রবিবার, ১ মে, ২০১৬

বসন্ত যে ফিরে ফিরে আসে ~ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

অট্টালিকাটির ওই খুপরি ঘরে একটাই মাত্র জানালা। মেয়েটির মুখখানা হামেশাই ঝুলে থাকে সেই জানালায়। তার ঘনকালো চোখের তারায় জমে থাকে একরাশ বিষণ্ণতা। সেইসাথে একটাই প্রত্যাশা। ফিরে আসুক তার বসন্তের পাখি। জানালার শিকদুটো প্রতিদিন কতশত বার বাঁধা যে পড়ে মেয়েটির নরম হাতের মুঠোয় তার হিসেব নেই। সকলের অগোচরে মুখখানা মুখরিত হয় বোবা কান্নায়। মেয়েটি মনে মনে বলে, ফিরে এসো বসন্তের পাখি। ফিরে এসো গো আপন কুলায়। 
ক’দিন ধরেই একটা বসন্তবৌরি পাখি ডুকরে কেঁদে মরছে অট্টালিকাটির চারপাশ জুড়ে। অট্টালিকার সামনে মহাকালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন জামগাছটার পাতার ফাঁকে নিজেকে লুকিয়ে রেখে নিস্তার পেতে চায় রোদ্দুরের প্রখরতার হাত থেকে। তারপর পাতার আড়ালে বসে ডুকরে কাঁদতে থাকে খুপরি ঘরের ঐ মেয়েটির হয়ে। জানালায় লেগে থাকা মুখটির দু’চোখ জুড়ে একরাশ ব্যকুলতা নৃত্য করতে থাকে বসন্তবৌরিটির হাঁকডাক শুনে। তার মন বলে, এখন আর কান্না নয়। নয় আর অভিমান। ঘরে ফিরে যে আসছে তার পথভুলো বসন্তের পাখি। ভেবেই আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মেয়েটির পটলচেরা চোখদুটি। বসন্তবৌরির মুখে সংবাদ যে পাঠিয়েছে, সে আসছে! কথা যে দিয়েছিলো একদিন ঠিক ফিরে আসবে তার কাছে। হায় রে, আরও একটা বসন্তু এসে ফিরে গেল। তারপর গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ - একে একে এসে বিদায় নিলো মেয়েটির কাছ থেকে। অথচ বসন্তের পাখিটি যে আর এলো না! একদিন শীতকালও এসে খুপরি ঘরের কড়া নেড়ে ফিরে গেল। 
জানালাটা আজও নিয়ম করে খোলা থাকে। মেয়েটির বিরহকাতর মুখখানি আজও এসে ঝুলে থাকে একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে। আজও সকাল হয়। আজও রাত নামে বিকেলের পিছুপিছু। কাক–শালিখ-চড়ুইয়ের কিচিরমিচির দিনভর লেগেই থাকে প্রাচীন জামগাছটির ডালে ডালে, পাতায় পাতায়। অথচ সেই বসন্তবৌরি পাখিটা আর এসে আশ্রয় নেয়নি জামগাছের পাতার আড়ালে। আর হাঁকডাক করেনি অট্টালিকাটি ঘিরে। মেয়েটির লম্বা কালো চুলের গোছাতেও লেগেছে সাদার প্রলেপ। তবুও প্রত্যাশায় পড়েনি এতটুকু ধুলো। সে যে বলে গিয়েছে একদিন ফিরে আসবে তার কাছে। 
পাগলিনী জানালায় মুখ ঝুলিয়ে অনর্গল বিরবির করে, ফিরে এসো বসন্তের পাখি, ফিরে এসো। শুনতে পাচ্ছো তুমি? বেলা যে বয়ে যায়। ফিরে এসো গো আপন কুলায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...