শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭

সান্ত্বনা - সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

জোড়হাত করে উদীয়মান সূর্যের দিকে তাকিয়ে থেকে অখিলেশ জানা রোজকার মতো বিড়বিড় করে বলতে থাকেন –”ওঁ জবাকুসুম......।” ভোরে ছাদে উঠে সূর্য প্রণাম সেরে প্রাত্যহিক কাজ শুরু করেন তিনি । এই নিয়ে রোজ ঝামেলা হয় স্ত্রীর সঙ্গে । আজও তার ব্যতিক্রম হয় না । 

অখিলেশ জানাকে নেমে আসতে দেখেই কণিকা খড়খড়ে গলায় উগড়ে দেন রোজকার বলা সেই একই কথা – “সূর্যপ্রণাম সেরে এতক্ষণে বাবুর আগমন ঘটলো ? এতো সূর্যপ্রণামের ঘটা কেন বাপু ? তোমার অতি ভক্তি দেখে সূর্যের তো কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ । তা নয় বাবু এখন আকাশে উঠে দিনভর ছড়ি ঘোরাতে থাকবেন সকলের মাথার ওপর ।” 

“আহঃ কণিকা । রোজ রোজ এককথা......” 

অখিলেশ জানার মৃদু প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা মাঝপথে বিফলে গেল । তাঁকে থামিয়ে দিয়ে কণিকা ঝঙ্কার দিয়ে ওঠেন – “লোকে বলে সূর্যপ্রণাম করলে নাকি উৎকৃষ্ট.....”

“আহঃ ,তুমি থামবে ?” অখিলেশ জানা বিরক্ত হন ।

“কি ভেবেছো তুমি, অ্যাঁ ? আমাকে থামিয়ে দিলেই কি সুখ্যাতির মগডালে চেপে বসবে ভেবেছো ? এই নিরপত্তাহীন জীবন কাটাতে কাটাতে আমি অতিষ্ট হয়ে পড়েছি । যতই ভাবি এবার নিশ্চয়ই ব্যবসাটার পতন রোধ করতে পারবে ঈশ্বরের কৃপায় । কিন্তু তেমন লক্ষণই যে দেখছি না । বরং এই পতন দেখতে দেখতেই একদিন মৃত মানুষে তালিকায় নাম লেখাতে হবে আমাকে ।” 

বড় দুঃখে কথাকয়টা বলে নিজের শাড়ীর ছেঁড়া আঁচলে চোখ মোছেন কণিকা । অখিলেশ জানার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে দেখে । সত্যিই তো । এতো চেষ্টা করেও ব্যবসাটাকে কিছুতেই দাঁড় করাতে পারছেন না । অথচ বিমান, সুবিমল – ওরা কিন্তু দিব্যি দাঁড়িয়ে গিয়েছে এই একই ব্যবসায় । কণিকা ঠিকই বলেছে । যতই পূজোপার্বণ নিয়ে মেতে থাকি না কেন আমাকে যে এই বেহাল অবস্থাতেই আমৃত্যু থেকে যেতে হবে । 

ধীর পদক্ষেপে মূর্ত প্রতিমার মতো দাঁড়িয়ে থাকা ক্রন্দনরত কণিকার কছে এসে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে ধীর গলায় বলেন – “ভাগ্যকে মেনে নাও কণিকা । এই জীবনে হলো না ঠিকই তবে পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তাহলে দেখে নিও আমাদের এই সাধনা বিফলে যায়নি ।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...