বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

নারী – আমাদের জীবনের রস এবং মাধুর্যের একমাত্র উৎস --- সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

সিন্ধুসভ্যতার যুগ থেকে আধুনিক ভারতে মাতৃশক্তি পূজিত হয়ে চলেছে । আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগেও ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে ও সমস্ত আর্য অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে ধর্মের একটি প্রধান অঙ্গ ছিলো শক্তি উৎসরূপে মাতৃদেবতার পূজা । একসময়ে আদিম মানবের ভাবনায় এসেছিলো , শুধুমাত্র নারীর বুকেই স্তন্যক্ষীরধারা প্রবাহিত হয় কেন ? নারীর মধ্য থেকেই নতুন জীবনের সূচনা হয় কেন ? জন্ম নেয় এক নতুন মানব ! আদিম মানুষেরা ছিলো প্রকৃতির খেলার বস্তু । প্রকৃতির খেয়াল এবং প্রকৃতির দুর্যোগকে তারা ভয় পেত । তখনকার সেই রুক্ষ, রসহীন, মাধুর্যহীন জীবনে রস ও মাধুর্যের একমাত্র উৎস ছিল নারী । তারা নারীর কাছে পেতো স্নেহ, মমতা, মানসিক ও শারীরিক আশ্রয় এবং আনন্দ । তারপর আদিম সমাজ যখন কৃষি নির্ভর হয়ে পড়লো তখন বীজবপন থেকে শস্য-সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে নারীই ছিলো অগ্রণী । এতে নারী হয়ে উঠেছিলো পরিবার তথা গোষ্ঠীর প্রধান । যখন বিবাহ সম্পর্ক প্রবর্তিত ও স্বীকৃত হয়নি সমাজে তখন স্ত্রীপ্রাধান্য ছিলো । নারী ছিলো স্বাধীন । মায়ের পরিচয়েই সন্তানের পরিচয় চিহ্নিত হতো । বিবাহ সম্পর্ক প্রবর্তিত ও স্বীকৃত হবার পর মানব সমাজে ক্রমে ক্রমে পুরুষপ্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে । ধনসম্পদ পুরুষের অধিকারে আসে । পুরুষের সম্পত্তিরূপে পরিগণিত হতে থাকে নারী ।

নারী তারপর থেকে ক্রমেই কোণঠাসা হতে থাকে এই পুরুষপ্রাধান্য সমাজে । তাঁরা নানা ভাবে লাঞ্ছিত হতে থাকে পুরুষের কাছে । বর্তমানে সেই নৃশংসতার বহর প্রতিনিয়ত চূড়ান্ত ভয়াবহতার বাঁধ ভাঙছে । বর্তমানে নারীরা বাড়ির বাইরে পা রেখেছে । আজকের নারী লিঙ্গভিত্তিক শ্রম বিভাজনের পরিধি ভেঙে বেরিয়ে বেরিয়ে এসেছেন শুধুমাত্র সংসার এবং পেটের দায়ে । শিক্ষিত মহিলা কম্যান্ডো , পাইলট, মহাকাশচারী , ইঞ্জিনিয়ার , ডাক্তার , জজ ম্যাজিস্ট্রেট , স্কুল-কলেজের শিক্ষিকা , রাজনৈতিক নেত্রী ইত্যাদি হয়েছেন । এই নারীই স্টেশনে এবং ট্রেনে হকারি করছেন , বাজারে সবজি বিক্রি করছেন , গৃপরিচারিকা , রাঁধুনি ইত্যাদি পেশা বেছে নিয়ে নিজেদের সংসার সামলাচ্ছেন এবং সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ তৈরি করছেন ।

এতো কিছুর পরও লিঙ্গবৈষম্যের ফেরে কর্মক্ষেত্রে বা অন্য কোথাও নারীর পিছিয়ে পড়া চোখে পড়ছে বর্তমান বিশ্বে । সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে প্রকাশ পায় যে , কর্মক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ কম বেতন পান । তবে বর্তমানে অনেক নারী সমস্ত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও মাথা তুলে দাঁড়ানোর লড়াই ছাড়ছেন না । এরাই আজকাল বাল্যবিবাহ রুখে চলেছেন যা হয়তো নারী দিবসের এক আন্তরিক পাওয়া । 

আজ এই নারী দিবস পালন করার সাথেসাথে আমাদের হয়ে উঠতে হবে একজন প্রকৃত মানুষ । ঝেড়ে ফেলতে হবে নারী পুরুষের বাহ্যিক আবরণ । নারী এবং পুরুষ - উভয়ের মধ্যে বিশ্বাস থাকাটাও খুবই জরুরী । সেই বিশ্বাসেই নারীকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার বস্তু বলে মনে করবে না কোনো পুরুষ । পণ প্রথা নামক সামাজিক কুসংস্কারের বলি হয়ে প্রাণ দেবে না কোনো নারী । বাসে ট্রেনে ট্রামে পুরুষের কদর্য ইঙ্গিত এবং ব্যবহারের সন্মুখীন হতে হবে না নারীকে । নারী বাজারে বিকোবে না সস্তার পণ্য হিসেবে । বন্ধ হোক বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা । আমরা ভুলে যাবো কেন এই নারীই কিন্ত পুরুষের স্নেহ, মমতা, মানসিক ও শারীরিক আশ্রয় এবং আনন্দের আঁধার । নারীই আমাদের সমাজ ও জীবনের শ্রেষ্ঠ স্থপতি । 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...