শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬

আধুনিকা -- জাকিয়া জেসমিন যূথী

রবি সন্ধে । 
দু বাটি মুড়ি মাখা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন সরমা। মিলি আর তুতানের হাতে ধরিয়ে দিলেন বাটি দুটো , " হ্যাঁ রে ? বিজয় কে ডাকবো কাল ? পাকা কথা বলে নিলে হয়না ? " 
" উম , ডাকতে পারো , কাল হাফ ডে আমার , চাপ নেই , কিন্তু তোমার পেয়ারের মেয়ে কি বলছেন ? " আড়চোখে মিলির দিকে তাকায় তুতান । 
মিলি -- অর্থাৎ মল্লিকা সেন । যাদবপুর ইউনিভার্সিটি । বাংলা স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষ , ... আর তুতান -- অর্থাৎ তীর্থঙ্কর সেন । প্রেসিডেন্সী ইউনিভার্সিটি । সোশিওলজি ফার্স্ট ইয়ার । 
পিঠোপিঠি ভাইবোন । সর্বক্ষণের খুনসুটির সঙ্গী , আবার বেষ্ট ফ্রেন্ডও । 
-
গত হপ্তায় কলেজ থেকে ফিরে বোমাটা ফাটিয়েছিল মিলিই । 
" এই যে শুনছো ? " সরমা তখন সন্ধে সাতটার সিরিয়ালে বুঁদ । কানে যায়নি কথাটা । পরের বার একই প্রশ্ন আসে , কিন্তু এবারে ডেসিবেল টা আরও খানিক চড়ায় মিলি ... " উফফ !! মা ? শুনছো ? "
-
রাতে ডিনার টেবিলে একই কথা আবার দর্শায় মিলি । 
থম্থমে পরিবেশে খাওয়া দাওয়া সারেন সবাই । খাওয়ার পর অভ্যাস বশত একবার রাতের নিউজ শুনতে টিভির সামনে বসেন বাবা , কিন্তু সেদিন আর বসলেন না , তুতানের প্রশ্নের উত্তরে ... " আজকের সেরা নিউজ দিয়েছে তোর দিদি " বলে ঘরে ঢুকে যান ।
:
এ যুগের মেয়ে মিলি। নিজের মত করে থাকতেই ভালোবাসে। ক্লাব ডান্স তার ভীষণ ভালো লাগে। ক্লাবে যখন ডান্স করে তখন সবাই জাস্ট মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে। এটায় ও আরও আনন্দ পায়। বিশেষ করে ছেলেদের হাততালি ওর ডান্সের রিদম বাড়িয়ে দেয়। আর সেখানে গিয়েই পরিচয় রোশান এর সাথে। রোশান! রত্নদীপ রয়। ও প্রেজেন্ট থাকলে মিলি আর কারোকে পাত্তা দেয় না। ওর সমস্ত মনযোগ ঐ একজনকে ঘিরে তখন। এভাবেই দুজনের কাছে আসা। এখন ওরা একসাথে থাকতে চায়। কিন্তু রোশান বলেছে ওর ফ্যামিলি খুব কনজার্ভেটিভ। বাড়ির বউ কাজ করবে বেশ। কিন্তু ক্লাবে ডান্স! নো ওয়ে! 
.
ওদিকে রোশান খাঁটি ব্রাক্ষণ ঘরে জন্মায় নি। এ কি তার দোষ? কিন্তু মিলির বাবা যে খাঁটি ব্রাহ্মণ ছাড়া মেয়েকে পাত্রস্থই করবেন না। তাহলে উপায়? রত্নদীপ শিক্ষায় কোন অংশে কম? ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পাত্র কি কম কথা? নিজের একার ফার্ম। মাসে লাখের উপরে কামায়। নিজেদের ফ্লাট। পাত্র হিসেবে সে কম কিসে! 
.
অনেক ভেবেচিন্তে দুজনে মিলে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়েছে। মিলি ওর নিজের শখ ছাড়তে পারবে না। বিয়ের জন্য যদি নিজেকে আমূল পালটে ফেলতে হয়, তবে ও বিয়ের প্রয়োজনই নেই। কিন্তু রোশানকেও ওর চাই। তেমনি মিলিকেও চাই রোশানের। কিন্তু ফ্যামিলিকেও ফেলতে পারছে না। কী করা! কী করা! অবশেষে সিদ্ধান্তে আসা। জানাতে হবে ফ্যামিলিকে। আর এরকমটা আকছার হচ্ছে! সো, প্রবলেম কোথায়?
.
প্রথমে তো শুনে মিলির মায়ের আক্কেল গুড়ুম। সিরিয়াল দেখা মাথায় উঠেছে। এর পরে বাবাও থ মেরে গেছেন একদম। কিন্তু এ যুগের ছেলে-মেয়ে! এদের চিন্তাভাবনার সাথে তারা পারবেন কেন? আর একমাত্র মেয়ে বলে কথা! সমাজ যখন মেনে নিচ্ছে তখন তাদের উদার হতে বাঁধা কোথায়!
.
হ্যাঁ, রোশান আর মিলির সিদ্ধান্তটা উভয় ফ্যামিলিই মেনে নিয়েছে শেষ পর্যন্ত। বছরের পর বছর এক সাথে থাকবার জন্য চুক্তিপত্রে সই? বাব্বাহ! ওর চেয়ে শর্তহীন একসাথে থাকবার সিদ্ধান্তটা কিছুটা হলেও প্রশান্তি দেয়। একসাথে কিছুদিন থাকবার পরে যদি মনে হয় দুজনে আরও বহুবছর একসাথে কাটিয়ে দিতেও প্রবলেম হবে না, তখন না হয় সাইন করা যাবে।
.
সে জন্যেই বিজয়ের ডাক পড়েছে। তার ফ্লাটেই কাল থেকে শুরু হবে রোশান-মিলির সুখের সংসার
। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...