সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বাঙময় মুহূর্ত ----- মুনমুন মুখার্জী

।।১।।
অপারেশন থিয়েটারের চতুর্দিকে শ্বেতশুভ্র রঙ কিছুটা বিমর্ষ করে তোলে রেণুকাকে। মেরুদণ্ডে অবিমিশ্র অনুভূতির হিম প্রবাহ। ন’মাসের পরিচিত গাইনোকোলজিস্ট মাস্ক পরার আগে স্মিত হাসিতে আশ্বাস দেয়, “ভয় কি? মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিট। চোখ খুলতেই মাতৃ্ত্বের সেই নৈসর্গিক মুহূর্তের আস্বাদ তোমার অপেক্ষায়।” 
জ্ঞান ফিরতেই ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে অন্ধকার। আধো জাগরণে আপাদমস্তক সাদা তোয়ালে জড়ানো একটি জ্যান্ত পুতুল হাতে দিয়ে পাশের নার্সটি বলে, “মেয়ে হয়েছে, মিষ্টি খাওয়াতে হবে কিন্তু!”
মেয়ে কোলে রেণুকার দুচোখে তখন অঝোর বর্ষাধারা।


।।২।।
চার বছরের ব্যবধানে আবার সেই অপারেশন থিয়েটার। মেরুদন্ডে আবার সেই হিম প্রবাহ। সেই স্মিতহাস্য গাইনোকোলজিস্ট। সব একইরকম। শুধু প্রযুক্তি পাল্টে গেছে। বুকের ওপর থেকে গাঢ় রঙের একটি পর্দা উলম্ব ভাবে রেণুকার শরীরকে এবার দু’ভাগে ভাগ করেছে। শরীরের নীচের অংশ অবশ, পাথরের মত ভারী। হঠাৎ অনেক দূর থেকে ভেসে আসা শিশুর কান্না ওর মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষকে সজাগ করে তোলে। কান্নার আওয়াজ যতই স্পষ্টতর হতে থাকে, অশ্রুজলে রেণুকার দৃষ্টি ততটাই ঝাপসা হয়ে আসে। 
-“ছেলে হয়েছে তোমার!” দায়িত্বরত পেডিয়াট্রিকের দু'হাতে আবার এক দেবশিশু; এখনও তার শরীরে লেগে আছে রেণুকারই রূধীর।


।।৩।। 
বত্রিশ বছর পর আবার অপারেশন থিয়েটার। রোহিনী নয়, এবার ওর পুত্রবধূ অরণ্যা। আবাহনের আনন্দ নয়, এবার পরিবেশে বিসর্জনের গাম্ভীর্য। ছেলে এখন অন্য দায়িত্ব নিতে অপারগ। পেশাগত উন্নতি তার আপাতঃ মূল লক্ষ্য। 
মাত্র ন’সপ্তাহ্! ডাক্তার বলেছিল, টার্মিনেশন যত দ্রুত হবে ততই নিরাপদ। অরণ্যার সম্মতিতেই সব হয়েছে। তবুও ও সব কিছুতেই ভগ্নোৎসাহ। পুত্রবধূর নির্জীব দু’হাত নিজের হাতে নিয়ে নিশ্চুপ রোহিনী।
নশ্বর পৃথিবীর অবিনশ্বর কিছু মূহুর্তে মাতৃ্ত্বের অনুভূতি আর স্পর্শের বাঙময়তার কাছে শব্দ প্রয়োজনীয়তা হারায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...