সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ছিন্নমূল বাঙালির প্রিয় সাংস্কৃতিক ঋত্বিক ---- সিলভিয়া ঘোষ

তখন সাদা কালো টিভির জামানা।ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি,তখন কলকাতা দূরদর্শনের থেকে সম্প্রচারিত হতো Retrospective।সেই সময় বাবা কে দেখেছিলাম টানা ছয়দিন রাত জেগে ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা দেখতে এবং নাগরিক আর মেঘে ঢাকা তারা দেখে চোখের জল লুকাতে।সেই সময় জিজ্ঞাসা করেছিলাম বাবা কে তুমিও কাঁদছো ? বাবা বলেছিলেন --'যে শিল্প বা সংস্কৃতি মানুষের বাস্তব সমস্যা কে সকলের সামনে এনে দাঁড় করায় আর যেখানে প্রতিটি মানুষ ঐ শিল্পের মধ্যে দিয়ে নিজের জীবনের মিল খুঁজে পায় সেখানেই নাট্যকার বা চিত্র পরিচালকের সার্থকতা ।ঋত্বিক সেই কাজটা করে দিয়েছিলেন।সেক্ষেত্রে তিনি সার্থক একজন শিল্পী ।কথাটা সেই সময় ওতোটা বুঝি নি।আজ বুঝি ।
আমার দেখা ঋত্বিকের 'কোমল-গান্ধার ' ও 'মেঘে ঢাকা তারা' সবচেয়ে প্রিয়।আসলে ঋত্বিক নিজে কোনদিন দেশভাগটা মেনে নিতে পারেন নি।তাই তার ছবির মূল বিষয় ছিল উদ্বাস্তু কলোনি।যেখানে নীতার মতোন সর্বংসহা মেয়েরা পরিবারের সুখ শান্তির জন্য নিজের ভালোবাসা কেও বোনের হাতে তুলে দিতে কুন্ঠাবোধ করেনা।একা তার প্রচেষ্টায় যখন সংসারের সকলে সুখের মুখ দেখলো তখন একটু একটু করে ক্ষয়ে যাওয়া নীতা সংসারে ব্রাত্য হয়ে পড়ে।অবশেষে যখন গায়ক দাদা তাকে সুস্থ করতে পাহাড়ে নিয়ে যায় তখন মৃত্যু আসার আগে দাদা কে একটা কথাই বলে যা পাহাড়ের গায়ে প্রতিহত হতে থাকে--'আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম দাদা'।এই কথাটা একটা সিম্বল।এই এতো কষ্ট এতো অভাবের তাড়নার সাথে লড়াই শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য অথচ পারছি না কেউ।

আমার প্রিয় সিনেমা ---কোমল গান্ধার ।এই ছবিতে পরিচালক গণনাট্যের মাধ্যমে ছিন্নমূল মানুষের অভাব অভিযোগ ,ফেলে আসা পদ্মার পাড় এমন কি মুর্শিদাবাদের কাছে ছিন্ন হয়ে থাকা রেলপথ টাও যেন সাক্ষী হয়ে থাকছে দুটি ছিন্নমূল মানুষের জীবন সূত্র বেঁধে দেবার জন্য ।

তাঁর মতে ---নাটক , থিয়েটার যতদিন মানুষের কাছের ছিল ততদিন তিনি সেটির মাধ্যমে সমস্ত সমস্যার প্রতিবাদ করেছেন,এখন যখন চলচিত্র মানুষের অনেক কাছে এসে গেছে তখন সেটির মাধ্যমেই সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরবেন।আগামী তে এর থেকেও যদি কিছু শক্তিশালী জনমাধ্যম গড়ে ওঠে তখন সিনেমাকেও লাথি মেরে ঐ মাধ্যমে ই কাজ করবেন।
তাঁর তৈরি সিনেমা হল----বাড়ি থেকে পালিয়ে ,অযান্ত্রিক, নাগরিক ,সুবর্ণরেখা ,যুক্তি তক্কো গপ্প,তিতাস একটি নদীর নাম ইত্যাদি ।সময়ে থেকে অনেক আগের দৃষ্টি ভঙ্গি ছিল তাঁর ,তাই মৃত্যুর এতো বছর বাদেও তাঁর ছবিগুলো থেকেই ফিল্ম উৎসাহী স্টুডেন্টসরা অনেক কিছু শিখে চলেছে।

শ্রী জগন্নাথ বসুর কথায় ---'ঋত্বিক ছিলেন আপাদমস্তক অগোছালোর মধ্যে সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি'।

আজ তার প্রয়াণ দিবসে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...