শনিবার, ৫ মার্চ, ২০১৬

অনন্যা ~ পারমিতা মুখার্জী

সেই থেকে ঘড়ি দেখছে স্বাগতা। দূর্গা এখন এল না! না! আজ না ঝোলায় মেয়েটা সেই থেকে ঘর বার , করছে ওর অপেক্ষায় স্বাগতা। এদিকে ঠাকুরমশাই ও আর দেরীকরতে চাইছেন না। এখুনি নাকি পুজো শুরু করতে হবে, নাহলে নাকি পূজোর শুভ সময় পেরিয়ে যাবে! 

ভীষণ ব্যাস্ত লাগছে স্বাগতা র।জানে দূর্গা ডোবাবার মেয়ে নয়! সে এক কথার মানুষ। বলেছে যখন তখন ঠিক সময় ই আসবে। তবুও-- কম দিন ত হোলো না সে দূর্গা কে দেখেছে! সেই যবে থেকে এই শহরে এসেছে তবে থকে দূর্গা ই ওর হাউসমেইড। বাড়ির সব কাজ নিজে হাতে সামলেছে , স্বাগতা ত সারাদিন কাটায় কলেজে। দূর্গা সত্যি কাজেও দশভূজা। অসামান্যা। বাপরে! মাঝে মাঝে ভাবে স্বাগতা, সে দূর্গার জায়গায় থাকলে পারত ই না সব একা করতে! 

ওই যে বলে না আমাদের দেশে মেয়েদের আগে রুপ দেখে তারপর গুন। দূর্গার ক্ষেত্রেও কথাটা খানিকটা সত্যি। প্রথমে যখন দূর্গা এসে দাঁড়ালো স্বাগতা র সামনে, স্বাগতা অবাক হয়ে দেখেছিল, আমাদের দেশে গরীব, অভাবী লকেদের কি ভাবে হেনস্তা হতে হয় , শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে। 
না! গায়ের রঙ বা চেহারা দূর্গার কেমন ছিল, জানা বা দেখে যাবে না পুরোটা আর কখনো। কারণ একদিক,ডান দিকের গলা থেকে , হাত , কোমর হয়ে নীচে নেমে, হাটু অবধি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।শুধু ফোসকা খসে যাবার পর যে চেহারাটা দাড়িয়েছে,সেটাই এখন দূর্গার রুপ!। বর শ্বশুর, শাশুড়ি, মিলে গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো, মেয়ে জন্ম দিয়েছিল বলে। সে নাকি অপয়া, বংশ চালাবার জন্য ছেলে ও জন্ম দিতে পারে না! এর পর তার গরীব অশিক্ষিত মা বাবা , বর খেদান মেয়ে আর ঘরে তোলেনি! সেই থেকে চলছে এই সংগ্রাম। রাত দিন এক করে-- কি ই না করে দূর্গা-- লোকের বাড়িতে ঝি র কাজ, ভোরে উ্টেবাড়ি বাড়ি দুধ বিলি, রবিবার হলে বড় বাবুদের ্গাড়ি ধোয়া,একাটা ছেলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব করে সে, নিজের ছট্টো মেয়েকে বড় করার তাগিদে। আবার অবসরে মালকিন্দের সাড়ীতে ফলস বসিয়েছে, ব্লাউস বানিয়েছে, -- এসব ও করেছে। শুধু নিজেকে বিক্রি হতে দেয়নি। জোয়ান মেয়ের উপর লোকের কুনজর ত কম ছিল না! একা মেয়েমানুষ মানেই লোকের ফুর্তি করার আকাঙ্কখা বেড়ে যায়। সে দা্রোয়ান ই হোক বা ওর দুধ ডিপোর মালিক! তবুও দূর্গা নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। সেই ইস্তক লড়াই চালিয়েছে প্রতিমুহুর্ত সমাজের সাথে, সব প্রতিকুলতা র সাথে।। একাটু একাটু করেমেয়েকে বড় করেছে। সাথে স্বাগতা অ ছিল যদিও। 
কেন জানিনা প্রথম দিন ই দূর্গা কে ভাল লেগেছিল ওর। বাকি এই ক্লাস, মানে লোকের বাড়িতে কাজ করা গোষ্টী র মেয়েরা একটু ন্যাকা হয়, প্রচন্ড ছল চাতুরী জানে, -ও ছেলে দেখলে গলে যায়। দূর্গা সেরকম না, নাহলে এতদিন কোথায় ভেসে যতট খড় কুটো র মত।
স্বাগতা নিজে একজন লেকচারার। কলেজে ভূগল পড়ায়। আর বাকি সময় দূর্গার মেয়ের ভবিষ্যত গড়ার কাজ করে। তাকে গাইড করা, স্কুলের পর হোমওয়ার্ক করানো, ইত্যাদি। সে পরিশ্রম অ আজ সার্থক দূর্গা র , মেয়েকে বড় করার, এখন সে কলেজে পড়ে। মাঝে মাঝে দূর্গা কে দখে স্বাগতা ভাবে, সে নয়, উলটে যেন দূর্গা ই ওর প্রেরণা হয়ে দাড়িয়েছে। এত বিরুদ্ধ ভাগ্য কে জয় করার মুরোদ চাই! ওই যে কবি গুরু বলেছেন না-- "নারীরে আপন ভাগ্য জয় করিবার/ কেহ নাহি দিবে অধিকার?"-- এ ক্ষেত্রে দূর্গা যেন ছিনিয়ে নিয়েছে নিজের হক, যা একান্ত ই তার। 

আজ সত্যি তার জন্য খুসি স্বাগতা। দীর্ঘ বিশ বছরএর পরিশ্রম ,সাথে স্বাগতার সাহায্য নিয়ে আজ দূর্গা তাদের বাড়ির কাছেই একটা ছোট সেলাই স্কুল খুলছে। তাইর ই ভূনি পূজোর আয়োজনে কাল থেকে ব্যস্ত স্বাগতা, সব নিয়ম মেনেই হবএ পূজো। আপাতত শুধু সেলাই শেখাবে দূর্গার স্কুলে, পরে ভাববে বড় কিছু। ততোদিনে মেয়েও দাড়িয়ে যাবে দূর্গা র। স্বাগতা জানে দূর্গা এর থেকে বড় , অনেক বড় কিছু করবে একদিন। সে আনন্যা, সে সত্যি দূর্গা।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...