বুধবার, ১ জুন, ২০১৬

যদিও ঠিক গল্প নয় ~ সৌম্যলেন্দু ঘোষ

প্রিয় মানিকদাদু,
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলায তোমাকে একটা চিঠি দেব, কিন্তু বাবা কিছুতেই চিঠি লেখার জন্যে আমার স্কুলের বন্ধু রিকার মত সুন্দর গোলাপী কাগজ কিনে দিচ্ছিল না, তাই আর শেষমেষ না থাকতে পেরে স্কুলডায়েরী থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে চিঠিটা লিখেই ফেললাম। হয়ত তুমি আমার চিঠিটা পড়ে অবাক হয়ে যাবে, ভাবতেই পারবে না যে তোমাকে এইরকম জায়গা থেকে আমার মত কেউ চিঠি পাঠাতে পারে। সত্যি বলছি, ছোট থেকেই আমার তেমন কোন বন্ধু নেই, সবাই যখন হৈ চৈ করে খেলা করে, তখন আমি চুপচাপ আমাদের ব্যালকনি থেকে হুইলচেয়ারে বসে দেখি, আর তোমার লেখা বইগুলো পড়ি; তবে মনে মনে পড়ি, কারণ এখন তো বাবা বই কিনেই দেয় না, তাই মাইন্ড রিডারই ভরসা। জানোতো, আমাদের ফ্ল্যাটটা খুউব উঁচু, প্রায় ১৩৫ তলা, আমরা ১১২তলায় থাকি। আমাদের ব্যালকনি থেকে কলকাতাকে খুব সুন্দর দেখায়। তোমাকে তো বলাই হয়নি ক্লাস থ্রি-তে পড়ার সময় একবার ফ্লো-ট্যাক্সিতে অ্যাক্সিডেন্ট করে আমি আর চলতে-ফিরতে পারিনা; ডাক্তারকাকু বলেছে আর একটু বড় হলে আমার শরীরে অ্যান্ড্রয়েডদের মত রোবোটিক লেগ ইনস্টল করে দেবে। স্কুলে রিকা আর রোজি মিস ছাড়া কেউ আমাকে ভালবাসে না; আমি তো এখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, সেদিন ইন্ট্রিগ্যাল ক্যালকুলাসের একটা অঙ্ক পারিনি বলে পল স্যার কি বকাটাই না বকলেন! আচ্ছা, তুমিই বলোতো আমার মত ১১ বছর বয়সে কেউ রাতদিন পড়ে, তুমিই তো লিখতে এই বয়সটা হল খেয়ালখুশির বয়স, আমারো ইচ্ছা করে মুকুলের মত সোনার কেল্লায় যেতে, শঙ্কুদাদুর টিমের সাথে একশৃঙ্গ অভিযানে যেতে, কিন্তু বাবাকে এইসব বললেই বাবা আমাকে স্লিপিং ভেসেলে ঢুকিয়ে দেয়। আমাদের বাড়িতে একটা ছবি আছে জানো, আমি আদর করে ওর নাম দিয়েছি গণেশ মুৎসুদ্দির প্রোট্রেট; মায়ের একটা খুব সুন্দর পার্ল নেকলেস আছে, যেটাকে দেখলেই আমার রবার্টসনের রুবির কথা মনে পড়ে। আমারও ইচ্ছা করে স্পিরিট ক্যাচার অন করে বাতিকবাবুকে ডেকে নিই, আর উনি যেন সারারাত ধরে আমাকে ওনার অদ্ভুত কালেকশনের গল্প শোনান; আমারও ফটিকচাঁদ হতে ইচ্ছা করে, কিন্তু কিছুই হতে পারিনা। জানো আমারও একবার তোপসেদার মত ফেলুদার সঙ্গে গোয়েন্দাগিরি করতে ইচ্ছা করে, মনে হয় আমাদের ফ্ল্যাটের ছাদে উঠে একবার চেঁচিয়ে বলি 'জয় বাবা ফেলুনাথ', কিন্তু আমার ন্যান্সি আন্টি কিছুতেই আমাকে স্কুলের সময় ছাড়া ঘর থেকে বেরোতে দেয় না; ওহ! তোমাকে তো বলাই হয়নি ন্যান্সি আন্টি খুব আপগ্রেড একটা অ্যান্ড্রোয়েড, ওর চোখকে ফাঁকি দেওয়া খুব কঠিন। একেক সময় মনে হয় যখন ছোট ছিলাম, তখনই খুব ভাল ছিলাম, আমি আবার আমার ছোটবেলাকে ফিরে পেতে চাই। তোমাকেই একমাত্র বললাম আমায মনের কথা, পারলে আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখো....
ইতি- টুকাই ২২শে জুন, ২০৮৮
এরপর টুকাই স্পেস-টাইম কার্ভেচার মেশিনে গিয়ে চিঠিটা সত্যজিৎ রায়ের বাড়ির ঠিকানায় পোষ্ট করে দিল ঠিক ২২শে জুন, ১৯৮৮ তারিখে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...