রবিবার, ১ মে, ২০১৬

ঋষি ও তিনটে জীবন ~ রীনা রায়

দেখতে দেখতে দশটা বছর পেরিয়ে গেল। মিঠাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুবর্ণা ।মেয়েটা এই বিশ্বাসটুকু সম্বল করেই তো বেঁচে আছে যে, ঋষি ফিরে আসবে। 
পাঁচ বছরের কোর্টশিপ এর পর ওরা যখন বিয়ের পিঁড়িতে বসল তখন ঋষি নতুন একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে জয়েন করেছে । 
বিয়ের ঠিক দশ দিন পরেই ওকে একটা জরুরি কাজে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল। ঠিক ছিল, ও ফিরে আসার পর ওরা হানিমুনে ব্যাংকক-পাটায়া যাবে। সব অ্যারেঞ্জমেন্ট ঋষি নিজেই করে রেখেছিল । ফ্লাইট টিকিট, হোটেল বুকিং..... মিঠাই এর জন্য একগাদা ড্রেস কেনা.......
কোথা থেকে কি হয়ে গেল........যে ফ্লাইটে ওর ফেরার কথা সেটার অ্যাকসিডেন্ট হল। 230 জন প্যাসেঞ্জারের কাউকেই জীবিত পাওয়া যায়নি, তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের, যে পাঁচজনের দেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি, তার মধ্যে একটা নাম ঋষিরাজ চট্টোপাধ্যায় ।
তবে কি ছেলেটা বেঁচে আছে? মিঠাই এর বিশ্বাস টাই কি সত্যি? তাই যদি হয়, তবে এতদিনেও ও ফিরে এলো না কেন? ও কোথায়?
***** 
জানলার দিকে একঝলক তাকিয়েই মিঠাই বুঝলো, ঝড় আসবে এখুনি, আকাশটা কালো হয়ে এসেছে । রাজকে আনতে স্কুলে যেতে হবে। মোবাইলটা নিতে গিয়ে ঋষির ছবিটার দিকে নজর গেল ।
কবে ফিরবে তুমি ঋষি? আমি যে প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে তোমার প্রতিক্ষায় বসে থাকি। রাজকে তুমি দেখবেনা? আমাদের ভালবাসার চিহ্ন। ওর স্কুলের নাম রেখেছি রাজর্ষি.......... রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়। জানো, রাজের স্কুলের বন্ধুদের মায়েরা আড়ালে আমাকে নিয়ে আলোচনা করে, ওরা আমাকে মেন্টালি ডিসব্যালেন্স ভাবে। 
ওদের কি দোষ বলো, ওরা তো তোমার আমার ভালবাসার কথা জানেনা! 
তোমাকে তো ফিরতেই হবে, আমার জন্য।
আমরা দুজনে প্রমিস করেছিলাম যে একসাথে দুজনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবো! 
ফিরে এসো ঋষি,ফিরে এসো..... তোমার মিঠি তোমার প্রতিক্ষায়....... 
******* 
পাপা, ডু ইউ নো আই পাঞ্চড সৌপ্তিক টুডে, হি ওয়াজ সেয়িং দ্যাট ইউ হ্যাড ডায়েড, ইউ উড নেভার রিটার্ন ।হি ইভেন সেড দ্যাট মাম্মা ইজ সিক! পাপা, আই ওয়াণ্ট টু সি ইউ। ইউ নো, মাম্মা ক্রায়েস ফর ইউ এভরি ডে অ্যান্ড প্রে'স। প্লীজ, কাম ব্যাক টু আস পাপা। **** 
দরজায় দাঁড়িয়ে ছেলের সব কথাগুলো শোনে মিঠাই । ধীরপায়ে ছেলের কাছে এগিয়ে আসে মিঠাই। ছেলেকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে । রাজ, মায়ের দুচোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে, 'ডোন্ট ক্রাই মাম্মা, পাপা উইল সিওরলি কাম সুন। লেটস গো, উই প্রে ফর পাপা'। 
এরপর তিনজনে মিলে, একজন তার একমাত্র জামাই এর জন্য, একজন তার কোনোদিন না দেখা বাবার জন্য , আর একজন তার প্রতিটা স্বত্তা দিয়ে ভালবাসা.......... প্রতিটা অনুভবে মিশে থাকা মানুষটার জন্য আকুলভাবে প্রার্থনা করতে --
'ফিরে এসো, ফিরে এসো তুমি '! 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...