শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

দৃশ্যস্নান এবং ঘুমযাত্রা এবং ইত্যাদি ~ শুভম মুখোপাধ্যায়



'রোদ্দুর সাপ্তাহিকী ( বিষয় - অবচেতন ) বিভাগের প্রথম স্থানে নির্বাচিত 
-------------------------------------------------------------------------

সারা দিনমান দৃশ্যস্নান চলে
নির্জ্ঞানে ভীড় চিন্তা রাশি
অক্ষমতার ডেলা
ভাঙতে ভাঙতে স্টেশনে থামে ট্রেন
দৃশ্য বোঝাই চিন্তা নামে
আর কিছু যায় ফিরে
কেবল জুড়ে দৃশ্যস্নানের ভীড়
অথচ খুব গভীর রেখা
ওপার গেলেই ধ্বস
পতনে কি আবেশময় সুর
অবচেতন জানে
ঘোরের ভিতর একলা জাগে রাত্রি
চেতন জুড়ে দৃশ্যস্নান চলে
কে একটা নখ আঁচড়ে দিলো, ইতি-
মধ্যে কবেকার ফেনেছে স্মৃতি
এমনভাবে ঘোর নেমেছে যেন
স্নানবো বলেই শূন্যে দু চোখ পাতি
অথচ কার কান্না থামেনি
এমন সময় টার্মিনাসে আলো
রাস্তা পেরোয়, পেরিয়ে গিয়ে রেখা
নখ ছুঁয়ে যায় স্তরের খুব নীচে
রাত্রি জুড়ে কেবল দৃশ্যস্নান
খাবলা দেয়াল আধলা গলায় পুরি
সেই সাথে তার নাম গিলেছি, একা
পাকপ্রণালী সামলাতে বিষ জ্বালি
কানপ্রনালী উত্তেজনার তাপে
বোধ নিকাশি লাল ধরেছে ডগায়
যে দৃশ্যে ঘুম চোখ ধরেছে, ওঝা
ঝাড়তে স্মৃতি ভেঙেছে স্নান ভোরে
স্বভাবতই দৃশ্য স্নানের পর
হাত বাড়াতেই এফোঁড় ওফোঁড় দেয়াল
ওইপারে তার গন্ধ ছিলো বিষে
এক তালুময় ঘোর মেখেছি তবু
অথচ ফের দৃশ্যস্নান চলে
যেমন চলে রেল, ঠেলা আর শ্রম
আধবিরেতে ভাঙলেই নিদ্রালু
চুলের ওপর দৃশ্যস্নানের ভ্রম


বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

ছিন্ন মালাখানি ~ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী


সভার শেষে পড়ে থাকে ছিন্ন মালাখানি
চরম অবহেলার সে এক বিমূর্ত বাখানি।

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের গোপন অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন --

 সবুজ পাতার খামের ভেতর 
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন্ পাথারের ওপার থেকে
আনল ডেকে হেমন্তকে?
আনল ডেকে মটরশুঁটি,
খেসারি আর কলাই ফুলে
আনল ডেকে কুয়াশাকে
সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।

এরই মধ্যে আগত বড়দিনের প্রস্তুতি , প্রস্তুতি নতুন বছর কে স্বাগত জানানোর জন্যও । আগামী ২৩ শে ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে শান্তিনিকেতনের ১২১ তম পৌষমেলা । গ্রাম বাংলার মোহন মেদুর বাতাসে এখন নবান্নের ঘ্রাণ । জেলায় জেলায় চলছে বইমেলা , হস্ত শিল্প মেলা , বস্ত্র মেলা , সেজে উঠেছে শীতকালীন ময়দান । নোলেন গুড়ের মিষ্টি , কেক ,পেস্ট্রি , পাটিসাপটার মিষ্টি আঘ্রাণ এখন শহর জুড়ে ।   হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন হেমন্তের নিঃসঙ্গ সন্ধ্যা মাঝে মধ্যেই আমাদের নষ্টালজিক করে তোলে, এরই মধ্যে হেমন্তের পাতা ঝরা দিন কে সাক্ষী রেখে  নীরবে রোদ্দুর পা দিল ন মাসে । এই ন মাসে রোদ্দুর নিজেকে আরও উজ্জ্বল , আরও স্বতন্ত্র করে তুলতে সচেষ্ট হয়েছে । রোদ্দুরের নিজস্ব ব্লগ স্পট পাঠক মহলে সাড়া জাগিয়েছে , প্রবীণ ও নবীন লেখক , কবি এবং পাঠকের রুচিশীল মেলবন্ধনে ঋদ্ধ হয়েছে রোদ্দুর । আগামী বছরে আসছে রোদ্দুরের প্রিন্ট ভার্শন , আসছে আরও নানা রুচিসম্মত চমক ! 
এ সংখ্যায় যারা যারা কলম ধরেছেন , তাঁদের প্রত্যেক কে জানাই শুভেচ্ছা ও বাৎসরিক অভিনন্দন । ভাল থাকুন সকলে এবং ভাল লিখুন -- 

শুভেচ্ছান্তে ,

পিয়ালী বসু 


চুক্তি ~ সুকান্ত চক্রবর্তী ও রিক্তা চক্রবর্তী

'গান শুনে কবিতা ' বিভাগের প্রথম স্থানে নির্বাচিত 
---------------------------------------------------

হঠাৎ বৃষ্টি আসে
অলিখিত চুক্তির চৈত্র দুপুরে
তৃতীয় অঙ্কে বিচ্ছিন্নতা বাদ দিয়ে
আমি ফিরে যেতে চেষ্টা করি
ফেলে আসা ধূসর বেলায়
আকাশ ঘনমান হয়
আমার মন খারাপের ভাসমান মেঘে
চৈত্র দুপুর - বাইপাস - তুমি - চুমু
ভেসে আসে সব , অবারিত স্মৃতিপটে
" এমনও বিকেল আসে তুমি যাও বাইপাসে
অচেনা লোকাল বাসে সন্ধে কাবার" 

অনুভব ~ সিক্তা দাস

একটু আগেও জানতো না
"একটু পর" টা ও'র আর দেখা হবে না
ঠিক পলক ফেলা দূরত্ব......
সাবধানতা দিনে দিনে বেলুনের মতো ফুলছে
ওকে পকেটে পুরে চেপে ধরো।
...গ্যাসবেলুন হতে দিয়ো না।

ঈশ্বর বিশুদ্ধ কল্পনা-মাত্র~ আশিষ সমাদ্দার


১)
কতদিন ধরে যে পথে পথে ঘুরছি
কত কত আলো পেড়িয়ে লক্ষ্য লক্ষ্য পুন্যার্থীদের ভিড়ে হারিয়েছি,
অথচ আজও ভীষণ শান্ত জলের কাছে গেলেই-
আমার গাল ভরা দাঁড়ি,
আমার উসকো খুসকো চুলের জট,
আমার নোংরা গেরুয়া কাপড়,
এইভাবেই শূন্যতার সাথে পা মেলে হাটি।
২)
এই শহর নিয়ে আমার অনেক কিছু জানার আছে,
বলার আছে,
তেমন কেউ নেই
শুধু বোবা চার্চ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ক্যানিং রোডের
ধারের কালি গুলো মুছে যাচ্ছে।
পাগল কবি তার লেখা গুলি টুকরো টুকরো করে
রেললাইনে ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
আর একটা বৃহন্নলা তার রূপ নিয়ে
দিনের পর দিন বাথরুমে লুকিয়ে কাঁদছে।
এইসবের ভিতর থেকেও ভিখারি গুলো মন্দিরের বাইরে জড়ো
হয়ে ভক্তি গানের সূর ধরে।
৩)
সারি সারি শিমুলগাছের পাশ দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে,
বৃদ্ধটি বহুদিন ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে এই শহরে,
সমস্ত আঘাতের পর সে একলা,
এই শহরে রাতের সাথে যুদ্ধ করে,
আর প্রতিদিন সকালে সে জয়ী ঘোষণা হয়
আমার বাড়ির শিমূল গাছটার সাদা সাদা ফুলের সাথে।
৪)
“ ঈশ্বর বিশুদ্ধ কল্পনা-মাত্র”
এই কথা ভাবার পর, আমার চোখ জুড়ে শূন্যতা নামে
নিঃস্ব হয়ে যাই নিজের কাছে,
এইভাবেই বোধহয় কবিরা এক একটি কবিতাকে গলা টিপে মারে।

শিকড় ~ সুকান্ত চক্রবর্তী

গাছের শিকড় আজও মাটিতে জলের খোঁজ করে 
আর তারারা আজও আকাশের দিক মাপে । তবে
তা বলে মৃত্যু একঘেয়ে নয় ; কবরে দিলে 
ঠিক শিকড়েই মিশে যাবো , আর জ্বালিয়ে দিলে
অনন্ত সময় ধরে আকাশের দিক মেপে যাবো ।

লেখনদারী-(২) ~ সৌগত নাগ

তুলোর মত তুষারপাত,
আমার ছোটোবেলার প্রেম।
বরফের সাথে জীবন যাপন,
করতে চাইবো
যদি এবছর শূণ্যঅঙ্ক ছুতে পারে আমার বোবা শহর।।
কমলা ক্রীম দেওয়া বিস্কুটের মতো
একটা ছোটোবেলার সূর্য,
আমায় দিয়ে যায় পাতাঝরা গাছের আবডাল,
সেদিন তো আমি নদীর পাড়ের নীরব কবি,
যেদিন দুঃসাহসের গলাকাটা লাশ আমায় ফিরিয়ে দিয়ে গ্যালো,
প্রত্যেকটা মানুষ,
মানুষ জনপ্রতি। 

জীবন ~ জয়দীপ বসু

আমি নয় ----- জীবন 
চেয়েছে তোমায় 
পথিক ,
চুপিসারে থামায় !
বলি ,
তোমার ঝোলা থেকে ;
একটুকরো চাঁদ নেব
জীবন নেব
অমাবস্যার নিসতব্ধ  অন্ধকার
বিস্ফোরণ -- ছাই চাপা কামনার
পথিক ,
কণ্ঠস্বরে কঠিন অন্বেষণ
ঈশ্বরের চুপিসারে রেজারেকশন
মন তবু পথ খোঁজে --- গন্তব্যহীন
একলা সে রাত গহীন
অতি গহীন ---

নারীমনের শেষ ঠিকানা; মৃত্যু ~ বৈশাখী রায়চৌধুরী


প্রেম প্রতিদিন এসে দাঁড়ায় দুয়ারে
ভিখারীর বেশে।

সন্ত্রাস আনতে পারে না,
বিপ্লবী চেতনারা কতদিন এসে সেতার বাজায়নি ভাঙা জানালার ওপাশে।
চেনামহল,
শুধু সম্পর্কের দড়ি টানাটানি খেলা।
প্রেমিকরা কেবল চারাগাছ হতে পারে,
সূর্যমুখী ফোটাতে পারে না কোনোদিন।
তাই তো কুসুমেরা আজও শুধু শরীর খোঁজে,
আর জীবাশ্ম নারীমন খোঁজে মৃত্যুর ঠিকানা।

ফালি চাঁদের আয়নায়~ অনিরুদ্ধ দাস

' রোদ্দুর সাপ্তাহিকী ' ( বিষয় - অবচেতন ) বিভাগের তৃতীয়   স্থানে নির্বাচিত 
--------------------------------------------------------------------------------


ফালি চাঁদের আয়নায়
নিজেকে পড়ন্ত ---
রেতবিন্দুর মতো লাগে,
ফিঁসানি রাত্রি মুখে
কুলুপ এঁটে ---একটা
নৈ:শব্দ্যের কোলাজ হয়ে
দাঁড়িয়ে ---তপ্ত বাঁকানো নারীর
মতো ---কাস্তে ডাহুকীর পাড়ে ;
#
পিঁড়ি-আঙ্গিনায় দুটি তারা
আদিম ক্রিয়ায় ব্যস্ত,
'জোতসা' ঘামে---
রাত্রি চোখ বুজে;
বন্ধ্যা রাত্রি শৈবালের
চাদর মুড়ে ---উঁকি দেয়
রেলিঙের ওপাড়ে;
#
আসঙ্গ লিপ্সায় পুরুষ
রজ:স্ফলার রক্ত চাটে,
জঙ্ঘার ক্ষণপ্রভা দ্রুতি
চোখের পলক অবশ
করে ---ভাঁড়ার ঘরে সিঁদ কেটে;
#
পত্রালি নিশির ঘুম
রাত্রির বিছানায়, ভিয়েন
তোলে ডিম্পল গালে,
শিৎক্কারের ফোঁসানি ---
লিবিডো হয়ে, রাত্রির চোরাবালি
সদ্ভোগের পিঠে আঁচড় কাটে;
#
রতিসুখসারে ভোর
রাত্রির পায়ে---নিক্কণ রাস
হয়ে দেয়---ভজন সুর
পদাবলি প্রেমে;

নির্জন বসতি ~ জাকিয়া জেসমিন যূথী

' রোদ্দুর সাপ্তাহিকী ' ( বিষয় - অবচেতন ) বিভাগের তৃতীয়   স্থানে নির্বাচিত 
--------------------------------------------------------------------------------

যে লোকটার সাথে কথা বলছি, তার জীবনে কিছু জটিলতা ছিলো। তাই লোকটিকে ধীরে ধীরে জানতে হচ্ছে! 
তার সাথে আমার শুরু থেকেই কোন বন্ধুতা নয়! ডিরেক্ট বিয়ের পিঁড়িতেই বসবো বলে দিয়েছি। সে আমাকে প্রপোজ করেছিলো, ভালোবাসি বলেছিলো! আর ‘আমার একজন ভালো জীবনসঙ্গী প্রয়োজন’ বলেই তাকে একসেপ্ট করেছি। যেহেতু দুজনার ক্যারিয়ার লাইন একই দিকে।

- আচ্ছা!

আমি শহুরে মেয়ে। শহরে মানুষ হয়েছি। বেড়ে উঠেছি। আর সে গ্রামের। গ্রামেই চর এলাকায় বেড়ে উঠেছে। তার বাড়ির মেঝে পাকা। চাল টিনের। ওরকম বাসা আমার নির্বাচন করা পাত্র হিসাবে প্রেস্টিজ নষ্ট হবার বিষয়! তাই সে বাড়ি ঠিক করাচ্ছে!
- বাহ! ভালো তো!
আর আমি তাকে বলি, "কবে বউ হবো?" সে বলে, "এত অস্থির কেন? আগে আমার সম্পর্কে পুরাপুরি নিশ্চিত হও যে ছেলে কেমন; তুমি আমাকে খুব ভালোভাবে বুঝে নাও, যাতে হাওয়ার উপরে দাঁড়িয়েও তোমার ডিসিশনের কোন নড়চড় না হয়! বিশ্বাসের ভিত্তিটা যেন মজবুত হয়!"
বিয়ে তো করলাম না অনেকদিন। দেখিই না, আর কটা দিন অপেক্ষা করে! লোকটা যদি পজিটিভ থাকে, সবকিছু যদি পজিটিভ হয়, আমার খুব ভালোই লাগবে। কারণ-আমার হুট হাট মুড সুইং করে; তার পরেও তার কাছে আমি গুরুত্ব পাচ্ছি। কখনোই তাকে চেতানো যায় না। আমারই বরং রাগ খুউব বেশি, মাঝেমাঝে সে আমার রাগের ঝাপটাও পাচ্ছে, কিন্তু সেখানেও সে আমাকে ভালোভাবেই হ্যান্ডেল করছে।
মন খারাপ থাকলেও কেমনে জানি বুঝে ফেলে। কাল আমার খুব মুড অফ ছিলো। রাতে ঘুম হয়নি। সকালেই ফোন করে জানিয়েছে, "তুমি আজকে একটুও বাসায় থাকবা না। সারাদিন বেড়ায়ে বাসায় ফিরবা। বাসায় বসে থেকে থেকে তোমার মগজে ভুত ঢুকেছে। মন মেজাজ খারাপ না করে মনকে সুস্থ কর!" আমিতো তাকে কিছু বলিনাই। সে বুঝলো কিভাবে! জীবনে অনেকবার বিশ্বাস ভাংতে ভাংতে আর হেরে যেতে যেতে এই লোকের প্রপোজালটাকে আমি গত তিন মাস ফেলেই রেখেছিলাম এভাবে, " আগালে সেই আগাবে। যা কিছু করার সেই করবে। আমি এগুবো না। আমি কিচ্ছু করবোনা।" কিন্তু ধীরে ধীরে দেখলাম, আমি যা চেয়েছি, সেরকমই হচ্ছে। আমি আগাই না। আমি মাঝেমাঝে ঘাড় গোঁজ করে বসে থাকি, যোগাযোগ করবো না, খোঁজ নেবোনা। দেখা যায় সেই আতিপাতি করে খুঁজছে আমায়, "সাড়াশব্দ নাই কেন, জান? কোন সমস্যা?"
- বেশ তো!
আমার ভাগ্যে কি আছে আমি জানিনা। কখনো মনে হচ্ছে, “স্বপ্নটা সত্যি করতেই এলো বুঝি!” কখনো মনে হচ্ছে, "মিথ্যে হয়ে যাবেনা তো?"
- বিশ্বাসে বাঁধো মনকে শক্ত করে! যাই ঘটুক না কেন, পজিটিভ থাকো!
আদরের বোনটি যে মনের অবচেতনে একটু একটু করে ইরেশ নামের লোকটিকে ‘হবু’ হিসেবে ভালোবাসার গাঁথুনিতে স্বপ্নের আবাসে জায়গা দিতে শুরু করেছে-সেই গল্পটা পিঠাপিঠি ভাই হিসেবে ভালোই উপভোগ্য ঠেকলো জাকিরের কাছে। ফোনটা কানে ঠেকিয়ে কাউকে উদ্দেশ্য করে বললো, “বিয়ের শানাই বাজলো বলে!”
ওদিকে ঠকাস শব্দে রিসিভার আছড়ে পড়লো, “আইবুড়িটার বিয়ে হয়ে গেলে এ সংসারের ঘানি টানবে কে?”

মনে পড়ে শক্তি ? ~ শৌনক সরকার

"আমি অবনী,মনে পড়ে ?
সেদিন তুমি একটু ডেকেই চলে 
গিয়েছিলে | ভেবেছিলে পাড়ার সবার মতো আমিও দরজা আটকে ঘুমোচ্ছিলাম |
আসলে জায়গাটা চেরাপুঞ্জি ,বারোমাস বৃষ্টি হয় | সেদিন বেশিই হচ্ছিল তাই জানলার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলাম, শুনতে পাইনি কড়া নাড়া |
সকালে যখন উঠি তখন প্রাকৃতিক শোভা দেখে তোমার সেই কবিতার লাইনটা মনে পড়ে গেল । "
"সুখের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শীতের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে |"
ঠিক যেন সেই আতচোরা পাখি যার গায়ে তুমি আঁকতে চেয়েছিলে রোদের হলুদ
রঙ |
শক্তি তুমি ছিলে আমার কাছে দেবতার মত, যাকে বসিয়েছিলাম সেই বড় গাছের ওপরে |
আজ আমি বড় অসুস্থ, আমার দুটো চোখ আজ অন্ধ ,তাই আজ মন বলে তোমার মত করে
"মনে মনে বহুদূর চলে গেছি ,যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয়
জন্মেই হাঁটতে হয়
হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে "............

অবচেতন ~ রঘুনাথ মণ্ডল

হাতের উপর হাত রেখে কি লাভ 
তুমি বরং মনের সঙ্গে মন রাখো 
আমার এক নারী তুমি 
অন্য নারী ভেতরে চিন্ চিন্ করে
দুজনে গল্প করো
সব দুঃখ তুমি জানো না
জেনে নাও -
শরীর দিয়ে আকর্ষণ
অশরীরে শাসন -
দুই নারী
চেতন - অবচেতন ,
বয়ঃসন্ধি থেকে বাত অর্শ বার্ধক্য
দুজনেই আছো
আজ পরিচয় করে নাও
তার পর দেখি কে যাবে সহমরণে

পাঁচালী অলক্ষীদের ~ বৈশাখী রায়চৌধুরী


আকাশের কোণে চাঁদ। বিনম্র, ভীত। সত্তরের ভীত চাঁদ, লক্ষীর অপেক্ষা করছিল।
লক্ষী, সমুদ্রমন্থনে উত্থিত দেবী, পাঁচালি ভালোবাসে। বাহন পেঁচা।

বেমানান জুটি। একজন ভাগ্য বিজ্ঞাপন আর একজন শিকারের।
মা পাঁচালী পড়ে গুরুবারে, লক্ষী হতে শিখিয়েছিলো।
পারে নি। আমায় অলক্ষী বলেছিলে তুমিও আমার প্রথম মেয়েসন্তানের মুখ দেখে, ফিসফিসিয়ে।
আমি পেঁচা ভালবাসি।
লক্ষী খিদে পেলে শুধু চুমু খেতে শিখিয়েছিলো

আর একজন শিখিয়েছিলো ছিনিয়ে নিতে । 

অনিবার্য রেষারেষি ~ লুতফুল হোসেন


আবারো আসছে শীত
শুকনো পাতার গায়ে ভর করে
গাছেদের জমানো দুঃখগুলো
একে একে পড়বে ঝরে।
এরপর বসন্ত এলে, নতুন সুখের গান
রঙ্গিন পাতার চাদর মুড়ে
ছোটাবে বর্ণিল কথার বান।
গাছের শরীর জুড়ে জমবে আসর
জীবন হাসবে রঙে ।
আবারো সাজাবে বৃক্ষ
তার প্রাণের ঐকতান
বাঘা অর্কেষ্ট্রার কুশলী ঢঙে।
আর এই আমি !
চালাবো অপার ভন্ডামি।
বুকের ভেতর কাঠের চেরাই
কুঠার আমার চলছে সদাই।
স্মিত হেসে তবু বলে যাবো
নিরন্তর। এই তো, ভালো আছি বেশ।
জীবন আমার ডাহুকী মনামি !
মিষ্টি মিথ্যের নামে,
তার সাথে রোজ রোজ করে যাই
আহ কি নিদারুন নষ্টামি !
আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে অথবা
চুলের পরতে পরতে,
জামা জুতোর পকেটে কোচড়ে
জমানো আমার কষ্টেরা
সব, বুকের পত্রপল্লবময় কেবলি জমা হয়।
ওদের গন্তব্য যেনো শুধুই আমার বাঁ বুক
আমি ছাড়া অন্য কেউ
নয় তার প্রিয় উজবুক।
যতোই আসুক শীত
কেটে যাক বসন্ত হাজার।
একটাই জীবন আমার পেয়েছি,
আশ্চর্য নিয়মে বাঁচার।
বুঝি তার একারই ছিলো
দায়, জগতের সব কষ্ট জমিয়ে রাখবার।
তবু শীত এলে চুলের ভিতর শিশিরেরা গোপনে
বাসা বাঁধে বলে, হিম হিম অনুভূতিগুলো
ক্ষোভ দমিয়ে, রাখে থামিয়ে, গাছেদের সাথে
বিদ্বেষ, আমার, অনিবার্য রেষারেষি।
শীত এলেই গাছেদের হিংসে করার অভ্যেসটা
তাই বলতে গেলে আমার সমান বয়সী !

ঘর ~ রিক্তা চক্রবর্তী


ঘরখানা আজ শূণ্য শান্ত, প্রতীক্ষায় ক্লান্ত
অবশেষে মরা স্মৃতিগুলো থিতিয়ে পড়ছে
স্থির বাতাসে ধূলোর মত
আমি তো জানি বাতাস স্থির
তবু কেন সে কাঁপে থির থির
তোমার আভাস আলেয়ার মত
আমাকে ছুঁয়ে গেলে?
পলি পড়ে যাওয়া গুঁড়ো মনগুলো
মনগড়া কোনো স্রোতের টানে
পেতে চায় কেন আজও তোমার
এক টুকরো স্পর্শ!
ঘরখানা আজও শূণ্য আছে, দরজাটা বন্ধ
তোমার পায়ের আওয়াজের, প্রতীক্ষায় শান্ত

অপেক্ষা ~ মানস চক্রবর্তী

কেন সবাই এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে কেন এত অপেক্ষা এবং আক্ষেপ কেন বলো এই অহর্ণিশ চেতনার কাছে হাঁটুমুড়ে বসা কেন আমি গাছের মত সংগোপনে পাতায় পাতায় আঁকব শুকিয়ে যাওয়ার খবর আমার হাতের মধ্যে কেন জমে ওঠে সবুজ বিবর্তন আমি কি এখন সংকেতবাহী কোন হিলহিলে সাপ আমি কি দংশন শেষে ফিরে পাব জঙ্গল সংসার অহ পরমায়ু এই তো অপার প্রেম এবার আমাকে নাও। 

রোদ্দুর ~ চঞ্চল নায়েক

সারাদিন ধরে আলো কুড়িয়েছি....
ভরে নিয়েছি কাল্পনিক ঝোলায়
পাগলি তুমি ঈর্ষা করোনা।
যতক্ষন আমার পাশে আছো নীরবে---
রোদ্দুর আমার দখলে...
এই যে আমার যত খুশি রাশি রাশি !
সবটাই তোমার আলোতে আলোকিত...
---- হয়তো তুমি জানোনা,
আমার সূর্যকে আমি ধরে আছি...
চারদিকে শুধু রোদ্দুর ! রোদ্দুর !

দুটি অণুকবিতা ~ অনিরুদ্ধ দাস

অণুকবিতা -১
----------------

স্তনবিভাজিকার --গ্লিম্সটাই কবিতা
বাকিটা ডাকাতিয়া দৃষ্টি.

---------------------



অণুকবিতা -২

----------------

এখন রেডিমেড জীবন ;
:
সামনে নবাণ্ণের গুলুনি
কেবল সুঘ্রাণ নেই;

ভয় ~ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

সুচিস্মিতা খিল খিল করে হাসছে। সাগরের বড় একটা ঢেউ ছুটে আসছে তারই দিকে। ওর নিটোল সুবলিত সোনার রঙের চরণদুটি নোনাজলে ভিজে গেছে। পড়নের শাড়ীর নিচের অংশ ভিজে সপ্‌সপ্‌ করছে। কোনো হুঁসই নেই যেন। যেন ইচ্ছে করে নোনা জলে ডুবিয়ে রেখেছে পায়ের নিচের অংশটা। দেখে মনেই হচ্ছে না সকালে বেদম ভয় পেয়ে গেছিলো লোকটাকে দেখে। কি করে যে ওর কানে এসছে কথাটা। সেইথেকে লোকটাকে দূর থেকে দেখলেও ভয়ে কুঁকড়ে থাকে। এখন সাহস ফিরে পেয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে খেলায় মেতে উঠেছে। দেখে খানিকটা আস্বস্ত হলাম।
সাগর তটে উত্তাল বাতাসের সাথে লড়াই করতে করতে এগোচ্ছি বালির পাহাড় ভেঙ্গে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে প্রখর রোদের তাপ সইতে না পেরে। এই নতুন একটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে পুরীতে বেড়াতে এসে। বুঝলাম রোদ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়েছি। অতএব ধীর কদমে এগোতে থাকি ওর দিকে। আমার সঙ্গে চোখাচোখি হতে ও ফিক করে হাসলো। রক্তরাঙ্গা ঠোঁটদুটি ঈষৎ কুঞ্চিত করে বললো, ভয় করছে খুব।
- আমি আছি তো। ভয় কিসের?
- আমার হাতটা ধরবে?
প্রায় টলতে টলতেই এগিয়ে চলেছি ওর কাছে। সুচিস্মিতা দেখেই খিলখিল করে হেসে আরও খানিকটা জলে নেমে গেল। টলোমলো দু’পায়ে এসে আছড়ে পড়ছে সফেন ঢেউগুলো। কিছুতেই এগোতে পারছি না তেমন করে। সুচিস্মিতা হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো ভয়ে। ওর অনিন্দ সুন্দর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল নিমেষেই। বিস্ফরিত নয়নে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। তাতেই দেখলাম লোকটাকে। প্রায় গা ঘেঁসেই হেঁটে গেল বালির ওপর দিয়ে। হাতে গুটিকতক বড়বড় ঝিনুক। বিরবির করে বলছে, ‘আর কত ঝিনুক চাই তোমার? এবার উঠে এসো জল থেকে। এই দ্যাখো কত ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে এলাম তোমার জন্য। এবার উঠে এসো......
এই লোকটাকে দেখেই সুচিস্মিতা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠেছে। লোকটা নাকি দু’দিন আগেই নিজের স্ত্রীকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে সমুদ্রের জলে! সুচিস্মিতার দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেতেই ও চিৎকার করে আমাকে বললো, আর একপা’ও এগোবে না তুমি। তোমরা সব পুরুষই যে একই জাতের। তুমিও আমাকে......
সুচিস্মতা কথাগুলো বলছে আর উলটো কদমে একটু একটু করে নেমে যাচ্ছে গভীর জলের দিকে। খেয়ালও করছে না জল তার কোমর ছাড়িয়ে উঠে এসেছে আরও খানিকটা ওপরে

ভেবে দেখো ~ সৌগত নাগ


' রোদ্দুর সাপ্তাহিকী ' ( বিষয় - অবচেতন ) বিভাগের দ্বিতীয় স্থানে নির্বাচিত 
--------------------------------------------------------------------------------

এক হাতে মুছিয়েছি
অন্য হাতে সংগ্রহ চোখের জল
এক আকাশ ভাঙা তারাবৃষ্টির রাতে,
আমাদের
কাছে এনেছিলো,অবচেতন।

সেদিনকি রাতচোর
সিঁদ কাটে খুবরাতে?
আমাদের ঘুমচোখ,কেড়ে নিয়ে হাতেনাতে
রেখে গ্যালো
একচুমু বিষ,
তোমার তো জানার কথা,তুমি তো জানতে।

কোনো স্বীকারোক্তি নেই,
নেই ডিজিটাল দলিল দস্তাবেজ
শুধু হাড়কাঁপানো সকালগুলো আছে,
আছে একচিলতে অনুতাপ খুজে মরা,
আমাদের বেহায়া অবচেতন আছে
আছে তার ভালোবাসা গিলে খাওয়া

প্রতীক্ষা ~ সুপ্রভাত লাহিড়ী

চোখে যে পড়ে না পথের চিহ্ন
দক্ষিণের অলিন্দের দিকে,
ঢেকে আছে কংক্রিটের বস্তিতে।
তবু যে বসে, আসে না যে জন
তারই জন্যে অনিমেষে 

মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫

নিজস্বী ~ পিয়ালী মজুমদার

' রোদ্দুর সাপ্তাহিকী ' ( বিষয় - অবচেতন ) বিভাগের দ্বিতীয় স্থানে নির্বাচিত 
----------------------------------------------------------------------------

একটা বন্ধ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সমস্ত না বলা কথা । মনের অলিগলি চুঁইয়ে বিকেল নেমেছে লালমাটি বুকে । ভিতর ঘরে আওয়াজ উঠছে কতরকম!
কেউ সুর ভাঁজছে আপনমনে…
"বাড়ির কাছে আরশিনগর
সেথা এক পরশি বসত করে
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে..….…"
কারো চুড়ির রিনঠিন, কেউ অচেনা কোনও নাম ধরে থেকে থেকে ডেকে উঠছে স্নায়ুতন্ত্রে!
কেউ আবার চুপটি করে, একফালি হাসি রেখে চলে যাচ্ছে কৌতুহলী জানালাটার একপাশে..…।
এইভাবে কেটে যাচ্ছে দিন…
এইভাবে কেটে যাবে গোটা একটা রাত ।
ডাইরির পাতা ওল্টাই… শব্দেরা ভিড় করে,
আমি আরও একবার ঘন হয়ে বসি…
আমার অবচেতন আবছায়ায় ।

ডাকবাক্সের সঙ্গীরা (২) ~ জয়াশিস ঘোষ



পেনশনহীন বাবা রাস্তার মোড়ে
শিকড় ছড়িয়ে বসে আছে
সারা দেহে জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, বশীকরণ
পরিবেশবাদীদের আনুকুল্যে
চিতা জ্বলেনি এখনো
পায়ের কাছে শনিঠাকুর পয়সার থালা নিয়ে
গলায় মানতের ইঁট ঝুলে একটু কুঁজো
সর্বধর্মের বিজ্ঞাপন।
শুধু দীপাবলি এলে
টুনিবালবের আলোয় যখন ধূসর পাতায়
সবুজ পোঁচ লাগে
মনে হয় যীশু হাসছে আলোর মুকুট পরে
...................................ক্রুশবিদ্ধ!

সুতরাং অচেনা থাকছি ~ শান্তনু বেজ

ভোররাতে শিশুটিকে ছেড়ে গেল অচেনা ;
ঘুমের পরে ছি'ল ধংসের সকাল,
তাই টারজান কোলে তুলে নিয়েছিল তাকে ;
খবর পেয়ে ছুটে আসে যমদূত,
(মহাভারতের শেষ মলাটের মতো)
সময় হয়নি বলে আগলাতে
এবং পৃথিবীর কানে ছিন্নমূলের খবর ছুঁড়ে দিতে..
পড়ে রইলো কেন?
তৃতীয় পক্ষের মতোই প্রশ্ন আমার ...
তবে কি,
অন্য প্রেমের গুটি দিয়ে প্রেম কাটাকুটি খেলা?
কাটা যায়?
যায়নি বলেই, ভগ্নাংশের ঘুমে শিশু ...!
অচেনাও বোঝে বা বুঝে যাবে,
পূর্ণ সংখ্যা মুছলেও ভগ্নাংশ পিছু ছাড়েনা ....
নাকি, অশনিসংকেতে ব্যক্তিগত বিষবৃক্ষ দর্শন!
অথবা, আকস্মিক জিভকাটা মিশটেক!
তোমাদের জুতোর তলায় এতো শ্যাওলা কেন ..!
হুমমমম ....!
হয়তো, অথবা, নাকি, ইসসসসসস
এবং ইত্যাদি সব শব্দজ দৈনন্দিন স্লিপিং
আজকের জরুরী যতিচিহ্ন...,
শব্দ আর নয় ...!
তাহলে, এককোটির কবিতার পরে,
তুমি আর আমি, থাকছি না ..!
থাকা যাচ্ছে না, এই নতুন যতিচিহ্নের ভীষণ ভীড়ে..
অতঃপর, এবং শুধুমাত্র
একটা অচেনা "আপনি"-ই গড়া যাক, তাহলে ..।।



দোসর ~ সুমনা পাল ভট্টাচার্য


সিগন্যালে গাড়িটা দাঁড়াতেই
ছুটে এলো ওই ছেলেটা,
"দিদি, কি তাজা ফুল,নিয়ে দ্যাখো হাতে !!"
অভ্যেসের বশে টাকা দিয়ে, ফুল নিয়ে -
ফিরলাম গন্তব্যে সবুজ আলোর সাথে...

চেনা ফ্ল্যাটের দরজা খোলে..
আলো জ্বলে,
হয় স্বপ্নপুরী...
নিশ্চুপ ঘর,
কথার পাহাড়...
ক্লান্ত শরীর আর টাটকা মনে -
দোঁহে মিলে গল্প জুড়ি...

তারপর টিভির রিমোট আর কফির ধোঁয়ায়
শুধু চলাচল তোমায় ঘিরে...
কখনো তুমি আমার পাশে -
কখনো বা ওই টেবিলে -
কখনো দরজার কাছে -
কখনো কলিং - বেলে -
আমার "একা" তোমায় ঘিরে
সুখসায়রে ধীরে ধীরে...

বুকের ভেতর হিম বয়ে যায়
এমন করে তাকিয়ে থাকো -
আমার শরীর পতঙ্গ হয়
তোমার আগুন মাখবে বলে..
আমার ঠোঁটে তোমার শাসন...
স্বপ্নআলোয় রাতের বেলা -
জাগিয়ে রেখে আদর আঁকো...

তুমি আমার বুকের ভেতর-
তুমি আমার প্রাণের মানুষ...
তোমার পরশ প্রতি পলে -
ছন্দে-তালে..জীবন দোলে-
তোমায় ডাকি 'দোসর ' বলে...
বেশ তো আছি -
"আমি", "তুমি" আর "স্বপ্ন - ফানুস"..

নিঝুম রাতে হাত বাড়ালে ~ সুপ্রভাত লাহিড়ী

নিঝুম রাতে হাত বাড়ালে
আমি অনেক কিছুর স্পর্শ পাই,
ব্যর্থ প্রেম, দিকভ্রান্ত হৃদয়,
অনিন্দ্য সুন্দর মুখশ্রী আরও কতো কি!
উদ্ভাবনী উত্কর্ষে আমার অন্তস্থ সত্তা
তখন হঠাত্‍ আলোর ঝলকানি পায়,
স্নায়বিক তন্ত্রীগুলোয় চাপ দিয়ে নেপথ্য হাত
তোলে অনুরণন আর অনুরণন......
‘আমার মতন সুখী কে আছে
আয় সখী আয় আমার কাছে.....’
আরও কত কি!
নিঝুম রাতে হাত বাড়ালে
আমি পৃথিবীর সেরা প্রেমিকের সিংহাসনও
দখল করতে পারি!

তিস্তা ~ অরিজিৎ গুহ

তিস্তা,
আজ খুব মনে পড়ছে
আমাদের সেই প্রথম চুম্বন।
শরীরে জাগিয়েছিল কী ভীষণ শিহরণ।
বসন্ত পঞ্চমির সেই বিকেলে
তুমি এলে একটা সাদা চুড়িদারে,
ভীষণ সুখের একটা অপার্থিব অনুভূতি
গ্রাস করেছিল আমায়।
সদ্য প্রস্ফুটিত জুই ফুলের মত
লাগছিল তোমায়।
আমি প্রাণভরে তোমার আঘ্রাণ নিয়েছিলাম।
তোমার কোমল ওষ্ঠ
আমার বুকে জ্বালিয়েছিল আগুন সুস্পষ্ট।
নিজেকে মনে হয়েছিল বীর আলেকজান্ডার,
শত সাম্রাজ্য হেলায় জয় করে
ফেলে দিতে পারি পায়ে তোমার।
তোমার সেই গরম নিঃশ্বাসে
ঘুম ভেঙেছিল হাজার ভিসুভিয়াসের।
কন্ঠলগ্না হয়ে তুমি বলেছিলে
ছেড়ে যাবে নাতো আমাকে?
না তিস্তা
ছেড়ে যাই নি আমি তোমাকে।
এখনো জীবনের সর্পিল পথে যেতে যেতে
হঠাৎ হঠাৎ খামচে ধরি আমার বুকটাকে।
ভাঙাচোরা এক আয়নার মত যেখানে
আমি তোমাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছি।
কাঁচ গেথে রক্তাক্ত হয় আমার বুক
প্রতিদিন প্রতিরাতে।
যন্ত্রণাময় এক আবেশে আমি তলিয়ে যাই
অতল থেকে অতলে।

AID, not AIDS ~ Durba Mitra

World Aids Day....today!
I want
World Touch Day....everyday.

সাহারায় ম্যৌসিন্‌রাম ~ পিনাকী হালদার

কবেকার শৈশবে শুকনো প্রভাতে -
নিম্বাস মেঘে বসে উড়ে আসি আমি ।
সীমাহীন আকাশেরই প্রতীক্ষা হতে -
এক-টুপে ছুটে করি মেঘে বাদলামি ।
আমার বারিষ্‌ যায় ইচ্ছের মত -
চির পুঞ্জিত যত প্রেমিকা শপথ্‌ !

একলা পৃথিবী পেল সূর্য-প্রনামে -
হাইড্রো জলের কত কোটি আর্চিন ।
একে একে অ্যামিবারা বাড়ে সংগ্রামে -
তুমি সে গ্রামে ছিলে নিজ ঘরে বাঁচি ।
জীবন জলের মত বয়ে যায় মাঝে -
অস্থির মাটি প্রাণে বহুরূপী সাজে ।

এই মাটি সেই বুক একই বারিষণে -
সোঁদা-মাটা সৃষ্টির সুবাসনে সুন্দর ।
মরুভূমি নদ বয়ে পাহাড়ে উজানে -
তন্বী নদীর পানে চাইছে আহাম্মক ।
তুমিও তো মাটি ছিলে দর্পনে দেখা -
আমি দেই রামধনু রঙিলাতে লেখা ।।

যদি পারো গুনে নাও বৃষ্টির ফোঁটা -
কাটাকুটি খেলে কিছু করো তো হিসেব !

পারবে না অঙ্কের ভাগে শূন্যতা -
সাইকেলে উঠি আমি কবেকার জেদ !
শুধু যদি কবিতায় দিতে পারো নাম -
লিখে রেখো সাহারায় ম্যৌসিন্‌রাম ।

রাধে রাধে ~ সুমনা পাল ভট্টাচার্য

একফালি ঘর, কাঠের চৌকি -
ছোট্টো দেরাজ, দেওয়াল রং-চটা..
এককোণে সাজানো, ফুল-মালা জড়ানো ওটা ওই কি ?
'গোপালের সিংহাসন ' - উফ্ কি ছটা !!
ঘরের সাজের সাথে বড় বেমানান -
সব যত্নটুকু ওখানেই আটকেছে ,
গলায় তুলসী-মালা, কাকভোরে স্নান -
নিয়ম-নিষ্ঠা নিয়ে বিধবা মেতেছে...
বরের শবের সাথে রং গেল লাল,
বয়েস তখন কত!! নয় কি দশ -
টিনের বাক্স আর কোঁচরে গোপাল-
সাদা থানে মোড়া শরীর ; অবশ...
এভাবেই এসেছিল পিসিমা এ ঘরে..
তারপর কতো দিন...কতো বছর...
বাপের পরে এখন ভাই এর সংসারে -
এই ঘর কাড়ে নি তো কারোর নজর !!
রাস-উত্সব, অমাবস্যা,একাদশী..
অম্বাবচী আর দোল-পূর্ণিমা,
উপোস-কাপাস সেরে ক্লান্ত রূপসী-
রং তবু ফেটে পড়ে ; তিলোত্তমা..
তখন বসন্ত তার শরীর জুড়ে..
ঋতুবতী যুবতীর ভরা যৌবন-
সামনে রাধাচূড়া - মিলনের সুরে -
রোজ রোজ ডেকে যায় মায়াবী ভূবন..
মালা জপতে বসে কোকিলের ডাক-
একাহারী বিধবার নিয়ম হাজার..
তারই মাঝে মন কেন খোঁজে শুধু ফাঁক -
ইচ্ছে যে কেন হয় একটু বাঁচার !!!
রাধাচূড়া গাছটার ওই ওপাশে..
একজোড়া চোখ শুধু খোঁজে যে তাঁকে -
বিষ-সাপ ফণা তোলে উফ্ কি আশে..
নীল সুখ ভরে যায় বুকের ফাঁকে -
চোখে চোখ পড়তেই...পাতা -বাহার,
শিরশিরে যন্ত্রণা...উদ্দাম নিঃশ্বাস-
সাদা আঁচলের নীচে মন তোলপাড়..
জীবন কি সুন্দর !! - এই বিশ্বাস -
হঠাত্ প্রবল ঝড় ; গেল গেল রব..
বাড়ির বিধবা কি না পিরীতির সাধ !!!
জাত গেল - মান গেল - গেল বুঝি সব..
নষ্ট মেয়েমানুষের এ কি আহ্লাদ ???
ঘরে খিল, গালাগাল আর উপবাস -
ছায়া মাড়ানো ও পাপ !!..দূরে দূরে সব..
সমাজের নারী তুমি....সাবাশ !! সাবাশ !!
কান্না শুকিয়ে গেছে , বোবা - নীরব -
রাধার দিকে চেয়ে হঠাত্ মনে হয়...
ঘর ছেড়ে, ভালবেসে তুমি তো সতী !!
আমাদের ওপরই শুধু এতো ঝড় বয় !!
মানবী হলে বুঝি এমনি গতি ???
এখন গ্রীষ্মকাল - বড়ই দহন...
রাধাচূড়া ঝরে গেছে ; সরে গেছে চোখ -
আবার নিয়ম মেনে জীবন বহন...
রাধা-মাধবের পায়ে সমাজের ভোগ -

সতীত্ব ~ অরিজিৎ বাগচী

প্রেমের ছায়াপথ ধরে শরীর মুক্তি খুঁজলে
মন বিষাদে জ্বলে ,
চোখের অভিসারী সিক্ততা অভ্যাসে সয়ে যায় ।।
পেশীর স্নায়বিক সঞ্চালনে সচকিত হলে
তুমির মুখোশ টা,
সতীত্ব পর্দা জরায় ।

দৃশ্য ~ জয়াশিস ঘোষ

যতটা দূর থেকে তুমি আমাকে দেখছ
সেখান থেকে আমার গালের দাগটা দেখা যায় না
তুমি দেখছ আমি কি আগের থেকে মোটা হয়েছি
আমি বোঝার চেষ্টা করছি তোমার চুল পড়ে যাচ্ছে না তো!
তুমি খেয়াল করনি আমার শার্টের একটা বোতাম নেই।
আমিও তোমার অনেক কিছুই দেখতে পারছি না।
মাঝখান দিয়ে লাল চ্যাটচ্যাটে বাসরাস্তা
বোমারু বিমানের মত লোকজন হেঁটে যাচ্ছে
তুমি শুধু দেখছ আমি এগিয়ে আসছি কিনা!
আর আমি ভাবছি এতসব ভেবে
এবারেও তুমি মাঝের রাস্তাটুকু পেরোতে পারবে না।
(২)
যে রাস্তা কুয়াশা বোঝে দৃশ্য গভীরে রেখে যায়
ধান ধান গন্ধ নিয়ে কারা যেন বিরহ সাজায়।
দৃশ্য পাল্টে যায়। পুরনো গান কিছু ভাসে
কবেকার সন্ধেপথ জড়িয়ে থাকে অসুখের পাশে
শীত করে। চাদরে গড়িয়ে যায় জ্বর
আমাদের দৃশ্যগুলো বড় বেশী অতীত নির্ভর...
(৩)
তুমি তাকে দেখাতে চাও ক্ষতটা গভীর কতখানি
সে দেখেছে বুকের লোম, নীলাভ শার্টের কলার
সাবওয়ে অন্ধকারে শহরও ফেরার হয় জানি
তুমি যাকে এত চেনো সেও তো অচেনা তোমার......

জীবন ~ রিক্তা চক্রবর্তী


শুরু হতে শেষ, জীবন নিরন্তর শিখিয়ে চলে। কিন্তু সেই শিক্ষার মূলবত্তা, আত্মম্ভর সে – সঞ্চিত রাখে শেষ কিছু মুহুর্তের জন্যই। আবার ক্ষেত্রবিশেষে অনন্য কিছু শিক্ষা রয়ে যায়, অবসানের পরে সংগ্রহের জন্য।
ব্যক্তির অবদান…সে যে প্রকারের, যে গুণমানের হোক না কেন, সবকিছুকে একই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিচার করা আমরা…..’হয়ত’ বিচারকের আসনের যোগ্য হয়ে উঠিনি, আজও। কখনও কখনও – বিশেষ কিছু সময়, কিছু জীবন, কিছু ঘটনা, কিছু অনুভূতি, কিছু সিদ্ধান্ত…..সবকিছুর বিচার হয়না; জীবন সেখানে দর্শকভূমিকা নিতে শেখায়। এই উপলব্ধি হলে, বিচারের প্রাণপণ প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে, আসুন আমরা জীবনের থেকে শেখায় মনোযোগ দিই।
বললাম না, অবসানের পরেও জীবন কিছু মণিমুক্তো ছড়িয়ে চলে। কুড়িয়ে নিতে হয়, আগ্রহী হলে….

ফালি চাঁদের আয়নায় ~ অনিরুদ্ধ দাস

' রোদ্দুর সাপ্তাহিকী ' ( বিষয় - অবচেতন ) বিভাগের তৃতীয়  স্থানে নির্বাচিত 
---------------------------------------------------------------------------- 


ফালি চাঁদের আয়নায়
নিজেকে পড়ন্ত ---
রেতবিন্দুর মতো লাগে,
ফিঁসানি রাত্রি মুখে
কুলুপ এঁটে ---একটা
নৈ:শব্দ্যের কোলাজ হয়ে
দাঁড়িয়ে ---তপ্ত বাঁকানো নারীর
মতো ---কাস্তে ডাহুকীর পাড়ে ;
#

পিঁড়ি-আঙ্গিনায় দুটি তারা
আদিম ক্রিয়ায় ব্যস্ত,
'জোতসা' ঘামে---
রাত্রি চোখ বুজে;
বন্ধ্যা রাত্রি শৈবালের
চাদর মুড়ে ---উঁকি দেয়
রেলিঙের ওপাড়ে;
#
আসঙ্গ লিপ্সায় পুরুষ
রজ:স্ফলার রক্ত চাটে,
জঙ্ঘার ক্ষণপ্রভা দ্রুতি
চোখের পলক অবশ
করে ---ভাঁড়ার ঘরে সিঁদ কেটে;
#
পত্রালি নিশির ঘুম
রাত্রির বিছানায়, ভিয়েন
তোলে ডিম্পল গালে,
শিৎক্কারের ফোঁসানি ---
লিবিডো হয়ে, রাত্রির চোরাবালি
সদ্ভোগের পিঠে আঁচড় কাটে;
#
রতিসুখসারে ভোর
রাত্রির পায়ে---নিক্কণ রাস
হয়ে দেয়---ভজন সুর
পদাবলি প্রেমে;

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...