শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭

রবীন্দ্রনাথের তিন নায়িকা ---- লীনা রায়চৌধুরী

উপলব্ধ সত্য এই-মনুষ্য পৃথিবীতে  সৃষ্টিতে স্রষ্টার পরেই যাঁর স্থান(যদি স্রষ্টায় বিশ্বাসী হই),চরিত্র সৃষ্টির সেই রূপকার-'বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'।অন্তর্বিষয়ী ভাবের কবিত্ব থেকে বহির্বিষয়ী কল্পনালোকে তাঁর সদা সৃষ্টি ও কৌতুহলমুখী মন ছড়িয়ে পরে।
              তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে নারী।একদিকে যেমন নারীদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে তাঁর লেখনী শক্তি ধার দিয়েছেন-অন্যদিকে তৎকালীন সামাজিক অসঙ্গতি গুলো মূর্ত করে তুলেছেন বাস্তবতার আভাসে!
            রবীন্দ্র সৃষ্ট 'নষ্টনীড়' গল্পে চারুলতা ধনী গৃহবধূ।কোনও অভাব ছিল না,শুধু অভাব সাহচর্যের! স্বামীর মানসিক সমর্থন! কাগজের আবরণ ভেদ করে স্বামীকে পাওয়া তার পক্ষে ছিল দুরূহ।চারুর স্বামী রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালনে তৎপর ,স্ত্রীর প্রতি অবদমনের নীতি গ্রহণ করছেন তা উপলব্ধিতেই আসেনি।ফলস্বরূপ শারীরিক - মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ ও বঞ্চিত চারু আঁকড়ে ধরে অমলকে।সেও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজের আত্মপ্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে,চারুলতার অবদমন আর মানসিক নির্যাতনকে বাস্তবায়িত করে।অগ্রাহ্য বা অবহেলার ফুটে ওঠা ছবি সত্যিই নির্মম।অবাক পুরুষতন্ত্র!!
             'মানভঞ্জন'-এর গিরিবালার সৌন্দর্য বর্ণনা করে বলা হয়েছে'... অকস্মাৎ আলোকরশ্মির ন্যায়,বিস্ময়ের ন্যায়... একেবারে চকিতে আসিয়া আঘাত করেএবং এক আঘাতে অভিভূত করিয়া দিতে পারে'।এই গিরিবালার প্রতি ও স্বামী গোপীনাথ আকর্ষণহীন।নেই তার ভিতর সামান্যতম ভালোবাসা।কিন্তু ছিন্ন বন্ধন গিরি মুখবুজে মার খায় নি,অভিনব পন্থায় স্বামীর অবহেলার প্রতিদান দিয়ে গিরিবালা এক অনন্য প্রতিবাদী নারী হয়ে উঠেছে রবীন্দ্র-কথা সাহিত্যে।
          নারী-পুরুষের সম্পর্ক যখন একটা অভ্যাসের হয়ে ওঠে-সেই সামাজিক প্রেক্ষিতে 'স্ত্রীর পত্র'র মৃণাল পুরনো মূল্য বোধের দায় মানতে অস্বীকার করে।পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে ওঠে।সংসারের প্রত্যেক সিদ্ধান্তে স্ত্রীর অংশগ্রহণকে না মেনে নেওয়া,অবহেলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সংসার ত্যাগ করে মৃণাল।গ্রামের মেয়ে মৃণাল-আধুনিক,রুচিশীল,ব্যক্তিত্বসম্পন্না ও গতানুগতিকতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী।মৃণাল যখন লিখেছে,'আমার একটা জিনিস তোমাদের ঘরকন্নার বাইরে ছিল,সেটা কেউ তোমরা জানোনি।আমি লুকিয়ে কবিতা লিখতুম।... সেখানেই  আমার মুক্তি,সেইখানে আমি আমি।'সে প্রমাণ করেছে সে শুধু 'মেয়ে মানুষ নয়,মানুষ ও বটে।
      কোথাও গিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতাকামী রবীন্দ্রনাথের  নায়িকারা এক হয়ে গেছে।এক হয়ে গেছে সকলের চাওয়া-এক প্রতিবাদী নারী হয়ে উঠেছে।রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় সেকাল নয়-একালের নারীর নতুন ভাবনা,নতুন চিন্তাধারার প্রেক্ষাপটে তাদের নির্মাণ করেছেন।নারী-আত্মপ্রত্যয়,আত্মগরিমায় উজ্জ্বল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...