সোমবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৬

লজ্জা করে না তোদের ~ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

ছাদে উঠে বিস্কুট খুঁটে খুঁটে ফেলছি পাখিদের খাওয়াবো বলে। গোটা চারক বুলবুলি, দুটো শালিখ, গোটা ছয়েক ছাতার এবং একটা কাক হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছে জলের ট্যাংকের ওপর। আমি সরে গেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে খাবারের ওপর। এটা ডিসেম্বর মাস। চারপাশে হালকা কুয়াশার পরদা ঝুলছে।
হঠাৎ দেখি বিস্কুটের ছোট্ট একটা টুকরো নিজে থেকেই হেঁটে চলেছে গুটিগুটি পায়ে। দেখে অবাক হলাম। বিস্কুটের টুকরোটা কি কুয়াশায় স্নাত হয়ে সদ্য প্রাণ পেলো! তারপরই নজরে এলো আসল ঘটনাটা। বিস্কুটের টুকরোটা দু’হাতে তুলে নিয়ে ছোট্ট একট কালো পিঁপড়ে গুটিগুটি পায়ে এগোচ্ছে নিজের গর্তের দিকে। এই শীতে পিঁপড়ে এলো কোত্থেকে! ওদের তো এখন নিজেদের গর্তে সেঁধিয়ে থাকার কথা! দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডার যে সেই কথাই বলছে!
পিঁপড়েটা আমার মনের কথাটা পড়তে পেরে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে বিস্কুটের টুকরোটা নামিয়ে রেখে কোমরে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়ুটেদের গলায় বলতে শুরু করলো, নিকুচি করেছে তোদের ঐ ক্যালেন্ডারের। ঐ দেখেই তো সেঁধিয়েছিলাম গর্তে। ভেবেছিলাম গর্তে সেঁধিয়ে থেকে রক্ষা পাই আগত শীতের হাত থেকে। তারপর নাহয় খাবারের সন্ধানে আবার বেরোনো যাবে। আমাদের বাপ-ঠাকুর্দা তো তেমনটাই করে গেছেন আজীবন। ছি-ছি-ছি, লজ্জা করে না তোদের? মানুষ হয়েও নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই ডেকে এনেছিস? সেইসাথে ভুগতে হচ্ছে আমাদের মতো ইতর প্রাণীদেরও। কোথায় শীতকালে একটু হাত-পা ছড়িয়ে বিশ্রাম করবো তা না তোদের জ্বালায়.........
আর শুনতে চাইলাম না। পালিয়ে এলাম নিচে। ঘরে এসে ঢুকতেই দেয়ালে ঝুলে থাকা টিকটিকিটা বলে উঠলো, ছি-ছি-ছি, লজ্জা করে না তোদের?
ঘর ছেড়ে বাগানে গিয়ে দাঁড়াতেই কোত্থেকে একটা কেঁচো বেরিয়ে এলো, ছি-ছি-ছি.........
বাগানের এককোণে মস্ত গর্তের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দাঁড়াশ সাপটা। ওটা ওখানেই থাকে বলে জেনে এসেছি চিরকাল। সাপটা সামনে এসে বললো, গরমে আর তিষ্ঠোতে পারছি না গর্তের ভেতর। ছি-ছি-ছি, লজ্জা করে না......
অবাক কাণ্ড! তারপরই চারপাশ জুড়ে সেই একটাই কথা, লজ্জা করে না তোদের? মানুষ হয়েও নিজেদের......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...