রোদ্দুরের ' ছবি দেখে গল্প ' বিভাগের প্রথম স্থান গ্রহণ করেছে গল্পটি
----------------------------------------------------------------
আমি ভাবতেই পারিনি, আসলে কখনোই ভাবতে পারিনি এমন একটা দৃশ্যের সামনে পড়তে হবে কোনোদিন। কোনো স্বাভাবিক মানুষ ভাবতে পারে কি... আমি প্রবাল বসু, লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর এমপ্ল্যয়ী, স্বাভাবিক ছিলাম, অন্তত এই জার্নির শুরুতে। শুধু আমি কেন, জামাল ভাই,খেয়া ভাবী, দেবারতি,প্রিয়ম, ঋজু সক্কলেই স্বাভাবিক ছিলাম। জার্নি? পোর্ট ব্লেয়ার থেকে কার নিকোবর পর্যন্ত, বেশি না, একদিন এক রাত। নতুন ঝকঝকে একটা ক্রুজ, ম্যাকাবর আর সেই ক্রুজের টকটকে ফরসা অ্যাংলো ক্যাপ্টেন আমাদের কাণ্ডারি। দুজন চারজন ক্রু ও রয়েছে, তবে তাদের ধরিনি, ঈশ্বর প্রদত্ত যোগাযোগ ক্ষমতা তাদের নেই, সহায় হয়েছে হুইশল আর টর্চ। ম্যাকাবর; নামটা দেখে অবাক হয়েছিলাম, একটা ক্রুজের না্মের অর্থ কিনা ভয়ানক??! কি অদ্ভুত! এমন আবার হয় নাকি, আমাদের পশ্চিমবাংলায় তো হর্ষবর্ধন, ইরাবতী এমন নাম দেখি। জামাল ভাই আমার সাথে সহমত হয়েছিলেন, খেয়া ভাবীও। তারপর বলেছিলেন,"ক্যাপ্টেন কে জিজ্ঞেস করলে হয় না, হয়ত অন্তর্নিহিত অর্থ আছে কিছু।" তখনো ক্যাপ্টেনের সাথে শুধু চোখের দেখা আর পেশাদার হাসির বিনিময় হয়েছে ।সবে পা রেখেছি ক্রুজে।
ধীরে ধীরে ডক ছাড়িয়ে ক্রুজ রওনা হল গন্ত্যবের দিকে। বেশ সুন্দর আবহাওয়া । নীল নীল চারিদিক । দূরে এখনো ডক দেখা যাচ্ছে । আনাওউন্স হল সবাইকে মিটিং হল এ দেখা করার জন্য । আমরা সব সুদ্ধু ৬ জন উপস্থিত হলাম । ক্যাপ্টেন হাসিমুখে স্বাগত করলেন আমাদের । পরিচয় দিলেন নিজের এবং ক্রু- মেম্বার দের । উনার বয়েস হবে প্রায় পঞ্চাশ, এখনো কি স্মার্ট, আর অত্যন্ত অমায়িক । যাই হোক, একে একে উনি আমাদের সবার পরিচয় নিলেন , প্রাইভেট ক্রুজ ম্যাকবর এর সম্পর্কে বললেন, আমাদের যাত্রা সম্পর্কে ধারনা দিলেন । সব ঠিক থাকলে কাল ভোর বেলায় আমরা কার নিকোবর এ উঠবো । ওঁর কথায় কার নিকোবর নিকোবরের রাজধানী হলেও বেশ অনেকটা নির্জন , বিশাল মিলিটারি বেস আছে, শুধু টুরিস্টরা ই যায় মাঝে মাঝে । খুব উত্তেজনা আর আনন্দ হচ্ছিল, আন্দামান ই এত সুন্দর, নিকোবর কত সুন্দর হবে কে জানে । জামাল ভাই আর নিজের প্রশ্নটা চেপে রাখতে পারেন নি । জিজ্ঞেস করেই ফেললেন জাহাজের নামকরন সম্পর্কে । জানা গেল চিফ ইঞ্জিনিয়ার Late. Mr. Mackellar এর নামানুসারে এর নামকরন হয় । এই ক্রুজ এর সমস্ত ডিজাইন উনি ই করেছিলেন । কিন্তু এর কাজ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ই উনি এক অজানা চর্মরোগ এ আক্রান্ত হয়ে পরেন এবং তার কিছুদিনের মধ্যে ই মারা যান । তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে এর নামকরন এরকম রাখা হয়। জামাল ভাই আর কিছুই বলতে পারলেন না, না আমরা । আমাদের মধ্যে একমাত্র দেবারতিই আসার আগে আন্দামান নিকোবর সম্পর্কে বই পত্র ঘেঁটে ঘুঁটে এসেছে, সেই বিদ্যে ফলাতেই মনে হয় প্রশ্ন করলো আচ্ছা আন্দামানের উপজাতি তো জারোয়া, নিকোবরের উপজাতি শুনছি শোম্পেন, তাহলে সেন্টিলেজ রা কোথাকার?
ক্যাপ্টেন অ্যাংলো হলে কি হবে, বেশ ঝরঝরে বাংলা বলেন, আসলে এ মুলুকের সত্তর শতাংশ বাঙালি কিনা। উনি বললেন, “সেন্টিলেজ রা থাকে আন্দামান আর নিকোবরের মাঝে, ব্যারেনের নাম শুনেছেন আপনারা?”
সমস্বরে বললাম, “হ্যাঁ! হ্যাঁ!”
- “ ওই ব্যারেনের কাছাকাছি এক দ্বীপে ওদের বাস, ভয়ানক হিংস্র এখনো! খুব বেশি সরকারকে এন্টারটেন করে না। সভ্য কিছু ব্যবহার করে খুব কম, আর পোশাক এখনো পরে না বোধ হয়“
ধীরে ধীরে ডক ছাড়িয়ে ক্রুজ রওনা হল গন্ত্যবের দিকে। বেশ সুন্দর আবহাওয়া । নীল নীল চারিদিক । দূরে এখনো ডক দেখা যাচ্ছে । আনাওউন্স হল সবাইকে মিটিং হল এ দেখা করার জন্য । আমরা সব সুদ্ধু ৬ জন উপস্থিত হলাম । ক্যাপ্টেন হাসিমুখে স্বাগত করলেন আমাদের । পরিচয় দিলেন নিজের এবং ক্রু- মেম্বার দের । উনার বয়েস হবে প্রায় পঞ্চাশ, এখনো কি স্মার্ট, আর অত্যন্ত অমায়িক । যাই হোক, একে একে উনি আমাদের সবার পরিচয় নিলেন , প্রাইভেট ক্রুজ ম্যাকবর এর সম্পর্কে বললেন, আমাদের যাত্রা সম্পর্কে ধারনা দিলেন । সব ঠিক থাকলে কাল ভোর বেলায় আমরা কার নিকোবর এ উঠবো । ওঁর কথায় কার নিকোবর নিকোবরের রাজধানী হলেও বেশ অনেকটা নির্জন , বিশাল মিলিটারি বেস আছে, শুধু টুরিস্টরা ই যায় মাঝে মাঝে । খুব উত্তেজনা আর আনন্দ হচ্ছিল, আন্দামান ই এত সুন্দর, নিকোবর কত সুন্দর হবে কে জানে । জামাল ভাই আর নিজের প্রশ্নটা চেপে রাখতে পারেন নি । জিজ্ঞেস করেই ফেললেন জাহাজের নামকরন সম্পর্কে । জানা গেল চিফ ইঞ্জিনিয়ার Late. Mr. Mackellar এর নামানুসারে এর নামকরন হয় । এই ক্রুজ এর সমস্ত ডিজাইন উনি ই করেছিলেন । কিন্তু এর কাজ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ই উনি এক অজানা চর্মরোগ এ আক্রান্ত হয়ে পরেন এবং তার কিছুদিনের মধ্যে ই মারা যান । তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে এর নামকরন এরকম রাখা হয়। জামাল ভাই আর কিছুই বলতে পারলেন না, না আমরা । আমাদের মধ্যে একমাত্র দেবারতিই আসার আগে আন্দামান নিকোবর সম্পর্কে বই পত্র ঘেঁটে ঘুঁটে এসেছে, সেই বিদ্যে ফলাতেই মনে হয় প্রশ্ন করলো আচ্ছা আন্দামানের উপজাতি তো জারোয়া, নিকোবরের উপজাতি শুনছি শোম্পেন, তাহলে সেন্টিলেজ রা কোথাকার?
ক্যাপ্টেন অ্যাংলো হলে কি হবে, বেশ ঝরঝরে বাংলা বলেন, আসলে এ মুলুকের সত্তর শতাংশ বাঙালি কিনা। উনি বললেন, “সেন্টিলেজ রা থাকে আন্দামান আর নিকোবরের মাঝে, ব্যারেনের নাম শুনেছেন আপনারা?”
সমস্বরে বললাম, “হ্যাঁ! হ্যাঁ!”
- “ ওই ব্যারেনের কাছাকাছি এক দ্বীপে ওদের বাস, ভয়ানক হিংস্র এখনো! খুব বেশি সরকারকে এন্টারটেন করে না। সভ্য কিছু ব্যবহার করে খুব কম, আর পোশাক এখনো পরে না বোধ হয়“
- “গেলে দেখা যাবে ওদের?’ উৎসুক প্রশ্ন প্রিয়মের।
- “কেন রে? ওরা কি মানুষের বাইরে? তোকে কলকাতার বাড়িতে জাপানী রা দেখতে এলে কেমন লাগবে? তুই না প্রোগ্রেসিভ?” খেঁকিয়ে উঠলো দেবারতি। আমতা আমতা করে প্রিয়ম চুপ করে গেলো। ইদানীং বড় ভাব দেখছি দুটো তে, আমরা অবশ্য নেমন্তন্ন পেলেই খুশি।
- “যাওয়া নিষেধ।“ ক্যাপ্টেন হেসে বললেন, “ বললাম না ভয়ানক হিংস্র, আমরা অনেক সময় জলে লাশ ভাসতে দেখি।“
- “লাশ!?” খেয়া ভাবী শিউরে উঠলেন
- ‘ হ্যাঁ ম্যাডাম, চামড়া ছাড়া্নো লাশ, সে যে কি ভয়ানক… শুনেছি ওরা নাকি আমাদের এত হেট করে যে আমাদের চামড়া ছাড়িয়ে ঘর সাজায়, ওই স্টাফড অ্যানিম্যাল টাইপ। মানুষের মাংস যখন সবচেয়ে সুস্বাদু, চামড়াও তুলতুলে হবে, কি বলেন? হে হে!”
আমি আর পারলাম না, উঠে এলাম ডেকে। তারপর দেখি বাকিরাও একে একে এসে জুটল। ভাবীর মুখ দেখি ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, সেটা দেখে;
- হুঁহ! চামড়া ছাড়ানো লাশ! একটা ঢপ দিয়ে দিলো। ভাবী আপনিও যেমন।“ ঋজু তাচ্ছিল্যের সাথে বলে উঠলো।
- “ আমারও তেমন কনভিন্সিং লাগলো না, কোনো বইতে বা রিসার্চ পেপারে বা কোথাও পড়িনি এমন।“ দেবারতির কথা শুনে খেয়া ভাবী খানিক স্বাভাবিক হলেন মনে হয়। আমরা ডেকে আড্ডা দেওয়া শুরু করলাম।
সবাই বেশ চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম ছাদে । প্রায় বিকেল হয়ে আসছে । চারিদিকে অকুল সমুদ্র –নীল ।তার ব্যাপ্তি মনের সমস্ত সঙ্কীর্ণতা কে কোথায় যেন পরাজিত করে। অনেক দিন পর আবার অফিস স্টাফদের সাথে ট্যুর । অফিস যাপনের সঙ্কীর্ণ গণ্ডির বাইরে যে একটা আলাদা মানুষ থেকে যায়, আদতে সে অন্যরকম, সেটা বোধহয় এরকম ভাবে মিশলেই বোঝা যায় ।
“একটা দারুন জিনিস খাবে জামালদা?”, প্রিয়ম জিজ্ঞেস করল ।
- “কি ?”
- “একটা বিদেশি স্কচ । হেব্বি । মেয়েরা খাবি তো? নাকি আবার ন্যাকামো মারবি?”
- “আরে নিয়ে আয় , সবার জন্য ভাবতে গেলে নিজেই খালিপেটে থাকবি ।“, খেয়া ভাবী এতক্ষণে বেশ হাসতে হাসতে উত্তরটা দিল ।
- “৫ মিনিট দাড়াও , নিয়ে আসছি নিচে থেকে ।“ , বলে প্রিয়ম বেরিয়ে গেল ।
কি ভাল লাগছিলো চারিদিকে নীল নীল জল দেখে । দূরে ঢলে যাচ্ছে সূর্য ধীরে ধীরে । একটা অদ্ভুত শান্তি, তৃপ্তি আমায় ঘিরে । এর মাঝেই সন্ধ্যের জলখাবার চলে এল । গরম চা , প্যাকেট করা সামোসা আর রোস্টেড বাদাম । একজন ক্রু হাসিমুখে সারভ করে চলে গেল ।
“ভালই হয়েছে । বাদামটা ভালো কাজেই লাগবে “, জামাল দা বলে উঠলো ।
“খরচ করে লাভ আছে বলুন জামাল ভাই, গভর্নমেন্ট ভেসেলে এই আরাম টা পাওয়া যেত না” গরম সামোসায় কামড় বসিয়ে দেবারতি উক্তি।।
“সে সব ঠিক আছে, কিন্তু প্রিয়ম এতক্ষণ কি করছে ?, স্কচ এর নাম শুনার পর এসব চা-ফা আর ভালো লাগে?”
“দাড়াও দেখছি । ব্যাটাকে ধরে নিয়ে আসছি ।“ বলেই ঋজু উঠে পড়ল ।
আমি ততক্ষণে রেলিং এর পাশে চলে এসেছি। সাগরকে এরকম্ভাবে উপলব্ধি হয়ত কখনো করিনি । কতটা সময় যে কেটে গেছে সূর্যাস্তের দিকে চেয়ে মনেও নেই । লাল আবির আর সোনা রঙের উদ্ভাসে সমুদ্র তখন সদ্য যুবতী, ধীরে ধীরে যে রহস্যময়তা শিখবে। অপূর্ব!
হটাত ঋজু এর চিৎকার শুনে ঘোর ভাঙল ।
“প্রিয়ম দা তো নীচে নেই!”
হটাত ঋজু এর চিৎকার শুনে ঘোর ভাঙল ।
“প্রিয়ম দা তো নীচে নেই!”
দেখি দৌড়ে উপরে এসে হাঁপাচ্ছে সে, ফরসা মুখটা উত্তেজনায় লাল।
- “ কি হলো ?প্রিয়ম নেই মানে!” এগিয়ে এলো দেবারতি
- “ তোমাদের কেবিন আমাদের কেবিন কোথাও নেই দেবারতি দি, শুধু প্রিয়ম দার রুকস্যাক টা খোলা পড়ে আছে। আর ঘরের মেঝেতে…”
- হাতটা তুলে ধরলো সে, প্রিয়মের চশমা , কাচে রক্তের ধারা,
- “ ঘরের মেঝেতেও… অনেকটা…”
চিৎকার করে উঠলেন খেয়া ভাবী, “ কি বলছিস ভাই?”
“ক্যাপ্টেনের কাছে চল, কুইক!” আমরা সবাই দৌড়লাম ইঞ্জিন রুমের দিকে, শুধু দেবারতি নীচে নেমে গেলো।
শান্ত ইঞ্জিন রুম, হালকা একটা ট্রাইবাল মিউজিক বাজছে, স্টিয়ারিং গীয়ারে ক্যাপ্টেন একা, এছাড়া দুজন ক্রু আছে। আমাদের দেখে সহাস্যে হাত তুললেন তিনি। তারপর ক্রু এর হাতে গীয়ার দিয়ে বেরিয়ে এলেন।
- “বলুন”
উতেজনার প্রাথমিক রাশ টা থামিয়ে বললাম , “ আমাদের এক বন্ধু, প্রিয়ম, ওই চশমা পড়ে, তাকে খুঁজে…”
- “প্রিয়ম বাবু তো? উনি তো এসেছিলেন একটু আগে, স্কচ অফার করলেন। আহা মোলায়েম, সিল্কের মত পুরো! খুব যত্ন আত্তি করেন নিজের বোঝাই যাচ্ছে।“
- “ কি হলো ?প্রিয়ম নেই মানে!” এগিয়ে এলো দেবারতি
- “ তোমাদের কেবিন আমাদের কেবিন কোথাও নেই দেবারতি দি, শুধু প্রিয়ম দার রুকস্যাক টা খোলা পড়ে আছে। আর ঘরের মেঝেতে…”
- হাতটা তুলে ধরলো সে, প্রিয়মের চশমা , কাচে রক্তের ধারা,
- “ ঘরের মেঝেতেও… অনেকটা…”
চিৎকার করে উঠলেন খেয়া ভাবী, “ কি বলছিস ভাই?”
“ক্যাপ্টেনের কাছে চল, কুইক!” আমরা সবাই দৌড়লাম ইঞ্জিন রুমের দিকে, শুধু দেবারতি নীচে নেমে গেলো।
শান্ত ইঞ্জিন রুম, হালকা একটা ট্রাইবাল মিউজিক বাজছে, স্টিয়ারিং গীয়ারে ক্যাপ্টেন একা, এছাড়া দুজন ক্রু আছে। আমাদের দেখে সহাস্যে হাত তুললেন তিনি। তারপর ক্রু এর হাতে গীয়ার দিয়ে বেরিয়ে এলেন।
- “বলুন”
উতেজনার প্রাথমিক রাশ টা থামিয়ে বললাম , “ আমাদের এক বন্ধু, প্রিয়ম, ওই চশমা পড়ে, তাকে খুঁজে…”
- “প্রিয়ম বাবু তো? উনি তো এসেছিলেন একটু আগে, স্কচ অফার করলেন। আহা মোলায়েম, সিল্কের মত পুরো! খুব যত্ন আত্তি করেন নিজের বোঝাই যাচ্ছে।“
- “ কি বলছেন বুঝছি না, প্রিয়ম এসেছিলো? কিন্তু নীচে কেবিনে ওর চশমা, রক্ত পড়ে আছে.।“
- “ হ্যাঁ উনি সিঁড়িতে পড়ে চোট খেয়েছেন, আমি ফাস্ট এইড করে দিলাম। তারপর বললেন মন খারাপ লাগছে, একা সমুদ্র দেখতে চান, তাই সে ব্যবস্থাও করে দিলাম। এখন ওঁকে ডিস্টার্ব করা মানা। তাই আমি চাইলেও আপনাদের সাহায্য করতে পারলাম না!”
- “ হোয়াট দা হেল! হোয়াট ইজ দা মিনিং অফ ইট? ইয় ব্লাডি সোয়াইন!” ঋজুর এমনিতেই মাথা গরম, তার ওপর প্রিয়মের অন্তর্ধান আর রক্ত প্রথম ও আবিষ্কার করেছে, প্রচণ্ড উত্তেজিত। ক্যাপ্টেন ওর কথায় কর্ণপাত ও করলো না। তেমনি শান্ত গলায় বলল, “ আপনারা ডেকে যান, ঠিক সময় প্রিয়ম বাবুর সাথে আপনাদের দেখা হয়ে যাবে। আর মনে রাখবেন, এটা ডাঙ্গা নয় আর ফোনে টাওয়ার ও নেই , তাই নিজেদের সামলে রাখুন।“
প্রচ্ছন্ন হুমকি তে যেন ছিটকে চলে এলাম ডেকে। খেয়া ভাবী নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে। মুহ্যমান হয়ে বসে পড়লাম ডেকের ওপর রাখা চেয়ারে। অন্ধকার নেমে এসেহে তখন সমুদ্রের বুকে। ম্যাকাবরে জ্বলে উঠেছে সার্চ লাইট। ডেকে আলো কম আঁধার বেশি।
জামাল ভাই ই প্রথম কথা বললেন, “ এই ক্রুজ টা কলকাতা থেকে কে বুক করেছিলো?”
জামাল ভাই ই প্রথম কথা বললেন, “ এই ক্রুজ টা কলকাতা থেকে কে বুক করেছিলো?”
- “করেছিলো তো দেবারতি, ওর কোন কন্ট্যাক্টের থ্রুতে।“ আমি উত্তর দিলাম।
- “দেবারতি, কন্ট্যাক্ট টা যার থ্রু তে পেয়েছিলি তার নাম্বার আছে?”
কোনো উত্তর নেই। গুমরে আছে মনে হয়। ছেলেটা কোথায় গেলো, কিরকম একটা অজানা ভয়ে জমে আছি আমরা।
- “ অ্যাই দেবারতি!”
এবারেও উত্তর নেই। বিদ্যুৎচমকের মত মনে এলো আরে ও তো কেবিনে নেমে গেছিলো।
- “ জামাল ভাই, ঋজু , কুইক। দেবা নীচে কেবিনে নেমে গেছিলো, আমার মনে আছে।“
মন কে বোঝাচ্ছিলাম, নীচে গিয়ে দেখবো প্রিয়ম আর দেবারতি জমিয়ে ঝগড়া করছে বা চুমু খাচ্ছে। যা খুশি করুক, ওরা যেন থাকে নীচে। কিন্তু… ঋজু শুধু ধপ করে বিছানার ওপর বসে পড়লো, চোখে জল।
- “কি হচ্ছে প্রবাল দা, এগুলো... “ আমি ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পেলাম না। কিরকম জড় লাগছে নিজেকে। এমন কোনো অভিজ্ঞতার সিনেমা দেখলে বা গল্পের বই পড়লে ধুর বোগাস প্লট ভেবে হাসতাম। কিন্তু এটা যে বাস্তব, ভীষণ ভাবে বাস্তব!
ভূত? ক্যাপ্টেন টা ভূত? এই ক্রুজ টাই ভৌতিক! ধুর! অল বোগাস। ক্যাপ্টেনের কিছু চক্রান্ত এর পিছনে, কি করবো, কি করবো এখন!
“যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট!!!!” চিৎকার করে উঠলো ঋজু, “ আমি জবাব চাই! ওই শালা ক্যাপ্টেনের বাচ্চা! ওই খানকির ছেলের হাত আছে এতে। শালার বিচি তে দুটো লাথ মারলে গড়গড় করে সব উগলে দেবে!” জামাল ভাইও দেখলাম ঋজুর হাত টা চেপে ধরে বললেন, “ ওঠ, চল ইঞ্জিন রুমে! দেখি কার বাপের কত দম।“
ওরা দরজার দিকে এগোলেও আমি দাঁড়িয়েই রইলাম, মাথাটা বোদা মেরে গেছে, কিরকম হ্যালুসিনেশানের মত লাগছে।
- “ প্রবাল দা, এসো!” ঋজুর ডাকে সম্বিৎ ফিরলো।
- “ যা তোরা, আসছি, চোখে মুখে একটু জল দিই।“
- “তাড়াতাড়ি।“ বেরিয়ে গেলো ওরা।
অবিশ্রান্ত জলের ছলাত ছলাত আর ইঞ্জিনের এক ঘেয়ে শব্দের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রইলাম, ফাঁকা কেবিনে, যেখান থেকে আমার দুই প্রিয় সহকর্মী হারিয়ে গেছে, অবাস্তব ভাবে।
মেঝতে যেখানে প্রিয়মের (?) রক্ত পড়েছিলো সেদিকে চোখ গেলো, শুকিয়ে কালচে হয়ে গেছে, তারপর আরো একটা ব্যাপার চোখে পড়লো। আশ্চর্য , এতক্ষণ কি অনভ্যস্থ চোখ আর উত্তেজনা ছিলো বলেই এটা নজরে আসেনি। রক্তের দাগটা একটা লম্বাটে আকারে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে, , যদিও সেটা মোছা হয়েছে পরে, কিন্তু হলদেটে মেঝের ওপর সুক্ষ্ম একটা লালচে আভা বোঝা যাচ্ছে খুঁটিয়ে দেখলে।
বুকে বেজে উঠলো মাসাইদের ঢাক, এগিয়ে গেলাম, আমাদের কেবিন, ডাইনিং হল, স্টুয়ার্ড কেবিন, ক্যাপ্টেন কেবিন,কমন টয়লেট… যাহ হারিয়ে গেলো! আর বোঝা যাচ্ছে না, খুব ভালো করে মোছা
হয়েছে যেন। কমন টয়লেট তো ক্রুজের একদম শেষের দিকে, তারপরেই লোহার চাদরের দেওয়াল, তার ওপারেই ভারত মহাসাগর। অদ্ভুত ব্যাপার এতগুলো কেবিন ক্রস করলাম কোন ক্রু কে দেখলাম না, গোটা চারেক ক্রু আছে, একজন না একজনের তো থাকা উচিত ছিলো। অন্তত ডাইনিং হলে।
বুরবকের মত দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকালাম, একবার কমন টয়লেটের মধ্যে দেখবো? নাকি ওপরে উঠে ওদের ডেকে নিয়ে আসবো?
নাহ। যাই। একবার দেখেই যাই। কিছুই তো নেই মনে হচ্ছে…
ধাক্কা দিয়ে টয়লেটের দরজা খুলতেই অসম্ভব খারাপ পেচ্ছাপের গন্ধ ভক করে নাকে লাগলো।
ক্রুদের ব্যবহারকরা টয়লেট, কত আর পরিষ্কার হবে! কিন্তু ভিতর ফাঁকা, কিচ্ছু নেই, অর্থাৎ আমি যা দেখতে চাই তা নেই।
ফেরার পথ ধরেছি, এমন সময় ক্যাপ্টেন কেবিনের দরজা খুলে গেলো নিঃশব্দে, ক্যাপ্টেন বেরোলেন, হাত দুটো টাওয়ালে মুছতে মুছতে। আমাকে সামনে দেখে খানিক চমকালেও হাসিমুখে বললেন, “কি ব্যাপার, মন মেজাজ ঠিক নেই নাকি?”
এটা কে? অমানুষ! জানোয়ার নাকি ফেরেস্তা।
- “অস্বাভাবিক সেটা? আমার বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে আপনার? ওরা তো আপনার কাছেই গেলো।“
- “হুম হয়েছে। এত জেদ করছিলো তাই বাধ্য হয়ে প্রিয়ম বাবু, দেবারতি ম্যাডামের কাছে যেতে দিতেই হলো!”-
- “মানে! ওদের পাওয়া গেছে! কোথায় ছিলো...” এক অসম্ভব উচ্ছ্বাস উথলে উঠলো আমার গলায়।
- “নিজেই দেখবেন, আসুন।“ ক্যাপ্টেন নিজের কেবিনের দরজাটা খুলে দিলো। পরিপাটি করে সাজানো কেবিন,আমাদের কেবিনের মতই, হালকা মিউজিক বাজছে, মৃদু আলো, ঘরময় এক অদ্ভুত সুগন্ধ, যদিও কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু কোথায় কে, শুধু বিছানা চেয়ার পোশাকের আলমারি।
চোখ সইয়ে নিতেই অস্বস্তির কারণ টা স্পষ্ট হলো, ঘরময় সুগন্ধির মধ্যে একটা চামসে গন্ধ আন্ডারটোন হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, আর মেঝেতে অদ্ভুত বিসদৃশ ভাবে দুটো লোহার আংটা।
আমাকে অবাক করে ক্যাপ্টেন আংটা দুটো ধরে টান মারতেই একটা ট্র্যাপ ডোর খুলে গেলো মেঝেতে, তারপর হাসিমুখে আমাকে বলল, “ নিন, নামুন, সিঁড়ি আছে।“
- “এটা কোথায়?”
- “যেখানে আপনার সক্কল বন্ধুরা আছে, আপনার অপেক্ষায়, নামুন নামুন।“ কিছু বুঝে ওঠার আগেই জোর ধাক্কায় ট্র্যাপডোরের সিঁড়িতে নেমে পড়লাম, চামসে গন্ধ টা বাড়ছে।
তারপর...
আমি ভাবিনি কোনোদিন এমন দৃশ্য আমাকে দেখতে হবে, আর সেটাই জীবনের শেষ দৃশ্য... কোনো মানুষ ই মনে হয় এমন ভাবে মরতে চায় না... আমিও ভাবিনি, কল্পনাও করিনি...
নাতিদীর্ঘের একটা বেসমেন্ট, চামসে গন্ধ ম ম করছে, মাঝখানে সার বেঁধে শুয়ে আছে প্রিয়ম, দেবারতি, ঋজু, জামাল ভাই, খেয়া ভাবী। প্রিয়মের কপালের ক্ষত টা তখনো তাজা। ঋজুর ঘাড়টা অস্বাভাবিক ভাবে বেঁকে আছে। ম্যাকাবর ম্যাকাবর... ভয়ানক... ওই জন্যই নামের অর্থ ভয়ানক।
- “মিলিটারি জানবে জোর করে আমাকে ভয় দেখিয়ে আপনারা সেন্টিলেজ দের দ্বীপে নেমেছেন। আমার কোনো দায় নেই, আর আমার ক্রু রা আমার মতই। আর আপনি জানলেন আসলে আপনারা আমার ছোট্ট চামড়ার কালেকশান টা আরেকটু গুছিয়ে নিতে সাহায্য করলেন। মানুষের চামড়ার সে যে কি উত্তাপ!!” ফিসফিস করে কানের মধ্যে শব্দ গুলো ভেসে এলো। আর চোখ তখন ঘরের দেওয়ালে সাজানো সারি সারি সাদা কালো তামাটে হলদে চামড়ার ট্রফিতে আটকে আছ...টুকরো টুকরো চামড়ার কোলাজ... যেখানে কিছুক্ষণের মধ্যে আমিও..
- “দেবারতি, কন্ট্যাক্ট টা যার থ্রু তে পেয়েছিলি তার নাম্বার আছে?”
কোনো উত্তর নেই। গুমরে আছে মনে হয়। ছেলেটা কোথায় গেলো, কিরকম একটা অজানা ভয়ে জমে আছি আমরা।
- “ অ্যাই দেবারতি!”
এবারেও উত্তর নেই। বিদ্যুৎচমকের মত মনে এলো আরে ও তো কেবিনে নেমে গেছিলো।
- “ জামাল ভাই, ঋজু , কুইক। দেবা নীচে কেবিনে নেমে গেছিলো, আমার মনে আছে।“
মন কে বোঝাচ্ছিলাম, নীচে গিয়ে দেখবো প্রিয়ম আর দেবারতি জমিয়ে ঝগড়া করছে বা চুমু খাচ্ছে। যা খুশি করুক, ওরা যেন থাকে নীচে। কিন্তু… ঋজু শুধু ধপ করে বিছানার ওপর বসে পড়লো, চোখে জল।
- “কি হচ্ছে প্রবাল দা, এগুলো... “ আমি ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পেলাম না। কিরকম জড় লাগছে নিজেকে। এমন কোনো অভিজ্ঞতার সিনেমা দেখলে বা গল্পের বই পড়লে ধুর বোগাস প্লট ভেবে হাসতাম। কিন্তু এটা যে বাস্তব, ভীষণ ভাবে বাস্তব!
ভূত? ক্যাপ্টেন টা ভূত? এই ক্রুজ টাই ভৌতিক! ধুর! অল বোগাস। ক্যাপ্টেনের কিছু চক্রান্ত এর পিছনে, কি করবো, কি করবো এখন!
“যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট!!!!” চিৎকার করে উঠলো ঋজু, “ আমি জবাব চাই! ওই শালা ক্যাপ্টেনের বাচ্চা! ওই খানকির ছেলের হাত আছে এতে। শালার বিচি তে দুটো লাথ মারলে গড়গড় করে সব উগলে দেবে!” জামাল ভাইও দেখলাম ঋজুর হাত টা চেপে ধরে বললেন, “ ওঠ, চল ইঞ্জিন রুমে! দেখি কার বাপের কত দম।“
ওরা দরজার দিকে এগোলেও আমি দাঁড়িয়েই রইলাম, মাথাটা বোদা মেরে গেছে, কিরকম হ্যালুসিনেশানের মত লাগছে।
- “ প্রবাল দা, এসো!” ঋজুর ডাকে সম্বিৎ ফিরলো।
- “ যা তোরা, আসছি, চোখে মুখে একটু জল দিই।“
- “তাড়াতাড়ি।“ বেরিয়ে গেলো ওরা।
অবিশ্রান্ত জলের ছলাত ছলাত আর ইঞ্জিনের এক ঘেয়ে শব্দের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রইলাম, ফাঁকা কেবিনে, যেখান থেকে আমার দুই প্রিয় সহকর্মী হারিয়ে গেছে, অবাস্তব ভাবে।
মেঝতে যেখানে প্রিয়মের (?) রক্ত পড়েছিলো সেদিকে চোখ গেলো, শুকিয়ে কালচে হয়ে গেছে, তারপর আরো একটা ব্যাপার চোখে পড়লো। আশ্চর্য , এতক্ষণ কি অনভ্যস্থ চোখ আর উত্তেজনা ছিলো বলেই এটা নজরে আসেনি। রক্তের দাগটা একটা লম্বাটে আকারে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে, , যদিও সেটা মোছা হয়েছে পরে, কিন্তু হলদেটে মেঝের ওপর সুক্ষ্ম একটা লালচে আভা বোঝা যাচ্ছে খুঁটিয়ে দেখলে।
বুকে বেজে উঠলো মাসাইদের ঢাক, এগিয়ে গেলাম, আমাদের কেবিন, ডাইনিং হল, স্টুয়ার্ড কেবিন, ক্যাপ্টেন কেবিন,কমন টয়লেট… যাহ হারিয়ে গেলো! আর বোঝা যাচ্ছে না, খুব ভালো করে মোছা
হয়েছে যেন। কমন টয়লেট তো ক্রুজের একদম শেষের দিকে, তারপরেই লোহার চাদরের দেওয়াল, তার ওপারেই ভারত মহাসাগর। অদ্ভুত ব্যাপার এতগুলো কেবিন ক্রস করলাম কোন ক্রু কে দেখলাম না, গোটা চারেক ক্রু আছে, একজন না একজনের তো থাকা উচিত ছিলো। অন্তত ডাইনিং হলে।
বুরবকের মত দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকালাম, একবার কমন টয়লেটের মধ্যে দেখবো? নাকি ওপরে উঠে ওদের ডেকে নিয়ে আসবো?
নাহ। যাই। একবার দেখেই যাই। কিছুই তো নেই মনে হচ্ছে…
ধাক্কা দিয়ে টয়লেটের দরজা খুলতেই অসম্ভব খারাপ পেচ্ছাপের গন্ধ ভক করে নাকে লাগলো।
ক্রুদের ব্যবহারকরা টয়লেট, কত আর পরিষ্কার হবে! কিন্তু ভিতর ফাঁকা, কিচ্ছু নেই, অর্থাৎ আমি যা দেখতে চাই তা নেই।
ফেরার পথ ধরেছি, এমন সময় ক্যাপ্টেন কেবিনের দরজা খুলে গেলো নিঃশব্দে, ক্যাপ্টেন বেরোলেন, হাত দুটো টাওয়ালে মুছতে মুছতে। আমাকে সামনে দেখে খানিক চমকালেও হাসিমুখে বললেন, “কি ব্যাপার, মন মেজাজ ঠিক নেই নাকি?”
এটা কে? অমানুষ! জানোয়ার নাকি ফেরেস্তা।
- “অস্বাভাবিক সেটা? আমার বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে আপনার? ওরা তো আপনার কাছেই গেলো।“
- “হুম হয়েছে। এত জেদ করছিলো তাই বাধ্য হয়ে প্রিয়ম বাবু, দেবারতি ম্যাডামের কাছে যেতে দিতেই হলো!”-
- “মানে! ওদের পাওয়া গেছে! কোথায় ছিলো...” এক অসম্ভব উচ্ছ্বাস উথলে উঠলো আমার গলায়।
- “নিজেই দেখবেন, আসুন।“ ক্যাপ্টেন নিজের কেবিনের দরজাটা খুলে দিলো। পরিপাটি করে সাজানো কেবিন,আমাদের কেবিনের মতই, হালকা মিউজিক বাজছে, মৃদু আলো, ঘরময় এক অদ্ভুত সুগন্ধ, যদিও কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু কোথায় কে, শুধু বিছানা চেয়ার পোশাকের আলমারি।
চোখ সইয়ে নিতেই অস্বস্তির কারণ টা স্পষ্ট হলো, ঘরময় সুগন্ধির মধ্যে একটা চামসে গন্ধ আন্ডারটোন হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, আর মেঝেতে অদ্ভুত বিসদৃশ ভাবে দুটো লোহার আংটা।
আমাকে অবাক করে ক্যাপ্টেন আংটা দুটো ধরে টান মারতেই একটা ট্র্যাপ ডোর খুলে গেলো মেঝেতে, তারপর হাসিমুখে আমাকে বলল, “ নিন, নামুন, সিঁড়ি আছে।“
- “এটা কোথায়?”
- “যেখানে আপনার সক্কল বন্ধুরা আছে, আপনার অপেক্ষায়, নামুন নামুন।“ কিছু বুঝে ওঠার আগেই জোর ধাক্কায় ট্র্যাপডোরের সিঁড়িতে নেমে পড়লাম, চামসে গন্ধ টা বাড়ছে।
তারপর...
আমি ভাবিনি কোনোদিন এমন দৃশ্য আমাকে দেখতে হবে, আর সেটাই জীবনের শেষ দৃশ্য... কোনো মানুষ ই মনে হয় এমন ভাবে মরতে চায় না... আমিও ভাবিনি, কল্পনাও করিনি...
নাতিদীর্ঘের একটা বেসমেন্ট, চামসে গন্ধ ম ম করছে, মাঝখানে সার বেঁধে শুয়ে আছে প্রিয়ম, দেবারতি, ঋজু, জামাল ভাই, খেয়া ভাবী। প্রিয়মের কপালের ক্ষত টা তখনো তাজা। ঋজুর ঘাড়টা অস্বাভাবিক ভাবে বেঁকে আছে। ম্যাকাবর ম্যাকাবর... ভয়ানক... ওই জন্যই নামের অর্থ ভয়ানক।
- “মিলিটারি জানবে জোর করে আমাকে ভয় দেখিয়ে আপনারা সেন্টিলেজ দের দ্বীপে নেমেছেন। আমার কোনো দায় নেই, আর আমার ক্রু রা আমার মতই। আর আপনি জানলেন আসলে আপনারা আমার ছোট্ট চামড়ার কালেকশান টা আরেকটু গুছিয়ে নিতে সাহায্য করলেন। মানুষের চামড়ার সে যে কি উত্তাপ!!” ফিসফিস করে কানের মধ্যে শব্দ গুলো ভেসে এলো। আর চোখ তখন ঘরের দেওয়ালে সাজানো সারি সারি সাদা কালো তামাটে হলদে চামড়ার ট্রফিতে আটকে আছ...টুকরো টুকরো চামড়ার কোলাজ... যেখানে কিছুক্ষণের মধ্যে আমিও..
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন