শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৭

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

নতুন বছরের প্রথম মাসের মাঝামাঝি ... চিন্তন এবং মননের মেঘমল্লারে এখন বাঙ্গালীর দ্বিতীয় দুর্গোৎসবের ভাবনা-জাল ... ১৯৭৬ সালের ৩রা মার্চ বিড়লা তারামণ্ডলের উল্টোদিকে ছোট মাঠটিতে মাত্র ৫৪ টি স্টল নিয়ে যে মেলা শুরু হয়েছিলো ,  আজ সময়ের বহমানতায় সে মেলা আন্তর্জাতিক মিলন ক্ষেত্রে পরিণত ।১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক বইমেলার স্বীকৃতি অর্জন করা এই মেলা আদতে শিক্ষিত বাঙ্গালীর আঁতের মিলনক্ষেত্র ।
বইমেলার এই আলোকিত উচ্ছ্বাসের মাঝেই ২৩ শে এবং ২৬ শে জানুয়ারী ছুঁয়ে গেল ক্যালেন্ডারের পাতা । সোশ্যাল নেটওয়ার্কের হুজুগে মাতা বাঙ্গালী এই দুদিনের জন্য পালটালেন প্রোফাইল পিকচার , শুনলেন কিছু দেশাত্মবোধক গান ... এমনকি দু এক ছত্র লিখেও ফেললেন , ... কিন্তু তাতে করে কি বদলালো মন ... বা মনন ? এর মধ্যেই প্রকাশিত হল 'মুঠো ভরা রোদ্দুর 'এর জানুয়ারী সংখ্যা ... ভিন্ন ধাঁচের একাধিক লেখায় সেজে উঠেছে এবারের ব্লগ । বইমেলার ধুলো ঘেঁটে বাড়ি ফেরার পর ... সময় করে নাহয় একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন । আমাদের সমগ্র লেখক -কবি -পাঠক এবং শুভানুধ্যায়ীদের জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা। এভাবেই পাশে থাকবেন আজীবন , এই ভরসায় ...

শব্দের সমাধি প্রান্ত থেকে মোম গলিয়ে পড়া স্মৃতি বুকে জড়িয়ে
অমৃতের ছোঁয়ায়... লেখা হোক ক্রিমসন বা কপার কোরাল কবিতা
ভাল থাকুন সকলে । 
শুভেচ্ছান্তে ,
পিয়ালী বসু


বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৭

পরকীয়া ------ দূর্বা মিত্র

-"ফোর উইড্ডিংস এন্ড এ ফিউনারেল, সিনেমাটা দেখেছো?"
-"নাহ--কেন?"
-"ভালো -দেখোনি| তুমি কি ওয়ান উইড্ডিং এন্ড টু ডিভোর্সেস - এটার ব্যবস্থা করতে পারবে?"
-"চাইলে পারবো- কিন্তু চাইবো না| তোমার শরীরটা তোমার স্বামীর আছে-তাই থাক | চিতায় জ্বলার সময়ে আত্মাটা আমি ছিনিয়ে নেবো | ওটা আমার !"

আজ দুপুরে সেমিনারএ বক্ত্রিতা দেবার সময়ে ফোনে আলো জ্বলছিল - কাল রাত আড়াইটার সময়ে তোমার গাড়ি উল্টে গাছে - সকাল ছটায় তুমি চলে গেছো ! তোমার স্ত্রীর কাছ থেকে তোমার আত্মা ছিনিয়ে নেয়া আমার আর হলো না |

মনফকিরা ------ এ আমার স্মৃতিভার রিক্তা চক্রবর্তী

আজ জীবনের উপান্তে এসে দাঁড়িয়েছি 
সৃষ্টিছাড়া প্রতিটি পঙক্তির গায়ে এখন বিকেলের পোড়া গন্ধ 

অজস্র আলপিন বিঁধে থাকা স্মৃতি আলাপনও ততটা মধুর হয়না ইদানীং 

কোন কোনও দিন খুব ইচ্ছে হয় ...বিলীয়মান রামধনু রঙে
শেষবারের মতো একবার অন্তত 'জীবন ' ছুঁয়ে আসি 

নিস্তরঙ্গ ঘুমের ভিতর আজও মাঝে মধ্যে জেগে ওঠে ঋতুনির্ভর স্মৃতিভার 
চিরকাল অর্ধশায়িত জীবন যেন নতুন ভাবে স্পষ্টতর হয় 

স্মৃতির ইতিবাচক গ্রাফিতি মনে করিয়ে দেয় 
বিরতি ও বিশ্রামের পূর্ণতর দ্যোতনাবহ ব্যঞ্জনা 

আমার দশ বাই দশের নেপথ্যে ধ্বনিত হতে থাকে ... 

" জীবনে কি পাব না / ভুলেছি সে ভাবনা
সামনে যা দেখি, জানি না সেকি/ আসল কি নকল সোনা

যদি সব ছাড়িয়ে / দুটি হাত বাড়িয়ে
হারাবার খুশিতে, যাই শুধু হারিয়ে

যেতে যেতে কারো ভয়ে / থমকে দাঁড়াবো না
সামনে যা দেখি, জানি না সেকি / আসল কি নকল সোনা

ভাল আর মন্দের/ দ্বন্দ্ব জানি না 
কে ভাল কে মন্দ যে তার খবর রাখি না
সামনে যা দেখি, জানি না সেকি / আসল কি নকল সোনা "

প্রেম ও অনুভূতি ------ অনিরুদ্ধ দাস

১ --- প্রেম জন্মের-মতো একটা উৎসব...
    পিদিম জ্বালাতে হয়...

২ --- দশাকালে ঠাকুরদা ছবি হয়েছে...

৩ --  হৃদয় জলে ভেজে...

৪ -- পাউস সানা হয়...
    তখন হিজলের বৈরাগ্য আর টানে না...
    যেন বুক নিঙড়ায় অঘ্রাণের লগু (নব্বানের ধান) 

৫ --- আকাশকে ভালবেসে বিহগ ওড়ে ---
    তার গাঙে...

৬ --   উঠানে...  রুপবতী খেলা করে ---
    ছড়িয়ে বিন্নি ধানের খই...

৭ --  আমরা রাখাল থেকে যায়...
   মানসী ---জলপরীরা খেলা করে...

আমি কোনদিন ম্যাপল পাতা দেখিনি ----- সৌভিক সেন

তারপর একদিন তুই শাড়ি পড়তে শিখে যাবি
যাবতীয় যা যা কিছু আরও শিখে নিতে হয়…
জরির পাড়ে ঢেকে যাবে হাঁটু ধূলো বিকেল
আধখাওয়া কিশোরীবেলা আর
অবান্তর যতটুকু আমি…

এলোকেশী হাওয়ার বেগ নেমে এলে
থিতিয়ে পড়বে অপরিণত শব্দ চলাচল
লাল-ফিতে সেই দুপুরটায় পর্ণমোচী
খসাপাতা ভেসে বেড়াবে মনখারাপী পুকুরে

সুপর্ণা,তখন হয়ত তুই…
স্নানঘরে স্নান করতে শিখে গিয়েছিস
ভালোবাসা রপ্ত করেছিস নিয়মিত অভ্যেসে
কপালের টিপ রং বদলেছে…কালো থেকে লাল

এদিকে দিন গড়াবে দিন বদলের প্রয়োজনে
মনকেমনের জলে কালি গুলে সূর্যটা হঠাৎ
বড্ড লাল হয়ে উঠবে…ঠিক ঠিক হারিয়ে যাওয়ার
আগে…ঠিক ঠিক তোর নতুন টিপের মতো…
কিংবা কোনোকিছুই ঠিক না…

আদতে যখন সন্ধ্যে নামবে…ছায়ারা যাবে লুকিয়ে
আমাকে কোনো অপ্রয়োজনীয় কারণে ঘরে
ফিরতে হবে…আলো জ্বালতে হবে…

পোষা বেড়ালটা তার অতিনির্দিষ্ট স্থান দখল
করে জানান দেবে… উল্লেখযোগ্য কোনো কিছুই হয়নি
হওয়া আর না-হওয়ার মাঝেও সবই কেমন নিয়মমাফিক
কেউ জানবে না আমাদের কথা…
কেউ জানলো না আমাদের কথা
কথাতো নয়…শব্দমাত্র…এলোমেলো কিছু
ততদিনে নিশ্চিত তুই চুমু খেতে শিখে যাবি
যাবতীয় আরও যা যা কিছু শিখে নিতে হয়

ভোকাট্টা -ভালবাসা ------- শমিতা চক্রবর্তী

ব্যস্ত শহরে এক আনমনা বিকেল
রোদটা তখন ছাদের কার্ণিশে
হেলান দিয়ে যাই যাই বলছে
আমার স্মৃতির কাঁটায় তখন ঠাস বুনটে
রঙিন অতীত
এমনই এক মাঘের গোধূলী তে
স্বপ্নের পালকি বেয়ে সে
এসেছিল -- সদ্য ফোটা
স্থলপদ্মের মতো
সেদিনও বোধহয় এই যাই যাই রোদটা
বরণ করে নিয়েছিল
তাকে
রক্তিম সিঁথি , চোখের কাজল
রুমঝুম নূপুরে সেদিন
স্বপ্নিল জগত ----
প্রথম পরশের রোমাঞ্চ মেখে
অপেক্ষার সে
গোধূলী বেলা
জীবনের প্রতি ভাঁজে তখন
কিছু ভালবাসার
টাটকা ঢেউ
কিন্তু -----
সুখী ক্যালেন্ডারের পাতা বুঝি
দ্রুত উল্টায়
নূপুরের রুমঝুম থমকে দাঁড়ায়
ব্যস্ততার পদক্ষেপে
চোখের কাজল মুছে দিয়ে
চোখের তলায় পাকাপাকিভাবে
জায়গা করে নেয় ----
ডার্ক -সার্কেল
অনুরাগের রঙে রাঙা সিঁথি
উজ্জ্বলতা হারিয়ে প্রতিদিন
আরও প্রশস্ত হয় -----
কার্ণিশে বাসা বাঁধা স্লেট -রঙা পায়রাটার
' ভালবাসার -সংসার 'রোজ
মনে করিয়ে দেয় বিগতবেলা
শিরশিরে শীতের সান্ধ্য -কফিতে
তখন ঝড় তোলে ----
রূপঙ্করের --- ' ভোকাট্টা তোমার ভালবাসা 

এক কাপ ----- পলাশকান্তি বিশ্বাস

সকালে এক কাপ অনিচ্ছার চা
এক কাপ স্নান
এক কাপ অনিচ্ছার অন্নপিণ্ড
চলো হে শরীর
তোমাকে ঠেলে ঠেলে দিয়ে আসি
এক কাপ উত্তপ্ত চেয়ারে
তারপর?
তারপর আমি কী করব?
এক কাপ সবুজ ---- কোথাও নেই
এক কাপ গান ------ কোথাও নেই
এক কাপ গাছতলা খুঁজতে খুঁজতে
আবার এলার্ম যাবে বেজে
ওঠো হে শরীর
তপ্ত চেয়ার ছেড়ে
ফিরতে হবে চার কাপ উনুনের ধারে
অগ্নি ছাড়া কে আর তোমার প্রতীক্ষায়...... 

মেঘবালিকা ------ বিলকিস বি পলি

স্বপ্নীল স্বপ্নগুলো আজ মেঘবালিকা
শরতের শুভ্র আকাশে উড়বো 
হয়ে শ্বেত বলাকা,
সফেদ মেঘের পশমিনা বসনে
জড়িয়ে রাখবো নীলাদ্রিকে যতনে,
কাশফুলের সাথে সখ্যতা গড়ে
এলোমেলো হাওয়া হয়ে 
পরশ বুলাবো তার গায়ে


তোমার করতলে তর্জনী রেখে
সাথী করে তোমার অলীক ছায়াকে,
মেঘের আলিঙ্গনে হাটবো দুজনে
শিশিরসিক্ত পথ মাড়িয়ে


আষাঢ়ের ভরা যৌবনা টইটুম্বুর নদীতে
ভাসাবো ভেলা, আছো কি তুমি সাথে?
পথ চলতে গিয়ে পরিশ্রান্ত আমি
তোমার স্কন্ধে মাথা রেখে ঘুমাবো একটুখানি


এসো হই মেঘের আভরণে 
প্রেমাসক্ত যুগলবন্দী,
শরতের শুভ্র মেঘবালিকা আমি 
বরষার সাথে করি সন্ধি

ক্যানভাস ----- শঙ্খসাথি পাল

(১)

বিয়ের অনেক দিন পর যখন ছেলে হল বাড়ির সবাই নাম রেখেছিল সূর্য ।কিন্তু ছোট্ট থেকেই সে ছিল মেঘ পাগল ।আকাশে মেঘ করলেই সূর্যের আনন্দ দেখে কে ।মা আদর করে বলতো, ছেলেটা আমার আগের জন্মে ময়ূর ছিল নির্ঘাত ।একটু বড় হওয়ার পর থেকেই সূর্যের জগৎ ছিল ছবি আঁকা ।বড় হয়ে সেটাই হয়ে যায় একমাত্র নেশা এবং পেশা ।তবে অধিকাংশ ল্যান্ডস্কেপেই মেঘ হত কমন টপিক 


(২)


সেবার ইন্টারন্যাশানাল এক্সজিবিশনে সূর্যের ছবি এক্সজিবিট করছে, তাই সূর্যকে রোজ আসতে হচ্ছে ।শেষের দিনে আলাপ করতে আসে একটি মেয়ে - নাম তার মেঘ ।এ নিতান্তই কাকতালীয় ।তবু আলাপ ক্রমশ ভালো লাগা, ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা হয়ে যায় ।সময়ের সাথে সাথে দু'জন দু’জনের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে ।হাজার স্বপ্ন নিয়ে ভবিষ্যতটা সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ের ।


(৩)


নির্দ্বিধায় নির্ভয়ে নিশ্চিন্ত হয়েই বাড়িতে জানিয়েছিল সূর্য মেঘের কথা ।কিন্তু চিরদিনের চেনা মানুষগুলো অদ্ভুতভাবে পাল্টে গেছিল এক নিমেষে ।জন্ম পরিচয়হীন অনাথ আশ্রমের মেয়ে মেঘকে পুত্রবধূ হিসেবে মানা নাকি নিতান্তই অসম্ভব ।অনেক মান - অভিমান রাগারাগি - কিন্তু কোনো ফল হয় না ।শেষ অবধি সূর্য বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে, মেঘকে নিয়ে ঘর বাঁধবে বলে ।


(৪)


এক কামরার ভাড়ার ফ্ল্যাটটা দু’জনে মিলে সাজিয়ে নিয়েছে এই এক মাসে।আজ রেজিস্ট্রি হবে ।মেঘকে অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে আসবে নিজের কাছে, চিরদিনের জন্য ।বেরোবে এমন সময় মায়ের ফোন - "মেঘ এসে আমার সূর্যকে ঢেকে দিলো" ।মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল সূর্যের ।মেঘ অপেক্ষা করছে, তাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ে বাইকটা নিয়ে ।বিয়ে করে বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় খাওয়া দাওয়া শেষে নতুন বউকে নিজের পক্ষীরাজে চাপিয়ে রওনা দেয় সূর্য ।কানে খালি খালি মায়ের কথাটা ভেসে আসছে ।অন্যমনস্ক হয়ে সামনের ডিভাইডারে জোর ধাক্কা..... 


(৫)


চার দিন পর জ্ঞান ফেরে সূর্যের ।প্রথম কথাই ছিল - মেঘ....!! কিন্তু মেঘ ততক্ষণে সমস্ত মায়া কাটিয়ে পাড়ি দিয়েছে অন্যলোকে ।নতুন বউ তো আর হেলমেট পরে বাইকে চাপে নি ।হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই মারা যায় মেঘ।সূর্যকে বাড়ি নিয়ে আসে ওর বাবা - মা ।এক কামরার সাজানো ফ্ল্যাটে আর যাওয়া হয় না ।সূর্য এখন শুধুই ছবি আঁকে - যদিও অন্য কেউ সেটা বিশ্বাস করে না ।এখন আর ছবি আঁকতে কাগজ লাগে না তার ।অ্যাসাইলামের জানলা দিয়ে দেখা মেঘ হয়েছে তার ক্যানভাস... 

ভালবাসি ভালবাসি ------ জাকিয়া জেসমিন যূথী

ভালবাসি ভালবাসি, এই সুরে কাছে দূরে, জলে স্থলে বাজায় বাজায় বাঁশি 
ভালবাসি... ভালবাসি/
*সেই সুরে সাগর কূলে, বাধন খুলে, অতোল রোদন ওঠে দুলে সেই সুরে বাজে মনে অকারনে, ভুলে যাওয়া গানের বাণী, ভোলা দিনের কাঁদন, কাঁদন হাসি,
ভালবাসি... ভালবাসি"
.
বসে দুলি বসে দুলি, বারান্দার ওই দোলনাতে, মনে মনে সাজাই তোমার ছবি
ভালবাসি... ভালবাসি
চুল উড়ে খোলা হাওয়ায়, বাঁধন ছেড়ে অনেক দূরে যাবে চলে সেই সনে
পড়ে মনে অকারণে, তোমার গানের সুরের ধ্বনি, গভীর প্রেমের গোপন গোপন বাঁশি,
ভালবাসি... ভালবাসি
.
হিজল বনে তোমার সনে, হাতে ধরে, অনেক দূরের সবুজ মাঠে এই বুকে হৃদয় পেতে আনমনে, ডুবে যাওয়া নয়ন খানি, ভোলা স্মৃতির নাচন, নাচন রাশি,
ভালবাসি... ভালবাসি

কঙ্ক ----- শমিতা চৌধুরী ওঝা

" সংসার!!" বলে হা হা শব্দে হেসে উঠলেন সাধুমহারাজ। হাসির শব্দে এই ভোরের গঙ্গার ঢেউ যেন কয়েকবার কেঁপে উঠলো, এক ঝাঁক পায়রা উড়ে গেল ঘাট থেকে নদীর বুকে।... আমি বললাম, " এতে হাসির কি আছে? আপনারও তো একদিন নিজের পরিবার ছিল, মা বাবা, ভাই বোন ছিল, হয়তো স্ত্রী পুত্রও ছিল! আচ্ছা, আপনি কতদিন দেশছাড়া? বাংলা তো ভালই বলেন। আপনার মাতৃভাষা কি বাংলা?" কথা হচ্ছিল কাশীর গঙ্গার ঘাটের সিঁড়িতে বসে, এক অজ্ঞাতপরিচয় সাধুর সাথে।
আমার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে সাধুজী বললেন, " না বেটা, আমাদের পূর্বজীবনের বাত বোলতে নেই।বহুতদিন ঘরছাড়া। কাশীতে আছি বিশ বচ্ছর। এখন আমার নাম কঙ্ক মহারাজ। এই গঙ্গা আশ্রমই আমার আশ্রয় আছে।..... তবে তোমায় দেখে হামার বহুত বাত মনে পড়ে যাচ্ছে, আমি যখন ঘর ছাড়ি তোমার মতো আমার ভাইপো ছিল, আমার সন্ন্যাসের খবর পেয়ে বহুত কেঁদেছিল। তার নাম ছিল সুরিয়া। তোমার নাম কি বেটা? " আমি বলি " আমি আদিত্য। সুরিয়ারই এক নাম। তাই না?"। " হাঁ, ওহি হ্যায়।" পুব দিগন্তে তখন আকাশ কমলা লাল। সাধুজী কি ঈষৎ আনমনা হলেন! বুঝলাম না। তাঁ্র দৃষ্টি তখন গঙ্গার ওপারে কোন অনির্দিষ্ট দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

" জানো বেটা" বলে উঠলেন তিনি, " আমি কখনো ঝুট বলি নি। শুধু জিন্দেগীমে একহিবার ঝুট বলেছিলাম সুরিয়াকে। ঘর ছাড়ার সময় ওকে বলে এসেছিলাম, আবার ফিরে আসব! কিন্তু আজ তক ঘর লৌট যাই নি।.. ".... বুঝলাম, আমায় দেখে ওনার ভাইপোর জন্য আজ মন কেমন করছে। 

সাধুজী এবার উঠে দাঁড়ালেন, তারপর গেরুয়া চাদরটা গায়ে ভাল করে জড়িয়ে নিলেন আমাকে পিছনে রেখে এগিয়ে যেতে থাকলেন ঘাটের পার দিয়ে। পায়রার দল ওনার কাঁধ ছুঁয়ে উড়ে যেতে লাগল, পথের একটি কুকুর ওনার সাথে চলল। কি জানি কোন অভিমুখে?..... 
উনি একবারও পিছনে ফিরলেন না। হঠাৎ কেন জানি না আমার মহাভারতের পান্ডবদের স্বর্গযাত্রার কথা মনে পড়ল। ইনিও যুধিষ্ঠিরের মত জীবনে একবারই মিথ্যে বলেছেন। এমন সময়ে মনে হল, আচ্ছা, বিরাট রাজার সভায় যুধিষ্ঠিরের ছদ্মনাম যেন কি ছিল..... কঙ্ক না?..... ততোক্ষণে ভোরের সূর্য ততক্ষনে মনের সব কালো কাটিয়ে দিল। ভোরের এই গঙ্গার ঘাটে যে দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে গেল, জানি না তার আর কেউ সাক্ষী থাকল কী না! কিংবা আদৌ এর কোন ব্যাখ্যা হয় কী না তাও আমার অজানা।।


বিদগ্ধ দহন ----- দীপঙ্কর বেরা

দুরত্ব শয্যায় কাছের মানুষ
একা নীলঘুর্ণি-র আলোছায়া
ডিঙানো রাজত্বে মেঘ-পাহাড় 
আমি আমি চিৎকারের মায়া

জলছবি আঁকা দমকা হাওয়া
দহন রাতের বিদগ্ধ আকার
কাল পেরিয়ে কালের কথায়
যুগ মানুষের হাহাকার।

পার্বণ স্রোত নিজস্ব সংলাপে
তথ্যের সূত্রে আনত জিজ্ঞাসা
লিখে রাখা সেই একক
সুচিত্র বরণ দূরন্ত আশা

ডায়েরী ------ নয়নিকা সেন

চলো আজ অন্ধকার নিয়ে কথা বলি 
তার আগে চিনে রাখো দীর্ঘকালীন উপস্থিতির পর অনুপস্থিতির জলছবি 

কোন এক নিশ্চিন্ত সময়ে একা হাঁটা জীবনের চৌকাঠে 
অতর্কিত প্রেম এসে দাঁড়িয়েছিলো দমকা হাওয়া'র মতো 

মেঘ -পাহাড় ঘেরা দার্জিলিঙের আত্মমগ্ন অন্ধকার ভেদ করে 
আলোকের ভাণ্ডারী ... কাছের মানুষ হয়ে তুমি এসেছিলে 

অথচ জীবন যে বায়োস্কোপ নয় একথা ভুলে গিয়েছিলাম সে সময়ে 
নিশ্চিন্ত সাদা আলোর সম্ভাবনার পিছনে
অপেক্ষারত দহন'এর সংকেত অনুভব করতে পারিনি 

আজ ... শরীর জোড়া রামধনু নিয়েই আমি একা' 
নীল ঘূর্ণি'র অন্ধকারের কাছে আজ নিঃশর্ত আত্ম -সমর্পণ 

অস্তিত্বের চৌম্বকক্ষেত্রে ভালবাসার আলোছায়া ' পরজন্মের গল্প 

জলছবি'র উপান্তে ------ জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী

বড় রাস্তার মোড়ে তখন গ্রীষ্মকাল
অনিবার্য দহন পেরিয়ে আলোছায়ার'র আল্পনা আঁকছিল
সারি সারি কার্নিশগুলি

ইচ্ছাকৃত প্রশ্রয় পেয়েই
'একা ' নামক বিলাসিতা নেমে এলো
মেঘ পাহাড় ফেলে অবসরের সমভূমি'তে

কাছের মানুষ আর ব্যস্ততা যখন সমার্থক
দমকা হাওয়া'র কাছে আর্জি থাকে এক প্রবল বর্ষণের.....
ক্রমে 'বন্ধুত্ব ' নামক সম্পর্কটি হাতের মুঠোয় আসা মাত্রই
নীল ঘূর্ণি'র আকার ধারণ করে

পদস্খলন নাকি বিচ্যুতি.......
বুঝে ওঠার আগেই জলছবি'তে ফুটে ওঠে বিশ্বাসঘাতকের নাম

আত্মসমীক্ষণ ------ সুব্রত ব্যানার্জী

মাত্রাহীন উষ্ণতার আকর্ষণে
দূরে সরে যায় কাছের মানুষ
একা যান্ত্রিকতার জীবন
স্বপ্নে ভাসে নীল পাহাড়ের দেশ

মেঘের জানলা খোলে না দমকা হাওয়ায়
তুলিকলমের জলছবিও ধূসর হয়
সময়ের অস্থিরতায়
ছন্দহীন নিঃসঙ্গতা যাপন

চোরাবালির নীল-ঘূর্ণির টানে
ভুল পথে পা বাড়াই বার বার
স্মৃতি পথের সে আলোছায়া
আজ দিকশূণ্য আত্মদহন

ভ্রমণকাল ----- প্রদীপ্ত দাস

ছুটির খবরে উড়লো সে;
পড়ে থাকলো দূরে... রগরগে
অন্যায়বিচারী দুপুর।
আজ তো কোলাহল শেষে
প্রদীপ দেখাবে... আলো টিমটিমে
ঝুনঝুন সে নূপুর

ভোরবেলা কাল ভাঙবেনা ঘুম;
কুয়াশার মরশুমে... হিমহিম
ভেজা ধানশীষ।
ভিজবে অকাতর দুটো মন আর
মিলবে সুরে সুর... প্রেমপ্রেম
পাখিদের কুর্নিশ

কাজের কথায় কাজ নেই আর
অকাজেই উদ্ধার... ঝমাঝম
অক্লান্ত কথামালা।
এখন দুদিন সুদিন আছে
ভুলের আসর... হড়বড়
নষ্ট করোনা খেলা

জীবন্ত ফসিল ----- মুনমুন মুখার্জ্জী

আমার কাছে ভালবাসার মানে ছিল
কিছু মিষ্টি অনুভূতি,
উত্তম সুচিত্রার রোম্যান্টিক সিনেমার মত 
হাতে হাত; চোখে চোখ
অন্তরে অব্যক্ত শত কথা।
তুমিই শেখালে, ভালবাসায় বন্যতা থাকে

আমার কাছে প্রেম মানে ছিল –
কিছু কবিতা আর গান,
জীবনানন্দের বনলতা সেনের মত
জোনকি-রঙে ঝিলমিল
মুখোমুখি বসা
তুমিই শেখালে, প্রেমে না পাওয়ার কান্না থাকে
আমার কাছে পরিণয় মানে ছিল 
কিছু সুখী অবয়ব,
ফ্রেমে বাঁধানো ছবির মত
তুমি, আমি, সন্তান আর আমাদের পরিজন
একে অপরকে ভালবাসার ডোরে বেঁধে রাখা।
তুমিই শেখালে, পরিণয়ে দূরত্ব থাকে
আমার কাছে জীবন মানে ছিল
কিছু সুন্দর মুহূর্ত,
ছেলেবেলার রূপকথার গল্পের মত
কান্না-হাসির ভেলায় চড়ে
একসাথে পথ চলা।
তুমিই শেখালে, জীবনে একাকীত্ব থাকে

এখন
আমারই বন্য দংশনে ভালবাসা দিশাহীন,
আমারই বিরামহীন ক্রন্দনে প্রেম অনুভূতিহীন,
আমারই সৃষ্ট দূরত্বে পরিণয় মৃতপ্রায়,
আমারই একাকী রাজ্যে জীবন লুপ্তপ্রায়।
তবুও তোমারই আগাছা হয়ে, তোমাকেই আঁকড়ে ধরে
অবলীলায় বেঁচে আছি আমি
এক জীবন্ত ফসিল

খোলা চিঠি ----- শুভা গাঙ্গুলী

শোনো অপূর্ব , 

আজ অনেক দিন পরে,তোমার শেষ চিঠির জবাব লিখতে বসেছি, সেই কবে, কতকাল আগে লেখা তোমার প্রেমপত্র আমি আজও সযত্নে তুলে রেখেছি, না ভুল করছো তুমি,ভালোবেসে নয়, আমার' প্রাক্তন' প্রেমিকের
'বসন্ত বিলাপ' আমার সন্তানদের শোনাবো বলে,যাতে তারা আমার মতো 'আকাশ কুসুম'
না রচনা করে।
তোমার সাথে প্রেমে আমার তরফ থেকে কোনো ঘাটতি
ছিলো না হয়তো তুমিও সেই বয়সে দাঁড়িয়ে আজকের মতো স্বার্থান্ধ ছিলে না,তুমি আমার সাথে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলে, ঘর হয়েছিলো কিন্তু অসম্ভব পুরানোপন্থী তোমার গোঁড়া পরিবার আমাকে কোন স্বাধীনতা দেয় নি,আমাকে
'সোনার কেল্লা'য় বন্দী করে রাখা হয়েছিলো, আমার লেখার জগত থেকে আমাকে, তোমাদের 'শাখা প্রশাখা'য় বিস্তৃত বিশাল পরিবারে বন্দী রাখা হয়েছিলো।

সর্বদাই শুনতে এই মেয়ে 'অপুর সংসারে'র জন্য উপযুক্ত নয়, এ মেয়ে
ঘরে বাইরে নাম কিনতে চাওয়া মেয়ে।
তোমার সাথে সাতপাকে বাঁধা পড়ে,আমি 'অশনি সংকেত' কে অগ্রাহ্য করেছি, দিন দিন ক্রমবর্ধমান অশান্তিতে আমাকে নিভৃত 'অভিযান'
চালাতে হয়েছিলো, তোমার ভাই যে নানা পত্রিকায় লেখালেখি করে, আমাকে
আন্তরিক সাহায্য করেছিলো, তাই আজ আমি
একটা বিশিষ্ঠ পত্রিকার সম্পাদিকা পদে আসীন।
আমি তোমার ভাইয়ের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
আমাকে 'কোনি'র মত সেই দুঃসহ জীবনে ডুব সাঁতারে
পাড়ী দেবার রাস্তা দেখিয়েছিলো, আমাকে আমার পছন্দের রাস্তায় চলতে শিখিয়েছিলো,আর
তুমি নির্লিপ্ত হয়ে তোমার বাড়ীর মনোভাব দেখিয়েছো,
তারপর গঙ্গায় অনেক জল
বয়ে গেছে, আমাকে আবার বাঁচার পথ দেখিয়েছে অমিত, আমরা এখন একসাথেই থাকি,অমিতের
নিজস্ব লেখালেখির দুনিয়ায়
ব্যস্ত আর এখন এতদিন পর তুমি তোমার সন্তানের কাস্টডী চাইছো,যে অমিত কেই নিজের বাবা মনে করে,কেনো ওকে কনফিউসড কোরছো হঠাত এতদিন পরে।
তুমি এখনও নিজের ঘরসংসার সাজাতে পারো,
আমাদের দেশে দারিদ্রতা র দেশে মেয়েরা তো সব সময়ই সস্তা। বেলাশেষেও
তুমি ঘর বাঁধতে পারো।
তুমি আমার সন্তানের পিতা, কিন্তু সেদিন তুমি আমাকে যেদিন ওরা মিথ্যে বদনাম দিয়ে আমায় ঘরছাড়া করেছিলো,আমার সাথ দাও নি।
ভালো থেকো,


ইতি,
চারু (চারুলতা)

ইচ্ছেকথা ----- ব্রততী সান্যাল

সম্পর্কগুলো ‘শাখাপ্রশাখা’ মেলতে শিখছে.. 
অভিনয়ের মাপ বুঝে গাঢ় হয় আজকাল, 
‘আকাশকুসুম’ স্বপ্ন-বুনটে
প্রাসঙ্গিকতা রঙ হারিয়েছে কবেই— 
:
যাবতীয় বিষাদ ‘প্রাক্তন’ হয় নি, 
সময়স্রোতের আস্তরণ জমেছে কেবল— অভিমানের আলপথ বেয়ে স্মৃতিফ্রেমে ‘অভিযান’, 
প্রাত্যহিক অভ্যাস এখন.. 

ভাবছি ‘কোনি’ হয়ে উঠবো, 
ডুব-সাঁতারে অনায়াসে ছুঁয়ে দেব
নিয়মিত দায়ভারের ব্যাসার্ধ.. 
ছুটে যাব ধূ ধূ বালির দেশে, 
সবুজাভ প্রান্তর স্থাপিত হবে— হৃদয়ের হিল্লোল ভেঙে একদিন.. 
‘সোনার কেল্লা’র অলিন্দে খুঁজবো
অপ্রকাশিত শব্দের ছায়াঘর---

‘অপুর সংসার’ সেজে উঠেছিল
কাজলের হাত ছুঁয়ে পরিশেষে, 
আপাত বিরহ-অভ্যাসের ‘বসন্ত বিলাপ’
যাপনকে দুর্বোধ্য করছে ক্রমেই.. 
সংসার সাজানো বুঝি হয়ে উঠলো না আর---

আমি ‘চারুলতা’ হতে চাই, 
অহেতুক বৈধতার ‘অশনি সংকেত’ ছাপিয়ে, 
কবিতার ভিড়ে এঁকে দিতে চাই
আলোমাখা চিরাচরিত সেই ঘ্রাণ.. 

পাড়ভাঙা সমুদ্রে ইচ্ছেস্নান সেরে, 
‘বেলাশেষে’ অমলের হাত ধরে 
গিয়ে দাঁড়াবো অজানা উপত্যকার খাঁজে---
গোধূলির ক্ষণ ঘিরে মেপে দেখবো
মনকাড়া স্বপ্নের অঘোষিত পরিসর.. 

টুকরো টুকরো কিছু স্বপ্ন---- শ্রীলেখা মুখার্জ্জী

চারুলতার নিঃসঙ্গ দিনলিপি
দূরবীন চোখে
আঁকড়ে ধরতে চায় ঠাকুরপো কে--

ঈশান কোণের অশনি সংকেত অগ্রাহ্য করে,
বেলাশেষে শাখা-প্রশাখা ছুঁয়ে যাওয়া বাতাসের
বসন্ত-বিলাপ...প্রাক্তন আবর্তে আকাশ কুসুম
চয়নে ব্যস্ত থাকে--

কোনি ক্লান্ত অনুশীলনের অবকাশে
এক মুহূর্তের জন্য সাঁতারু-স্বপ্ন নিঙড়ে,
সোনার কেল্লা অভিযানে মরুভূমি তে
ওয়েসিস খোঁজে--

বাউন্ডুলে অপুর সংসার গোছানো 
আর হয়ে ওঠে না
স্বপ্ন ছন্নছাড়া ছন্দেই বয়ে চলে--

মুখ-মুখোশ ---- সুমিত চক্রবর্তী

রাতের আঁধারে তোমায় পূজা করি কলা-কৌশলে,
মনো-দর্পণে স্থান হয়ে যায় আপন সুরে,
সমুদ্রজল মিলিত হয় বালুচরে


অনেক নামে তোমায় ডাকি আদর-সোহাগে
লোকালয়ে আমি হয়ে যাই মুখোশধারী,
দিন-দুপুরে তোমায় বলি সর্বনাশী
মনে মনে আমি তোমার চরণদাসী

দ্বন্দ্বই কি জীবনের ছন্দ ----- সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

মিলটি রাতের খাবার খেয়ে নিজেদের ঘরে এলো। মৃদু আলো জ্বেলে দেখলো তুষার হাত দুটো দিয়ে চোখ ঢেকে শুয়ে পড়েছে। রাতের পোশাক পরে এসে বিছানায় বসল। তুষারের মাথার চুলগুলো একটু ঘেঁটে দিয়ে মিহি গলায় বললঃ-
- জেগে আছো? কাল দিদির মেয়ের জন্মদিন, নেমন্তন্নটার কথা মনে আছে তো, গো? মিথ্যে করে শুধু তোমাকে কিন্তু বলতে হবে যে, তুমি মহেন্দ্র এন্ড মহেন্দ্র কম্পানীর ডাইরেক্টর। অবশ্য যদি কেউ জিজ্ঞেস করে। নাহলে বলতে হবে না। কি গো, আমার কথাটা মনে থাকবে তো। 'হ্যাঁ কি না' একটা কিছু বলবে তো!
-কিছু মনে কোরো না, প্লিজ ! ঘুর্ণি ঝড়ের সঙ্গে বুকে উড়ে আসে চাপা বিষাদ। আত্মহনন! না না !সত্যের অপলাপ করলে যত না ফাঁকি দেওয়া হয় অন্যকে- তার চেয়ে অনেক বেশি ফাঁকি দেওয়া হয় নিজেকে। মিথ্যার ফাঁকা আওয়াজে আমি ফাঁকি দিতে চাই না মিলটি।
মিলটি রেগে বলেই ফেল্লঃ “বিষ নেই তার আবার কুলপানা চক্র।”
-বিষ নেই বলেই তো কুলপানা চক্র ধরতে ভরসা পেয়েছি। সত্যকে আড়ালে লুকিয়ে রাখলে ডিনামাইট যেমন পাথরকে ভেঙ্গে চৌ্চির করে আত্মপ্রকাশ করে। তেমনি আত্মপ্রকাশ করে সত্যও। সবরকম আড়ালকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দেয়। তখন কী জবাবের মুখোমুখি হব, বলতে পারো?
-প্লিজ! আর সত্যপীর যুধিষ্ঠির সাজতে হবে না। পারবে্ না তুমি এটুকু কথা রাখতে, আমার? ধরা গলায় মিলটি তুষারকে বলল।
-আমায় ক্ষমা করো মিলটি। আমি সামান্য মানুষ। আর এই পরিচয়েই আমি থাকতে বেশি ভালবাসি।
মিলটি তখন অগ্নি স্ফুলিঙ্গের টুকরো টুকরো অগ্নিকণা ছিটিয়ে বল্লঃ 
-তাহলে কাল নেমন্তন্ন যাওয়া হবে না, তাই তো?
-আমি নাচার মিলটি। তোমাকে তো যেতে বারণ করছি না। ইচ্ছে হয় তো অঙ্গে জড়াও অথবা ঘৃণায় দূরে ফেলে দাও আমাকে, যা তোমার খুশি। 
-মানে? প্রতিপ্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় মিলটি।

জিৎ ----- চন্দ্রিমা গুপ্ত

মেডিকেল কলেজ থেকে বেড়িয়ে বাসস্টপে দাঁড়ালো পরী, খুব সাবধানে দেখে নিল চারপাশটা...... "না খুব একটা লোকজন নেই এখন", এককোণে দাঁড়ালো অপেক্ষালয়ের দেওয়ালের গা ঘেঁসে ফাঁকা বাসের অপেক্ষায়:
আর পাঁচটা মেয়ের জীবনধারা থেকে একেবারে আলাদা পরীর জীবন পথ: দেখতে বেশ সুন্দর পরী,সবাই বলে ওর দুচোখের চাহুনিতে অদ্ভুৎ চোখ-কাড়া লাবন্য, কিন্তু গরীবঘরে জন্ম পরীর: একটু স্বস্তিতে বাঁচার চাহিদা পূরণে কতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হয় পরী জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করে চলেছে, কাজেই রূপ নিয়ে পরীর ভাববার সময় আর হয়ে ওঠেনি:
বয়ো:সন্ধিক্ষনে আর এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি হওয়া, আরো এক নিষ্ঠুর বাস্তবকে দেখা, দিদির বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে অবশেষে বাপের বাড়ি ফিরে আসা দিদির সারা শরীরে ক্ষত নিয়ে: কারণ শ্বশুরবাড়ির চাহিদা পূরণে বাবার অক্ষমতা!
অবিশ্রান্ত লড়াই করেই বাঁচতে হয় এ সমাজের বেশ কিছু মানুষকে পরীদের মতোই: দারিদ্রকে উপেক্ষা কোরে নিজের চেষ্টায় নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সুখের বাতাস বইয়ে দেবে ভালোবাসা দিয়ে গড়া এই ছোট্ট পরিবারটাতে, এই লক্ষ্যই যেন আলো দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছে পরীকে:
আকস্মিক ঘটনা পরীর স্বপ্নকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিল প্রায় কিন্তু সংগ্রামী মেয়ের মনোবলকে ছুঁতে পারেনি: পরী আজও লড়াই করে চলেছে, থামার প্রশ্ন নেই: পাড়ার কিছু উঠ্তি মাস্তান পরীকে না পাওয়ার ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিল অ্যাসিড ছুঁড়ে পরীর সুন্দর মুখটা জ্বালিয়ে দিয়ে: বিকৃত মুখটা পরী আয়নায় কখনও দেখনি: আত্মীয়-স্বজন, পথ-চলতি মানুষের ঘৃণা বা আতঙ্কের দৃষ্টি ওকে জানিয়ে দিয়েছে রুপসী পরী কুৎসিৎ, ভীষণ কুৎসিৎ: তবে পরী বদলায়নি: সেই জেদি, পরিশ্রমী, মেধাবী মেয়েটি থেমে যায়নি:
হয়ত বা আরো কেউ কেউ আছে পরীর মতো! তারা ঠিক খুঁজে নেবে পরীকে অথবা পরী ওদের সাথী করে নেবে: সমাজ অবক্ষয়ের স্রোতে ভেসে হারিয়ে যাবে না ওরা, কঠিন এই লড়াই এ জিতে জয়ের হাসি হাসবে ........

তাপির বাঁচার লড়াই ----- রীনা রায়


সাত বছরের ছোট্ট তাপি, ডাস্টবিনের এক টুকরো খাবারের জন্য দুটো কুকুরের সাথে অসম লড়াই করে চলেছে।
একবার মনে হচ্ছে, পারছেনা, আবার মনে হচ্ছে, পিছিয়ে এলে কখনোই জিততে পারবেনা।
--
মাত্র ক’দিন হল এই শহরে এসেছে। বাবা কোলকাতা দেখাবে বলে নিয়ে এসে, ওকে দাঁড় করিয়ে কোথায় গেল, সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হল কিন্তু বাবা ফিরলোনা। 

খিদের জ্বালায় অনেক কাঁদলো, কেউ খেতে দিল না। কখন যেন একটা ফাঁকা বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।
পথ চেনে না তাই, গ্রামেও ফেরা হ’ল না।
কদিন অভুক্ত থাকার পর তাপি দেখলো, ডাস্টবিনের খাবার কুকুরেও খায়, মানুষেও খায়।
প্রথমে সে পেরে ওঠেনি, ধীরে ধীরে বুঝেছে, বাঁচতে গেলে লড়াই করে খাবার ছিনিয়ে নিতে হবে ।
---
ক্রমশঃ তাপি বুঝছিলো কুকুরের সাথে শক্তিতে পেরে উঠবেনা। অন্য উপায় দেখতে হবে।
শুরু হলো তাপির বাঁচার লড়াই। আনমনে তাপি রাস্তার বিশাল মিছিলটা দেখছিল, কানে এলো --"লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই---'' 
ও উঠে দাঁড়ালো--এই কথাটা বাবাও বলতো, তবে কি বাবা----

মিছিলের পিছনে তাপিও চললো----

শূন্য ----- উজ্জ্বল রা়য়

অদূরদর্শী ছায়ামূর্তি জটিল বীজগণিতে
আগের মতো বাবা বেঁচে নেই 
তবুও ডাকছে ইচ্ছেটা,
কষ্ট গুলো জলের আর্সেনিকের মতো বিষাক্ত
একটা মাংসপিণ্ড বেড়ে উঠেছে নাড়ি কাঁটা হয়নি
মা আবার মরতে চাইছে নীরবে
নূন্যতম জোৎস্না যেন মরীচিকা

শরীর ভিজিয়ে দিলি খোকা..
 শিউরে উঠুক নিষ্পাপ মনালাপ
খেয়ালে নতুন আইল্যান্ড খোঁজে নিরুদ্দেশ
অন্তহীন পথটা হাহাকার করে ওঠে বারবার
নিঃশ্বাস আজ বেমানান স্পটে

অটোগ্রাফ দেখে যাক একবার..
প্রশ্নবোধক চিহ্নের আড়ালে
আততায়ীর অস্পষ্ট মৃত্যুকে.......
আমার ইচ্ছামৃত্যু সফল হোক অজানা ঠিকানায়.....

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...