মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫

রাধে রাধে ~ সুমনা পাল ভট্টাচার্য

একফালি ঘর, কাঠের চৌকি -
ছোট্টো দেরাজ, দেওয়াল রং-চটা..
এককোণে সাজানো, ফুল-মালা জড়ানো ওটা ওই কি ?
'গোপালের সিংহাসন ' - উফ্ কি ছটা !!
ঘরের সাজের সাথে বড় বেমানান -
সব যত্নটুকু ওখানেই আটকেছে ,
গলায় তুলসী-মালা, কাকভোরে স্নান -
নিয়ম-নিষ্ঠা নিয়ে বিধবা মেতেছে...
বরের শবের সাথে রং গেল লাল,
বয়েস তখন কত!! নয় কি দশ -
টিনের বাক্স আর কোঁচরে গোপাল-
সাদা থানে মোড়া শরীর ; অবশ...
এভাবেই এসেছিল পিসিমা এ ঘরে..
তারপর কতো দিন...কতো বছর...
বাপের পরে এখন ভাই এর সংসারে -
এই ঘর কাড়ে নি তো কারোর নজর !!
রাস-উত্সব, অমাবস্যা,একাদশী..
অম্বাবচী আর দোল-পূর্ণিমা,
উপোস-কাপাস সেরে ক্লান্ত রূপসী-
রং তবু ফেটে পড়ে ; তিলোত্তমা..
তখন বসন্ত তার শরীর জুড়ে..
ঋতুবতী যুবতীর ভরা যৌবন-
সামনে রাধাচূড়া - মিলনের সুরে -
রোজ রোজ ডেকে যায় মায়াবী ভূবন..
মালা জপতে বসে কোকিলের ডাক-
একাহারী বিধবার নিয়ম হাজার..
তারই মাঝে মন কেন খোঁজে শুধু ফাঁক -
ইচ্ছে যে কেন হয় একটু বাঁচার !!!
রাধাচূড়া গাছটার ওই ওপাশে..
একজোড়া চোখ শুধু খোঁজে যে তাঁকে -
বিষ-সাপ ফণা তোলে উফ্ কি আশে..
নীল সুখ ভরে যায় বুকের ফাঁকে -
চোখে চোখ পড়তেই...পাতা -বাহার,
শিরশিরে যন্ত্রণা...উদ্দাম নিঃশ্বাস-
সাদা আঁচলের নীচে মন তোলপাড়..
জীবন কি সুন্দর !! - এই বিশ্বাস -
হঠাত্ প্রবল ঝড় ; গেল গেল রব..
বাড়ির বিধবা কি না পিরীতির সাধ !!!
জাত গেল - মান গেল - গেল বুঝি সব..
নষ্ট মেয়েমানুষের এ কি আহ্লাদ ???
ঘরে খিল, গালাগাল আর উপবাস -
ছায়া মাড়ানো ও পাপ !!..দূরে দূরে সব..
সমাজের নারী তুমি....সাবাশ !! সাবাশ !!
কান্না শুকিয়ে গেছে , বোবা - নীরব -
রাধার দিকে চেয়ে হঠাত্ মনে হয়...
ঘর ছেড়ে, ভালবেসে তুমি তো সতী !!
আমাদের ওপরই শুধু এতো ঝড় বয় !!
মানবী হলে বুঝি এমনি গতি ???
এখন গ্রীষ্মকাল - বড়ই দহন...
রাধাচূড়া ঝরে গেছে ; সরে গেছে চোখ -
আবার নিয়ম মেনে জীবন বহন...
রাধা-মাধবের পায়ে সমাজের ভোগ -

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...