সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

একমুঠো বাতাস ~ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

ছেলেটা কোথায় চলে গেছে জানা গেল না। চলে গেছে? নাকি গুম হয়ে গেছে? সেলফোনটা পড়্বে রয়েছে পড়ার টেবিলের ওপর। হয়তো জেনেবুঝেই ফেলে গেছে। পাছে ধরা পড়ে যায় সেই ভয়ে! নয়তো সাথে নিয়ে যাবার সুযোগ পায়নি! অসহায় বিপ্রদাসবাবু কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। মা হৈময়ন্তী কেঁদে কেঁদে চোখদুটো ক্রমাগত ফুলিয়ে চলেছেন। এক মাত্র সন্তান। সে যদি না বলে কয়ে কোথাও চলে যায় তাহলে কান্না ছাড়া আর কিই বা পড়ে থাকে হাতে?
ক’মাস ধরেই গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করছিলো কতগুলো ছোকরার সাথে। মাঝখানে দু-তিন রাত ঘরেও ফেরেনি। ফিরেছিলো পরদিন সকালে। উদ্ভ্রান্ত চেহারায়। বিপ্রদাসের বকাঝকা আর হৈমবতীর কান্নাকাটিতে এতটুকুও পালটায়নি ছেলে। তারপর গত সন্ধ্যে থেকে একেবারে বেপাত্তা!
দিন গড়ায়। মাস গড়ায়। বছর গড়িয়ে যায়। ছেলে ফেরে না। বছর ঘুরে ঘুরে মাঝবয়সী বিপ্রদাসবাবু বৃদ্ধ হলেন। চোখের জল মুছতে মুছতে হৈমবতী দৃষ্টি খুইয়ে অন্ধ জবুথবু হয়ে পড়েছেন। সেই যে বেপাত্তা হলো আর কোনো খবরই পাওয়া গেল না ছেলের। যেন একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল পৃথিবীর বুক থেকে!
ঠিক বারো বছরের মাথায় ছেলের শ্রাদ্ধশান্তির ব্যবস্থা হলো। শাস্ত্রমতে তেমনটাই যে করতে হয়। আগামীকাল সকালে কাজ হবে। দুপুরের সামান্য কিছু মুখে দিয়ে বিপ্রদাসবাবু পূজার সামগ্রীগুলো গুছিয়ে রাখতে বসেছেন। তখনই পিয়োন এসে লিফাফা বন্দী একটা চিঠি দিয়ে গেল। লিফাফার ওপর শুধু তাঁরই নাম ঠিকানা লেখা আছে। কে পাঠিয়েছে কিছুই লেখা নেই। জানতে পারছেন না কে লিখেছে। দ্রুত হাতে লিফাফা খুলে বের করলেন একটুকরো কাগজ। কোনো সম্বোধন নেই। নেই কোনো নাম। শুধু লেখা আছে ‘আমি আছি, বেঁচেই আছি’। গলা তুলেই পড়লেন চিঠিটা।
শুনেই হৈমবতী আর্তনাদ করে উঠলেন, কে? কে লিখেছে? মানাই?
বিপ্রদাসবাবু জবাব দিতে না পেরে একমুঠো বাতাসের জন্য হাঁকপাঁক করতে করতে আবার মন দিলেন পূজোর সামগ্রী গোছানোয়। পুরুৎ বলে গেছেন সকাল সকাল চলে আসবেন। অনেক সময় লাগবে শ্রাদ্ধশান্তির কাজে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...