বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

নীলকণ্ঠীয় পরিতৃপ্তি ---- মুনমুন মুখার্জী

বি পজিটিভ উদিতা। জীবন মানেই পরিবর্তন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেয়াই হল, লাইফ লার্নিংস। এই লার্নিংসগুলোই তো সমৃদ্ধ করে আমাদের।
গত দু’ঘন্টায় এটি তৃ্তীয়বার চ্যানেলের কর্ণধার পলাশ বর্মণ বিদেশী ওয়াইনের গ্লাস হাতে উদিতাকে জীবন-দর্শনের লেকচার দিচ্ছেন। গত সন্ধ্যার “মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলাপচারিতা” শো’টির অভুতপূর্ব সাফল্যকে সেলিব্রেট করতেই আজকের এই পার্টি। এই লেকচারের নিগূঢ় কারণঃ শো’টির ভাবনা, পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, পরিচালনা আর পরিবেশনার সব দায়িত্ব উদিতার হওয়া সত্ত্বেও সাফল্যের ক্রেডিট ওকে ভাগ করে নিতে হচ্ছে সদ্য নিযুক্ত নিউজ প্রেজেন্টার বিপুল সরকারের সাথে। কেন? বিপুল কোন এক আমলার অকালকুষ্মান্ড সন্তান, যিনি সম্প্রতি চ্যানেলকে বিরাট অঙ্ক ডোনেট করেছেন। আর তাই কাল প্রোগ্র্যাম “অন এয়ার” হওয়ার ঠিক আধঘন্টা আগে উদিতাকে জানানো হয় বিপুলও থাকছে উদিতার সাথে। উদ্দেশ্য – সরকারের ওপর মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ। উদিতার তৈরী স্ক্রীপ্ট রীডিং পড়ে শো-এর সাকসেসের ক্রেডিট ওর উপরি পাওনা।
গত চার বছরে পরিবর্তনের আঁচ কী পায়নি উদিতা? রাজনৈতিক হাওয়া বদলের সাথে সাথে চ্যানেলের পাল পরিবর্তন, সংবাদ পরিবেশনের ধারা বদল সবই তো পরিবর্তনেরই অংশ যাতে চ্যানেলের ট্যাগলাইন, “আমাদের নির্ভীকতা আপনার নির্ভরতা” যথার্থতা হারিয়েছে।
মোবাইলের রিংটোন চিন্তাসূত্র বিচ্ছিন্ন করল। হাতের পানীয় নিঃশেষে গলায় ঢেলে কল নিতেই গলা আর মন দুটোতেই তিতকূটে টেস্ট পেল।
-স্যার, মেয়ের কল -- শ্বশুরমশায় অসুস্থ।
-ওহ্ সরি টু হীয়ার দ্যাট। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি, হি উইল ড্রপ য়্যু।
-সো কাইন্ড অফ য়্যু, স্যার।
এত রাতে ওলা বা উবের ক্যাবও রিস্কি আজকাল। বসের অফারে উদিতা নির্ভার হল। পার্কিং এরীয়া পর্যন্ত ওকে এগিয়েও দিলেন পলাশ বর্মণ। মদ্যপ হলেও মেয়েদের রেস্পেক্ট দিতে ভুল করেন না ভদ্রলোক এটা উদিতা আগেও লক্ষ্য করেছে।
গাড়িতে ওঠার ঠিক আগের মুহূর্তে ক্যাজুয়ালি প্রশ্ন করলেন ভদ্রলোক--
-তুমি তো সিঙ্গল। আচানক মেয়ে আর ইন-ল’স কোথা থেকে এল?
-পরিবর্তন স্যার।
হতভম্ব বসের ভ্রূ-কুঞ্চনকে পেছনে ফেলে গাড়ি এগিয়ে চলল।
******
উদিতার মেলোড্র্যামাটিক জীবন-পটের অবিরাম পরিবর্তন গতানুতিক জীবনবোধকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে বারংবার। সমাজ-সংসারকে উপেক্ষা করে দুবছরের ছোট সৌমেন্দুর সাথে প্রেম, লিভ-ইন, বিয়ে, অতঃপর সৌমেন্দু-ময় যাপনের স্বর্গীয় সুখের আস্বাদ এখনও অনুভূতিতে প্রকট। এরই মাঝে উদিতার বাবা-মায়ের মৃত্যু ওর আপাত-শান্ত জীবন নদীতে ঝড় তোলে। সৌমেন্দুর বাবা-মা ওদের মুখ দর্শন করেন না। কিন্তু পুত্রবধূর ধর্মপালনে বদ্ধপরিকর উদিতা শেষ পর্যন্ত তাঁদের মান ভঞ্জন করে নিজেদের কাছে নিয়ে আসে। ভেবেছিল নিত্যকার জীবনের ক্লিশেগুলো সামলে নেবে।
ছ’মাসের মাথায় সৌমেন্দুর সাথে প্রয়োজনের বাইরে বাক্যালাপ বন্ধ, এক বছরের মাথায় সৌমেন্দুর জীবনের নব পল্লবিত প্রেমের কথা জানল উদিতা ওরই কাছ থেকে। শ্বশুর শ্বাশুড়ী নির্বিকার জানালেন পনের বছর আগে উদিতাকে নিয়ে ঘর ছেড়ে সৌমেন্দু যদি ভুল না করে থাকে তবে আজও ঠিকই করছে।
দু’মেয়েকে রেখেই বেরিয়ে এসে একটা বেসরকারী নিউজ চ্যানেলে জয়েন করে উদিতা। লোভাতুর পৃথিবীতে নিজেকে রক্ষা করাই দুরূহ, মেয়েদের নিরাপত্তা দেবে কীভাবে? তাছাড়া একটা ক্ষীণ আশা, সতীন কন্যাদের উপস্থিতি মেনে নিয়ে অন্যজন আসবে কী?
সৌমেনের বাবা-মা আর তার প্রথম পক্ষের সন্তান নিয়ে সংসার পাততে চায় নি অন্যজন। চার বছর পর অসুস্থ বাবা-মা আর মেয়েদের ন্যূনতম ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা না করেই তাই সৌমেন্দু তার প্রিয়তমাকে নিয়ে দেশ ত্যাগ করে। জানতে পেরে ছুটে যায় উদিতা। ভুলে যায় এই দুই বৃ্দ্ধ-বৃ্দ্ধার কারণে ওর জীবন-নদী জল শূন্য হয়েছিল একদিন।


পরিবর্তনশীল সময়ের দৃশ্যমানতায় উদিতার এই বদান্যতার কথা ধুয়ে যাবে। অমর হবে বাবা-মাকে ছেড়ে উদিতাকে নিয়ে সৌমেন্দুর সংসার করার কাহিনী। তবুও নীলকণ্ঠী সুখাস্বাদনে তৃপ্ত উদিতা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদিকার ডেস্ক থেকে

উৎসবের আলোড়ন কিছুটা স্তিমিত , তবুও মনের অলিন্দে হৈমন্তী স্বপ্ন । বারো মাসের তেরো পার্বণ প্রায় শেষ মুখে , উৎসব তিথি এখন অন্তিম লগ্ন যাপনে ব...