সামন্তদের বাড়ির কাজ শেষ করতে অনেকটা রাত হয়ে গেল মালতীর। বিকেল থেকেই আকাশের মুখ ভার হয়ে আছে। সামন্তদের বাড়িতে থেকে বেরিয়ে নিজের ঝুপড়ির দিকে দু’কদম এগোতে না এগোতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। রাস্তাটা প্রায় সুনসান । তবুও ভালো রাস্তার আলোগুলো জ্বলছে। মালতী জোর কদমে পা চালালো বস্তীর দিকে।
বস্তীর গলিটা মোটেও ভালো নয়। মাধব মিস্ত্রীকে ক’দিন ধরেই লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতে দেখছে। আজ বিকেলে যখন কাজে আসছিলো মাধব বেপরোয়া হয়ে ওর শাড়ীর আঁচল ধরছিলো । নিজেকে একঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে ঢুকে পড়েছিলো বোসদের বাড়িতে। ওখান থেকে কাজ শেষ করে গিয়ে ঢুকেছিলো সামন্তদের বাড়ী ।
বস্তীর গলিতে পা রাখতেই রাস্তার আলোগুলো নিভে গেল ঝপ্ করে। মালতী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিলো কয়েক পলের জন্য। মাধব মিস্ত্রী নেই তো কাছে পিঠে! গলিটা ডুবে আছে নিকষ আঁধারে। যেন নরকেরও নরক তস্য গলি। ঝুপড়িতে কচিকাঁছা ছেলেমেয়ে দুটো ওর পথ চেয়ে বসে আছে। আহা রে, বাপে খ্যাদানো ছেলেমেয়েদুটোকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিদিন প্রাণপাত করে খাটে। তবুও ছাই তেমন ভালো রাখতে পারছে কোথায়? আসার সময় দেখে এসেছিলো ছেলেটার জ্বর হয়েছে।
ভেবেছিলো তাড়াতাড়ি ফিরে এসে পাড়ার বুড়ো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে । তার আর উপায় রইলো না। এই বৃষ্টিতে ভিজলে নির্ঘাত নিউমেনিয়া বাঁধিয়ে বসবে।
ভাবনায় ডুবে থেকে গলির মাঝবরাবর চলে যে এসেছে খেয়াল করেনি। আর মাত্র হাত পঁচিশেক পথ বাকী।
ভাবনায় ডুবে থেকে গলির মাঝবরাবর চলে যে এসেছে খেয়াল করেনি। আর মাত্র হাত পঁচিশেক পথ বাকী।
মালতী প্রায় ছুটতে শুরু করলো। তখনই পেছন থেকে কোমরের কাছটায় কারো হাত পড়লো। মালতী ছিটকে সরে যেতে গিয়ে তলিয়ে গেল গাঢ় অন্ধকারে। তখনই কে যেন ওর মুখে গুঁজে দিলো রুমাল। দ্রুত হাতে বেঁধে দিলো হাত-পা। মালতী হাজার চেষ্টা করেও চেঁচাতে পারছে না। অন্ধকার গলি থেকে তস্য গলিতে চালান হয়ে যেতে যেতেই শুনলো কে যেন চাপা গলায় বললো, নিয়ে আয় শিবের থানের পাশেই ফাঁকা মাঠটায়।
মালতী কিছুক্ষণের মধ্যেই টের পেলো শিবের থানে নয়, চালান হয়ে যাচ্ছে বড় রাস্তার দিকে। আসার সময় বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলো একটা ছোট্ট মোটরগাড়ি। অসহায় মালতী হাত ফেরতা হয়ে এই অন্ধকার গলি থেকে মিলিয়ে গেল সমাজের আরও অন্ধকার কোনো একটা গলিতে। মিলিয়ে যাবার আগে নিজের অসহায় কচিকাঁচাদুটোকে সঁপে দিয়ে গেল ঈশ্বরের হাতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন