শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭

বড় একা লাগে - দেবদত্তা ব‍্যানার্জী

তিনমহলা বিশাল ভগ্নপ্রায় জীর্ণ বাড়িটা এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে কালের সাক্ষীর মতো। বড় সিংহ দরজার একদিক নেই।দরজার উপর দুটো সিংহর একটা ভেঙ্গে পড়েছে। লোহার দরজায় হাল্কা ধাক্কায় ক‍্যাঁচ করে আওয়াজ, নিজের অস্তিত্ব জানান দেয় ।আগাছার জঙ্গল পার করে একাই ঢোকে অপু। ডানা ভাঙ্গা পরীটা বহুদিন একা দাঁড়িয়ে বাগানের মাঝে, অবাক হয়ে তাকায় যেন। সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোরা লনে বহুবছরের আগাছার জঙ্গল। বন্ধ দরজা জোড়ে চাপ দিতেই খুলে যায়। গোধুলীর কনে দেখা আলোয় অপু খুঁজে ফেরে নিজের শৈশব , কৈশরের স্মৃতীগুলো।
এক সময় দুর্গা পূজা হতো এই রায় বাড়িতে, আত্মীয় পরিজনে গমগম করত রায় বাড়ি। কাঠামোটা রয়ে গেছে ঠাকুর দালানে। কত বছর আলো জ্বলেনি। কেউ বাতি দেয়নি।


বংশের শেষ পুরুষ আজ দীর্ঘ তিরিশ বছর পর ফিরে এসেছে শিকড়ের টানে। আজ সে বড্ড একা, ঠিক এই অট্টালিকার মতো। একা একাই আধো অন্ধকারে স্মৃতীর গলিপথে ঘুরে ফেরে সে। একসময় আলোয় আলোয় সেজে উঠত এই প্রাসাদ। আজ পূর্ণিমার আলোয় ছাদের ভেঙ্গে পড়া কার্নিশে দাঁড়িয়ে অপু নদীর দিকে তাকায়। 
ছলাৎ ছলাৎ শব্দে জোয়ার আসছে। ভেসে আসে কত স্মৃতী। বংশের শেষ প্রদীপকে অনেক আশা নিয়ে বিদেশে পড়তে পাঠিয়েছিল দাদু। বিদেশিনীর প্রেমে মজে সবাইকে ভুলে ও দেশেই ঘর বেঁঁধেছিল সে। দাদুর শত অনুরোধেও ফেরেনি একদিন। মোহ কাটতে নিজেকে বড্ড নিঃসঙ্গ একা পেয়েছিল। সেই একাকিত্বকেই সঙ্গী করে অবশেষে প্রত‍্যাবর্তণ। ইট বের করা দেওয়াল আর বন্ধ কপাটের ফাঁকে পরে রয়েছে কিছু সম্পর্কের দীর্ঘশ্বাস, একাকিত্বের গল্প।
চোখ বন্ধ করে অপু অনুভব করতে চায় অনেক কিছু। এদের মাঝেই কাটাবে নিজের শেষ দিন গুলো। বাতাসে ভেসে আসে একটা চেনা গন্ধ, একা থাকার গন্ধ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...