রবিবার, ১ মে, ২০১৬

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে






রাত্রি খসে পড়বার আগে এই যে পাললিক সমুদ্রস্নান, রৌদ্রকথন,
তার ভেতরে তোমার স্মৃতি-বিস্মৃতির লাবণ্যগুলি ঝলমল করে উঠছে।
পরিব্রাজকের মতো হালকা পোশাকে
হেঁটে যেতে যেতে তিমিরগহনে যে ক্রন্দনধ্বনি তুলেছিলে, তার মিহি সুর আমার
হৃৎপিণ্ড চিরে চিরে ঝরিয়ে দিচ্ছে সুপ্রভা, স্রোত, বৃষ্টিদাহ্য স্নিগ্ধ জাহাজের ডানায় চড়ে
উড়ে চলেছি নিজেরি সমাধিপ্রান্তরে " 
- মে মাসে পা দিলাম আমরা । নতুন বছরের প্রথম চারটি মাস কেটে গেল দৈনন্দিন ভাল মন্দের হিসেব মিলিয়ে । ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস যা সচরাচর মে দিবস নামে বিশ্বের সর্বত্রই  উদযাপিত হয়। এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদযাপন দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন সমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ১লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারি ভাবে পালিত হয়।
সময় বহমান । দিন প্রতিদিন মাস বছর কাটিয়ে সময়ের হাত ধরে আমরা এভাবেই পার করে ফেলি দশক । শরীরের প্রাণবন্ত যাপনচিত্র নিয়ম মাফিক ফিকে হতে থাকে সময়ের ঘনঘোর আঁচে " কি যেন বলার ছিল ? " সময়াভাবে আর বলা হয়ে ওঠেনা সেই সব কথা , থেকে যায় তারা অব্যক্ত হয়ে , আর "আপন মনের মাধুরী মিশায়ে " কবি/ সাহিত্যিক রচনা করেন তাঁদের সৃষ্টি -- 'সাহিত্য' নামে যা সমগ্র পাঠককূলের কাছে পরিচিত । পরিযায়ীর পাখির ঠোঁটে লেগে থাকে কুয়াশাচ্ছন্ন সময়ের আদুরে চাবি । এই আকালের দিনেও অক্ষরের পর অক্ষর জুড়ে সৃষ্ট হয় সাহিত্য । 
সকলের জন্য রইল অশেষ শুভকামনা । পাশে থাকুন আর প্রতিনিয়ত সৃজনশীল লেখার মধ্যস্থতায় আলোকিত করুন রোদ্দুরের আঙ্গিনা -- Because magic still happens in the enchanting chambers .

শুভেচ্ছান্তে ,
পিয়ালী বসু 






স্মরণে বিবেকানন্দ রোড ~ অরুণজীব রায়

গতকাল;
মুরগীর দোকানের পাশ দিয়ে,
যেতে যেতে ---
বারবার ভেসে উঠছিল বিবেকানন্দ রোডের
সেই মানুষগুলোর মুখ। যারা;
এই মুরগী-কসাইদের মতো
রাজনীতি কসাইদের হাতে বলিদান।
বিনিময় ভোট, মূল্য মাত্র পাঁচ লাখ।

দিনবদলের পদ্যকথা ~ সুনীতি দেবনাথ

ক'দিন হলো আকাশটা নীল থেকে সাদা হলো পালাবদলে নয়া কূটকৌশলে দান চালাচালি 
মার্কিনী - কিউবান ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হয়ে গেলো।
কিউবার বন্ধুরা এখন চে গেভারার নামটা
আমার বারবার মনে আসছে, আমাকে ক্ষমা করো!
এমন দিনবদলের বার্তালাপ দিন বদলাবে কি জানিনা মোটেই।
ঠিক অষ্টাশী বছর আগে প্রথম বারের মতন
কিউবায় এসেছিলেন মার্কিন এক রাষ্ট্রপতি!
মাত্র বারোটি বছর কম পূর্ণ হতে একটি শতাব্দী!
এই প্রায় শতাব্দী জোড়া সময়ে কত কূটকৌশল
চোরাগুপ্তা লড়াই আর গগনস্পর্শী লোভের অগ্নিশিখা!
কিউবার মৃত্তিকা বড় পেলব উর্বর, দামি খনিজে ভরপুর,
তাই শকুনেরা ঘোরাফেরা করে বহুকাল আশেপাশে —
মার্কিনী তৎপরতা ছিলো বহুকাল ধরে এই ভূমি দখলের,
ক্যারিবিয়ান সাগরের অগুনতি ঢেউ সাক্ষী আছে —
কতনা বিষাদিত গূঢ় চক্রান্তের,
কত রক্তপাতের সাক্ষী আছে রোদেলা নীলাকাশ!
কম্যুনিস্ট দেশ বিপ্লবোত্তর কালে হাত ধরে রাশিয়ার —
ক্রুদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্র ফুঁসে উঠলো ক্রুদ্ধ অগ্নি সংকেতে!
১৯২৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিশতম প্রেসিডেন্ট কেলভিন কুলিজ
মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউ এস এস টেক্সাসে
দর্পিত পা রেখে নেমেছিলেন হাভানার বন্দরে!
তারপর অষ্টাশী বছর এক ঘৃণ্য আগ্রাসন - চক্র
কখনো পর্দার অন্তরালে প্রকাশ্যে কখনো,
বড় নিষ্ঠুর গতিতে আবর্তিত হয়েছিল।
বিপ্লবী অগ্নিপরিধির সীমানা পেরিয়ে কিউবা
স্বাধীনতার কূলে উড়িয়েছিল রক্ত পতাকা —
ফিদেল কাস্ত্রো কমিউনিস্ট দেশের রাষ্ট্রনেতা।
যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ঘোষণা করে এক ক্রুঢ় অবরোধ নীতি,
প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার কিউবান প্রতিবিপ্লবীদের নিয়ে গড়ে তুললেন বাহিনী,
সি আই এ নির্দেশ পেলো কিউবা আক্রমণের,
দুহাজার চার সালে প্রেসিডেন্ট বুশ নগ্নভাবে
আদেশ দিলেন সামরিক আক্রমণ, আগ্রাসনের,
আরো নগ্ন - ঘৃণ্য আক্রমণের, গঠিত হলো
" কমিশন ফর অ্যাসিস্ট্যান্স টু আ নিউ কিউবা "!
ক্ষমতার বেপরোয়া লোভ বেপরোয়া আগুন হয়ে
এই সেদিন দুনিয়াকে চমকে দিয়ে জ্বলেছিলো দাউদাউ!
দুনিয়ার সবচেয়ে বড় তাকতদার দানবীয় শক্তি
দিনের পর দিন রাতের পর রাত সন্ত্রাসী আক্রমণ
আর ঘৃণ্য অবরোধ নীতিতে পিষে চুরমার করার ধান্ধায় ছিল
বিপ্লবে বিজয়ী সমুদ্র মেখলা বিশ্বের বিস্ময় কিউবাকে,
সারা দুনিয়ার বিপ্লবী চোখে স্বপ্ন জাগানো কিউবাকে,
দানব শক্তির পরাজয় ঘোষিত হলো বিশ্ব দরবারে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সফর ভাষণ
উচ্চকিত কণ্ঠস্বর চুপসে ম্রিয়মাণ হলো এই সেদিন
ঊননব্বই বছরের বিপ্লবী যুবক ফিদেল কাস্ত্রোর পত্রাঘাতে,
বিপ্লবী স্বপ্নদেখা চোখ সব অনিমিষে স্পষ্ট চেয়ে আছে —
সন্ত্রাসী দানবের পতন হবে নাকি বিপ্লবীর হবে বিজয় ?
সারা বিশ্বে নয়া রাজনীতির মেরুকরণের পালা এখন!

বাঘ-বদ্রি- তালা ~ চন্দন চক্রবর্তী

খুঁজতে গেলাম বদ্রিপাখি,
বেরিয়ে এল বাঘ।
করুণ বাঘের "হালুম হুলুম"
আহাঃ আমার ঘরেই থাক।

বাড়িতে ফিরে অবাক হলাম,
বদ্রি আছে বসে।
লেজ উঁচিয়ে মুখ দেখালো
মুচকি ডানায় হেসে।
আমার মনে বদ্রি বাসা,
শরীর বনে বাঘ,
মিলেমিশে দিব্ব্য আছে
আর কটা দিন থাক।
হালুম বাঘের দাঁত বেরোল
তপ্ত শরীর শুঁকে,
তালাবন্ধ তবু নিডর
খাদের তলা ঝোঁকে।
বদ্রি টা যে প্রেমজরজর
বৃষ্টি-আকাশ গানে
রঙিন ডানায় সপ্ন গাঁথে
তিড়িংতিড়িং প্রানে।
কাপড় খোল শরীর ঝরাক
ঘামালু বুকের লালা
আগে-পরে খুলতে পারো
তোমার হাতেই তালা।।

জায়াকে ~ শৌণক বক্সী

তোমার কাছে যেতেই শুরু হয় –
অজানা মানসের তীরে অনাগতের ফুল ফোটানো।
অনুভূতির দিগন্তে শুনতে পাই
আকাশের গুঞ্জরণ ।
কত শতবার ডেকেছি তোমাকে।
#
না পাওয়ার গহন বেদনার মধ্যেই
চলতে থাকে বারবার পাওয়ার গভীরতা
তা প্রকাশ করা যায় না
তবুও স্বচ্ছন্দে বহন করতে হয়
পাওয়া না পাওয়ার দুঃসাধ্য আয়াস।
#
চেতনার অণুতে অণুতে তোমার উতলা ঝংকার 

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ~ কুন্তলা চক্রবর্ত্তী

প্রবালবাবু সাহিত্যিক মানুষ। ছোট বড় নানান পত্রিকায় ওনার লেখা ছাপা হয়। পরিচিত মহলে বেশ সুনাম আছে সাহিত্যিক হিসেবে। আমুদে মানুষ, সবসময় হাসি, মজার মুডে থাকেন।
প্রবালবাবুর লেখা যথেষ্ট ভালো হওয়ায় পত্রিকার সম্পাদকেরা ওনার লেখা আশা করেন তাঁদের পত্রপত্রিকায়। তাই পয়লা বৈশাখ, রথযাত্রা, দুর্গাপূজা, বইমেলা প্রভৃতি সংখ্যার আগে প্রবালবাবুর উপরে লেখার চাপ থাকে যথেষ্ট। সম্পাদকেরাও তাঁদের পত্রিকার জন্য লেখা দিতে প্রবালবাবুকে তাড়া দিতে থাকেন।
এ হেন প্রবালবাবুর হঠাৎ লেখায় তীব্র অনীহা জন্মালো। কিছুতেই তাঁর আর লিখতে ইচ্ছে করে না। লেখার কোন উৎসাহই তিনি আর পান না।এদিকে পূজা এসে যাচ্ছে। পত্রিকার সম্পাদকেরা উদ্বিগ্ন হচ্ছে লেখা না পেয়ে। তাঁরা প্রবালবাবুকে ফোন করছেন কিন্তু মুশকিলের কথা তিনি ফোনও ধরছেন না। মহা বিপদ!
শেষে পুণ্যতোয়া নামে এক লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ঋতবান সেন, সোজা এসে হাজির প্রবালবাবুর বাড়ীতে। এসেই উত্তেজিত কন্ঠে, " ও প্রবালদা, তুমি ফোন ধরছো না কেন?' নিরুত্তাপ কন্ঠে প্রবালবাবুর উত্তর, "আমার সমাধি হয়েছে।" ঋতবান, ততোধিক উত্তেজিত কন্ঠে, " তা বেশ হয়েছে! এবারে কোন উর্বশী, মেনকাকে আনতে হবে তোমার সমাধিভঙ্গ করতে?" প্রবালবাবুর সহাস্য উত্তর, " আরে, আর উর্বশী, মেনকার দরকার নেই! এখন আমার না আছে রূপ, না আছে যৌবন। যদি কেউ আসে তবে আমার টাকার থলিটি টার্গেট করেই আসবে। ওসব নয়। আজকাল খালি মনে হয়, অনেক লিখে ফেলেছি, আর এসব করে কোন লাভ নেই। " ঋতবানের তো মাথায় হাত! সে আর্তস্বরে বলে, " বলো কি প্রবালদা! তুমি আমাদের পত্রিকায় লিখছো সেটা এখন সবাই জানে। বিজ্ঞাপন বেরিয়ে গেছে। এখন তুমি বলছো, লিখতে ইচ্ছে করছে না! পাঠককে আমি কি জবাব দেবো বলো তো! না না, ওসব চলবে না! তুমি লেখা শুরু করো। তোমার যা প্রতিভা, একবার শুরু করলেই হুড়মুড় করে শেষ হয়ে যাবে, দেখো! মোটকথা আগামী পরশুর মধ্যেই আমার লেখা চাই!"
প্রবালবাবু ভেবে দেখলেন, ঋতবানের কথাটা ঠিক। বিজ্ঞাপন বেরিয়ে গেছে। এখন লেখা না পেলে সম্পাদকের বিপদ। তিনি শান্তস্বরে ঋতবানকে বললেন, " আচ্ছা তুমি বাড়ী যাও। আমি দেখছি, কিছু পারি কি না।"
সন্ধেবেলা প্রবালবাবু অনেকক্ষণ ধ্যান করলেন। মনঃসংযোগের চেষ্টা করলেন। তারপরে খাতা কলম নিয়ে বসলেন লিখতে। তারপরে তাঁর কলম থেকে নিম্নলিখিত কবিতাটি নিঃসৃত হল।
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন
-----------------------
লিখতে বসেছি আজ এক নয়া কাব্য,
মাথাতে আসে না কিছু, (কি যে ছাই ভাববো!)
লিখে লিখে জমা হল ধার, বাকী, কর্জ!
লিখে হবে রোজগার, তার আর নেই যো!
নিজে লিখি, নিজে ছাপি, নিজে কিনি সেই বই
সবাই যে লেখে আজ, পাঠকের নাই থই।
নামীদামী লেখকের লেখা সব মেলে "নেটে",
আমাদের মতো সব লেখকরা গেছে ঘেঁটে।
বই হয় ডাউনলোড, বই নাই বিক্রি,
লেখালিখি করে হবে ভিটেমাটি ডিক্রী!
খালিপেটে থাকতাম বই বেচে খেতে হলে,
সুখে লিখি দুইবেলা চাকরীটা আছে বলে।
সারাদিন বসে লিখি, নড়াচড়া নাই রে!
ধরেছে আমায় তাই প্রেশারে ও সুগারে!
লেখালিখি ঢের হল, ঢের হল কৃষ্টি!
কমলে লেখক কিছু, বেঁচে যাবে সৃষ্টি!
কবিতাটি লিখে প্রবালবাবু খুব সন্তুষ্ট হলেন। খুশী মনে এবারে তিনি ঘুমাতে গেলেন। নাকি আবার সমাধিস্থ হলেন, কে জানে! বন্ধুরা একবার খোঁজ নিয়ে দেখবে নাকি?

নববর্ষ বনাম নিউ ইয়ার ~ সুপ্রভাত লাহিড়ী

নববর্ষ না নিউ ইয়ার কোন দিনটি আমাদের বেশী কাছের, এই ব্যাপারটা প্রতি নববর্ষেই মনে উঁকি দিয়ে দিয়ে যায়। যেমন ১৪২২শে মনে খচখচ্ করেছে, আবার ১৪২৩-এর দোরগড়ায় এসেও সেই একই প্রশ্ন মনে হানা দিয়েছে। এ নিয়ে আমি বহুজনে প্রশ্ন রেখেছি, উত্তর এসেছে বিক্ষিপ্তভাবে, হৃদয় কাড়ে নি। 
আসলে নিউ ইয়ার ওল্ড ইয়ারের বড়দিনের আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। বড়দিনের অধিকাংশ উইস এবং কার্ড দুই অনুষ্ঠানকে জড়িয়েই দেয়া-নেয়া হয়। চলে প্রতিযোগিতা, কে কাকে আগে উইস করবে এবং কার্ড পাঠাবে!পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়েই যেমন কার্ড কেনার হুজুগ তেমনি সারা জানুয়ারী মাসটাই চলে যায় সেই কার্ড আদান-প্রদানে।
নিউ ইয়ারে রাত বারোটায় পার্কষ্ট্রীট তো আছেই, সেই সঙ্গে নানান স্বাদের, আকৃতির কেক। আসলে শীত কালের জন্যেই ফার্স্ট জানুয়ারি এডভানটেজ বেশী পায়। হই-হুল্লোড় করেও দম ফুরোয় না, ক্লান্তিও আসে না।এই দিনটি পৃথিবীর সব লোক মানে বছর শুরুর দিন হিসাবে, তাই এর প্রচারটাও বেশী। আমরা নিজেরাও তো ইংরাজী মাসটাকেই মেনে চলি(বিবাহ ও অন্যান্য শুভঅনুষ্ঠানের দিন- ক্ষণ ছাড়া)। তাই তার এত প্রচার, দাপট এবং গ্রহণযোগ্যতা। কিন্তু পয়লা বৈশাখের নিদাঘ এতে বেশ কিছুটা বাদ সাধে..... ‘দারুন অগ্নি বাণে রে.....’। খাওয়ার আয়োজন থাকে প্রচুর-হরেক রকম, লোভনীয় এবং পাতপেড়ে, সব গরমের বাধা উপেক্ষা করে। নববর্ষের পার্ক স্ট্রীট হচ্ছে-গঙ্গার ঘাট-ভোর রাতে গঙ্গাস্নান তারপর কালীঘাটে মায়ের বাড়ি-খেরো খাতায় ছয়লাপ-দোকানে দোকানে বাঁধা কলাগাছ-সিঁদুরে চর্চিত সিদ্ধিদাতা গণেশ-জ্বলন্ত ধুপকাঠি-হালখাতা-মিষ্টির প্যাকেট-গ্লাসে করে ঠান্ডা পানীয়/শরবত-বাংলা নতুন বছরের ক্যালেণ্ডার...। নববর্ষে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি-নতুন জামাকাপড়....উফ্ তার কি গন্ধ!
সত্যি কথা বলতে কি, ১লা বৈশাখ কখনই স্বভাবে হাই-ফাই নয়। একটু শান্ত, কোমল তার হাবভাব। ঠাঁট-বাঁট প্রচণ্ড কিন্তু প্রদর্শনমূলক নয়।একলা বৈশাখ যেন সত্যি সত্যিই আভিজাত্যে ভরা, বড়ই একলা.......
সবার শুভ আমার শুভ, আমার শুভ সবার শুভ। শুভ নববর্ষ সর্বশুভ হোক। ১৪২৩-এর স্লোগান হোক।“সর্বাশুভ বিনাশয়:”

সম্পর্কের ফুলসুখ ~ দীপঙ্কর বেরা

ডানা মেলে সম্পর্ক চাদরে
ঘুরেছি কৃষ্ণচূড়া পলাশের দেশে

'এতটা পথ পেরিয়ে এসেছি 
তবু দুজনে' আজ অন্তরায় বেশে!

মিলনের ফুল ফুল গোলাপ
হাতে হাত রাখা মেদুর ভাবনায়
'যেনো হয়ে গেছি আরও
অচেনা' কোন দূর রাত্রি প্রহরায়।
'স্বপ্নেরা তবু খুঁজে যায়' 
আশার প্রদীপে প্রেমের ফুলসুখ 
'জীবনের শেষ সীমানায়' 
তুমি আমি সেইতো বাঁচা উৎসমুখ

কাব্যাভিমান ~ লাভলী বসু

ব্যক্তিগত বিষাদবিলাস এখন 
সময়ের অবগুণ্ঠনে বন্দী 
অকিঞ্চিত্কর আর যা কিছু আছে 
অনুভবের আলতো ছোঁয়ায় 
সহস্র শঙ্খচিল হয়ে অন্যকোন 
দীর্ঘায়িত শব্দমালার অপেক্ষায় ---


পাতার ভাঁজে , স্পর্শহীন অস্পর্শের বৈভবে 
"এতটা পথ পেরিয়ে এসেছি তবু দুজনে 
যেনো হয়ে গেছি তবু অচেনা 
স্বপ্নেরা তবু খুঁজে যায় 
জীবনের শেষ সীমানায় "


অশরীরী মধ্যরাতের গুঞ্জরিত অব্যক্ত ব্যথা 
আকাশের ক্যানভাসে রূপকথার 
সখ্যতা গড়ে অনন্ত দৃঢ়তায় ---
ইনফিউসানে স্বপ্নেরা আঁকিবুঁকি কাটে 
আত্মতৃপ্তি নিয়ে ---
আদরের নৌকোয় ভাসিয়ে দেয় 
সুখের আলফাজ 

রোমন্থন ~ সুকান্ত চক্রবর্তী

আমার হারিয়ে ফেলার অনেক কিছুই ছিল নির্বাচিত ; 
পেন্সিলের মাথায় রক্ত মেখে বিপ্লব ডেকেছিলাম ;তাই 
রাস্তার মোড়ে দুঃস্বপ্ন দেখে ছোট্ট ছেলেটা লুকায় ডাস্টবিনে ।
বিপ্লব কবে কাগজে লেখা হয়ে ছেপে গেছে, আর ডাস্টবিন !
এখন ছড়িয়ে আছে,বর্জ্য শহরে, এদিক-সেদিক ।
আমার হারিয়ে যাওয়া অনেক কিছুরই হিসেব বাকি ছিল ;
সব ই ত শুধু ঘুরছে ; আপেক্ষিকতাবাদ মেনে শুধু দু-চারটে
হিসেব কলম খাতায় , তাও অর্ধেক কষে বেপরোয়া জীবন
ছুটে চলছে সর্বনাশের দিকে ; সর্বনাশ, তুমি ও আজ বেহিসাবী 

পুতুল ~ দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

পুতুল ব্যাপারটায় আপত্তি ছিল 
সেই হুইল চেয়ার এলো 
পুতুলের মতো বসিয়ে 
গাড়ি গাড়ির দিকে চলে গেলে
দোকানের সবকটা বারবি বারবার হাত নাড়ে
#
সে না পারার যন্ত্রণাও বোঝাতে পারে না
শুধু চোখ দেখে কাচের ওপারে
বৃষ্টির জল
#
দরজা খুলে গেলে পুতুলের মতো তুলোর বিছানা
রোদও খায়
দম ফুরালে জানে পুতুল ভাসান
সে ভাসানে সেও তো ছিল ..

ফুলস্টপ ~ সৌম্যলন্দু ঘোষ

আজকের দিনটা মনে হচ্ছে শুভর কাছে খুবই স্পেশাল। শুভ মানে শুভব্রত সিনহা, টরন্টোর মাউন্ট সিনাই হসপিটালের সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের আপাতত হেড। আপাতত বলার কারণ হয়ত ডক্টর পল কেলির আচমকা পদত্যাগও হতে পারে। যাই হোক, আজ রুটিনমাফিক ভিজিট সারতে রাত প্রায় ৮টা বেজে গিয়েছিল শুভর, তাই ডক্টরস কোয়ার্টারে না গিয়ে তার চেম্বার থেকেই কলকাতার বাড়িতে ফোনটা করে স্কাইপিটা অন করতে বলল সে বাবানকে। বাবান ওর একমাত্র ছেলে, শুরুতেই একগাল ফুলিয়ে যথারীতি দাদু আর মায়ের প্রতি সারা সপ্তাহের রাগটা উগরে ফেলতে নিল বেশ কয়েকমিনিট; তারপরই স্মিতার সঙ্গে একটু নিভৃত আলাপ, শেষে বাবার সঙ্গে একটু মনখারাপের দরকষাকষি করে যখন স্কাইপিটা বন্ধ করল তখন ঘড়িতে রাত ৯টার কাঁটা ছুঁই ছুঁই করছে। আজ কলকাতার বাড়িতে বেশ একটা উৎসবের মেজাজ পাওয়া গেল, শুভ ভুলেই গিয়েছিল যে আজ বাংলা নববর্ষ। এটা ভেবেই তার ছোটবেলার বেশ কিছু কথা মনে পড়ে গেল; ছোটবেলা মানেই উত্তর কলকাতার সেই গলি, দলবেঁধে স্কুল পালানো, রকের আড্ডা আর বেপাড়ার মেয়েদের দিকে আড়চোখে তাকানো। উফফ! কি দিন গেছে; ভাবলেই হাসি পায় এখন শুভর। কানাডাতে সে এসেছে প্রায় আট বছর, এর মধ্যে মাত্র দুইবারই সে দেশে যেতে পেরেছে। এমনিতে একা থাকতে ভালবাসে শুভ, অবশ্য এর পিছনে একটা মারাত্মক কারণও আছে অবশ্যি; যাক সে কথা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শুভ দেখল প্রায় ৯.০৫, আচ্ছা আজকেই সব শেষ করে দিলে কেমন হয়? হ্যাঁ হ্যাঁ, আজকেই; দেরি করে কি লাভ....
বিপ...বিপপ....
হঠাৎই তীব্র হর্ণের শব্দে ঝিমভাবটা একদম কেটে গেল শুভর, তারপরই উল্টোদিক থেকে আসা হেডলাইটের আলোয় চোখটা ধাঁধিয়ে গেল তার। উফফ! আর একটু হলেই হয়েছিল আর কি? সরাসরি ধাক্কা লাগত গাড়িটার সাথে, ঠিক সময়ে বাঁদিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে সে গাড়িটা। এইরকমভাবে মরে যাওয়াটা মোটেই পছন্দ না শুভর, তার মতে মৃত্যু আসবে তার নিজের ইচ্ছামত, এই চেষ্টাই সে কি করছে না? ওই তো সামনে একটা ওয়াগন ভ্যান, ওর সাথে গাড়িটা অ্যাক্সিডেন্ট করালে কেমন হয়? দারুণ একটা থ্রিল হবে মনে হচ্ছে; ঠিক এইসময়ই শুভর প্রিয় এইচ.এস.ভি গ্রান্জ-টার স্পিডোমিটারের কাঁটা ১২০ কিমির ঘর পার হল। তারপর, আর কি....
চোখ দুটো আবার একবার রগড়ে নিল শুভ, অবশ্য বারোতলা এই অ্যাপার্টমেন্টের ছাদ থেকে এমনিও নিচটা অন্ধকারই দেখায়, যতই সেখানে নিয়ন বোর্ডে ডক্টরস কোয়ার্টার লেখাটা জ্বলজ্বল করুক না কেন? রেডিয়াম হাতঘড়িতে তখন ঠিক রাত বারোটা পাঁচ; শুভ এখন ছাদের আলসেটার উপর বসে খুব ঠান্ডা ভাবে একটা মার্লবোরো ধরালো, তারপরেই ভাবলো আচ্ছা ছাদ থেকে একটা ছোট্ট জাম্প দিলেও তো হয়। বেশ একটা ইন্টারেষ্টিং প্রসেস, খুব একটা যন্ত্রনা হবে কি? বারোতলার যা হাইট; নাহ!আর ভেবে লাভ নেই, ছাদ থেকে ঝাঁপই দেবে শুভ। এইদিকটা এমনিতেও অ্যাপার্টমেন্টের পিছনদিক, কাল সকালের আগে কেউ মনে হয় না তাকে থুড়ি তার বডিকে খুঁজে পাবে; আচ্ছা দেখতে কেমন হবে তাকে? খুব ভয়ানক কি, মাথা-হাত-পা থ্যাঁতলানো, চারিদিকে রক্তের মধ্যে তার দেহটা মন্ড পাকিয়ে পড়ে আছে; আচ্ছা এই ছবিটা তার বাড়িতেও তো পাঠাবে, বাবান আর স্মিতা সহ্য করতে পারবে তো? হে হে, ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে গেল শুভর। এইভাবেই তাহলে মরবে সে; এরপরই শুভ আলসের উপর উঠে ঝাঁপটা দিল....
নাআআহ...!!!
একটা চিৎকার করে উঠেই শুভ দেখল চটচটে ঘামে গেঞ্জিটা কখন যেন ভিজে গেছে; ওহহ! স্বপ্ন দেখছিল সে তাহলে। আশ্চর্য ঘামে ভিজে যাওয়া সত্ত্বেও তার কেমন যেন ঠান্ডা লাগছে, এটা তো হবার কথা নয়। শেষ পর্যন্ত ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াতেই; আরে, ওকি? স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে, হ্যাঁ, কোনও ভুল নেই। এত রাতে তারই হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে অ্যাপার্টমেন্টের তলায়, কোনও এমার্জেন্সী কেস নাকি? তাছাড়া, একটা পুলিশের গাড়ি, কেন? তার মনে পড়ল ফিফথ ফ্লোরের মিঃ অ্যাডামস বেশ কিছুদিন যাবৎ হার্টের প্রবলেমে ভুগছিলেন, হতেও পারে তার কিছু হয়েছে। কিন্তু, পুলিশ কি করছে? একবার দেখে আসবে কি সে? এইভেবে ঘরের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকাতেই চমকে উঠল শুভ; আরে ঘর থেকে ব্যালকনি আসার দরজাটা বন্ধ, তাহলে সে কি করে এল? দরজটা ঠেলতেই কি যেন হল শুভর, মনে হল থাকথাক অন্ধকারের বদলে তার চোখে কেউ যেন হাজার ওয়াটের আলো ফেলল। তারপর ঘরে ঢুকতেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল শুভর কাছে; তাহলে এতদিনে সে পেরেছে। মুক্তির আনন্দে নিজের কাঁধ ধরে নিজেই ঝাঁকিয়ে দিল সে....
সেইমুহুর্তেই পুলিশের লোকটি সিলিং এর দিকে চেয়ে দেখল মিঃ সিনহার নিথর বডিটা ফাঁস দেওয়া অবস্থাতেই দুলছে, ঠিক যেন একটা সরল দোলগতির পেন্ডুলাম....
রাত তখন ঠিক তিনটে দশ... 

উতরোল ~ পিয়ালী বসু ঘোষ

গুটিয়ে গেছে সব অভিমান
বিনম্র সন্ধ্যায় কিছু মেঘ জমে আছে
আকাশে আবীরে প্রসারিত শ্বাস
ভ্যাপসা গরমে বাতাসও বন্দী
জলেরও তৃষ্ণা বুঝি আগুনেরই কাছে
সহাবস্থানের মেঘে কিছু রোদ জমা থাকে
তবু আঙ্গুলের মেরুদণ্ডে উতরোল মন
শ্যামবেশী মেঘে সাজে অথৈ জীবন
রুপকথা চুপ থাকে, শুধু সুফি সুরে মন'দি
ভুল পথে চালিত করাই কৃষ্ণচূড়ার ফন্দী . .

পথ ~ মানস চক্রবর্তী

এই সেই পথ । এ পথ একদিন পায়ে চলার পথ ছিল । সবাই বোল্ল ,দুর্শালা একেনে আর কিচু হবেনি । হবেনি মানে উন্নতি হবেনি । উন্নতি মানে চকচকে হবেনি । এট্টু ছিরিক কল্লতো ওমনি পথে হাঁটা দায় ।
একেনে পা দিলে ওকেনে হড়কে যায় ।
তাইলে উন্নতি চাই । উন্নতির দেবতা একশ হাত তুলে বর দিলো...।
উন্নতি তরতর করি হোতি লাগল...আস্তায় মোরাম পোল্ল...গাঁ থিকে বেগুনটি , পটলটি,ঝিঙেটি ঝাঁকায় চেপে চল্ল...উই শহরে । এই পথ দে । এই পথ দে হুস হুস করে গাড়ি ঢোকে ... মহাজন ঢোকে... ।
এই পথ সেই পথ । গাঁয়ের মানুষ লুট হয়ে যায় । এই পথে মেয়েমানুষ চালান হয়...বেগুন-পটলের মতো
ঘাম চালান হয়...রক্ত চালান হয়...।
এই পথের পাশে সিধুর চপের দোকানে ভীড় ।
এই পথ দিয়ে সিধুর বৌ রাত কোরে ঘরে ফেরে । চুল্লু খেয়ে সিধু তখন টানটান । সিধুর উরুথের ওপর পড়ে থাকা ন্যাতানো লিঙ্গটার মতো তপতপে একটা বেগুনি সম্বল করে সিধুর বৌ পান্তার আমানিতে চুমুক মারে ।
এই পথ ।এই সেই পথ । গ্রামটাকে এক্কেরে শহরের কাছে পৌঁছে দেয় ।
কেবল রোজ আঁধার গাঢ় হোলে জোনাকীগুলো এর তার ঘরের দুখ্যুগুলো নে জটলা করে । তাদের গপ্প শুনতি শুনতি ঝিঁঝিঁ গুলো কাঁদে...কাঁদে রে পাঁচু...তরা ভাবিস পোকা ডাকতেছে...বাঞ্চোৎ কোথাকার

নন-পলিটিক্যাল ~ শুভ চক্রবর্তী

"বদলা নয় বদল চাই",
স্লোগান বদল অবশেষে।
ইঞ্চি মেপে বদলা হবে-
সাবাস! শাসক, তুমি আপন বেশে।
পাঁচ বছরে অনেক জ্বলে
ছাই হাতে আজ বদল দেখা।
রক্ত খুবই সস্তা আজ
তাতেই হবে ভাগ্য লেখা।
গণতন্ত্র আলীক স্বপ্ন-
মরীচিকা দেখি শবের ভিড়ে।
আইন কানুন যাকগে চুলোয়,
তুমি শুধু শাসন কর-ইঞ্চি মেপে মানুষ চিরে।

রবিবাসরীয় ~ পিয়ালী পাল

রবিবার সকাল ৯টা । উত্তর কলকাতার অতি চিরপরিচিত রাস্তার এক নাম না জানা পাড়া । পাড়ার ছেলে বুড়োরা জমায়েত রবিবারের মজলিশি ঠেকে । সৌরভ গাঙ্গুলী থেকে পাশের পাড়ার রমলা বৌদির নতুন প্রেমিকের কথা ...সবই রয়েছে এ ঠেকে । হঠাৎ দেখা গেল হাবুল কে ( হাবুল এ পাড়ারই ছেলে ) হাতে রংচঙে ফুলকারী ব্যাগ, পায়ে ছেঁড়া চপ্পল, গায়ে হলুদ শার্ট। ঠেকে তখন ভোটাভুটির ভট্ভটি সবে থেমেছে। অমল কাকা “র-ম-” বলতেই হাবুকে দেখে “লা” গিলে ফেললেন। সবার ফোকাস এখন হাবুল। প্রায় দিন’ই এঁদের খপ্পরে নাজেহাল হয় হাবুল। তার চোখটা নাকটা চুলটা- সব নিয়েই ফুলুরির মতো সুস্বাদু ঠাট্টা চলে।
“ওহে হাবুলচন্দ্র, গায়ে হলুদ মাখা হয়েছে কেন আজ?”-বলে পলাশকাকা চোখ টিপলেন রমলা বৌদির বাতিল প্রেমিক কমলা পাঞ্জাবি পরা অমলকাকার দিকে। জ্যান্ত মানুষকে কথায় লাশ বানানো পলাশকাকার (বে)গুণ। ক্যাবলামুখো হাবুল উত্তর না দিয়ে এক কোনে পড়ে-থাকা রবিবাসরীয় চাইল...শুনে চায়ের ভাঁড় পড়ে গেল রথী জ্যেঠুর “রওওবীবাআসরিয়!!! আই ছোড়া তুই নিয়ে কি করবি রে? পড়াশোনায় তো লাড্ডাগোড্ডা!হে হে হে” মজলিস জমে গেলো। দাঁত কেলিয়ে সবাই হাবুলকে নাজেহাল করছে... তখন ৯টা ৩০। বাজার যেতে হবে দেখে হাবুুলকে অল্পে ছাঁড় দেওয়া হ’ল। কাগজটা পেয়ে ফুলকারি ব্যাগে পুড়ে দৌড় মায়ের কাছে । মায়ের হাতে দিয়ে হাবুলের মনে হ’ল যেন সৌরভ গাঙ্গুলীর মত সেও সেঞ্চুরি করেছে। 
ছাপার অক্ষরে ছেলের নাম আর লেখা দেখে চোখ ভিজলো রমলার।

মেঘ বৃষ্টি বা জলের জন্য সাতকাহন ~ লুতফুল হোসেন

আমাকে ছোঁবেনা জানি।
এমন অধম অক্ষম
চালচুলো হীন
তাকে ছুঁতে সাত সমুদ্র
লজ্জারাঙা শরম।
ফুল, লতা, বৃক্ষ ও পাতা,
কোমল ঘাসের শরীর,
কিংবা বংকিমভ দেহ জুড়ে
পদ্ম পাতার,
কোমলতা ভালবাসো যদি !
মেঘ তুমি জলের আঙুল হও,
পেলব বাহুর গায়ে -
গড়িয়ে পড়া বিন্দু, হঠাৎ থেমে রও।
ওষ্ঠের নিপূণ ভাঁজে
চুম্বনের গন্ধ খুঁজে স্থির
মুক্তোদানার মতো মন্ত্রমুগ্ধ
শুয়ে বসেই রও।
প্রতিবাদে মিছিল তো দূর
কেউ কিচ্ছুটি বলবে না।
তবু এ ভীষণ বৈশাখে
উষ্ণতার অস্থির উৎপাতে
আমাদের জলস্পর্শ
দাক্ষিণ্য দাও।
তোমার কৃপায়
জীবনের সাথে মলিন মানুষের
দু'এক ছত্র গান বাঁধতে দাও।

আষাঢ়েকথন ~ সপ্তর্ষি সাধুখাঁ

আসুন, একটা আষাঢ়ে গল্প বলি...শুনবেন?
সমুদ্রের মাঝে একটি দ্বীপ, সেই দ্বীপে একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে বাস করে একটি পরিবার, বড় এবং একান্নবর্তী। অবশ্য এক বাড়িতে না থেকে তাদের উপায়ও নেই, ওইটুকু দ্বীপের বাকি জায়গায় কোনমতে কিছু ফসল ফলিয়ে, বৃষ্টির জল ধরে রেখে ও ঝরণার জল ব্যবহার করে, সামুদ্রিক মাছ আর গাছের ফলমূল দিয়ে কোনমতে জীবনধারণের কাজটা চলে। অতএব অন্যত্র স্থানান্তরের সুযোগও নেই।
প্রশ্ন উঠবে - দ্বীপে মানুষ এল কিকরে, তাও গোটা পরিবার? ধরে নিন - বহু শত বছর আগে কিছু মানুষ জাহাজডুবির ফলে এসে পড়েছিল এই দ্বীপে। তাদেরই উত্তরসূরীরা আজ এই পরিবার। এর পরের বাকি অং বং প্রশ্নগুলো!! বলেছি না এটা আষাঢ়ে গল্প...কিছুটা নিজেরাও কল্পনা করে নিন, অঙ্কের সেই তথাকথিত কুখ্যাত তৈলাক্ত বাঁশ বাওয়া বাঁদর বা ফুটো চৌবাচ্ছার মত।
যাঈ হোক, সেই একান্নবর্তী পরিবারে, অন্য সব পরিবারের মতনই - ঝগড়াঝাঁটি, ফ্যাসাদ, মতান্তর, লড়াই, ঝগড়া, মারপিটও হয়েই থাকে। হয়ত গোটাকয়েক খুনকখারাপিও হয়ে গেছে গত কয়েক শত বছরে (বড়ই অপ্রীতিকর ব্যাপার স্যাপার বটে, কিন্তু ম অনিবার্য ও অপরিহার্য...বুঝতেই তো পারছেন)। বিভিন্ন বিষয়ে ভেদাভেদের কারণে একই বাড়ির মধ্যে থেকেও নানারকম দল, গোষ্ঠী তৈরী হয়েছে। কারও সাথে কারও মুখ দেখাদেখী বন্ধ, তো কারও সাথে গলায় গলায় দোস্তি। কোথাও পিঠে ছুরি মারা তো কোথাও অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া। এমনই বৈচিত্রময় সামাজিক অবকাঠামো ও পারস্পরিক নির্ভরশীল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এই দ্বীপবাসীর জীবন কাটে।
কিন্তু, তবু তাদের জীবন থেমে থাকেনি, তার কারণ জীবনধারণের সবরকম উপাদান তারা সংগ্রহ করতে পারছিল সেই দ্বীপ ও তার পারিপার্শ্বিক থেকে। দ্বীপটির কল্যাণেই বংশগতির ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু, ওই যে বলে...ভাল থাকা মানুষের পোষায় না। কিছু অর্বাচীন প্রতিহিংসা পরায়ণ দ্বীপবাসী ঠিক করল, বাকিদের জব্দ করতে হবে। কিকরে? তাদের মাথায় খেললো যুগান্তকারী মতলব...আস্তে আস্তে দ্বীপের খাদ্য ও পানীয়ের উৎসগুলিকে দূষিত করতে শুরু করল। এছাড়া দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ইত্যাদি দিয়ে তারা যে ক্ষেত খামার নানান ব্যবস্থা করেছিল, সেগুলিতে শুরু করল অন্তর্ঘাত। ফলত - দ্বীপবাসীদের জীবনে ঘনিয়ে আসতে শুরু করল অন্তিম বিপর্যয়।
ভাবছেন, এ আবার হয় নাকি? কথায় নাকি বলে, নিজের ভাল নাকি পাগলেও বোঝে। খাবার, জল ইত্যাদির উৎস দূষিত করলে নিজেরা খাবে কি, বাঁচবে কিসে? তাছাড়া বাঁধ ইত্যাদি ভেঙে টেঙে দিলে দ্বীপটাই তো আবার আস্তে আস্তে জলের নীচে তলিয়ে যাবে। কিন্তু এ আকাটদের বোঝাবে কে? ওই যে 'কথাতেই' তো আবার বলে - নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ...ইত্যাদি ইত্যাদি।
এদ্দূর পড়ে নিশ্চয় ভাবছেন - এ গোমুখ্যুটা আষাঢ়ে গল্পের নামে আর কত গাঁজা দেবে? গল্পের গরু কি গাছে চড়ার জায়গায় আজকাল স্পেশশিপ চালাচ্ছে...অ্যাঁ!! তাহলে সুধী পাঠক, আসুন ভণিতা তথা আষাঢ়ে গল্পের সীমা ছেড়ে সাদাটে ভাষায় কিছু আলোচনা করা যাক।
কল্পনা করুন, বাড়িটি দেশ/মহাদেশ, দ্বীপটি পৃথিবী ও দ্বীপবাসীদের মানবজাতি হিসেবে। মানুষে মানুষে মতভেদ, বিদ্বেষ, হিংসা, হানাহানি চলছে সেই আদিকাল থেকে। যতই অস্বীকার করি না কেন, এই মানুষের ইতিহাস, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানব সভ্যতা টিকে রয়েছে, তার কারণ বাঁচার রসদ এখনও নির্মূল হয়ে যায়নি।
গত কয়েক হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাসে মানুষ বহু যুদ্ধ লড়েছে, বহু বিভৎস হত্যালীলা ঘটিয়েছে বারেবারে, অনেক জাতি-উপজাতি-ভাষা-সংস্কৃতি মুছেও গেছে পৃথিবীর বুক থেকে।
আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি একবারও বলছি না যে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, ধর্মের নামে হানাহানি, অপরের জায়গা ও অধিকার দখনের জন্য যুদ্ধ, অন্ধ হিংসা, গোঁড়ামি..এসব সমর্থনযোগ্য। এক গন্ডমূর্খ ও পিশাচ ছাড়া কোন মানুষই এসব সমর্থন করতে পারে না। কিন্তু, বাস্তবকে স্বীকার করে বলতেই হচ্ছে...এসব ছিল, আছে এবং থাকবে। আদিকাল থেকে বুদ্ধ-যিশু-মহাবীর-শ্রীচৈতন্য ইত্যাদিরা ভেদাভেদ হানাহানি রক্তপাত বিভেদ ঠেকাবার, শান্তি প্রতিষ্ঠার অনেক তো চেষ্টা করেছেন....সম্পূর্ণ সফল কেউ হতে পেরেছেন কি? হয়ত বলবেন....অতীতে পারেনি তো কি হয়েছে, মানবসভ্যতা তো এখনও উন্নয়নশীল। ভবিষ্যতে নিশ্চয় এই ঝগড়া লড়াই যুদ্ধ হিংসা মুছে গিয়ে পৃথিবীতে অখন্ড শান্তি বিরাজ করবে, মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। বিশ্বাস করুন, এই আশ্বাসে ভরসা রাখতে আমি প্রাণপণ উৎসাহী। কিন্তু তার জন্য মানবসভ্যতাকে সেই ভবিষ্যৎ অবধি টেকার সুযোগটুকু তো দিতে হবে!
আজ আমরা যে হারে এই গ্রহের বুকে পরিবেশকে দূষিত করে চলেছি...প্রশ্ন জাগে, মানবসভ্যতা সেই আকাঙ্খিত ভবিষ্যৎ পর্যন্ত টিকবে তো? আমরা ভুলে গেছি, এই গ্রহ ছেড়ে অন্যত্র অপসরণের সুযোগ এখনও আমাদের নেই। এইই আমাদের একমাত্র ঘর, যা এবং যেটুকু এর বুকে রয়েছে সেই রসদটুকুই আমাদের সম্বলমাত্র। তাকে মাত্রাজ্ঞানবিহীনভাবে বেপরোয়া ধ্বংস করে চললে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচবে কিসের সাহায্যে? এ কি সেই 'নিজের পায়ে কুড়ুল মারা'র পরিণতির দিকেই এগোচ্ছি না আমরা?
সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়ার। দেরী হয়েছে, কিন্তু শেষ সুযোগ হাতছাড়া করলে...পরিবেশ হয়ত তার নিজের ব্যবস্থা নিজে করে নেবে, নিজের বুক থেকে মানুষ নামের এই পরজীবি ভাইরাসটিকে নিঃশেষে নির্মূল করে।
আর পৃথিবীরই বা দরকার কি, মানবসভ্যতা আলোকিত ভবিষ্যৎ দেখার সুযোগ পাবে না, সে পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বড় হুমকি মানুষ নিজেই। তার যুদ্ধপ্রবৃত্তির সাথে পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভার মিলে...কোন এক উন্মাদ মুহুর্তে একটি বোতামের চাপ, ধ্বংস করে দেবে এই বিশেষ প্রাণীকূলকে। প্রচলিত অস্ত্রে ব্যবহারে মানুষ প্রজাতিকে সমূলে নির্মূল করতে যে সময় দরকার, তার মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হবেই। কিন্তু এক্ষেত্রে, শুভবুদ্ধির লেশমাত্র মগজে পৌঁচানোর আগেই উপরওয়ালার দরবারে কড়া নাড়তে পৌঁছে যাবে তাবৎ নরকুল।
তাই, এক্ষণে আমাদের আশু প্রয়োজন, নিজের ঘর গুছোনোর। খাল কেটে আনা কুমীরটি যে আজ নয়ত কাল আমাকেই খাবে, এ বুদ্ধির উদ্ভব হলে হয়ত ভবিষ্যৎ একটা সুযোগ পাবে...নতুন জাগরণের। তার আগে দরকার ঘর পরিষ্কারের, যে থালায় খাচ্ছি তাতে ছিদ্র করা সর্বাগ্রে বন্ধ করা প্রয়োজনীয়। নাহলে, নিরূপায় ওই দ্বীপবাসীর মত...আমাদেরও ডুবে ছাড়া অন্য গতি থাকবে না।
যাওয়ার মত জায়গা কিন্তু আমাদেরও কোথাও নেই।

হেরো সিরিজ ( হেরো - ১২ , ১৩ এবং ১৪ ) ~ শুভাশিস সিংহ

হেরো-১২
----------
যতটুকু জীবন
ততটাই বেঁচে
রেশমগুটির মতো

কিছু মূল্যহীন দ্বন্দ্ব
তকমা স্বীকৃতিতে
ভাগাভাগি হলেও
এ ঘরেতে দীর্ঘশ্বাসের
হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না
শুধু আয়ু
ধূপকাঠি হয়ে পুড়ে যায়




হেরো-১৩
-----------
অনুরোধের সন্ধ্যায়
একটা ঠোঁটের ছোবলে
দুটো গভীর ক্ষত ছিল

আয়ু উপশম এই চিন্তায়
ডুবে যেতে যেতে
কিছু ঘটনাকে
কুচিয়ে জড়ো করি
মৃত শব্দের শোকে
ফোঁপানো কান্না
ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ে

হেরো -১৪ 
-----------
প্রলয় কখন থেমেছে
দাতব্য হৃদয়
তথ্য সংকলন করেনি 
ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে
বয়ে গেছে পলাশ
কোন প্রতিবাদ জানায়নি
সমর্থনও করেনি

নীরবতা মানে সমর্থন নয়
তবু কিছু সমর্থনে নীরবতা চাই
প্রয়োজনের গুরুত্ব কমাও
সঙ্গ দাও
যেরকম দিয়েছিলে নদীর ধূপ-ছায়ায়,
অবসরেের যাতনায়, নিষ্পাপ চোখের বিশ্বাসে
অসহায় লাগলে চিৎকার কোরো না
তোমার অসহায়তা
বহু আগেই ফুঁ-এ উড়িয়েছে কেউ
তুমিও ওড়াও
লুব্দ্ধি মাঞ্জায় ময়ূরপঙ্খী
সুতো ছিঁড়লেই
দাপটে বল
ভো কাট্টা

ওরা ~ পার্থ রায়

রা কয়জনা,
মিলেছিল, খুব হেসেছিল 
বকবকম পায়রাদের মতো;
ঋতু বন্ধ হবার সন্ধিক্ষণে 
ফিরে গিয়েছিল ঋতুমতী হবার দিনগুলিতে;
এক ঝাঁক শঙ্খচিলের কলরবে
প্রশ্রয়ি অভিভাবকের মতো ভ্রু কুঁচকে হাসছিল
ফাঁকা ক্লাসঘরের স্মৃতি মেদুর আকাশ,
ওদের চোখে ঝর্ণা উচ্ছল হয়েছিল;
শুধু-
শুধু একজনের চোখে সন্ধ্যা ছিল
সেই মাঝ দুপুরেও-
ওর হাসিতেও জলভরা মেঘ ছিল;
বাকীরা জেনেছে-
ওর তাড়া আছে হোমে ফেরার;
পায়রারা থেমে গিয়েছিল
নিস্তব্ধতার জালে জড়িয়ে,
ছন্দ পতনের শব্দে ওরা নিঃশব্দ হয়েছিল;
তারপরে কোন সিনেমা, থিয়েটারের
নাটুকে চরিত্রদের মতো
হাততালি পাওয়ার জন্য
হাতে হাত ধরেনি ওরা-
শুধু চোখে চোখে কথা বলেছিল
ওরা কয়জনা,
কিছু না বলা চাউনিতে
চোয়াল শক্ত হয়েছিল-
প্রতিজ্ঞা ছিল,
সহপাঠিনীর চোখে ঝর্না আর রোদ্দুরকে মেলাবার।

মৃত্যুর হাতছানি ~ সুশান্ত হালদার

বাতাসে আজকাল বড্ড আহাজারি
মুমূর্ষুর আর্ত চিৎকার কান পাতলেই শুনি
সমুদ্রে ভীষণ গর্জন
জলোচ্ছ্বাসে ফুলেফেঁপে উঠেছে নদী
পায়ের নীচে থরোকম্পনে ধরিত্রী
কোথায় যাবে তুমি?

জলে স্হলে অন্তরীক্ষে মৃত্যুর হাতছানি
সবুজে ভরা মাঠ
সেও কেউটের দখলে
কোথায় পালাবে তুমি?

ভালোবাসার আঁচল উড়ালেই
বাজের সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি
চারিদিকে হুক্কাহুয়ার ধ্বনি
চৌচির মাঠ এখন শুধুই অনাবাদী

নষ্ট প্রেম ~ শমিতা চক্রবর্তী

সমস্ত অববাহিকা জুড়ে অবাধ গতিবিধির
ছাড়পত্র আদায় করে নিয়েছিলো --
সব চড়াই -উতরাই সাবলীলভাবে
হেঁটে গেছো --
অচ্ছুত করে রেখেছিলে শুধু মনটাকে --
আবিষ্কারের নেশা স্তিমিত হয়ে গেলে
ছুঁড়ে ফেলেছ ব্যবহৃত
মীনেরেল ওয়াটারের
বোতলের মতো 
*
কুর্নিশ তোমাকে বীর কলম্বাস --
আবার নূতন অন্তরীপের খোঁজে ?

প্রজাপতি দেহ ~ তন্ময় দেব

বেশ কিছুদিন ধরেই অনুভব করছি
আমার চারপাশটা কেমন যেন আমাজন অববাহিকা
হয়ে উঠছে।
প্রতিমুহূর্তেই ব্ল্যাক প্যান্থার, অ্যানাকোন্ডারা
জানান দিচ্ছে সদর্প উপস্থিতি;
দেখছি স্বার্থলোভী পাইথনেরা আস্ত করে গিলে নিচ্ছে
সমাজকে। আর
আমি আস্ত একটা শুঁয়োপোকা হয়ে
ঝুলে আছি তুঁত গাছের পাতায়। রঙিন
প্রজাপতি দেহ পাবো কিনা কোনও নিশ্চয়তা নেই..

বন্ধু বিরহ ~ জাকিয়া জেসমিন যূথী

তুই যে মোর বিরহ পুকুর
হৃদয় ভরা দুঃখ,
তোর কারণে হারায় বহুদূর
পৃথিবীর সব সুখও।
.
কথায় কথায় ভুল ধরাটা
তোর যে বড় স্বভাব,
ভাব দেখে তো হয় রে মনে
তুই যেন এক নবাব।
.
মনের মত বন্ধু হতে
মনটা থাকতে হবে,
সকাল সন্ধ্যা আড়ি ঝগড়া
ঝেড়ে ফেলনা তবে! 
.
সেই যে গেলি দূর প্রদেশে
কথা চিঠি বন্ধ,
তুই যে থাকিস বুকের ভেতর
বুঝলি না তুই, অন্ধ। 
.
এক জনমে বাঁচবো কত
বয়স তো বেশ হলো,
ফিরবি যবে পাবি না আর
যাবার সময় এলো।
.
বিরহে মোর দিন কেটে যায়
আর পাবো কি তোকে?
ক্যান্সারে মোর ধুঁকছে জীবন
যাচ্ছে প্রলাপ বকে। 
.

অবোধ্য ~ প্রণব বসুরায়

যদি কিছু ফেলে যাই ছড়ানো উঠোনে
পড়েই থাকবে রোদে, জলে--
মূল্যহীনের ছায়াও পড়ে না ভূমি তলে
এ কথা সত্য হলেও লেখে নি পুস্তকে
#
যদি নয়, ফেলে তো যাবই, শূন্যতাও
সময়ের আঁশ ভরে দেবে নিয়মমাফিক
সব জানি, তাও কেন এ প্রস্তাব রাখি
লঘুচিত্ত এই আমি নিজেও বুঝি না.

টেক (১) ~ সিদ্ধার্থ মুখার্জ্জী

-- তোমায় আমার আর ভালো লাগছেনা ঋক। জাস্ট বোরিং। সেই একই ভাবে... আর শেষ মূহুর্তে মাথাটা ধরে চাপ কেন? বিরক্তিকর...
-- হোয়ট ডু ইউ মীন বাই ভালো লাগছেনা? এক ভাবে? কে নতুনত্ব দেয়? শুনি?
-- জাস্ট শাট আপ ঋক, ডোন্ট টক লাইক আ ব্রদেল চাইল্ড.... 
-- ওহো, হোয়াট অ্যাবাউট ইউ? তুমি দশ বছর বিয়ের পরেও... জাস্ট ক্যান্ট বিলিভ দিস, দিয়া....
কাট।।
ডিরেক্টর সাওন, রুমেলার প্রচন্ড প্রশংসা করে বলল, " এক্সেলেন্ট শট, বোল্ড সিন, ডায়লগ, সিঙ্গল টেকেই অসাধারণ, চরিত্রের সাথে মিশে গিয়েছিস একবারে "....
উত্তরে রুমেলা স্মিত হেসে, নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।।
বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে স্মৃতি ভীর করে মনে, অবচেতনে থাকা ছোট কাকার গায়ে হাত দেওয়া, ১৪ বছরের বড় অতনুর সাথে মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হওয়া, মদ্যপ অবস্থায় অতনুর করা নির্যাতন, নিজের ভাই, বন্ধু সবাই কে নিয়ে সন্দেহ করে নোংরা গালি দেওয়া, সব মনে ভীর করে।
" বাঁ দিকের মদের দোকান টা থেকে একটা ভালো ভদকা এনেদিস রতন"....
রতন, রুমেলার ড্রাইভার কাম অ্যাসিস্ট্যান্ট।
" দিদি, আজকাল বড্ড বেশি হয়ে যাচ্ছে কম করুন প্লীজ "....
" দিদি? ওটা গোটা বঙ্গে একটাই আছে, আমি কারোর দিদি নই, আমি স্বপ্নের রাণী ড্রিম গার্ল, বুঝলি? "
" হ্যাঁ ম্যাডাম "
নিজের অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে বেসামাল রুমেলা, রতনকেও নিয়ে যায় বেডরুমে।। উল্লাস শোনা যায়, ওর গলায়, " আইম হ্যাপী অ্যাস আই হ্যাব পারচেস্ড এ ম্যন টু জাস্ট হ্যাভ সেক্স উইথ ".....
প্যাক আপ।।।

ভাবনা প্রহর ~ জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী

#এক
শুধু মরীচিকা জানে মরুযাত্রীর
প্রতিটি ভুরুর ভাঁজ
আয়নাই শুধু হিসেব রেখেছে
বেমানান যত সাজ
ছন্দই জানে শব্দেরা দিনে
কতবার হলে খুন-
ছন্দপতন প্রসব করেছে,
অপরিণত ভ্রুণ
ভাঙ্গা খাঁচা জানে মরবার আগে
কত সুখী ছিল ময়না
পুড়ে গেলে তবে,পোড়া মন বোঝে
ভালোবাসা তার সয় না
# দুই 
নিশ্বাস আর নিশ্বাসে মেলে
অভিসারী রাত দীর্ঘশ্বাসে
আঙ্গুলে আঙ্গুল,চিবুকে চিবুক-
মনে মনে মিল ? কোথা সে ?
দিন লিখে রাখে চেনা স্বরলিপি
পালা বদলের শেষে
লাল বর্ণের বিভাজিকা হয়ে
কপাল কপালে মেশে
জীবনে জীবন মিশে যায়
তবু বুকের বাঁ পাশে ক্ষত
ইচ্ছেরা সয় প্রসববেদনা
কুমারী মায়ের মতো

তোর কথা ~ সীমা ব্যানার্জী রায়

এখনো একাকী থাকি, সখী, একাকী থাকি কেন?
কিছুই বলি না মনোব্যথা, শুধু বলি নিরাশা বুকেতে
কাউকে পাই নি তোর মত
শুধু ডানা ঝাপটাই এক অনাহত পতঙ্গ যেন।
রুমালিয়া ঘেরাটোপে শিস দেয় এক দমকা হাওয়া
আজও উলঙ্গিনি নেচে কাতর স্বরে ডাকে 'কাছে আয়।'
*
মনে পড়ে সেদিনের কথা, হঠাৎ দিলি হাতে
এক বেথেলহেম ফুলের পাতা...
এঁকেছিলি তৃষিত শীতমাখা কল্পনা
স্পষ্ট ও অস্পষ্ট করুণ কামিনীগন্ধ ছিল তাতে।
এখনও ঝরে তারা টুপটাপ 
শব্দজব্দ নিশ্চিদ্র জোনাকিরা বুকের দীর্ঘশ্বাসে
শুধু প্রাণহীণ পড়ে ঝুপঝাপ।
*
কত গোপন কথা, সখী, রাখা আছে সারে সারে
সাজাব সকরুণ বিরহবেদনায়, তোর পথপানে চেয়ে।
বিদায় নেবার আগে বলেছিলি, ভুলব না রে কোনদিন
দেখে নিস, শুধু যাবি তুই ভুলে একদিন।
একবার ফিরে পেতে চাই, সেই তোকে
আরো যে একবার কাছে পেতে চাই।
*
বাকি জীবনের সবটুকুতে না হয় তীব্র আলোক
জ্বলে জ্বলুক 
অনন্ত অতীত থেকে পৃ্থিবীর চেতনার মতো
অভিমানরা মিশুক 
একবার, শুধু একবার পাবো না তোকে?
তোকে কাছে পেলে নিজেকেও যে কাছে ফিরে পাবো

নস্টালজিক ~ বাসব মণ্ডল

স্মৃতির এপিডার্মিস ভেদ করে
বৈধ্যবের পানসে গন্ধ

হ্যালোজনের আলো আঁধারিতে লুকোন
একাকিত্বের পাললিক আস্তরন
ধুয়ে যায় শরীরের ভাঁজের ত্রিকোনমিতিতে

জমাট বাঁধা চাপ রক্ত
গলে পড়ে অশ্রু হয়ে

বেঁচে থাকে শুধু
ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটা
আর পিছনের মাকরসার জাল

বসন্ত যে ফিরে ফিরে আসে ~ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

অট্টালিকাটির ওই খুপরি ঘরে একটাই মাত্র জানালা। মেয়েটির মুখখানা হামেশাই ঝুলে থাকে সেই জানালায়। তার ঘনকালো চোখের তারায় জমে থাকে একরাশ বিষণ্ণতা। সেইসাথে একটাই প্রত্যাশা। ফিরে আসুক তার বসন্তের পাখি। জানালার শিকদুটো প্রতিদিন কতশত বার বাঁধা যে পড়ে মেয়েটির নরম হাতের মুঠোয় তার হিসেব নেই। সকলের অগোচরে মুখখানা মুখরিত হয় বোবা কান্নায়। মেয়েটি মনে মনে বলে, ফিরে এসো বসন্তের পাখি। ফিরে এসো গো আপন কুলায়। 
ক’দিন ধরেই একটা বসন্তবৌরি পাখি ডুকরে কেঁদে মরছে অট্টালিকাটির চারপাশ জুড়ে। অট্টালিকার সামনে মহাকালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন জামগাছটার পাতার ফাঁকে নিজেকে লুকিয়ে রেখে নিস্তার পেতে চায় রোদ্দুরের প্রখরতার হাত থেকে। তারপর পাতার আড়ালে বসে ডুকরে কাঁদতে থাকে খুপরি ঘরের ঐ মেয়েটির হয়ে। জানালায় লেগে থাকা মুখটির দু’চোখ জুড়ে একরাশ ব্যকুলতা নৃত্য করতে থাকে বসন্তবৌরিটির হাঁকডাক শুনে। তার মন বলে, এখন আর কান্না নয়। নয় আর অভিমান। ঘরে ফিরে যে আসছে তার পথভুলো বসন্তের পাখি। ভেবেই আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মেয়েটির পটলচেরা চোখদুটি। বসন্তবৌরির মুখে সংবাদ যে পাঠিয়েছে, সে আসছে! কথা যে দিয়েছিলো একদিন ঠিক ফিরে আসবে তার কাছে। হায় রে, আরও একটা বসন্তু এসে ফিরে গেল। তারপর গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ - একে একে এসে বিদায় নিলো মেয়েটির কাছ থেকে। অথচ বসন্তের পাখিটি যে আর এলো না! একদিন শীতকালও এসে খুপরি ঘরের কড়া নেড়ে ফিরে গেল। 
জানালাটা আজও নিয়ম করে খোলা থাকে। মেয়েটির বিরহকাতর মুখখানি আজও এসে ঝুলে থাকে একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে। আজও সকাল হয়। আজও রাত নামে বিকেলের পিছুপিছু। কাক–শালিখ-চড়ুইয়ের কিচিরমিচির দিনভর লেগেই থাকে প্রাচীন জামগাছটির ডালে ডালে, পাতায় পাতায়। অথচ সেই বসন্তবৌরি পাখিটা আর এসে আশ্রয় নেয়নি জামগাছের পাতার আড়ালে। আর হাঁকডাক করেনি অট্টালিকাটি ঘিরে। মেয়েটির লম্বা কালো চুলের গোছাতেও লেগেছে সাদার প্রলেপ। তবুও প্রত্যাশায় পড়েনি এতটুকু ধুলো। সে যে বলে গিয়েছে একদিন ফিরে আসবে তার কাছে। 
পাগলিনী জানালায় মুখ ঝুলিয়ে অনর্গল বিরবির করে, ফিরে এসো বসন্তের পাখি, ফিরে এসো। শুনতে পাচ্ছো তুমি? বেলা যে বয়ে যায়। ফিরে এসো গো আপন কুলায়।

জাতিস্মর ~ পারমিতা চক্রবর্তী

সোহাগ বিছানো রাতে 
ঈষালু কুন্তল আবেশে ,
পরজীবি মন খোঁজে 
জাতিস্মর শয্যা 

প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস মেশে 
বালিশের তেল চিটে গন্ধে ৷
হতাশার বোতলে
সঞ্জীবনী সুধা হতে চায় 
আলোড়িত প্রেম I
শরীরের প্রতিটি কোরক 
মেশে নিস্তব্ধ উত্তেজকে 

বুভুক্ষ হৃদয়ে মাধুকরী 
হারায় যন্ত্রণায় I
অবিশ্বাসের পাহাড়ে হড়কা বান 
উড়িয়ে দেয় স্বপ্নকে ,
পড়ে থাকা ভগ্ন শরীর 
ফসিল হয়ে যায় 

অতীন্দ্রিয়া (৩) ~ সুপ্রতীম সিংহ রায়

মার্চের সন্ধ্যায় স্মৃতি আমার বিছানায় এসে বসে
আমরা চোখাচুখি হলেও তেমন বিস্মিত হইনা কোনওদিন

মনে পড়ে যায় কতদিন হয়ে গেল কেউ প্রতিশ্রুতি চায়নি
ট্রেনে ওঠার আগে আঙুল ছুঁয়ে বলেনি
"সি ইউ" "গুড বাই"।

অথচ ব্যক্তিগত ক্যাথিড্রালে সান্ধ্য ঘন্টা বাজলেই
কাদের যেন আসার কথা ছিল প্রার্থনায়

শুধু গলির শেষ কোণ থেকে হারমোনিয়াম রিড শুনে অতীন্দ্রিয়া

অবাস্তব তোমাকে ফের আমার মনে পড়ে যায়।

জীবন্ত শোক ~ অরূপ গাঙ্গুলী

ইলেকট্রিক চুল্লীতে অবিরত পুড়তে থাকা শরীরের শেষ ছাই টুকুর জন্যও সমবেদনার বাতাস তিরতির করে বয়ে যায়।আমার এই ধুকতে থাকা জীবনে অক্সিজেনও আড়ি দেয় অহর্নিশ।

প্রতি গোধূলির পড়ে একমুঠো বিরহ শোক জোনাকীর আলোয় চুঁইয়ে পড়ে আমার রক্তজমা খুনে।পাশের কবর থেকে উঠে এসে একাকীত্ব তান্ডব তরে আমার অগভীর ঘুমে।দেওয়ালের কোয়ার্টজ ক্লকে বাজতে থাকে বিচ্ছেদ ঘন্টা।

ব্যাস্ত সরোবরে ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে চিকচিক করে আমার প্রেম ব্যাথা।চোট খাওয়া চিরজলন্ত আমি বয়ে নিয়ে চলি গ্রামে গ্রামে শহরে শহরে উনুনে পোড়া শোকের দুর্মুল্য চাঁদ।

কে জানত এই আমি কাঁটতার বেড়া, ইঞ্চি ইঞ্চি সরে সরে যাওয়া জীবন থেকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ব্যার্থ প্রেমের দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়বো।দুপুরের অর্ধস্বপ্নে জীবন্ত শব হয়ে পচতে থাকবো।

আজ এই আমি ধিকিধিকি নিভে আসি শহরের ব্যাস্ততম রাস্তায়, কংক্রিট দেওয়াল ঘরে, নিমজ্জিত গাছের ছায়ায়, সুসজ্জিত বিছানায়।ক্ষয়ে যেতে থাকি হলদে রঙা প্রেমের ঘুনধরা মরচেতে।এই আমি একটু একটু করে বয়ে নিয়ে যেতে থাকি আমার জীবন্ত লাশ ওপারে আশ্রমতীর শ্মশানে

ঋষি ও তিনটে জীবন ~ রীনা রায়

দেখতে দেখতে দশটা বছর পেরিয়ে গেল। মিঠাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুবর্ণা ।মেয়েটা এই বিশ্বাসটুকু সম্বল করেই তো বেঁচে আছে যে, ঋষি ফিরে আসবে। 
পাঁচ বছরের কোর্টশিপ এর পর ওরা যখন বিয়ের পিঁড়িতে বসল তখন ঋষি নতুন একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে জয়েন করেছে । 
বিয়ের ঠিক দশ দিন পরেই ওকে একটা জরুরি কাজে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল। ঠিক ছিল, ও ফিরে আসার পর ওরা হানিমুনে ব্যাংকক-পাটায়া যাবে। সব অ্যারেঞ্জমেন্ট ঋষি নিজেই করে রেখেছিল । ফ্লাইট টিকিট, হোটেল বুকিং..... মিঠাই এর জন্য একগাদা ড্রেস কেনা.......
কোথা থেকে কি হয়ে গেল........যে ফ্লাইটে ওর ফেরার কথা সেটার অ্যাকসিডেন্ট হল। 230 জন প্যাসেঞ্জারের কাউকেই জীবিত পাওয়া যায়নি, তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের, যে পাঁচজনের দেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি, তার মধ্যে একটা নাম ঋষিরাজ চট্টোপাধ্যায় ।
তবে কি ছেলেটা বেঁচে আছে? মিঠাই এর বিশ্বাস টাই কি সত্যি? তাই যদি হয়, তবে এতদিনেও ও ফিরে এলো না কেন? ও কোথায়?
***** 
জানলার দিকে একঝলক তাকিয়েই মিঠাই বুঝলো, ঝড় আসবে এখুনি, আকাশটা কালো হয়ে এসেছে । রাজকে আনতে স্কুলে যেতে হবে। মোবাইলটা নিতে গিয়ে ঋষির ছবিটার দিকে নজর গেল ।
কবে ফিরবে তুমি ঋষি? আমি যে প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে তোমার প্রতিক্ষায় বসে থাকি। রাজকে তুমি দেখবেনা? আমাদের ভালবাসার চিহ্ন। ওর স্কুলের নাম রেখেছি রাজর্ষি.......... রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়। জানো, রাজের স্কুলের বন্ধুদের মায়েরা আড়ালে আমাকে নিয়ে আলোচনা করে, ওরা আমাকে মেন্টালি ডিসব্যালেন্স ভাবে। 
ওদের কি দোষ বলো, ওরা তো তোমার আমার ভালবাসার কথা জানেনা! 
তোমাকে তো ফিরতেই হবে, আমার জন্য।
আমরা দুজনে প্রমিস করেছিলাম যে একসাথে দুজনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবো! 
ফিরে এসো ঋষি,ফিরে এসো..... তোমার মিঠি তোমার প্রতিক্ষায়....... 
******* 
পাপা, ডু ইউ নো আই পাঞ্চড সৌপ্তিক টুডে, হি ওয়াজ সেয়িং দ্যাট ইউ হ্যাড ডায়েড, ইউ উড নেভার রিটার্ন ।হি ইভেন সেড দ্যাট মাম্মা ইজ সিক! পাপা, আই ওয়াণ্ট টু সি ইউ। ইউ নো, মাম্মা ক্রায়েস ফর ইউ এভরি ডে অ্যান্ড প্রে'স। প্লীজ, কাম ব্যাক টু আস পাপা। **** 
দরজায় দাঁড়িয়ে ছেলের সব কথাগুলো শোনে মিঠাই । ধীরপায়ে ছেলের কাছে এগিয়ে আসে মিঠাই। ছেলেকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে । রাজ, মায়ের দুচোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে, 'ডোন্ট ক্রাই মাম্মা, পাপা উইল সিওরলি কাম সুন। লেটস গো, উই প্রে ফর পাপা'। 
এরপর তিনজনে মিলে, একজন তার একমাত্র জামাই এর জন্য, একজন তার কোনোদিন না দেখা বাবার জন্য , আর একজন তার প্রতিটা স্বত্তা দিয়ে ভালবাসা.......... প্রতিটা অনুভবে মিশে থাকা মানুষটার জন্য আকুলভাবে প্রার্থনা করতে --
'ফিরে এসো, ফিরে এসো তুমি '! 

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...