সুচিস্মিতা খিল খিল করে হাসছে। সাগরের বড় একটা ঢেউ ছুটে আসছে তারই দিকে। ওর নিটোল সুবলিত সোনার রঙের চরণদুটি নোনাজলে ভিজে গেছে। পড়নের শাড়ীর নিচের অংশ ভিজে সপ্সপ্ করছে। কোনো হুঁসই নেই যেন। যেন ইচ্ছে করে নোনা জলে ডুবিয়ে রেখেছে পায়ের নিচের অংশটা। দেখে মনেই হচ্ছে না সকালে বেদম ভয় পেয়ে গেছিলো লোকটাকে দেখে। কি করে যে ওর কানে এসছে কথাটা। সেইথেকে লোকটাকে দূর থেকে দেখলেও ভয়ে কুঁকড়ে থাকে। এখন সাহস ফিরে পেয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে খেলায় মেতে উঠেছে। দেখে খানিকটা আস্বস্ত হলাম।
সাগর তটে উত্তাল বাতাসের সাথে লড়াই করতে করতে এগোচ্ছি বালির পাহাড় ভেঙ্গে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে প্রখর রোদের তাপ সইতে না পেরে। এই নতুন একটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে পুরীতে বেড়াতে এসে। বুঝলাম রোদ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়েছি। অতএব ধীর কদমে এগোতে থাকি ওর দিকে। আমার সঙ্গে চোখাচোখি হতে ও ফিক করে হাসলো। রক্তরাঙ্গা ঠোঁটদুটি ঈষৎ কুঞ্চিত করে বললো, ভয় করছে খুব।
- আমি আছি তো। ভয় কিসের?
- আমার হাতটা ধরবে?
প্রায় টলতে টলতেই এগিয়ে চলেছি ওর কাছে। সুচিস্মিতা দেখেই খিলখিল করে হেসে আরও খানিকটা জলে নেমে গেল। টলোমলো দু’পায়ে এসে আছড়ে পড়ছে সফেন ঢেউগুলো। কিছুতেই এগোতে পারছি না তেমন করে। সুচিস্মিতা হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো ভয়ে। ওর অনিন্দ সুন্দর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল নিমেষেই। বিস্ফরিত নয়নে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। তাতেই দেখলাম লোকটাকে। প্রায় গা ঘেঁসেই হেঁটে গেল বালির ওপর দিয়ে। হাতে গুটিকতক বড়বড় ঝিনুক। বিরবির করে বলছে, ‘আর কত ঝিনুক চাই তোমার? এবার উঠে এসো জল থেকে। এই দ্যাখো কত ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে এলাম তোমার জন্য। এবার উঠে এসো......
এই লোকটাকে দেখেই সুচিস্মিতা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠেছে। লোকটা নাকি দু’দিন আগেই নিজের স্ত্রীকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে সমুদ্রের জলে! সুচিস্মিতার দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেতেই ও চিৎকার করে আমাকে বললো, আর একপা’ও এগোবে না তুমি। তোমরা সব পুরুষই যে একই জাতের। তুমিও আমাকে......
সুচিস্মতা কথাগুলো বলছে আর উলটো কদমে একটু একটু করে নেমে যাচ্ছে গভীর জলের দিকে। খেয়ালও করছে না জল তার কোমর ছাড়িয়ে উঠে এসেছে আরও খানিকটা ওপরে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন