বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

বদল ---- চন্দ্রিমা গুপ্ত

দ্বিরাগমন থেকে ফিরে আসার পর দিনই প্রাতরাশের টেবিলে শীলার নজর এড়ালোনা, ছেলের বউ রিন্কুর ডান হাতে কিছু নেই বা হাতে ফ্যান্সি লোহার বালা যেটা শীলাই পছন্দ করে কিনেছে:গয়নাগাটি সব খুলে রেখেছে মেয়েটা!কপালটাও খালি ,জিন্স টি সার্ট পরে কাঁধে লেদার ব্যাগ ঝুলিয়ে একেবারে কুমারী মেয়ে!মেয়েটাকে বলতে হবে এখনি এভাবে দেখলে পাড়ার লোকে নিন্দে করবে:শীলা যে নিবিড়ভাবে রিঙ্কুকে লক্ষ্য করে যাচ্ছে ওর সেদিকে খেয়াল নেই:বহু রকমের ব্রেকফাস্ট আইটেম ছেড়ে ফলের রসের গ্লাসটা তুলে নিল ও, এক চুমুকে প্রায় শেষ করে উঠে দাড়ালো দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলল,"আমি বেরোচ্ছি,আজ একটা সিরিয়াস অপারেশন আছে সিনিয়রদের সঙ্গে থাকতে হবে,তাড়াতাড়ি ফিরব,বাড়ি এসে লাঞ্চ করব:" শীলা হাত দেখালো:দেখল কিনা কে জানে!গাইনো সার্জেন বৌমা এগুলি তো মানিয়ে নিতেই হবে মনে,মনে ভাবলো শীলা:
সারাদিন কাজ করতে করতে ভাবতে থাকলো শীলা কথাটা বলতেই হবে কিন্তু কিভাবে বলবে কিভাবে নেবে মেয়েটা:
দখ্যিন কলকাতার একটা অভিজাত পাড়ার বহু দিনের বাসিন্দা শীলারা :এই বছর এখানকার মহিলা ক্লাবের সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছে ও,নির্বাচনে জিতেই পদটা পাওয়া তবু অনেকের পছন্দ হয়নি ব্যাপারটা,শীলর কানে আসছে নানা নেতিবাচক কথা যদিও শীলা এসবে পাত্তা দেয় না,ওর মতে ভালো কাজ করে দেখাতে পারলে কারোর কিছু বলার থাকবে না কিন্তু এখন বেশ চিন্তায় পরেছে ও,রিঙ্কুকে এভাবে দেখলে সমালোচনার ঝড় উঠবে:এই অভিজাত পাড়াতেও কিছু মহিলা আছে যারা বাইরে থেকে আধুনিক কিন্তু মানসিকতায় পুরাতনী আমেজ বয়ে বেড়াচ্ছে!রিঙ্কু মেয়েটা পরিছন্ন মানসিকতার,বুদ্ধিমতিও ;শীলা বেশ ভালো বেসে ফেলেছে এই কদিনেই মেয়েটাকে:পছন্দের ব্যাপারে নিজের ছেলের তারিফ করতেই হয়:ওকে কেউ কিছু বললে শীলা নিতে পারবে না:কথাটা বললে মেয়েটা কষ্ট পাবে না তো !নানানটা ভাবতে ভাবতে সময় কেটে গেল:
দুপুরে খেতে খেতে কথাটা বলেই ফেলল শীলা,রিঙ্কু শুনলো ওকে একটু বউ বউ দেখায় এমন করে সেজে থাকতে বলছে শ্বাশুড়ি মা:রিঙ্কু চুপ করে থাকলো:শ্বাশুরিমাকে ওর খুব ভালো লাগে,অন্তত বন্ধুভাবাপন্ন যে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই:
রবিবার শীলা মহিলা ক্লাবের সবাইকে দুপুরে নিমন্ত্রণ করেছে:যথা সময়ে হই হই করে সব এসে হাজির:ঘরে ঢুকেই বৌমাকে দেখার জন্যে ব্যস্ততা!শীলা একফাঁকে গিয়ে রিঙ্কুকে ডেকে এলো:ও ঘরে ঢুকতেই সবাই অবাক,এ কি সাজ মেয়েটার!কপালে ইয়া বড় সিদুরের ফোঁটা লাল পাড়ের শাড়ি পরা,মাথায় ঘোমটা!এই প্রজন্মের এক ডাক্তারনী মেয়ের একি সাজ!প্রায় সমস্বরে বলে উঠলো ওরা আমাদের বৌমার সাজ পরিবর্তন করতে হবে এভাবে আটপৌরে সাজে একদম গাইয়া লাগছে:রিঙ্কু দেখে নিয়েছে শ্বাশুড়ির বান্ধবীদের পরনে আধুনিক পোশাক:রিঙ্কু সকালের তোলা সেল্ফিটা দেখিয়ে বলল এটা চলবে?একজন সজোরে বলে উঠলো" একদম এটাই":অন্যদেরও একমত: ...
রিঙ্কু শিলার দিকে তাকিয়ে বলল," এভাবেই পরিবর্তন আনতে হয় মা" তারপর হেসে উঠলো ,শীলা রিঙ্কুকে জড়িয়ে ধরলো:যদিও ওরা সবাই চলে যাওয়ার পরে কথাটা বলেছিল রিঙ্কু । 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...