রবিবার, ১ মে, ২০১৬

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ~ কুন্তলা চক্রবর্ত্তী

প্রবালবাবু সাহিত্যিক মানুষ। ছোট বড় নানান পত্রিকায় ওনার লেখা ছাপা হয়। পরিচিত মহলে বেশ সুনাম আছে সাহিত্যিক হিসেবে। আমুদে মানুষ, সবসময় হাসি, মজার মুডে থাকেন।
প্রবালবাবুর লেখা যথেষ্ট ভালো হওয়ায় পত্রিকার সম্পাদকেরা ওনার লেখা আশা করেন তাঁদের পত্রপত্রিকায়। তাই পয়লা বৈশাখ, রথযাত্রা, দুর্গাপূজা, বইমেলা প্রভৃতি সংখ্যার আগে প্রবালবাবুর উপরে লেখার চাপ থাকে যথেষ্ট। সম্পাদকেরাও তাঁদের পত্রিকার জন্য লেখা দিতে প্রবালবাবুকে তাড়া দিতে থাকেন।
এ হেন প্রবালবাবুর হঠাৎ লেখায় তীব্র অনীহা জন্মালো। কিছুতেই তাঁর আর লিখতে ইচ্ছে করে না। লেখার কোন উৎসাহই তিনি আর পান না।এদিকে পূজা এসে যাচ্ছে। পত্রিকার সম্পাদকেরা উদ্বিগ্ন হচ্ছে লেখা না পেয়ে। তাঁরা প্রবালবাবুকে ফোন করছেন কিন্তু মুশকিলের কথা তিনি ফোনও ধরছেন না। মহা বিপদ!
শেষে পুণ্যতোয়া নামে এক লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ঋতবান সেন, সোজা এসে হাজির প্রবালবাবুর বাড়ীতে। এসেই উত্তেজিত কন্ঠে, " ও প্রবালদা, তুমি ফোন ধরছো না কেন?' নিরুত্তাপ কন্ঠে প্রবালবাবুর উত্তর, "আমার সমাধি হয়েছে।" ঋতবান, ততোধিক উত্তেজিত কন্ঠে, " তা বেশ হয়েছে! এবারে কোন উর্বশী, মেনকাকে আনতে হবে তোমার সমাধিভঙ্গ করতে?" প্রবালবাবুর সহাস্য উত্তর, " আরে, আর উর্বশী, মেনকার দরকার নেই! এখন আমার না আছে রূপ, না আছে যৌবন। যদি কেউ আসে তবে আমার টাকার থলিটি টার্গেট করেই আসবে। ওসব নয়। আজকাল খালি মনে হয়, অনেক লিখে ফেলেছি, আর এসব করে কোন লাভ নেই। " ঋতবানের তো মাথায় হাত! সে আর্তস্বরে বলে, " বলো কি প্রবালদা! তুমি আমাদের পত্রিকায় লিখছো সেটা এখন সবাই জানে। বিজ্ঞাপন বেরিয়ে গেছে। এখন তুমি বলছো, লিখতে ইচ্ছে করছে না! পাঠককে আমি কি জবাব দেবো বলো তো! না না, ওসব চলবে না! তুমি লেখা শুরু করো। তোমার যা প্রতিভা, একবার শুরু করলেই হুড়মুড় করে শেষ হয়ে যাবে, দেখো! মোটকথা আগামী পরশুর মধ্যেই আমার লেখা চাই!"
প্রবালবাবু ভেবে দেখলেন, ঋতবানের কথাটা ঠিক। বিজ্ঞাপন বেরিয়ে গেছে। এখন লেখা না পেলে সম্পাদকের বিপদ। তিনি শান্তস্বরে ঋতবানকে বললেন, " আচ্ছা তুমি বাড়ী যাও। আমি দেখছি, কিছু পারি কি না।"
সন্ধেবেলা প্রবালবাবু অনেকক্ষণ ধ্যান করলেন। মনঃসংযোগের চেষ্টা করলেন। তারপরে খাতা কলম নিয়ে বসলেন লিখতে। তারপরে তাঁর কলম থেকে নিম্নলিখিত কবিতাটি নিঃসৃত হল।
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন
-----------------------
লিখতে বসেছি আজ এক নয়া কাব্য,
মাথাতে আসে না কিছু, (কি যে ছাই ভাববো!)
লিখে লিখে জমা হল ধার, বাকী, কর্জ!
লিখে হবে রোজগার, তার আর নেই যো!
নিজে লিখি, নিজে ছাপি, নিজে কিনি সেই বই
সবাই যে লেখে আজ, পাঠকের নাই থই।
নামীদামী লেখকের লেখা সব মেলে "নেটে",
আমাদের মতো সব লেখকরা গেছে ঘেঁটে।
বই হয় ডাউনলোড, বই নাই বিক্রি,
লেখালিখি করে হবে ভিটেমাটি ডিক্রী!
খালিপেটে থাকতাম বই বেচে খেতে হলে,
সুখে লিখি দুইবেলা চাকরীটা আছে বলে।
সারাদিন বসে লিখি, নড়াচড়া নাই রে!
ধরেছে আমায় তাই প্রেশারে ও সুগারে!
লেখালিখি ঢের হল, ঢের হল কৃষ্টি!
কমলে লেখক কিছু, বেঁচে যাবে সৃষ্টি!
কবিতাটি লিখে প্রবালবাবু খুব সন্তুষ্ট হলেন। খুশী মনে এবারে তিনি ঘুমাতে গেলেন। নাকি আবার সমাধিস্থ হলেন, কে জানে! বন্ধুরা একবার খোঁজ নিয়ে দেখবে নাকি?

1 টি মন্তব্য:

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...