বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ভালবাসা বেঁচে থাকে অন্তরে - রীনা রায়

দুমড়ে মুচড়ে ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছিল নন্দিনীর, ঋষিকে যে প্রাণের চেয়েও বেশী ভালবাসে---ওকে ছেড়ে থাকবে কি করে? আর ছোট্ট রিদম--- ওর কথাও ভাবলোনা ঋষি? 
ঋষির বলা কথাগুলো এখনও কানে বাজছে--- ওর মতো মিডলক্লাস মেয়েকে বিয়ে করে ও ভুল করেছে! ওর সাথে একছাদের তলায় থাকা যায়না! নন্দিনী যেন মিউচুয়াল ডিভোর্সে রাজী হয়ে যায়, কলিগ সৃষ্টি মুখার্জিকে ও বিয়ে করবে।

নন্দিনীও একসময় কর্পোরেট অফিসে উঁচুপদেই কাজ করতো--শুধুমাত্র ঋষির বাবা-মার চাওয়াতেই ও চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল।

সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল কলেজে পড়ার সময়েই, দুক্লাস সিনিয়র ঋষি ওর মতো সাদামাটা মেয়েকে যেদিন প্রপোজ করলো, ও কেমন যেন হকচকিয়ে গেছিল, ওর প্লাস পয়েন্ট একটাই ছিল যে ও পড়াশোনায় অত্যন্ত ব্রিলিয়ান্ট। সেই তুলনায় ঋষি অ্যাভারেজ---

ইউনিভার্সিটির পড়া শেষ করে নন্দিনী চাকরির পরীক্ষা দিয়ে খুব তাড়াতাড়িই ভাল চাকরি পেয়ে যায়, বেশ কিছুদিন পরে ঋষি চাকরি পেলে ওরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল়। 
ঋষির মা বাবা এই বিয়ে মন থেকে মানতে পারেননি।বিয়ের পর প্রতিটা খুঁটিনাটি ব্যাপারে নন্দিনীকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করতো।
নন্দিনী সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে, মানিয়ে চলাই ওর শিক্ষা, একসময় ও সবার প্রিয় হয়ে গেছিল ।
ওনারা বেঁচে নেই, সেই ভাড়াবাড়ি ছেড়ে ওরাও চলে এসেছিল। 
এদিকে ঋষি যত উন্নতি করছিল, ততই বদলাতে শুরু করেছিলো।
অফিস-ট্যুরে বিদেশভ্রমণ, পার্টি, ড্রিঙ্ক করা তো নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে, নতুন উপসর্গ যোগ হয়েছে নতুন নতুন গার্লফ্রেন্ড --- প্রতিবাদ করলেই ওকে শুনতে হয় ও ব্যাকডেটেড! এসব না থাকলে ওপরে ওঠা যায়না! 
নন্দিনী ভাবে, তবে কি ঋষির অপরিমিত উচ্চাকাঙ্খাই ওদের সম্পর্কে তিক্ততা আনছে? 

সামান্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আর রিদমকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে উঠলো নন্দিনী।
--------
ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ঘর খুলতেই একরাশ শূন্যতা যেন আছড়ে পড়লো ঋষির ওপর।
নন্দিনী আর রিদমের না থাকাটা যে ওকে এভাবে কষ্ট দেবে আগে ভাবেনি।
নাঃ, সৃষ্টির কথা ভাবতেও এখন ইচ্ছে করছেনা। ওর সমস্ত হৃদয় জুড়ে যে নন্দিনীই থেকে গেছে,ঋষি সেটা ভালভাবেই অনুভব করছে।
সৃষ্টি মোহ, আর নন্দিনী ওর প্রাণ, ওর ভালবাসা----ও পারবেনা নন্দিনীকে ছাড়া বাঁচতে। পুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।
ফিরিয়ে আনতে হবে ওদের ---
----
দরজা খুলতেই নন্দিনী দেখে ঋষি দাঁড়িয়ে। 
ঋষি নন্দিনীকে জড়িয়ে ধরে বললো, 'স্যরি, ভুল করেছি আমি, ফিরে চলো !'
নন্দিনী সমস্ত সত্তা দিয়ে অনুভব করছিল সেই পুরনো ঋষি, যে ওকে ভালবেসেছিল, তবু আস্তে করে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বললো, 'আমার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে ঋষি-----তুমি ফিরে যাও----'

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...