শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৬

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

"এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক
ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক" 


নতুন দিন'পঞ্জিকা শুরু । 
ষড় ঋতুর চাকায় আরও এক বছরের আবর্তন শেষে পুনরায় বৈশাখের আগমন । সমাগত নববর্ষ , সমাগত ২৫ শে বৈশাখ । এ মাস তাই উৎসবের মাস । এ মাস তাই নবীন বরণের মাস । বৈশাখের প্রথম প্রত্যূষে আকাশ প্রাঙ্গনের সমস্ত কালিমা , সমস্ত 'কু' এর বিনাশ ।  নবীন আলোর প্রথম সুরে , আবির্ভাব  'সু'এর । 

"নিশি অবসানপ্রায়, ওই পুরাতন
            বর্ষ হয় গত!
      আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন
            করিলাম নত।
বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও,
      ক্ষমা করো আজিকার মতো
               পুরাতন বরষের সাথে
               পুরাতন অপরাধ যত"


উৎসবের এই আলোকোজ্জ্বল ঝর্ণাধারায় স্নান করেই রোদ্দুর' পা রাখলো এক বছরে । এই একটি বছর নানা গুণী মানুষের কলমে ঋদ্ধ হয়েছে রোদ্দুর 'এর প্ল্যাটফর্ম , প্রাণিত হয়েছে মুঠো ভরা রোদ্দুর' ।  প্রত্যেক কে আন্তরিক ধন্যবাদ 

সেল'ফোনে বাজতে থাকুক অবিরত সুর তরঙ্গ 
 অবিরল কথামালায় ভার্চুয়াল ইন্টারাকশন 
 সময়ে অসময়ে রঙ্গিন কাগজ কেটে সাজগোজ 
 ,নক্সাকাটা কংক্রিটের রাজপথে ,ইটের দেয়ালে কিম্বা 
পাথুরে মেঝেয় আকা হরেক আল্পনা । 
গাছঘেরা একচিলতে নাগরিক ছায়াস্থানে 
গ্রামের আদলে বসা মেলার রেপ্লিকা 


সকলের জন্য রইল নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা । সাথে থাকুন । পাশে থাকুন । 

শুভেচ্ছান্তে , 
পিয়ালী বসু 







বসন্তের রূপকথা ও চুপকথা ~ সৌমলেন্দু ঘোষ

** প্রথম ছবি- 

( কোন একদিন দুপুরে )
- আগে মালগুলো দেখুন, তারপর না হয়..
- না না, এখন এসবের কোন দরকার নেই..
- দেখুন না কাকিমা, সব ভালো কোয়ালিটি; এপাড়ায় আমিই একমাত্র এই মাল ফেরি করি। বসন্ত বললে সবাই একডাকে চিনবে; বিশ্বাস না হয় পাশের দত্তবাড়ির কাকিমাকে জিজ্ঞাসা করুন...
- ঠিক আছে, কিন্তু বলছি তো এগুলো কিছুই দরকার নেই...
- অন্তত, একটা কিছু রাখুন; আজ এখনও বউনি হয়নি...
- বলছি তো কিছুর দরকার নেই, তাছাড়া মাসের শেষ, এখন এসো, লাগলে খবর দেব; আর কি যেন নাম তোমার, বসন্ত...

** দ্বিতীয় ছবি- 

( সেইদিন রাতে )
- মা, বলছি যে আমার কাল হাজার চারেক টাকা লাগবে...
- কি করবি রে...?
- তোমাকে বলেছিলাম না এবার কয়েকজন বন্ধু মিলে শান্তিনিকেতন যাব, পরশু দিন বেরোব; তাই কাল টাকা দিতে হবে। তাছাড়া, যাচ্ছি একবারে খালি হাতে যাব...
- হঠাৎ শান্তিনিকেতন...?
- আরে, বসন্ত উৎসব না...!!
- ঠিক আছে, কাল কলেজ যাওয়ার সময় নিয়ে নিস...

রাত্রি ঘোর ~ জাকিয়া জেসমিন যূথী

অতন্দ্রিলা, 
ঘুমোওনি জানি! 
অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারের
আজন্ম বিরোধী তুমি, 
মশারীর সূক্ষ্ণ জালে তৈরি
ঘরের ভেতর ছোট ঘরে
কত গভীর প্রেম
ভিন্ন নি:শ্বাসে...
ঘন ছায়া উত্তাপে....
কাটানো সে প্রহরগুলো!
.
অতন্দ্রিলা, 
ভালোবাসতে তুমি আলোর বন্যা
এখনো জোৎস্না এলেই
জানালা গলে উঁকি দেয় এক ফালি চাঁদ
জ্যোৎস্না স্নানে শুভ্র বিছানা...
একাকী আমি...
শুধু,
তুমিই নেই!

ফেরা ~ সৌমলেন্দু ঘোষ

বকখালি, ২৩শে আগস্ট 
ভেজা বালির উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সায়কের আজ বেশ ভাল লাগছিল, লাগবে নাই বা কেন; কাল থেকে সে মুক্ত, আর তাকে কারো গোলামি করতে হবে না। বস না বললেও এটাই হবে তার শেষ কাজ। ** (কয়েকদিন আগে, ১৮ই আগস্ট) - বাট, স্যার কাজটা খুব রিস্কি; বিচে প্রচুর লোকজনের মাঝে... - কোনো লেম এক্সিকিউজ নয়, যে আমার গ্যাং এর সব খবর পুলিশের কানে তুলে দিচ্ছে তাকে আমি আর বাঁচতে দিতে পারি না; নাউ মুভ... ** (পাঁচদিন পর, রাত্রিবেলায়...) - স্যার, পাখি খাঁচায় ধরা পড়েছে; কি করব? - গ্রেট নিউজ ম্যান, আমি কাল সকালেই বকখালি পৌঁছাব; তারপর শালা-কে খতম করব, খোচরগিরি আমি ঘুচিয়ে দেব। ** বকখালি, ২৪শে আগস্ট (বিকালে...) - তোকে ছাড়ব না, কুত্তা! আমার খেয়ে আমাকেই কামড়াবি...??? - চুপ, একদম চুপ! মনে পড়ে একবছর আগে আমার ছোট্ট ছেলেটাকে আর রুমিকে কিভাবে খুন করেছিল তোর লোক? শুধু তোকে মারার জন্যই তোর দলে ভিড়েছিলাম, আজ তোকে পেয়েছি; তোকেও শেষ করে তবে আমার শান্তি। - প্লিজ সায়ক, ছেড়ে দে আমায়; কত টাকা চাস তুই বল...?? - টাকা..!!! হা হা... - আহহহ...!!! ** (ফ্ল্যাশব্যাক, প্রায় বছরখানেক আগে..) - প্লিজ বাপি, আমিও ওটা খাব.. - না সোনু , ওগুলো বাজে খাবার; আমি তোমাকে আজ রাতে চাইনিজ খাওয়াবো.. - না মম, আমি এখনই কোকোনাট ওয়াটার খাব.. - আচ্ছা ঠিক আছে, কিনে দিই না; একদিনই তো... দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ঠেলাগাড়ি-টার দিকে এগোল সায়ক, তিনটে শাঁসওয়ালা বড় ডাব কিনল; খাওয়া হলে সায়ক বলল- - চলো না রুমি, বিচ থেকে একটু বেরিয়ে আসি.. - ওকে চল, দাঁড়াও চটিগুলো বরঞ্চ হাতে নি; খালি পায়ে ভিজে বালির উপর হাঁটতে খুব ভাল লাগে.. - একটা কবিতা বল না রুমি, তুমি তো কলেজ লাইফেও... - ধুস! কী যে বল না.. - প্লিজ মম...!! রুমি গলাটা একটু ঝেড়ে বলে উঠল- "অনিমিখ রাত ঢাকা দেওয়া আছে আকাশের ক্যানভাসে, আর বাকিটা আদুরে চোখে... সায়ক আর সোনু মুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগল, তারা জানতেও পারল না যে পিছনের অন্ধকার ফুঁড়ে বেশ কয়েকজন ওদের ঘিরে ফেলছে....

অতলান্তিক ~ সুদীপ্তা নাথ

নির্ঘুম প্রহরের অতর্কিত মেঘে, অবিন্যস্ত রাতপোষাকের মতো, বিষাদী বিকেল পড়ে থাকে কিছু। কিছুটা পেলব,উদাসীন,কিছুটা ব্যক্তিগত যেন পেয়ালার তলানিতে লালচে তরল বুদ্বুদে স্মৃতি থাকে ঠোঁটছোঁয়া মাদকতায় নেশাতুর পল কিছু বাকি থেকে যায়
রক্তিম অন্তরালে ছিন্ন শব্দ-শব, ক্ষণিকের বিশ্রাম চেয়ে নেয়
তবু আজও, মুহূর্তের নিবিড়তায় যতটা ছোঁয়া যায়, অতল স্পর্শে ছুঁয়ে নিই ততটাই। মুহূর্তের ফর্মালিনে ভেজা যত প্রেম-অপ্রেম, নিশীথের গভীরতায় খুঁজে পাই

বসন্ত ~ শুভাশিস সিংহ

পরিপূরক প্রেম
ঝড়ে যায়
পরিস্থিতির বাগানে

সুবিধাভোগী চেতনা
ছিঁড়ে খায়
লালচে ঠোঁটের
বিজন হাসি

একটা কোকিল
গল্প বলে
মৃত মনের
পৃথক ভালোবাসার

কয়েকটা দৃশ্য এবং তুমি ~ জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী


এক :
রাত হয়েছে একটু
কাঁধের ব্যাগ,ঘামে ভেজা শাড়ি,চার্জ ফুরানো ফোন একসাথে দীর্ঘশ্বাস ফেললো তোমার সাথেl
রান্নাঘরও তোমায় খোঁজে দিনের শেষে একটিবারll

দুই :
ফাটা টালি বেয়ে-
চাঁদের আলো চুঁইয়ে পড়ছে
গনগনে আঁচে পোড়া রুটি,
ঘাম মিশছে পোড়া ঠোঁট বেয়ে বিভাজিকায়l
কোলের প্রাণটা শুষছে সেটুকুও দুধের সাথে ll

তিন :
বড় গাড়ি গেলে বেশ বুঝতে পারো,
পিলার গুলো কাঁপে !
সঙ্গে মা কালির ফটো টাও l
বর্ষার আগে ত্রিপল কিনবে তুমি-
ভাবতে ভাবতে ফুটন্ত ভাতের বাষ্প ছুঁয়ে যাচ্ছে ফ্লাইওভারের গা ll

চার :
সবুজ পর্দার ফাঁকে পলাশ দেখছ হয়তো l
আঙ্গুল দিয়ে চেপে রেখেছ কারোর কব্জি -
এক..দুই..তিন..চার...গুনছো ?
পলাশও গুনছে দিন...তুমি শুনছো
স্টেথো ছাড়াই l l

পাঁচ :
বৃষ্টি নামবে,আকাশ বলছে তাই l
তুমি চোখ সরিয়ে হাঁটা দিলে অন্ধকারে -
কয়েকটা ছায়া আর তোমার রক্ত মাংসের শরীর
মায়ের ওষুধের শিশিটা গড়াগড়ি খেলো রাস্তার জলে ll

ছয় :
বেড রুমে বসে ফটো অ্যালবাম দেখছ,
সব হাসি হাসি মুখ l
ড্রইং রুমে,
হাসির ফোয়ারা ছুটছে-
পেয়ালার সাথে সান্ধ্য আড্ডায় l
তোমারও ডাক পড়ল একসময় !
ওদেশে মা বুঝি স্নান সেরে পুজোয় বসেছেন,
থাক্,ডাকলে না তুমি আর l l

একটি হত্যা-দৃশ্য : ( জীবন বারুই/বারুইপুর/কলঃ১৪৪) ~ মানস চক্রবর্তী

এই সেই পথ । দু’পাশে ধূধূ ক্ষেত ।অনেকগুলো গঞ্জ-গাঁ ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে গেছে ওদিকে ।যেমন যায় সব পথ।আর অগুন্তি মানুষকে ঘর থেকে টেনে বের করে আনে ।যারা বেরয় তারা আর ঘরে ফেরেনা ।ফিরলেও বেশ বদল হয় তাদের । মুকুন্দ-আজিজ-সঞ্জয়রাও এই পথ ধরেই বেরিয়েছিলো ।জমি জিরেত তাদের ভরণ পোষণ করতে অপারক হওয়ায় ,১০০ দিনের কাজ করে একে তাকে দিয়ে থুয়ে পেট ফাঁকা ,সারা বছরে মেরেকেটে এক-দেড়’শ দিনের কাজ ; অবশেষে এই পথই ভরসা ।দাওয়া থেকে উঠোন , উঠোন থেকে পায়ে চলা পথে , সে পথ মিশেছে বড়রাস্তায় ।গাঁ খালি করে ভোর ভোর পৌঁছে যায় শহরের মোড়ে ।হ’য়ে যায় কেউ রাজমিস্ত্রি ,কেউ রঙ মিস্ত্রি ; নতুন লাইনে এলে সে জোগাড়ে – হেল্পার ।
এই সেই পথ । দু’পাশে খাঁখাঁ জমি । চাষ নেই …খচ্চা ওঠেনা ।ওই পথ ওদের ফেরৎ আনে ।কিন্তু একটু একটু করে ওরা পালটে যায় ।রোজ ।ওদের গায়ে শহরের গন্ধ বাসা বাঁধে ।ওরা আর পাঁচজনের কাছে ক্রমশ অচেনা হ’য়ে যায় ।ওদের পকেটে গান বেজে ওঠে…হ্যালো…হ্যালো…।আর সকলে অবাক হয়না তবে কেমন ভাবে যেন দ্যাখে ।সে নজরে না থাকে রাগ না থাকে রগড় ।
এই সেই পথ । ভুটভুটি ভ্যানে এ পথ দিয়ে ভোরভোর হল্লা করতে করতে ওরা গাঁ ছাড়ে রোজ ।ওদের হাতে হাতে এখন নেট … পকেটের নোট হড়কে বেরিয়ে যাচ্ছে ।ওরা মোবাইলে নাচ দ্যাখে … গা শিরশির করা উলঙ্গ ছবি দ্যাখে…খ্যা-খ্যা করে হাসে…যত জোরে হাসা যায়…চোখ মটকায় একে তাকে ।এক রঙ্গীন মস্করা ।সন্ধেটা কিছুতেই পার পায়না পাঁইট ছাড়া ।
এই সেই পথ ।ওদের পালটে দেওয়া পথ ।ওদের রঙ্গ-রসিকতা যত বাড়ে , নেটের খচ্চা বাড়ে । তত ঘরের চাল বাড়ন্ত হয় , বাচ্ছার জামা কেনার টাকা বাড়ন্ত হয় ।তখন দস্তুর হয় মীরাদের কাজে বেরনো ।চ চ । শহরে মেলা কাজ ।ভোর ভোর উঠে কেউ মা’র কাছে কেউবা স্যায়না মে’টার কাছে কোলেরটা কে জমা করে বেরিয়ে পরে ।মীরারাও দু’চার মাস পরে মোবাইল জুটিয়ে নেয় ।ওরাও মজা পায় ।এ ওর ভাতারের সঙ্গে জুটে যায়…খ্যাখ্যা করে হাসে ।ধরা পড়ে…স্বামী-স্ত্রীতে পেটাপেটি করে…
এই সেই পথ । এই পথের ধারে বাবলার ঝোপে আবিস্কার হয় কোনও একদিন সাবিত্রির মৃতদেহ ।তার দেহে সূতো বলতে কিছু ছিলনা ।গলায় ছিল গামছার প্যাঁচ ।পাশে পড়ে ছিল বইএর ব্যাগ ।আর একটা মোবাইল…তখনও তাতে স্থির ছিল সাবিত্রীর উলঙ্গ ছবি… । 

কথার নদী ~ শমিতা চক্রবর্তী

'হতে পারে ক্লিশে তেলচিটে বালিশে
সত্যি কথা জমলে যেমন হয় '

শব্দের বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা
কথার নদী বইয়ে দিতে পারলে
ভার কিছুটা লাঘব হয়
ব্যাথার বিষে নোনা জলের ককটেল
পান করে করে --
অমরত্বের ভ্রম হয় 

স্বপ্ন গুলো ঢোঁক গিলছে
বাস্তববাদী আঙিনায় -
স্বভাব -কবি ঘোর সন্ধানী
ছন্দ খোঁজে কবিতায় 

নির্মম এই দুনিয়ায় ~ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

মোটা লোহার বিম সমেত নির্মিয়মান উড়ালপুলটা এসে আছড়ে পড়েছে শশব্যস্ত জনাকীর্ণ সড়কের ওপর। মহানগরী তখন ছুটছিলো পেটের তাগিদে। চাপা পড়েছে বেশ কিছু সচল গাড়ি এবং ছুটন্ত মানুষ। থমকে গেল, স্তব্ধ হয়ে গেল গোটা মহানগরী।
দুটো মোটরগাড়ির মাঝখানে আটক হয়ে থাকা জীবন্ত মুখটি থেকে প্রবল আকুতি ঝরে পড়ছে উদ্ধার কামনা করে। ইশারায় বলতেও চাইলো একটু জল দাও। মুখে - গায়ে - মাথায়।
লোহার বিম এবং মাটির মাঝখানের সামান্য ব্যবধানটুকুর ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে একটা রক্তাক্ত হাতের ইশারা। আঙ্গুলগুলো থেকে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে এক বুক তৃষ্ণা, রক্তের আলপনায় আঁকা মৃত্যুভয় আর একমুঠো বাঁচার আশা।
পরদার আড়ালে থাকা অসংখ্য মুখগুলিতে কতকাল আগেই যেন ঝলসে উঠেছিলো লোভের হাতছানি। কেউ দেখেনি। কেউ টেরও পায়নি তাদের জঘন্য আবদার।
দেখেছেন এবং শুনেছেন একমাত্র ঈশ্বর। হায় রে, সেই ঈশ্বরও আজ দেখলেন না কশতশ মায়ার সংসার নিমেষেই ঝলসে গেল সেইসব মানুষের লোভ লালসার আগুনের লকলকে শিখায়।
লোহার বিম কেটে টুকরো টুকরো করেও রক্তাক্ত হাতের লোকটাকে বাঁচানো গেল না। লোকটা মরে গেল বিস্ফোরিত নয়নে নির্মম দুনিয়াটাকে দেখতে দেখতে। চিরতরে চলে যাবার আগে সভ্যসমাজের মুখের ওপর উগড়ে দিয়ে গেল একরাশ ঘৃণা। তারপরও বেশ কিছু শবদেহ উদ্ধার করা হলো ভগ্নাংশের তলা থেকে যাদের না ছিলো লোভ, না ছিলো লালসা। শুধু ছিলো একবুক বেঁচে থাকার তৃষ্ণা

একটি প্রাসঙ্গিক লেখা :বড় বিষাদময় এ সময় ~সিক্তা দাস

এই ক্লান্তিকর রক্তাক্ত সময়ে কলমকে মুক্তি দাও কবিতা
সে এখন রক্তকে চিনে নিক, চিনুক আর্তনাদ, বুক চেরা কান্না
ছড়িয়ে দিক কিছু ঠিকানা, ফোন নং ব্লাড গ্রুপ আর ক্যাম্পের হদিস
কিছু "মানুষ" এর জাত চিনে নিক
...তোমার দেহের উপর দাঁড়িয়ে, চেনা হাত ধরে
অক্ষর গুণে গুণে ইঞ্জেক্সন সিরিঞ্জ হতে শিখে নিক কলম
চিনে নিতে শিখে নিক প্রয়োজনীয় যন্ত্রদের...
যারা তুলে আনে টুকরো টুকরো অঙ্গ ...একদা মায়ের স্নেহমাখা
অথবা, যে মানুষ ফেরে নি ঘরে,
তার একরত্তি শিশুটির বুকে ধিকিধিকি জ্বলুক ...
যেন দাবানল হয়ে যেতে পারে...কোনো এক শুভক্ষণে

শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬

বিষাদ ~ পারমিতা চক্রবর্ত্তী

অন্ধকার রাজ্যে খুঁজেছি সেই সুভাষ,
নৈশব্দের রাণী ঘুমিয়ে আছ কি ?
বিষাদময় করেছো মোরে ,
অন্তঃসার শূণ্য আজি ৷

নিস্তব্ধ চক্ষু খোঁজে নতুন দিগন্ত 
বন্দী করেছে মোরে ,
হৃদয়ের প্রাচীর দিয়ে 
হেতায় নাহি আছে দক্ষিণ খোলা জানালা ,
মনের উষ্ণতায় শুকায় না অশ্রুজল 


ঈশ্বর বাদে যারা বিশ্বাসী 
একটি অনুরোধ তাদেরে আছে,
নিতে যদি পারে মোর পূর্ণ হদয়খানি,


তবে এক কলমে শেষ হবে 
শেষ বেদনাটুকু ৷
যেটুকু থাকবে বাকি ,
তা দিয়ে লেখা হবে ,
জীবনের শেষ কবিতাটুকু 
বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি যেন হয় 
অফুরন্ত ভালোবাসা

দ্য সিনারিও ~ শীর্ষা মণ্ডল

(১)

পিছলে যায় সময় পাঁচ আঙুলের 

ডগা ছুঁয়ে। রক্তপাতের রঙ যেখানে
বাসি গোলাপী হতে আরম্ভ করে

(২)


মাসিক বেতনের মুখোমুখি
আমরা দুজন। পাক্কা কুড়িদিন পরে
মাটির ভাঁড়েই ফুরোনো বিধান!
অনিয়মিত কর্মী!

(৩)


আঙুল গলতে দেখেছো কখনো?
সিনারিওর ভিড়ে আমার আঙুল গলতে
শুরু করে কোন দাবদাহ ছাড়াই-
পুড়ন্ত হাড় মাংস শিরামোমে অবয়ব
আঁকা হয় জেলখানার। যার কয়েদি হতে গিয়েও
পিছলে এগিয়ে যেতে পেরেছো তুমি।
অবলীলায়।
সময়কে মাথার চুলছেঁড়া ক্ষ্যাপাটে বন্দী করে!

স্পর্শ ~ অজয় বৈদ্য অন্তর

মন হারিয়ে হাতের ছুঁয়ায়
না যায় ছুয়া মন।
চেষ্টার বহর চালিয়ে প্রহর
নির্লিপ্ত প্রতি ক্ষণ।
.....
তুমি মোর হ্রদয় পাথারে
জ্বালায়ে মোমের বাতি।
অন্ধকারে নিশ্চুপ তুমি
আমি অপেক্ষমান সারারাতি।
....
তব স্পর্শে মোর হ্রদে হর্ষে 
দ্বীপ্তিময় হবে সুখ।
হ্রদয় কম্পমান আশার পানে
নির্মোক তব পাষাণ বুক।
.....
জাগরিত স্বপ্নে কে গো অলকে
বাজালো দুখের বীণ।
রুদ্ধ দ্বারে বধিল তোমায়
না পারিক ছাড়াতে আমি হীন।
.....
রহিব পড়ে নির্মোক ঘেষে
অবেলায় তব স্পর্শ তরে।
বাঁচিবার সাধ নাহিক আর
তব তরে সুখ পাবো মরে।

একটুকরো আকাশ ~ স্বাতী গুপ্ত

নিষেধ এর প্রাচীর , নিয়মের লৌহ কারাগারে 
 আবদ্ধ স্বাধিকার , মনন, চেতনা অন্ধকার জমাট কালো 
 তবুও এক তীব্র আগ্রাসনে পালা বদলের সুর ছড়িয়ে পড়ছে
হৃদয় থেকে হৃদয়ে 

 নিমজ্জিত প্রাণের শেষ প্রচেষ্টা , যতোই তীব্র হোক অন্ধকার 
 আগামী জেনে রেখো ...ছিনিয়ে নেবেই , এক টুকরো আলোর আকাশ 

আনন্দধারা ~ রিক্তা চক্রবর্তী

অ্যাকাডেমি তে চিত্রকলার এক্সিবিশন
অচেনা সময় জুড়ে মানদন্ডের রেষারেষি
আক্রোশী খুনজখমে ইতিকথার মৃত্যু 

জীবন জুড়ে বৈরিতা
ঘৃণার লেভেলে এভাবেই ষোলকলা পূর্ণ 

" আনন্দধারা বহিছে ভুবনে 
দিনরজনী কত অমৃতরস উথলি
যায় অনন্ত গগনে ॥ 
পান করি রবে শশী অঞ্জলি ভরিয়া
- সদা দীপ্ত রহে অক্ষয় জ্যোতি " 


বসন্তের শহরতলি তে 
মারনাস্ত্রের পরাজয় , মুগ্ধতার জয়

নৃত্যকলা ~ পিয়ালী পাল

নৃত্যকলা যেন কবিতা
ভাবের সূক্ষ্মতা ঢেউ হয়ে
আন্দোলিত করে কায়া। 
বসন্ত বিরাজিত নৃত্যে
ফোটে যূথীমালা। 

মূঢ়তা সব দূষিতা ছলাকলা 
মহদেবের চরণতলে
পিষ্ট হয়ে জাগে পবিত্রতা ।

স্মৃতি অমলিন ~ রীনা রায়

তোমার সেদিন চলে যাওয়া 
শেষ বারের মত কিছু কথা, 
অতল দৃষ্টি-বিনিময় 
বেশ কিছুক্ষণ--

এমন ভাবে চলে গেলে,
বাকি জীবনকে দিয়ে গেলে
তোমার এক অনন্ত অনুরণন
ঘিরে রাখে মন। 

তুমি যাবে বলে কিছু কথা
সাজিয়ে এনেছিলে
সে যাওয়া এত সহজ ছিলো
কথাগুলোর শব্দ-পরতে বলে গেলে তুমি, আমি ছিলাম নীরব মৌন শ্রোতা

সেই থেকে আজীবন শ্রাবণ আমার
কি গ্রীষ্ণ, কি শরতে। 
আর একবার কোনক্ষণে 
দেখা যদি হয় তোমার আমার 
আমার প্রতীক্ষারও আছে 
কিছু জমা না বলা শব্দ-মালা 
শোনাব তোমায়--

তার অনুরণিত ঝঙ্কার
এখনো প্রতিধ্বণি তোলে, 
আমি নিশ্চিত এবার 
তোমার অনুরণনের পালা!

পাহাড়'কথা ~ ছোটন দে

ইচ্ছে করেই কোনওদিন বলিনি তোমায়

তুমি ঘুমিয়ে গেলে
প্রতিটি রাত তোমার বুকে বুক পেতে 
একটা গভীর পাহাড়,
এক মুঠো ভেজা মাটির কথা শুনি

আমার এই পাহাড় ভালো লাগে
এই ভেজা মাটি ভালো লাগে

এদের যদি বলো, ভালোবাসি
এরা চুপ থাকে,
শুধু বুক খুলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এগিয়ে দেয়

ভাবি, আমরা সবাই যদি 
একে অপরের বুকে মাথা রেখে
ভালোবাসি না বলে
শুধু এই পাহাড় 
আর মাটির চুপকথার অনুরণনটুকু 
স্বার্থপরের মতো নিঙড়ে নিতে পারতাম!

আমি জানি
এই যে ভাবছি, ছাইপাশ

ঠিক এই মহুর্তে
আমার এই শহরেরই একটি ছেলে
ভালোবাসি বলে
একটি মেয়ের খোলা বুকের ছবি
চাইল হোয়াটসএপে,
সে ছবি বন্ধুরাও পেল

তারপর আর কি থাকে বলো

সেই সকালবেলার পত্রিকা!

এই মুহূর্তে ধর্মনগরের
কোনও এক গ্রামে
কাতার ফেরত তারেক মিঞা
বউয়ের অবর্তমানে
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী একমাত্র মেয়েটিকে
সারা রাতভর বারবার ধর্ষন করছে

তারপর আর কি থাকে বলো!

সেই ভয়,
সেই চুপ থাকা।

এই যে আমি পাহাড়ের কথা বলছি
তুমি-ই বা কদ্দুর শুনছ!

এই মুহূর্তে সাব্রুম লুধূয়ায়
বসন্ত রিয়াং, অজয় ত্রিপুরা, প্রদীপ সাহা'রা মিলে
বিষ্ণুচরণ মুন্ডা'র তিন বছরের মেয়েটিকে 
তুলে নিয়ে গেছে চা বাগানে

তারপর কি আর থাকে বলো!

সেই ছড়ার পাড়ে, বেলগাছ তলায় 
ব্লেড বসানো আর একটি দেহ

ভোর হওয়ার আগে
আমি শুধু বলে যেতে চাই

আমরা সবাই একসঙ্গে কথা বলছি
আর কথা বলতে বলতে 
একটা গভীর খাদের মুখে এসে দাঁড়িয়েছি

ফিরতেই হবে আমাদের এখান থেকে

জানি যাবার পথে
সেই এসফাল্ট
সেই বিটুমিন
সেই পোড়াকাঠ

আমরা ফিরে যাবো
আমাদের প্রিয়জনের খোলা বুক ছুঁতে

আমরা ফিরে যাবো
আমাদের প্রিয়জনের পাশে চুপচাপ বসে থাকতে

আমরা ফিরে যাবো
প্রিয়জনের বুকে যে সুগভীর পাহাড়
ভেজা মাটির কথা জমা আছে

শুধু সেই চুপকথা শুনতে।

অতন্দ্রকথা ~ শীর্ষা মণ্ডল

অতন্দ্রিলা 
ঘুমোওনি জানি
পাশেই থাকো ঘুমোনোর ভান করে
নিশ্চুপ।
মড়াকাঠ সেজে
আসলে আমারই অনুভব পেতে চেয়েছো
সমস্ত শরীরটুকু নিংড়ে নিয়ে
জানি আমি

অতন্দ্রিলা রাতপরী আমার
ঘুমোওনি জানি
যেখানে বল্গাহীন জীবন যাযাবর হতে চায় -
পাশে এসে দাঁড়াও তুমি
পাথেয় হবার ভান করে
ছুঁয়ে দাও পরিযায়ী আঙুলগুলোকে।
নিমেষে জাপটে ধরে যাপনের ছবি আঁকি
সুখভেজা পৃথিবী বানাতে চাও আমায় তাইনা?
জানি আমি

আঙুলে আঙুল মাখি
শরীরে শরীর!
আবেগে কোমর জড়িয়ে গায়ে ঘেঁষে আসো
ভেজা সুখেদের দেশে
আরামের ঘামে মুখ তুলি হঠাৎ
গবাক্ষ বেয়ে পাখির ডানায় তোমার
কাছে এসেছি দেখো
অতন্দ্রিলা ঘুমোওনি জানি
কাছে এসো,
তারাসাজ ছেড়ে কাছে এসো তুমি

পাহাড় ~ সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

অদ্রিজ, জানো,
নিশুতি জ্যোৎস্নার ক্যালিগ্র্যাফি 
এখানেও পথের উপর দাগ রেখে যায়।
তাই চুপি চুপি বলি শোনো,
কতদিন দেখিনি উদ্ধত মনোলোভা,
তোমার সেই অমূল কিনার।


কতদিন শুনিনি ডাক দেওয়া
নিজেরই অন্তরে।
...হতশ্বাস এরও পরে...
নিশ্বাসের জন্মক্ষণ জড়ানো মিনার
কী আশ্চর্যভাবে তারা সহবাসী
লক্ষভ্রষ্ট হয়ে খুব কাছাকাছি।
অগোছালো হৃদয়ে তবু যে ভাসি আমি...


অদ্রিজ,
চাপা সুরে ডাকি।
দেখি অমাবস্যার হরিণী মায়া
পড়ে আছে বুক জুড়ে। তাই বলি,
'ফিরে এসো, অদ্রিজ। কোনো ভয় নেই।
শুধু একবার... একবার শুধু'

ঐন্দ্রিলা তোকে ~ সুদীপ্তা নাথ

ঐন্দ্রিলা,
তুই-ই কি ফিরে এলি তবে!?
গাঢ় চাদরে মুখ ঢেকে,
জ্যোৎস্নাভেজা চুলে,
ছায়াঘেরা পোড়ো কার্নিশে,
ও কি তুই?
*
নিকোটিনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছি রে,
মধ্যরাত্রে একদৃষ্টে শুধু তারাদের সাথে রঁদেভু।
শুভ্র বিছানা নিপাট পড়ে থাকে,
ঐন্দ্রিলা,
পাঞ্জাবীরর আদরে তুই নেই বলে,
প্যারাফিন জমে পাঁজরে।
*
ঐন্দ্রিলা,
মশারির আলোছায়া জাফরিতে,
তোকে ফিরে পাই।
আমার একরত্তি ঘরে তখন ঐন্দ্রিলা,
লক্ষকোটি নক্ষত্র...ছায়াপথে খেলা করে।

বসন্তই শিখিয়েছে ~ সুশান্ত হালদার

বসন্তই আমাকে শিখিয়েছে
ঝরে যাওয়া মানেইতো পরাজয় নয়
শুকনো পাতাই আমাকে বলেছে
বসন্তের পরেও বসন্ত আসে
মৃত্যুর পরেও জীবন থাকে
প্রজ্জ্বলিত শিখা নির্বাপিত হলেও
আগুন থাকে প্রদীপের হৃদয় জুড়ে

যে ঝিঁঝিঁর ডাকে মনে হয়
চৈত্রের দুপুর বিরহ ব্যথায় ভরপুর
হৃদয়ের অলিগলি ধুধু বালুচর
ঐ নীলাকাশ দেখে যদি মনে হয়
দখিণা বাতাস বয়ে আনবে না মেঘমল্লার
তাহলে এ হৃদয় কেন প্রেয়সীর কথা ভেবে
খাঁখাঁ চৈত্রের দুপুরেও বারবার নেচে উঠে
মনের চোরাগলিতে কেন কালবৈশাখীর ঝড় বয়ে চলে?

বসন্তই আমাকে শিখিয়েছে
মর্মর শব্দেও প্রাণের সঞ্চার হয়
যদি মাটির সিক্ততায় সে প্রেমাপ্লুত হয়,
তুমিও তো অমর অক্ষয়
প্রেম ভালোবাসা বৃক্ষই যদি তোমার হয়

দিনবদলের চিঠি ~ অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি

হাতিবাগানের ক্রসিং...যারা জানে তারা এটাও জানে এখানে রাস্তা পার করার জন্য দাঁড়ালে রাস্তা পেরোনো যায় না...কোনভাবে হাত তুলে, সবাইকে থামিয়ে পেরিয়ে যেতে হয়...অটো র হর্ন, রিকশার আওয়াজ, বাসের ধাক্কা মেরে দেওয়ার ভয়, সব কিছু কে একেবারে অগ্রাহ্য করে, একভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে পেরিয়ে যেতে হয়...কোন অটো গায়ের কাছাকাছি এসে গেল, কোন ট্যাক্সি ড্রাইভার মুখ বের করে দুটো কথা বলল, কিচ্ছু কানে নেওয়া যায় না...শুধু পেরিয়ে যেতে হয়...কিন্তু যদি হঠাৎ করে চারপাশ থামিয়ে দেওয়া হয়,সেই সিনেমার মত,যেখানে হিরো একটু থেমে স্লো মোশন এ পাশে তাকায়, ঠিক সেভাবে যদি একটু পেছন ফিরে বা পাশে তাকিয়ে দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে, আমরা শুধু রাস্তা পার করছি না, অনেক মানুষ এবং তাদের জীবন ও পার করে চলেছি...পাশ দিয়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সে হয়তো কেউ শেষবার নিঃশ্বাস নিচ্ছে, তাকে পেরিয়ে যাচ্ছি... অটো তে মুখ ভার করে বসে থাকা ছেলেটা প্রথম চাকরির পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, তাকে পেরিয়ে যাচ্ছি...ট্যাক্সিতে বসে থাকা লোকটা একদম ই ভাল নেই, তাকে পেরিয়ে যাচ্ছি... ক্রসিং এ দাড়ানো পুলিশ টা চিন্তিত বাড়িতে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে, তাকে পেরিয়ে যাচ্ছি...প্রথমবার বাড়িতে টাকা দিতে পেরে খুশি মেয়েটা বাসের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে, তাকে পেরিয়ে যাচ্ছি...ছেলের অপারেশান সাকসেসফুল-এই খবর শুনে চোখ মুছে ব্যাগে মোবাইল ঢোকানো মা কে পেরিয়ে যাচ্ছি,দূর থেকে আসা সম্ভাব্য কাস্টমার এর দিকে তাকানো উল্টোদিকের ফুটপাথ এ বসা হকার এর দোকান পেরিয়ে যাচ্ছি...একটা গোটা মুহূর্ত কে কি অনায়াসে আমরা পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি...
'
'
হয়তো সবকটা ক্রসিংই এরকম হয়...হয়তো সবকটা ক্রসিং এ ঠিক এভাবেই অনেকগুলো গল্প পরস্পর কে ক্রস করে এগিয়ে যায়, নিজের নিজের শেষের দিকে... যে গল্প গুলো হয়তো আর কখনো পরস্পর কে অতিক্রম করবে না, বা হয়তো আবার তাদের দেখা হয়ে যাবে অন্য কোনও ক্রসিং এ...

বেকার নামচা ~ অরুণজীব রায়

অামার প্রিয় কবীর সুমন
অামার প্রিয় নচি
মাথায় অামার প্রচুর খিদে
পেটে সয় না লুচি
.
দেশের কথা ভাবতে পারলেও
সময় অামার কই
দিনের অালোয় খেটে কাটাই
রাতে ফেন-টাই দই
.
ঝোলা ভরা ডিগ্রি অাছে
মনে অাছে রুচি
পাত্তা পাইনা কারো কাছেই
সংসার তরে বাঁচি
.
মোদি-দিদি সবাই সমান
অামার কি যায় অাসে
খাটতে হবে এটাই জানি
পয়সা তাতেই অাসে
.
ভ্যান গখ বা পিকাসোরা
ভাবতে যদিও শেখায়
লাভ কি তাতে
পেটের খিদেয় সব উঠে যায় শিকায়

যদি বৃষ্টি আসে ~প্রণব বসুরায়

থাকার ব্যবস্থা নদীর ধারেই
ঘর থেকেই দেখা যায় অন্য দিকের পার
তবু সংলগ্ন ব্যালকনি—সেখানে মোড়া ও টিপয় 
বৃষ্টি এলে সব কিছু ঝাপসা লাগে, মোবাইলে
ধরা থাকে সে মুহূর্তও, ন্যায্যত কোন কারণ ছাড়াই।
সেই বৃষ্টিবন্দী অলস সময়ে
দু’একটা এস এম এস বা ওয়াটসে্এ্যাপ--
সরল পাটীগণিত ও কদমবিলাস—
দু’একটা হুইস্কি বা জিনের ঘোর লেগে গেলে
বার্তা যায়, ‘মিসিং ইউ, ডু কাম সার্প’---
প্রাপকের মুখে ফুটিয়ে তোলে বিপন্ন হাসি

:
এ সবই কিন্তু
যদি বৃষ্টি আসে...


সম্পর্কের সূতো ইচ্ছেনাটাই আবৃত ~ লুতফুল হোসেন

চাঁদ সখ্য মগ্নতায়
মেঘের নীল চাদর গায়,
রূপালী রঙ আলোয় ভিজি,
দেহে বৃষ্টির আতসবাজি

আঙুল ছোঁবার ইচ্ছেগুলি
মাথার ভিতর অলি-গলি

সময় হায় হাঁটছে পায়ে পায়,
স্পর্শহীন দূরত্ব প্রভায়

মনের সকল তরল গরল
জমা কথার অর্ঘ্যসাঁজি,
যেনোবা আজ গাঁথছি বসে
আমি আর তারকারাজি

ষ্টীল লাইভ ~ শৌণক বক্সী

হাইওয়ে জুড়ে শোনা যায় শুধু যানের বিদীর্ণতা
দুপাশে চোখ জুড়ে ফিকে সবুজের মলিনতা
বেদনা অসুখে ভুগছে মানুষ কতকাল 

ন্যাংটো শিশু নাইছে পুকুরে বারোমাস
এমন শহর চোখে পড়েনি বহুকাল
থমকে যায়নি আকাশ
ইট কাঠ লোহার সাজানো উদ্যান
বদলে গিয়েছে বায়ুর গতিবেগ 

বাঁকল খসিয়ে দড়িয়ে আছে ঘুণ ধরা গাছ
কিশোরীর গাল বেয়ে কান্নার ছাপ
হৃদয় জেনেছে বুক ফাঁকা শূন্যতার হাহাকার।
এসব ছবিতে বড় মায়া লেগে থাকে 

এমন সময় ঝড় আসবে বলে
বাতাসে বইছে শীতল বাতাস

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...