বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

শোক বিলাস - মুনমুন মুখার্জী

আজকাল বিষণ্ণতার এক কালো মেঘ সর্বক্ষণ ঘিরে থাকে বহ্নিকে। বাইরের বর্ষার সাথে পাল্লা দিয়ে মন কুঠুরির জানলা গলে চুঁইয়ে পড়া কান্না বৃষ্টি। কোন শোক তাপ জরায় জর্জরিত মন তার?

পরিচিতদের অভিমত, ‘এ হল সুখী পায়রার শোক বিলাস!’ তবে কি তার জীবনে শুধুই চাঁদের হাট? 

স্মৃতির অলিগলি ধরে একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। বহ্নি সবে বছর ষোল। সামনেই ওর দাদুর শবদেহ। শ্মশানযাত্রীদের “বলো হরি! হরি বোল!” ধ্বনি মিলিয়ে যেতেই অনুভূতির অনুরণণে যে শূন্যতাবোধ সৃষ্টি হয়েছিল সে-ই কি শোক? 

দাদুর কাজের দিন তাহলে সেই শোক কোথায় হারিয়েছিল? ঘাট কাজের দিন থেকে মৎস্যমুখী এই তিনদিন ধরে ভোজ আর আত্মীয় পরিজনের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো কি আসলে উৎসব মুখর ছিল না? কাজের দিন রাতে cousin দের সাথে বাজি রেখে একা দাদুর শ্মশান ভ্রমণ কি এডভেঞ্চার ছিল না কি দাদুর প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস, ‘যিনি ভালবাসেন মরণের ওপাড় থেকে তিনি ঘাড় মটকাতে আসবেন না!’ 

একটু এগিয়ে যাই-- সন্ধ্যেয় খবর এল, দিদা আর নেই। বাবা মা সবাই ওকে রেখে ওখানে গেলেন... বহ্নির কাল অনার্স ফাইনালের প্রথম পরীক্ষা! শোক পালনের চেয়ে জীবন যুদ্ধের প্রস্তুতির গুরুত্ব যে অনেক বেশি। 

স্মৃতির পথ ধরে পৌঁছে গেলাম হাসপাতালে। ছোট্ট একটি প্রাণের অস্তিত্ব ওর নিষ্প্রাণ মরু জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছিল। গাইনোকলজিস্ট জানালো, ‘The fetus is stillborn.’ আজও সন্তানহীন বহ্নির মনের গহনে মা ডাক শোনার অতৃপ্ত ইচ্ছেরা উঁকি দেয় যখন তখন। ইচ্ছেগুলো লুকিয়ে সে তার জীবন নির্যাস আকণ্ঠ পান করে চলেছে। ‘There is only one life after all!’ অতএব, একেও শোকের পর্যায়ে ফেলা যায় না! 

সেদিন এক বন্ধুর অকালপ্রয়াণের খবরে তড়িঘড়ি বন্ধুর বাড়ি গিয়ে দেখে, বন্ধু-পত্নী কাঠিন্যের এক দুর্ভেদ্য আবরণে নিজেকে আবৃত করে সব একা হাতে সামলে চলেছে। মেয়েটি ওর চেয়ে বছর কয়েকের ছোট। মনে হল মেয়েটিকে একবার দু’বাহুতে জড়িয়ে ধরে। ওর এত স্বাভাবিক আচরণের আড়ালে লুকানো কান্না বহ্নি ঠিক অনুভব করতে পেরেছে! তবুও কেন যেন ওকে জড়িয়ে ধরার সাহস হল না বহ্নির। এজন্য ওর ভেতর চাপা কষ্টের যে ঘূর্ণী বইছে সেও বোধ হয় শোক আখ্যা পাবে না।

আজকাল কারো বাবা মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেলে বহ্নি সারাক্ষণ তটস্থ থাকে। এই বুঝি রিংটোন বাজবে ওর বাবা বা মায়ের অন্তিম সংবাদ দিতে। তারপর সারাদিনের বিষন্নতার চাদর মোড়ানো চাপা কান্না। অযৌক্তিক এই শোকেরও কোন ব্যাখ্যা নেই বহ্নির কাছে। 

এসবটুকুই বহ্নির শোক বিলাস মাত্র! 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...