শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬

আমার জীবনে প্রিয় মানুষ ~ শ্যামশ্রী চাকী

বেড়ার ফাঁকে ভোরের অনুপ্রবেশকারী আলোয় আমার মায়ের মুখটা পদ্মপাপড়ির মত টলটল করত।
তখন স্বপ্নঘোর ঠিক কাটেনা
একটা কোমল পদ্মরাগ স্পর্শ সারাদিনের অক্সিজেনবাহী হয়ে কপালে হাত বুলিয়ে যায়।

রান্নাঘরে হলুদ মাখা হাতে অংক শেখাতেন মা। ডালের সম্বার আর পাটিগণিত মিলেমিশে এক হয়ে যেত সূর্য ওঠা নারকেল পাতায়। হ্যারিকেনের মুমুর্ষ আলোয় যখন টিনের চালে একঘেয়ে বৃষ্টির অর্কেস্ট্রা, আমাকে মেঘদূত পড়ে শোনাতেন মা।মায়ের সাথে গলা মেলাতাম 'কশ্চিৎকান্তা বিরহ গুরুনা স্বাধিকার প্রমত্তহ'..
যক্ষের বিলাপ, খিচুড়ির গন্ধ, সোঁদা মাটির আঘ্রাণ সমস্ত কিছু মায়ের মধ্যে মিলেমিশে মা কে এক আশ্চর্য রহস্যময়ী নারী করে তুলতো।

রবিবারের বিকেল মানেই এক অদৃশ্য জাদুকরের জাদুছড়ির স্পর্শে আমাদের উঠোন বদলে কবিতাবাসর। আমি কবিতা পড়ছি এক অলৌকিক খুশিতে ঝলমল করে উঠছে মায়ের চোখমুখ। সমস্ত পাড়াটার ওপড় যেন মায়ামাখা এক চাদর বিছিয়ে রেখেছে কেউ! সেখানে অপ্রাপ্তির হাহাকার নেই, ব্যার্থতার চোখ রাঙানি নেই, প্রত্যাশার তাড়া নেই।শুধু শান্তি.. অসীম শান্তি।
কারো সাথে এযাবৎ ঝগড়া না হওয়ার মূল মন্ত্রটা মায়ের শেখানো। জানি এমন হলে মা কষ্ট পাবেন।

আসলে আমি এখনো মায়ের রূপকথার সেই রাজকন্যা।তবে সেই আদরের দুলালি আজ নীলকণ্ঠী, তাই সব অপমান,আঘাত, সহানুভূতির আড়ালে লুকোনো ক্লেদাক্ত আঁচড় গিলে অনায়াসেই বলতে পারি; তোমরা ভাল থেকো।

আজকাল মায়ের উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া 'সর্বংসহা' হওয়ার চাবিকাঠিটা মাঝে মাঝে মনের ভুলে আমার রূপকথার চোরাগলিতে কোথায় হারিয়ে ফেলি আর খুঁজে পাইনা।
আমার সহজ সরল আদি অকৃত্রিম মা এখন এই ক্ষয়াটে সমাজে মাঝে মাঝে চমকে ওঠে।সমাজের প্রত্যেকটি ধাপে নিত্যদিন ঘটে যাওয়া জটিল মনস্তাত্ত্বিক ট্র‍্যান্সফরমেশন দেখে ঘোলাটে চোখ মেলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।ইগো আর অহংকার, হিংসা আর হীনতা, লোভ আর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভরা নতুন প্রজাতি কে মা বুঝতে পারেন না, কিংবা বুঝতে কষ্ট হয়।
হয়ত বোকা বোকা শোনাবে তাও বলছি এই ইগো হীন, অহংকারশূন্য, ছাপোষা বেঁচে থাকায় মা
কে নিয়ে আমি খুব ভাল আছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...