চারপাশে নানান রকম গাড়ী। কখনো চলছে, কখনো থেমে থাকছে। মিছিলের মতো হাত ধরাধরি করা ভীড়। হরেক তাদের নাম, আকার, আকৃতি, রঙ, উপযোগ। তেমনি বিচিত্র তাদের চটা কিংবা চকচকা শরীর। আর শব্দশৈলী তো বলিহারি। ভ্যাঁ ভোঁ ঘ্যাচঙ ঘোঁৎ গুম-গুম হুম-হুম ঘরর গররর ঘ্যাঁচ ক্যাঁচ ক্যাঁচ; প্যাঁ পোঁ পিইই পিইইইই প্যাঁ প্যাঁ পিপ পিপ বিপ বিপ বোঁওও পিঁয়াও ওঁ ওঁ উঁ উঁ ...
মনে হচ্ছে কোনো আনন্দ মিছিল নেমেছে বুঝি পথে। কখনো সখনো এর গায়ে ও ঠুকে দিচ্ছে ওজর-আপত্তি-বিহীন হুমড়ি খাওয়া পতন। কখনো ঘষটে দিচ্ছে আরেকজনার মাখন মাখা শরীরজোড়া যতন। একসঙ্গে শহর জুড়ে মেতেছে সাড়ে তিন লক্ষ যানবাহন। বিরতিহীন জ্বালানী পোড়ানো পীচঢালা পথময় সন্তরণ।
যতোক্ষণ থেমে থাকে হৈ হুল্লোড় কিছুটা কম বটে তাদের। তখন আবার যোগ হয় কিছু দাদরা ঝুমুরের মতোন প্যানি ঠাণ্ডা প্যানি, আলুর চিপস, বই নিলে দুইশো-তিনশো, বেলীইই ফুল, দোলনচাঁপা এই দোলনচাঁপা। জায়গাটা যদি হয় ট্রাফিক সিগন্যালের কাছাকাছি কোথাও।
এর মাঝেই কোনো বাহনের ভেতর থেকে রেডিও টুডের খবর, কোথাও এবিসি রেডিওর কথামালা, গানের সুরে এফএম এইটি নাইন, রেডিও ফুর্তির ড্রামবিট কিংবা কোথাও জর্জ হ্যারিসন কোথাও বাপ্পা কিংবা জেমস বা রেকর্ড সংখ্যক গানের শিল্পী মমতাজ। এদের সবারই মুডটা এমন যেনো ঠিক পিকনিকে রওনা হয়েছেন বা প্লেজার লং ড্রাইভ। বাকীদের চেহারা কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীর মতোন বক্ররেখার প্লাবন।
এর ভেতরই দু ঘন্টায় এক কুড়ি কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবার যাত্রীরা কেউ ঘুমায়, কেউ ঝিমায়, কেউ হয়তো কিছু একটা পড়বার চেষ্টায় মরিয়া হয়। তাদের সামনে মেলে ধরা কবিতার লাইনে শঙ্খচিলের ডানায় ঢুকে পড়ে পাশের হিউম্যান হলারের গায়ে এক্রোব্যাটের মতোন ঝুলে থাকা হেল্পারের তারস্বরে চিৎকার, চাইপা বহেন - ফার্মগেট নামলে রেডী থাহেন। হয়তো ছোটগল্পের ভেতর মনসুরার মেয়েটি যখন মায়ের একাকী জীবনের ডায়ালেকটিক্সে নিজের নতুন প্রেমের সম্ভাব্য পরিণতির ছবি আঁকছে তখন পাশের সিএনজি স্কুটারের যাত্রীটি তীব্র চিৎকার করে ওঠে। ছিনতাইকারীর ছুরিতে হুড কেটে তার মোবাইল আর ব্যাগ নিয়ে গেছে কারা।
কেউ একজন ভাবছিল অফিসের কাজে দেরীর জবাব কি দেবে আনকোরা, কেউ ঘরে অপেক্ষমান সন্তান বা বাবা মা'কে ঘিরে ভাবছে জটিল কিছু, কেউ স্বপ্ন বুনছে সম্ভাবনাময় আগামীর কোনো এক দিনের। ট্রাফিক সিগন্যাল ছেড়ে ক্ষণিকের জন্য বেগবান শব্দ মিছিলে জোরদার ঐকতান ঘিরে ছুটতেই বিকট শব্দে একাধিক বাহন বুঝি হুমড়ি খেলো একসঙ্গে। সাথে উঠে এলো তীব্র আর্তনাদ। শব্দটা একটা আস্ত হিমালয়ের মতোন রাজপথের গোটা সীমানা জুড়ে সমস্ত মানুষ ও বাহনের মাঝে আছড়ে পড়েই থমকে গেল যেনো।
অকস্মাৎ সব নিস্তব্ধ শুনশান। দীর্ঘক্ষণ শব্দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পিনপতন নিরবতায় মিশে থাকলো সবকিছু সেলুলয়েডে ফ্রিজ শটের মতো। ... অনেক পরে বাহন সচল হয়ে একে একে নীরবে পার হয়ে যেতে থাকলো সেই ফ্রিজশটের ফ্রেম থেকে ... তার সীমান্তে পড়ে আছে মুখ থুবড়ে একজন পুরুষ, একজন নারী ও একটি শিশু তাদের ঘিরে ফ্রেমটা তখনো বাঁধানো শেষ হয়নি ... তাজা রক্ত গড়াচ্ছে তাদের ঘিরে - যেনো কোন অদৃশ্য তুলিতে কেউ খুব দ্রুত শেষ করবে এখুনি, এই এখুনি ... ওখানে স্থির থাকবে তিনটে মানুষ তাদের স্বপ্ন আর পৃথিবীর রঙ ... লাল, ভীষণ লাল, রক্ত জমাট বাঁধলে তা আরো গাঢ় হবে ... কটকট করে তাকিয়ে থাকবে ... কেউ কিচ্ছুটি বলবে না ... শুধু তাকিয়ে থাকবে মাছের মতোন শূন্য দৃষ্টিতে ...
ফ্রিজশট জুড়ে শুধু পড়ে থাকবে অপার নৈশব্দ।
মনে হচ্ছে কোনো আনন্দ মিছিল নেমেছে বুঝি পথে। কখনো সখনো এর গায়ে ও ঠুকে দিচ্ছে ওজর-আপত্তি-বিহীন হুমড়ি খাওয়া পতন। কখনো ঘষটে দিচ্ছে আরেকজনার মাখন মাখা শরীরজোড়া যতন। একসঙ্গে শহর জুড়ে মেতেছে সাড়ে তিন লক্ষ যানবাহন। বিরতিহীন জ্বালানী পোড়ানো পীচঢালা পথময় সন্তরণ।
যতোক্ষণ থেমে থাকে হৈ হুল্লোড় কিছুটা কম বটে তাদের। তখন আবার যোগ হয় কিছু দাদরা ঝুমুরের মতোন প্যানি ঠাণ্ডা প্যানি, আলুর চিপস, বই নিলে দুইশো-তিনশো, বেলীইই ফুল, দোলনচাঁপা এই দোলনচাঁপা। জায়গাটা যদি হয় ট্রাফিক সিগন্যালের কাছাকাছি কোথাও।
এর মাঝেই কোনো বাহনের ভেতর থেকে রেডিও টুডের খবর, কোথাও এবিসি রেডিওর কথামালা, গানের সুরে এফএম এইটি নাইন, রেডিও ফুর্তির ড্রামবিট কিংবা কোথাও জর্জ হ্যারিসন কোথাও বাপ্পা কিংবা জেমস বা রেকর্ড সংখ্যক গানের শিল্পী মমতাজ। এদের সবারই মুডটা এমন যেনো ঠিক পিকনিকে রওনা হয়েছেন বা প্লেজার লং ড্রাইভ। বাকীদের চেহারা কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীর মতোন বক্ররেখার প্লাবন।
এর ভেতরই দু ঘন্টায় এক কুড়ি কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবার যাত্রীরা কেউ ঘুমায়, কেউ ঝিমায়, কেউ হয়তো কিছু একটা পড়বার চেষ্টায় মরিয়া হয়। তাদের সামনে মেলে ধরা কবিতার লাইনে শঙ্খচিলের ডানায় ঢুকে পড়ে পাশের হিউম্যান হলারের গায়ে এক্রোব্যাটের মতোন ঝুলে থাকা হেল্পারের তারস্বরে চিৎকার, চাইপা বহেন - ফার্মগেট নামলে রেডী থাহেন। হয়তো ছোটগল্পের ভেতর মনসুরার মেয়েটি যখন মায়ের একাকী জীবনের ডায়ালেকটিক্সে নিজের নতুন প্রেমের সম্ভাব্য পরিণতির ছবি আঁকছে তখন পাশের সিএনজি স্কুটারের যাত্রীটি তীব্র চিৎকার করে ওঠে। ছিনতাইকারীর ছুরিতে হুড কেটে তার মোবাইল আর ব্যাগ নিয়ে গেছে কারা।
কেউ একজন ভাবছিল অফিসের কাজে দেরীর জবাব কি দেবে আনকোরা, কেউ ঘরে অপেক্ষমান সন্তান বা বাবা মা'কে ঘিরে ভাবছে জটিল কিছু, কেউ স্বপ্ন বুনছে সম্ভাবনাময় আগামীর কোনো এক দিনের। ট্রাফিক সিগন্যাল ছেড়ে ক্ষণিকের জন্য বেগবান শব্দ মিছিলে জোরদার ঐকতান ঘিরে ছুটতেই বিকট শব্দে একাধিক বাহন বুঝি হুমড়ি খেলো একসঙ্গে। সাথে উঠে এলো তীব্র আর্তনাদ। শব্দটা একটা আস্ত হিমালয়ের মতোন রাজপথের গোটা সীমানা জুড়ে সমস্ত মানুষ ও বাহনের মাঝে আছড়ে পড়েই থমকে গেল যেনো।
অকস্মাৎ সব নিস্তব্ধ শুনশান। দীর্ঘক্ষণ শব্দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পিনপতন নিরবতায় মিশে থাকলো সবকিছু সেলুলয়েডে ফ্রিজ শটের মতো। ... অনেক পরে বাহন সচল হয়ে একে একে নীরবে পার হয়ে যেতে থাকলো সেই ফ্রিজশটের ফ্রেম থেকে ... তার সীমান্তে পড়ে আছে মুখ থুবড়ে একজন পুরুষ, একজন নারী ও একটি শিশু তাদের ঘিরে ফ্রেমটা তখনো বাঁধানো শেষ হয়নি ... তাজা রক্ত গড়াচ্ছে তাদের ঘিরে - যেনো কোন অদৃশ্য তুলিতে কেউ খুব দ্রুত শেষ করবে এখুনি, এই এখুনি ... ওখানে স্থির থাকবে তিনটে মানুষ তাদের স্বপ্ন আর পৃথিবীর রঙ ... লাল, ভীষণ লাল, রক্ত জমাট বাঁধলে তা আরো গাঢ় হবে ... কটকট করে তাকিয়ে থাকবে ... কেউ কিচ্ছুটি বলবে না ... শুধু তাকিয়ে থাকবে মাছের মতোন শূন্য দৃষ্টিতে ...
ফ্রিজশট জুড়ে শুধু পড়ে থাকবে অপার নৈশব্দ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন