কিসের! প্রতিদিন নিজের মনের মধ্যেই গুমড়ে থাকতে থাকতে তিস্তা নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করল। তার বিয়ের সম্বন্ধগুলো আসত আর ভেঙে যেত। কানাঘুষো চলত...মেয়ে তো পাগলী! একে একে বাবা-মা মারা যাবার পর তিস্তাকে ওর দাদা বাড়ী থেকে চলে যেতে বলেছিল। কিন্তু তিস্তার তো আর কোথাও যাবার জায়গাও ছিল না। স্বাবলম্বী হতেও তো পারেনি সে বাড়ীর অনুশাসনে। তাই শেষ পর্যন্ত ওর স্থান হয়েছে আজন্ম হিংসুটে দাদার ফ্ল্যাটের স্টোররুমে। রোজ সকালে প্রায় অন্ধকার ঘরে একটা তোবড়ানো থালায় দুটো রুটি আর একটু সব্জী দিয়েই কর্তব্য সারে তার বৌদি। পেটের জ্বালায় সেটাই খেতে খেতে তিস্তা আজও বন্ধ দরজার পেছনে বিড়বিড় করে আওড়ায়...
”নারীরে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেন নাহি দিবে অধিকার...”।
”নারীরে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেন নাহি দিবে অধিকার...”।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন