বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৫

সম্পাদিকার ডেস্ক

রোদ্দুর পা রাখলো সাড়ে তিন মাসে । আর এরই মধ্যে নিজের পরিচয়ের অনন্য আখরে নিজেকে চিহ্নিত করেছে সে । রোদ্দুরের  আগামী নিয়ে অনেক স্বপ্ন ! সুপ্ত সেই স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করার জন্য এক এক করে এগিয়ে চলেছি ...উজ্জ্বল আলোকের পথে । 
প্রথম যেদিন এই ব্লগ স্পট প্রকাশ করি , সেদিন পেজ ভিউ ছিল ১০১ , যা আজ ১৮৮২ ...ভীষণ আনন্দ হচ্ছে ! এ আনন্দ প্রতিটি সাহিত্য পিপাসু মানুষের জন্য । ' মুঠো ভরা রোদ্দুর' এর হাত ধরে রৌদ্রোজ্জ্বল আলোয়  ভরে উঠুক আমাদের অন্তর ও বাহির ..মুছে যাক সমস্ত কলুষতা , মলিনতা ...ধুয়ে যাক ক্লেদ আর পঙ্কিলতা ...আজ রোদ্দুরের সহাহতায় আমরা আরও একবার নতুন করে বেঁচে উঠি 

Because ....

                         The light shines down
                         With a heavenly glow
                         With pure light
                         And ...Hope 

শুভেচ্ছান্তে , 
পিয়ালী বসু 

                             


অনিকেত পাখির খোঁজে ~ শৌনক দত্ত


বৈদিক মায়া শব্দটির যে কতরকম এর অর্থ,গভীর দার্শনিক ব্যঞ্জনা থেকে শুরু করে হীন কৌশল পর্যন্ত।মায়া বড় কাঁদায় আবার সময়ের নিয়মে কেটেও যায়।তেরো তে কলেজস্ট্রীটে হাঁটতে হাঁটতে কফি হাউজে গিয়ে নেমে এসেছি।প্যারাডাইসে গিয়ে মনে হলো এখানেই তো একদিন পরিচয় হয়েছিলো।চোখ তখন প্যারাডাইসের নাম তালিকায় যারা এখানে এসে ধন্য করেছেন।প্যারাডাইস শতবর্ষ পূরণ করলো।নামটি দেখতে দেখতে মানিব্যাগ থেকে নোটটি বের করে গন্ধ নিলাম।একশ,পঞ্চাশ আর পাঁচ তিনটি নোটের গন্ধ আলাদা হয়ত পরিচয় ও খ্যাতিও।কিন্তু একশটাকা যিনি দিয়েছিলেন বেশ বিস্ময়ে দেখলাম কলেজস্ট্রীট তাকে মনে রাখেনি অথচ আজ যে এত বই এত প্রকাশনী তার জন্য এই মানুষটির শ্রম,স্বপ্ন আজকের প্রজন্ম জানলোই না।কি ভীষণ লজ্জা।
কাকে বলে প্রগতি আর কাকে বলে প্রগতিবিরোধী তা স্থির করা কঠিন হয়ে ওঠে যখন তখনো এই মানুষটিকে দেখছি অবিচল।ভাল লেখার কদর যেমন করতে পারতেন তেমনি খারাপ লেখা মুখের উপর ছুঁড়েও দিতে দেখেছি।রাজনীতি,সাহিত্য,আত্মীয় পরিজন কোথাও কর্তব্যের খামতি রাখেননি।একবার কলেজস্ট্রীট থেকে খানিক এগিয়েই ফেভারিট কেবিনে যাচ্ছি পথে একজন কে ডেকে কি কথা বলে সাদা ধবধবে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে কি যেন দিলেন।ফিরে এসে বললেন শৌনক আজ চলো ফিরেই যাই দশটি টাকা আছে।বুঝতে বাকী রইলনা সাক্ষাত পাওয়া ব্যক্তিটিকে উজার করে দিয়ে এসেছেন এমনকি বাড়ী ফেরার টাকাটিও রাখেননি।আর এই মানুষটিই যখন ক্যান্সার আক্রান্ত হলেন একে একে মুখ ফিরিয়ে নিলেন অনেকেই এমন কি তার সাহায্যে সংকট কাটানো মানুষ স্বজনেরাও।হাতে ধরে কথা গুলো যখন বলছেন তখন মনে পড়ে আমিও তো উনার সাহায্যে মনোবল পাওয়া একজন।আমার টিউশন পড়ানোর টাকা থেকে ওষুধ কিনতে কিছু দিতে চেয়েছিলাম একটি গাড়ির আওয়াজ ঘোর কাটিয়ে দেয়।ফেভারিট কেবিনের ভেতরের কোণের টেবিলটায় এসে বসি অনেক কিছু বদলে গেছে।শ্বেতপাথরের টেবিল জুড়ে ফাটল।পাঁচ টাকার শক্তিচট্টোপাধ্যায় কিংবা পঞ্চাশটাকার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কে ছাপিয়ে তখন একশ টাকা সংখ্যামানে বড় হলেও বড় ধুলাটে।আকাশের মত মানুষটি মনে প্রাণে লালন করতেন মানুষকে ভালবাসো পলিটিক্যাল ক্ষমতাকে কখনো ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেননি এমন কি গুরুতর অসুস্থ,অর্থাভাবে ক্লিষ্ট দিনগুলোতেও না।অনেক বিখ্যাত বইয়ের প্রতিটি পাতায়,অনেক সাধারণ কে বিখ্যাত করার পরিক্রমায় তার পরশ যার কেবল তিনি কোথাও নেই সেই রেকর্ডারের ৯র দোকানটির মতো অথচ আজ এবং আগামী অনেক বছর তার উজ্জ্বল উপস্থিতি থাকার কথা ছিলো প্রকাশনায়,সাহিত্যে,রাজনীতিতে হয়ত এ আমাদেরই দৈন্যতা ক্ষমা করো প্রসূন বসু....

দশ শব্দের কবিতা ~ অনিরুদ্ধ দাস

তোমার কোলে মাথা-রাখাটুকুই ব্যাপ্তি,
আর আলতা-ভেজা পদচিহ্নটায়
আমার ত্রিপাদ ভূমি

বেজন্মা কবিতারা ~ নীল মলয়

তোর কথা মতো সকাল এলো
উত্তপ্ত রোদের আবেগে
সূৰ্য্য জানান দিল
অন্ধকার অবসানের.
কথকতার মতো
আঙুল জরানো বাসি স্পৰ্শ;
আর ঘুমঘোরে
সুরার চেয়েও গভীর স্বপ্ন.....
শরীর আবিস্কারের নেশায়
আদিম বশীকরন;
এখনও রোদ আঁকি দুপুরের ঘাসে
অনন্ত আবগাহন শেষে.
কত সন্ধ্যার মন্থনে
তোর গন্ধে ভেজে মেঘ,
আগুন পরবাসে তোর চিঠি
ওরনা বোনে নিস্তব্ধ উপহার.
চুম্বন অস্পৃশ
তবুও চিহ্ন ছুঁয়েছে কপাল
কোমড় বেয়ে নেমে আশা নদী
ডুবে দেখি আজও অতল
সহস্ৰ যোজন পারাপারে
শেষ নিঃশ্বাস তোর নাভিতে.

একটি মেয়ে ~ সুকান্ত চক্রবর্তী

একটি মেয়ে ভরদুপুরে ,
নাইতে নামে প্রেমপুকুরে ...
একটি ছেলে ঘরের কোণায় ,
নিঝুম রাতে কবিতা শোনায়

বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০১৫

প্রতিদিনের ভালবাসার কবিতা (৬) ~পিয়ালী বসু


ন‌েমেস‌িস ~ কৃষ্ণকলি অন্তরালে

সমস্ত কৃতকর্ম , না ভালোলাগাদের
কানা আধুলির মত ফেলতে চেয়ে
বারবার খুঁজে দেখেছি!
তোমাকেই বার বার কুড়িয়ে আনি!
তোমার ও মনে হয় বল
আমি স্বপ্নসন্ধানী?

Pleasure Of Pain ~ Durba Mitra

Inserted
Sharp
And
Wide
Instrument.
Stifled
A
Cry.
Let down
Two
Drops
Of tears.
One
For Damini,
Nirbhaya.
Other
For
You..my lover !
One
Nobody
wants.
Other
Everybody
Craves for.
Pain?
Nahh..
Pleasure !

এবং স্পর্শ ~ রঘুনাথ মণ্ডল

যেদিন ফণিমনসার কাটা প্রথম ফুটেছে
স্তর ছিন্ন হওযার যন্ত্রনা অনুভব করেছি
পাপড়ি খুলে ফেলার অভিশাপে 
বীজ পাতা একসাথেই জন্ম নিলো নদীর বুকে
অভিমানের হলুদ পাতারা
নীলতিমির পাখার ঘায়ে ডুবে আর ভাসে
মাটির নয়
স্পর্শ ক্যালশিয়ামের হাঁড় তুলেছি পাঁক থেকে l

চোলাই না চোরাই ~ সুধাংশু চক্রবর্তী



মদোমাতাল হরি সন্ধ্যে থেকে দিশি মাল টেনে টেনে টাল হয়ে পড়ে থাকলো রাস্তার ধারে। মাঝরাতে নেশাটা সামান্য ফীকে হতেই চটক ভেঙে উঠে বসে পাশে পড়ে থাকা খালি বোতলটা একবার উপুর করলো মুখের ভেতর। টুপ করে এক ফোঁটা মাল জিভে পড়েই মিলিয়ে গেল। হরি ধুস্‌ বলে বিরক্ত প্রকাশ করে চারপাশটা দেখতে থাকলো উশকোখুশকো চুলগুলো খচরমচর করে চুলকোতে চুলকোতে। তখনই দেখলো, একটা নেড়ী কুকুর গা ঘেঁসে শুয়ে আছে। হরি কুকুরটার মাথায় আলতো করে একটা চাঁটি মেরে বললো, ও বাবা, তুইও?
কুকুরটা লাল লাল চোখে তাকিয়ে গড় গড় করে বিরক্ত প্রকাশ করতে হরি হেঁ হেঁ করে হেসে বললো, ও বাওয়া, নাক ডেকে ঘুমোনো হচ্ছে?
কুকুরটা যেমনটা শুয়েছিলো তেমনটাই থাকলো কুণ্ডলী পাকিয়ে। হরির এবার ফিস্‌ফিস্‌ করে জিজ্ঞেস করলো, তা বাওয়া, চোলাই না চোরাই? কোনটা?
কুকুরটা এবার সামান্য নড়েচড়ে নিয়ে মুখ দিয়ে শব্দ করলো ‘ভুক্‌-ভুক্‌’ ।
হরি শুনেই আহ্লাদে আটখানা, চুপ করতে বলছিস? তারমানে চোরাই মাল। ওফ্‌ কতদিন চোরাই মাল খাইনি। তা একবার দেখা দিকি তো বোতলটা। কোথায় লুকিয়েছিস বাওয়া?
কুকুরটা এবার রাগ প্রকাশ করলো ভৌ-ভৌ করে। হরির তাতে ভারী বয়ে গেল। সে কুকুরটার কানের কাছে মুখ নামিয়ে এনে জড়ানো গলায় বললো, কাঁদছিস কেন? ভয় নেই। তোকে তুলে দেবো না পুলিশের হাতে। শুধু বোতলখানা বার কর দিকি। একটু গলা ভিজিয়ে নিই। কেউ এসে পড়লে মালের বোতলটা পেছনে লুকিয়ে ফেলি। তুইও বুঝি সেটাই করেছিস? কই বাৎ নেহি। আমি নিজেই খুঁজে নিচ্ছি তোর পেছন থেকে।
বলেই কুকুরটার লেজ ধরে টানাটানি জুড়ে দিলো, কই রে, বোতলটা দেখতে পাচ্ছি না তো! কোথায় রেখে......ওরে বাওয়া রে। তা’বলে হাতটা ভেঙে দিবি সামান্য একটা মালের বোতলের জন্য?

মা ~ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

এক বৃষ্টি ভেজা সকালে 
ইন্দ্রধনুকে চেয়েছিলাম কত
রং বেরং জীবনকে
রঙিন করার জন্যে
ফাগুনের সন্ধ্যাতে
ফুলকে অনুরোধ করলাম
আকাশে বাতাসে
সুগন্ধ ছড়ানর জন্যে ।
নিরস জীবনকে
হাঁসি ঠাট্টা মিষ্টি ভরা মুখে
জীবন কে উপভোগ করার জন্যে ।
হাত পেতে চেয়েছিলাম 'চাঁদ' কে
জ্যোৎস্না থেকে অঞ্জলি ভরে
আমার মায়ের স্নেহের পরশে
অকুণ্ঠ ভালবাসার জন্যে ।
সাগর তীরে অন্যমনস্ক
ভাবে ছুটে ছিলাম
ঢেউকে ছোঁয়ার
মিথ্যা অভিলাষের জন্যে ।
সমুদ্রের গুরু গম্ভীর সঙ্গীতের
তালে মূর্ছিত হলাম
কিছুক্ষণের জন্যে ।
বিভোর হয়ে শুনছিলাম
ঢেউগুলো মাথা ঠুকে
আর্তনাদ করছিল
কিছু বলার জন্যে ।
জানিনা কখন যে
হারিয়ে ছিলাম দিগ্বলয়ের
প্রান্তে নির্বাক হয়ে
বোধ হয় কারুর জন্যে ।
হঠাৎ চমকে উঠি
কে ? বলে কপালে হাত দিয়ে
এইত আমি আছি
তোদেরি কাছে
আমি তোদেরি ‘মা’
বেঁচে আছি তোদেরি জন্যে ।

ম্যাজিক ~পিয়ালী বসু

আমি ম্যাজিক জানিনা 
ভেবেছিলাম তোমায় জানি 
কিন্তু 
সেও আজ বিরাট এক ভুল বলে প্রমাণিত
আকস্মিক হত্যা বলে কিছুই হয়না
এ সবই আসলে
সরে যাওয়ার বাহানা ।

মায়াবী ~ সৌগত মজুমদার

সেদিন ছিল হাল্কা হাওয়ার রাত
দাবা খেলায় বোড়ে আন্টাচড্‌, কিন্তু কিস্তিমাত।
ভাসিয়েছিল চাঁদের আলো, শরীর থেকে মন।
ন্যাড়া গাছের শুকনো ডালে, টাঙ্গানো আপনজন।
তারপর, সব "নেই"।
দু-পলক ফেলতেই।

নদী জীবন ~ অনিরুদ্ধ দাস

হিমবাহ-বিষাদ-ই জন্ম দেয় নদীর/
হিমাঙ্কের লীন তাপ চুঁষে;/
#
ঝর্ণা কাঁদে ---/
বিচ্ছেদে আছড়ে--জ্বলীয় ক্ষেপণের আতিশয্যে;/
#
নদী কাঁদে ---/
লালজল---সাদা ফেনা বুকে,/
বহন প্রাবল্যের আধিক্যে;/
#
পাড় কাঁদে---/
অন্তলীন ফল্গু স্রোতে---/
গলনে আকস্মিক পতনে বিলীয়মান ---হারানোর শোকে;/
#
বদ্বীপ কাঁদে---/
বিচ্ছেদের বিসগ`কালের/
ভট্রাচাষ্য` জীবনের ঢ্যাপ ---বুকে নিয়ে;/
#
বিষাদই কাঁদে নদী হয়ে/
শিয়রের ডাঁড়ায়---/
মোহন পলির চুম্বক নাব্যতায় |

পাঁচ ফোড়ন ~ তুষার সেনগুপ্ত


আসন্নপ্রসবা মায়ের
পেটের বাচ্চাটা 
খিদেয় কাঁদে না
শুধুই দিন গোনে প্রসবের জন্যে..
***
উদ্ধত মাটি চোখ নাচিয়ে
আগুন ঝরাল আর
বিনম্র আকাশ চোখ নামাতেই
কয়েক পশলা বৃষ্টি..
***
পুরুষ,
তা সে ধ্যানে
বা নমাজেও
গন্ধ পেলেই মাংসাশী...
***
অলসতাও অলস বড়
বিষণ্ণতাকে থামানোর
অবশিষ্ট শক্তিটুকুও
সঞ্চয় করতে চায়...
***
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে
শীতল মৃতদেহ উষ্ণতার খোঁজে নয়,
শুধুই পুড়তে চেয়ে চুল্লির পথে
অন্তিম যাত্রায়....

ঠিকানা এখন ~ লুতফুল হোসেন

ইতিহাস জঠরে গেলে
আমাকে পেতেই পারো
পাথরের স্থির বল্কলে
ম্রিয়মান প্রাণহর
জীবাশ্মে, কৌশলে,
চন্দন গন্ধে গাঢ়
সখ্যতার আড়ালে
চন্দ্রসূর্য তারা
আকাশনীলে হারালে।
তালুবন্দী মুঠো চেপে
ক' ফোঁটা বৃষ্টিরে এঁকে
আলগোছে সন্তর্পে
রাখো যদি স্মৃতি সিন্ধুকে।

রবীন্দ্র কবিতা : একটি টুকরো আলোচনা ~ পিয়ালী বসু


বাংলা কাব্যের ইতিহাসে প্রগতির লক্ষণ স্পষ্টতই চোখে পড়ে তাঁর যুগান্তকারী আবির্ভাবের সময় থেকে । ১৮৮৭-৮৮৮৮ সালে রচিত মানসী কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলিতে আধুনিকতা ও প্রগতির প্রথম সাক্ষর পাওয়া যায় । গীতাঞ্জলীর ভুমিকায় ইয়েটস লেখেন ," These lyrics display their thought a world , I have dreamed of all my life " অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলি কোন এক স্বপ্ন রাজ্যের কথা বলে , যে রাজ্যে যাবার স্বপ্ন আমাদের প্রত্যেকেরই ।
কাব্য সৃষ্টির প্রেরনা হিসেবে একদিকে যেমন বৈষ্ণব পদাবলী অন্যদিকে তেমনই বোদ লেয়ার ...রবীন্দ্রনাথ প্রমাণ করে দিয়েছিলেন সাহিত্য কে দেশ, কাল বা সময়ের গণ্ডীতে বেঁধে রাখা যায়না । তাঁর কবিতাগুলি একাধারে যেমন ঐতিহাসিক বা historical , অন্যদিকে তেমনই বিষয়গত বা subjective...বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে রচিত সমস্ত কবিতা যে আসলে একটি জীবন্ত বাড়ন্ত কাব্য শরীরেরই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এ কথাটা মেনে নিয়ে বলা যায় , রবীন্দ্রনাথের কবিতা বিচিত্র ও বিপরীতের প্রকৃষ্ট মেল্ বন্ধন , আর তাই তা চিরকালীন ।
সন্ধ্যাসঙ্গীত থেকে মহুয়া কাব্য গ্রন্থের প্রকাশ কালের সময়সীমা পঞ্চাশ বছর , আর এই পঞ্চাশ বছর জুড়ে তাঁর কবিতায় মধুর রসের প্রকাশ। আর এই মধুর রসই তাঁর কবিতাগুলির মূল standing force ...জগতের যা কিছু পবিত্র , সুন্দর ও প্রাণ স্ফূর্ত রবীন্দ্র কাব্যে তার প্রকাশ প্রথম থেকে শেষ পরজায় পর্যন্ত অনবচ্ছিন্ন ।
'জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে
তুমি বিচিত্র রূপিণী'
জগতের বিচিত্র রূপ তাঁর চোখে ধরা দিয়েছিলো শুভ ও সুন্দর হয়ে । নৈবেদ্য থেকে গীতাঞ্জলী পর্ব তার জীবনে ইশ্বর নির্ভরতার পর্বও বটে । আর তাই স্বামী সোহাগের বাস্তব চিত্র ছাড়িয়ে তার জীবন দেবতা কবিতা পৌঁছয় চিরকালীন অনন্য অন্য কোন এক জগতে
'গলায়ে গলায়ে বাসনার সোনা
প্রতিদিন আমি করেছি রচনা
তোমার ক্ষণিক খেলার লাগিয়া
মূরতি নিত্য নব'
জগত যে পাল্টাচ্ছে একথা বুঝেছিলেন তিনি , বুঝেছিলেন মমতা শূন্য মানবজাতির নিষ্ঠুর হৃদয়ের কথা । সে সুর তীব্র ভাবে ধ্বনিত তাঁর 'নবজাতক' কবিতায়
আমি আজ পৃথক হব
ও থাক ঐখানে দ্বারের বাহিরে
বাংলা কাব্য ইতিহাসে an equality of value & power র কথা বলতে গেলে তাই প্রথমেই আসে তাঁর নাম । আজ ২২ শে শ্রাবণে সেই মানুষটির জন্য রইল অন্তরের যাবতীয় শ্রদ্ধা ,যার জুগান্তকারী আবির্ভাব বাংলা কবিতার ইতিহাসটাকেই আমুল বদলে দিয়েছিলো 

আগুনে অচ্ছুত সে, ভালোবাসায় ব্রাত্য ~ লুতফুল হোসেন

শহরের আগুন আজ আর
কিছুতেই দেবালয় ছোঁয় না।
মানুষকে যতোটা সে বাসে ভালো 
দেবতাকে ঠিক ততোটা না।
দেবতার শাদা কিংবা নীল
রক্ত - দাহ্য ততোটা
নয়, যতোটুকু কামলার বা
শ্রমিকের, খেটে খাওয়া মানুষের,
নগন্য সাধারণ লাল
রক্ত হয়। অনায়াস বহ্নুতসবে
যারে সহজে পোড়ানো যায়।
স্বস্তা আবেগে কথার
খই ফোটায় যারা, সেই সব
বোকা সাধারণ কেরানী ও
কর্মী, প্রেমিক ও কবি ;
মানুষের ভালোবাসা নিয়ে যার
আবেগাপ্লুত হবার মতো
নিছক বোকামী সহজাত।
জরা ও অভাব, অনাহুত
প্রাণঘাত, শংকা, সংশয়,
অনিশ্চিত যাপনের ভয়,
নগর ও নাগরিকদেরে
ভালোবাসে যতো অবারিত, নয়
তার কিছুটাও ভাগাভাগি করে
তুলে রাখা দেবালয় কি দেবতার তরে।
আগুনে নাড়ী সেঁকে জন্ম
যার। ছাই ভষ্মে মিশে যেতে
সানন্দ জীবনপাত বাঁধা তার।
সেই সাধারণ জীবনের স্বাদ
এতোটুকু বোঝে সাধ্য কী দেবতার !
নগরের আগুন তাই আজ
কিছুতেই দেবালয় ছোঁয় না।
মানুষকে যতোটা সে বাসে ভালো
দেবতাকে তার কিছুটাও না।

খোলা ডায়েরী( ১) ~ সুকান্ত চক্রবর্তী

রাস্তায় দুজনেই চলছি । সন্ধ্যে বেলা । অঘ্রানের ঠাণ্ডা বাতাসটা ভালই বইছিল । আমার গায়ে একটা জ্যাকেট ছিল । ওর ছিল আকাশী রঙ এর চুড়িদার ।তাই হয়তো হাত গুটিয়ে রেখেছিল। গলি রাস্তা, মানুষজন কম । সাবলীল ভাবে বলার মত কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না বোধ হয় , তাই আমরা ও চুপচাপ । যৌবনের শুরুতে এরকম মুহূর্ত বেশ ভালই ।
গাছপালা আর বাতাসের কথাবার্তার মাঝে ও বলে উঠল ,” আজ ঠাণ্ডা পড়েছে একটু ।“
-হ্যাঁ , শীত তো এসে যাচ্ছে ।
- আজ ডিসেম্বর এর ৬ তারিখ, তাই না ।
-আজ ! হ্যাঁ ! বুধবার । হ্যাঁ ৬ তারিখ ।
আবার চুপচাপ ।
কথা বলা যে কতো বড় কঠিন কাজ আর কতো কঠিন আর্টফর্ম সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম । যাই হোক, আসল ঘটনা হল ওর শীত করছে । আর আমার কাছে জ্যাকেট ও আছে । আমার conscious mind জানান দিচ্ছে আমায় , যে জ্যাকেট টা খুলে ওকে দেয়া দরকার । আবার শালা সাথে সাথেই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ব্যাপারটা একটু শারুখিয়ানা হয়ে যাবে। সেই সময়ে ,ঐ পরিস্থিতিতে জ্যাকেট আর শীত আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন খেলা নিয়ে হাজির ছিল ।
পায়ে পায়ে রাস্তা অনেকটা কেটে যায়,ধীরে ধীরে মেইন রোড এ উঠে আসি । অঘ্রানের শীত নিয়ে দু-তিন টে কথাও হয় । ওর গ্রামের পিসি শীতকালে কি কি পিঠে বানাত তাও জানা হয়ে যায় । কিন্তু আমার তখন ও জ্যাকেট আর শীত নিয়ে কোনও কিনারা হয়নি।জ্যাকেটটা খুলে দেয়ার বা না দেয়ার অনেক যুক্তি নিজের মত করেই আসতে থাকে । ধীরে ধীরে “মানবিকতা” এর মতবাদটা বেশ জমাট মনে হল ।জ্যাকেট টা খুলে ফেললাম ওকে জড়িয়ে নিতে বলবো বলে ।
-এই তো , বাস এসে গেল । আমি চললাম ।
এক গাল ভরা হাসি ।
-কাল দেখা হচ্ছে কলেজে ।
জ্যাকেটটা হাতেই রয়ে গেল আর মেয়েটিকে নিয়ে বাস টা এগিয়ে গেল ।
আমি ক্রমশ দুরেই যেতে থাকলাম ।

মিনতির জন্য এলিজি ~ সেলিম আহমেদ



কিছু প্রিয় মানুষ শেষশয্যায় থাকে বহুদূরে
কখনো সুযোগ আসে কাছে যাওয়ার, হয়তো জীবনে একবার
কারো কারো জীবনে শুধু না যাওয়ার হাহাকার
মিনতি, গ্রাম আচকিপাড়া, পোষ্ট বাঘাইতলা, উপজেলা হালুয়াঘাট
জৈষ্ঠের এমন গরম এমনই তাপ, দৃষ্টি যতদূরে যেন মায়াময় বাষ্প পথ-ঘাট
দূরের নীল পাহাড় এতো বৃক্ষ বুকে রেখেও তাপদাহে কিছুটা কাহিল
বর্ডার গার্ড রেজিমেন্ট যুবক মোটা ক্যামেফ্লেজের কাপড়ে কুপোকাত
এপাশ ওপাশ হয়ে সরুপথ পৌঁছে দিয়েছিল মিনতির শেষ ঠিকানায়
বাড়ির এদিকটা একটু নির্জন বেশী
পরগাছাদের রঙিনফুলে বাড়িওয়ালা গাছ কিছুটা লজ্জায় কাঠ
তোমার পুরো উঠোন জুড়ে আকষি-শিকড়-ফুলে-ফলে
অনেকটাই শীতল, আমাদের পৃথিবী থেকে।
শান্ত বাড়ির পুকুর কখনো কী শব্দ তোলে কে জানে
বসবার সিমেন্টে গড়া চেয়ার একটু হাই তোলে
মিনতি, মাটির নীচের জীবনে আকাশছাদে টিন আছে?
আছে মুষলধারে টিনের শরীরে বৃষ্টির শব্দ, ওখানে আকাশের কী দুটো চাঁদ?
মধুজোৎস্নায় দ্বিগুন আলো ঢালে?

জন্মের জোছনা জলে ~শৌনক দত্ত

রাত কেটে গেলো ছাদে
মুভির চোখ দৃশ্যের পর দৃশ্য বদলায়
আমি একা!
এ কি অপেক্ষা নাকি
সময়কে শৈশব ভেবে
আমি চোখের চাঁদে প্রতিশ্রুতি খুঁজে
পদাবলী লিখে রাখলাম।
দুরন্ত দুপুরে বানানো নীল ঘুড়িতে
কথাহীন শ্রাবণে
অপেক্ষাময় কি বেড়ে উঠেছিলো
কাঙাল জোছনায়
মানচিত্রহীন উদ্বাস্তু
নিবিড় প্রেমিকার ঠোঁট
নদীমাতৃক দেহে প্রসারিত মৃত্যু
মেঘ,চাঁদ,প্রতীক্ষা কিংবা বেঁচে থাকা


বিঃদ্রঃ অবাক আজ সব ৮কিন্তু খেয়াল করুন তারিখে।

ছুটি ~ সঞ্জয় সোম

যদি কখনো এমন হয়
ওই নীলাকাশ ডাকছে আমায় 
দু'হাত বাড়িয়ে বলছে যেন 
আয় চ'লে আয়, আয় চ'লে আয় ।
আমি হবো সবচেয়ে সুখী
চাইবনা কারও কাছে কিচ্ছুটি
শুধুই বলব আরও একবার
বাড়িয়ে দাও তোমার হাত
নিতে রাজী আমি চির ছুটি 

পাউরুটি ( ৪) ~ উদত্ত সেনগুপ্ত

পাউরুটি মরে শক্ত নিরুত্তাপ হলে 
নতুন কাগজে মুড়ে চালান দেওয়া হয় 
সরকারী হাসপাতালে 
অমসৃণ মুখগুলো চকচক করে
চাএর পেয়ালায় সকালে-বিকালে
আর কয়েকটা পাখি অন্ধকারে
এ পকেট ও পকেট ওড়ে

নাড়ীর টান ~ কাবেরী গড়াই

কত ভোরের আকাশ দেখলাম
কত ঘাসের শিশির দেখলাম
তবু মাগো দেখিনি তো তোমার
বেদনামাখা মুখ
কত নদী পাহাড় দেখলাম
কত আমি সাগর দেখলাম
তবু মাগো দেখিনি তো তোমার
হৃদয় ভাঙা বুক
কত দেশ দেখলাম কত বিদেশ ঘুরলাম
র্স্পশিত করলাম কত পুণ্যস্থান
তবু মাগো একবারো ছুঁলাম না
চরণ তোমার
যেখানে পেয়েছি আমি প্রাণ
মাগো! তোমরা সৃস্টিতে বিখ্যাত আমি
সারাবিশ্বে মান
তবুও মাগো তোমায় দেখিনি
যেখানে নাড়ীর টান-------------

সময় ~ তুষার সেনগুপ্ত

পান চিবোতে চিবোতে শ্যামল স্যার বলেছিল,
"সময় আর নদীর স্রোত কারও অপেক্ষা করে না-"
ক্লাস টেনের খাপছাড়া চুমু
জিভের নোনতা স্বাদ
টুথ পেস্টের ঝাঁঝালো গন্ধ,
মাঝ বোশেখের মরা নদীতে
সমুদ্রের ঢেউ খোঁজার অযথা পণ্ডশ্রম....
মগজে অকাল ঝাঁকুনি
স্বপ্নে নীপাদির সেই আমাকে
টেনে হিঁচড়ে বড় করার আকাঙ্খা,
মাঝরাতে হঠাত নিজে নিজেই বড় হওয়া.....
শ্যামল স্যার! অপনার কথা অর্ধসত্য
নদীর স্রোতকে বাঁধতে পারিনি,
কিন্তু সময়টা বোধহয় আটকেই থাকলো আজও
নাহলে মাঝে মাঝেই ধাক্কা মারে কে?

পাশবালিশ তুষার সেনগুপ্ত

নাইট শিফট সেরে ঘুমঘুম চোখে সায়ন্তিকা কলিং বেলটা বাজাল। ফ্ল্যাটের দরজা খুলেতেই কফিমাগ হাতে সেই অনেক দিনের পরিচিত মিষ্টি হাসি মাখানো মুখটা চোখের সামনে। সেই কলেজ লাইফ থেকেই সায়ন্তিকা দেখছে শুভায়নকে, ওর মুখ কোনও দিনও গম্ভীর দেখেনি। একই ক্লাসে চারটে বছর এক সঙ্গে কাটালো কলেজে। পাশ করেই সায়ন্তিকা বেসরকারি কলেজে এম.বি.এ-তে এডমিশন নিলো আর শুভায়ন মাষ্টার ডিগ্রীতে, ওর নিজের ইউনিভার্সিটিতেই। চাকরীটা সায়ন্তিকাই আগে পেয়েছিল। ওদের বিয়েটা আটকে ছিল শুভায়নের চাকরীর অপেক্ষায়। শুভায়ন স্কুল মাস্টারির চাকরীতে জয়েন করতেই ওরা বিয়েটাও সেরে নিলো। তারপর সংসার পাতলো বাইপাসের ধারে এই ছোট্ট ওয়ান বি.এইচ.কে ফ্ল্যাটে।
ফ্ল্যাটে ঢুকে ক্লান্ত শরীরটা সোফায় এলিয়ে দিতেই সায়ন্তিকার দিকে কফিমাগ এগিয়ে দিতে দিতেই শুভায়ন বলে উঠল,
- "দাঁত মেজে নে ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি.."
- "আজকের মেনু?"
দু'চোখ বুজেই সায়ন্তিকা শুভায়নের দিকে ছুড়ে দিল প্রশ্নটা। আর তড়িৎ গতিতে শুভায়নের জবাব,
- "চিকেন বাদশাহি কাবাব, পনীর টিক্কা আর....."
ঘুমে বুজে আসা ক্লান্ত চোখদুটো খুলে সায়ন্তিকা শুভায়নের সেই কান এঁটো করা হাসিমুখ দেখেই হুকুম চলায়,
- "ঢ্যামনামি না করে দুধ কর্নফ্লেক্স নিয়ে আয় তো, খিদে আর ঘুম দুটোই একসাথে পাচ্ছে.."
- "আঃ! ছেলেদের মত রকের ভাষা বলিস নাতো?"
শুভায়নের কৃত্রিম ধমক শুনেই সায়ন্তিকা বলে উঠলো,
- "একজনকে তো অনন্ত ছেলে ছেলে হতেই হবে বস! দুজনেই যদি মেয়ে মেয়ে হয়ে যাই লোকে ইয়ে বলে টিটকিরি দেবে না?"
দুজন মিলে দুধ কর্নফ্লেক্স খেতে খেতেই অনভ্যস্ত আদুরে গলায় সায়ন্তিকা হঠাৎ বলে উঠলো,
- "এই শুভো, ছুটি নিবি আজকে?"
- "তোর মাথা খারাপ? সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা, স্পেশাল ক্লাস চলছে। ছুটির কথা বললেই হেডু আমায় চাটাবে..."
বলতে বলতেই শুভায়ন ঢুকে গেল বাথরুমে। তখনো দুচোখ বুজেই বলে চলেছে সায়ন্তিকা,
- "কতদিন তোকে পাশবালিশ করে শুইনি বলতো? দুঃশালা, বিয়ে করেও ভাল্লাগে এই সব....."
বলতে বলতেই দু'চোখের পাতা বুজে আসে সায়ন্তিকার। বাথরুম থেকে শাওয়ারে জল পরার শব্দে সায়ন্তিকার একান্তই মনের কথাগুলো শুভায়নের কান পর্যন্ত পৌঁছল কিনা কে জানে....
স্নান সেরে স্কুলের জন্যে তৈরি হতে হতেই শুভায়ন লক্ষ্য করে সায়ন্তিক ঘুমিয়ে কাদা। ওকে আর না জাগিয়ে ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে লক করেই দ্রুত বেরিয়ে যায়, ফার্স্ট পিরিয়ডেই ক্লাস আছে তাই আজ আর দেরি করার উপায় নেই শুভায়নের।
*********************************************************************************
আজও নাইট শিফট সেরে ক্লান্ত শরীরটা কোনও মতে টনতে টানতে সায়ন্তিকা কলিং বেলটা বাজাল। আজও ফ্ল্যাটের দরজা খুলেতেই পরিচিত মিষ্টি হাসি মাখানো সেই মুখটাই চোখের সামনে কিন্তু হাতে অন্য দিনের মত কফিমাগটা নেই। ক্লান্ত শরীরটা সোফায় এলিয়ে দিতে দিতেই সায়ন্তিকা জিজ্ঞেস করল,
- "কি রে, আজ কফি দিলি না?"
- "না রে, আজ এখনও তো সকালই হয় নি...."
শুভায়নের হেঁয়ালি মাখানো অদ্ভুত উত্তর শুনে, "তার মানে?" বলে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে সায়ন্তিকা তাকাতেই ওর সেই ট্রেডমার্ক কান এঁটো করা হাসিমুখে শুভায়ন উত্তর দিল,
- "আমার বউয়ের পাশবালিশ আর ভাল্লাগছে না, এই কথা হেডুকে বলতেই ওই আনরোমান্টিক খেঁকুটে বুড়োও এক কথায় ছুটি দিয়ে দিল...."
বাইরে কড়কড়ে রোদ উঠে গেছে, বন্ধ জানলা ভেদ করেও বাইরে থেকে ভেসে আসছে গাড়ির হর্নের শব্দ। শুভায়নের আর ঘুম আসছে না। বালিশের ওপর আড়াআড়ি ভাবে রাখা হাতে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছে। মাথার ওপর ঘুরতে থাকা ফ্যানের আওয়াজ ছাপিয়েও কানে আসছে সায়ন্তিকার শ্বাসের আওয়াজ। শুভায়নের পায়ের ওপর একটা পা আর বুকে হাত রেখে ঘুমোচ্ছে সায়ন্তিকা। নাইট ল্যাম্পের হালকা আলোয় সায়ন্তিকার ঘুমন্ত মুখে যেন এক অনাবিল প্রশান্তি। দেখলেই বোঝা যায় অনেক দিন পরে মনের মত পাশবালিশ পেয়ে খুব খুশি সায়ন্তিকা।

লিপস্টিক ~ কৃষ্ণকলি অন্তরালে




চ্যাটচ্যাটে নরম। । ছোট একটা কাঁচের বাক্সে রাখা থাকতো।পাশে শোয়ানো নরম তুলি । মাকে দেখতাম সুন্দর করে বুলিয়ে নিতো ঠোঁটের চারধারে
লালচে আর হাল্কা গোলাপী মত। তুমুল আকর্ষণ ছিল জিনিসটার। পুজো কালে এক আধদিন সৌভাগ্য হতো ঠোঁটে সে সব স্বর্গীয় স্পর্শ পাওয়ার। আমার নরম গোলাপী রঙ খুব পছন্দের। আবেশ মাখানো গোধূলির সূর্য। খামখেয়ালে নষ্ট করে ফেলেছিলাম নরম চ্যাটালো এক জোড়া সুখ। রঙিন আকর্ষণ ।

রক্ত জমলে লক্ষ করেছি কেমন একটা ডার্ক শেড আসে। দামী কোম্পানির ম্যাট লিপস্টিকের মত। যতবার সুরজিৎ গায়ে হাত তুলেছে ততবার আমার সারা শরীরে ঘন হয়ে খেলেছে রঙিন মথ। যোনির পাশে গোলাপী ঠোঁট এঁকে দিয়েছিল সিগারেটের লালচে সেডে। জমাট রক্ত সুন্দরী নারী শরীরে স্বমৈথুন এর মতো। ক্রমশ এলিয়ে পড়ে যন্ত্রণারা।

রাস্তার পাশে দাঁড়ানো কতগুলো অচেনা মুখ। কারা যেন বলল ওদিকে না তাকাতে। আমার খুব ইচ্ছে করছিল একবার দেখি। জড়ি তোলা সস্তা শাড়ি। গোলাপী ঠোঁট ,গলার পাশে, হাতে মেরুন আর কালচে লালের শেড। মার লিপস্টিকের মত গন্ধ পেলাম। শরীরটা অনেকটা চেনা,চেহারা টাও কেমন আমার মতো । তেলো দিয়ে ঠোঁট ঘসে তুলে ফেলেছি রঙিন মথের বিষ। আসলে শরীরে বাসা বেঁধে ফেলেছে খামখেয়ালি লাল লিপস্টিক ।

কবিতার খাতায় পুড়ে যাওয়া সময়। চুম্বনের দাগ সমস্ত ক্ষত জুড়ে দিচ্ছে। অবিকল আগের মত নরম গোলাপী শরীর মথিত হচ্ছে জনহীন দুপুরে। আগ্রাসী রঙে ভেসে যাচ্ছে শরীর। প্রজাপতি রা এঁকে দিচ্ছে ঠোঁট ,ঘেঁটে যাচ্ছে সালিভার মত চিটচিটে লিপস্টিক ।

অপার্থিব ~ পরিযায়ী মেঘ


আমার দু'চোখে মোহনা
বুকের উপর দিগন্ত!
তার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে
তুমি পেরিয়ে যাও,
কত শত শহর গ্রাম জনপদ !
আকাশে বিদ্যুৎরেখা
পথের উপর ঝড় বৃষ্টি দুর্যোগ,
পিছনে পড়ে থাকে
কত উত্থান পতন, মিছিল, আন্দোলন, বিপ্লব!
কত অনায়াসে উপেক্ষা কর
সমস্ত পরাভব !
পা এর নীচে পাশ ফিরে শোয়
কালপুরুষ ৷
তুমি বুঝতে পার না,
সে আত্মনিবেদনের জন্য
অপেক্ষা করতে থাকে ॥

তুই কি এখনও ~ অনিন্দিতা রায়চৌধুরী

তুই কি এখনও জেগে আছিস
ঝিঁঝিঁ পোকার টানে ?
 
তুই কি এখনও বলতে ভুলিস 
বৃষ্টি পড়ার মানে ? 

তুই কি এখনও পদ্য লিখিস ?
ছন্নছাড়া ছন্দে ? 

তুই কি এখনও হাসতে পারিস ?
হারা'র আনন্দে ? 

তুই কি এখনও এলোমেলো ?
মেঘের আনাগোনায় ?

তুই কি এখনও বসে আছিস ?
ব্যস্ত স্বপ্ন বোনায় ? 

তুই কি এখনও ভীষণ আদর?
ভীষণ রকম স্থবির ? 

তুই কি এখনও রঙিন টানে
আঁকিস স্বপ্ন গভীর ?
তুই কি এখনও ...।

পরিযায়ী ~ রিনা রায়

পরিযায়ী মেঘগুলো,
উড়ে যায় খেয়ালে-----
এক একটা দেশ ঘুরে
অন্য দেশের আড়ালে!
বৃষ্টিকণা ঝরেনা আর
নীল আকাশও একাকী----
মিঠে সুরে বাজিয়ে বাঁশী
রাখাল বালক শোনায় কি!
পাতায় পাতায় বাজছে সানাই
আশাবরী রাগে------
ব্যাকুল মন একলা কাঁদে
দুরন্ত এক আবেগে!
ঝিলিমিলি রোদ চিবুক ছোঁয়
ঝরনার কলতান----
রাখাল বালক বাজায় বাঁশি
ঝরে পড়ে অভিমান!!

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...