মোটা লোহার বিম সমেত নির্মিয়মান উড়ালপুলটা এসে আছড়ে পড়েছে শশব্যস্ত জনাকীর্ণ সড়কের ওপর। মহানগরী তখন ছুটছিলো পেটের তাগিদে। চাপা পড়েছে বেশ কিছু সচল গাড়ি এবং ছুটন্ত মানুষ। থমকে গেল, স্তব্ধ হয়ে গেল গোটা মহানগরী।
দুটো মোটরগাড়ির মাঝখানে আটক হয়ে থাকা জীবন্ত মুখটি থেকে প্রবল আকুতি ঝরে পড়ছে উদ্ধার কামনা করে। ইশারায় বলতেও চাইলো একটু জল দাও। মুখে - গায়ে - মাথায়।
লোহার বিম এবং মাটির মাঝখানের সামান্য ব্যবধানটুকুর ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে একটা রক্তাক্ত হাতের ইশারা। আঙ্গুলগুলো থেকে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে এক বুক তৃষ্ণা, রক্তের আলপনায় আঁকা মৃত্যুভয় আর একমুঠো বাঁচার আশা।
পরদার আড়ালে থাকা অসংখ্য মুখগুলিতে কতকাল আগেই যেন ঝলসে উঠেছিলো লোভের হাতছানি। কেউ দেখেনি। কেউ টেরও পায়নি তাদের জঘন্য আবদার।
দেখেছেন এবং শুনেছেন একমাত্র ঈশ্বর। হায় রে, সেই ঈশ্বরও আজ দেখলেন না কশতশ মায়ার সংসার নিমেষেই ঝলসে গেল সেইসব মানুষের লোভ লালসার আগুনের লকলকে শিখায়।
লোহার বিম কেটে টুকরো টুকরো করেও রক্তাক্ত হাতের লোকটাকে বাঁচানো গেল না। লোকটা মরে গেল বিস্ফোরিত নয়নে নির্মম দুনিয়াটাকে দেখতে দেখতে। চিরতরে চলে যাবার আগে সভ্যসমাজের মুখের ওপর উগড়ে দিয়ে গেল একরাশ ঘৃণা। তারপরও বেশ কিছু শবদেহ উদ্ধার করা হলো ভগ্নাংশের তলা থেকে যাদের না ছিলো লোভ, না ছিলো লালসা। শুধু ছিলো একবুক বেঁচে থাকার তৃষ্ণা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন