শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

(১)
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক

(২)
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ।’
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল
অথবা
(৩)
আয়রে ভোলা খেয়াল-খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে
নাইকো মানে নাইকো সুর,
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন সুদূর
মনে পড়ে কি প্রখ্যাত এই ছড়া তিনটির কথা ?
প্রথমটি রবীন্দ্রনাথের , দ্বিতীয়টি ছড়ার জাদুকর যোগীন্দ্রনাথ সরকারের লেখা এবং দ্বিতীয়টি সুকুমার রায়ের ।
বাংলা শিশু সাহিত্যের উৎপত্তি ও ইতিহাস ঘাঁটলে এমন হাজারো মনিমুক্তোর সন্ধান মিলবে । বাংলা ভাষায় শিশুসাহিত্যের গোড়াপত্তন হয় ১৮১৮ সালে, কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটির তরফ থেকে প্রকাশিত নীতিকথা বিষয়ক বইয়ের মাধ্যমে ।
শিশুসাহিত্যের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, স্বর্ণকুমারী দেবী প্রমুখের রচনার মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের বোধোদয় (১৮৫১), কথামালা (১৮৫৬), চরিতাবলী (১৮৫৬), আখ্যানমঞ্জরী (১৮৬৩), বর্ণপরিচয় (১৮৮৫); অক্ষয়কুমারের চারুপাঠ (৩ খন্ড, ১৮৫৫-৫৯); মদনমোহনের শিশুশিক্ষা (৩ ভাগ, ১৮৫০-৫৫) এবং স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত বালক' পত্রিকার উল্লেখ করা যায় ।
তৃতীয় পর্যায় রবীন্দ্রযুগ। রবীন্দ্রপূর্বযুগের শিশুসাহিত্য মুখ্যত জ্ঞানমূলক, উপদেশমূলক ও নীতিকথামূলক; কিন্তু রবীন্দ্রযুগের শিশুসাহিত্য মুখ্যত আনন্দমূলক। সুদীর্ঘ সময়ব্যাপী রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যসাধনায় শিশুরা উপেক্ষিত হয়নি; তাঁর শিশু (১৯০৬) কাব্যগ্রন্থেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে সমকালীন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার, কাজী নজরুল ইসলাম, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের নামও উল্লেখযোগ্য। হেমেন্দ্রপ্রসাদের আষাঢ়ে গল্প (১৯০১), যোগীন্দ্রনাথ সরকারের হাসিরাশি (১৯০২), দক্ষিণারঞ্জনের ঠাকুরমার ঝুলি (১৯০৮), আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ভূত পেতনী (১৩০৯), উপেন্দ্রকিশোরের টুনটুনির বই (১৯১০), সুখলতা রাও-এর গল্পের বই (১৯১৩), সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল (১৯২৩), পাগলা দাশু, অবাক জলপান, নজরুল ইসলামের ঝিঙে ফুল (১৯২৬)
বাংলার শিশুসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে নিজস্ব স্বকীয়তায় ।
উনবিংশ শতাব্দীতে ছাপাখানার প্রবর্তনের পরেই সম্ভবত শিশু সাহিত্যের অবিরত জোয়ারে ভাঁটার টান প্রথম পরিলক্ষিত হয় । মদনমোহন তর্কালঙ্কার মহাশয়ের -- " বারোমাস সাতবার
আসে যায় বার বার " ভোলা যায় কি ?
কিন্তু তারপর ? কোথায় গেল সেইসব শিশু সাহিত্য ? কিই বা হল তাদের ?
খুব স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে অবহেলিত পর্যায়ভুক্ত এখন শিশুসাহিত্য' , মনে করে দেখুন তো , সাম্প্রতিক কালে শিশুদের ( ৬-১০ বছর বয়সী) কিছু লেখা হয়েছে কি তেমন ?
এ মাসেই দেশজুড়ে পালিত হবে ' শিশুদিবস' , অথচ কেউ কি সেভাবে ভাববেন সাহিত্যের আঙিনা জুড়ে কিভাবে ব্যপ্ত করা যায় শিশুমনের নিখাত সরল মনটির ছবি ?
উত্তর টা বেশ নিরাশাজনক , একথা মেনে নিয়েই মুঠো ভরা রোদ্দুর 'এর এবারের সংখ্যায় রইল শিশুমনের খোরাক জোটানোর জন্য কিছু মিষ্টি ছড়া -, সঙ্গে রইল কবিতা , ফিচার ও গল্পের চিরাচরিত মিশেল । আশা রাখি পাঠকদের ভাল লাগবে কিছুটা আউট অফ দ্য বক্স' এই সংখ্যা ।
নিরন্তর ভাল থাকুন সবাই , ... সর্বোপরি , লেখায় থাকুন ।

শুভেচ্ছান্তে 
পিয়ালী বসু


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...