রবিবার, ২ জুলাই, ২০১৭

প্রায়শ্চিত্ত __ লীনা রায়চৌধুরী

উত্তরের হাওয়া জাঁকিয়ে বসার দিন গুনছে।বাতাসের মতই এলোমেলো মন।কানাঘুষো শুনছি,সে আসবে।কাল বাবা এক প্রত্যাশিত ফোন আসার পর ঘোষণা করে দিল-সেই আকাঙ্খিত ব্যক্তি অর্থাৎ আমার বাবার বাল্যবন্ধু সুধাংশু কাকুর মেয়ে সায়ন কাল আসবে আমাদের বাড়িতে ।একরাশ খুশির হাওয়া নিয়ে সে আসছে,এই সাদামাটা, একঘেয়ে-অনাড়ম্বর জীবনে।শুধু কালই নয়,থাকবে বেশ অনেকগুলো দিন।বি,এড এ সুযোগ পেয়েছে-জি,সি কলেজে।হস্টেল বা পি,জি কেন!আমাদের বাড়ি থাকতে! আমি পলাশ-নিজের ঘর,আলমারি, বাথরুম- হয়ত খানিকটা ব্যক্তিসত্ত্বা ও বিসর্জন দিতে প্রস্তুত বা দিতে হবে।
স্টেশন থেকে তাকে আনতে যেতে হল সেই আমাকে ।জনবহুল স্টেশন চত্বরের চতুর্দিকে তাকিয়ে খুজে চলেছি- অসহায় লাগছে!সেই কোন ক্লাস সিক্সে দেখেছি! কিন্তু আমাকে সায়ন ঠিক চিনে নিল।জানিনা কোন ক্ষমতার জোরে ।দেখে চমকে উঠলাম- আপামর বাঙালি মেয়েদের থেকে অত্যধিক সাদা রঙ,বুদ্ধিদীপ্ত উজ্জ্বল চেহারা ।প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর একমাত্র মেয়ে ।ভগবান তাকে সব দিয়েছে- রূপ,গুণ,অশেষ অর্থ সব ঢেলে দিয়েছে।
প্রথম ধাক্কা খেলাম রিক্সায় উঠতে গিয়ে ।প্রথমত সে আমার সঙ্গে যাবেনা।যদিও আমার সঙ্গে ছিল সাইকেল ।তার অজ্ঞাত ।তারপর ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি- দশ টাকা কম -বেশি নিয়ে রিক্সাওয়ালাকে সেকি রূঢ় কণ্ঠে ধমক।বুঝলাম- যে আধুনিকতার ছাপ ওর সর্বাঙ্গে, যে রুচির আভিজাত্যের ছাপ পোশাকে- তা মজ্জার সঙ্গে মেশা নয়,বাইরের সাজের মতই আরোপিত ।যত আমি মেটানোর চেষ্টা করি-ততই সেটা গর্জনে পরিণত হয় ।রিক্সাওয়ালাও তিরিক্ষি মেজাজ দেখায়।বাড়ির ঠিকানা শুনে একটু যেন নরম হল।যত বোঝানো হয় সায়নকে এটা পৌরসভার বেঁধে দেওয়া রেট।ও কিছুতেই মানবে না ,জিভ শানিয়েই চলেছে ।
স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরচুর ।আমি মধ্যস্থতায় আসি।ইঙ্গিতে রিক্সাওয়ালাকে বুঝিয়ে দি বাকি টাকাটা আমি দেব।সেও কম যায়না।গজ গজ করতে করতে চলল।আর আমি সঙ্গে সঙ্গে চলেছি সাইকেল নিয়ে, আর ভাবছি- দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, ভীরুর উপর সাহসীর ক্রোধ, আমরা চিরকালই দেখে আসছি।
চিন্তাজাল ছিন্ন হয় ,রিক্সার কর্কশ হর্ণে।আমি নিজেই খেয়াল করিনি কখন বাড়ি এসে গেছে।যাক ঠিক ঠিক ঠিকানা বোঝাতে পেরেছি! সব সময় এটাই শুনি,আমি সবেতেই ভুল করি,আমার দ্বারা কিচ্ছু হয় না!
যথারীতি তিনি ভাড়া পনের টাকা দিলেন।আমি প্রমাদ গুনছি-দক্ষ -যজ্ঞের!আমাকে অবাক করে দিয়ে- নির্বিকারে রিক্সা ঘুরিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে।আমি লুকিয়ে দশ টাকা দিতে উদ্যত হতেই,রিক্সাওয়ালা থমথমে মুখে আমার কাছে এসে বলল,"মাস্টার বাবুর বাড়ি বলে এসেছি, তাঁর অতিথি, তিনি কখনো আমাদের সাথে অন্যায্য ব্যবহার করেননি ।" আমি দশ টাকা দিতে যেতেই, সে উল্টে আমার হাতে সায়নের দেওয়া পনেরো টাকা ফেরত দিয়ে বলে উঠলো,"এই ন্যান,ওনারে টাকাটা দিয়ে দেবেন।যে ভুল করেছি ,তার প্রায়শ্চিত্ত করলাম ।" আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়! যে দুর্বল, যে ভীরু সে তো সর্বদাই অসহায়- শঙ্কিত ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...