শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭

যাত্রা - মুনমুন মুখার্জী রায়

-আমি এবার যাবোই তোমার সাথে। আমাদের বিয়ের এক বছর হতে আর মাত্র একটি সপ্তাহ বাকি। এই এক বছরে ক’টা দিন আমরা একসাথে কাটিয়েছি জানো? 

আলমারি থেকে কাঁচা হলুদের ওপর সেলফ ওয়ার্ক করা; সবুজ রঙের জরি বর্ডারের শাড়ীটি হাতে নিয়ে জানতে চায় বৃষ্টি। স্বাভাবিকভাবেই অপর পক্ষের কোন জবাব পাওয়া গেল না। নিজেই উত্তরটা দেয় তাই, 

-মাত্র একমাস সতের দিন। 

(মুহূর্তের নীরবতা) 
-তা’বলে ভেব না আমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছি। আমি জানি, একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তোমার দায়িত্ব কতটা! আমাদের বিয়েটা সম্বন্ধ করে হলেও বিয়ের আগে সব জেনে শুনেই রাজী হয়েছিলাম আমি। 

মিষ্টি মধুর স্মৃতি গুলো মনে হতেই বৃষ্টির ঠোঁটের কোণে হাল্কা হাসির আভাষ... সেই হাসিতে মিশে ছিল অরিত্রের জন্য অশেষ ভালোবাসা। 
-বৌভাতের পনের দিন পর যখন তুমি জাহাজে ফিরে গেলে--- তারপর বুঝেছিলাম, আমিও ভালবাসতে শুরু করেছি; তোমাকে, তোমার সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি মানুষকে, তোমার ভালোমন্দ সবটুকুকে। 

খাটের দিকে সরে গিয়ে হাতের শাড়ী, ব্লাউজ আর ম্যাচিং জুয়েলারীগুলো একবার চেক করে নিল--- বিবাহবার্ষিকীতে পরার জন্য কিনলেও আজই পরবে বলে ঠিক করে সে। 
-ছুটিতে দু’বার এসেছ অবশ্য। কিন্তু তোমার সাহচর্য ঠিক সেভাবে কোথায় পেলাম বল? তুমি তো শুধু আমার স্বামীই নও, কারও সন্তান, কারও বন্ধু, কারও বা দাদা। সবারই আবদার আছে তোমার প্রতি। আমি সব বুঝি। তাই এবার আমি আর কিচ্ছু শুনবো না। 

খাটের ওপর রাখা অরিত্রের ছবিটাকে বুকের মাঝে কিছুক্ষণ চেপে রেখে বলে, 
-ভালবাসি আমি তোমায়, তুমি ছাড়া এসব কিছু অর্থহীন; একাকীত্বের অন্ধকারে নিমজ্জিত। 

ছবিটা যথাস্থানে নামিয়ে রেখে সাজগোজ শুরু করে বৃষ্টি।

পরদিন দুটি শবদেহের সৎকার হয়... একটি অরিত্রের; যে দুদিন আগে ডিউটি চলাকালীন উড়িষ্যা উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রে ওঠা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জাহাজ থেকে রহস্যজনকভাবে সমুদ্রে পড়ে প্রাণ হারায়। অন্যটি ওর স্ত্রী বৃষ্টির; যে স্বেচ্ছায় ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...