শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

(১)
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক

(২)
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ।’
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল
অথবা
(৩)
আয়রে ভোলা খেয়াল-খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে
নাইকো মানে নাইকো সুর,
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন সুদূর
মনে পড়ে কি প্রখ্যাত এই ছড়া তিনটির কথা ?
প্রথমটি রবীন্দ্রনাথের , দ্বিতীয়টি ছড়ার জাদুকর যোগীন্দ্রনাথ সরকারের লেখা এবং দ্বিতীয়টি সুকুমার রায়ের ।
বাংলা শিশু সাহিত্যের উৎপত্তি ও ইতিহাস ঘাঁটলে এমন হাজারো মনিমুক্তোর সন্ধান মিলবে । বাংলা ভাষায় শিশুসাহিত্যের গোড়াপত্তন হয় ১৮১৮ সালে, কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটির তরফ থেকে প্রকাশিত নীতিকথা বিষয়ক বইয়ের মাধ্যমে ।
শিশুসাহিত্যের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, স্বর্ণকুমারী দেবী প্রমুখের রচনার মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের বোধোদয় (১৮৫১), কথামালা (১৮৫৬), চরিতাবলী (১৮৫৬), আখ্যানমঞ্জরী (১৮৬৩), বর্ণপরিচয় (১৮৮৫); অক্ষয়কুমারের চারুপাঠ (৩ খন্ড, ১৮৫৫-৫৯); মদনমোহনের শিশুশিক্ষা (৩ ভাগ, ১৮৫০-৫৫) এবং স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত বালক' পত্রিকার উল্লেখ করা যায় ।
তৃতীয় পর্যায় রবীন্দ্রযুগ। রবীন্দ্রপূর্বযুগের শিশুসাহিত্য মুখ্যত জ্ঞানমূলক, উপদেশমূলক ও নীতিকথামূলক; কিন্তু রবীন্দ্রযুগের শিশুসাহিত্য মুখ্যত আনন্দমূলক। সুদীর্ঘ সময়ব্যাপী রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যসাধনায় শিশুরা উপেক্ষিত হয়নি; তাঁর শিশু (১৯০৬) কাব্যগ্রন্থেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে সমকালীন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার, কাজী নজরুল ইসলাম, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের নামও উল্লেখযোগ্য। হেমেন্দ্রপ্রসাদের আষাঢ়ে গল্প (১৯০১), যোগীন্দ্রনাথ সরকারের হাসিরাশি (১৯০২), দক্ষিণারঞ্জনের ঠাকুরমার ঝুলি (১৯০৮), আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ভূত পেতনী (১৩০৯), উপেন্দ্রকিশোরের টুনটুনির বই (১৯১০), সুখলতা রাও-এর গল্পের বই (১৯১৩), সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল (১৯২৩), পাগলা দাশু, অবাক জলপান, নজরুল ইসলামের ঝিঙে ফুল (১৯২৬)
বাংলার শিশুসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে নিজস্ব স্বকীয়তায় ।
উনবিংশ শতাব্দীতে ছাপাখানার প্রবর্তনের পরেই সম্ভবত শিশু সাহিত্যের অবিরত জোয়ারে ভাঁটার টান প্রথম পরিলক্ষিত হয় । মদনমোহন তর্কালঙ্কার মহাশয়ের -- " বারোমাস সাতবার
আসে যায় বার বার " ভোলা যায় কি ?
কিন্তু তারপর ? কোথায় গেল সেইসব শিশু সাহিত্য ? কিই বা হল তাদের ?
খুব স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে অবহেলিত পর্যায়ভুক্ত এখন শিশুসাহিত্য' , মনে করে দেখুন তো , সাম্প্রতিক কালে শিশুদের ( ৬-১০ বছর বয়সী) কিছু লেখা হয়েছে কি তেমন ?
এ মাসেই দেশজুড়ে পালিত হবে ' শিশুদিবস' , অথচ কেউ কি সেভাবে ভাববেন সাহিত্যের আঙিনা জুড়ে কিভাবে ব্যপ্ত করা যায় শিশুমনের নিখাত সরল মনটির ছবি ?
উত্তর টা বেশ নিরাশাজনক , একথা মেনে নিয়েই মুঠো ভরা রোদ্দুর 'এর এবারের সংখ্যায় রইল শিশুমনের খোরাক জোটানোর জন্য কিছু মিষ্টি ছড়া -, সঙ্গে রইল কবিতা , ফিচার ও গল্পের চিরাচরিত মিশেল । আশা রাখি পাঠকদের ভাল লাগবে কিছুটা আউট অফ দ্য বক্স' এই সংখ্যা ।
নিরন্তর ভাল থাকুন সবাই , ... সর্বোপরি , লেখায় থাকুন ।

শুভেচ্ছান্তে 
পিয়ালী বসু


হঠাৎ ছুটি মজায় লুটি -- মানস চক্রবর্তী

আজকে হঠাৎ হ'ল ছুটি 
কিসের ছুটি মা তা জানে,
আমার কেবল হুটোপুটি
বারণ টারন কে আর মানে ॥


উঠোন জুড়ে দাগ কেটেছি
এক্কা দোক্কা খেলতে জানো !
খেলতে খেলতে কৎবেল চাই
সেরা আচার তা কি মানো !!


দুকুরবেলা আঁকবো ছবি
সুজ্জ ওঠা সকাল শীতের ,
হীরেকুচি ঘাসের ডগায়
নানান ফুলের রঙীন ফিতে ॥


বিকেল হ'লে বৌ-বসন্তি
লুকোচুরিও চলতে পারে
সন্ধে হ'লে ঘরে ঢোকা
মা নাহলে বকতে পারে ।।


ফুরিয়ে যাবে হঠাৎ ছুটি 
মনখারাপি আগামী কাল,
জানতে হবে স্কুলে গিয়ে
কোরলো কে কী গতকাল

আমার ছুটি -- দীপঙ্কর বেরা

স্কুল ছুটি দল টুটি
একা একা খেলা
ফেসবুক চ্যাট প্যাট
খুশি মজা র্যা্লা

এর বাড়ি ওর বাড়ি
জানলায় দেখা
এটা খাই ওটা পাই
নাই পড়া লেখা

পড় পড় বলছে না
তাই খুশি রঙ 
ঘোরা ফেরা ইচ্ছেমত
আমি আমি ঢঙ

হঠাৎ এমন পাওয়া
পেয়ে স্কুল ছুটি
আমিও কত কি পারি
সব আমি জুটি। 

ছুটির উড়ান -- ব্রততী পাল

ক্লাস নেই আজ, ইস্কুল ছুটি,
যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি প্রাপ্তি!
বইপত্র আজ থাক না তোলা,
শৃঙ্খলা মানতে মিছেই বলা!

রূপকথার রেশ হাতছানি দেয়,
মুঠোফোনটি বিশ্রাম চায়। 
তেপান্তরের মাঠের খোঁজে,
বিশ্ব ভুলে আজ যাবো মজে। 

মেঘপুঞ্জের ভেলায় ভেসে,
দেবই উড়ান পরীর দেশে। 
ডালিমকুমার কোথায় থাকে?
ব্যঙ্গমা কি খবর রাখে?

যান্ত্রিক এই বাস্তবতা,
ক্লান্ত সরল শিশুসত্তা। 
টিউশন ও ব্যাগের ভারে,
বাঁধা ছকেই জীবন চলে। 

বদ্ধ জীবনে একরাশ প্রাণ,
হঠাৎ মুক্তি স্বর্গসুখ সমান। 
ছুটির উপহার এক মুঠো সুখ,
শিশুমনের কল্পনা মেলুক ডানা। 

সবুজ মাঠে ঘাসের কোলে,
কাটুক মুহূর্ত হেসে খেলে। 
রূপকথা ও প্রকৃতির ছোঁয়ায়,
স্বাধীন দিনটি কাটুক মজায়।

কালসূত্র -- ইথার অতিরঞ্জন

রাত্রি নামে বুকের কষ্টিপাথরে
হাড়ের খুলিতে অাগুনের অনুশীলন
জ্বলন্ত শিখায় ভায়োলিন নিঃশ্বাস
মাংসের ভাঁজে প্রমিথিউস মশাল
অনুচ্চারিত স্পন্দনে কালসূত্র
জৈবিক স্পর্শে দহন মিউটেশন
নবায়নী মুহূর্তের পৌরাণিক যাত্রায়
অাগামী তৃষ্ণার পুনঃপাঠ...
কার্বন পদচিহ্নে সুকীর্তি
ক্রস-দৃষ্টিতে খুলে শব্দের বোতাম
স্বতঃসিদ্ধ কলমেও মৈথুন
নিষেক কালি
লেখনীর অন্তর্বয়ানে
জন্ম হাসে প্রতিফলিত অায়নায়
অাঙুলের ডগায় ঘটে বিবর্তন
ফাঁক-ফোকরে
অনুসন্ধানী বিস্মরণ-মেঘ
ঠিকরে বেরোয় চাঁদ
অালো-বন্দী জ্যোৎস্নায়
তুমি ভাস্বর...

মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬

অনন্ত নৈঃশব্দ্যের কাল -- বাগু বিশ্বাস

চারিদিকে শীতল নির্জনতা 
পৃথিবীর গভীর গহ্বরের মত নিঃসাড় নিস্তব্ধতা
এ এক অনন্ত নৈঃশব্দ্যের কাল
বোধহীন, বাকহীন মানুষ ছুটে চলে আলো পেরিয়ে সুড়ঙ্গের মত অন্ধকারে...সুস্থতা উপেক্ষা করে শোকাবহ অজ্ঞানে

ঘুমের মত নৈঃশব্দ্যে জেগে আছে বিস্ময় পৃথিবী
ধ্যানহীন সনির্বন্ধ অন্ধকার জীবন চলে ঐন্দ্রজালিক ছকে
শব্দহীন, প্রেমহীন সঙ্গমে বেড়ে চলে বেওয়ারিশ শরিকানা
শুদ্ধতম কোনো পরিতৃপ্তি নেই, অবৈধ উপার্জন ছাড়া কোনো সুখ নেই, জীবনের কোনো স্পন্দন নেই
ঘড়ির কাঁটা যেন স্তব্ধতার প্রতীক

শিশির হয়ে ঝরে পড়ে জোৎস্নার কান্না
কোনো ঢেউ নেই, কলতান নেই...নদীবুকে পূর্ণিমার ছায়া, যেন এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পৃথিবীর কলঙ্কিত ক্ষত

পূর্ণিমার এমন প্রচ্ছন্ন বিষাদেও ক্ষতপুষা এক বাউল কবি নিঃসঙ্গ মগ্নতায় বসে থাকে নদী তীরে
নৈঃশব্দ্যের ভাষা শিখে খুঁজে নেয় আত্মার নিজস্ব উদ্ধার

নৈঃশব্দ্য -- লুতফুল হোসেন

চারপাশে নানান রকম গাড়ী। কখনো চলছে, কখনো থেমে থাকছে। মিছিলের মতো হাত ধরাধরি করা ভীড়। হরেক তাদের নাম, আকার, আকৃতি, রঙ, উপযোগ। তেমনি বিচিত্র তাদের চটা কিংবা চকচকা শরীর। আর শব্দশৈলী তো বলিহারি। ভ্যাঁ ভোঁ ঘ্যাচঙ ঘোঁৎ গুম-গুম হুম-হুম ঘরর গররর ঘ্যাঁচ ক্যাঁচ ক্যাঁচ; প্যাঁ পোঁ পিইই পিইইইই প্যাঁ প্যাঁ পিপ পিপ বিপ বিপ বোঁওও পিঁয়াও ওঁ ওঁ উঁ উঁ ...
মনে হচ্ছে কোনো আনন্দ মিছিল নেমেছে বুঝি পথে। কখনো সখনো এর গায়ে ও ঠুকে দিচ্ছে ওজর-আপত্তি-বিহীন হুমড়ি খাওয়া পতন। কখনো ঘষটে দিচ্ছে আরেকজনার মাখন মাখা শরীরজোড়া যতন। একসঙ্গে শহর জুড়ে মেতেছে সাড়ে তিন লক্ষ যানবাহন। বিরতিহীন জ্বালানী পোড়ানো পীচঢালা পথময় সন্তরণ।
যতোক্ষণ থেমে থাকে হৈ হুল্লোড় কিছুটা কম বটে তাদের। তখন আবার যোগ হয় কিছু দাদরা ঝুমুরের মতোন প্যানি ঠাণ্ডা প্যানি, আলুর চিপস, বই নিলে দুইশো-তিনশো, বেলীইই ফুল, দোলনচাঁপা এই দোলনচাঁপা। জায়গাটা যদি হয় ট্রাফিক সিগন্যালের কাছাকাছি কোথাও।
এর মাঝেই কোনো বাহনের ভেতর থেকে রেডিও টুডের খবর, কোথাও এবিসি রেডিওর কথামালা, গানের সুরে এফএম এইটি নাইন, রেডিও ফুর্তির ড্রামবিট কিংবা কোথাও জর্জ হ্যারিসন কোথাও বাপ্পা কিংবা জেমস বা রেকর্ড সংখ্যক গানের শিল্পী মমতাজ। এদের সবারই মুডটা এমন যেনো ঠিক পিকনিকে রওনা হয়েছেন বা প্লেজার লং ড্রাইভ। বাকীদের চেহারা কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীর মতোন বক্ররেখার প্লাবন।
এর ভেতরই দু ঘন্টায় এক কুড়ি কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবার যাত্রীরা কেউ ঘুমায়, কেউ ঝিমায়, কেউ হয়তো কিছু একটা পড়বার চেষ্টায় মরিয়া হয়। তাদের সামনে মেলে ধরা কবিতার লাইনে শঙ্খচিলের ডানায় ঢুকে পড়ে পাশের হিউম্যান হলারের গায়ে এক্রোব্যাটের মতোন ঝুলে থাকা হেল্পারের তারস্বরে চিৎকার, চাইপা বহেন - ফার্মগেট নামলে রেডী থাহেন। হয়তো ছোটগল্পের ভেতর মনসুরার মেয়েটি যখন মায়ের একাকী জীবনের ডায়ালেকটিক্সে নিজের নতুন প্রেমের সম্ভাব্য পরিণতির ছবি আঁকছে তখন পাশের সিএনজি স্কুটারের যাত্রীটি তীব্র চিৎকার করে ওঠে। ছিনতাইকারীর ছুরিতে হুড কেটে তার মোবাইল আর ব্যাগ নিয়ে গেছে কারা।
কেউ একজন ভাবছিল অফিসের কাজে দেরীর জবাব কি দেবে আনকোরা, কেউ ঘরে অপেক্ষমান সন্তান বা বাবা মা'কে ঘিরে ভাবছে জটিল কিছু, কেউ স্বপ্ন বুনছে সম্ভাবনাময় আগামীর কোনো এক দিনের। ট্রাফিক সিগন্যাল ছেড়ে ক্ষণিকের জন্য বেগবান শব্দ মিছিলে জোরদার ঐকতান ঘিরে ছুটতেই বিকট শব্দে একাধিক বাহন বুঝি হুমড়ি খেলো একসঙ্গে। সাথে উঠে এলো তীব্র আর্তনাদ। শব্দটা একটা আস্ত হিমালয়ের মতোন রাজপথের গোটা সীমানা জুড়ে সমস্ত মানুষ ও বাহনের মাঝে আছড়ে পড়েই থমকে গেল যেনো।
অকস্মাৎ সব নিস্তব্ধ শুনশান। দীর্ঘক্ষণ শব্দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পিনপতন নিরবতায় মিশে থাকলো সবকিছু সেলুলয়েডে ফ্রিজ শটের মতো। ... অনেক পরে বাহন সচল হয়ে একে একে নীরবে পার হয়ে যেতে থাকলো সেই ফ্রিজশটের ফ্রেম থেকে ... তার সীমান্তে পড়ে আছে মুখ থুবড়ে একজন পুরুষ, একজন নারী ও একটি শিশু তাদের ঘিরে ফ্রেমটা তখনো বাঁধানো শেষ হয়নি ... তাজা রক্ত গড়াচ্ছে তাদের ঘিরে - যেনো কোন অদৃশ্য তুলিতে কেউ খুব দ্রুত শেষ করবে এখুনি, এই এখুনি ... ওখানে স্থির থাকবে তিনটে মানুষ তাদের স্বপ্ন আর পৃথিবীর রঙ ... লাল, ভীষণ লাল, রক্ত জমাট বাঁধলে তা আরো গাঢ় হবে ... কটকট করে তাকিয়ে থাকবে ... কেউ কিচ্ছুটি বলবে না ... শুধু তাকিয়ে থাকবে মাছের মতোন শূন্য দৃষ্টিতে ...
ফ্রিজশট জুড়ে শুধু পড়ে থাকবে অপার নৈশব্দ।

শব্দহীন দীর্ঘশ্বাস ---- জ্যোৎস্না রহমান মন

ধাক্কা দিয়ে অচেনা এক ট্রেনের কামরায়
তুলে দেওয়া জীবনের অজানা গন্তব্য
ছেঁড়া স্বপ্ন সেলাই এ ব্যস্ত
মানিয়ে নেওয়া ক্ষণের সুতো ছিঁড়ে

একাকিত্ব চিবিয়ে ঢোক গিলতে থাকা মন
কর্তব্যের নিতীকথা আবৃত্তি ক'রে 
সুসজ্জিত জীবন মঞ্চে দাঁড়িয়ে 

রৌদ্রগুঁড়ো গা থেকে ঝেড়ে ব্যস্ত দিন
প্রদীপের আলোয় পা ভিজিয়ে
পৌঁছে যায় আঁধারের কোলাহলে 
নৈঃশব্দ্যের চাদর গায়ে 

বুকের ঘোলাটে কিছু ব্যাথা নির্জনতায় থিতিয়ে 
শেষ রাতের মেঝেয় পড়ে থাকে
শব্দহীন দীর্ঘশ্বাসের গুঁড়ো
আর স্বচ্ছ হাসি ঢেউ খেলে
সূর্যের পদধ্বনিতে

শিকারী -- সুশান্ত হালদার

মরার আগে মা মাটির হাঁড়িটি
হাতে দিয়ে বলেছিল 'দেখে রাখিস'
শত হলেও মায়ের কথা
আমি আবার মা ভক্ত প্রাণী
মায়ের কথা কী ফেলতে পারি?


তাই যক্ষের ধনের মত আগলে রাখি
মাও নাকি এরকম করেই কাটিয়েছে সারাজীবন
সব সময় শত্রুর ভয়েই গুটিয়ে থাকতো
আর বারবার পশ্চিম কোণে তাকাতো ;
জিজ্ঞেস করলেই বলতো- " বাছারে
এখনো শুকোয়নি থকথকে ঘা,
দেখতে পাস না ভেতরটা একেবারে পচাগলা
ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে নয় মাস ধরে
দেখ, এখনো রক্ত পুঁজের ছোপছোপ দাগ উঠোনে
নরপশুরা গিলে খেয়েছে তোর হাজারো বোনকে"


"বাহান্ন দেখিনি, একাত্তর দেখিনি
দেখেছি নষ্ট মানুষের ছড়াছড়ি
মানবতা আর মনুষত্ব একেবারে বিলীন জানি
তবুও ওরা করে সত্যের নাকি জয়ধ্বনি "?


এ মিথ্যা প্রহসনেই বেড়ে উঠেছি
তাইতো একই আকাশের নিচে থেকেও
বলতে পারি না ' এটাই আমার জন্মভূমি '
সাম্প্রদায়িকতার ধোয়া তুলে
করছে ওরা কত কী,
জমি জেরাতের দলিল দেখে
লোভাতুর জিহ্বা চাটে সুযোগ পেলেই,
এ যেন হিংস্র হায়েনা, শিকার নিয়ে বসে আছে ;
দেখেছিল যা মা সেই একাত্তরে


অমূল্যরা এখনো থাকে খোলা আকাশের নিচে
এ যে পূর্বপুরুষের ভিটে,
উচ্ছেদ করবে ওদের ধর্মের দোহাই দিয়ে
শুধু জাতিভেদে সৃষ্টিও আজ পড়েছে বিপাকে!
জীবন বাঁচাবে
না কি অমূল্য মাটির হাঁড়ি রক্ষা করবে?
এ প্রশ্ন তোমাদের কাছে আজ আমারও

কাঁচ বালি মাটি মৃত্যু -- সৌভিক সেন

আস্ত এক জৈব শহরকে আপাতত বুকমার্ক
দুটো দশের লাস্ট লোকাল, আমি ফিরছি
জানালার বুকে মুখ রেখে দেখি…
ডালিং চাঁদ কথা রেখেছে
ধানখেতের ক্লিভেজ থেকে বেলি বাটন বেয়ে
গড়িয়ে যাচ্ছে শূন্যতা,তলায় গুচ্ছমূলে…
ঘুমিয়ে পড়েছে আমার গ্রাম
আমার আনস্যাটিসফায়েড বিধবা মা
আজও মৌনতার সঙ্গে যৌনতা করে চলেছে
প্রিমিয়ারে কেন এলাম না…
জানতে চাস না মা
বরং লাস্ট সিনে মাদুর বিছিয়ে দে
আমি তোর কোলে মাথা রাখি

বিশেষ দিবস হ্যালোউইন -- সিলভিয়া ঘোষ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আঁৎকে উঠলেন। হোয়াইট হাউজের বাইরে দেখেন চারদিকে ভূতুড়ে পরিবেশ। বিশাল বিশাল দৈত্য, কুমিরের প্রতিকৃতিতে হোয়াইট হাউজের আঙিনা ছেয়ে গেছে। হোয়াইট হাউজে হঠাৎ ভূত কেন-সবার মনে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। অক্টোবরের শেষদিনে ইউরোপ আমেরিকায় হ্যালোইন পালন করা হয়। যত ভূত-প্রেত আছে, সবাই নাকি এই রাতে লোকালয়ে চলে আসে। আর সেই সব ভূত-প্রেতদের খুশি করতে না পারলে বিপদ। আর সেজন্য এই রাতটিতে পালন করা হয় হ্যালোইন উৎসব।
কোথা থেকে এই হ্যালোইনের উদ্ভব:
---'-----------------------------------
যদি আমরা প্রাচীন সভ্যতাগুলির দিকে ভালো করে নজর দিয়ে থাকি তবে দেখতে পাবো-- পৃথিবীর সৃষ্টির আদিতে যেমন সূর্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য ঠিক তেমন ই তার প্রভাব পড়েছে প্রাচীন ধর্মের উপর এমন কি দিনক্ষণ, তারিখ,ক্যালেন্ডার সব তৈরি হতো সূর্য কে কেন্দ্র করেই।তাই এই সময় আমাদের যেমন নতুন ধানের চাষ হয় ঠিক তেমনই পৃথিবীর বিভন্ন প্রান্তে এই সময় চলে নতুন শস্যকে কেন্দ্র করে তার বন্দনা এবং প্রাচীন দিন পঞ্জিকা অনুযায়ী ৩১ শে অক্টোবর বছরের শেষ দিন ধরা হয়ে থাকতো বলে একটা দিনকে সকল বিপদ সকল মৃত্যু ভয়ের থেকে দূরে রাখতে চাইতো বলে এই উৎসবের সূচনা।প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়,শস্যের দেবীর মতোই,মাতৃদেবীর পূজোর একটি প্রবল ধারার প্রমাণ রয়েছে , যেখানে দেবী মাতা শক্তি ,সুরক্ষা ,রক্ত ও বিজয়---এসবের প্রতীক।ইউরোপের জিপসিরা এই মাতৃশক্তিকে মৃত্যুর দেবী হিসাবে পূজা করে এসেছে,ঠিক যেমন আমরা শ্মশান কালীরপূজা করি।প্রাচীন ফিনল্যান্ডেও 'কালমা' নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ দেবী ছিলেন ,তিনিও সমাধিস্থলে ঘুরে বেড়াতেন এবং মৃতদেহ ভক্ষণ করতেন।রোমানরাও ধরিত্রী মাতার আরাধনা করতেন এবং তার রঙ ও কালো।আমাদের মহাভারতেও এক কৃষ্ণ বর্ণ দেবীর কথা বলা হয়েছে যাকে শবর ,পুলিন্দা এবং বর্বর'রা তাঁর পূজা করত ,সেই পূজায় রক্ত অর্পণের প্রথা ছিল।সুতরাং এইটা বলা যেতেই পারে আমাদের ভূত চতুর্দশী আর হ্যালোইন হয়তো এই এক কারণেই সৃষ্টি।ভাগ্যক্রমে এইবার দুই তিথির সমন্বয় ঘটেছে।
বর্তমানে হ্যালোইন উৎসবের গুরুত্ব
:-----------------------------------
প্রতি বছর ৩১ শে অক্টোবর Halloween উৎসব পালিত হয়। গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারলান্দে এই উৎসব প্রাচীন উৎসব হিসাবে পালন করা শুরু হয়েছিল যা প্রধাণতঃ ব্রিটিশ, আইরিশ, স্কটিশ জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু জনপ্রিয়তার কারণে তা উঃ আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপে ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ইংরাজি মাতৃভাষার সব প্রদেশের/জাতির মধ্যে এই উৎসব পালিত হয়। মৃত পূর্বপুরুষের আত্মার সঙ্গে বর্তমানে জীবিতদের যোগাযোগের দিন এবং ফলস্বরূপ অলৌকিক কিছু ঘটনা ঘটবে এই দিনে, এমন একটা বিশ্বাস থেকে এই উৎসবের সূচনা হয়। বর্তমানে বিশেষ Halloween পোশাক, ভূতের সিনেমা দেখা, ভুতুড়ে বাড়িতে যাওয়া এবং বিভিন্ন অপ্রাকৃতিক ব্যাপারের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে আনন্দ করাটাই মূল উদ্দেশ্য। শিশু, কিশোরেরা পোশাক পরে প্রতিবেশীদের দরজায় দরজায় যায় এবং মিষ্টি, চকোলেট, অন্যান্য উপহার এবং টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করে। কোন কোন পরিবারে পার্টি হয়।
হ্যালোইন পালন নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় মাতামাতির শেষ নেই। রাতটি উদযাপনে সেখানে প্রস্তুতি চলে মাসজুড়ে।তারপর হ্যালোইনের রাত নামার সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় উদযাপন। দিনের আলো নিভে যাওয়ার সাথে সাথেই শিশুরা দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ে। সবার গায়ে থাকে রাজ্যের অদ্ভূতুড়ে কস্টিউম। আর হাতে থাকে টর্চ। অনেকে আবার বাড়ির উঠোনকে ভৌতিক বানিয়ে ফেলে। কেউ মাকড়সার জাল বানিয়ে তাতে কঙ্কাল টাঙিয়ে দেয়। মিষ্টি কুমড়া দিয়ে ভূত বানানো তো খুবই জনপ্রিয়। বড় বড় মিষ্টি কুমড়ার ভেতরটা ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। তারপর কুমড়ার খোলের গায়ে বানানো হয় চোখ-মুখ। ভেতরে জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাতি।
এখন ইউরোপ আমেরিকা ছাড়িয়ে জাপান,অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এমনকি বাংলাদেশেও এই উৎসব উদযাপন করা হয়। ইউনিসেফ ও উৎসবটি উদযাপন করে। তাদের সাথে মুক্ত শিশুদের অনেকেই এদিন ভূত সেজে ট্রিক আর ট্রিট খেলায় ছলে সংগ্রহ করে তহবিল। আর সে তহিবল ব্যয় হয় শিশুদের জন্য। হ্যালোইন উৎসব শুধু ভূত-প্রেত নয়, এখন কল্যাণকর কাজে উদযাপিত হচ্ছে। উৎসবে শিশুরা পায় নির্মল আনন্দ।

বিষন্নতার প্রোটোকল -- পারমিতা চক্রবর্ত্তী

বিষন্নতার উপান্তে বসে আছি
নিশিদিন
মাটিতে বে- আব্রু ইচ্ছাগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক
সময়ের আলিঙ্গনে চাহিদার সমবিভাজনে
হাত বাড়ায়
:
পুরানো স্পর্শের গন্ধ কি কোথাও আছে !
সম্ভ্রমের মূল কথা খোঁড়া বাসা শূন্য
করে পলাতক
*
আকাশ মনে পড়ে বক্রতার সূক্ষকোণে
হাত রাখার দিনটি
:
কাল যে আমার ভালোবাসার
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

ছন্দ-মিলান্তি -- পিয়ালী পাল

“ঠুনকো তোমার কথার দেশ
আধা জল হাওয়া-মিঠাই মিশ”
এটুকু লিখে তিন্নি হোয়াট্স্যাপ চেক করল। নাঃ বাবিন এখনো রিপ্লাই দেয় নি। শুধু গ্রুপ মেসেজ। খাতা মোবাইল ফেলে রেখে তিন্নি ছুটলো মা-এর কাছে। ছন্দ মিলছে না। ছোটোবেলায় প্রত্যেক ফাইনাল পরীক্ষার আগে একটা না একটা বই হারাতো, আর মা যেই খুঁজতে আসতো ওমনি হারানো ধাপ্পা মেরে হাজির। ঠিক সেভাবেই মা কি পারবে হারানো ছন্দ খুঁজে আনতে?
চিলেকোঠায় গিয়ে ফের লেখে......
“পাইনের বনে বিকেল সূর্যে
তোমার উষ্ণতা মেশে হেডফোন জুড়ে”

বেসামাল -- অনিরুদ্ধ দাস

শতবর্ষের নয়,
একটা মুহুর্তের স্পার্ক -এর জন্য
শত শত বার মরতে পারি 
ষোলো আনার আস্ নেই,
এক আনাই রাখতে চায়
পাথুরে চোখের লকারে ;
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে নয়,
তোর খেয়ালি পদ ছাপে
দিতে চাই পলাশ,
ওই ঝিনুক যোনির বোধ---
আধ খাওয়া আপেলের --
নাভিমূলে.

দিকভ্রান্ত -- কুন্তলা চক্রবর্তী

এ এক অদ্ভুত সময়
বাতাসে বিষের ধোঁয়া,
মাটি বিষময়
এ এক অদ্ভুত সময়

বিষে নীল দেহগুলি চলে
নানা আঙ্গিকে কথা বলে
বিষহরা এক নদী
কথায় সৃষ্টি হত যদি
শুদ্ধ হওয়া যেত সেই জলে

যেন পথ চলা বন্ধ চোখে
শুরুতেই ঘুরে ঘুরে
বারে বারে আসি ফিরে
ঘানিগাছে বাঁধা হয়ে থেকে।
খোলাচোখে আলো আজ ফিকে
স্বপ্ন কিন্তু আজও কড়া নাড়ে।
বিষমুক্ত পৃথিবীতে শ্বাস নেবে ভবিষ্যৎ,
এমন আশাতে বুক ভরে
যতই আঁধার হোক,
সময় বদলাবেই
মানুষ অনেক কিছু পারে

বিষাদময়তা -- সুব্রত ব্যানার্জ্জী

আমার নিঃস্তব্ধ রাত্রি
শ্মশানের অপার শান্তির
প্রগাঢ় ইঙ্গিতবাহী
মহাশূন্যের মত
ভালোবাসার অপমৃত্যু
জলন্ত কাঠকয়লার ছেঁকা
খাওয়া দগদগে ঘা র মত
বিষিয়ে যাওয়া যন্ত্রনা
প্রতি রাতে আমার ভালবাসাকে
খুন করি আমি গলা টিপে
নিজের বুকে জমা থাকে শুধু
বিষাক্ত নিঃশ্বাস
পথের দিশা পাই না
আছে শুধু একরাশ দ্বিধা
আসলে আমার কম্পাস
আমার মত অন্তসার শূন্য
আমার আমি কে খুঁজি
পুন্জীভূত যন্ত্রনার মেঘে
ভাগাড়ে যেমন শকুন খোঁজে
খাবার মরা মাংসের স্তূপে

সীমার মাঝে অসীম তুমি -- শুভা গাঙ্গুলী

কোন এক আদিম প্রভাতে,
প্রথম আলোকে জেগে উঠে,
তোমায় নয়ন ভরে দেখে
স্নিগ্ধ হল আমার অন্তর।

তুমি আছো তাই আছে
বিশ্বচরাচর। 
"চোখের আলোয় দেখেছিলেম,
চোখের বাহিরে"
তোমার সংগ লাভ করেছি
আমারই অন্তরে।
আজ তোমারে প্রণাম করি
তুমি দয়াময়
মার্জনা করেছো তুমি
অসীম ক্ষমায়
তোমারি পূজন করি
তোমারি কথায়,

"এই লভিনু সংগ তব সুন্দর হে সুন্দর
পূন্য হল অঙ্গ মম ধন্য হল অন্তর সুন্দর হে সুন্দর
আলকে মোর চক্ষুদুটি মুগ্ধ হয়ে উঠলো ফুটি
হৃদগগনে পবন হল সৌরভেতে মন্থর.....
সুন্দর হে সুন্দর "

জ্যোৎস্নার পদস্খলন ও বিপ্লবমুখী আদর --- রিক্তা চক্রবর্তী

ভিজছি -- ভিজে যাচ্ছি 
আলোর উৎস কিম্বা মেঘের দায় বাঁচিয়ে 
-
জল বেড়েছে শহর জুড়ে 
অভিসারের সন্ধ্যা ঘনাচ্ছে ---মুহুর্ত নির্বাক করে
-
পিছিয়ে যাচ্ছি অনেকটা পথ 
আলোর হদিশ আবছায়াতে-- জমাটবদ্ধ ঘর ভাঙছে 
-
আসলে একটা সব ভেজানো বৃষ্টিপাত না হলে
স্মৃতিভারে আক্রান্ত সময়--- ফিরে আসে না কোলাজে 
-
একদিন তোমায় ভালবাসার নিয়ন আলোয় এনে দাঁড় করাবো 
বুঝবে সেদিন --- ভালবেসে অসাড় হওয়ার জ্বালা
-
শেষ হোক সব বিভেদ বিচ্যুতি -- শেষ হোক সব লোভ 
শরীর জুড়ে স্পর্শ করুক বিপ্লবমুখী আদর
-
বাকিটা উপসংহার 
-
থাক পড়ে থাক শব্দ অন্ধকারে
শোধ না হলে প্রেমের যত ঋণ -- না হয় বোল ছন্দ মালার সাজে
:
দূরতর কোনো বাড়ির রেডিওয় তখন ......
:
" এই লভিনু সং তব সুন্দর হে সুন্দর 
পুণ্য হল অঙ্গ মম ধন্য হল অন্তর সুন্দর হে সুন্দর
আলোকে মোর চক্ষুদুটি মুগ্ধ হয়ে উঠলো ফুটি 
হৃদগগনে পবন হল সৌরভেতে মন্থর ... সুন্দর হে সুন্দর " 

বিবর্ণ সূচক -- শঙ্খসাথি পাল

শীতার্ত বিষণ্ণ বিবর্ণ দিন,অপরিসীম 
দৈন্যতা, সমাপ্তির নিশ্চিত সূচক ;
ভয় পাওয়া জীর্ণ ইচ্ছারা পিছু হঠে, রোদ খোঁজে.. 
দূর মাঠে পাতা ঝরা ন্যাড়া গাছ, একা -
প্রামাণ্য সাক্ষ্য দিন বদলের,
আসন্ন রুক্ষতা ;সময়ের সাথে শ্রান্ত জীবন,
অস্তাচলের ডুবি ডুবি গোধূলিকে ভয় পায়..
রমণক্লান্ত যৌবনের অ্যালবামে হাত বুলিয়ে উষ্ণতা চায়.

MORNINGS -- Durba Mitra

Through out the nights
Seeking your five senses taste touch smell
Mingling with my five senses
Making me forget time space place identity
Bringing my mornings bright vibrant worthy

অপবিত্র -- সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

অয়ন অন্দরমহলে প্রবেশ করিয়া দেখিলো কুন্তলা বস্ত্রাঞ্চলে মুখ ঢাকিয়া ফুঁপাইয়া ফুঁপাইয়া ক্রন্দন করিতেছে । অয়ন ব্যথিত হৃদয়ে তাহার সন্নিকটে যাইতে গিয়াও নিবৃত হইলো এই কথা ভাবিয়া যে, কুন্তলা তাহাকে ভালবাসে না । দূর হইতেই জানিতে চাহিলো – ‘তুমি কাঁদিতেছো কেন কুন্তলা ?’

কুন্তলা ক্রন্দনরত অবস্থাতেই জবাব দিলো – ‘চক্ষু-কর্ণ থাকাতেও যখন বুঝিতে পারো নাই, তোমার না জানিলেও চলিবে ।’
- ‘তুমি কি আমার নিকট হইতে কদাচ দুর্ব্যবহার পাইয়াছো ?’
- ‘দুর্ব্যবহার ? কদাপি নহে ।’ কুন্তলা জবাব দিয়াই উচ্চস্বরে কাঁদিতে লাগিলো ।
অয়ন দ্রুত কুন্তলার নিকটে যাইয়া তাহার অনিন্দসুন্দর মুখখানি করতলে ধারণ করিলো । কুন্তলার রক্তিম অধরযুগল দেখিয়া তাহার চিত্ত বিগলিত হইলো । রক্তিম অধরে চুম্বন আঁকিয়া দিবার প্রবল বাসনায় অধীর হইয়া উঠিয়া নিজেকে সংযত রাখিতে না পারিয়া চুম্বনে উদ্যত হইতে কুন্তলা অদূরে সরিয়া গিয়া তাহার দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া কহিলো – ‘আমাকে ছুঁইয়ো না । আমি অপবিত্র । আমাকে মরিতে হইবে ।’
- ‘অপবিত্র ! মরিতে চাও ? কেন ?’
- ‘এই ঘৃণ্য জীবন আর সহ্য করিতে পারিতেছি না ।’
- ‘কে তোমার জীবন ঘৃণ্য করিয়াছে ?’
- ‘তুমি । বিবাহের পর ছয়মাসকাল অতিবাহিত হইয়াছে । এই ছয়মাসকালে বারেকের তরেও আমাকে তোমার বক্ষলগ্ন করো নাই । ঘৃণাভরে দূরে সরাইয়া রাখিয়াছো ।’
- ‘আমি ? এতকাল জানিতাম তুমিই আমাকে ঘৃণা করো বলিয়া দূরে দূরে সরিয়া থাকো ।’
- ‘আমি –’, কুন্তলার সুন্দর মুখখানি অসহনীয় বেদনায় নীলবর্ণ ধারণ করিলো। সে অয়নের বক্ষে মুখ লুকাইয়া ফুঁপাইয়া ফুঁপাইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বললো – ‘আমি...নিজের জীবনেরও অধীক তোমাকে...’। কুন্তলা আর বলিতে না পারিয়া বাক্‌রুদ্ধ হইলো। 

আকাঙ্ক্ষারা ---পলাশকান্তি বিশ্বাস

আকাঙ্ক্ষারা চাইতে জানে শুধু
জপমান মনে!
ভাষায় উদোম হতে লজ্জা তার
ভারি
ফলত যা হবার তা---
ধূ ধূ
প্রায়োপবেশনে
অস্থিমজ্জাসার
একদিন বেঠিকানা
পাড়ি

আলোকবিন্দুর লক্ষ্যে এক অনন্তযাত্রা -- রীনা রায়

একটা ধুলো ধুলো অন্ধকার পথ
পেরিয়ে 
হেঁটে যাচ্ছি যেন বহুযুগ ধরে
মহাকালের পথে


পৃথিবীর শেষ সীমানায় অপেক্ষারত সেই নারী
হাতে তার এক আশ্চর্য উজ্জ্বল আলোকবিন্দু
ছোট্ট সে প্রদীপের আলোই লক্ষ্যবিন্দু আজ
আমার যাবতীয় ক্রোধ, কামনা রিরংসা
সব বিলীন করে
হেঁটে যাচ্ছি আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...