বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

রূপান্তর ---- সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ধবধবে ফর্সা, টান টান শরীর, চোখে চিরসঙ্গী চশমাটির সাথে সাদা হাফ সার্ট আর ফুলপ্যান্ট পরিহিত পঙ্চাশোর্ধ দীপন সাইকেল নিয়ে ঢুকলো স্কুলে ।স্কুল মাস্টারিতে তার কোন কৃপণতা না থাকলেও ছাত্র ছাত্রীদের কাছে কিপটে দীপন বলে পরিচিত ।বাজারে প্রয়োজনে অধিক জিনিস তাকে কেউ নিতে দেখে নি কোনদিন ।তার দুই ছেলেই হেঁটে হেঁটে স্কুলে আসে ।সাইকেল চাইলে বাবা বলেন, এখনো সময় হয় নি, আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখো।সে কথা শুনে ঋক আর ঋজু মন খারাপ করে থাকে ।

বন্ধুরা হাসে ।ওরা সেখানে দাঁড়ায় না ।এগিয়ে যায় নিজের ক্লাসের দিকে ।ওরা অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ।বন্ধুদের মতো ওদের হাতে মোবাইল নেই ।টিফিন ক্যান্টিনে খাওয়ার না খেয়ে ওরা মার দেয়া খাবার খায় ।প্রথম দিকে কষ্ট হলেও এখন ওরা জানে মানুষ না হলে, ভালো লেখাপড়া করে বড় না হলে এই কষ্ট যাবার নয় ।

সেদিন পরীক্ষার পর বাবার সাথে ঋক আর ঋজু চিড়িয়াখানা ঘুরতে এসেছিল ।খুব মজা করেছে ওরা ।ট্রেনে আসার সময়ে অনেক কিছু খেয়েছিল আর এখন সুন্দর হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে ট্রেনে এসে বসেছে ।মনে ভালোলাগা নিয়ে দুই ভাই চোখ রাখে ট্রেনের বাইরে প্ল্যাটফর্মের দিকে ।দীপন তখন খবরের কাগজ পড়তে ব্যস্ত ।প্রচুর ভীড়ের মাঝে ওদের চোখ এক অন্ধ ভিখারিনীর দিকে ।হাতে লাঠিটা নিয়ে সে এগিয়ে চলে তার সাথে এগোতে থাকে সরল ও নিস্পাপ দুজোড়া চোখও। সাহস ঋক বাবাকে বলে, দুটো টাকা দাও না, ভিক্ষা দেব ।
-কি দিবি? দীপনের চোখে বিরক্তি ।
-ভিক্ষা ঐদেখো . . 
বাচ্চাদের চোখ দুটিকে অনুসরন করে দীপনের চোখ যায় ভিখারিনীর দিকে ।আলুথালু বেশ ও কেশ ।পরনে ময়লা , পুরনো শতছিন্ন একখান শাড়ি ।বাঁ হাতে একখানা লাঠি ডানহাতে বাটি, যা মাধুকরী একমাত্র সম্বল ।পকেটে হাত ঢুকিয়ে দুটো কয়েন বের করে ছেলেদের হাতে দিতে ওরা বাটিতে দিয়ে খুশি মনে বসে ।আবারও ওরা চোখ রাখে বাইরে, দীপন অন্যমনস্ক হয়ে যায় ।

ঠং শব্দে চোখ যায় ভিখারিনীর দিকে ।হাতের লাঠিটা ঠং করে পড়লেও গড়িয়ে দূরে চলে গেছে খানিকটা ।ব্যস্ত মানুষের কারোর সময় নেই লাঠিটা তুলে দেওয়ার ।দীপনের চোখ আটকে গেলো ঘটনার উপর ।দেখে সেই মহিলা হাতড়ে বেড়াচ্ছে লাঠিটাকে।আশ্রয়টাকে আঁকড়ে ধরার প্রবল আকুলতা তার ।দীপনের চমক ভাঙে, ছেলেদের বলে, আমি আসছি, দিদিটা সত্যিই অন্ধ রে ।
দীপন নেমে আসে ট্রেন থেকে ।অনায়াসে উঠিয়ে দেয় লাঠিটা ভিখারিনীর হাতে ।পার্স থেকে একটি পঙ্চাশটাকার নোট দিয়ে বলে, দিদি এটা রাখুন ।

বাবার এই আকস্মিক পরিবর্তনে ঋক ও ঋজু আনন্দিত ও বিস্মিত ।ঋক ফিসফিস করে বলে ঋজু কে , আমাদের বাবা কিপটে নয় রে ভাই ।
-তাহলে কি? 
-মিতব্যয়ী ।ঋজুর সর্গবে উত্তর দেয় ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...