অয়ন অন্দরমহলে প্রবেশ করিয়া দেখিলো কুন্তলা বস্ত্রাঞ্চলে মুখ ঢাকিয়া ফুঁপাইয়া ফুঁপাইয়া ক্রন্দন করিতেছে । অয়ন ব্যথিত হৃদয়ে তাহার সন্নিকটে যাইতে গিয়াও নিবৃত হইলো এই কথা ভাবিয়া যে, কুন্তলা তাহাকে ভালবাসে না । দূর হইতেই জানিতে চাহিলো – ‘তুমি কাঁদিতেছো কেন কুন্তলা ?’
কুন্তলা ক্রন্দনরত অবস্থাতেই জবাব দিলো – ‘চক্ষু-কর্ণ থাকাতেও যখন বুঝিতে পারো নাই, তোমার না জানিলেও চলিবে ।’
- ‘তুমি কি আমার নিকট হইতে কদাচ দুর্ব্যবহার পাইয়াছো ?’
- ‘দুর্ব্যবহার ? কদাপি নহে ।’ কুন্তলা জবাব দিয়াই উচ্চস্বরে কাঁদিতে লাগিলো ।
অয়ন দ্রুত কুন্তলার নিকটে যাইয়া তাহার অনিন্দসুন্দর মুখখানি করতলে ধারণ করিলো । কুন্তলার রক্তিম অধরযুগল দেখিয়া তাহার চিত্ত বিগলিত হইলো । রক্তিম অধরে চুম্বন আঁকিয়া দিবার প্রবল বাসনায় অধীর হইয়া উঠিয়া নিজেকে সংযত রাখিতে না পারিয়া চুম্বনে উদ্যত হইতে কুন্তলা অদূরে সরিয়া গিয়া তাহার দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া কহিলো – ‘আমাকে ছুঁইয়ো না । আমি অপবিত্র । আমাকে মরিতে হইবে ।’
- ‘অপবিত্র ! মরিতে চাও ? কেন ?’
- ‘এই ঘৃণ্য জীবন আর সহ্য করিতে পারিতেছি না ।’
- ‘কে তোমার জীবন ঘৃণ্য করিয়াছে ?’
- ‘তুমি । বিবাহের পর ছয়মাসকাল অতিবাহিত হইয়াছে । এই ছয়মাসকালে বারেকের তরেও আমাকে তোমার বক্ষলগ্ন করো নাই । ঘৃণাভরে দূরে সরাইয়া রাখিয়াছো ।’
- ‘আমি ? এতকাল জানিতাম তুমিই আমাকে ঘৃণা করো বলিয়া দূরে দূরে সরিয়া থাকো ।’
- ‘আমি –’, কুন্তলার সুন্দর মুখখানি অসহনীয় বেদনায় নীলবর্ণ ধারণ করিলো। সে অয়নের বক্ষে মুখ লুকাইয়া ফুঁপাইয়া ফুঁপাইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বললো – ‘আমি...নিজের জীবনেরও অধীক তোমাকে...’। কুন্তলা আর বলিতে না পারিয়া বাক্রুদ্ধ হইলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন