শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

পবিত্র-অপবিত্র - সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

সৌমেন রাত্রের শেষ লোকালটায় চেপে ফিরছেন বৈকুণ্ঠপুর থেকে । গিয়েছিলেন এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে । ট্রেন থেকে নামার পর পরই স্ত্রী মানালির কথা মনে পড়লো । ইস্‌, অনেক রাত হয়ে গেল । বেচারী একলা রয়েছে বাড়িতে । মাঝবয়সে একটাই ভয় । হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে কেউ একজন নেই যে ডাক্তার ডাকতে ছুটবে ।
শহরের বিশাল খেলার মাঠটার পাশ দিয়ে আসার সময় চাপা গোঙ্গানির আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন । আওয়াজটা ভেসে আসছে অন্ধকারাচ্ছন্ন মাঠের বুক থেকে । কেউ বিপদে পড়েনি তো ! দ্রুত চলে এলেন সেই গোঙ্গানি লক্ষ্য করে । এসে ছোট্ট পকেট টর্চের আলোয় দেখলেন বছর পনেরোর একটি মেয়ে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় পড়ে থেকে ছটফট করছে নিদারুণ যন্ত্রণায় । দ্রুত ঝোলা থেকে জলের বোতল বের করে মেয়েটির মুখের সামনে ধরে বললেন - জলটুকু খেয়ে নাও মা ।
মেয়েটি ঐ অবস্থাতেই ছিটকে সরে গিয়ে ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো – তোমাদের পায়ে পড়ি, আমাকে ছেড়ে দাও তোমরা ।
নিঃসন্তান সৌমেনের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো । আহা রে, না জানি কি পাশবিক অত্যাচারই না হয়েছে কচি মেয়েটির ওপর । ধর্ষিতা মেয়েটিকে গুছিয়ে নেবার সময় দিয়ে গলায় সহানুভূতি মিশিয়ে বললেন - তোমার বাড়ি কোথায় মা ?
- আমি রাস্তায় থাকি এক পাতানো কাকির সাথে । মা-বাবা কেউ নেই । বোঝা গেল সামান্য হলেও মেয়েটির ভয় কেটেছে ।
- ভয় পেও না । আমি তোমার বাবার মতো । যারা তোমার ক্ষতি করেছে তাদের চেনো ?
- চিনি । বড়লোকের দুটো বখাটে ছেলে । ঘুমিয়েছিলাম । কাকীমার পাশ থেকে তুলে এনেছে আমাকে । ওইখানেই থাকে । ওদের নাম বলে দিলে আমাকে জানে খতম করে দেবে বলেছে ।
- তোমার কোনো ভয় নেই মা । থাক, ওদের নাম বলতে হবে না । এখন চলো তো আমার সাথে ।
- কোথায় ?
- আমার বাড়িতে ।
- কিন্তু আমি যে অপবিত্র হয়ে গিয়েছি বাবা ! ওরা যে আমাকে...... কথা অসমাপ্ত রেখে মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ে ।
- দূর বোকা মেয়ে । নর্দমার কাদা গায়ে লাগলে কেউ কি অপবিত্র হয়ে যায় ? বাড়িতে গিয়ে ভালো করে স্নান করে নিও । দেখবে শরীরে লেগে থাকা সব নোংরা ধুয়েমুছে গিয়ে একেবারে পবিত্র হয়ে গিয়েছো ।
- তোমরা আমাকে মেনে নিতে পারবে ? তোমাদের সমাজ ?
সৌমেনের গলা বুজে এলো আবেগে - ওরে, তুই আমাকে বাবা বলে ডেকেছিস তাতেই আমি ধন্য হয়েছি । সমাজের কথা বলছিস ? যে-সমাজ মেয়েদের আব্রু রক্ষা করতে পারে না, যে-সমাজ নিগৃহীতাকে দোষারোপ করে সেই সমাজকে ধিক্কার জানাই । শোন মেয়ে, তোর এই বাবা যতদিন বেঁচে থাকবে তোকে বুক দিয়ে আগলে রাখবে । এবার ওঠ । বাড়ি যেতে হবে না ? তোর মা বসে যে রয়েছেন আমাদের ফেরার পথ চেয়ে । 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...