" এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়
এমন দিনে মন খোলা যায় "
ছটি ঋতুর বর্ণিল বৈচিত্রে ভরপুর বাংলার প্রকৃতি ও মানবমন । এর মধ্যে আষাঢ় - শ্রাবণ এই দুই মাস আমাদের শিল্প , সাহিত্য এবং মননে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে আছে ।
বর্ষার আবেদনের চির সুধাময় রূপটি রবীন্দ্রনাথই সবচেয়ে বেশী করে অনুভব করেছিলেন , তার প্রমাণ তাঁর 'বর্ষামঙ্গল' কাব্য । ১৩১৭ সালে , এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় আশ্রমের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জানান- , “আজ এই ঘনবর্ষার সন্ধ্যায় প্রকৃতির শ্রাবণ-অন্ধকারের ভাষা আমাদের ভাষার সঙ্গে মিলতে চাইছে। অব্যক্ত আজ ব্যক্তের সঙ্গে লীলা করবে বলে আমাদের দ্বারে এসে আঘাত করছে।'-- তাঁর এ বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট , বর্ষা ঋতুর সঙ্গে সাহিত্য , বিশেষত কবিতার কি লীলায়িত যোগ !
বর্ষার সৌন্দর্যের বহুগামী বৈচিত্রময় রূপটির জন্যই যুগে যুগে এই বর্ষাকাল প্রেম এবং বিরহের থিম হিসেবে বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে ।এ প্রসঙ্গে কালিদাসের মেঘদুতম -এর কথা ভোলা যায় কি ? বিরহী যক্ষ উজ্জয়িনীর প্রাসাদ শিখরে বসে মেঘকে দূত করে পাঠিয়েছিলেন অলকা পুরীতে তাঁর প্রিয়তমার কাছে । কালিদাসের 'মেঘদুতম' এ বিরহী যক্ষের সেই আর্তি কি আমাদেরও হৃদয় স্পর্শ করে অমর হয়ে ওঠেনি ? মধ্যযুগীয় কবি জয়দেবের 'গীতগোবিন্দম ' বা বড়ু চণ্ডীদাসের 'শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন ' অথবা আরও পরবর্তী কালে মুকুন্দরাম চক্রবর্তী , ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত , স্বর্ণকুমারী দেবী , প্রমথনাথ চৌধুরী থেকে উত্তর আধুনিক কালের সুররিয়ালিজমের কবি জীবনানন্দ দাস , ...প্রত্যেকের লেখাতেই ফিরে ফিরে এসেছে এই বর্ষা ।
মুঠো ভরা রোদ্দুর 'র এবারের সংখ্যায় রয়েছে একাধিক কবিতা , চিঠি , ফিচার এবং অণুগল্প , প্রতিটিই আঙ্গিক , শব্দ এবং বাক্যের অনায়াস মাধুকরী তে অনন্য । বর্ষার অনুপম মাধুরীতে হৃদয় সিক্ত করে সৃজনে থাকুন সকলে , ...এবং ভাল থাকুন ।
শুভেচ্ছান্তে
পিয়ালী বসু