বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সমগোত্রীয় - রিক্তা চক্রবর্তী

আমার ঠিকানার ডাকনাম বাড়ি ' 
যাকে ঘর ' বলে ভুল করতাম আজ থেকে বছর দশেক আগে
,
আজ অবশ্য হাবড়া ভ্যানস্ট্যান্ডও জানে
আমার ঘর ' নেই ... 
একটানা রক্তের ছিটে লাগা পালক দিয়ে ঢেকে থাকা রাস্তার শেষে যদি একটা বাড়ি থাকে তাকে কি ঘর ' বলা যায় ?
,
আজকাল দিনে আট ঘণ্টা খাটার পর যখন ফিরি 
ঝাঁপ খুল্লেই ছ’ফুট বাই ছ’ফুটের একটা জানলা চোখে পড়ে শুধু 
,
অপরিমিত রবিবার, মাঘমাস, জ্যামভর্তি বছর কিছুই ফেরে না 
তাই নিজের আদলে নির্জনতা খুঁজে নিই এখন 
,
প্রত্যেক দাবির পিছনে যেমন গোঁয়ারতুমি থাকে 
তেমনই জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে ...
লেবেল ক্রসিংটাই পারস্পরিক ফারাক বুঝে নিয়ে কাটিয়ে দিই সময়
,
সম্পর্কের তলানি হয়ে স্নায়ুতে , মজ্জায় ভালবাসা ' থেকে যায়
অসহ্য অবসর হয়ে 

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

সেপ্টেম্বরের রাত চাদরে এখন পুজোর কাশফুল গন্ধ 
হৃদয়ের  গহীন তম গভীরতা সাঁতরে উঠে আসা মৃৎ-কোলাজ আসন্ন শারদ ছবিতে স্পষ্টই স্পষ্টমান 
বিরহবহমান এই জীবনের একমাত্র আশ্বাস ... এই আনন্দী-কল্যাণ 

স্মৃতিমেদুরতা'কে শৃঙ্খলা রক্ষার ভার দেওয়া যায়না ঠিকই , তবুও মনের গহন তারে মাঝে মাঝেই অনুরণিত হয় চিরাচরিত সেই সুপ্ত খেদটি ... " যদি পারতাম ..." । 

ফেলে আসা সময়ে ফিরে যাওয়া যায়না , বরং অভ্যস্ত হতে হয় বদলাতে থাকা পারিপার্শ্বিকের সাথে । সমতাহীন সমাজে বসবাস করাটা বেশ ক্লান্তিকর , বিশেষত এই সময়টা , যখন বৃহত্তর আনন্দ উৎসবের সামিল হওয়ার দাবী হিসেবে ধর্ম ' এসে পড়ে মাঝে । মনের নিভৃত অলিন্দ জুড়ে দ্যোতিত হতে থাকে ... " সব উৎসবই হোক ধর্মের বন্ধনমুক্ত " । 

 শোষণ - বঞ্চনাহীন সমাজের স্বপ্ন দেখাটা বেশ অলীক , তবুও ... এই হুজুগে বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ । ভিন্ন এবং আপাত বিপ্রতীপ সম্পর্কগুলিকে একসূত্রে বাঁধার সেই বৃহত্তর উৎসব ... দুর্গাপুজো । 

'মুঠো ভরা রোদ্দুর ' র শারদ সংখ্যা সেজে উঠেছে ভিন্ন স্বাদের একাধিক লেখা নিয়ে । পুজোর দিনগুলিতে অবসর যাপনের মাঝে, একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন নব্য কবি - লেখকদের এই নবতর প্রয়াসগুলিতে , ... নিরাশ হবেন না কোনভাবেই একথা বলতে পারি ।  

সকলকে শরত-হেমন্তের হার্দিক শুভেচ্ছা।   পুজো ভাল কাটুক ।  

শুভেচ্ছান্তে 
পিয়ালী বসু 







নৈঃশব্দ্যের আওয়াজ - হিমাংশু চৌধুরী

মুখোমুখি দুজন বসে। সোমেন আর রিয়া।
ইশ, কি রোগা হয়ে গেছে! দাড়িটাও কামায় না আজকাল রোজ। ভাবে রিয়া।
সোমেন ভাবে, কোথায় গেলো আমার সাজুনি বৌটা, সবসময় যে টিপটপ থাকতো? এখন একটা এলোখোঁপা করেই বেরিয়ে পড়েছে, পরণে সাধারণ একটা সুতির ছাপা শাড়ি। অথচ একসময় এই রিয়াই বাইরে বেরনোর আগে নিজেকে একঘণ্টা ধরে সাজাতো, সোমেন অধৈর্য হয়ে পড়তো!
রিয়া ভাবে, মুখটা কি শুকনো লাগছে দেখো। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে কি না কে জানে? বাবুকে তো হাতে প্লেট না ধরিয়ে দিলে খেতেই ভুলে যান। এখন তো একা একা, কি রান্না হচ্ছে, কি খাচ্ছে, কে আর খবর রাখে। রোজই মনে হয় দোকানের কিনে আনা খাবার চলছে। আর সিগারেট খেয়ে খেয়ে তো ঠোঁটটা কালো করে ফেলেছে। ভোরবেলা এত কাশতো, ডাক্তার সিগারেট ছেড়ে দিতে বলেছিলো। ছাড়া তো দূরের কথা, মনে হয় আরো বাড়িয়েছে।
সোমেন ভাবে, চেহারাটা কিরকম হাড়সর্বস্ব হয়ে উঠেছে। ফাটা একটা স্লিপার পড়ে এসেছে। মা বাবা নেই, দাদার সংসারে বোধহয় খুব খাটাচ্ছে। টাকা দিতে চেয়েছিলাম মাসে মাসে, তিনি তো রিফিউজ করলেন। কি করে চালাচ্ছে কে জানে? করে তো ঐ দুহাজার টাকার সর্বশিক্ষার প্যারাটিচারি। কি সুন্দর লক্ষীপ্রতিমার মতো মুখটা ছিলো, এখন দেখো,  মুখে কালি পরে গেছে।
রিয়া ভাবে, উফ, সোমেনটা এরকম ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন? ওরকম তাকালে আমি হারিয়ে যাই, তুমি কি জানো না সোমেন? কি আছে আর আমার মুখে? বিয়ের পরে যখন রোজ ঝগড়া করতে, তখন তো আর তাকিয়েও দেখতে না। এখন তো  আর রূপচর্চা করতেও ভালো লাগে না সোমেন। তুমি যখন ছিলে, তখন পৃথিবীটা কত বর্ণময় ছিলো, এখন কেমন যেন ধূসর হয়ে গেছে। আগে রোজ রাত্রে ঘুমনোর সময় ভাবতাম, কাল আবার একটা নতুন দিন আসছে, আর এখন ভাবি, কালকের দিনটা না আসলেই ভালো হয়।
আমি কি ঝগড়া শুরু করতাম, নাকি, তুমি করতে? ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই শুরু হয়ে যেতো তোমার আমাকে বদলানোর প্রয়াস। ব্রাশটা জায়গামতো রাখোনি কেন? বাথরুমে সিগারেট খেয়েছো কেন? বাজার থেকে এইসব এনেছো, এগুলো এখন কুটে রান্না করবে কে? তোয়ালেটা চান করে কেচে দাও নি কেন? আবার তুমি আগের দিনের ঘেমো শার্টটা পরেই বেরচ্ছো? ফিরতে এত রাত হলো কেন? ঘেমো গায়ে আমার কাছে আসবে না, চান করে এসো- কত্ত কি অনুশাসন।  পুরুষ মানুষকে অত বেঁধে রাখতে গেলে চলে না গো।
তুমি বুঝলে না সোমেন, তোমাকে আমি কত্ত ভালোবাসি। ভালোবাসি তাই চেয়েছি, তোমার কাছে কাছে থাকতে সবসময়। চেয়েছি, তুমি একটা সর্বাঙ্গসুন্দর মানুষ হয়ে ওঠো। আর তুমি, বিয়ের আগে আমায় কত সময় দিতে, একদিন একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাইলে মুখ ভার হতো, বিয়ের পরেই তুমি কত বদলে গেলে! সকালে বেরিয়ে গিয়ে রাত দশটা এগারোটার আগে বাড়ি ঢুকতে না। একা একা গোটা বিকেল সন্ধ্যেটা আমি কি ভাবে কাটাতাম, একবারও ভেবে দেখেছিলে কি?অফিস শেষ হয়ে যাবার পরে বাড়ি না ফিরে চলে যেতে বন্ধুদের আড্ডায়। তারপরে বাড়ি ফিরেই নিয়মমাফিক ডিনার করে  যান্ত্রিক সঙ্গম। এতে মনেরও যে একটা ভূমিকা আছে তুমি কি বুঝতে না সোমেন? কি ভেবেছিলে? কাঁচপোকাটাকে তো হাতের মুঠোয় বন্দী করেই ফেলেছি, যতই ফড়ফড় করুক, উড়ে তো আর পালাবে না।
রিয়া, তোমায় তো আমি ভালোবাসি, এখনও। তুমি চলে যাবার পরেই বুঝতে পারলাম, তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি কি ফিরে যাবে, আবার, আমার কাছে? কোর্ট তো ডিভোর্সের আগে আমাদের একবছর সেপারেশনে থাকতে বলেছে, তিনমাস ছাড়া ছাড়া দেখা করতে বলেছে। চলে যাবার তিনমাস পরে এই প্রথম তোমার সাথে দেখা হলো। কোর্ট চায়, আমরা মিটিয়ে নিই। আমি যা ভুল করেছি, সেগুলো আর করবো না রিয়া। তোমার ভালোবাসার শাসনগুলো মেনে নেবো। তোমায় মিস করছি সোনা, খুব।
আমিও তো তোমায় মিস করছি, সোনা, ভীষণ। কিন্তু তুমি না ডাকলে আমি কি করে ফিরে যাই বলো। তুমি একবার ভালোবেসে ডাকলেই আমি ছুট্টে চলে যাবো গো। তোমার কাছে।
মুখোমুখি বসে থাকে দুই অসুখী মানুষ। মাঝে কফি শপের টেবিলে ফড়ফড় করে উড়তে থাকে তামাদি হয়ে যাওয়া কিছু ম্যাগাজিনের পাতা। নিয়মমাফিক একবছরের সেপারেশনের সময়ে তাদের চারবার দেখা করে মিটমাট করার প্রয়াস চালাতে হবে। অনেক কথা আছে তাদের মধ্যে, সে শুধু মাঝের এই তিনমাস সময়ই জানে। কিন্তু অটল নৈঃশব্দ্যের মাঝে তারা মাথা উঁচু করে বসে থাকে। কে আগে নত হবে, এই চিন্তা তাদের কুরে কুরে খেতে থাকে। কথা আর তাদের বলা হয় না।
অথচ, কথা ছিলো, ঢের কথা ছিলো।

সহজ পাঠ ও নীল তিমি - বাসব মণ্ডল

এক একটা অক্ষর পেরিয়ে
এগিয়ে যাচ্ছি ভগবানের কাছে
রক্ত দিয়ে
মিলিয়ে নিচ্ছি অবয়ব
স্নেহ ফড়িং
আর ডানা ঝাপটায় না এখন
এখন শুধু শিরা উপশিরায়
ব্লেডের দাগ
তারপর ব‍্যাজ্ঞন বর্ণর মত
জটিল হাত
বাড়িয়ে দেবে সাপ
সোনাপথ
শেষে গিয়ে আর
পাঠানো যাবে না প্রমান-
কারণ কথামালার ও প্রান্তে
শুধু চন্দ্রবিন্দু চাঁদ
ঠিকানায় তিমির পাসে
ঈশ্বরের নাম

পরিব্রাজক - শমিতা চক্রবর্তী

চা বাগিচার সবুজ বুকে তখন
পাইন বনের ঝিরি হাওয়া এসে
আদর বুলিয়ে যাচ্ছে
দূর থেকে ভেসে আসা এলাচি সুগন্ধ মেখে
তখন পাহাড়ী ঝর্ণা টা ট্যুর -গাইডের
প্রধান আলোচ্য বিষয় --------
দূরের পালি -অক্ষরগুলো ছুঁয়ে দৃষ্টি তখন
আরও দূরের একটা গৃহত্যাগী মঠে -------
ওখানেই বুঝি আছে মানুষ টা
ঘর ছেড়ে আসার সময় এ কথাই তো ছিল
তার পরিব্রাজক মনে
ধীরে ধীরে পাতা ওলটায় --পাইনের বন , চা বাগিচা , এলাচি হাওয়া , আনন্দ মুখর ঝর্ণা --
শুধু পর্ণমোচী দের দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে
চিরহরিতের দেশে --আমার ইচ্ছে পূরণের গল্প
লেখা হয় --পরিব্রাজকের পায়ে 

একান্ত - সঞ্জয় সিন্হা

চুপিসারে মেঘের দু হাতে এক থালা রোদ দিতে চাই!
আজন্ম উত্তাপ,উনুনে পোড়া ছাই
হিসাবের অন্ধকার, ছুঁয়ে দেখ
তোমার পিপাসা জল, শিল্প আশ্রয়!
পাতাগুল ভীতু লীন তাপ, কুঁকড়ানো জোৎস্না স্নান কত যুগ ছড়িয়ে পর্ণমোচী হৃদয় নিরাশ্রয়!
ঝড়ো সংকেত, তুমি কি খোলা দরজায়,
আমার সংশয়, পর্দা তোমার হাওয়ার দমকায়
আদৌ দোলে কিনা!

ভালো আছি - বিকি দাস

অমনি করে কাঁদছ যে,
কেউ কাঁদিয়েছে বুঝি?
লক্ষ্মীটি ভালোবাসা ফিরে এলে বলো,
ভালো আছি, ভালো মন নিয়ে।
যেভাবে ভালো আছে,
ভোরের কুয়াশা দূর্বাঘাসে।
তুলো উড়ছে স্বাধীন হাওয়াতে।
তুমি তাকে বলো,
আমি ভালো আছি, ভালো মন নিয়ে।
যতটুকু ভালোবাসা ছিলো,
সবটুকু দিয়েছি তোমায়।
এসে দেখো,
এখন পরে আছে, এক পোড়া কাগজের গল্প।

সে যে চলে গেল বলে গেল না - সিলভিয়া ঘোষ

ঈশান কোণের মেঘগুলো যখন মনখারাপের বিকেল সাজিয়ে আনে তখন ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে অকারণেই ভিজতে থাকি, হেড ফোনে শুনতে থাকি 'বাত নিকলি হ্যায় তো'/জগজিৎ সিং...... 
চোখের জল মিশে যায় বৃষ্টির জলে। সামনের মাঠটায় বৃষ্টির জলে ফুটবল খেলতে থাকে সম বয়েসী শৈশব।
কতটা জীবন্ত সজীব ওরা। দুঃখ কষ্টগুলো ওদের ছুঁতে পারে না। ওদের মতোন তোলপাড়় করা বিকেলগুলো ফিরে পেতে চাওয়া আজ ভীষণ ভাবে দরকার , শোক-তাপগুলোকে যদি ভুলে যেতে পারতাম..... 
শোকগুলোকে সাজিয়ে রেখেছি মনের শো কেসে।তাকে হাত দিতে দেই না, ছুঁতে দেই না কাউকেই। ও যে একান্তই আমার ।মাঝে মাঝে ও কে ঝেড়ে মুছে তুলে রাখি। ব্যস্ত জীবনে দুঃখ প্রকাশ শখের বিলাসীতা মাত্র। তবুও সেই মাস, সেই দিন আজ উনিশ বছর ধরে নিজের অজান্তেই বালিশের ওয়াড় ভিজিয়ে চলেছে। সময় তোর জায়গায় নতুন কে স্থান করে দিলেও প্রথম অনুভূতিরা, না থাকার যন্ত্রণারা আজও দাগ কেটে বসে আছে শরীরে, মনে। জানি হয়তো কোন জন্মের ঋণ শোধ করতেই এসেছিলি তুই, শিখিয়ে গেছিস জীবনের অনেক বড় শিক্ষা। বিনা কষ্টে, প্রার্থনায় যে উপহার ঈশ্বর দিয়ে থাকেন তাকে অতি যত্নে, আদরে লালন করতে হয়, না হলে --সে চাঁদের দেশে চলে যায়, নতুন আলো নিয়ে চোখে প্রতি জোছনায় আমাকে আলো দিয়ে ভরিয়ে দেয়...... 

আমি সব ভুলে যাই, কাজল আঁকি চোখে, লুকিয়ে রাখি গোপন শোক, নতুন কাপড় পরি, ষষ্ঠীব্রতো পালন করি, সন্ধি পুজোর প্রদীপ জ্বালিয়ে এজন্মে না হোক আর জন্মে ফিরে পেতে চাই বলে মনে মনে বলি মা রে আবার আসিস আমার কাছে....... 

শোক বিলাস - মুনমুন মুখার্জী

আজকাল বিষণ্ণতার এক কালো মেঘ সর্বক্ষণ ঘিরে থাকে বহ্নিকে। বাইরের বর্ষার সাথে পাল্লা দিয়ে মন কুঠুরির জানলা গলে চুঁইয়ে পড়া কান্না বৃষ্টি। কোন শোক তাপ জরায় জর্জরিত মন তার?

পরিচিতদের অভিমত, ‘এ হল সুখী পায়রার শোক বিলাস!’ তবে কি তার জীবনে শুধুই চাঁদের হাট? 

স্মৃতির অলিগলি ধরে একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। বহ্নি সবে বছর ষোল। সামনেই ওর দাদুর শবদেহ। শ্মশানযাত্রীদের “বলো হরি! হরি বোল!” ধ্বনি মিলিয়ে যেতেই অনুভূতির অনুরণণে যে শূন্যতাবোধ সৃষ্টি হয়েছিল সে-ই কি শোক? 

দাদুর কাজের দিন তাহলে সেই শোক কোথায় হারিয়েছিল? ঘাট কাজের দিন থেকে মৎস্যমুখী এই তিনদিন ধরে ভোজ আর আত্মীয় পরিজনের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো কি আসলে উৎসব মুখর ছিল না? কাজের দিন রাতে cousin দের সাথে বাজি রেখে একা দাদুর শ্মশান ভ্রমণ কি এডভেঞ্চার ছিল না কি দাদুর প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস, ‘যিনি ভালবাসেন মরণের ওপাড় থেকে তিনি ঘাড় মটকাতে আসবেন না!’ 

একটু এগিয়ে যাই-- সন্ধ্যেয় খবর এল, দিদা আর নেই। বাবা মা সবাই ওকে রেখে ওখানে গেলেন... বহ্নির কাল অনার্স ফাইনালের প্রথম পরীক্ষা! শোক পালনের চেয়ে জীবন যুদ্ধের প্রস্তুতির গুরুত্ব যে অনেক বেশি। 

স্মৃতির পথ ধরে পৌঁছে গেলাম হাসপাতালে। ছোট্ট একটি প্রাণের অস্তিত্ব ওর নিষ্প্রাণ মরু জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছিল। গাইনোকলজিস্ট জানালো, ‘The fetus is stillborn.’ আজও সন্তানহীন বহ্নির মনের গহনে মা ডাক শোনার অতৃপ্ত ইচ্ছেরা উঁকি দেয় যখন তখন। ইচ্ছেগুলো লুকিয়ে সে তার জীবন নির্যাস আকণ্ঠ পান করে চলেছে। ‘There is only one life after all!’ অতএব, একেও শোকের পর্যায়ে ফেলা যায় না! 

সেদিন এক বন্ধুর অকালপ্রয়াণের খবরে তড়িঘড়ি বন্ধুর বাড়ি গিয়ে দেখে, বন্ধু-পত্নী কাঠিন্যের এক দুর্ভেদ্য আবরণে নিজেকে আবৃত করে সব একা হাতে সামলে চলেছে। মেয়েটি ওর চেয়ে বছর কয়েকের ছোট। মনে হল মেয়েটিকে একবার দু’বাহুতে জড়িয়ে ধরে। ওর এত স্বাভাবিক আচরণের আড়ালে লুকানো কান্না বহ্নি ঠিক অনুভব করতে পেরেছে! তবুও কেন যেন ওকে জড়িয়ে ধরার সাহস হল না বহ্নির। এজন্য ওর ভেতর চাপা কষ্টের যে ঘূর্ণী বইছে সেও বোধ হয় শোক আখ্যা পাবে না।

আজকাল কারো বাবা মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেলে বহ্নি সারাক্ষণ তটস্থ থাকে। এই বুঝি রিংটোন বাজবে ওর বাবা বা মায়ের অন্তিম সংবাদ দিতে। তারপর সারাদিনের বিষন্নতার চাদর মোড়ানো চাপা কান্না। অযৌক্তিক এই শোকেরও কোন ব্যাখ্যা নেই বহ্নির কাছে। 

এসবটুকুই বহ্নির শোক বিলাস মাত্র! 

শোক - অরূপজ্যোতি ভট্টাচার্য

শোক - আর আগে অ লাগালে
অশোক -চণ্ডাশোক থেকে ধর্মাশোক। 
রক্তের কলিঙ্গ নদী। 
মন না মতিভ্রম। 
দিয়ে গেলেন শান্তির বার্তা।


শোক -কখনো হতাশার 
কখনো বা বিজয়ের,
কখনো গৌরবের 
কখনো বা বিষাদের। 
তবু শোক আসে মনের কোনায়।


অপ্রাপ্তিতে, অতৃপ্তিতে 
কখনো বা শুধুই অশান্তিতে। 
তৃতীয় ভাব শোক নিয়ে আসে 
করুন রস। 
শোকের মধ্যেই লুকিয়ে আছে 
দগ্ধ হয়ে নির্মল হওয়ার বার্তা

চলে যাই - এস ঘোষ সুমনা

শব্দের শবদাহ করে
কোলাহল থেকে নির্জনে

মায়ামোহ ত্যাগ করে
অজানা সুখ বা অসুখের
কল্পিত জগতে

আমার 'আমি'কে রেখে
আরেক আমিকে সাথে নিয়ে
চলে যাই

খুঁজো না

মিলিয়ে যাই...

সাত রঙ মুছে 
এক রঙ জেগে রয়

স্থবির - সুমনা দত্ত

ক্লান্ত তিতিরের ডানায় ঝরে পড়তে গিয়ে
সব রঙ যখন মাটির গন্ধে মিশে
নতুন জীবন খুঁজে নেয়

চলমান গল্পগুচ্ছে নেমে আসে
স্থবির ক্লাইম্যাক্স

আমি ক্যামেরার পেছনে চোখ রেখে
ঢেউ এর স্তব্দতা গুনি
আর দেখি

সব মিলিয়ে যাওয়া এয়োতির চিহ্নই আসলে 
নিজের মতো করে হারিয়ে যাওয়া
সিঁদুর খেলতে খেলতে
বৈধব্যের ছদ্মবেশ

চুনি কোটাল: প্রথম মহিলা লোধা গ্র্যাজুয়েট - সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

স্নেহের সুতপা , 

তোমাকে জানাই আমার প্রিয় নারীটির কথা । সে হলো ভারতের প্রথম মেয়ে লোধা গ্র্যাজুয়েট ‘চুনি কোটাল’ । কেন উচ্চশিক্ষিত হতে চেয়েছে শুধুমাত্র এই অপরাধে অত্যন্ত মেধাবী এবং পরিশ্রমী এই লোধা মেয়েটিকে আত্মহত্যা করতে হয়েছে । জন্ম ১৯৬৫ সালে, হতদরিদ্র পরিবারে । পাঁচ বছর বয়সে ছেঁড়া জামা গায়ে দিয়ে ভর্তি হয়েছিলো গ্রামের পাঠশালায় । একে লোধা, তায় মেয়ে ! পাঠশালার গুরুমশায়ের বিরক্তি । সামান্য ভুল করলেই বেত পড়তো পিঠে । চুনি তখনই জেনেছিলো তাকে প্রতিবাদ করতে হবে পড়াশোনা করে দেখিয়ে । সেই জেদেই একটার পর একটা ধাপ পেরিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলো জুনিয়ার হাইস্কুলে ।

কাগজের অভাবে ক্লাসে অঙ্ক কষে দেখাতে না পারার অপরাধে বেঞ্চে দাঁড়াতে হলেও ক্লাসে সবসময় দ্বিতীয় হতো । যত পীড়ন করা হতো তার জেদ ততই বেড়ে যেতো । মাধ্যমিক পরীক্ষায় মাত্র সাত নম্বরের জন্য বঞ্ছিত হয় দ্বিতীয় বিভাগ থেকে । ১৯৮০ সালে ভর্তি হয় মেদিনীপুর কলেজে একাদশ শ্রেণীতে কলা বিভাগে । উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হয় স্নাতক শ্রেণিতে অর্থনীতি নিয়ে । ১৯৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পরীক্ষার ফল বেরোল । চুনি হলো ভারতের প্রথম মহিলা লোধা গ্র্যাজুয়েট । 

এরপর ভর্তি হয় মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃতত্ত্ববিদ্যা ও আদিবাসী সংস্কৃতি বিভাগে । বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছাত্রীনিবাসের জাঁতাকলে পড়ে চুনি ক্লাস করে কিন্তু পার্সেন্টেজ পায় না । পরীক্ষা দেয়, পাশ করে না । ওদিকে আদিবাসী ছাত্রী নিবাসেও চুনির ওপর চলে অকথ্য মানসিক নির্যাতন । তার নামে নানা অপবাদ রটতে থাকে । বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যক্ষভাবে তাকে গালাগালি করে বলা হয় – লোধার মেয়ে, চোরের মেয়ে তার আবার এম. এ. পড়ার সাধ ! চুনি প্রতিবাদ করলে তার প্রতি দুর্ব্যবহার আরও বাড়ে, তাঁর জীবন অতিষ্ঠ করে তোলা হয় ।

১৯৯০ সালে মন্মথ শবরকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করে । এম এ পার্টট ওয়ানে মাত্র ৭ নম্বরের জন্যে প্রথম শ্রেণি পায়নি । ফাইনাল পরীক্ষায় সেই ঘাটতি মেটানোর জন্যে ১৯৯২ সালের ১০ আগস্ট ছাত্রীনিবাস থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসে খড়্গপুরে স্বামীর কাছে । সকলের দুর্ব্যবহার আর সইতে না পেরে সেইসময়ে একদিন গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ে সে । সুইসাইড নোটে সকলকে ক্ষমা করে যায় । এই লড়াকু লোধা মেয়েটিকে জানাই অসীম শ্রদ্ধা । 

ইতি, 
তোমার কাকা সুধাংশু চক্রবর্ত্তী
১২ আগস্ট, ২০১৭ 
চৌধুরীপাড়া ; হালিশহর

প্রত্যাবর্তন - বিলকিস বি পলি

নিঃসঙ্গ যাপনের অভিপ্রায়
শূন্য হয় তোমার ছোঁয়ায়
শেওলা জমা একাকীত্বে
ধীরে ধীরে জন্ম নেয়
রক্তকরবী ভালোবাসা

ভায়োলিনের করুণ পরিবেশনে
দূরত্ব বেড়েছিলো যে প্রেমে
আগল দেয়া কপাটে আজ তার
স্মৃতিমেদুর অনুরণন

সমাপ্তির পথ ধরে হেটে চলা
মনের চোরা গলিতে
জন্ম নেয় অন্য এক অনুভূতি
মেঘ কাজল চোখ প্লাবিত হয়
জল ছুঁই ছুঁই আল্টুশি আবেগে

জীবনের জলছবি - দেবদত্তা ব‍্যানার্জী

অবশেষে এক ক্লান্ত দিনের শেষে -
মনের কোনে এক অন‍্য অভিপ্রায় !!
এগিয়ে চলেছি এবার সমাপ্তির পথে,
ঘটনা বহুল জীবনের পরিবেশন শেষে
এক অজানা পথের দিকে,
অনেক দূরত্ব লঙ্ঘন করে এগিয়ে চলেছি....

যেদিকে তাকাই এক শূন‍্যতা ভেসে ওঠে
তার ফাঁকে ফাঁকে এক অদ্ভুত অনুরণন...
জীবনের আবছা জলছবি ফুটে ওঠে;
মনের কোনে এক কূয়াশাচ্ছন্ন আশঙ্কার মেঘ-
জন্ম থেকে মৃত‍্যু; এ পথের শেষ ঠিকানায়

প্রেমের কোলাজ - ডালিয়া অবস্তি

"শহরতলী জুড়ে গলির মোড়ে মোড়ে
তোমায় নিয়েই গল্প হোক।

নীলাম্বরী সাজে উর্বশী মনে
কোন এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় প্রথম দেখা।

আমি তখন যৌবনমদমত্তা, উপচে পরছে সদ্য কিশোরীর পাগলা যৌবন,
তুমি ত্রিশের কোঠায়,
তোমার মনে বসন্তের আগুন।

প্রেমের পাঁচতারা ক্রুজে চেপে
পারি দিলাম ড্রেক প্যাসেজের দিকে।

প্রতিক্ষন মিলনের অধির অপেক্ষা,
যেন শরীরের প্রতিটি রক্তকনা 
খাঁচায় বন্দী ক্ষুধার্ত বাঘের মত ক্ষিপ্ত।

জানি তোমার ছন্দে অন্ত্যমিল নেই।
তোমার ঊর্ধগামী বালিশ ছেঁড়া স্বপ্ন-ধোঁয়া
উড়ছে উড়ুক।

আমাদের প্রথম প্রেমের ছোঁয়া আজও আমার
মনে দগদগে ঘায়ের মত,
ক্রমশ সংক্রামিত হয়ে 
সারা শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

প্রথম চুম্বনের তীক্ষ্ণতার
সেই বিহ্বল মুহূর্ত আজও অপ্রকাশিত।

"তোমার চোখ মেঘলা হোক
তোমার কথাই পড়ছে মন
আঙুল ছোঁয়া মুদ্রাদোষ
তোমার কথার খুব ওজন।

আজ অতীত যেন কফিনে বন্দি 
পাপ ও প্রেম।
পাপের শুস্কতা আমাদের সম্পর্কহীনতার ফসল।
বন্দুকের নলের সামনে 
অর্থহীন প্রেমের অপমৃত্যু,
দেওয়ালে ঝুলছে
একটি এলোমেলো প্রেমের কোলাজ।

হাজার করতালি তোমায় বলে খালি
তোমায় নিয়ে গল্প হোক "

মোমের মতন - শুভংকর পাল

মোমের মতন এই দেহটায়ও সলতে
জ্বলে,
এই যে চারিদিকে এতো আলোয় আলো,
এ তো সেইজন্যই ...
জ্বলতে জ্বলতে এই দেহটাও পু'ড়ে যায়,
এবং জ্বলা শেষে কর্পূরের মতোই
উবে যায় প্রাণরস ...
এই যে যার আলোয় তুমি একজীবন জাগো
ঘুমাও,
এই যে দাঁড়িয়ে থাকা মোমের দু'গাল বেয়ে
গ'লে গ'লে পড়ে কান্নার মোম,
যদি তুমি দু'দন্ড না হয় ওর কাছে গিয়েই
ব'সতে, আর ওই ঝ'রে যাওয়া মোম তুলে
তুলে দিতে ওর শিখার কাছে,
ও আর কিছুক্ষণ আরো জ্বলতে পারতো ...
তুমি তা করো নি ...
তুমি অবহেলায় স'রে গিয়েছিলে দূরে, আর
অলক্ষ্যে ওর ওই অশ্রু প'ড়ে থেকে থেকে শুকিয়ে
গেছে ওর পায়ের কাছে,
ক্রন্দনহীন চোখের কি প্রাণ থাকে ? বলো ?

শয়তানের দড়ি - তন্তু ঘোষ উর্ণনাভ

কাঁটাতার: এই কি স্বাধীনতা?
কাঁটাতার: না কি স্বাধীনতার গিট?
প্রচ্ছদবিহীন চোখ এফোঁড় ওফোঁড় করে গেছে শয়তানের দড়ি
স্বাধীনতা এই, আলবালের বৃত্তে দাসত্বের জীব্ন!চারপাশে মৃত্যুর ঘের যার ভিতর স্বার্থ স্বার্থ বিলাসিতাশহিদ, বলিদান, মুক্তি, পতাকা - মেটাল তারের পেটানো গিটে বাঁধা।
দেশ: দলীয় স্বার্থে ভাগাভাগি করে নেওয়া পচাগলা মৃত শিকারের টুকরো
আর আমরা দ্বিপদ কেঁচো কৃমি তাই খেয়ে উগরে দিই ধর্মের বমি
পুঁজ রক্ত শুষে শুষে জমা করি মিথ্যা অহমের পুঁজি
টুকরো মাংসগুলো শরীর থেকে আলাদা হয়ে বিধর্মী হয় আমাদেরই বিষে
যাতে সুবিধা রাজকুকুরের, - আস্বাদিত পাক তুলে খেতে।
অধিকার: যতটা খাঁচার পরিধি প্রভু ঠিক করে দেয়
ভাগ, বাটোয়ারা, দলিল, পর্চা জীবন এটুকুই চিতা অবধি;
এ দেশের বরাদ্দ সম্পত্তি ফুরালে, জলহাওয়া ফুরালে, ফুরাবে অধিকার
কোথাও ফাঁকি নেই, যন্ত্রণার ইতি নেই, পুনর্জন্ম নেয় সেই চিতাভস্মই!
রক্তবীজের জীবন; মৃত্যু, মুক্তি সব অধিকার কাঁটাতারের ভিতর


দেশ: জড় পৃথিবীর স্থবির এক ভাগের টুকরো
অধিকার: সাপের মুখে ব্যাঙের হাত পা ছোঁড়ার লড়াই

আত্মশোধন - মন্দিরা মিশ্র

মল্লিকা কেবিনে ঢুকেই বললেন ‚ চল সুমি ‚ তোর ছুটি হয়ে গেছে | সুজন যাকিছু নিয়ম-কানুন সব বুঝে টাকা মিটিয়ে আসছে |
অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে সুমিতা বলে ‚ মা এরমধ্যে সুজন কেন ?
যে মানুষটা ‚ এই তিনমাসের মধ্যে আমার কোন খোঁজ নেয়নি......
ওরে নারে পাগলী ‚ ওতো রোজই আমার কাছে তোর খোঁজ নিত | এমনকি নার্সিংহোমেও তো ঐ নিয়ে এসে ভর্তি করা থেকে শুরু করে ‚ তোর বাচ্চা হওয়া........ উদভ্রান্তের মত ‚ সারাটাদিন ‚ এখানেই কাটিয়েছে | তোকে আর বাচ্চাকে ‚ সুস্থ দেখে তবে ফিরেছে | এক-কাপ চা-অবধি খাওয়ানো যায়নি |
পিছনের সীটে মায়ের সঙ্গে বসে ‚ নিজের মনেমনে ভাবে সুমিতা ‚সেদিনের ঘটনাটা........
নতুনফ্ল্যাটে ঢুকে থেকেই ঘর-সাজানোর নেশায় পেয়ে বসেছিল | নিউ-মার্কেটের পুরনো জিনিষের দোকান থেকে কত দামীদামী মুর্তি সংগ্রহ করেছি |
সুজনের , এতো তাড়াতাড়ি দামী জিনিষপত্র কেনায় প্রথম থেকেই আপত্তি ছিল |
| অশান্তির শুরু সেখানেই | রাগে একদিন বলেওছিলাম ‚ আমার টাকা দিয়ে আমি যা-খুশি করবো....
তারপর সেদিন আড়াইফুটের ব্রোঞ্জের নটরাজটা ওর সামনে আনতেই ‚ দামটা দেখে ‚ প্রচন্ড রাগে.....পনেরোহাজার_____বলেই টানমেরে ফেলে দিয়েছিল |
আমিও হতবাক__________প্লাষ্টারের মুর্তি খানখান হয়ে যেতেই । অপমানে ‚ রাগে আত্মহারা হয়ে ছুটে চলে গেছিলাম ‚ মায়ের কাছে |
পরে জেনেছিলাম ‚ দোকানীর দোষ ছিলনা ‚ আসলটা আগের দিনই কেউ পাচার করে দিয়েছিল | উনি আমাকে ক্ষতিপূরণও দিয়েছেন....
ঘরে ঢোকার মুখে ‚ সুজন ‚ হাত দিয়ে সুমির চোখটা আড়াল করে আস্তেআস্তে বিছানার সামনে গিয়ে ছেড়ে দেয়...
সুমি অবাক হয়ে দেখে ‚ ওর সামনে একটা ঝকঝকে ব্রোঞ্জের তিন-ফুটের নটরাজ ...
সুমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা...
সুজনকে জড়িয়ে ধরে বলে ‚ আমাকে ক্ষমা করে দাওগো ‚ আমার ভুলটা বুঝে , নিজেই শুধরে নিয়েছি ।সুজন দুহাতে সুমিকে , আরো কাছে টেনে নেয় । 

অপরিমিত - সুতপা সরকার

যেদিন নহবতে বেজেছিলবিদায়ী সুর
ছিন্নমূল আমি,নৌকোয় নব যাত্রী
ভাঙছি লহর,
তবু নতুনের সম্মোহন ছিল অপরিমিত,
খুশীর পালে তুমি সর্বনামে কিছুটা সম্মোহিত।
কিন্ত ওই চতুষ্কোণ দাবার চৌখুপী,
পরিমিতি তে ক্রমশ সংকোচন, যারপরনাই অসুখী।


হৃদস্পন্দনে ছিল অভিমান তঞ্চন,
অপরিমিত ভালোবাসার বদলে রিক্ত শূণ্যস্থান।
স্বল্প পরিসর সবুজে মন্ত্রীর

অনুশাষনসর্বাত্মক দাবানলের লেলিহান লালনে দীর্ঘশ্বাসে শোক,
অশ্বের আড়াই পা উল্লম্ফনে
জীবন যোজনায় মুক্তি চাই নি তো,
তাই আজো ফুটিফাটায় সংযুক্ত।


রীতি কে মেনে মুখোশে সুখী অপরিমিত,
এক অসম্পূর্ণ উপন্যাসের পরিশেষে ইতিবৃত্ত।


বোরের ভূমিকায় দূর্গ রক্ষায় সম্প্রসারিত,
রাজার সুখস্বাছন্দ্যে বলিদানে প্রস্তত নিয়ত,
ঝরে যাচ্ছি প্রাত্যহিকতায় নির্বিকার,
ছৌ নাচে সীমাবদ্ধ অধিকার।
ফুল্লরার বারোমাস্যার বাইরে জীবন অপরিমিত,
রানী আমি সোনার খাঁচায় শৃংখলিত,
বাকীটুকু এক অপরিচিত

রজনীগন্ধা - শুভা গাঙ্গুলী

পরিমিত ভালোবাসায় ঠিকই ছিলো স্বাগতা, পরিমিত অর্থেও তার অসুবিধে হত না, সারাদিন নিজের কাজ নিজেই করতো,আর রোজ সন্ধ্যায় একগুচ্ছ রজনীগন্ধা ঘরের টেবিলে রাখতো,খুব প্রিয় ফুল ওর,

তারপর কি করে যে একজন ডেন্টিস্ট এর দোকানে কাজ করা সাধারণ শিক্ষিত টেক্নিকাল হেল্পার এত টাকার কাজ পেয়ে মুম্বাই চলে গেল, ফ্লাট কিনে ওকে রাণী র মতো রেখে গেছে আজ অপরিমিত রোজগার, কিন্তু কি যেন নেই,কিযেন নেই,ছেলে খুব বড় hostel এ থাকে,সারাদিন এঘর ওঘর ঘুরে ক্লান্ত স্বাগতা
এলকোহলে র আমেজে মজল,

তারপর অপরিমিত সুখ ওকে সিরোসিস অফ লিভার উপহার দিয়েছে,এখন রোজ ওর কাজের মেয়ে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে আসে,এই পরিমিত শেষ ইচ্ছা ই জানিয়েছে স্বাগতা।

ভালবাসা বেঁচে থাকে অন্তরে - রীনা রায়

দুমড়ে মুচড়ে ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছিল নন্দিনীর, ঋষিকে যে প্রাণের চেয়েও বেশী ভালবাসে---ওকে ছেড়ে থাকবে কি করে? আর ছোট্ট রিদম--- ওর কথাও ভাবলোনা ঋষি? 
ঋষির বলা কথাগুলো এখনও কানে বাজছে--- ওর মতো মিডলক্লাস মেয়েকে বিয়ে করে ও ভুল করেছে! ওর সাথে একছাদের তলায় থাকা যায়না! নন্দিনী যেন মিউচুয়াল ডিভোর্সে রাজী হয়ে যায়, কলিগ সৃষ্টি মুখার্জিকে ও বিয়ে করবে।

নন্দিনীও একসময় কর্পোরেট অফিসে উঁচুপদেই কাজ করতো--শুধুমাত্র ঋষির বাবা-মার চাওয়াতেই ও চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল।

সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল কলেজে পড়ার সময়েই, দুক্লাস সিনিয়র ঋষি ওর মতো সাদামাটা মেয়েকে যেদিন প্রপোজ করলো, ও কেমন যেন হকচকিয়ে গেছিল, ওর প্লাস পয়েন্ট একটাই ছিল যে ও পড়াশোনায় অত্যন্ত ব্রিলিয়ান্ট। সেই তুলনায় ঋষি অ্যাভারেজ---

ইউনিভার্সিটির পড়া শেষ করে নন্দিনী চাকরির পরীক্ষা দিয়ে খুব তাড়াতাড়িই ভাল চাকরি পেয়ে যায়, বেশ কিছুদিন পরে ঋষি চাকরি পেলে ওরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল়। 
ঋষির মা বাবা এই বিয়ে মন থেকে মানতে পারেননি।বিয়ের পর প্রতিটা খুঁটিনাটি ব্যাপারে নন্দিনীকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করতো।
নন্দিনী সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে, মানিয়ে চলাই ওর শিক্ষা, একসময় ও সবার প্রিয় হয়ে গেছিল ।
ওনারা বেঁচে নেই, সেই ভাড়াবাড়ি ছেড়ে ওরাও চলে এসেছিল। 
এদিকে ঋষি যত উন্নতি করছিল, ততই বদলাতে শুরু করেছিলো।
অফিস-ট্যুরে বিদেশভ্রমণ, পার্টি, ড্রিঙ্ক করা তো নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে, নতুন উপসর্গ যোগ হয়েছে নতুন নতুন গার্লফ্রেন্ড --- প্রতিবাদ করলেই ওকে শুনতে হয় ও ব্যাকডেটেড! এসব না থাকলে ওপরে ওঠা যায়না! 
নন্দিনী ভাবে, তবে কি ঋষির অপরিমিত উচ্চাকাঙ্খাই ওদের সম্পর্কে তিক্ততা আনছে? 

সামান্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আর রিদমকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে উঠলো নন্দিনী।
--------
ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ঘর খুলতেই একরাশ শূন্যতা যেন আছড়ে পড়লো ঋষির ওপর।
নন্দিনী আর রিদমের না থাকাটা যে ওকে এভাবে কষ্ট দেবে আগে ভাবেনি।
নাঃ, সৃষ্টির কথা ভাবতেও এখন ইচ্ছে করছেনা। ওর সমস্ত হৃদয় জুড়ে যে নন্দিনীই থেকে গেছে,ঋষি সেটা ভালভাবেই অনুভব করছে।
সৃষ্টি মোহ, আর নন্দিনী ওর প্রাণ, ওর ভালবাসা----ও পারবেনা নন্দিনীকে ছাড়া বাঁচতে। পুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।
ফিরিয়ে আনতে হবে ওদের ---
----
দরজা খুলতেই নন্দিনী দেখে ঋষি দাঁড়িয়ে। 
ঋষি নন্দিনীকে জড়িয়ে ধরে বললো, 'স্যরি, ভুল করেছি আমি, ফিরে চলো !'
নন্দিনী সমস্ত সত্তা দিয়ে অনুভব করছিল সেই পুরনো ঋষি, যে ওকে ভালবেসেছিল, তবু আস্তে করে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বললো, 'আমার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে ঋষি-----তুমি ফিরে যাও----'

ঈশ্বর বনাম আমি - দূর্বা মিত্র

ঈশ্বর ভদ্রলোকটিকে আমি কখনো দেখিনি | দূর্বা নামক অপদার্থটিকে পৃথিবীর থালায় পরিবেশন করার বিশেষ অভিপ্রায় সেই ভদ্রলোকটির হয়তো ছিল না | 
আমার জন্ম যাতে না হয় - তাই আমার বাবাকে বহুদূরে জঙ্গলে ট্রান্সফার করা হয় - বাবার বাড়ির লোকেরা মায়ের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালায় - সে খবর বাবার কাছে পৌঁছয় না |
একমাত্র ঠাকুরদা ছিলেন অন্য গ্রহের প্রাণী - বুক দিয়ে আগলে রাখতেন মেজো বৌমাকে | স্বামীর সাথে বৌমাটির পার্থিব দূরত্ব কখনোই মনোজগতে ঢুকতে দেন নি |
কাজেই একদিন আমি পৃথিবীতে এসেই গেলাম - মায়ের কোল শূন্য রইলো না |
আমাদের ফ্যামিলি ট্রি খানির এক বিচিত্র বৈশিষ্ট্য আছে | ঠাকুমা ফর্সা তো ঠাকুরদা কালো - মাতামহ ফর্সা তো মাতামহী কালো | মা ফর্সা - বাবা কালো | আর আছে ঠাকুরদার বাবার থেকে পাওয়া বিশেষ শিবনেত্র | 
আমাকে কোলে নিয়েই দেখা গেলো ঠাকুরদা - বাবা - আমি -- গায়ের রং সমান কালো - চোখ একরকম শিবনেত্র | ঠাকুরদা তৎক্ষণাৎ নাম রাখলেন শিবানী | বাবা একটু অবাধ্য হলেন | নিজে এয়ার ফোর্স এ থাকায় কাছে থেকে দেখেছেন প্রথম মহিলা পাইলট ক্যাপ্টেন দূর্বা ব্যানার্জি কে | ঠাকুরদার অনুমতি নিয়ে সরকারি নাম রাখলেন দূর্বা |
ওই বৈশিষ্ট্য আমার জীবনকালেই সমাপ্তি ঘোষণা করলো না | 
যে ভদ্রলোক প্রায় জবরদস্তি আমাকে বিয়ে করলেন - ওনার বাড়ি আর আমার বাড়ি রাজি ছিল না - তিনি ইতালিয়ান চেহারার অধিকারী | ফর্সা - ব্রাউন হেয়ার এন্ড আইস |
আমার বংশধারা - এমন কি ব্লাড গ্রুপ অব্দি সঞ্চালিত হলো আমার একমাত্র সন্তানে |
আমার মতো কালো - শিবনেত্র - ব্লাড গ্রুপ B + | ঠাকুরদার ব্লাড গ্রুপ জানা নেই |
বাবার - আমার - ছেলের - এক ব্লাড গ্রুপ এর অনুরণন | ভট্টাচার্য থেকে মিত্র হওয়াতে কোনো বাধাই ঈশ্বর ভদ্রলোক তৈরী করেন নি | দেখা যাক এরপর কি হয় !

নিহতো অ্যাটমিক ফলাফল - রাহুল গাঙ্গুলী


ঘূর্ণিঝড়ে তাক করে বসে আছো
নির্জলা অভিপ্রায় : বললেই ফোকাস আউট
কোষের মানপত্র জমিয়ে রাখলে
অন্য দারুচিনি-শিকড়।পরিচিত নয় : যদিও
বিষাক্ত লালায় শরীর শুদ্ধতা।নগ্নরুপি (আকরিক) 

বিবর্ণ শূন্য বিয়োগ।চিরে ছিঁড়ে : আরো অগোছালো
ব্যাঙার্ত রম্বসের আকার।তুমুল পেরিস্কোপ
জন্ম দিচ্ছে খনিজ ইথার।অগোচর দিনোমানে
যতটা হত্যার পিছনে : বিলাপ গন্তব্য

মেরুন পালকের জলসাঘর।জলীয় পরিবেশন
যাবতীয় বিপরীত ছুঁলে।পতন নিশ্চিত
ক্লান্ত ঘামের টুপ।অপারেশনের পর টেবিলঘড়ি
টিকটিক্।ছুটন্ত ট্রেন এবং চাঁদের পাথর
অথচো দূরত্ব বাড়ছে।নির্জল পুনরাবৃত্তির সম্পর্ক

ঢেউ থেকেই ভাসমান : শব্দভেদী পরশনুড়ি
জোয়ার ও ভাঁটার অনুরণন।উবু হয়ে রক্তবমি
কয়েকটা কবিতায় মৃত্যুর ছকভাঙা নীল
যুদ্ধবিমান উড়তে শেখে।সমাপ্তি বা উলু
মৃত পাখির ঠোঁট নাম নিয়ে মহাকাশচারী আগেই

পাওয়া - সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়

অভিপ্রায়ের অভিসন্ধিতে
না বলা কিছু কষ্ট
সৃষ্টি করেছিল নতুন আকর


অন্য এক জায়গায়
শূণ্য ওয়াটের এক যাপনপর্ব
পরিবেশন করেছিল অপ্রাপ্তি কে


জন্ম মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে
পাওয়ার দুরত্ব বিস্তর
জীবনের সমাপ্তিতে
অনুরণন ঘটে ওম্ শান্তি

আরোগ্য কথা - নয়নিকা সেন

এই যে শিরীষ কাঠ, জীর্ণ আসবাব
নাকচের অভিপ্রায় আর শূন্য ফুৎকার
.
এই যে জড়িয়ে থাকা ধূম 
শব্দের হরিদ্রাভ অনুরণন 
মেঘেদের আস্কারা ... আতপ সঞ্চরণ 
.
এই যে জল্ভার ... ডাহুক ডাকা রোদ ... জলের সিঞ্চনে জন্মমাস 
এ যে সব উপলখণ্ড 
ছায়া বেঁধে রাখা জীবনের প্রহর পরিবেশন 
.
সীমান্ত শিয়রে এখন ভাসা ভাসা পাঠ
দূরত্ব মেপে চলা সমাপ্তির আজান

বিস্মৃতির ওপারে - কৃষ্ণকলি খাটুয়া

মাটি ভেদ করে যতটা গভীরে গেছে আমার শিকড় , তারও বেশি গভীরতা ছুঁয়ে যাই আমি স্মৃতির অতলে ডুব দিয়ে ...

স্মৃতি রসে পুষ্ট হয়ে আকাশ ছোঁয়ার লোভে মেলে ধরি নিজেকে ; সাজ নিই অতন্দ্র প্রহরীর ..

ক্ষয় ধরা অভিমানী ইঁট পাথরের বাড়িতে একা প্রাণ আমি ..সাথী এক ছায়া মানুষ ;

অন্ধকার ঠেলে প্রদীপ হাতে এগিয়ে আসা ছায়া মানুষ এক ..
এ বাড়ির মা যিনি ; 
যার প্রদীপের আলোয় আজও আলোকিত হয় আমার অন্ধকার গর্ভ গৃহ 

সাক্ষী শুধু আমি - সৌরভ প্রামাণিক

বড় নর্দমার ধার থেকে কুড়িয়ে এনেছিলে
খুব যত্নের সাথে সেদিন গেঁথে দিলে
তোমাদের ভাড়াবাড়ির উঠোনের মধ্যে
ছিল আলো আঁধারি ঠিক ভর সন্ধে।।

আমার আকর্ষে বেঁধেছিলে ভালোবাসার দড়ি
যার শেষ প্রান্ত তোমার দোতলার খড়খড়ি
তোমা
র জন্য এ আঙিনা আমায় মেনে নিল
আমার শাখার প্রথম পুষ্প তোমার জন্য ছিল।।

তোমার প্রেমেপড়া জানিয়েছিলে ফিসফিসিয়ে
সেদিন বুকে উঠেছিল ব্যাথা চিনচিনিয়ে
প্রেমিক নাকি বাড়ি মালিকের ছেলে খোকন
তুমি নীলপেড়ে শাড়ি দ্বাদশ শ্রেণী তখন।।

চুড়ান্ত প্রেমে কেটে গেছে দিন, মাস ও বর্ষ
এগোচ্ছি আমি জানালা ছুঁতে মানছি না অভিকর্ষ
তোমায় ফেলে পণের লোভে বিয়ে করলো খোকন
আমি পড়েছিলাম তোমার কষ্ট ভরা নয়ন।।

দেখলাম তোমার জানালা দিয়ে চেয়ে
গেলে হাত কেটে তুমি মৃত্যুর দিকে ধেয়ে
খোকনের বাবা এই ঘটনায় পড়ালো টাকার চাদর
আমার শাখার প্রতিটি ফুল শুধু তোমার জন্য আদর

তার নাম রূপকথা - শুভশ্রী সাহা

" শহরতলী জুড়ে গলির মোড়ে মোড়ে 
তোমার নিয়েই গল্প হোক"

তুমি এখন আকাশ ছোঁয়া 
তোমার স্বপ্ন চাঁদ
আমার আছে পুরোনো পথ সাবেক গলি
আলসে ঘেরা ছাদ-------

তুমি এখন কথা সাজাও 
রাংতা দেওয়া মোড়ক
আমি সেই থেকে গেলাম নিচু স্বরের
ভিজে আসা চোখ-----

"জানি তোমার ছন্দে অন্ত্যমিল নেই
তোমার উর্ধ্বগামী বালিশ ছেঁড়া স্বপ্ন ধোওয়া
উড়ছে ঊড়ুক"

হারিয়েছে সব কেমন করে
তোমায় ছাড়া জীবন
এক ঘরেতে ই কথা ছিল
দেখব আকাশ-- একসাথে দুজন

"তোমার চোখ মেঘলা হোক 
তোমার কথাই পড়ছে মন
আঙুল ছোঁয়া মুদ্রা দোষ
তোমার কথা খুব ওজন"

ভুলে গেছ পায়ের চিহ্ন ভাঙ্গা স্নানের ঘাটে
ঘাট কিন্তু একা একাই--- ভেজে জলের স্রোতে
মেঘের মত মানুষ ও কখন --ঝরিয়ে ফেলে পালক
বিজ্ঞাপনে দেখব তোমায় সভ্যতার স্মারক-----

"হাজার করতালি তোমায় বলে খালি
তোমায় নিয়েই গল্প হোক"

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...