বুধবার, ১ জুন, ২০১৬

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

 সত্তর দশকের শুরু । 
সমাজবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল বেল (Danial Bell) এবং আলা তুরে (Alain Tauraine) নতুন এক যুক্তি  স্দেথাপন করেন । তাঁরা জানান , মানুষের ইতিহাসে এক নতুন সমাজ সৃষ্টি হয়েছে। যাকে উত্তর শিল্প সমাজ হিসেবে অভিহিত করা হয়। উত্তর শিল্প সমাজের ভিত্তি হচ্ছে তথ্য ও জ্ঞান। এই সমাজে প্রস্তুত শিল্পের অবক্ষয় ঘটে। মূলধনের মালিক বা শিল্পপতিদের স্থান অধিকার করে নেয় পেশাভিত্তিক ব্যবস্থাপক এবং এই  ধারাবাহিকতায় শিক্ষার বিস্তার ঘটে। এভাবেই ক্রমশ উত্তর শিল্পযুগের ধারণা থেকে তৈরী হয় উত্তরাধিকতার ধারণা। অনেক সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন- আমরা নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যাকে উত্তর আধুনিক যুগ বা   Post modern age বলা যায়।
উত্তর আধুনিকতা বা পোস্ট মডার্ন ইজমের ধারণাটি কখনো স্থির নয়, কোনো যুক্তির ঐক্যতে স্বীকার করাও পোস্টমডার্ন ইজমের কাজ নয়। একই ঐক্যের দিকে সম ধারায় সম্মিলন পোস্ট মর্ডার্ননিজমে ব্যক্তির ইচ্ছা, স্বাধীনতা, ঐতিহ্য, বিচার ক্ষমতা, সার্বজনীনতা, আন্তর্জাতিকতা এবং মূল্যবোধ একই অবস্থান থেকে অক্ষুন্ন থাকে। পোস্টমডার্ন ইজম কোনো সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করে না। পোস্টমডার্ন ইজম প্রতিটি ভাবনার মধ্যে বৈচিত্র্যের মালা পড়িয়ে দেয়া আর প্রতিটি চিন্তার মধ্যে এনে দেয়া অভিনবত্বের ছোঁয়া। এর প্রতিটি দর্শন অসীমের প্রান্তপর্যন্ত প্রসারিত। এটি সময় বিভাজনে বিশ্বাসী নয় আবার সময়ের স্তর পেরিয়ে ও এর যাত্রা শুরু হয় না। ধারণাটি অবশ্যই  প্রয়োগিক এবং বৈচিত্র্য সন্ধানী। 
তাহলে ইদানিং কালে বহু ব্যবহৃত ও বহুচর্চিত উত্তর আধুনিক বা পুনরাধুনিক কবিতা ঠিক কেমন ? 
পোস্টমর্ডান কবিতায় যুক্তি কাঠামো অনুক্রম অনুপস্থিত থাকবে। কবিতাটি close ended  অথবা Open ended যেমনই হোক না কেন  , কবিতাটি শেষ হলেও মনে হবে তা শেষ হয়নি, অর্থাৎ একটা never ending সুর থাকবে । পোস্টমর্ডান কবিতা বহুরৈখিক, বহুকৌণিক, বহুত্ববাদী ও বিদিশাময়। এর যে কোনো দিকে ছড়িয়ে পড়ার অভিমুখ খোলা থাকে। 
ঠিক এইখানে একটা কথা বলবার আছে। আমরা বলবো যে আমাদের মাঝেই কোনো কোনো মানুষের সেই ক্ষমতা থাকে যারা একক জীবনের ধাক্কায় জন্ম নেয়া ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে মানুষের মুখের কথায় লিখে রেখে যেতে পারেন, তাঁদেরই আমরা 'কবি' আখ্যা দিই । কবি হলেন আনন্দময় নৈরাশ্যবাদী অর্থাৎ an ecstatic pessimist , বিশাল এই ভূখণ্ড টায় যা যা বিরাজ করছে তার প্রতি অদ্ভুত সচেতনতা এবং দুঃখবোধ , দুঃখবোধ কারণ কবি রা যা দেখতে চান আদতে বাস্তবটা তেমন নয় আর তাই যন্ত্রণা তাই কষ্ট তাই নৈরাশ্য। কিন্তু who is a poet? এর উত্তরটা পাওয়া গেল কি ? A poet is one who writes verses/ and theone who doesnt write verses/ a poet is one who throws off fetters/and one who puts fetters on himself/herself/ a poet is one who believes/ and one who doesnt believe.... অর্থাৎ ইতি ও নেতি র দ্বন্দ্বে প্রতিনিয়ত যিনি খণ্ডিত হন তিনিই কবি । a poet is one who tries to leave / and one who cannot leave.. কবি র কাজ সময় কে মুহূর্তে বেঁধে রাখেন a poet is one who knows how to froze time ..কবি তিনিই যিনি স্মৃতি বেদনা কে শৃঙ্খলা রক্ষার ভার দেন না কোনোমতেই , তিনি জানেন it cannot exist yet it exists..আসলে নির্মাণ আর ভাঙনের মধ্যে দিয়ে যেমন চলে জীবন , তেমনই প্রতিবাদ জন্ত্রনা আর তীব্র দীপ্তি র উজ্জল্যে প্রতিমুহূর্তে নির্মিত হন কবি !
মুঠো ভরা রোদ্দুর 'র এবারের সংখ্যায় রয়েছে একাধিক কবিতা , চিঠি , ফিচার এবং অণুগল্প , প্রতিটিই আঙ্গিক , শব্দ এবং বাক্যের অনায়াস মাধুকরী তে অনন্য । পাঠকরা সঙ্গে থাকুন এবং ভাল থাকুন  । 

শুভেচ্ছান্তে , 
পিয়ালী বসু 



বেওয়ারিশ প্রেম ~ শুভায়ু মল্লিক

স্রাবোৎস্রোতে নির্লিঙ্গ সেন্সর,
সাকাশী স্পন্দনে অক্সিটোসিন
প্রেম মোছে যোনি চিহ্ন 

যদিও ঠিক গল্প নয় ~ সৌম্যলেন্দু ঘোষ

প্রিয় মানিকদাদু,
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলায তোমাকে একটা চিঠি দেব, কিন্তু বাবা কিছুতেই চিঠি লেখার জন্যে আমার স্কুলের বন্ধু রিকার মত সুন্দর গোলাপী কাগজ কিনে দিচ্ছিল না, তাই আর শেষমেষ না থাকতে পেরে স্কুলডায়েরী থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে চিঠিটা লিখেই ফেললাম। হয়ত তুমি আমার চিঠিটা পড়ে অবাক হয়ে যাবে, ভাবতেই পারবে না যে তোমাকে এইরকম জায়গা থেকে আমার মত কেউ চিঠি পাঠাতে পারে। সত্যি বলছি, ছোট থেকেই আমার তেমন কোন বন্ধু নেই, সবাই যখন হৈ চৈ করে খেলা করে, তখন আমি চুপচাপ আমাদের ব্যালকনি থেকে হুইলচেয়ারে বসে দেখি, আর তোমার লেখা বইগুলো পড়ি; তবে মনে মনে পড়ি, কারণ এখন তো বাবা বই কিনেই দেয় না, তাই মাইন্ড রিডারই ভরসা। জানোতো, আমাদের ফ্ল্যাটটা খুউব উঁচু, প্রায় ১৩৫ তলা, আমরা ১১২তলায় থাকি। আমাদের ব্যালকনি থেকে কলকাতাকে খুব সুন্দর দেখায়। তোমাকে তো বলাই হয়নি ক্লাস থ্রি-তে পড়ার সময় একবার ফ্লো-ট্যাক্সিতে অ্যাক্সিডেন্ট করে আমি আর চলতে-ফিরতে পারিনা; ডাক্তারকাকু বলেছে আর একটু বড় হলে আমার শরীরে অ্যান্ড্রয়েডদের মত রোবোটিক লেগ ইনস্টল করে দেবে। স্কুলে রিকা আর রোজি মিস ছাড়া কেউ আমাকে ভালবাসে না; আমি তো এখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, সেদিন ইন্ট্রিগ্যাল ক্যালকুলাসের একটা অঙ্ক পারিনি বলে পল স্যার কি বকাটাই না বকলেন! আচ্ছা, তুমিই বলোতো আমার মত ১১ বছর বয়সে কেউ রাতদিন পড়ে, তুমিই তো লিখতে এই বয়সটা হল খেয়ালখুশির বয়স, আমারো ইচ্ছা করে মুকুলের মত সোনার কেল্লায় যেতে, শঙ্কুদাদুর টিমের সাথে একশৃঙ্গ অভিযানে যেতে, কিন্তু বাবাকে এইসব বললেই বাবা আমাকে স্লিপিং ভেসেলে ঢুকিয়ে দেয়। আমাদের বাড়িতে একটা ছবি আছে জানো, আমি আদর করে ওর নাম দিয়েছি গণেশ মুৎসুদ্দির প্রোট্রেট; মায়ের একটা খুব সুন্দর পার্ল নেকলেস আছে, যেটাকে দেখলেই আমার রবার্টসনের রুবির কথা মনে পড়ে। আমারও ইচ্ছা করে স্পিরিট ক্যাচার অন করে বাতিকবাবুকে ডেকে নিই, আর উনি যেন সারারাত ধরে আমাকে ওনার অদ্ভুত কালেকশনের গল্প শোনান; আমারও ফটিকচাঁদ হতে ইচ্ছা করে, কিন্তু কিছুই হতে পারিনা। জানো আমারও একবার তোপসেদার মত ফেলুদার সঙ্গে গোয়েন্দাগিরি করতে ইচ্ছা করে, মনে হয় আমাদের ফ্ল্যাটের ছাদে উঠে একবার চেঁচিয়ে বলি 'জয় বাবা ফেলুনাথ', কিন্তু আমার ন্যান্সি আন্টি কিছুতেই আমাকে স্কুলের সময় ছাড়া ঘর থেকে বেরোতে দেয় না; ওহ! তোমাকে তো বলাই হয়নি ন্যান্সি আন্টি খুব আপগ্রেড একটা অ্যান্ড্রোয়েড, ওর চোখকে ফাঁকি দেওয়া খুব কঠিন। একেক সময় মনে হয় যখন ছোট ছিলাম, তখনই খুব ভাল ছিলাম, আমি আবার আমার ছোটবেলাকে ফিরে পেতে চাই। তোমাকেই একমাত্র বললাম আমায মনের কথা, পারলে আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখো....
ইতি- টুকাই ২২শে জুন, ২০৮৮
এরপর টুকাই স্পেস-টাইম কার্ভেচার মেশিনে গিয়ে চিঠিটা সত্যজিৎ রায়ের বাড়ির ঠিকানায় পোষ্ট করে দিল ঠিক ২২শে জুন, ১৯৮৮ তারিখে...

অবন্তী ~ অরুণজীব রায়

অবন্তী,
গতকাল তোমার প্রেরিত প্রেম প্রস্তাব পেয়েছি। এই প্রস্তাবের অপেক্ষায় কাটিয়েছি গত ৬টি বছর। নিজেকে তিল তিল করে গড়ে চলেছি তোমার যোগ্যতায়। হয়ত তোমার চোখে সে যোগ্যতা অর্জিত বলেই এই প্রস্তাব। কিন্তু আমি এখনো যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি। তাই অপেক্ষায় থাকুক আগামী।

অরুণজীব
৯ নভেম্বর ১৯৯৮
#

অবন্তী,
আজ আমি স্নাতক হলাম। 1st Class পেয়েছি। তোমার বাবার সম্মুখে যাবার প্রথম সিঁড়িটি পার হলাম। দুধের গাইটা বন্ধকে রেখে মা M.Sc. ভর্তির টাকা জোগাড় করেছেন। আগামী মাসের টিউশনের টাকা পেলে বন্ধকী গাইটা ছাড়িয়ে নেব।

অরুণজীব
১৫ এপ্রিল, ২০০০
#

অবন্তী,
তোমার গ্র্যাজুয়েশনের সাফল্যে অামি যারপরনাই অানন্দিত হয়েছি। বাবা তোমার সম্বন্ধ দেখছেন শুনে হতাশ হলাম। এখনো তিনটি বছর তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। তাই তুমি এখন বিয়ে করবেনা জানিয়ে দাও এবং মাস্টার্সে এডমিশন নাও।

অরুণজীব
২ মার্চ, ২০০১
#

অবন্তী,
আজ আমার মাস্টার্সের রেজাল্ট প্রকাশিত হলো। প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছি। আগামী S.S.C. তে চাকরীটা পেতে হবেই। আমার রেজাল্টের ও আমাদের প্রতীক্ষার খবর তোমার (ও আমার) মা-বাবাকে জানিয়ে রেখো। তুমি আগামী বছর মাস্টার্স কমপ্লিট করবে আর আমি চাকরি পাব। তারপরই বিয়ে...

হেরো সিরিজ ( হেরো -১৫ , ১৬ , ১৭ , ১৮ ) ~ শুভাশিস সিংহ

হেরো - (১৫) 
:
আন্দাজ মত ভালোবেসেছিলাম পরিচর্যার ঘনঘটা না থাকলেও প্রান্তিক সুখ মধ্যস্থতা করেছিল
হাঁটতে হাঁটতে
বসন্ত এসে গেল পারদর্শী চাদরে অস্থিরতা থিতু হত গোপন মুহূর্ত লুকোচুরি খেলত সময়-সুযোগের ভাঁজে ভাঁজে
পট পরিবর্তন
রক্তিম সূর্য-র ঝাঁঝ কমলে আদর্শ গৃহিনী আঙুলের ডগায় অপেক্ষার নজরে উপেক্ষার কলিংবেলে ভেপারের লাম্পের ভাতঘুম ভাঙল
সময় একটু এগোল
সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে রাত হল ব্যালকনির দোলনায় দুটি মেরুকরণ মেঘের সিঁড়ি বেয়ে বসে অনুপ্রবেশী চাঁদ
প্রাইমটাইম খতম
ফাইবারের প্লেটে ডাল-ভাত চিলি-চিকেনটা পড়ে রইল দৈহিক শক্তির লৌকিক সেনাদল অনিহার লস্কর তৈরি করল পরজীবী রাত চোখের পাতায় ছাউনি বানাল
শান্তি চুক্তির শ্লোগান
রাত পাখিদের দৃঢ় কণ্ঠে চারটে চল্লিশের ফাসর্ট লোকালের আওয়াজ আজ কানে বাজেনি ভোরের সূর্য এইমাত্র কড়া নাড়ল চোখের দোরগোড়ায়
শুধু একটা কথা কানে লেগে 'নারী পুরুষের অনুভব আর পুরুষ নারীর কৌতুহল '
লজ্জা ঘৃণা মৃত হল
*
হেরো -(১৬)
:
এখন তুমি বড় নিরপেক্ষ একটু উদাসীন খানিক অবচেতন
তোমাকে জানতে ইচ্ছা হয় অনুভবে ব্যস্ত আমি নিত্য সংগঠিত ঘটনায়
তোমার চোখে আহত রাতের উপসর্গ বেশ কিছু দিনের সংক্রমক ব্যাধি বাকিটা অলীক স্বপ্ন
এখন তুমি অনেকটাই সুরক্ষিত নিয়মমাফিক চন্দন আর রজনীগন্ধার শৃঙ্খলে
*
হেরো -(১৭)
:
চিলেকোঠার শীতঘুমে নাবালকের খোলস ত্যাগ বিতর্ক চোখের কোণের ময়লা হলে অন্ধকারের স্নানে ধুয়ে ফেলে শরীর পরিসংখ্যানের জরায়ুতে নাসরিন একটা মৃত ভ্রূণের নাম
*
হেরো -(১৮)
:
হাজারখানিক পুরোনো চিন্তা
ইদানিং গল্প করতে আসে
অতিবাহিত সময়
কানখাড়া করে শোনে
মূক-বধির কথোপকথন
বৃষ্টি সংলগ্ন চোখ
প্রতিঘাতের কাজল ধুয়ে ফেলে
বড্ড হিসেবি তুই
সমস্ত পরিকল্পিত প্রয়োজনে
হিসেব কষলে দেখতে পাবি
আমার শরীরে তোর লাজুক চোখের বাসা
ভয় পাস না
সে লজ্জা তোকে ফেরত দেব না

পথ ~ মানস চক্রবর্তী

আমি বোল্লুম এদিকে কি আছে ?
মানুষটি বোল্ল , নদী গো ; এই খোরো সময়ে এয়েচো , এখন সে দুবলা । আষাঢ়ে যদি আসতে !
আমি অদেখা নদীটার দিকে তাকাই । কিন্তু চোখ আটকায় পথের বাঁক । সে বলে এই পথে এগিয়ে যাও ;
চমকে উঠি , নদীর কাছে যেতেও পথ লাগে ! আশ্চর্য ! যেখানে স্রোত যেখানে ভেসে যাওয়া যেখানে একা এক মাঝির গলুই ছেঁচে নৌকোটা ভাসিয়ে রাখা সেখানেও পথ বেয়ে যেতে হয় ।
এগোই তবে ; তার মাথা নেড়ে সম্মতি দেখেএগিয়ে যাই । পায়ের তলা দিয়ে সরসর করে পথ কোন দিকে যে যায় !
কিছুটা ধুলো জড়িয়ে ধরে পায়ের পাতা ।
দুটো বাঁক । কত শত বাঁক নিয়ে পথ সেঁধিয়ে যায় অন্য আরেক পথের শরীরে ।
দুটো বাঁক । একেবারে দাঁড় করিয়ে দিল নদীর শুখা গা বরাবর ।
এক পথ এসে মিশে গেল এক জলপথের সঙ্গে । পূব থেকে নদী বয়ে যাচ্ছে পশ্চিমে ।
নদীর ওপারেও পথ । সে পথে কি যাব ? হাঁটু জল ভেঙে ! ওপাড়ে বনভূমি , ওপাশে নিঃসঙ্গ নদীপাড় !
ওখানে কী এক অচেনা সুর নিয়ে পাথরের ফাঁকে ফাঁকে স্রোত বইছে !
পথ , এই সেই পথ যেখানে নামলে সবাই অনিকেত হয়ে যায় ...

কথা ~ অভিষেক কর্মকার

একটা কথা রয়েই গেল, প্রতিদিনই থেকেই যায়।
হাজার কথা হয়, ওই একটা কথা আর বলাই হয় না।
কথায়, আকাশ ও ভরে উপচে যায়।
তার উপর মেঘেদের দিয়ে ঘর বানাই, বৃষ্টিরা উঠানে নেচে বেড়ায়।
আকাশের আয়তন কত? মাপা যায়?
হৃদয়ের কথায় আকাশটা ফুরোয়, তবু কথা ফুরোয় না।
তোমার জন্য একটা না একটা কথা রয়েই যায়।

স্বাধীন বাংলা ~ সুশান্ত হালদার

স্বাধীন দেশে স্বাধীন আমি
উড়ছে স্বাধীন পতাকা
নয়ন ভরে চেয়ে দেখি
কষ্ট ভুলে হাসছে মা।
:
নীল আকাশের বুকে আমি
স্বপ্ন আঁকি নিরালায়
বঙ্গবন্ধুর অমোঘ বানী
আশার আলো দেয় আমায়।
:
পূব আকাশে দেখি রবি
রাতে দেখি তারা
বীরাঙ্গনার মুখের হাসি
হাসছে স্বাধীন পতাকা।
:
বাউল হইছে রাখাল মন
ছুটে সবাই মাঠে
মনের সুখে ধরে গান
পদ্মা মেঘনার বাঁকে।
:
মাটি আমার বাতাস আমার
সবুজ মাঠে মাঠে
তামা কাঁসার বর্ণ এবার
ধরে ধরে বাচে।
:
কথা ছিল রাখবো মান
স্বাধীনতার ভূমে
ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রাণ
নিভৃতে শুয়ে কাঁদে।
:

স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা 
ভাতের বদলে মাড়
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা 
উলু খাগড়ার ঝাড়।
:
সোঁদা মাটির গন্ধে আমার
গা ঘিনঘিন করে
দেহের ঘামে যৌবন এবার
যাবে ব্যর্থ হয়ে।
:
সোনার বাংলার সোনার ছেলে
দিবে বলিদান
তোমার মুখের হাসি দেখে
উছলে উঠে প্রাণ।

দেহপসারিনী ~ রীনা রায়

নিয়ন আলোর নীচে রাস্তার পাশে
গোলাপী শাড়ী জড়িয়ে,
শরীরের ভাঁজে আবেদন ছড়িয়ে
দাঁড়িযে় পেটের দায়ে!
কামনার হাটে বিকোবে শরীর
সময় হিসাবে কিনবে নাগর--
ভোগের পরে ছুঁড়ে তাকে
নাগর ফিরবে আপন ঘর!
তিনটে পেটের ক্ষুধার জ্বালা
কাহিনি সবারই কিছু থাকে,
সন্তান ও পঙ্গু স্বামীর দায় কাঁধে
পরিণতিতে আজ এই পথে--
---------
পাঁচতারা হোটেলে লাস্যময়ী
স্বল্পবসনা উচ্ছলিত যৌবন!
টাকায় বিকোয় অনায়াসে
যদিও নেইকো প্রয়োজন-
দুনিয়ার যত মহার্ঘবস্তু
হাতের মুঠোয় চাই এখুনি,
শরীরের বিনিময়ে যদি মেলে
দ্বিধা নেই দিতে শরীরখানি?!
কেউ বেচে বাঁচার তাগিদে
কেউ বা শুধুই নেশায়!
দুজনেই হয় দেহপসারিনী
কেউ ইচ্ছেয়, কেউ অনিচ্ছায়!!

কনফেশন ~সুপ্রতীম সিংহ রায়

রাস্তা হারিয়ে ফেলে পেয়েছিলাম তোমাকে
পুরানো কথা যত...
স্বপ্নহীন সন্ধ্যায় মনে পড়ছে ফের।
দেখো, এই সব শ্যাওলা ধরা মুখ
টুকিটাকি সাহিত্যপাঠ আর আপ তারকেশ্বর লোকালে
কেটে গেল মাস পাঁচেক
অথচ কেমন দূরে দূরে চলাফেরা দুজনের
আমিও ক্রমশ গুটিয়ে নিয়েছি ওড়াউড়ি
আর এখন মুখের সামনে তোমার আশ্বাস বাণী
প্রতি সিগারেট টানে ধোঁয়ার স্রোতে ভেসে আসে।

বৈপরীত্য ~ প্রণব বসুরায়


ক্যানভাস রঙিণ হল,
ফুটে উঠলে অসামান্য তুমি--

আমি ভেসে যাই..

ফিরে এস ~ রঘুনাথ মণ্ডল

মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে —
বহু পথ হেঁটে ক্লান্ত আমি যেতে হবে বহুদূর 
তবু এই পথের দুপাশে স্পন্দিত জীবনে
প্রাণের পুষ্পিত কাননে মানবের মাঝে আমি
বেঁচে যেতে চাই অনন্ত জীবনে অন্তরে অন্তরে।
হে বন্ধু, এই পথ পরিক্রমা বেদনার নীল সায়রে
বিকসিত শতদলে সৃষ্টির বিমলানন্দে ডুবে
জীবনে জীবন যোগ করে মৃত্যুকে জয় করা।
আমি ভালোবাসি সবুজে পুষ্পে তৃণে মাটির ভুবনে
সকল গ্লানির ঊর্ধ্বে আকাশের মত উদার প্রীতি,
আমার সৃষ্টির প্রতিটি স্পন্দনে চিরায়ত জীবনের 
প্রবাহে প্রবাহে কথা বলে যায় যেন মানুষেরই বাণী।
ক্ষুদ্র আমি বিশালের মাঝখানে সুখের মন্দ্রিত সুরে
বেদনার আঘাতেও প্রাণিত সূর্যের স্পর্শ যেন পাই। 

মৃত্যুঞ্জয়ী ~ সুনীতি দেব নাথ

মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে —
বহু পথ হেঁটে ক্লান্ত আমি যেতে হবে বহুদূর 
তবু এই পথের দুপাশে স্পন্দিত জীবনে
প্রাণের পুষ্পিত কাননে মানবের মাঝে আমি
বেঁচে যেতে চাই অনন্ত জীবনে অন্তরে অন্তরে।
হে বন্ধু, এই পথ পরিক্রমা বেদনার নীল সায়রে
বিকসিত শতদলে সৃষ্টির বিমলানন্দে ডুবে
জীবনে জীবন যোগ করে মৃত্যুকে জয় করা।
আমি ভালোবাসি সবুজে পুষ্পে তৃণে মাটির ভুবনে
সকল গ্লানির ঊর্ধ্বে আকাশের মত উদার প্রীতি,
আমার সৃষ্টির প্রতিটি স্পন্দনে চিরায়ত জীবনের 
প্রবাহে প্রবাহে কথা বলে যায় যেন মানুষেরই বাণী।
ক্ষুদ্র আমি বিশালের মাঝখানে সুখের মন্দ্রিত সুরে
বেদনার আঘাতেও প্রাণিত সূর্যের স্পর্শ যেন পাই। 

জীবনমুখী ~ জয়তী ভট্টাচার্য অধিকারী

প্রতিটি মুহূর্তে
জীবনের সাথে লড়াই করতে করতে ভাবি
হে ঈশ্বর, আর কতদিন!
ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে আবার ঘুরে দাঁড়াই
জীবনের প্রতি পরম আকাঙ্ক্ষায়
মৃত্যু অমোঘ, মৃত্যু অনিবার্য
তবুও চলতে থাক অসম-লড়াই
জীবনের দগদগে ক্ষতে
ভালোবাসার প্রলেপ দিয়ে চলি নিরন্তর
প্রতীক্ষার গোড়ায় রোজ ঢালি বিশ্বাসের জল
তবুও
শিকড় আলগা হতে হতে 
যদি বা লুটিয়ে পড়ি কোনদিন
যদি না পূর্ণ হয় নতুন কুঁড়ি ফোটানোর সেই আশ
সেদিনও
আমার অস্তিত্ব থাকবে তোমার কঠিন হৃদয়ে
সূর্যমুখীর মত...

লাখ টাকার স্পর্শ ~ পিয়ালী পাল

চুপিসারে বরফ স্পর্শ করে যদি
খরকুটো জ্বেলে ভুলে যাস আমায়
পাঁচ লাখ টাকা পাওয়া লাশগুলোর কথা
ভুলে যাস
যদি পারিস ভুলে যাস
কত লাখ হাত পেতে নিয়েছিলিস
ওই নোংরা হাতের স্পর্শে
আর কাওকে নোংরা করিস না 

একটু আদর ~ সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে যদি
আসতে পারো কোনদিন
কমলা মেঘ বিবশ না করে চেনাবো
নিঃস্তব্ধতার কাহিনি, পাইনের বনে!
জানো কি? এখানে থরে থরে সেজে আছে কত
কাঠবাদাম, চকলেট, চেরী, স্ট্রবেরী-
প্লিজ, আর কোরো না দেরী।


এসেই ফোটোনিয়া ফুলের চাদরে আদর দিয়ে 
মেখে নিও প্রাইভেট কবিত্ব।
এ তোমার এ আমার বিবাদী মুহূর্ত নয়
এ এক অনন্ত মুহূর্ত!


শব্দছাড়া শোনাবো কিছু মনগড়া মর্মরের প্রতিধ্ব্নি 
দেখো, প্রতিটি নিঃশ্বাসেরা দীর্ঘ থেকে হবে দীর্ঘতর।
এক মুহূর্তের জন্য হলেও দুজনের স্পর্শে বাজবে
মেক্সিকানদের মন-ভাঙার গান আর তার সাথে
থাক না হয় নিজেদের কিছু তরতাজা দৃশ্যের ঘ্রাণ!

প্রেম ~ শৌনক বক্সী

কাম কাম কাম?
বিশুদ্ধ আকাশ চাই .
তীব্র আগুনে পুড়ে যাওয়ার চাইতে
চল ধিমে আঁচে রাত পোহাই .

পরিণতি ~ অরিজিৎ বাগচী

চেনা ঠোঁটের গন্ধ টাকে 
চোখ জাগা বিভোর বাস্তবে দেখেছি
হাজার বার অন্য গোঁফে গিঁথে যেতে 
খামচে ধরা শরীরের বিবর্তন গুলো
"যেন হয়ে গেছি আরও অচেনা"
আজকের সিলিকন শরীর ও সময়ের জৌলুসে , 

#
"স্বপ্নেরা তবু খুঁজে যায় "
মিথ্যের মুখোশ আর কালো জরিবুটিক কাজের পোশাক
নিজের ঔরসজাত স্বভাবে ,
আর বোধগম্য হীন আমি 
তাতেই ভর করে কখন হাসি 
কখন অঙ্ক কষে চলি 
"জীবনের শেষ সীমানায়"

#
ফিনকি দিয়ে ছুটে আসা প্রেম 
এতোটা পথ পেরিয়ে 
ঢোক গেলে একাকীত্বের গ্লানির চিৎকার
মুখের বলিরেখায় ফুটে ওঠে মিলিয়ে যায়

লাশ কাটা ঘরের রেডিও টা শরীর খোঁড়ার গান ধরলে
জানতে পারি আবার
"এসেছি তবু দুজনে" একলা আলাদা ।

ইকুয়েশন ~ বাসব মণ্ডল

হৃদয়ের নিরক্ষ রেখা ধরে
চলেছি অনেক পথ
হাতে হাত,চোখে চোখ রেখে
তপ্ত হয়েছি বারে বারে
হাজারো ক্যাটাসট্রফির মাঝে
সহানুভুতীর মিডাস টাচ্ এ
গলেছে কষ্টের ভিসুভিয়াস

"এতোটা পথপেরিয়ে এসেছি তবু দুজনে
যেন হয়ে গেছি আরও অচেনা
সপ্নেরা তবু খুঁজে যায় জীবনের শেষ সিমানায়"
ঘোলা আবেগের নোনতা ফেনা

এঁটো অনুভুতির পানসা স্বাদে
মনুমেন্ট হয়েছে,চোখের জল
ভালবাসা খুঁজে ফেরে
প্ল্যাটনিকের সজ্ঞাহীন অতল

চেনা ঠিকানা ~ জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী

নীল নীল যত ইচ্ছেরা ছিলো পাশে 
হাতে হাত ছিলো স্বর্ণালী সন্ধায়
সবুজের সাথে ঘর বেঁধেছিলো প্রেম
ছোট ছোট ফুল হৃদয়ের আঙ্গিনায়

প্রতিশ্রুতিরা ঘোর লাগা কোন রাতে
দায়ভার হয়ে গর্ভে ছোঁয়ালো আশা
সঙ্গী দুজনে কুড়িয়েছি চাওয়া-পাওয়া
হাসি মুখে কত বিলিয়েছি ভালোবাসা

আজ রূপালী বসন্ত এসেছে পথের বাঁকে
তুমি আর আমি মুখোমুখি এইবার
এতোকাল শুধু হেঁটে গেছি পাশাপাশি
সময় হয়েছে চোখে চোখ রাখবার

"এতোটা পথ পেরিয়ে এসেছি তবু
দুজনে যেনো হয়ে গেছি আরও অচেনা 
স্বপ্নেরা তবু খুঁজে যায় জীবনের

শেষ সীমানায়" খুব চেনা সেই ঠিকানা

অদাতা ~ সিদ্ধার্থ মুখার্জ্জী

বোয়েই যদি বেড়াই তোমার বিড়ম্বনার দাবী...
আড়াল করে রেখোই নাহয় তোমার সুমুখ খানি...
এক নিমেষে প্রেমের চিকণ, শয্যাতলে ভেসে...
পূর্ণা নারী অপুর্ণ, হোক না ভালোবেসে...
কি আসে যায়? আঙুল চুটকির সিঁদুর, নাই বা পেলে?
প্রেম ভাবনায়, অপূর্ণতা, স্থান পায়নি জেলে.

অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো ~ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

মরতে চেষ্টা করবো কেন? এমনিতেই যে মরে আছি।’ মৃতপ্রায় অমৃতা আপ্রাণ চেষ্টা করে কথাকয়টা উগড়ে দিলো মুখ থেকে।
আপনাকে ঐ খাবার কে খাইয়েছে?
কেউ না। আমি নিজেই খেয়েছি ওই খাবার। বরাবর নিজের হাতেই খেয়ে অভ্যস্ত যে।
ঠিক আছে, আপনি নিজের হাতেই খেয়েছেন। কিন্তু খাবারে বিষ মেশালো কে?
আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমোতে দিন। আর পারছি না জেগে থাকতে। 
আগে বলুন যা জানতে চাইছি। আপনার কথা শুনে যে করেছে তাকে ধরে এনে এমন শাস্তি দেবো যে জীবনে কক্ষনো......
থাক্‌, আপনাদের অত কষ্ট না করলেও চলবে। অমৃতা বাধা দিলো। 
কষ্ট হবে কেন? এটা তো আমাদের কর্তব্য।
কোথায় ছিলো আপনাদের এই কর্তব্য জ্ঞান? যতবারই অভিযোগ করতে থানায় গিয়েছি ভাগিয়ে দিয়েছেন। আজ কর্তব্য দেখাতে এসেছেন? কথাগুলো বলে অমৃতা হাঁপাতে লাগলো। শেষ নিশ্বাসটা কিছুতেই বেরোতে যে চাইছে না। গলার কাছে আটকে আছে। এভাবে আর কতক্ষণ! অনেক কষ্টই তো সয়েছে এই কয় বছরে। শাশুড়ি বেঁচে থাকলে না জানি আরও কত যাতনা সইতে হতো! 
ঠিক আছে। এবার বলুন দেখি, আপনাকে বিষ খাইয়ে মারতে চাইলো কেন? 
অমৃতার প্রবল ইচ্ছে হলেও অনেক কথাই বলতে পারছে না। বলতে ইচ্ছে করছে, স্বামী ওকে বিয়ে করে এনে ব্যবহার করতে চেয়েছে। বলতে ইচ্ছে করছে, ও আসার পর এই সংসারে কিছুটা হলেও চাপা শান্তি ফিরে এসেছিলো। খুব ইচ্ছে করছে বলতে, প্রতীবাদ করতে গিয়ে...... অমৃতা ভাবনা ছেড়ে পাশ ফিরে শুলো। অতশত বলার সুযোগ যখন পাবে না খামোখা চেষ্টা করে কি লাভ? তারচেয়ে চিরঘুমে তলিয়ে যাওয়া অনেক ভালো।

অপূর্ণ ~ শ্যামশ্রী চাকী

তেষ্টা কি আর মিটে ম্যেডাম!! আল্লায় দেসে বান্দায় খায়ে বাঁচে।' ঝুঁকে পড়ে লতাটা টেনে আনে পঁয়ত্রিশের বাবুদ্দিন। পানিলতি!!জয়েন্তী পাহাড়ের সেই বিখ্যাত লতা,কাটুম কুটুম সংগ্রহকারীদের জন্য জীবনদায়ী। ডালটা ছিঁড়তেই জলের ধারা, কিছুটা গলায় ঢালে নীপা। ঈষৎ কষটে হলেও এই গহীন বনে তৃষ্ণা নিবারক।
হঠাৎ একটা শব্দ হতেই এক ঝটকায় এক ঝোপের পেছনে নীপাকে শুইয়ে ফেলে বাবুদ্দিন। নিজে নীপার ওপড়ে!! আতংকে নীপার গলাদিয়ে আওয়াজ বেরোয়না, শক্ত হাতে চেপে ধরে ভয়ার্ত নীল ঠোঁট। তাকিয়ে দেখে, সামনে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে হলুদ চাদর; ডুয়ার্সের ত্রাস চিতা!! নীপা জড়িয়ে ধরে বাবুদ্দিনকে, ভয় পরিনত হয় ভালোলাগায়। বাবুদ্দিনের পেশীববহূল শরীরে মিশে যেতে চায় নীপা। একসময় পাখি আর বাঁদর ডেকে ওঠে। গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে বাবুদ্দিন। 'লাগে নাই ত ম্যেডাম?' ধীর পায়ে কাটুম কুটুম গুলো কুড়িয়ে ফিরে আসে রিসোর্টে। সফেন বিয়ার হাতে পার্থ বারান্দায় বসা। শারীরিক ভাবে অক্ষম পার্থ সব জানিয়েই বিয়ে করেছিল বাপ মা মরা আর্ট কলেজের ছাত্রী নীপাকে। শখ আহ্লাদ কোন কিছুরই ত্রুটি রাখেনি, নীপার আবদারটুকু পুরণ করতেই এই জয়েন্তীতে আসা। রুমে ঢুকে প্রান ভরে ঠান্ডা জল খায় নীপা।

ত্রিপদ : সুপ্ত কথা পারমিতা চক্রবর্তী

" মেঘবালিকা " বৃষ্টি হতে চেয়েছিল 
চেরাপুঞ্জীর নিঃশ্বাসে অগ্নি হয়ে 
চৈত্রাবসান চেয়েছিল 
অবলুপ্ত বারিধারা

*

স্মৃতির ট্রপোস্ফিয়ার আবর্তে 
পরকীয়া দৃষ্টি
সন্ন্যাসী হতে চেয়েছিল 
অন্তঃসত্ত্বা মন স্বপ্নের কিনারে 
উল্কার হায়নায় দঃশন করেছিল 

*
চুম্বকীয় শক্তির স্বপ্নের জাহাজে
বিকর্ষিত ইস্পাত কণা
বারুদের ঘ্রাণ
কালিদাস হতে চেয়েছিল ৷

উটপাখি ~ ওয়াহিদ মেহবুব মজুমদার

কিছু গোছালো স্বপ্ন। ইতিহাস...
ঘুমোতে না দেওয়া রাত; লুকোয় বালিশ। 
অথবা 
চায়ের কাপ। অজুহাত যতটা গভীর...
নীরবতা ঠিক মাপতে জানে। 
প্রতিভোরে উটপাখি ভাবে--
আজ ওড়ি ডানামেলে।
কিছু পথ, আঁকে জলফড়িং। 
নামেনা আকাশ। মেঘহীন ঢেউ। ছাই জমে স্রোতে।
তবু পাশাপাশি হাঁটি। দু'জনে। ওড়া হয়ে ওঠেনা।

আনন্দ ~ লাভলী বসু

আনন্দ আজ কোথায় পাবো ?
ছোট্টোবেলার সেই যে খুশি ?
সব হারিয়ে এখন বুকে 
দুঃখ এবং কষ্ট পুষি !

*
ঠাম্মা দাদুর গল্প বলা 
রূপকথার ঐ গপ্পো পড়া 
লালকমল ও নীলকমলের 
পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়া !

*
রাজকুমার আর রাজকুমারী 
জিয়নকাঠি মরণকাঠি 
তাদের কোথায় হারিয়ে ফেলে 
অন্ধকারে একলা হাঁটি l 

*
খোকার এখন ঘুম আসে না 
চাঁদমামার ঐ টিপের সাথে 
চড়কাটি আজ আর ধরা নেই 
চড়কাকাটা বুড়ির হাতে !

*
দৈত্যপুরী উধাও হল
খোকার স্বপ্ন তাড়িয়ে দিয়ে 
নতুন যুগের নতুন দানো 
এসেছে আজ কিসব নিয়ে 
ব্যাঙ্গমা তাই পালিয়ে গেছে 
কোন সুদূরে অচিনপুরে 
আনন্দ আজ পথ ভুলেছে 
হয়তো গেছে অনেক দূরে !

তোমাকে হারাবার বেদনায় ~ জাকিয়া জেসমিন যূথী

রোদে ঘুরে ঘুরে যখন আমি তৃষ্ণার্ত, 
একা একলা চার দেয়ালের মাঝে গুমড়ে মরছি, 
হারিয়ে ফেলছিলাম নিজেকে নিজের ভেতরে
সবার থেকে দূর অতীত কালের গহ্ববরে! 
.
তুমি যেন এক দেবদূত কোত্থেকে এলে
টেনে নিয়ে এলে ঠিক আমার ভেতরেরই আমাকে!
পাশাপাশি এক সুকঠিন অবলম্বন তুমি আমার
পাশে থাকলেই ভরসা, সব বাঁধার পরাজয়! 
“আমার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামে নি
শুধু তুমি চলে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি”
.
তোমার আগমনে শিখেছি আমি স্বপ্নের কারুকাজ,
দেখেছি আমি প্রকৃতির রং-রূপের মেলা!
আমি বৃষ্টি দেখেছি, বৃষ্টির ফোঁটায় খুঁজে পেয়েছি
জীবনের নানা বোধ, বেঁচে থাকবার অনুপ্রেরণা!
.
তুমিই দিয়েছো উৎসাহ, স্বপ্নীল সুদূরে, 
একান্ত একাকী বাঁচবার রসদে করেছো পূর্ণ... 
তবু বেদনাময় আমাকে, তোমার অনুপস্থিতি ভাবায় 
“আমার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামে নি
শুধু তুমি চলে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি”! 

আমি ভাবনায় ~ দীপঙ্কর বেরা

আলোকলতার মগ্ন পাহারায়
'আমার আকাশ কুসুম'
অচেনা গণ্ডির মাপা উচ্চতায়
লিখি নিশ্চিত নিজ ঘুম,
তাই 'স্বপ্ন দেখার খেলা থামে নি'
আমিও উপর ঘরে রঙিন
মাটি ছোঁয় নি ভাবনা অবধি
অগোছালো মন বেদুইন।
তুমি টান মারা এ আমি চর্চায়
দেখি 'শুধু তুমি চলে যাবে' 
'আমি স্বপ্নেও ভাবি নি' একটুও
আমি পৃথ্বী এমনটা দেখাবে

কবিতা : আমি বেঁচে আছি ~ জুবায়ের আহমেদ

মনে পড়ে অপরাজিতা? 
সেই তালতলার বনে কথা দিয়েছিলে 
অভয় দিয়ে বলিছিলে, জোনাকির আলো ফুরোবে
কিংবা নিভে যাবে চাঁদ।
তবু তুমি থাকবে আমার পাশে
হৃদয়ের খুব কাছে, 
চোখের তারা হয়ে। 
*
তুমিই স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলে।
কথা দিয়েছিলে, 
অভাব এলেও ভাবতে হবেনা।
নিয়ম করে ভালবাসা খাব দুজনে। 
আমি অট্টহাসি দিতাম আর তুমি বকতে,
তোমার কি সব মনে আছে অপরাজিতা?
*
তুমি ছিলে বলেই আমি পথ চলেছি,
নিয়ম করে রোদ মেখে 
আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।
'আমার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামেনি
শুধু তুমি চলে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি'

আমি আজো অপেক্ষায় আছি অপরাজিতা।
তোমার দেখানো পথে হেটে হেটে
আমি এখনো লিখে যাই পরবাস্তব কিছু কথা।
কে বলে আমি পাগল হয়ে গেছি? 
অপরাজিতা আসবে বলে 
আমি এখনো অপেক্ষা করি।

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...