সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

নির্জন দ্বীপের বাসিন্দা ----- সুজাতা বন্দোপাধ্যায়

ভোরের আলো ফোটার অনেক আগে নীলিমা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন ।শহরটাকে দূরে ফেলে বহু কষ্টে, মন্থর গতিতে, হাটতে থাকেন গঙ্গার তীরের দিকে ।যখন পৌঁছে যান তখনও চাপ চাপ আঁধার ঘনিয়ে আছে আশেপাশে ।সামান্য দূরে শ্মশান থেকে ছিটকে আসা নিয়নের আলোয় চকচক করছে দিগন্ত রেখায় ছড়িয়ে পড়া সীমাহীন জলরাশি।

বাড়িতে পুত্র, পুত্রবধূ আর নাতনিকে নিয়ে নামমাত্র একসাথে বাস ছিল তার ।নুয়ে পড়া শরীরটাকে নিয়ে দিব্যি দিন কাটিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি ।সন্তান, পুত্রবধূ, নাতনির কথা বার্তা , তাদের পায়ের শব্দ, হাসি, ব্যস্ততা, রাগ, অনুকম্পা, ঘৃণা সবকিছুর সাথেই সহবাস করতে শিখে নিয়েছিল মন ।মানুষের মাঝে থেকেও নীলিমা বাস করতেন নো ম্যানস্ ল্যান্ডে।কিন্তু কদিন ধরে তিনি ছিলেন একজন আলোচনার বিষয়বস্তু ।ফোন , বুকিং দরাদরি শেষে একটা নিস্তব্ধতা ।

রোজকার মতো সেদিন নাতনি গলা জড়িয়ে না ধরে যখন চুপ চাপ বসলো তার ঘরে তখনই বুঝলেন যাবার সময় তার ঘনিয়ে এলো ।তবু নীরবে চোখ নাচিয়ে কৌতুকের ভঙ্গিতে জানতে চান, কি হলো? 
-তুমি কাল বৃদ্ধাশ্রমে যাচ্ছো আম্মা ।আমি মানা করতেই মা আমাকে মেরেছে দেখো, এই দেখো ।গাল দুটোর দিকে তাকিয়ে দেখেন সেখানে আঙুলের দাগ ।
নীলিমা মাথা নামিয়ে চোখের জল লুকোন।
-আমি বড়ো হয়ে তোমার আশ্রমে যাব দেখো আম্মা, ঠিক যাব ।
বলো হরি, হরি বোল ধ্বনিতে চমক ভাঙলো নীলিমার।হতাশাগ্রস্ত, অবসাদে ভরা জীবনের শেষ ঠিকানা বাছলেন মা গঙ্গার সুশীতল বক্ষ ।
পা থেকে খুলে রাখলেন ছেলের দেওয়া শেষ উপহার খানি ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...