শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

" ক্ষত যত ক্ষতি যত মিছে হতে মিছে,
নিমেষের কুশাঙ্কুর পড়ে রবে নীচে
কী হল না, কী পেলে না, কে তব শোধে নি দেনা
সে সকলই মরীচিকা মিলাইবে পিছে
সত্যের আনন্দরূপ ... এই তো জাগিছে "
১৩৩৩ সালের ৯ই অগ্রহায়ণে রচিত পূজা ' পর্বের অন্তর্গত এই গানটি কি আশ্চর্য ভাবে প্রাসঙ্গিক আজকের দিনে । কবির কোন আত্মরক্ষা নেই , একথাটা আরও নিদারুণ ভাবে প্রকট সাম্প্রতিক কালে ঘটা নিন্দনীয় দুটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ।
কবিতা ব্যক্তি মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত অনুভব থেকে সৃষ্ট হলেও পরবর্তীতে তা সর্বজনীন হয়ে ওঠে পাঠক মননের ভাবনা অলিন্দ বেয়ে ... কবি আদতে অভিমন্যু , ... তাঁর এক এবং একমাত্র লক্ষ শব্দের মধ্যস্থতায় সমকালীনতাকে তুলে ধরা ।
মন্দাক্রান্তা বা শ্রীজাত ... যিনিই হন না কেন , তাঁদের একমাত্র পরিচয় , তাঁরা কবি , এবং তাঁরা মৃত্যুঞ্জয় ।
বছর ঘোরে ... চৈত্রের অবসান হয় , আবাহন ঘটে বৈশাখের । চলতে থাকে ঋতুর ঘূর্ণিচক্র । অনন্ত সময় চরাচরে , আস্তে আস্তে আবছা হতে থাকে বসন্তের দীর্ঘতর ছায়াশরীরটি ।
কিন্তু , ... যাবো বললেই কি যাওয়া যায় ? অনন্ত চরাচর জুড়ে ধ্বনিত হতে থাকে ... " যেতে নাহি দিব ... " ।
তবুও যেতে দিতেই হয় , ... পুরনো কে আঁকড়ে ধরে বাঁচা যায়না , যায়না এগিয়ে চলাও , ... রিক্ততার আভরণ ঘুচিয়ে মহান রাজসিক বৈশাখ কে স্বাগত জানাতেই হয় ।
পা রাখতে হয় ১৪২৪ এর স্বপ্ন সরণিতে ।
নতুন বছরের এই শুভ লগ্নে প্রার্থনা হোক এটুকুই ... অধর্ম আর হীনতার মুখোশ ছেড়ে আমরা যেন সত্যিই মানুষ ' হয়ে উঠি ... মানব ধর্মের সাথে মেলাতে হবে যুগধর্ম'কেও ... একমাত্র সেই আলোকিত প্রত্যাশাটুকুই থাকুক ...
" মানুষ বড় কাঁদছে ,তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও
মানুষই ফাঁদ পাতছে ,তুমি পাখির মত পাশে দাঁড়াও
মানুষ বড় একলা ,তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও ... "
কোমল আলোকে আলোকিত হোক চারপাশের ঘনঘোর আঁধার , .আলোয় থাকুন সকলে ... ভালোয় থাকুন ।

শুভেচ্ছান্তে ,

পিয়ালী বসু

স্মৃতির অ্যালবাম থেকে ----- মুনমুন মুখার্জী




সময় বহতা নদীর মতই গতিমান... বিরামহীন বয়ে চলে একই দিশায় ... অতীত থেকে বর্তমান, বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে। তারই মাঝে যাপিত জীবনের কিছু বিশেষ মুহূর্ত হৃদয় লিপিতে নথিভুক্ত হয়ে রয় আপন মহিমায়... বিশেষিত হয় “বিশেষ দিন” হিসেবে। কালক্রমে স্ট্যাটিক হৃদয় লিপিতে নিবদ্ধ হয় ততোধিক “বিশেষ দিন” পঞ্জী। এভাবেই আজকের বিশেষ দিনটি কাল গুরুত্ব হারায়, কালের গতিতে নিপতিত হয় অতীত গহ্বরে। তবুও কিছু অতীত মুহূর্ত বর্তমান পেরিয়ে ভবিষ্যতের ভ্রূকূটি অগ্রাহ্য করেও স্ব-মহিমায় নিজের অস্ত্বিত্ব বজায় রাখে। বারবার স্মৃতির সিন্দুক খুলে সেসব মুহূর্তের ভাঁজে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দকেই বুঝি বলে “নস্ট্যালজিয়া।”
“আমার জীবনের সেই বিশেষ দিন” বলতেই অনেকগুলো স্মৃতি সিন্দুক খুলে হুড়মুড়িয়ে একসাথে বেরিয়ে এল। কেউ বলে, “আমায় নিয়ে লেখ,” কেউ বলে, “ওর চেয়ে আমার স্মৃ্তি অত্যোধিক আকর্ষণীয়... সেই বিশেষ দিনের খেতাব আমারই প্রাপ্য।” এই লড়াই এর মাঝে একটি পেলব স্মৃতিকে বেছে নিতে গিয়ে অনুভব করলাম, আমার অনেক অপ্রাপ্তির মধ্যেও নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় প্রাপ্তি। কিন্তু এই প্রাপ্তি তো একদিনের কিছু অভাবনীয় মুহূর্ত নয়! এ তো অনেকদিনের সমষ্টিগত কিছু মুহূর্তের উপসংহার মাত্র!
ভূমিকা ছেড়ে সেই ছেঁড়া-ছেঁড়া মুহূর্তগুলো জুড়ে নিয়ে “সেই বিশেষ দিন”টিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করি এবার –
আমরা যখন স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিমুখে হাঁটছি তখন দু’টি মাত্র রেকগনাইজ্ড লক্ষ্যই ছিল সায়েন্স নিতে হবে তারপর হয় ডাক্তার নয় তো ইঞ্জিনিয়র হতে হবে। ব্যতিক্রম ছিলাম না আমি বা আমার পরিবার। তবে পুরো পরিবার প্রাণপন চেয়েছিল আমি মেডিকেল কলেজে পড়ি। আমি চেয়েছিলাম আর্কিটেকচারে পড়ব। যে মেয়েটি রক্ত দেখে আজও সেন্সলেস হয়ে যায় সে কিভাবে মেডিকেলে পড়বে সেটা কেঊ ধর্তব্যের মধ্যেই আনলো না! এমনকি যে মানুষটি আমাকে সবচেয়ে ভাল বোঝেন, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বাবাও ভাবলেন না একবার! খুব অভিমান হয়েছিল। কিন্তু মনে মনে চাইছিলাম, কিছু একটা ঘটুক! সব পাল্টে যাক। গিয়েছিল সব পাল্টে। আমার আর এক কাছের মানুষ “দাদু” সেদিনই আমাদের জীবন থেকে নেই হয়ে গেলেন।
এমন কিছু চেয়েছিলাম কি আমি?
বাবা শুনে শুধু বললেন, “তুমি যা চাও সেটা আমায় আগে জানাও নি কেন? তাহলে মেডিকেলের কোচিং না করিয়ে আর্কিটেকচারে করতে!” বাবার কাছেই পেলাম জীবনের এক প্রয়োজনীয় শিক্ষা। “Once you feel something is not meant for you, raise your voice up. Otherwise you will be the looser, none can read your mind actually.”
তখন আর সময় নেই নেক্সট ইয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু এক বছর অলস বসে থাকব? বাবারই পরামর্শে BBA তে চেষ্টা করলাম। পেয়েও গেলাম। পরিযায়ী পাখির মত সময় কাটালেও প্রচুর বন্ধু পেলাম। পরের বছর জুনিয়রদের সাথে মেডিকেলে পড়তে ইচ্ছে হল না। বাবাই সলিউশন দিলেন। “ব্যাঙ্গালোরে পড়াশোনা কর।” ভিসা, পাসপোর্ট সব রেডী। পছন্দের বিষয়, কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়রিং-এ। বন্ধুরা বাবাকে বোঝাল, আমি না কী সবাইকে ছেড়ে থাকতেই পারব না। বাবা বুঝলেন, আমি বুঝলাম না। বাবার শোনালেন দ্বিতীয় জীবন দর্শন, “জীবনে প্রকৃ্ত বন্ধু পাওয়া অসম্ভব। পেলে তাদের হারাতে নেই।” এর চেয়েও জরুরী যা শিখলাম, ডাক্তার বা ইঞ্জিনীয়র হওয়ার ইঁদুর দৌঁড় জীবনের একমাত্র লক্ষ হতে পারে না নতুন সাবজেক্ট বিবিএ... কমার্স তো কী হল? চ্যালেঞ্জ নেয়ার বা অসম্ভব সম্ভব করার মধ্যে যে থ্রিল সেটা গতানুগতিকতায় নেই।
বিবিএ ফাইনালের আগে সব বন্ধুদের বিয়ে হয়ে যাওয়াতে সবার সাথে একটা ডিসটেন্স তৈরী হচ্ছিল। মা কে বললাম, “আমিও বিয়ে করব।” মেয়ের সুমতিতে মা বেজায় খুশী। এক সপ্তাহের মধ্যে মায়ের বন্ধুর ছেলের সাথে কথা পাকা। দু পরিবার বেজায় খুশ। বাবা বললেন, “ছেলে মেয়ে পরস্পরের সাথে একবার বসবে। এর বাইরে অন্য কেউ মেয়েকে বার বার দেখতে আসতে পারবে না। আমার মেয়ে মাছ বাজারের মাছ নয়!”
সেই মত দিনও ঠিক। এক ছুটির দিনে “অফিসিয়াল ডেটিং” ফিক্সড। আগের রাতে বাবা মাথায় হাত রেখে বললেন, “সারা রাত আছে, তুমি সত্যি বিয়ের জন্য রেডী? পারিবারিক বন্ধুত্ব, পাকা কথা, মা-বাবার সম্মান এগুলো ঠুনকো অহমিকা মাত্র। এসব আমার মেয়ের ইচ্ছের চেয়ে ইম্পর্টেন্ট নয়।” সারা রাত ভেবে মনে হল, “কে এ? কাকে বিয়ে করব? কেন? এ নয় অন্য কেউ!”
সকালে বাবাকে বললাম, “আমি যেতে চাই না!” কারণ না জেনেই বাবা ফোন করে ক্যান্সেল করে দিলেন। কয়েক মাস পর যেদিন বাবা জানলেন, আমারও কাউকে ভাল লেগেছে, মন থেকে মানতে পারলেন না। তবুও বাঁধা দিলেন না। বললেন, “আমার মেয়ে কখনও ভুল করতে পারে না। এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস!”
বাবার সাথে এখন শুধু ফোনে কথা হয়। সেদিন বললেন, “তোমায় নিয়ে আমি ভাবি না। কারণ আমি জানি, প্রয়োজনে স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে তীরে ফিরতে তুমি জান!” এতটা বিশ্বাস, এত ভরসা আর কে করে আমায়? নিজের উপর এতটা বিশ্বাস আমার নিজের আছে?


চোখ দুটো ভালবাসা আর আত্মবিশ্বাসে বার বার আর্দ্র হয়ে উঠছিল সেদিন... সেই বিশেষ দিনে!

প্রতীক্ষায় ---- দেবদত্তা ব্যানার্জী

কিশোরী বয়সে 'শাপমোচন' আমায় বুঝিয়েছিল ভালবাসা কারে কয়। সৌন্দর্যের সংজ্ঞাটাই পাল্টে গেছিল আমার কাছে। ছোটবেলায় পড়া রূপকথা 'ব্যাঙ রাজকুমারের' গল্প ভেসে উঠেছিল মানস পটে। নিজেকে কমলিকা র মত স্বর্গ ভ্রষ্টা নারী মনে করতাম।কমলিকার মত আমিও দিবস রজনী কারো আসায় অপেক্ষা বুকে নিয়ে দিন গুনতাম। অসুন্দরের ভিতর সুন্দরকে খুঁজে ফিরেছি প্রতিনিয়ত। যা সত্যি সুন্দর তার প্রতি আকর্ষণ বোধ করি নি কখনো। অরুনেশ্বরের সন্ধানে পাগলের মত ছুটে বেড়িয়েছি, কমলিকা ছিল আমার মন প্রাণ জুড়ে। কিন্তু বসন্ত এত সহজে ধরা দেয় নি। আমার বিনিদ্র রজনী কেটেছে তার অপেক্ষায়। নিজের ভালবাসা দিয়ে কাউকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি নি। আমার শাপ মোচন হয় নি .......

যৌবনের প্রারম্ভে এসে প্রেমে পড়েছিলাম অর্জুনের। আমি যেন সত্যিই চিত্রাঙ্গদা। মা এর ছিল ছেলের শখ। একমাত্র মেয়েকে ছেলেদের পোশাকেই সাজাতো বেশি। চুল ও ছোট করে কাটা। র‍্যাগিংএ একটা লাল শাড়ি ও টিপ পরে ও যখন  হাঁটতে বলেছিল রাগ হয়েছিল। কিন্তু যেদিন কলেজের নবীন বরনের অনুষ্ঠানে প্রথম চিত্রাঙ্গদা দেখেছিলাম বাড়ি ফিরে আয়নার সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করে নিজের প্রতিচ্ছবিকে প্রশ্ন করেছিলাম "কেন?"
আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছিলাম অর্জুনের প্রেমে। নারী হয়ে উঠেছিলাম ওর জন্য। ছোট্ট টিপ, হাল্কা লিপস্টিক, মা এর ধূপছায়া রঙ এর ঢাকাই এ নিজেকে সাজিয়েছিলাম। অবাধ্য বয় কাট চুলে টারসেল দিয়ে বেঁধেছিলাম জুঁইয়ের মালা। আমার অর্জুনের জন্য আমি তখন সব পারি। আমার চোখে সে কোন আলো লেগেছিল জানি না, রাতারাতি আমূলে বদলে গেছিলাম। অর্জুন কে পাওয়ার জন্য চিত্রাঙ্গদা তখন পাগল। আর আমার পাগলামি দেখে নতুন সহপাঠীরা হতভাগ। কিন্তু হায় রে মন......

যার জন্য আমার মধ্যে এত পরিবর্তন সে চোখ তুলে দেখে নি। অবজ্ঞায় দুরে ঠেলে দিয়েছিল আমার ভালবাসা। আমার এই ভাবনা গুলোর কোনো দাম দেয় নি আমার কৃষ্ণসখা।

এ অপমান লেগেছিল আমার হৃদয়ে। সহ্য করতে সময় লেগেছিল। আস্তে আস্তে বদলে ফেলেছিলাম নিজেকে আবার। শিখেছিলাম ফ্লাট করতে, চটুলতা আর বাকচাতুর্যে জয় করতে শিখেছিলাম পুরুষ হৃদয়। পর মুহূর্তে ই পদদলিত করে নিতাম আমার প্রতিশোধ। হ্যাঁ, শ্যামার মতই হৃদয় হীনা নারীতে বদলে গেছিলাম। শ্যামার মতই পুরুষদের নিয়ে খেলা আমার লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল। কত পুরুষকে যে আমার মোহজালে বেঁধে তাদের হৃদয় নিয়ে খেলেছি মনে নেই। 
আমার জীবনেও প্রেম এসেছিল। বাংলা অনার্সের শান্ত ছেলেটা শুধু চুপ করে আমায় দেখত। মুখ ফুটে না বললেও ওর চোখের ভাষা আমি পড়তে পারতাম। তরুণ কিশোরের স্বপ্নিল দু চোখে আমি সেই ভালবাসা দেখেছিলাম। কিন্তু আমি যে তখন শ্যামা, বজ্র-সেনের জন্য ঐ সদ্য যুবকের ভালবাসাকে অপমান করে ছুটে গেছি আরও ওপরে। আমার কল্পনার বজ্র-সেনের খোঁজে আমি শ্যামা হয়ে রাতের পর রাত কাটিয়েছি প্রতীক্ষায়......

না, আমি কমলিকা হয়ে পৃথিবীর সব কুৎসিত কে, সব অসুন্দর কে সুন্দর করতে পারি নি। পারি নি চিত্রাঙ্গদা হয়ে অর্জুনের ভালবাসা পেয়ে নিজেকে ধন্য করতে, আজ আমি শ্যামার মত ছলনাময়ী, প্রতীক্ষায় আছি কোন এক বজ্র-সেনের......

রবীন্দ্রনাথের তিন নায়িকা ----- রীনা রায়

প্রিয় সংযুক্তা, 

সেদিন তোর সাথে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের নায়িকাদের আলোচনা প্রসঙ্গে বেশ কিছু জনের কথা বলা হলেও বাড়ি ফিরে মনে হল, আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ না করলেই নয়।
প্রথমেই আমি 'ঘরে-বাইরে ' উপন্যাসের নায়িকা বিমলার কথা বলতে চাই। বিমলার সাথে কিন্তু আমি এযুগের মেয়েরও দিব্যি মিল পাই।
এখানে নায়িকা অপরূপা সুন্দরী নয়, শ্যামলা, ঢ্যাঙা এক মেয়ে, যার বিয়ে হয় এক উচ্চবিত্ত পরিবারে, তাকে পছন্দের একমাত্র কারণ সে সুলক্ষণা ।
বিমলা নিখিলেশকে স্বামী হিসেবে পেয়ে যেন বর্তে গেছিল, কিন্তু তার প্রতি স্বামীর অতিমাত্রায় যত্ন, ভালবাসা, মনোযোগ, কর্তব্যে সে যখন অভ্যস্থ হয়ে উঠলো, তখন বিমলা সেগুলো তার প্রাপ্য ভেবে স্বামীর প্রতি কিছুটা উদাসীন হয়ে পড়েছিল। 
তুই দেখবি, যা আমরা না চাইতেই পেয়ে যাই, তার কদর করিনা।
এইসময় সন্দীপ তার জীবনে যখন এলো, সন্দীপের রূপ, বক্তৃতা, সহজভাবে মিশতে পারা তাকে প্লবল আকর্ষণ করলো, কিন্তু ছল সন্দীপের মুখোশটা যখন তার সামনে খুলে গেল, সে বুঝতে পারলো, কি ভুল সে করতে যাচ্ছিল ।
আজকের দিনেও এমন নারী অসংখ্য, যারা সুখী নই, স্বাধীনতা নেই বলে বাইরের কোনো ছল পুরুষের আকর্ষণে ছুটে যায় । তারপর ভুল বুঝতে পেরে তারা আবার ফিরতে চায়, কিন্তু সবার তো নিখিলেশের মত স্বামী হয়না--
দ্যাখ, এমনিতে কিন্তু বিমলা ভাল মেয়ে । সে অমূল্যকে ভাই ডেকেছিল বলে অমূল্যর বিপদের কথা ভেবে তার প্রাণ কাঁদে, যে মেজজাকে সে ঘোরতর অপছন্দ করতো, শেষমেশ সেই মেজজাকেই সে আশ্রয় করে।
এমন বিমলা আমাদের চারপাশে অনেক আছে রে।
সব মিলিয়ে বিমলা চরিত্রটি আমাদের মনে থেকে যায় ।
আবার 'চোখের বালি'র বিনোদিনীরকে দ্যাখ--এখানে বিনোদিনী শিক্ষিতা এবং সুন্দরী। তবু ভাগ্যের কি পরিহাস, 
যার সাথে তার বিয়ের কথা ছিল, সে তাকে বিয়ে করতে না চাওয়ায় অন্য জায়গায় তার বিয়ে হল এবং সে বিধবা হল। এরপর বিধবা বিনোদিনী ঘটনাচক্রে সেই বাড়িতে এসে দেখলো, সেই মহেন্দ্র একটি নিরক্ষর বালিকাকে বিয়ে করে পরম সুখে দিনযাপন করছে।
এই মহেন্দ্র তাকে বিয়ে করতে চায়নি।
মহেন্দ্রর বৈভব, মহেন্দ্রর বিবাহিত জীবনের সুখ ওকে কাঁটার মত বিঁধছিল।
এসব তো তার হতে পারতো, সে মহেন্দ্রকে জিতে নিতে চাইলো। মহেন্দ্রর সাথে ভালবাসার খেলা খেলতে খেলতে মহেন্দ্রর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ল।
এই খেলায় সে নিজেকেই আরও কলঙ্কিনী করে তুললো।মহেন্দ্র যখন তার বশীভূত হয়ে সংসার ছাড়লো, তখন সে বুঝলো, সে আসলে মহেন্দ্র নয়, মহেন্দ্রর বাল্যবন্ধু বিহারীকে ভালবাসে, যে বিহারী একদিন তাকে আঘাত করেছিল, অপমান করেছিল, সেই বিহারীকেই ও মন থেকে ভালবেসেছে।
কিন্তু বিহারীকে যখন সে মনের কথা জানালো, বিহারী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সে রাজী হয়না।
দেখবি তুই, যা আমাদের নাগালের বাইরে তার প্রতি আমাদের প্রবল আকর্ষণ থাকে, আর তা যখন আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসে তখন আর আকর্ষণ থাকেনা।
তারপর দ্যাখ আর এক নায়িকা 'শেষের কবিতা'র লাবণ্য ।
তার বিদ্যা, তার জ্ঞানই যেন তার রূপকে পরিনতি দিয়েছে।
লাবণ্য জানতো অমিত ওকে ভালবাসে, সে নিজেও অমিতকে গভীরভাবে ভালবেসেছিল ।
কিন্তু প্রথমদিকে বিয়েতে তার মত ছিলনা।
লাবণ্যর মতে, ভালবাসার ট্রাজেডি ঘটে সেইখানে, যেখানে পরস্পরকে স্বতন্ত্র জেনে মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারেনা, নিজের ইচ্ছেকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ভাবি তাকে নিজের মতো বদলে নেবো।
লাবণ্যর মতে, খুঁতখুঁতে মন যাদের তারা মানুষকে খানিক খানিক বাদ দিয়ে বেছে বেছে নেয়, কিন্তু বিয়ের পর তারা বড় বেশী কাছাকাছি এসে পড়ে, সেখানে আড়াল কিছু থাকেনা।
তাই লাবণ্য যখন অমিত আর কেটির পূর্ব প্রণয়কাহিনী জানতে পারলো, নিজেকে সে সরিয়ে নিলো।
তারা দুটি মানুষ পরস্পরকে সত্যি ভালবেসেও এক হতে পারলোনা।
ভালবাসা থেকে গেল তাদের অন্তরে অমর, অমলিন হয়ে ।
"যে ভালবাসা ব্যাপ্তভাবে আকাশে মুক্ত থাকে, অন্তরের মধ্যে সে দেয় সঙ্গ"
---
আজ এই পর্যন্তই থাক রে, বাকীদের নিয়ে না হয় আর একদিন আলোচনা করা যাবে।
ভাল থাকিস।


ভালবাসাসহ, 
তোর মিতিল

রবীন্দ্রনাথের তিন নায়িকা ---- লীনা রায়চৌধুরী

উপলব্ধ সত্য এই-মনুষ্য পৃথিবীতে  সৃষ্টিতে স্রষ্টার পরেই যাঁর স্থান(যদি স্রষ্টায় বিশ্বাসী হই),চরিত্র সৃষ্টির সেই রূপকার-'বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'।অন্তর্বিষয়ী ভাবের কবিত্ব থেকে বহির্বিষয়ী কল্পনালোকে তাঁর সদা সৃষ্টি ও কৌতুহলমুখী মন ছড়িয়ে পরে।
              তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে নারী।একদিকে যেমন নারীদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে তাঁর লেখনী শক্তি ধার দিয়েছেন-অন্যদিকে তৎকালীন সামাজিক অসঙ্গতি গুলো মূর্ত করে তুলেছেন বাস্তবতার আভাসে!
            রবীন্দ্র সৃষ্ট 'নষ্টনীড়' গল্পে চারুলতা ধনী গৃহবধূ।কোনও অভাব ছিল না,শুধু অভাব সাহচর্যের! স্বামীর মানসিক সমর্থন! কাগজের আবরণ ভেদ করে স্বামীকে পাওয়া তার পক্ষে ছিল দুরূহ।চারুর স্বামী রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালনে তৎপর ,স্ত্রীর প্রতি অবদমনের নীতি গ্রহণ করছেন তা উপলব্ধিতেই আসেনি।ফলস্বরূপ শারীরিক - মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ ও বঞ্চিত চারু আঁকড়ে ধরে অমলকে।সেও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজের আত্মপ্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে,চারুলতার অবদমন আর মানসিক নির্যাতনকে বাস্তবায়িত করে।অগ্রাহ্য বা অবহেলার ফুটে ওঠা ছবি সত্যিই নির্মম।অবাক পুরুষতন্ত্র!!
             'মানভঞ্জন'-এর গিরিবালার সৌন্দর্য বর্ণনা করে বলা হয়েছে'... অকস্মাৎ আলোকরশ্মির ন্যায়,বিস্ময়ের ন্যায়... একেবারে চকিতে আসিয়া আঘাত করেএবং এক আঘাতে অভিভূত করিয়া দিতে পারে'।এই গিরিবালার প্রতি ও স্বামী গোপীনাথ আকর্ষণহীন।নেই তার ভিতর সামান্যতম ভালোবাসা।কিন্তু ছিন্ন বন্ধন গিরি মুখবুজে মার খায় নি,অভিনব পন্থায় স্বামীর অবহেলার প্রতিদান দিয়ে গিরিবালা এক অনন্য প্রতিবাদী নারী হয়ে উঠেছে রবীন্দ্র-কথা সাহিত্যে।
          নারী-পুরুষের সম্পর্ক যখন একটা অভ্যাসের হয়ে ওঠে-সেই সামাজিক প্রেক্ষিতে 'স্ত্রীর পত্র'র মৃণাল পুরনো মূল্য বোধের দায় মানতে অস্বীকার করে।পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে ওঠে।সংসারের প্রত্যেক সিদ্ধান্তে স্ত্রীর অংশগ্রহণকে না মেনে নেওয়া,অবহেলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সংসার ত্যাগ করে মৃণাল।গ্রামের মেয়ে মৃণাল-আধুনিক,রুচিশীল,ব্যক্তিত্বসম্পন্না ও গতানুগতিকতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী।মৃণাল যখন লিখেছে,'আমার একটা জিনিস তোমাদের ঘরকন্নার বাইরে ছিল,সেটা কেউ তোমরা জানোনি।আমি লুকিয়ে কবিতা লিখতুম।... সেখানেই  আমার মুক্তি,সেইখানে আমি আমি।'সে প্রমাণ করেছে সে শুধু 'মেয়ে মানুষ নয়,মানুষ ও বটে।
      কোথাও গিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতাকামী রবীন্দ্রনাথের  নায়িকারা এক হয়ে গেছে।এক হয়ে গেছে সকলের চাওয়া-এক প্রতিবাদী নারী হয়ে উঠেছে।রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় সেকাল নয়-একালের নারীর নতুন ভাবনা,নতুন চিন্তাধারার প্রেক্ষাপটে তাদের নির্মাণ করেছেন।নারী-আত্মপ্রত্যয়,আত্মগরিমায় উজ্জ্বল।

সেদিন আক্ষরিক অর্থেই পথে বসেছিলাম ---- সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

আমার জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার সেই দিনটার কথা কিছুতেই ভুলতে পারবো না । সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ গুজরাটের বরোদা শহরকে আলবিদা জানিয়ে চেপে বসেছিলাম আমেদাবাদ – হাওড়া এক্সপ্রেসে । আলবিদা জানিয়ে এসেছিলাম সেই জার্মান বহুজাতিক সংস্থাকে যেখানে কাটিয়ে এসেছি চাকুরী জীবনের প্রথম দশটা বছর । মনেমনে প্রস্তুত হয়েছিলাম টাটাস্টীলের একটি ডিভিশনে নতুন চাকরীতে যোগ দেবার জন্য । আমাকে ট্রেনে চাপিয়ে দিতে এসেছিলেন আমারই কিছু বন্ধু যাদের চিরকালের জন্য ছেড়ে এসেছি বরোদায় । একজন পোড় খাওয়া বন্ধু বারবার সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন - ‘ রাত্রে সজাগ থেকো সুধাংশু । নাগপুরের ওদিকে চোরের খুব উপদ্রপ কিন্তু । কখন তোমার মালপত্র নিয়ে চম্পট দেবে টেরও পাবে না ।’
যাই হোক দিনটা ভালোই কাটলো চলন্ত ট্রেনের জানালার ধারে বসে নতুন চাকরী , নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন করে বসত গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে । হায় রে , তখন কি জানতাম কপালে কী লেখা রয়েছে ! সেই রাতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নিজের রিজার্ভ করা সীটের ওপর । ঠিক ঘুমোনো নয় , সামান্য তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম । মাঝরাতে কোন একটা স্টেশন থেকে কিছু যাত্রী এসে উঠেছিলো সেই কামরায় । একজন পেছন ঠেকিয়ে বসেওছিলো আমার মাথার ধারে । আমল দিইনি । এমনটা ঘটেই থাকে দূরপাল্লার ট্রেন সফরকালে । হঠাৎ মিষ্টি একটা গন্ধ এসে লাগলো আমার নাকে । তারপর আর কিছু মনে নেই । একেবারে তলিয়ে গিয়েছিলাম গাঢ় ঘুমে । সেই ঘুম ভাঙলো পরদিন সকালে । উঠে বসে টুথপেষ্ট এবং টুথব্রাশ নিতে যেতে টের পেলাম আমার কপাল পুড়েছে । পোড় খাওয়া বন্ধুটির কথা মিলে গেল অক্ষরে অক্ষরে । চোর এসে আমাকে একেবারে পথে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে !
ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাবার জন্য টুথপেষ্ট এবং টুথব্রাশ নিতে গিয়ে দেখি সীটের তলায় চেন দিয়ে বেঁধে রাখা আমার তলপিতলপা লোপাট হয়ে গিয়েছে । ঝোলা ব্যাগটা খোয়া যায়নি বালিশ করে শুয়েছিলাম বলে । আর চুরি হয়নি বহুব্যবহৃত চপ্পল জোড়া । স্টীলের চেনে বাঁধা দুটো সুটকেসে ছিলো আমার সর্বস্ব বস্তু । একটায় ছিলো টাটাস্টীলের দেওয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার , স্কুল কলেজের যাবতীয় অরিজিনাল সার্টিফিকেট , ছেড়ে আসা জার্মান কোম্পানির শংসাপত্র , নতুন কেনা তিনপ্রস্ত জামাকাপড় ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক বস্তু আমার কাছে যার মূল্য অসীম । সবই উধাও হয়ে গেল সুটকেস সমেত । অন্য সুটকেসটায় ছিলো মা-বাবার জন্য , ছোটোভাইবোনদের জন্য কিনে আনা বেশ কিছু উপহার সামগ্রী ।
দেখে মাথায় আকাশ যেন ভেঙে পড়লো । গতদিনও ছিলাম চাকুরীজীবী অথচ এক রাতেই নাম লিখিয়ে ফেলতে হলো বেকারদের তালিকায় । নতুন অফিসে গেলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ছাড়া কেই বা শুনবে আমার কথা ? কোনো প্রমাণই যে নেই আমার সঙ্গে যা দিয়ে নিজেকে সেই মানুষটি বলে পেশ করবো ওদের সামনে ?
সহযাত্রীদের অনেকেরই মালপত্র চুরি হয়েছে সেই রাত্রে । সকলেই হাহুতাস করছেন এবং আমি ভাসছি চোখের জলে । বাড়িতে ঢুকে মা-বাবাকে কি বলবো সেই ভাবনা কুরেকুরে খেতে থাকলো আমাকে । নাগপুর স্টেশন এলো ঘণ্টা দেড়েক পর । ঐ স্টেশনে নেমে আর পি এফ –এর অফিসে গিয়ে এফ আই আর করলাম । এছাড়া আর কীই বা করার ছিলো আমার ?
সেদিনের অর্থাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর , ১৯৮৬ -এর কথাটা মনে পড়লে আজও আতঙ্কে বুক কেঁপে ওঠে । ঈশ্বরের কৃপায় নতুন চাকরীতে যোগ দিতে পেরেছি । সেখান থেকে অবসরও নিয়েছি একদিন । তবুও সেদিনের সেই আতঙ্ক আজও আমাকে তাড়া করে ফেরে । যখন বেকার ছিলাম তখন যতটা না ভুগতাম সেদিন নতুন কোম্পানী থেকে পাওয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা চুরি হয়ে যাবার পর তারচেয়ে শতগুণ বেশী ভুগেছিলাম বেকারত্বের জ্বালায় । 

স্বগতোক্তি ----- শ্রীলেখা মুখার্জ্জী

নৈঃশব্দ্যের গভীরতা মাপা রাতে 
আমি প্রথা ভেঙে 
বিগত বাইশ গজ শূণ্যতায়
সম্পর্কের ফসিল নাড়াচাড়ায় ব্যস্ত
:
মুছে যাওয়া আমি'র 
স্পর্শ অনুভূতির আনুপাতিক পরিবর্তন
বোঝার চেষ্টা করছি--
:
পিছন ফিরে তাকাতেই দৃশ্যমান
অতি পরিচিত অতীত
:
তোমায় ঘিরে নিবিড়তর আলাপনগুলি
এই মুহূর্তেই বলতে চাই
আঁধারের ছায়া-কলেবর সাক্ষী রেখে--

হাম্বীর ---- শুভশ্রী সাহা

হাম্বীর...
ছায়ারা দীর্ঘতর হয় কোন রাতে,
ফেলে আসা সম্পর্কের মিছিলে মুখগুলি,
আর বাইশ গজ পিছিয়ে আয়নায়...আমি

ছায়ারা দীর্ঘতর হয়, পুরোনো অতীত,
জীবনের লেনদেন ফিকে পড়ে যায়
সব ভুলে, শুধু হাউস বিল্ডিং লোন পড়ে থাকে।

বিষন্ন অতীতকাল, মুহূর্তে কাছে আসে বিচ কোভালাম,
এখন সব রাতে শুধু ফয়েলের আলপ্রাজোলাম,
সেই পুরোনো বাইশ গজের হিসাব..
.
ছায়ারা দীর্ঘ হতে হতে একা আমি,আর হাম্বীর
তান,
ব্যালকনি তে সেতারে, আমি আর বিলায়েত খান।
থেকে গেছে সেই বাইশ গজ..

দ্য শো মাস্ট গো অন ----- শঙ্খসাথি পাল

মুহূর্তদের ছায়া মেপে নিচ্ছি তোমার দীর্ঘকালীন অনুপস্থিতিতে
ফলতঃ, ফিরতে চাইছি নাটকের পূর্ব অঙ্কের বিদায় দৃশ্যে, যেখানে 
এখনও অপেক্ষায় তোমাকে আষ্টেপিষ্টে ছুঁয়ে থাকা গল্প 
:
তাহলে এভাবে এখনই হেঁটে যাওয়া যাক ঐহিক গন্তব্য 
হাতের মুঠোয় ছায়াসাক্ষী 
ভাঙছি সন্তর্পণে সম্পর্কের মলাট___
:
একা রাত বেছে নেয় অপসৃয়মান বাইশ গজ দূরত্ব 
ইথার তরঙ্গে ঋতুপরিবর্তনের বায়বীয় অবয়ব 
বদলাচ্ছে স্পর্শের ডাইমেনশন...

ক্ষয়'…একটি অভিধান অন্তর্গত শব্দ ----- সৌভিক সেন

আলকাতরার গন্ধটা জিভের ডগায় ঠেকলেই
ছেলেটা পাগল হয়ে যায়…হিজিবিজি আঁকতে বসে…
আমি ছেলেটাকে চিনি…ছেলেটাও আমাকে চিনতো… পোল'টার ওপারে আমাদের দুটো ঘুনসি 
 ঘুণধরা কড়িকাঠে ঝুলে রয়েছে আজও…
বাইশ বছর ধরে আমি সাইকেল চালাই
ফি-বছর পোলটা আপডেট করা হয়
কালো গন্ধে প্রতিবার বসন্ত আসে এদিকে…
আমি দাঁড়াবার সময় পাই না…
কারণ আজ টিউশনির মাইনে পাওয়ার কথা
মাইনে পেলে একটা আলকাতরার টিন
এবং দুটো তুলি কিনতে হবে…
আগামী বর্ষার আগে অনেক আঁকা বাকি…

নির্দোষিতা ---- বিলকিস বি পলি

বোহেমিয়ান ভাবনায় অনুরাগের উদগিরণে
তপ্ত বালিয়াড়িতে সচেতন নগ্ন পা
পরিচ্ছন্ন জীবনে পলির কোমলতায় 
আবাদ করা ঐচ্ছিক স্বপ্নগুলো
উগরে দেয় স্বীয় অস্তিত্ব ইমারতের বন্দী খাঁচায়
নিদানকালে অজ্ঞতার খোলসে ঢাকা
ধূর্ত কিছু অবয়ব ঘুরে দাঁড়ায়
পিনপতন নিরবতায় অবমুক্ত করে
সোনালী জলের মোহাবিষ্ট আচরণ
গোরখোদক হয়ে উপড়ে ফেলে
কিছু ঘাসফুলের জীবন নির্মমভাবে
ক্লিশেতর জীবন যুদ্ধে অনুত্তীর্ণ মার্সেনারি
ঐহিক মায়াজাল ছিন্ন করে
অবেলায় পাড়ি দেয় শেষ গন্তব্যে
ব্যারাকে পড়ে থাকা ওয়ালেটে তখনো হাসে
প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে তার অবুঝ সন্তান
অতঃপর চারদিকে আজানের প্রতিধ্বনি শেষে
গায়েবানা জানাজা পড়া থেকে বিরত থাকে
অপকর্ষের আবরণে ঢাকা হিংস্র শকুনের দল
যাদের অত্যাচার শেষে অপঘাতে খুন হয়
প্রতিনিয়ত কিছু নিষ্পাপ মুখের হাসি
ময়নাতদন্ত শেষে সেসব হাসির
ফরেনসিক রিপোর্টে লেখা থাকে "নির্দোষিতা"

গন্ধ ---- সুমনা দও

তুমি চিঠি লিখতে বলেছিলে
কারন কাগজে আমার গন্ধ পাও !
তারপর সারাবিকেল
বিষণ্ণতা নিয়ে বাগানে বসেছি..
বসন্তবৌরি ডেকে গেছে অমলতাসে..
চায়ের দাগ লাগা সন্ধ্যে
শুকিয়ে গেছে টেবিলের কোনায়..
হলুদ খামে খুচরো এস্রাজও
বেজেছে কত রাত অব্দি !
জাফরান এর স্বাদ
সেই ভোরবেলায় ঘুম পাড়িয়েছে।
তুমি পারফিউম লাগাতেও নিষেধ করেছিলে
শরীরে নাকি আমার গন্ধ পাও ! 

নববর্ষ ----- জয়তী দাস

কুন্দ ফুলের মালা আজ তোমায় নিবেদন,
বাসর হলো শেষ, চৈতির জলসায়।
জড়িয়ে কস্তূরী ঘ্রাণ ছেড়েছো বসন্ত বেশ,
সেজেছো "রুদ্রদেব",জলের বুকে জাগছে বিহান!
তন্দ্রা জড়ানো চোখ, সুমধুর কলধ্বনি ভৈরবী আবেশ।
আম্রপত্রে সাজানো সিন্দূরে জেগেছে মঙ্গলঘট,
যা কিছু ছিলো, মান অভিমান স্মৃতির মোড়কে রাখা,
ভেসে যায় আবছা আলো স্রোতে...
যত দোষ-অদোষ, এই বেলা করো মার্জনা।
হে চির নুতন, আজ এই প্রভাতে তোমকেই করি আহ্বান....
সত্যের চোখ বিকশিত হোক,
পূর্ণ পাত্র উঠুক ভরে শস্য শ্যামলে,
জীবন হোক মধুর,
শান্তি ঝরুক ধরাধামে....
এসো নতুন সাজে, নব বৈশাখে "নববর্ষ"

শুধুই নারী ---- সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিদায়ী বেলায় মনখারাপের অ্যাসাইলামে 
বিষন্নতার সাদর আমন্ত্রণ 
অনুশোচনার অন্তরে অন্যমনস্কতার অনুভব 
:
ভরসা আর ভালবাসার ঘরে খেলা করে
ডিভোর্সের হাতছানি
সাংসারিক আধিপত্য উপহাস করে স্ত্রী সত্তাকে
:
প্রভুত্বের দাক্ষিণ্যে নারীত্বের মোক্ষলাভ ঘটে
আয়নার প্রতিবিম্বে উইনারের হাসি
বিবেকের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা -
:
এক স্বাধীন নারী
শুধই নারী
শুধুমাত্র

অসমাপ্ত গল্পের নেপথ্যে ----- জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী

নাহ.....আপাতত ঢেউ গুনতে চাইছি না
বরং ভেজা পায়ে উঠে আসা যাক চকচকে বালিয়াড়ি ছেড়ে
আলো নিভে এলে হলুদ সংলাপের গায়ে ফুটে ওঠে মরচে'র রঙ
সেসব রঙের ছায়ায় আর'ও প্রকট হয় খুনি চরিত্রগুলি
:
নাহ....কোন কৈফিয়ত তলব নয়
স্রোতের মুখে নৌকাডুবি'র চিত্রায়ণ আগে'ও দেখেছি বহুবার
বরং এ ফুরসতে পচনশীল পাটাতনের কাছে গল্পটি শুনে নিই.....
জেনে নিই নিরুদ্দেশ নাবিকটির কোনো ঘর ছিল কি না
:
শুনতে শুনতে একসময় গোধূলি ছাপিয়ে মুখর হয়ে উঠবে অপেক্ষার সাউন্ড ট্র্যাক
আর...আমার গা বেয়ে উঠে আসবে সেই মেয়েটি'র শীতল নিঃশ্বাস
"প্যাক আপ " বলার আগেই ভেসে গেছিল যে

রিহ্যাবের চৌকাঠে ------ প্রদীপ্ত দাস

অনাবশ্যক বার্তালাপ নয়
অজ্ঞসম বসে থাকো... মুঠোয় ওড়াও বাতাস
সচেতন কোনো প্রতিবাদও নয়
নিরুত্তাপ বসে থাকো... ছুঁড়ে ফেলে অনুরাগের আভাস

আসবে, ঠিক আসবে নিরাময় -

ঐহিক চাহিদার পাহাড় থেকে
তোমাকে বিরত রাখবে শিশুস্বপ্ন কিছু
অপকর্ষের গ্লানির ফাঁস যাবে
সরে সরে; অনুত্তীর্ণ কায়ামন রয়ে যাবে পিছু

আসবে, ঠিক আসবে নিরাময় 

শূন্য অঙ্ক ----- শর্মিষ্ঠা দত্ত

সারাটা দিন শুধু কোমল গান্ধারে দাঁড়িয়ে 
খুঁজে গিয়েছি পরবর্তী স্বর---- 

পাইনি 

আশাবরী আলাপের পর একে একে 
পটদীপ - ভূপালী - বেহাগের দ্রুত খেয়াল বিস্তার আর 
বোলতানের পর 
অবশেষে বিলম্বিত ত্রিতালে 
জয়জয়ন্তী -----

অঙ্কটা মেলেনি 

মাত্রার হিসেবে কিঞ্চিত গরমিল ছিল !
জীবনের খাতায় জমে উঠেছে 
দুর্বোধ্য সংখ্যাতত্ত্ব ----

তোমার কাছে বোধহয় কোনো ঐহিক অঙ্কের 
উত্তরই মেলেনা ----তাই 
প্রতীক্ষা আমৃত্যু 

আপন মনেই গুনগুন করি ----
"চাওয়া পাওয়ার পথে পথে দিন কেটেছে কোনমতে 
এখন সময় হলো ওপার থেকে আপনাকে দিই আনি ----
জীবনদোলায় দুলে দুলে আপনারে ছিলেম ভুলে 
এখন জীবন মরণ দুদিক দিয়ে নেবে আমায় টানি "---

আছো তব মোর ---- জাকিয়া জেসমিন যূথী

আজ এ শুন্য ঘরে নিরব রাতে যদি এলেই খালি হস্তে
আমি তো ভয় পাইনি একটুখানি!
আমি তো জানি হে বন্ধু আমার, জানি
আছে যে তোমার এ হৃদয়খানি। 
.
“চাওয়া-পাওয়ার পথে পথে দিন কেটেছে কোনোমতে,
এখন সময় হল তোমার কাছে আপনাকে দিই আনি .................
.
জীবনদোলায় দুলে দুলে আপনারে ছিলেম ভুলে,
এখন জীবন মরণ দু দিক দিয়ে নেবে আমায় টানি।“

যতই দ্বিধায় জমে থাকুক প্রেম –কানন-গড়া
তোমার আবেশ দূর করে দেয় হৃদয়ের সব খরা। 
জীবন নদীর ঢেউয়ে ভেসে ভেসে উঠেছিলাম কূলে
তবু তোমার তরেই সাংগ হবে ভালোবাসায় জানি। 

অরণি তোমাকে ভেবে ----- রিক্তা চক্রবর্তী

দৃশ্য -(১)
:
লক্ষ্যভেদী হৃদপিণ্ড ... অভাবী জরা বৃষ্টিশূন্য জীবন জুড়ে 
প্রতিবার তোমাকে হারিয়েছি 
:
সুদর্শন ফোবিয়ায় ভুগে ভুগে 
শেষরাতের অন্তরঙ্গ প্রহরে শুধু তোমাকেই ভেবেছি 
:
প্রতি মুহূর্তে তোমাহীন-কর্পুর প্রাণের রেকাবি থেকে
সবুজ ঘ্রাণ হয়ে উড়ে যাচ্ছে মুহূর্তের আতরকৌটোয় ভরে 
:
দৃশ্য - (২)
:
দিন কাটছে ... রাত হচ্ছে নিয়মমতো 
কুয়াশার রেলিং ধরে নেমে আসা মনখারাপগুলি বাক্সবন্দী হচ্ছে
:
তোমার চলে যাওয়ার সাদা কালো ছবিটি ঘিরে রোজ ভোর হচ্ছে 
তিনতলার কোণের ঘরটায় রেশমকুঠি বুনছে ধুলো পড়া মুহূর্তগুলি 
:
আমার বিশতম জন্মদিনে দেওয়া তোমার রেকর্ডপ্লেয়ারটায় তখন ......
:
" চাওয়া-পাওয়ার পথে পথে দিন কেটেছে কোনোমতে,
এখন সময় হল তোমার কাছে আপনাকে দিই আনি

জীবনদোলায় দুলে দুলে আপনারে ছিলেম ভুলে,
এখন জীবন মরণ দু দিক দিয়ে নেবে আমায় টানি ...... "

যাবতীয় সেইসব ---- নয়নিকা সেন

যা হৃদয় থেকে দূরে থাকে
তাকে সাফল্যের মতো অস্পষ্ট মনে হয়
এটাই জীবনের দস্তুর ...
:
তবুও কোন কোনদিন মেঘেদের শরীরে উল্কির মতো
আচম্বিতে নেমে আসে বাকসিদ্ধ দুর্যোগ ...
:
বাতাসের মতো নির্বান্ধব ধোঁয়ার বিষে নীল হয়ে ওঠে চারিধার
মন্বন্তর নয় ... মৃত মানুষের মননজাত অমৃত সম্ভার
হাইওয়ে চিরে গর্ভনিরোধক পুরুষালি পিলে আশ্রয় নেয়
:
যে যতো ফুরিয়ে যায়
দরজা আঁকার পর তাকে ঠিক ততটাই আপন লাগে
এটাই জীবনের দস্তুর 

সাহিত্যের সেকাল ও একাল --- অরূপজ্যোতি ভট্টাচার্য

গণিত শাস্ত্রে জ্যামিতি একটা গুরুত্বপুর্ণ অধ্যায়। জ্যামিতি মূলত দু প্রকার। যেটা আমরা মাধ্যমিকের আগে পড়ি সেটাকে বলে ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি। ইউক্লিড্ কিছু সিদ্ধান্ত কে বিনা প্রমান মেনে নিয়েছেন। যেগুলোকে বলে স্বতঃসিদ্ধ। আর কিছু সূত্র প্রমান করেছেন ওই স্বতঃসিদ্ধ ধরে। যেগুলো কে বলাহয় উপপাদ্য। আর এই উপপাদ্য আর স্বতঃসিদ্ধ দিয়ে যা প্রমান করতে হয় সেগুলোকে চলতি কোথায় বলাহয় এক্সট্রা। সাহিত্য আর সমাজের সম্পর্ক অনেকটা এই উপপাদ্যের মতো। সাহিত্য সমাজের প্রতিফলন। এটা যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে যুক্তি দিয়ে প্রমানও করা যায় যে সাহিত্য সমাজের প্রতিফলন। অনেকটা ওই উপপাদ্য প্রমানের মতো। খুব সংক্ষেপে প্রমান টা হলো - সাহিত্যের তাৎপর্য আর সমাজের সংজ্ঞা - এই দুই সমীকরণের সমাধান। সাহিত্যের তাৎপর্য লুকিয়ে আছে রস নিস্পত্তির মধ্যে। রস হলো একটা রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রোডাক্ট। যেখানে বাইরের সমাজ আর মনের ভাব এই দুই উপাদান বিক্রিয়া করে রস সৃষ্টি করে। সমাজের আলম্বন হলো বিক্রিয়ার অনুঘটক। তাই শুরুতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে সাহিত্য সমাজের প্রতিফলন। বিষয়টা অনেকটা বিজ্ঞানের মতোই যুক্তিগ্রাহ্য। 
মোবাইল টেকনোলজি সমাজে রেভোল্যুশন এনেছে দুহাজার সালের পর থেকে। দুহাজার সালের পর, বিশেষ করে যেদিন থেকে ফেইসবুক এসেছে, সেদিন থেকে - মানুষের কাছে পৌঁছনোটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। অনেকেই কবিতা লেখে, অনেকেই গল্প লেখে আবার আমার মতো কেউ কেউ হিজিবিজি লেখে। আগে অনেকেই এই লেখা গুলো বইয়ের পাতায় বন্দী করে রাখতো। আজ ফেসবুকে ভাষা উম্মুক্ত। নানান রং র ছবির কোলাজের মাঝে লেখার প্রেসেন্টেশন। অনেকেই লেখে। সবার লেখা মনে দাগ না কাটলেও কেউ কেউ বেশ ভালোই লেখে। অনেকেই পড়ে। লাইক, রিমার্ক কতকিছু। ঝা চকচকে প্রেসেন্টেশন। শুধু একটাই প্রশ্ন থাকে লেখাগুলো মনে কতক্ষন স্থায়ী হয় ? আবার একটা নতুন পোস্ট, নতুন মুড্। 
যদি সময়টা একটু পিছিয়ে যাই, মানে দুহাজার সালের আগে, তখন কেমন ছিল সাহিত্য ! কিছু সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা। অথবা বই লেখা। প্রেসেন্টেশন মানে বইমেলা। এরই মধ্যে লেখককে পৌঁছতে হবে পাঠকের মনে। আর সেটা না হতে পারলে সব চেষ্টাই মাটি। লেখকের দায়িত্ব পাঠক কে দিয়ে পড়িয়ে নেয়া। মানে বই কিনতে বাধ্য করানো । সেটা ভালোলাগার টানে, ভালোবাসার টানে। সেদিন সমাজ আমাদের দিয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টপাধ্যায় এনাদের মতো সাহিত্যিক। যাদের লেখা বার বার পড়েছি। বই কিনে পড়েছি। পূজাবার্ষিকী খুলেই আগে এনাদের লেখা পড়েছি। এমনকি পান্ডব গোয়েন্দা বা কিকিরা এইসব চরিত্র মনে দাগ কেটে গেছে। কবিতার কথা বললে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এনারা আজকের দিনেও প্রাণবন্ত। কি ছিল তাদের লেখাতে ? খুব সহজ কোথায় বললে ওনাদের লেখা মনে দাগ কেটে যেত। একবার পড়তে শুরু করলে আর থামা যেত না। খাবার টেবিলে, রাতের বেলা শুয়ে শুয়ে, বা টেক্সট বই এর মধ্যে লুকিয়ে। বাবা মার বকুনি, স্যারের মার সব কিছু উপেক্ষা করে পড়েছি। ভুল বললুম। লেখাগুলো পড়িয়ে নিয়েছে। আমরা পড়িনি। আমাদের পড়িয়ে নিয়েছে। বয়সের সাথে সাথে সমাজের পরিবর্তন যেন মনের কোনে উঠে এসেছে, আর মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে গুলো ডানা মেলে উড়ে গেছে। রস নিস্পত্তি। ভাব আর বাইরের জগৎ বিক্রিয়া করে যে রস উৎপন্ন করেছে সেটা মনের সাথে মিশে গেছে। বিজ্ঞানের ভাষায় দ্রবীভুত হয়। 
আর একটু পিছিয়ে যাই রবীন্দ্রনাথের যুগে। ছোটগল্প নিরুপমা। বিষয় পণপ্রথা। এবার বিশ হাজার পন আর হাতে হাতে আদায়। সামান্য একটা লাইন। একশো বছর পরও যার তাৎপর্য প্রাসঙ্গিক। মনের কোনায় যে রস ছড়িয়ে দেয়', সেটা জানায় - বেদনার কি ভাষা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মহেশ। আজকেও পড়লে চোখে জল আসে। দেবদাস। একটাই প্রশ্ন জাগায় - ভালোবাসা করে কয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আর পদ্মানদীর মাঝি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এনারা কালজয়ী। কারণ একটাই। এনাদের লেখা সমাজের বাস্তবের সাথে মনের যন্ত্রণার সংযোগ ঘঠায়। কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন। লেখা পড়তে হয় না। লেখক পড়িয়ে নেন। একবার নয় বার বার। আর বারবার আসে নব অনুভূতির সজীবত্ব। 
আজ আমরা বাচ্চাদের বলি মোবাইল এডিক্ট। আমরা নিজেরাও এডিক্ট। আজকে ছোট বড়ো সবারই মন অস্থায়ী। টি ভি তে সিরিয়েল দেখলে দেখা যাবে একজন মহিলা আদা জল খেয়ে পেছনে পড়ে আছে আর এক মহিলার ক্ষতি করতে, আর অন্যদিকে ছেলে মানেই নারী বিদ্বেষী নাহলে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির । আমরাও গোগ্রাসে গিলছি সেই সিরিয়াল। আমাদের মনের আবেগ গুলো আজ ভীষণ জটিল সমীকরণের মাঝে সমাধান খুঁজে পায়না। আর তাই ঘুরতে থাকে ঘূর্ণাবর্তে। যিনি লিখছেন তিনি নিজেই কনফিউসড। নিজের কাছেই পরিষ্কার নন কি ঠিক আর কি ভুল। শুধু কিছু আবেগকে ভাষায় পরিণতি দেয়া। দোষ আমাদের। আজকে লেখক লেখা পড়াতে চান। পড়িয়ে নিতে পারে কি ? সমাজের প্রতিফিলন সাহিত্যে আসে কি ? ঘটনার প্রতিফলন আসে। ব্যঞ্জনা জাগে না। লেখা সুন্দর লেখার হাত সুন্দর। হাতের লেখা সুন্দর। শুধু অভাব রাসায়নিক বিক্রিয়ার। হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন মিসলেই কি জল হয় ? বাতাসে অক্সিজেন আর নাইট্রোজেন আছে। তবু বিক্রিয়ার জন্য চাই বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুতের ঝলক কোথায়। শুধু শব্দের গুড়গুড় রব । অনেকে আছে হিউমান সাইকোলজি হিসেব করে লেখেন। সুন্দর লেখা। শুধু বিভাব আর অনুভাবের সংযোগের বড়ো অভাব। তাই রস আর নিস্পত্তি হয় না। লেখা হারিয়ে যায় বইয়ের পাতায় বা থেমে থাকে ফেসবুকের ওয়াল এ। অন্ধকার আসে শরীরের মিলন হয়। শুধু মুখোমুখি বসার জন্য বনলতা সেন আর নেই। 

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...