মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬

বিশেষ দিবস হ্যালোউইন -- সিলভিয়া ঘোষ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আঁৎকে উঠলেন। হোয়াইট হাউজের বাইরে দেখেন চারদিকে ভূতুড়ে পরিবেশ। বিশাল বিশাল দৈত্য, কুমিরের প্রতিকৃতিতে হোয়াইট হাউজের আঙিনা ছেয়ে গেছে। হোয়াইট হাউজে হঠাৎ ভূত কেন-সবার মনে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। অক্টোবরের শেষদিনে ইউরোপ আমেরিকায় হ্যালোইন পালন করা হয়। যত ভূত-প্রেত আছে, সবাই নাকি এই রাতে লোকালয়ে চলে আসে। আর সেই সব ভূত-প্রেতদের খুশি করতে না পারলে বিপদ। আর সেজন্য এই রাতটিতে পালন করা হয় হ্যালোইন উৎসব।
কোথা থেকে এই হ্যালোইনের উদ্ভব:
---'-----------------------------------
যদি আমরা প্রাচীন সভ্যতাগুলির দিকে ভালো করে নজর দিয়ে থাকি তবে দেখতে পাবো-- পৃথিবীর সৃষ্টির আদিতে যেমন সূর্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য ঠিক তেমন ই তার প্রভাব পড়েছে প্রাচীন ধর্মের উপর এমন কি দিনক্ষণ, তারিখ,ক্যালেন্ডার সব তৈরি হতো সূর্য কে কেন্দ্র করেই।তাই এই সময় আমাদের যেমন নতুন ধানের চাষ হয় ঠিক তেমনই পৃথিবীর বিভন্ন প্রান্তে এই সময় চলে নতুন শস্যকে কেন্দ্র করে তার বন্দনা এবং প্রাচীন দিন পঞ্জিকা অনুযায়ী ৩১ শে অক্টোবর বছরের শেষ দিন ধরা হয়ে থাকতো বলে একটা দিনকে সকল বিপদ সকল মৃত্যু ভয়ের থেকে দূরে রাখতে চাইতো বলে এই উৎসবের সূচনা।প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়,শস্যের দেবীর মতোই,মাতৃদেবীর পূজোর একটি প্রবল ধারার প্রমাণ রয়েছে , যেখানে দেবী মাতা শক্তি ,সুরক্ষা ,রক্ত ও বিজয়---এসবের প্রতীক।ইউরোপের জিপসিরা এই মাতৃশক্তিকে মৃত্যুর দেবী হিসাবে পূজা করে এসেছে,ঠিক যেমন আমরা শ্মশান কালীরপূজা করি।প্রাচীন ফিনল্যান্ডেও 'কালমা' নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ দেবী ছিলেন ,তিনিও সমাধিস্থলে ঘুরে বেড়াতেন এবং মৃতদেহ ভক্ষণ করতেন।রোমানরাও ধরিত্রী মাতার আরাধনা করতেন এবং তার রঙ ও কালো।আমাদের মহাভারতেও এক কৃষ্ণ বর্ণ দেবীর কথা বলা হয়েছে যাকে শবর ,পুলিন্দা এবং বর্বর'রা তাঁর পূজা করত ,সেই পূজায় রক্ত অর্পণের প্রথা ছিল।সুতরাং এইটা বলা যেতেই পারে আমাদের ভূত চতুর্দশী আর হ্যালোইন হয়তো এই এক কারণেই সৃষ্টি।ভাগ্যক্রমে এইবার দুই তিথির সমন্বয় ঘটেছে।
বর্তমানে হ্যালোইন উৎসবের গুরুত্ব
:-----------------------------------
প্রতি বছর ৩১ শে অক্টোবর Halloween উৎসব পালিত হয়। গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারলান্দে এই উৎসব প্রাচীন উৎসব হিসাবে পালন করা শুরু হয়েছিল যা প্রধাণতঃ ব্রিটিশ, আইরিশ, স্কটিশ জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু জনপ্রিয়তার কারণে তা উঃ আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপে ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ইংরাজি মাতৃভাষার সব প্রদেশের/জাতির মধ্যে এই উৎসব পালিত হয়। মৃত পূর্বপুরুষের আত্মার সঙ্গে বর্তমানে জীবিতদের যোগাযোগের দিন এবং ফলস্বরূপ অলৌকিক কিছু ঘটনা ঘটবে এই দিনে, এমন একটা বিশ্বাস থেকে এই উৎসবের সূচনা হয়। বর্তমানে বিশেষ Halloween পোশাক, ভূতের সিনেমা দেখা, ভুতুড়ে বাড়িতে যাওয়া এবং বিভিন্ন অপ্রাকৃতিক ব্যাপারের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে আনন্দ করাটাই মূল উদ্দেশ্য। শিশু, কিশোরেরা পোশাক পরে প্রতিবেশীদের দরজায় দরজায় যায় এবং মিষ্টি, চকোলেট, অন্যান্য উপহার এবং টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করে। কোন কোন পরিবারে পার্টি হয়।
হ্যালোইন পালন নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় মাতামাতির শেষ নেই। রাতটি উদযাপনে সেখানে প্রস্তুতি চলে মাসজুড়ে।তারপর হ্যালোইনের রাত নামার সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় উদযাপন। দিনের আলো নিভে যাওয়ার সাথে সাথেই শিশুরা দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ে। সবার গায়ে থাকে রাজ্যের অদ্ভূতুড়ে কস্টিউম। আর হাতে থাকে টর্চ। অনেকে আবার বাড়ির উঠোনকে ভৌতিক বানিয়ে ফেলে। কেউ মাকড়সার জাল বানিয়ে তাতে কঙ্কাল টাঙিয়ে দেয়। মিষ্টি কুমড়া দিয়ে ভূত বানানো তো খুবই জনপ্রিয়। বড় বড় মিষ্টি কুমড়ার ভেতরটা ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। তারপর কুমড়ার খোলের গায়ে বানানো হয় চোখ-মুখ। ভেতরে জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাতি।
এখন ইউরোপ আমেরিকা ছাড়িয়ে জাপান,অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এমনকি বাংলাদেশেও এই উৎসব উদযাপন করা হয়। ইউনিসেফ ও উৎসবটি উদযাপন করে। তাদের সাথে মুক্ত শিশুদের অনেকেই এদিন ভূত সেজে ট্রিক আর ট্রিট খেলায় ছলে সংগ্রহ করে তহবিল। আর সে তহিবল ব্যয় হয় শিশুদের জন্য। হ্যালোইন উৎসব শুধু ভূত-প্রেত নয়, এখন কল্যাণকর কাজে উদযাপিত হচ্ছে। উৎসবে শিশুরা পায় নির্মল আনন্দ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...