বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫

নিছক গল্প নাকি ইতিহাস ~ অরূপজ্যোতি ভট্টাচার্য


কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুরের দিকে প্রায় 20 Km গেলে বেলপুকুর বটতলা বলে একটা বাস স্টপ আসে। সেখান থেকে 8 km ভেতরে গেলে একটা ভাঙ্গা মন্দির আছে। সেটা নাকি চৈতন্যদেবের মামার বাড়ি। কিছুদিন আগে বাংলার রূপ দেখতে আমার বেলপুকুর যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই সুত্রে দেখে এলাম চৈতন্যদেবের মাতুল ভিটে। গ্রামের রাস্তার সরু পথ ধরে একটা খালের ধার দিয়ে হাটতে হাটতে গন্ধবহের মিষ্টি সুরে মন ভরে যাচ্ছিল। যদিও গরমের দাবদাহ তখনও ঝলসে দিচ্ছে গাছপাল। তবে বাঁশ গাছের ছায়া আমায় আড়াল করে রাখছিল সেই রোদের তেজ থেকে। চমকে উঠলাম এক স্থানীয় লোকের কথায়। সেই খাল ই নাকি আদি গঙ্গা। বর্তমান গঙ্গার তটভূমি কৃষ্ণনগর আর নবদ্বীপ কে দুই পাড়ে রেখে বয়ে চলেছে। আর সেই খাল টা আদি গঙ্গা হলে নবদ্বীপ আর শান্তিপুর হয় গঙ্গার একই দিকে। স্থানীয় লোকের কথায় এই তথ্যের নাকি লিখিত প্রমান ও আছে। যদিও আমার স্বল্প লেখাপড়ায় সেরকম কোনো তথ্য আমি বইতে পড়িনি।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে হঠাত মনে পরে গেল চৈতন্যদেবের সেই গণ আন্দোলন। চৈতন্য চরিতামৃত যেটুকু মনে পরে তাতে ঘটনাটা এইরকম। মুসলিম শাসক প্রবল দাপটে ছিনিয়ে নিচ্ছে গরীব প্রজাদের ধন মান আর সাথে আরো অনেক কিছুই। চৈতন্যদেব পরামর্শ দিলেন হরিনাম করো। ঢোল করতাল বাজিয়ে নগর পরিভ্রমণ। তরবারির আঘাতের প্রতিবাদ কৃষ্ণনাম এ। চৈতন্যদেবের নির্দেশে একদল কিত্তনিয়া শান্তিপুর থেকে, আর এক দল নবদ্বীপ থেকে, আর একদল কৃষ্ণনগর থেকে শুরু করলো নগর পরিভ্রমন। গন্তব্যস্থল গাজী সাহেবের প্রাসাদ। না কোনো রক্তপাত নয়। কোনো প্রহার নয়। শুধু কৃষ্ণনাম। ভয় পেয়ে গেলেন গাজিসাহেব। বসলেন আলোচনায়। ভারতের ইতিহাসে সেটাই বোধহয় প্রথম অসহযোগ আন্দোলন। মহাত্মা গান্ধীর প্রায় চারশ বছর আগে।
সেই সাথে মিলে গেল আর একটা অঙ্কের হিসেব। নবদ্বীপ আর শান্তিপুর তাহলে একসময় একই দিকে ছিল। তাহলে সেই খাল ই ছিল আদি গঙ্গা। এতবড় একটা ইতিহাস এর জীবন্ত নিদর্শন দেখে মনে পড়ে গেল -...... দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...