বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৭

কঙ্ক ----- শমিতা চৌধুরী ওঝা

" সংসার!!" বলে হা হা শব্দে হেসে উঠলেন সাধুমহারাজ। হাসির শব্দে এই ভোরের গঙ্গার ঢেউ যেন কয়েকবার কেঁপে উঠলো, এক ঝাঁক পায়রা উড়ে গেল ঘাট থেকে নদীর বুকে।... আমি বললাম, " এতে হাসির কি আছে? আপনারও তো একদিন নিজের পরিবার ছিল, মা বাবা, ভাই বোন ছিল, হয়তো স্ত্রী পুত্রও ছিল! আচ্ছা, আপনি কতদিন দেশছাড়া? বাংলা তো ভালই বলেন। আপনার মাতৃভাষা কি বাংলা?" কথা হচ্ছিল কাশীর গঙ্গার ঘাটের সিঁড়িতে বসে, এক অজ্ঞাতপরিচয় সাধুর সাথে।
আমার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে সাধুজী বললেন, " না বেটা, আমাদের পূর্বজীবনের বাত বোলতে নেই।বহুতদিন ঘরছাড়া। কাশীতে আছি বিশ বচ্ছর। এখন আমার নাম কঙ্ক মহারাজ। এই গঙ্গা আশ্রমই আমার আশ্রয় আছে।..... তবে তোমায় দেখে হামার বহুত বাত মনে পড়ে যাচ্ছে, আমি যখন ঘর ছাড়ি তোমার মতো আমার ভাইপো ছিল, আমার সন্ন্যাসের খবর পেয়ে বহুত কেঁদেছিল। তার নাম ছিল সুরিয়া। তোমার নাম কি বেটা? " আমি বলি " আমি আদিত্য। সুরিয়ারই এক নাম। তাই না?"। " হাঁ, ওহি হ্যায়।" পুব দিগন্তে তখন আকাশ কমলা লাল। সাধুজী কি ঈষৎ আনমনা হলেন! বুঝলাম না। তাঁ্র দৃষ্টি তখন গঙ্গার ওপারে কোন অনির্দিষ্ট দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

" জানো বেটা" বলে উঠলেন তিনি, " আমি কখনো ঝুট বলি নি। শুধু জিন্দেগীমে একহিবার ঝুট বলেছিলাম সুরিয়াকে। ঘর ছাড়ার সময় ওকে বলে এসেছিলাম, আবার ফিরে আসব! কিন্তু আজ তক ঘর লৌট যাই নি।.. ".... বুঝলাম, আমায় দেখে ওনার ভাইপোর জন্য আজ মন কেমন করছে। 

সাধুজী এবার উঠে দাঁড়ালেন, তারপর গেরুয়া চাদরটা গায়ে ভাল করে জড়িয়ে নিলেন আমাকে পিছনে রেখে এগিয়ে যেতে থাকলেন ঘাটের পার দিয়ে। পায়রার দল ওনার কাঁধ ছুঁয়ে উড়ে যেতে লাগল, পথের একটি কুকুর ওনার সাথে চলল। কি জানি কোন অভিমুখে?..... 
উনি একবারও পিছনে ফিরলেন না। হঠাৎ কেন জানি না আমার মহাভারতের পান্ডবদের স্বর্গযাত্রার কথা মনে পড়ল। ইনিও যুধিষ্ঠিরের মত জীবনে একবারই মিথ্যে বলেছেন। এমন সময়ে মনে হল, আচ্ছা, বিরাট রাজার সভায় যুধিষ্ঠিরের ছদ্মনাম যেন কি ছিল..... কঙ্ক না?..... ততোক্ষণে ভোরের সূর্য ততক্ষনে মনের সব কালো কাটিয়ে দিল। ভোরের এই গঙ্গার ঘাটে যে দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে গেল, জানি না তার আর কেউ সাক্ষী থাকল কী না! কিংবা আদৌ এর কোন ব্যাখ্যা হয় কী না তাও আমার অজানা।।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...